বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক--"রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত একটি অনা-কাংক্ষিত ঘটনা।"
 (রুহুল আমিন মজুমদার)

     বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের গতকাল রাতে একটি অনাকাংক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যম, অপ-লাইনের পত্র-পত্রিকা, রাজনৈতিক মহল সহ দেশব্যাপি ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দলের সাধারন সম্পাদক হিসেবে একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের গায়ে হাত তোলা কোন অবস্থাই সমূচিন হয়নি--"ইহা বলার অপেক্ষা রাখেনা।" আমাদের দেশে উধ্বতন নেতানেত্রীর আচার আচরন নিয়ে দলীয় নেতাদের আলোচনা সমালোচনা করার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি বিদায় এক্ষেত্রেও ভুক্তভূগি সাংসদ ঘটনাটিকে হালকা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছেন।সংশ্লিষ্টদের বিবৃতি লক্ষ করলেই অনুমান করা যায়।

      প্রত্যেক ব্যাক্তির কর্মক্ষমতার নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে।উক্ত সীমারেখার বাহিরে বেশী দিন চলতে থাকলে বিষয়টি তাঁর শারিরীক মানষিক, স্নায়ু যন্ত্রের উপর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।স্নায়ুবিক চাপ সামলাতে না পেরে অনেক সময় ইচ্ছার বাহিরেও বিরুপ আচরন করা অস্বাভাবিক নয়।এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে আমি মনে করি।

  লক্ষ করলে দেখা যায়--ঘটনার ব্যাখ্যায় উক্ত ঘটনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ কেউই অস্বীকার করেননি। তবে আমরা  আমজনতা সন্দিহান--"ঘটনার মূলে অন্য কোন বিষয় জড়িত রয়েছে কি-না।"

          লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে যার দাওয়াত খেতে গেলেন মন্ত্রী সেই গৃহস্তই বাড়ীতে উপস্থিত নেই- বাদবাকি আশপাশের সবাই সেখানে উপস্থীত।উনি রাস্তায় আছেন, আসছেন যতক্ষন বলা হয়েছে তাঁর "সিকি পরিমান সময়েরও কম সময়" লাগার কথা এমপি মহোদয়ের আবাস্থল থেকে যমুনা রিসোর্টে আসতে।নিশ্চয়ই মন্ত্রী মহোদয় তাঁর এলাকার কোন একটি আবশ্যকীয় ঘটনার বিবরণ উক্ত সাংসদের নিজমূখে শুনার জন্যই উনাকেই খবর দিয়ে রেখেছিলেন--"তিনি রাতের খাবার তাঁর সঙ্গেই খাবেন।" মন্ত্রী খানা ঠিকই পেয়েছেন কিন্তু যার উদ্দেশ্যে রাত্রী যাপন করার কথা ছিল তিনি নেই--কেন নেই? এখানেই অনাকাংখিত ঘটনার রহস্য লুকিয়ে আছে দেশব্যাপি আমজনতার উপলব্দি।

    সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'আমি এমপি মো. ছানোয়ার হোসেনকে শাসন করেছি। এটা আমাদের আওয়ামী লীগ পরিবারের বিষয়। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এটা আমি করতেই পারি।'
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেনকে চড় মারা-সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর  এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি।অভিযোগের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'চড় মারার বিষয়ে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, সেই এমপি তো অভিযোগ করেননি। তিনি কি অভিযোগ করেছেন কাউকে? না, তিনি করেননি।'

এদিকে টাঙ্গাইলের এমপি মো. ছানোয়ার হোসেনও জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে তার লাঞ্ছিত হওয়ার খবর সঠিক নয়।যুগান্তরকে তিনি বলেন, 'মন্ত্রী নেতা-কর্মীদের ভিড় আর স্লোগানে বিরক্ত প্রকাশ করে একটু রাগারাগি করেছেন।'এ নিয়ে যারা মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান ছানোয়ার হোসেন।

উল্লেখ্য, নাটোর থেকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের টাঙ্গাইলে যমুনা রিসোর্টে শনিবার যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় তার রাতের খাবারের আয়োজন করেন টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নবনির্বাচিত এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী।কিন্তু হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি উপস্থিত না থাকায় ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাতের খাবার না খেয়েই চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

এ সময় টাঙ্গাইল-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী রাস্তায় রয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন বলে জানান।

এ সময় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে এমপি ছানোয়ার হোসেনকে চড়-থাপ্পড় মারেন বলে একটি খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।অবশ্য পরে ওবায়দুল কাদের রিসোর্ট ত্যাগ করার আগে এমপি ছানোয়ার হোসেনের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন বলেও জানা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয়, যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, নাহার আহমেদ, কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খান আহম্মেদ শুভ এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

       ঘটনার বিষয়ে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন শনিবার রাতেই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন----"মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক, তিনি আমার বড় ভাই। তিনি শাসন করতে পারেন এবং তিনি আমাদের আদরও করবেন। তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তিনি যাওয়ার আগে মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে আদর করেছেন।'ঘটনার বিষয়ে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী যুগান্তরকে বলেন, 'ওবায়দুল কাদের ভাই আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের শাসন করেন, আবার আদরও করেন। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।'

এদিকে, রোববার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের মির্জাপুরে চার লেনের কাজ ওবায়দুল কাদেরের পরিদর্শন করার কথা থাকলেও ওই ঘটনার পর রাতেই ঢাকা ফিরে গিয়ে তিনি এ কর্মসূচি বাতিল করে দেন।

     জনাব ওবায়দুল কাদের একজন কর্মঠ মন্ত্রী সকলেরই জানা আছে।দেশের অত্যান্ত স্পষ্যকাতর মন্ত্রানালয়ের দায়িত্ব পালনরত: অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় দেশে বিদেশে আলোচিত "পদ্মাসেতু" যথাসময়ে কায্যদেশ সমাপ্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন।উক্ত কাজটিও কোনপ্রকার কেলেংকারি ছাড়াই চল্লিশ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত করেছেন। সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকাকালিন সময়ে দেশের মানুষ দেখেছে তাঁর কর্মতৎপরতা।রাতবিরাত, যখন তখন সরকারি কাজে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো এবং মাঝপথে নেমে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি ও বিষয়ের খোঁজখবর নেয়া তার রুটিন কাজের মধ্যেই অন্তভূক্ত ছিল। এনিয়ে সামাজিক মাধ্যম সহ পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রিক মিডিয়ায় হরহামেশাই আলোচনা সমালোনার মধ্যমণিতে তিনিই ছিলেন।

    দীর্ঘদিন যাবৎ দলের বিভিন্ন পয্যায় দাবি ছিল সরকার থেকে দলকে আলাদা করার।বিগত সম্মেলনে সর্বস্তরের দাবির প্রেক্ষাপটে সভানেত্রী সেই আলোকেই দলের নেতা নির্বাচন করার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়ে উঠায় দেশব্যাপি নেতাকর্মীদের মধ্যে  বিশেষ চাঞ্চল্যতা পরিলক্ষিত হয়।দলের বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকাবস্থায় সারাদেশের নেতাকর্মীদের মনোভাবের প্রতি দৃষ্টি রেখে জনাব ওবায়দুল কাদেরকে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করেন।
   
    এর আগে বিগত সরকার সমূহে লক্ষ করা গেছে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন  পদের অধিকারি অধিকতর দপ্তর কেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে রাখা হ'ত।মন্ত্রনালয়টি দেশের জন্যে গুরুত্বপুর্ণ হলেও কর্মকান্ড ছিল একান্তই দপ্তর কেন্দ্রিক।ফলে দল ও সরকার পরিচালনায় খুব বেশী সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা ছিলনা।তদপোরি বিভিন্ন সময়ে দলের কায্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিলে দেশব্যাপি আলোচনার ঝড় বয়ে যেতেও আমরা দেখেছি।
   
    জনাব ওবায়দুল কাদেরের সড়ক মন্ত্রনালয় এবং বাড়তি দায়িত্ব 'সেতু মন্ত্রনালয়' নিশ্চয়ই তাঁর কর্মক্ষমতার অতিরিক্ত ছিল আগেই পরিলক্ষিত হয়েছে। তার উপর দেশের সর্ববৃহৎ দলের দলীয় দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রনালয়দ্বয় ও দলীয় দায়িত্ব উভয়ের অস্বাভাবিক ভারে ন্যুজ হওয়াই তাঁর  স্বাভাবিক, বয়সও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর।তিনি কোনকাজ ফেলে রাখার পাত্র নন, সময়ের কাজ সময়ে করাই তাঁর অভ্যেস ছিল আগে থেকে। সময়ানুবর্তিতা, কর্মদক্ষতা, নিয়মানুবর্তিতা, প্রজ্ঞা, নিষ্টা তাঁকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে।
   
     এমনিতেই আমাদের দেশের লক্ষনীয় রাজনৈতিক দিক-যিনি যতবেশী কাজে ব্যাস্ত থাকেন তার সমালোচনাও ততোধিক বেশী হয়। তাঁর ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হবেনা জানি। কিন্তু উদ্ভুত ঘটনা তদ্রুপ কোন কাজের আওতায় পড়েনা- "ইহা সম্পুর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারের আওতায় পড়ে বিধায় রাজনৈতিক সচেতন মহল কোন অবস্থায় মেনে নিতে পারছেন না"। এইরুপ রাজনৈতিক কালচার ভবিষ্যতে দলকে চলমান 'বিগবসের' তুলনায় আরো গভীর ভাবে "বিগবস" এর খপ্পরে নিয়ে যেতে পারে।যেখান থেকে দলকে আর হয়ত মুক্ত করা আদৌ সম্ভব হবে না।
            "জয় বাংলা        জয়বঙ্গবন্ধু"
          ruhulaminmujumder27@gmail.com
     

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন