ইসলামধর্ম সহ সকল ধর্মের প্রতিপালন বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য।
         (রুহুল আমিন মজুমদার)

       ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়।সকল ধর্মের সহবস্থান নিশ্চিত করে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনে সরকারের পক্ষ থেকে সমসুযোগ নিশ্চিত করার অর্থই  ধর্মনিরপেক্ষতা।সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আজান দেয়ার সময় অন্য ধর্মের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর নাম ধর্মীয় স্বাধীনতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা যেমন হতে পারেনা তেমনি মন্দির প্রঙ্গনে ওয়াজমাহফিল অনুষ্ঠান করার নামও ধর্মীয় স্বাধীনতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা নয়।
    মহান আল্লাহ সীমালঙ্গনকারিকে পছন্দ করেননা।"সীমা লঙ্গন" শব্দটি শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত আচার আচরনে সীমাবদ্ধ নয়।মানব জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।ধর্মীয়, গোষ্টিগত, জাতিগত, বর্ণগত প্রতিটি ক্ষেত্রে একে অপরের কোনরুপ ক্ষতি সাধন না করে, স্ব স্ব অবস্থানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্মকর্ম সম্পাদন করার নিমিত্তে স্ব-গোত্রের আওতাভূক্ত বা সীমিত থাকাই ইসলামের নির্দেশীত সঠিক পথ।
     অতিধার্মীক, সহজে বেহেস্তে বা স্বর্গে যাওয়ার জন্যে অন্য ধর্মের উপর চড়াও হওয়া,সংখ্যা গগরিষ্টতার জজোরে অন্য ধর্ম পালনে বাধাপ্রদান, জোরপূর্বক ধর্মান্তরীতকরন,আপন ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার নিমিত্তে অন্যধর্মকে হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য প্রদান বা আচার আচরন প্রকাশ, শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে অন্য ধর্মের বা গোত্রের বসতি উচ্ছেদ ইত্যাদি করা ইসলামে হারাম এবং কঠোর নিষেদাজ্ঞা রয়েছে।উপরি উক্ত কাজ গুলী যে জাতি বা গোষ্টি কতৃক করা হোকনা কেন সমষ্টিগত ভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে ঐজাতি বা গোষ্টি  সীমালঙ্গনকারি হিসেবে বিবেচিত হয়।
   বাঙ্গালী জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বল্পকালিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের সরকার গঠন করে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় চার মুলনীতির অন্যতম একটি নীতি হিসেবে গ্রহন করেন।ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অসহযোগ আন্দোলনের দীর্ঘ আন্দোলন  সংগ্রামমের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানী শাষকদের বিরুদ্ধে পুর্ববাংলার জনগনের মুল দাবি বা ইচ্ছাই ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।মুক্তি যুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতার অঙ্গিকার যুদ্ধ জয়ে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল বিধায় বঙ্গবন্ধু তাঁর নতুন সরকার প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে উক্তনীতিকে সাংবিধানিক ভিত্তি প্রদান করেন।
   সুধী পাঠকবর্গ-আমার অনেক আলোচনায় দ্ব্যর্থ্যহীনভাবে বলেছিলাম- জাতির জনকের যুদ্ধবিধস্ত নতুন দেশের নতুন "ধর্মনিরপেক্ষতার সরকার" ইসলামের প্রচার প্রসারে প্রাতিষ্ঠানিক, অ-প্রাতিষ্ঠানিক যে সমস্ত কাজগুলি মাত্র সাড়ে তিনবছরে করেছিলেন--তাঁর শতভাগের পাঁছভাগ কাজ পরবর্তী সেনাশাষক, ধর্মীয় জোটশাষক, ইসলামীশাষক, বিছমিল্লাহর শাষক, স্বৈরশাষক গনতন্ত্রের শাষকের 'দীর্ঘ চব্বিশ' বছরের শাষনে করতে পেরেছিল কিনা? আজও আমার মনের আকুতি নিরসনে লক্ষলক্ষ বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজনও  এগিয়ে আসেনি।
নবী করিম (স:) এর নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র শাষন, মানব ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি "মদীনা সনদ", সর্বশেষ 'বিদায় হজ্বের' ভাষন পয্যালোচনায় দেখা যায় উল্লেখিত সকল কর্মকান্ডে ধর্ম, বর্ণ গোত্র, জাতি নিরপেক্ষতার সুস্পষ্ট লক্ষন সমূহ।রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে ব্যাক্তিগত জীবনাচার সবকিছুতেই ইসলামের সার্বজনীনতা, সাম্য, শান্তির ধারাবাহিকতা রক্ষিত ছিল। তাঁর সমগ্রজীবন পয্যালোচনা, আসমানী কিতাব কোরান নাজেল ইত্যাদিও ইসলাম ধর্মের মহত্ব, সার্বজনীনত,সাম্য, শান্তি, সুন্দরের বহি:প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।এই কারনেই বলা হয় - ইসলাম সার্বজনীন, সাম্য, শান্তির ধর্ম।
আল্লাহ তাঁর কোরানে ইসলামকে সর্বশেষ তাঁর মনোনীত একমাত্র ধর্ম, নবী করিম(স:)কে সর্বশেষ নবী এবং "আল-কোরান" সর্বশেষ "আসমানী কিতাব" ঘোষনা করেছেন।এর পর কোন নবী পৃথিবীতে আসবেনা এবং কি কোন আসমানী কিতাবও আসবেনা। ইসলাম ধর্মকে মানবজাতির জীবন যাপনের উপযোগী পুর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে ঘোষনা করে ঐ সময়কার প্রচলিত ধর্ম, জাতি, গোত্র, বর্ণ, গোষ্টি নির্বিশেষে সকলকে ঈমান প্রতিষ্ঠিত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লহর নির্দেশ পালন করে যারা ইমান এনেছেন তাঁরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী "মুসলিম" হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।ইমানদার মুসলিম শেষ বিচারের হাশরের মাঠে নবী (স:) এর সুপারিশ পাবেন। অন্য কোন ধর্মের অনুসারী তাঁর সুপারিশ পাবেন না।তবে মানব জাতির সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের বিচার সেদিন অনুষ্ঠিত হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত নবী তাঁর বিদায়ী ভাষনে দিয়েছেন।
  উল্লেখিত কারনেই নবী (স:)বলেছেন--"তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করিও না।" অতীতে বহু জাতি ধর্মনিয়ে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়ে গেছে। "যার যার ধর্ম সে সে পালন করার স্বাধীনতা" তিনিই দিয়েছেন।সুতারাং নিদ্বিধায় বলা যায়--"ইসলামের প্রথম যুগের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং জীবনাচারে ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম, অলঙনীয় ছিল।"নবীজির রাষ্ট্রব্যবস্থাপনায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনুসরন অনুমোদিত বা ধর্মহীনতা না হলে বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি রাষ্ট্রপরিচালনায় ধর্মহীনতা হবে কেন--?
বর্তমান সরকার সংবিধান সমুন্নত রেখে সকল কর্মকান্ড পরিচালনায় অঙ্গিকারাবদ্ধ।জাতির জনকের অনুসৃত নীতি অনুসরনে সংখ্যাগরিষ্ট ধর্মের অনুসারি "ইসলামধর্ম" সহ অপরাপর ধর্ম, নৃজাতি, গোষ্টির উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।এই প্রসঙ্গে ২০১৬--১৭ সালের সরকারের গৃহিত উল্লেখযোগ্য কিছু কর্মকান্ড তোলে ধরা প্রাসঙ্গিক মনে করি।

 ২০১৬ সালের গৃহিত প্রকল্প
---------------------------------
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ নিম্নরূপ:
ক্রমিক নং প্রকল্পের নাম প্রাক্কলিত ব্যয়(লক্ষ টাকায়) বাস্তবায়নকাল ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের বরাদ্দ(লক্ষ টাকায়)
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১. মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) ১৫০৫৯৩.০০ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৯ ২৬০০০.০০
২. মসজিদ পাঠাগার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প-১ম সংশোধিত ১৮৭৪.০০ জুলাই ২০১২ হতে জুন ২০১৭ ৬৮৪.০০
৩. ইসলামী পুস্তক প্রকাশনা কার্যক্রম-২য় পর্যায় প্রকল্প ২৩০০.০০ এপ্রিল ২০১৬ হতে মার্চ ২০১৯ ১৯৯.৯৪
৪. ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাতীয় পর্যায় ও জেলা লাইব্রেরীতে পুস্তক সংযোজন ও পাঠক সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প ১৩৭০.০০ জুলাই ২০১৬ হতে জুন ২০১৯ --
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট
৫. মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৪র্থ পর্যায় ৯৯৩১.০৬ জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০১৭ ৩৫০০.০০
৬. ধর্মীয় এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প ১৪৯৯.৫৫ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৭ ৬০০.০০
বাস্তবায়নকারী সংস্থা: বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট
৭. প্যাগোডা ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প ৩০২.৯৪ জানুয়ারী ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৭ (তথ্যসুত্র:--ধর্মমন্ত্রনালয়)

    ২০১৬ ইং সালে অনুদান বা সাহায্য:---
---------------------------------
    ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রতি বছরের ন্যায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা ও মন্দির সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য  ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং মহিলা আসনে নির্বাচিত প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা ও মন্দির সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে এ মন্ত্রণালয় হতে দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, ইসলাম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ ও কবরস্থান সংস্কার/মেরামত ও পুনর্বাসন, হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মন্দির/শ্মশান) সংস্কার/মেরামত, বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (প্যাগোডা) সংস্কার/মেরামত, খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (সেমিট্টি) সংস্কার/মেরামত এবং দু:স্থ মুসলিম ও দু:স্থ হিন্দু পুনর্বাসন এর জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।(তথ্যসুত্র-ধর্ম মন্ত্রনালয়)

   এইছাড়াও যুগান্তকারি কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা ঘোষনা করেছেন।তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি ঘোষনা একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমান হিসেবে আমাকে গর্বিত করে তুলেছে।

        (১) সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ এবং কাচারাল সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছে।ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারের জন্যে সরকারের গৃহিত নীতির আওতায় উক্ত প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করার তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।উক্ত প্রকল্পটি সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি মেঘা প্রকল্পের আওতায় উপজেলাব্যাপি ইসলাম ধর্মের আচার অনুষ্ঠান,শিক্ষা,গভেষনা সহ ব্যাপক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার আওতায় করা হবে।
  (২)আলেম-ওলামাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এমন একটি আলাদা অর্থনৈতিক জোন করার চিন্তা-ভাবনাও করছে সরকার।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যাতে আয় বাড়ানো যায় এ জন্য শুধুমাত্র আলেম-ওলামাগণের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে ঐ অর্থনৈতিক জোন। সারা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একশ’টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোন আলেম ওলামা যদি কোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে চান,সে জন্যও সুযোগ দেয়ার নীতিগত সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

     প্রিয় পাঠক বন্ধুরা--ধর্মভিত্তিক দলের শাষনামলে সংবিধান পরিবর্তন ব্যাতিরেকে ধর্মের উন্নয়নে কোন সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা নিতে পারেনি।বরঞ্চ জাতির জনকের সরকারের এবং ইসলামে নিষিদ্ধ নীতি নৈতিকতাহীন আইন কানুন পরিবর্তন করে অনুমোদন দিয়েছিল।যেমন-- মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করে প্রনীত আইন জিয়ার সরকার বাতিল করে অবাধ লাইসেন্স বিতরনের মাধ্যমে হালাল করে দিয়েছিল।
   বর্তমান সরকারের নেয়া ইসলাম ধর্মসহ অপরাপর ধর্মের প্রচার, প্রসারে যে সমস্ত কাজ বিগত আটবছরে সম্পন্ন করা হয়েছে সময় স্বল্পতা, নিবন্ধের আকৃতির বিশলতায় পাঠক সমাজের বিরক্তির কারন হতে পারে চিন্তায় বিধৃত করা থেকে বিরত রইলাম।আগামিতে কোন একসময়ে গুচ্ছাকারে প্রকাশ করার ইচ্ছা রইল।
   ruhulaminmujumder27@gmail.com
      "জয়বাংলা      জয়বঙ্গবন্ধু"
 
   

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন