বঙ্গবন্ধু--ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী--"বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ"।
  (রুহুল আমিন মজুমদার)

      অখন্ড ভারতীয় উপমহাদেশে বহু জাতি গোষ্টির বসবাস বহুকাল আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল, এর বাইরেও বহু নৃগোষ্টি অ-অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। প্রত্যেক জাতি গোষ্টির নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির ভিন্নতার কারনে সহজেই পার্থক্য অনুমান করা সহজও হতো। রক্ষনাবেক্ষনের অপ্রতুলতায় কিছু কিছু জাতি গোষ্টির ভাষা,কৃষ্টি ইতিমধ্যে সংখ্যাগরিষ্টের ভাষা, কৃষ্টির সংঙ্গে প্রায় একিভুত আকার ধারন করেছে। আমাদের এই ব-দ্বিপেও বিভিন্ন ভাষাবাসির জাতি গোষ্টির বসবাস আবহমান কাল থেকেই লক্ষনীয় ছিল, এখনো আছে।কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ট 'হিন্দু--মুসলিম' দুই 'ধর্মীয়গোষ্টি'র ভাষা বাংলার সুবাধে এবং উভয়ের সংস্কৃতি, কৃষ্টি আচার আচরনে হুবহু মিল পরিলক্ষিত হওয়ায় আবহমান কাল থেকে উল্লেখিত দুই 'ধর্মীয়গোষ্টির' সম্পৃতি, সৌহার্দ ছিল ঈর্শনীয়--"বলা যায় একে অপরের পরিপূরক।"

     উক্ত সম্পৃতি, সৌহার্দের মূলে কুঠারাগাত করা হয় ১৯৪৭ ইং এর দেশভাগের  "দ্বিজাতিতত্বে'র ভ্রান্ত ধারনা।" দেশভাগের পর দুই ধর্মীয় জাতির দুই পৃথক রাষ্ট্রের ধারনা ধর্মীয় কাঠামোকে মজবুত না করে পরবর্তিতে উভয়ের বৈষয়িক লাভালাভে রুপান্তরীত হয়।"দ্বি-জাতি তত্বের" ধর্মীয় অনুভূতি যতনা দিকভ্রান্ত করেছে তারচেয়ে বেশি ব্যাক্তি ও গোষ্টি স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে। সম্পদের দখল নিতে  একে অপরের উপর চড়াও হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার লক্ষে কুচক্রিমহল 'ধর্মীয় চেতনা'কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে "সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হাঙ্গামার" উস্কে দিতে থাকে।ফলে উভয় দেশের বিপুল মানব-মানবি বহুকালের সামাজিক,পারিবারিক বন্ধনে অমানিষার কালমেঘের বজ্রাঘাতে ধনসম্পদ ত্যাগ o
করে 'একবস্ত্রে সীমান্ত পাড়ি দিতে বাধ্য হয়'।

   ঐ সময়ে তরুন রাজনীতিবিদ শেখ মজিবুর রহমানের মানবিক সুপ্ত রিপুসমূহে উক্ত ঘটনা সমূহ প্রচন্ড আঘাত সৃষ্টি করে।কলকাতা অবস্থান গ্রহনকালিন সময় থেকেই তিনি এই অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহন করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই এর শাসকগোষ্ঠীর বিজাতীয় ও সাম্প্রদায়িক শোষণ এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি কর্মপন্থা নির্ধারণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন।ছিলেন।

১৯৪৬ সালে সংঘটিত কলকাতা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামাতে বয়সে তরুণ শেখ মুজিব, মহাত্মা গান্ধী এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে মিলে যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা থেকেই তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা উপলব্ধি করা যায়। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে’ বলছেন, “এই সময় শহীদ সাহেবের সাথে কয়েক জায়গায় আমার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। মহাত্মা গান্ধীর সাথে শহীদ সাহেব হিন্দু-মুসলমান শান্তি কায়েম করার জন্য কাজ করেছিলেন।”

পরবর্তিতে সদ্য সৃষ্ট পাকিস্তান থেকে সাম্প্রদায়িক সমস্যার কারণে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর লোকরা যখন দেশত্যাগ শুরু করে তখন বঙ্গবন্ধুর চেষ্টা ছিল যাতে তারা দেশত্যাগ না করে। এজন্য বঙ্গবন্ধু ‘গণতান্ত্রিক যুবলীগ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে’ বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমি বললাম, এর (গণতান্ত্রিক যুবলীগের) কর্মসূচি হবে সাম্প্রদায়িক মিলনের চেষ্টা করা, যাতে কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা না হয়, হিন্দুরা দেশ ত্যাগ না করে- যাকে ইংরেজিতে বলে ‘কমিউনাল হারমনি’, তার জন্য চেষ্টা করা। অনেকেই এই মত সমর্থন করল…।” (পৃ.৮৫)

       ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালিদের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক মনোভাবাপন্ন হীন সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর ক্ষোভ সম্পর্কে জানা যায় তাঁর বক্তব্যে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হবার পরই আমার সন্দেহ হয়েছিল। কলকাতায় আমি বলেছিলাম, এ স্বাধীনতা মিথ্যা। এ স্বাধীনতা বাংলাদেশকে উপনিবেশ করেছিল।’ তবে, দৃশ্যত ভাষা আন্দোলনই ছিল (পূর্ব) বাঙালিদের স্বাধীনতা ও মুক্তি সম্পর্কিত চিন্তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ। ১৯৪৮ ও ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর ১১-দফা ভিত্তিক গণঅখভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন এবং ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শ দ্বারা এ দেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

     বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিত্বের চেতনা এবং বাঙালির মুক্তি চেতনার বাহ্যিক প্রকাশ হিসেবে কতকগুলো ঐতিহাসিক ও অসাম্প্রদায়িক স্লোগানের শব্দমালা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। যেগুলোর মধ্য দিয়ে বাঙালির মননে অসাম্প্রদায়িক স্বদেশ, এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের প্রত্যয় প্রচ্ছন্নভাবে পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছিল।

স্লোগানগুলো হচ্ছে, “তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি”; “তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা”; এবং “বাংলার হিন্দু, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি”। পাশাপাশি, বাঙালিত্বের চেতনাবাহী “জয় বাংলা” ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি" নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন। তখনই অসাম্প্রদায়িক স্বদেশ “সোনার বাংলা” প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়টির দৃঢ়তা ও গভীরতা সম্পর্কে জনমনে সব সন্দেহ দূরীভূত হয়ে গিয়েছিল। যদিও তখন ছিল ঘোর অন্ধকারময় ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তানের জালিম শাহীর শাসন।

বিশ্বে বাঙালিদের একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এইসব ঐতিহাসিক স্লোগানে যাঁরা কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবের বিপ্লনী  চেতনা ধারণ করে বিশ্বকবির লেখা সঙ্গীত মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁদের উজ্জীবিত করেছিল তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিল ‘পাকিস্তান’প্রেমী গুটিকয়েক বাঙালি কুলাঙ্গার। তাদের লক্ষ্য ছিল, ‘পাকিস্তানি সৈন্যদের সক্রিয় সহায়তায় স্বাধীনতা ও মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালিদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন’ করে ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা’ দখলে রাখা।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ বিন্যাস অন্যভাবে করা যেতে পারে-"এক পক্ষ ধর্মের গোঁড়ামিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সুসংগঠিত--@@বিপক্ষ ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখার জন্য ‘ক্ষমতা’ দখলে রাখতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অর্থাৎ ‘ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তান’ রাষ্ট্রের মধ্যে থেকেই যেন ''বাঙালী চেতনা" নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়--"সেই ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি-রাজাকার, আলবদর, আলসামস তাঁদের রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামী পুর্ব পকিস্তান।"

    গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই--"সাংস্কৃতিক, ভাষা ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা   বিশ্বে বাঙালিদের একমাত্র নতুন উদ্ভব স্বাধীন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’। অ-সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এইসব ঐতিহাসিক স্লোগান গুলিতে যাঁরা কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধের চেতনা ধারণ করে বিশ্বকবির লেখা সঙ্গীত মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁদের উজ্জীবিত করেছিল--"তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিল ‘পাকিস্তান’প্রেমী গুটিকয়েক বাঙালি কুলাঙ্গার। তাদের লক্ষ্য ছিল, ‘পাকিস্তানি সৈন্যদের সক্রিয় সহায়তায় স্বাধীনতা ও মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালিদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন’ করে ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা’ দখলে রাখা।"
       
বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে সব ধর্মের অনুশীলনের সংযুক্ততা বুঝিয়েছেন;সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধতা বুঝিয়েছেন। হৃদয়ের এই সুগভীর অনুভূতিই তাঁকে বাংলা ও বাঙালির বন্ধু ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের চূড়ান্ত সন্ধিক্ষণে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে ‘হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, বাঙালি-অবাঙালি’ নির্বিশেষে বাংলাদেশের সবার উদ্দেশ্যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

       বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। চূড়ান্ত ফলাফলে মুক্তিকামী বাঙালির বিজয় সূচিত হয়। কিন্তু এর জন্য যে মূল্য দিতে হয় তার নজির বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ, দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম পাশাপাশি বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের কয়েক সহস্র প্রশিক্ষিত সৈন্যের আত্মাহুতির বিনিময়ে, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়’ অর্জিত হয়।

     বিজয়ের পরে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করেছিলেন।“বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-১৯৭৫” শীর্ষক গ্রন্থে সংখ্যাগত ও গুণগত তথ্য-উপাত্তসহ বঙ্গবন্ধু সরকারের কর্মকাণ্ডের বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে--“যুদ্ধ-পরবর্তী সরকারের অসংখ্য ইতিবাচক পদক্ষেপ আর্থ-সামাজিক জীবনে মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। এতদ সত্ত্বেও বাঙালি জনগণের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকে পরিচালিত সেই চিরন্তন ষড়যন্ত্রই প্রকাশ পেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। তিনি যে বলেছিলেন, ‘ষড়যন্ত্র এখনো চলছে’ --"যথার্থই প্রমাণিত হলো।”

      ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় দুই দশক দেশে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়--"বঙ্গবন্ধুর অবদান বা আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। ‘১৫ আগস্ট ১৯৭৫’ শীর্ষক গ্রন্থে পঁচাত্তর-পরবর্তী অবৈধ সরকারের শাসনামলে তৎকালীন পরিস্থিতির বর্ণনা করে বলা হয়েছে “১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর ‘ঢাকা রেডিও’ থেকে শুধু বঙ্গবন্ধু বিরোধী কথা ও গান প্রচার করা হতো। এসব গানের রচয়িতা ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন পাকিস্তানের দোসর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী।

প্রসঙ্গক্রমে যদিও নামদ্বয় এসে যেত নাম নেয়ার আগে তথাকথিত শব্দটি জুড়ে তার পর উচ্চারন করা হত। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকেে মানুষের হৃদয় থেকে মুছে দেয়ার হেন কোন কাজ অবশিষ্ট রাখেনি যা তারা করেনি।সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এসব অপচেষ্টা সত্ত্বেও মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিন্দুমাত্র মুছে ফেলা যায়নি।বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনার সুচিন্তিত পদক্ষেপের কারণে ইতোমধ্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের তৎপরতা প্রতিরোধ করার বেশকিছু সফল উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বহুত্ববাদী অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথে চলার কারণে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সমগ্র বিশ্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপি প্রসংশিত হচ্ছেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা।এক সমিক্ষায় দেখা গেছে--"আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সংগঠনের চাইতেও "ব্যক্তি হাসিনা" অনেক বেশী জনপ্রিয় ও গ্রহনযোগ্য। সেই গ্রহন যোগ্যতা দেশে যেমন আন্তজাতিক মহলেও তেমন।আর সেই জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতার নিম্নমূখিনতা নেই আছে শুধু স্থীরতা এবং উধ্বমুখিতা।

এর মধ্যেই সাম্প্রদায়িক শক্তির ষড়যন্ত্রের ন্যক্কারজনক তৎপরতাও লক্ষ করা গেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ধৈয্যের সঙ্গে তাঁদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পেরেছেন,তাঁদেরকে সাময়িক নিস্তেজ করতে পেরেছেন কিন্তু তাঁদের শেকড় সমূলে উৎপাটন করতে পারেননি।দুর্বলতার মহুর্তে আবারও ফণা তোলে ফুঁসফাঁস করবে না এমন নয়।ইতিমধ্যে তাঁরাও নতুন করে ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টার অংশ বিশ্বব্যাপি স্বিকৃত "ন্যায় বিচারের প্রতিক হাইকোর্টের সামনের ভাস্কয্যকে মুর্তি নাম দিয়ে" তা সরানোর আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছে।

এমনও উদাহরন সরকারে সৃষ্টি হচ্ছে---সরকারের নীতি আদর্শকেও তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ একুশ বছর রোপিত সাম্প্রদায়িক বীজ তাঁদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার লক্ষে সরকারকে বারবার বিব্রত করে চলেছে।নীতি আদর্শ বহিভুত পাঠ্যসুচি প্রবর্তন, বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশাসনের অভ্যন্তরে জঙ্গি লালন, সরকারের এলিট বাহিনী কতৃক হত্যা, গুম, আন্দোলন দমনের নামে বিরুধী নেতাকর্মীদের হয়রানি ইত্যাদি ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড থেকে সরকারকে মুক্ত করা যায়নি।তাঁদের সাহষের প্রসংশা না করেও পারিনা--"মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সুনির্দিষ্ট আদেশ-নির্দেশও অনেকক্ষেত্রে তাঁরা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা অথবা বানচাল করে দিচ্ছে অথবা বানচাল করতে উদ্যত হচ্ছে।"থেমে থেমে সাম্প্রদায়িক ঘটনাও ঘটিয়ে চলেছে, জঙ্গি প্রস্তুতিও নিতে দেখা যায়।

তাঁদের রক্ষক-প্রেতাত্বাদের ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন, সংগ্রাম, নাশকতার হুমকিও লক্ষ করা যায়।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় ; সেই সমস্ত ইস্যু "সৃষ্টির আগেই ধ্বংস" করে উন্নয়ন অগ্রগতির চাকা সচল রেখেছেন।কোন কোন ক্ষেত্রে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এড়িয়ে চলার নীতিও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা চেতনা এ ক্ষেত্রে অত্যান্ত সুদুরপ্রসারি ও গঠনমূলক বটে। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন-- যতদিন বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবেনা, বিজ্ঞান মনস্ক জাতি গড়ে উঠবেনা,মানবিক গুনাবলী জাগ্রত করা যাবেনা, শিল্পসমৃদ্ধ দেশ গড়ে উঠবেনা, কর্মঠ জাতি গড়ে উঠবেনা ততক্ষন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প সমাজ থেকে সমূলে উচ্ছেদ সম্ভব হবেনা। মুলত: বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে ইহাই সত্য এবং বাস্তব --"আমিও মনে করি।"

       ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতিক 'ভাষার মাসে' সবাইকে নতুন করে শফথ নেয়া প্রয়োজন।যেকোন মুল্যে--"যে কোন ছদ্মনামে, যে কোন স্পর্ষকাতর ধর্মীয় ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক অন্ধগোষ্টির উত্থান প্রচেষ্টা হোকনা কেন অংকুরেই তাঁদের সেই প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে হবে।এই লক্ষকে সামনে রেখে--"অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ সবাইকে সতর্ক থেকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দৃঢ় শপথ নিতে হবে"। সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা অ-শুভ শক্তির বিভ্রান্তিতে সকলকে ধৈয্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়া এ সময়ে খুবই প্রয়োজন।
        "জয় বাংলা     জয় বঙ্গবন্ধু"
   ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা