ইসলামের সহজ সৌন্দয্যের অনুসন্ধান---ইসলাম বলে কি আমরা করি কি?
(রুহুল আমিন মজুমদার)

         ইসলাম শান্তি, সমতা, আধুনিক এবং সার্বজনীন শ্রেষ্ঠ ধর্ম।নবীজি তাঁর জীবদ্দশায়  ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার পরিচালনার সকল নজীর মানব সমাজের জন্যে রেখে গেছেন।তিনি ছিলেন হিংসা বিদ্বেস, রিয়াহীন মহামানব।তিনি তাঁর জীবদ্দশায় যাহাই করেছেন সব কিছুই মহান আল্লাহর হুকুমপ্রাপ্ত  হয়ে করেছেন। লক্ষ করলে দেখবেন-আল্লাহ বার বার বলেছেন 'কেয়ামতের মাঠে তিনি 'জ্বিন এবং এনসানে'র বিচার করবেন'।
     নবীজি ইসলাম ধর্মের মহত্বের বড় নজির স্থাপন করেছেন আধুনিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।তৎসময়ে সর্বদিক থেকে উন্নত ছিল চীন; বর্তমানেও উক্ত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে।তিনি তাঁর সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন --জ্ঞান অর্জনের জন্যে প্রয়োজনে চীন দেশে যাও।"অর্থাৎ শিক্ষার জন্যে কোন ধর্মকে বা ধর্মের অনুসারিকে তিনি বাধা মনে করেননি। ইসলাম ধর্ম এত ক্ষুদ্র নয়, সংকীন্ন নয় বা আংশিকও নয় যে, " কারো কবিতা, গল্প, ধর্মগ্রন্থ পড়েই ইসলাম ধর্মচ্যুত হওয়ার আশংকা থেকে যাবে।এইরুপ বর্তমান সময়ে যারাই মনে করুন না কেন তাঁদের "ইমান আকিদা"র উপর যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টির অবকাশ থেকে যাওয়া স্বাভাবিক, আমি মনে করি।
     "এনসান" শাব্দিক অর্থ "মানব জাতি"।আল্লাহ তাঁর হুকুমে দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, আর এক হুকুমে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ কি,আর একটা হুকুমে সকল মানব জাতিকে ইসলামের অনুসারি করে নিতে পারতেন না ? অবশ্যই পারতেন-- কিন্তু তিনি তা করেননি। বিচার মানে দুষ গুনের বিশ্লেষন পুর্বক তিরস্কার অথবা পুরস্কার নির্ধারনের আয়োজন। আল্লাহ যেহেতু মানব জাতির বিচার করবেন বলেছেন সেহেতু ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নির্বিশেষে সকল মানব জাতির জন্যে তিনি 'পুরস্কার এবং তিরস্কার' নির্ধারিত রেখেছেন।
  ইসলাম সার্বজনীন মানে সকল মানব জাতির কল্যানে আল্লাহ তাঁর পছন্দের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মকে নবীজির মাধ্যমে দুনীয়াতে পাঠিয়েছেন।যারা এই ধর্ম অনুসরন করবে তারা প্রকৃত ইমানদার হিসেবে আল্লাহ এবং তার নবীর প্রিয় হবেন।প্রিয় বন্ধু যদি কোন অপরাধ করে তবে বড় কষ্ট লাগে এবং ইহাই স্বাভাবিক।তাই ইসলামের অনুসারিদের বিচার কড়া হওয়াই স্বাভাবিক। এতে নিশ্চয়ই অন্যধর্মালম্ভিদের বিচারে ছাড় দেয়া হবে মনে করা যায়না।
   ইসলাম যেহেতু সার্বজনীন সেহেতু মদীনা সনদের প্ররম্ভে কোরানের আয়াত' এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের প্ররম্বিক বাক্য 'বিছমিল্লাহ' নবীকতৃক প্রতিষ্ঠিত সদ্য আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সৃষ্ট সংবিধান 'মদিনাসনদে'র প্রারম্ভে সংযুক্ত করে অন্যধর্মালম্বিদের বিরুপ ধারনা পোষন করার সুযোগ দেননি।আল্লাহ কোরানের আয়াত নাজেলের মাধ্যমে কারন ব্যাখ্যা করে বলে দিয়েছেন--"যার যার ধর্ম তার তার জন্যে বড়'। অন্যকোন ধর্ম পালনে নিষেদাজ্ঞাজারি করেননি ইসলাম ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলেছেন এবং ইসলাম ধর্ম অনুসরন করার জন্যে বলেছেন।
  নবীজি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মহামানব, রাষ্ট্রনায়ক, সমাজ সংস্কারক। তাঁর আবির্ভাবের আগে কোন যুৎসই রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি বা কাঠামো ছিলনা। ছোট ছোট গোত্র, বংশ, নগর কেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু ছিল।তিনি প্রথম  বিজিত অংশে আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রস্তুত করেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে অধিক ব্যাক্তি সম্ন্বয়ে সরকার গঠন করেন, রাজধানীর পত্তন করেন, সরকার পরিচালনার জন্যে নির্দিষ্ট মসজিদ বা অফিস বা সংসদ বা গনভবন সৃষ্টি করেন।তিনিই প্রথম রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে সুনির্দিষ্ট নীতি লিপিবদ্ধ করেন।লিখিত সেই নীতিকে তিনিই নাম দিয়েছেন "মদিনা সনদ" ।যাহা আজও আধুনিক রাষ্ট্রপরিচালনার জন্যে বিশ্বের দেশে দেশে অনুকরনীয় হয়ে জীবিত আছে।
    যেহেতু ইসলাম সার্বজনীন মানবতার ধর্ম সেহেতু তাঁর নবীও সার্বজনীন মানবতার নবী।তিনি মদিনা সনদে মুসলমান ধর্মের পবিত্র কালামের অংশ বিছমিল্লাহ তাঁর রচিত বিশ্ব মানবতার সনদে সংযুক্ত করে তাঁর প্রচারীত আল্লাহ প্রেরীত ধর্মের এবং মানবকল্যানে প্রেরীত গ্রন্থ কোরানের সার্বজনীনতার মহিমাকে খাটো করতে চাননি এবং একক ইসলাম ধর্মকে 'রাষ্ট্রধর্মে'র  মায্যদা অধিষ্ঠিত করে ইসলাম ধর্ম এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরানের সার্বজনীনতার মহিমাকে অন্য ধর্মালম্বিদের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ করেননি।
 যেহেতু তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব সেহেতু তাঁর আচার,আচরন,খাওয়া,চলাফেরা, নেতৃত্ব, যুদ্ধবিগ্রহ, জয় পরাজয়, কথা বলা, কথা শুনা, কর্ম ভাষন ইত্যাদি মহান আল্লাহর অপার মহিমাগুনে সর্বকালের  সর্বমানব জাতির অনুসরনীয়, অনুকরনীয় হয়ে থাকবে--"পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পয্যন্ত।" তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর প্রয়োজন আল্লাহর নিকট ফুরিয়ে এসেছে এবং তাঁকে আল্লাহ উঠিয়ে নেয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।তাই কিছুটা রোগমুক্তির পর এবং তাঁর ওফাতের অল্প সময়ে আগে মানব জাতির উদ্দেশ্যে নীতি নির্ধারনী মূলক বক্তব্যটি দিয়ে আবহমান মানবজাতি সুখে শান্তিতে বসবাস এবং তাঁর সৃষ্টিকর্তাকে স্মরন করার নীতি আদর্শ তুলে ধরার জন্যে তাঁর "বিদায়ী ভাষনে"র প্রয়োজনীতা অনুভবে "বিদায় হজ্বের ভাষন" দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশে ইসলামের প্রারম্ভিক বাক্য বা বরকতের বাক্য " "বিছমিল্লাহ" বিদায়ী ভাষনে বলেননি কারন তাঁর ভাষন একক ধর্মের অনুসারিদের জন্যে হতে পারেনা।
      ইসলাম যেহেতু ততদিনে সর্বাঙ্গীনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে  সেহেতু নবী মোহাম্মদকে পৃথিবীতে রাখা সমচিন মনে করেননি আল্লাহ। আল্লাহর হুকুমেই তিনি ভাষনটি রচনা করেছেন,আল্লাহর নির্দেশেই তিনি তার বিদায়ী হজ্বের ভাষনে প্রত্যেক যতিতে "হে মানব জাতি" বলে সম্ভোধন করে "ইসলাম ধর্ম সমগ্র মানব জাতির কল্যানে একমাত্র আল্লাহ প্রেরিত ধর্ম এবং তাঁর প্রেরীত কিতাব সমগ্র মানবের কল্যানে একমাত্র শেষ আসমানী কিতাব, বহনকারি মানব  বা নবী মহামানব বা শেষ নবী"র দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কোরানে পা''কে একাধিকবার ঘোষনা দিয়ে "আল্লাহ তার উম্মতের জন্য সকল প্রকার জীবন বিধান' আসমানি কিতাব' নবী বা রাসুল' প্রেরনের  ইতি ঘটিয়েছেন"।
   উল্লেখিত আলোচনায় যদি ভুল বা অতিরঞ্জন নাহয় তবে আমি বিশ্বাস করি নবীজির জীবনাদর্শ, রাষ্ট্রপরিচালনা, বক্তব্য ইত্যাদি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সমগ্র মানবব্জাতির কল্যানের  সেহেতু তিনি সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের  জন্যে মায্যদাশীল, অনুসরনীয়, অনুকরনীয়-- এবং তিনি নিরপেক্ষ।
এই বিশ্বাসের বাহিরে যারা বা যিনি আছেন তিনি কি প্রকৃত নবীজির অনুসারি অর্থাৎ প্রকৃত মসুলমান দাবি  করতে পারেন--??  না- কি যারা উল্লেখিত নীতি আদর্শ বিশ্বাস করেন, অনুসরন করেন তারা বা তিনি নবীজির অনুসারি অর্থাৎ প্রকৃত মসুলমান দাবি করতে পারেন--???

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন