ইসলামধর্ম সহ সকল ধর্মের প্রতিপালন বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়।সকল ধর্মের সহবস্থান নিশ্চিত করে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনে সরকারের পক্ষ থেকে সমসুযোগ নিশ্চিত করার অর্থই ধর্মনিরপেক্ষতা।সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আজান দেয়ার সময় অন্য ধর্মের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর নাম ধর্মীয় স্বাধীনতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা যেমন হতে পারেনা তেমনি মন্দির প্রঙ্গনে ওয়াজমাহফিল অনুষ্ঠান করার নামও ধর্মীয় স্বাধীনতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা নয়।
মহান আল্লাহ সীমালঙ্গনকারিকে পছন্দ করেননা।"সীমা লঙ্গন" শব্দটি শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত আচার আচরনে সীমাবদ্ধ নয়।মানব জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।ধর্মীয়, গোষ্টিগত, জাতিগত, বর্ণগত প্রতিটি ক্ষেত্রে একে অপরের কোনরুপ ক্ষতি সাধন না করে, স্ব স্ব অবস্থানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্মকর্ম সম্পাদন করার নিমিত্তে স্ব-গোত্রের আওতাভূক্ত বা সীমিত থাকাই ইসলামের নির্দেশীত সঠিক পথ।
অতিধার্মীক, সহজে বেহেস্তে বা স্বর্গে যাওয়ার জন্যে অন্য ধর্মের উপর চড়াও হওয়া,সংখ্যা গগরিষ্টতার জজোরে অন্য ধর্ম পালনে বাধাপ্রদান, জোরপূর্বক ধর্মান্তরীতকরন,আপন ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার নিমিত্তে অন্যধর্মকে হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য প্রদান বা আচার আচরন প্রকাশ, শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে অন্য ধর্মের বা গোত্রের বসতি উচ্ছেদ ইত্যাদি করা ইসলামে হারাম এবং কঠোর নিষেদাজ্ঞা রয়েছে।উপরি উক্ত কাজ গুলী যে জাতি বা গোষ্টি কতৃক করা হোকনা কেন সমষ্টিগত ভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে ঐজাতি বা গোষ্টি সীমালঙ্গনকারি হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাঙ্গালী জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বল্পকালিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের সরকার গঠন করে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় চার মুলনীতির অন্যতম একটি নীতি হিসেবে গ্রহন করেন।ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অসহযোগ আন্দোলনের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামমের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানী শাষকদের বিরুদ্ধে পুর্ববাংলার জনগনের মুল দাবি বা ইচ্ছাই ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।মুক্তি যুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতার অঙ্গিকার যুদ্ধ জয়ে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল বিধায় বঙ্গবন্ধু তাঁর নতুন সরকার প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে উক্তনীতিকে সাংবিধানিক ভিত্তি প্রদান করেন।
সুধী পাঠকবর্গ-আমার অনেক আলোচনায় দ্ব্যর্থ্যহীনভাবে বলেছিলাম- জাতির জনকের যুদ্ধবিধস্ত নতুন দেশের নতুন "ধর্মনিরপেক্ষতার সরকার" ইসলামের প্রচার প্রসারে প্রাতিষ্ঠানিক, অ-প্রাতিষ্ঠানিক যে সমস্ত কাজগুলি মাত্র সাড়ে তিনবছরে করেছিলেন--তাঁর শতভাগের পাঁছভাগ কাজ পরবর্তী সেনাশাষক, ধর্মীয় জোটশাষক, ইসলামীশাষক, বিছমিল্লাহর শাষক, স্বৈরশাষক গনতন্ত্রের শাষকের 'দীর্ঘ চব্বিশ' বছরের শাষনে করতে পেরেছিল কিনা? আজও আমার মনের আকুতি নিরসনে লক্ষলক্ষ বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজনও এগিয়ে আসেনি।
নবী করিম (স:) এর নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র শাষন, মানব ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি "মদীনা সনদ", সর্বশেষ 'বিদায় হজ্বের' ভাষন পয্যালোচনায় দেখা যায় উল্লেখিত সকল কর্মকান্ডে ধর্ম, বর্ণ গোত্র, জাতি নিরপেক্ষতার সুস্পষ্ট লক্ষন সমূহ।রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে ব্যাক্তিগত জীবনাচার সবকিছুতেই ইসলামের সার্বজনীনতা, সাম্য, শান্তির ধারাবাহিকতা রক্ষিত ছিল। তাঁর সমগ্রজীবন পয্যালোচনা, আসমানী কিতাব কোরান নাজেল ইত্যাদিও ইসলাম ধর্মের মহত্ব, সার্বজনীনত,সাম্য, শান্তি, সুন্দরের বহি:প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।এই কারনেই বলা হয় - ইসলাম সার্বজনীন, সাম্য, শান্তির ধর্ম।
আল্লাহ তাঁর কোরানে ইসলামকে সর্বশেষ তাঁর মনোনীত একমাত্র ধর্ম, নবী করিম(স:)কে সর্বশেষ নবী এবং "আল-কোরান" সর্বশেষ "আসমানী কিতাব" ঘোষনা করেছেন।এর পর কোন নবী পৃথিবীতে আসবেনা এবং কি কোন আসমানী কিতাবও আসবেনা। ইসলাম ধর্মকে মানবজাতির জীবন যাপনের উপযোগী পুর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে ঘোষনা করে ঐ সময়কার প্রচলিত ধর্ম, জাতি, গোত্র, বর্ণ, গোষ্টি নির্বিশেষে সকলকে ঈমান প্রতিষ্ঠিত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লহর নির্দেশ পালন করে যারা ইমান এনেছেন তাঁরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী "মুসলিম" হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।ইমানদার মুসলিম শেষ বিচারের হাশরের মাঠে নবী (স:) এর সুপারিশ পাবেন। অন্য কোন ধর্মের অনুসারী তাঁর সুপারিশ পাবেন না।তবে মানব জাতির সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের বিচার সেদিন অনুষ্ঠিত হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত নবী তাঁর বিদায়ী ভাষনে দিয়েছেন।
উল্লেখিত কারনেই নবী (স:)বলেছেন--"তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করিও না।" অতীতে বহু জাতি ধর্মনিয়ে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়ে গেছে। "যার যার ধর্ম সে সে পালন করার স্বাধীনতা" তিনিই দিয়েছেন।সুতারাং নিদ্বিধায় বলা যায়--"ইসলামের প্রথম যুগের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং জীবনাচারে ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম, অলঙনীয় ছিল।"নবীজির রাষ্ট্রব্যবস্থাপনায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনুসরন অনুমোদিত বা ধর্মহীনতা না হলে বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি রাষ্ট্রপরিচালনায় ধর্মহীনতা হবে কেন--?
বর্তমান সরকার সংবিধান সমুন্নত রেখে সকল কর্মকান্ড পরিচালনায় অঙ্গিকারাবদ্ধ।জাতির জনকের অনুসৃত নীতি অনুসরনে সংখ্যাগরিষ্ট ধর্মের অনুসারি "ইসলামধর্ম" সহ অপরাপর ধর্ম, নৃজাতি, গোষ্টির উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।এই প্রসঙ্গে ২০১৬--১৭ সালের সরকারের গৃহিত উল্লেখযোগ্য কিছু কর্মকান্ড তোলে ধরা প্রাসঙ্গিক মনে করি।
২০১৬ সালের গৃহিত প্রকল্প
---------------------------------
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ নিম্নরূপ:
ক্রমিক নং প্রকল্পের নাম প্রাক্কলিত ব্যয়(লক্ষ টাকায়) বাস্তবায়নকাল ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের বরাদ্দ(লক্ষ টাকায়)
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১. মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) ১৫০৫৯৩.০০ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৯ ২৬০০০.০০
২. মসজিদ পাঠাগার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প-১ম সংশোধিত ১৮৭৪.০০ জুলাই ২০১২ হতে জুন ২০১৭ ৬৮৪.০০
৩. ইসলামী পুস্তক প্রকাশনা কার্যক্রম-২য় পর্যায় প্রকল্প ২৩০০.০০ এপ্রিল ২০১৬ হতে মার্চ ২০১৯ ১৯৯.৯৪
৪. ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাতীয় পর্যায় ও জেলা লাইব্রেরীতে পুস্তক সংযোজন ও পাঠক সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প ১৩৭০.০০ জুলাই ২০১৬ হতে জুন ২০১৯ --
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট
৫. মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৪র্থ পর্যায় ৯৯৩১.০৬ জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০১৭ ৩৫০০.০০
৬. ধর্মীয় এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প ১৪৯৯.৫৫ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৭ ৬০০.০০
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট
৭. প্যাগোডা ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প ৩০২.৯৪ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৭ (তথ্যসুত্র:--ধর্মমন্ত্রনালয়)
২০১৬ ইং সালে অনুদান বা সাহায্য:---
---------------------------------
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রতি বছরের ন্যায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা ও মন্দির সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং মহিলা আসনে নির্বাচিত প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা ও মন্দির সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে এ মন্ত্রণালয় হতে দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, ইসলাম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ ও কবরস্থান সংস্কার/মেরামত ও পুনর্বাসন, হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মন্দির/শ্মশান) সংস্কার/মেরামত, বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (প্যাগোডা) সংস্কার/মেরামত, খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (সেমিট্টি) সংস্কার/মেরামত এবং দু:স্থ মুসলিম ও দু:স্থ হিন্দু পুনর্বাসন এর জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।(তথ্যসুত্র-ধর্ম মন্ত্রনালয়)
এইছাড়াও যুগান্তকারি কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা ঘোষনা করেছেন।তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি ঘোষনা একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমান হিসেবে আমাকে গর্বিত করে তুলেছে।
(১) সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ এবং কাচারাল সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছে।ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারের জন্যে সরকারের গৃহিত নীতির আওতায় উক্ত প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করার তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।উক্ত প্রকল্পটি সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি মেঘা প্রকল্পের আওতায় উপজেলাব্যাপি ইসলাম ধর্মের আচার অনুষ্ঠান,শিক্ষা,গভেষনা সহ ব্যাপক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার আওতায় করা হবে।
(২)আলেম-ওলামাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এমন একটি আলাদা অর্থনৈতিক জোন করার চিন্তা-ভাবনাও করছে সরকার।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যাতে আয় বাড়ানো যায় এ জন্য শুধুমাত্র আলেম-ওলামাগণের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে ঐ অর্থনৈতিক জোন। সারা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একশ’টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোন আলেম ওলামা যদি কোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে চান,সে জন্যও সুযোগ দেয়ার নীতিগত সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা--ধর্মভিত্তিক দলের শাষনামলে সংবিধান পরিবর্তন ব্যাতিরেকে ধর্মের উন্নয়নে কোন সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা নিতে পারেনি।বরঞ্চ জাতির জনকের সরকারের এবং ইসলামে নিষিদ্ধ নীতি নৈতিকতাহীন আইন কানুন পরিবর্তন করে অনুমোদন দিয়েছিল।যেমন-- মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করে প্রনীত আইন জিয়ার সরকার বাতিল করে অবাধ লাইসেন্স বিতরনের মাধ্যমে হালাল করে দিয়েছিল।
বর্তমান সরকারের নেয়া ইসলাম ধর্মসহ অপরাপর ধর্মের প্রচার, প্রসারে যে সমস্ত কাজ বিগত আটবছরে সম্পন্ন করা হয়েছে সময় স্বল্পতা, নিবন্ধের আকৃতির বিশলতায় পাঠক সমাজের বিরক্তির কারন হতে পারে চিন্তায় বিধৃত করা থেকে বিরত রইলাম।আগামিতে কোন একসময়ে গুচ্ছাকারে প্রকাশ করার ইচ্ছা রইল।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
(রুহুল আমিন মজুমদার)
ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়।সকল ধর্মের সহবস্থান নিশ্চিত করে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনে সরকারের পক্ষ থেকে সমসুযোগ নিশ্চিত করার অর্থই ধর্মনিরপেক্ষতা।সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আজান দেয়ার সময় অন্য ধর্মের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর নাম ধর্মীয় স্বাধীনতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা যেমন হতে পারেনা তেমনি মন্দির প্রঙ্গনে ওয়াজমাহফিল অনুষ্ঠান করার নামও ধর্মীয় স্বাধীনতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা নয়।
মহান আল্লাহ সীমালঙ্গনকারিকে পছন্দ করেননা।"সীমা লঙ্গন" শব্দটি শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত আচার আচরনে সীমাবদ্ধ নয়।মানব জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।ধর্মীয়, গোষ্টিগত, জাতিগত, বর্ণগত প্রতিটি ক্ষেত্রে একে অপরের কোনরুপ ক্ষতি সাধন না করে, স্ব স্ব অবস্থানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্মকর্ম সম্পাদন করার নিমিত্তে স্ব-গোত্রের আওতাভূক্ত বা সীমিত থাকাই ইসলামের নির্দেশীত সঠিক পথ।
অতিধার্মীক, সহজে বেহেস্তে বা স্বর্গে যাওয়ার জন্যে অন্য ধর্মের উপর চড়াও হওয়া,সংখ্যা গগরিষ্টতার জজোরে অন্য ধর্ম পালনে বাধাপ্রদান, জোরপূর্বক ধর্মান্তরীতকরন,আপন ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার নিমিত্তে অন্যধর্মকে হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য প্রদান বা আচার আচরন প্রকাশ, শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে অন্য ধর্মের বা গোত্রের বসতি উচ্ছেদ ইত্যাদি করা ইসলামে হারাম এবং কঠোর নিষেদাজ্ঞা রয়েছে।উপরি উক্ত কাজ গুলী যে জাতি বা গোষ্টি কতৃক করা হোকনা কেন সমষ্টিগত ভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে ঐজাতি বা গোষ্টি সীমালঙ্গনকারি হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাঙ্গালী জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বল্পকালিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের সরকার গঠন করে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় চার মুলনীতির অন্যতম একটি নীতি হিসেবে গ্রহন করেন।ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অসহযোগ আন্দোলনের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামমের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানী শাষকদের বিরুদ্ধে পুর্ববাংলার জনগনের মুল দাবি বা ইচ্ছাই ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।মুক্তি যুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতার অঙ্গিকার যুদ্ধ জয়ে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল বিধায় বঙ্গবন্ধু তাঁর নতুন সরকার প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে উক্তনীতিকে সাংবিধানিক ভিত্তি প্রদান করেন।
সুধী পাঠকবর্গ-আমার অনেক আলোচনায় দ্ব্যর্থ্যহীনভাবে বলেছিলাম- জাতির জনকের যুদ্ধবিধস্ত নতুন দেশের নতুন "ধর্মনিরপেক্ষতার সরকার" ইসলামের প্রচার প্রসারে প্রাতিষ্ঠানিক, অ-প্রাতিষ্ঠানিক যে সমস্ত কাজগুলি মাত্র সাড়ে তিনবছরে করেছিলেন--তাঁর শতভাগের পাঁছভাগ কাজ পরবর্তী সেনাশাষক, ধর্মীয় জোটশাষক, ইসলামীশাষক, বিছমিল্লাহর শাষক, স্বৈরশাষক গনতন্ত্রের শাষকের 'দীর্ঘ চব্বিশ' বছরের শাষনে করতে পেরেছিল কিনা? আজও আমার মনের আকুতি নিরসনে লক্ষলক্ষ বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজনও এগিয়ে আসেনি।
নবী করিম (স:) এর নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র শাষন, মানব ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি "মদীনা সনদ", সর্বশেষ 'বিদায় হজ্বের' ভাষন পয্যালোচনায় দেখা যায় উল্লেখিত সকল কর্মকান্ডে ধর্ম, বর্ণ গোত্র, জাতি নিরপেক্ষতার সুস্পষ্ট লক্ষন সমূহ।রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে ব্যাক্তিগত জীবনাচার সবকিছুতেই ইসলামের সার্বজনীনতা, সাম্য, শান্তির ধারাবাহিকতা রক্ষিত ছিল। তাঁর সমগ্রজীবন পয্যালোচনা, আসমানী কিতাব কোরান নাজেল ইত্যাদিও ইসলাম ধর্মের মহত্ব, সার্বজনীনত,সাম্য, শান্তি, সুন্দরের বহি:প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।এই কারনেই বলা হয় - ইসলাম সার্বজনীন, সাম্য, শান্তির ধর্ম।
আল্লাহ তাঁর কোরানে ইসলামকে সর্বশেষ তাঁর মনোনীত একমাত্র ধর্ম, নবী করিম(স:)কে সর্বশেষ নবী এবং "আল-কোরান" সর্বশেষ "আসমানী কিতাব" ঘোষনা করেছেন।এর পর কোন নবী পৃথিবীতে আসবেনা এবং কি কোন আসমানী কিতাবও আসবেনা। ইসলাম ধর্মকে মানবজাতির জীবন যাপনের উপযোগী পুর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে ঘোষনা করে ঐ সময়কার প্রচলিত ধর্ম, জাতি, গোত্র, বর্ণ, গোষ্টি নির্বিশেষে সকলকে ঈমান প্রতিষ্ঠিত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লহর নির্দেশ পালন করে যারা ইমান এনেছেন তাঁরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী "মুসলিম" হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।ইমানদার মুসলিম শেষ বিচারের হাশরের মাঠে নবী (স:) এর সুপারিশ পাবেন। অন্য কোন ধর্মের অনুসারী তাঁর সুপারিশ পাবেন না।তবে মানব জাতির সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের বিচার সেদিন অনুষ্ঠিত হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত নবী তাঁর বিদায়ী ভাষনে দিয়েছেন।
উল্লেখিত কারনেই নবী (স:)বলেছেন--"তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করিও না।" অতীতে বহু জাতি ধর্মনিয়ে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়ে গেছে। "যার যার ধর্ম সে সে পালন করার স্বাধীনতা" তিনিই দিয়েছেন।সুতারাং নিদ্বিধায় বলা যায়--"ইসলামের প্রথম যুগের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং জীবনাচারে ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম, অলঙনীয় ছিল।"নবীজির রাষ্ট্রব্যবস্থাপনায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনুসরন অনুমোদিত বা ধর্মহীনতা না হলে বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি রাষ্ট্রপরিচালনায় ধর্মহীনতা হবে কেন--?
বর্তমান সরকার সংবিধান সমুন্নত রেখে সকল কর্মকান্ড পরিচালনায় অঙ্গিকারাবদ্ধ।জাতির জনকের অনুসৃত নীতি অনুসরনে সংখ্যাগরিষ্ট ধর্মের অনুসারি "ইসলামধর্ম" সহ অপরাপর ধর্ম, নৃজাতি, গোষ্টির উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।এই প্রসঙ্গে ২০১৬--১৭ সালের সরকারের গৃহিত উল্লেখযোগ্য কিছু কর্মকান্ড তোলে ধরা প্রাসঙ্গিক মনে করি।
২০১৬ সালের গৃহিত প্রকল্প
---------------------------------
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ নিম্নরূপ:
ক্রমিক নং প্রকল্পের নাম প্রাক্কলিত ব্যয়(লক্ষ টাকায়) বাস্তবায়নকাল ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের বরাদ্দ(লক্ষ টাকায়)
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১. মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) ১৫০৫৯৩.০০ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৯ ২৬০০০.০০
২. মসজিদ পাঠাগার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প-১ম সংশোধিত ১৮৭৪.০০ জুলাই ২০১২ হতে জুন ২০১৭ ৬৮৪.০০
৩. ইসলামী পুস্তক প্রকাশনা কার্যক্রম-২য় পর্যায় প্রকল্প ২৩০০.০০ এপ্রিল ২০১৬ হতে মার্চ ২০১৯ ১৯৯.৯৪
৪. ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাতীয় পর্যায় ও জেলা লাইব্রেরীতে পুস্তক সংযোজন ও পাঠক সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প ১৩৭০.০০ জুলাই ২০১৬ হতে জুন ২০১৯ --
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট
৫. মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৪র্থ পর্যায় ৯৯৩১.০৬ জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০১৭ ৩৫০০.০০
৬. ধর্মীয় এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প ১৪৯৯.৫৫ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৭ ৬০০.০০
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট
৭. প্যাগোডা ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প ৩০২.৯৪ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৭ (তথ্যসুত্র:--ধর্মমন্ত্রনালয়)
২০১৬ ইং সালে অনুদান বা সাহায্য:---
---------------------------------
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রতি বছরের ন্যায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা ও মন্দির সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং মহিলা আসনে নির্বাচিত প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা ও মন্দির সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে এ মন্ত্রণালয় হতে দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, ইসলাম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ ও কবরস্থান সংস্কার/মেরামত ও পুনর্বাসন, হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মন্দির/শ্মশান) সংস্কার/মেরামত, বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (প্যাগোডা) সংস্কার/মেরামত, খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (সেমিট্টি) সংস্কার/মেরামত এবং দু:স্থ মুসলিম ও দু:স্থ হিন্দু পুনর্বাসন এর জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।(তথ্যসুত্র-ধর্ম মন্ত্রনালয়)
এইছাড়াও যুগান্তকারি কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা ঘোষনা করেছেন।তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি ঘোষনা একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমান হিসেবে আমাকে গর্বিত করে তুলেছে।
(১) সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ এবং কাচারাল সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছে।ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারের জন্যে সরকারের গৃহিত নীতির আওতায় উক্ত প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করার তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।উক্ত প্রকল্পটি সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি মেঘা প্রকল্পের আওতায় উপজেলাব্যাপি ইসলাম ধর্মের আচার অনুষ্ঠান,শিক্ষা,গভেষনা সহ ব্যাপক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার আওতায় করা হবে।
(২)আলেম-ওলামাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এমন একটি আলাদা অর্থনৈতিক জোন করার চিন্তা-ভাবনাও করছে সরকার।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যাতে আয় বাড়ানো যায় এ জন্য শুধুমাত্র আলেম-ওলামাগণের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে ঐ অর্থনৈতিক জোন। সারা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একশ’টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোন আলেম ওলামা যদি কোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে চান,সে জন্যও সুযোগ দেয়ার নীতিগত সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা--ধর্মভিত্তিক দলের শাষনামলে সংবিধান পরিবর্তন ব্যাতিরেকে ধর্মের উন্নয়নে কোন সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা নিতে পারেনি।বরঞ্চ জাতির জনকের সরকারের এবং ইসলামে নিষিদ্ধ নীতি নৈতিকতাহীন আইন কানুন পরিবর্তন করে অনুমোদন দিয়েছিল।যেমন-- মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করে প্রনীত আইন জিয়ার সরকার বাতিল করে অবাধ লাইসেন্স বিতরনের মাধ্যমে হালাল করে দিয়েছিল।
বর্তমান সরকারের নেয়া ইসলাম ধর্মসহ অপরাপর ধর্মের প্রচার, প্রসারে যে সমস্ত কাজ বিগত আটবছরে সম্পন্ন করা হয়েছে সময় স্বল্পতা, নিবন্ধের আকৃতির বিশলতায় পাঠক সমাজের বিরক্তির কারন হতে পারে চিন্তায় বিধৃত করা থেকে বিরত রইলাম।আগামিতে কোন একসময়ে গুচ্ছাকারে প্রকাশ করার ইচ্ছা রইল।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন