বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক--"রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত একটি অনা-কাংক্ষিত ঘটনা।"
(রুহুল আমিন মজুমদার)
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের গতকাল রাতে একটি অনাকাংক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যম, অপ-লাইনের পত্র-পত্রিকা, রাজনৈতিক মহল সহ দেশব্যাপি ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দলের সাধারন সম্পাদক হিসেবে একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের গায়ে হাত তোলা কোন অবস্থাই সমূচিন হয়নি--"ইহা বলার অপেক্ষা রাখেনা।" আমাদের দেশে উধ্বতন নেতানেত্রীর আচার আচরন নিয়ে দলীয় নেতাদের আলোচনা সমালোচনা করার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি বিদায় এক্ষেত্রেও ভুক্তভূগি সাংসদ ঘটনাটিকে হালকা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছেন।সংশ্লিষ্টদের বিবৃতি লক্ষ করলেই অনুমান করা যায়।
প্রত্যেক ব্যাক্তির কর্মক্ষমতার নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে।উক্ত সীমারেখার বাহিরে বেশী দিন চলতে থাকলে বিষয়টি তাঁর শারিরীক মানষিক, স্নায়ু যন্ত্রের উপর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।স্নায়ুবিক চাপ সামলাতে না পেরে অনেক সময় ইচ্ছার বাহিরেও বিরুপ আচরন করা অস্বাভাবিক নয়।এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে আমি মনে করি।
লক্ষ করলে দেখা যায়--ঘটনার ব্যাখ্যায় উক্ত ঘটনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ কেউই অস্বীকার করেননি। তবে আমরা আমজনতা সন্দিহান--"ঘটনার মূলে অন্য কোন বিষয় জড়িত রয়েছে কি-না।"
লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে যার দাওয়াত খেতে গেলেন মন্ত্রী সেই গৃহস্তই বাড়ীতে উপস্থিত নেই- বাদবাকি আশপাশের সবাই সেখানে উপস্থীত।উনি রাস্তায় আছেন, আসছেন যতক্ষন বলা হয়েছে তাঁর "সিকি পরিমান সময়েরও কম সময়" লাগার কথা এমপি মহোদয়ের আবাস্থল থেকে যমুনা রিসোর্টে আসতে।নিশ্চয়ই মন্ত্রী মহোদয় তাঁর এলাকার কোন একটি আবশ্যকীয় ঘটনার বিবরণ উক্ত সাংসদের নিজমূখে শুনার জন্যই উনাকেই খবর দিয়ে রেখেছিলেন--"তিনি রাতের খাবার তাঁর সঙ্গেই খাবেন।" মন্ত্রী খানা ঠিকই পেয়েছেন কিন্তু যার উদ্দেশ্যে রাত্রী যাপন করার কথা ছিল তিনি নেই--কেন নেই? এখানেই অনাকাংখিত ঘটনার রহস্য লুকিয়ে আছে দেশব্যাপি আমজনতার উপলব্দি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'আমি এমপি মো. ছানোয়ার হোসেনকে শাসন করেছি। এটা আমাদের আওয়ামী লীগ পরিবারের বিষয়। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এটা আমি করতেই পারি।'
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেনকে চড় মারা-সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি।অভিযোগের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'চড় মারার বিষয়ে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, সেই এমপি তো অভিযোগ করেননি। তিনি কি অভিযোগ করেছেন কাউকে? না, তিনি করেননি।'
এদিকে টাঙ্গাইলের এমপি মো. ছানোয়ার হোসেনও জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে তার লাঞ্ছিত হওয়ার খবর সঠিক নয়।যুগান্তরকে তিনি বলেন, 'মন্ত্রী নেতা-কর্মীদের ভিড় আর স্লোগানে বিরক্ত প্রকাশ করে একটু রাগারাগি করেছেন।'এ নিয়ে যারা মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান ছানোয়ার হোসেন।
উল্লেখ্য, নাটোর থেকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের টাঙ্গাইলে যমুনা রিসোর্টে শনিবার যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় তার রাতের খাবারের আয়োজন করেন টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নবনির্বাচিত এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী।কিন্তু হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি উপস্থিত না থাকায় ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাতের খাবার না খেয়েই চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।
এ সময় টাঙ্গাইল-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী রাস্তায় রয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন বলে জানান।
এ সময় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে এমপি ছানোয়ার হোসেনকে চড়-থাপ্পড় মারেন বলে একটি খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।অবশ্য পরে ওবায়দুল কাদের রিসোর্ট ত্যাগ করার আগে এমপি ছানোয়ার হোসেনের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন বলেও জানা গেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয়, যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, নাহার আহমেদ, কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খান আহম্মেদ শুভ এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন শনিবার রাতেই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন----"মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক, তিনি আমার বড় ভাই। তিনি শাসন করতে পারেন এবং তিনি আমাদের আদরও করবেন। তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তিনি যাওয়ার আগে মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে আদর করেছেন।'ঘটনার বিষয়ে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী যুগান্তরকে বলেন, 'ওবায়দুল কাদের ভাই আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের শাসন করেন, আবার আদরও করেন। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।'
এদিকে, রোববার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের মির্জাপুরে চার লেনের কাজ ওবায়দুল কাদেরের পরিদর্শন করার কথা থাকলেও ওই ঘটনার পর রাতেই ঢাকা ফিরে গিয়ে তিনি এ কর্মসূচি বাতিল করে দেন।
জনাব ওবায়দুল কাদের একজন কর্মঠ মন্ত্রী সকলেরই জানা আছে।দেশের অত্যান্ত স্পষ্যকাতর মন্ত্রানালয়ের দায়িত্ব পালনরত: অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় দেশে বিদেশে আলোচিত "পদ্মাসেতু" যথাসময়ে কায্যদেশ সমাপ্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন।উক্ত কাজটিও কোনপ্রকার কেলেংকারি ছাড়াই চল্লিশ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত করেছেন। সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকাকালিন সময়ে দেশের মানুষ দেখেছে তাঁর কর্মতৎপরতা।রাতবিরাত, যখন তখন সরকারি কাজে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো এবং মাঝপথে নেমে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি ও বিষয়ের খোঁজখবর নেয়া তার রুটিন কাজের মধ্যেই অন্তভূক্ত ছিল। এনিয়ে সামাজিক মাধ্যম সহ পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রিক মিডিয়ায় হরহামেশাই আলোচনা সমালোনার মধ্যমণিতে তিনিই ছিলেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ দলের বিভিন্ন পয্যায় দাবি ছিল সরকার থেকে দলকে আলাদা করার।বিগত সম্মেলনে সর্বস্তরের দাবির প্রেক্ষাপটে সভানেত্রী সেই আলোকেই দলের নেতা নির্বাচন করার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়ে উঠায় দেশব্যাপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশেষ চাঞ্চল্যতা পরিলক্ষিত হয়।দলের বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকাবস্থায় সারাদেশের নেতাকর্মীদের মনোভাবের প্রতি দৃষ্টি রেখে জনাব ওবায়দুল কাদেরকে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করেন।
এর আগে বিগত সরকার সমূহে লক্ষ করা গেছে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন পদের অধিকারি অধিকতর দপ্তর কেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে রাখা হ'ত।মন্ত্রনালয়টি দেশের জন্যে গুরুত্বপুর্ণ হলেও কর্মকান্ড ছিল একান্তই দপ্তর কেন্দ্রিক।ফলে দল ও সরকার পরিচালনায় খুব বেশী সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা ছিলনা।তদপোরি বিভিন্ন সময়ে দলের কায্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিলে দেশব্যাপি আলোচনার ঝড় বয়ে যেতেও আমরা দেখেছি।
জনাব ওবায়দুল কাদেরের সড়ক মন্ত্রনালয় এবং বাড়তি দায়িত্ব 'সেতু মন্ত্রনালয়' নিশ্চয়ই তাঁর কর্মক্ষমতার অতিরিক্ত ছিল আগেই পরিলক্ষিত হয়েছে। তার উপর দেশের সর্ববৃহৎ দলের দলীয় দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রনালয়দ্বয় ও দলীয় দায়িত্ব উভয়ের অস্বাভাবিক ভারে ন্যুজ হওয়াই তাঁর স্বাভাবিক, বয়সও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর।তিনি কোনকাজ ফেলে রাখার পাত্র নন, সময়ের কাজ সময়ে করাই তাঁর অভ্যেস ছিল আগে থেকে। সময়ানুবর্তিতা, কর্মদক্ষতা, নিয়মানুবর্তিতা, প্রজ্ঞা, নিষ্টা তাঁকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে।
এমনিতেই আমাদের দেশের লক্ষনীয় রাজনৈতিক দিক-যিনি যতবেশী কাজে ব্যাস্ত থাকেন তার সমালোচনাও ততোধিক বেশী হয়। তাঁর ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হবেনা জানি। কিন্তু উদ্ভুত ঘটনা তদ্রুপ কোন কাজের আওতায় পড়েনা- "ইহা সম্পুর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারের আওতায় পড়ে বিধায় রাজনৈতিক সচেতন মহল কোন অবস্থায় মেনে নিতে পারছেন না"। এইরুপ রাজনৈতিক কালচার ভবিষ্যতে দলকে চলমান 'বিগবসের' তুলনায় আরো গভীর ভাবে "বিগবস" এর খপ্পরে নিয়ে যেতে পারে।যেখান থেকে দলকে আর হয়ত মুক্ত করা আদৌ সম্ভব হবে না।
"জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
ruhulaminmujumder27@gmail.com
(রুহুল আমিন মজুমদার)
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের গতকাল রাতে একটি অনাকাংক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যম, অপ-লাইনের পত্র-পত্রিকা, রাজনৈতিক মহল সহ দেশব্যাপি ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দলের সাধারন সম্পাদক হিসেবে একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের গায়ে হাত তোলা কোন অবস্থাই সমূচিন হয়নি--"ইহা বলার অপেক্ষা রাখেনা।" আমাদের দেশে উধ্বতন নেতানেত্রীর আচার আচরন নিয়ে দলীয় নেতাদের আলোচনা সমালোচনা করার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি বিদায় এক্ষেত্রেও ভুক্তভূগি সাংসদ ঘটনাটিকে হালকা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছেন।সংশ্লিষ্টদের বিবৃতি লক্ষ করলেই অনুমান করা যায়।
প্রত্যেক ব্যাক্তির কর্মক্ষমতার নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে।উক্ত সীমারেখার বাহিরে বেশী দিন চলতে থাকলে বিষয়টি তাঁর শারিরীক মানষিক, স্নায়ু যন্ত্রের উপর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।স্নায়ুবিক চাপ সামলাতে না পেরে অনেক সময় ইচ্ছার বাহিরেও বিরুপ আচরন করা অস্বাভাবিক নয়।এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে আমি মনে করি।
লক্ষ করলে দেখা যায়--ঘটনার ব্যাখ্যায় উক্ত ঘটনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ কেউই অস্বীকার করেননি। তবে আমরা আমজনতা সন্দিহান--"ঘটনার মূলে অন্য কোন বিষয় জড়িত রয়েছে কি-না।"
লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে যার দাওয়াত খেতে গেলেন মন্ত্রী সেই গৃহস্তই বাড়ীতে উপস্থিত নেই- বাদবাকি আশপাশের সবাই সেখানে উপস্থীত।উনি রাস্তায় আছেন, আসছেন যতক্ষন বলা হয়েছে তাঁর "সিকি পরিমান সময়েরও কম সময়" লাগার কথা এমপি মহোদয়ের আবাস্থল থেকে যমুনা রিসোর্টে আসতে।নিশ্চয়ই মন্ত্রী মহোদয় তাঁর এলাকার কোন একটি আবশ্যকীয় ঘটনার বিবরণ উক্ত সাংসদের নিজমূখে শুনার জন্যই উনাকেই খবর দিয়ে রেখেছিলেন--"তিনি রাতের খাবার তাঁর সঙ্গেই খাবেন।" মন্ত্রী খানা ঠিকই পেয়েছেন কিন্তু যার উদ্দেশ্যে রাত্রী যাপন করার কথা ছিল তিনি নেই--কেন নেই? এখানেই অনাকাংখিত ঘটনার রহস্য লুকিয়ে আছে দেশব্যাপি আমজনতার উপলব্দি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'আমি এমপি মো. ছানোয়ার হোসেনকে শাসন করেছি। এটা আমাদের আওয়ামী লীগ পরিবারের বিষয়। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এটা আমি করতেই পারি।'
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেনকে চড় মারা-সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি।অভিযোগের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'চড় মারার বিষয়ে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, সেই এমপি তো অভিযোগ করেননি। তিনি কি অভিযোগ করেছেন কাউকে? না, তিনি করেননি।'
এদিকে টাঙ্গাইলের এমপি মো. ছানোয়ার হোসেনও জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে তার লাঞ্ছিত হওয়ার খবর সঠিক নয়।যুগান্তরকে তিনি বলেন, 'মন্ত্রী নেতা-কর্মীদের ভিড় আর স্লোগানে বিরক্ত প্রকাশ করে একটু রাগারাগি করেছেন।'এ নিয়ে যারা মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান ছানোয়ার হোসেন।
উল্লেখ্য, নাটোর থেকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের টাঙ্গাইলে যমুনা রিসোর্টে শনিবার যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় তার রাতের খাবারের আয়োজন করেন টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নবনির্বাচিত এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী।কিন্তু হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি উপস্থিত না থাকায় ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাতের খাবার না খেয়েই চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।
এ সময় টাঙ্গাইল-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী রাস্তায় রয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন বলে জানান।
এ সময় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে এমপি ছানোয়ার হোসেনকে চড়-থাপ্পড় মারেন বলে একটি খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।অবশ্য পরে ওবায়দুল কাদের রিসোর্ট ত্যাগ করার আগে এমপি ছানোয়ার হোসেনের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন বলেও জানা গেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয়, যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, নাহার আহমেদ, কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খান আহম্মেদ শুভ এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন শনিবার রাতেই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন----"মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক, তিনি আমার বড় ভাই। তিনি শাসন করতে পারেন এবং তিনি আমাদের আদরও করবেন। তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তিনি যাওয়ার আগে মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে আদর করেছেন।'ঘটনার বিষয়ে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী যুগান্তরকে বলেন, 'ওবায়দুল কাদের ভাই আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের শাসন করেন, আবার আদরও করেন। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।'
এদিকে, রোববার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের মির্জাপুরে চার লেনের কাজ ওবায়দুল কাদেরের পরিদর্শন করার কথা থাকলেও ওই ঘটনার পর রাতেই ঢাকা ফিরে গিয়ে তিনি এ কর্মসূচি বাতিল করে দেন।
জনাব ওবায়দুল কাদের একজন কর্মঠ মন্ত্রী সকলেরই জানা আছে।দেশের অত্যান্ত স্পষ্যকাতর মন্ত্রানালয়ের দায়িত্ব পালনরত: অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় দেশে বিদেশে আলোচিত "পদ্মাসেতু" যথাসময়ে কায্যদেশ সমাপ্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন।উক্ত কাজটিও কোনপ্রকার কেলেংকারি ছাড়াই চল্লিশ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত করেছেন। সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকাকালিন সময়ে দেশের মানুষ দেখেছে তাঁর কর্মতৎপরতা।রাতবিরাত, যখন তখন সরকারি কাজে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো এবং মাঝপথে নেমে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি ও বিষয়ের খোঁজখবর নেয়া তার রুটিন কাজের মধ্যেই অন্তভূক্ত ছিল। এনিয়ে সামাজিক মাধ্যম সহ পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রিক মিডিয়ায় হরহামেশাই আলোচনা সমালোনার মধ্যমণিতে তিনিই ছিলেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ দলের বিভিন্ন পয্যায় দাবি ছিল সরকার থেকে দলকে আলাদা করার।বিগত সম্মেলনে সর্বস্তরের দাবির প্রেক্ষাপটে সভানেত্রী সেই আলোকেই দলের নেতা নির্বাচন করার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়ে উঠায় দেশব্যাপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশেষ চাঞ্চল্যতা পরিলক্ষিত হয়।দলের বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকাবস্থায় সারাদেশের নেতাকর্মীদের মনোভাবের প্রতি দৃষ্টি রেখে জনাব ওবায়দুল কাদেরকে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করেন।
এর আগে বিগত সরকার সমূহে লক্ষ করা গেছে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন পদের অধিকারি অধিকতর দপ্তর কেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে রাখা হ'ত।মন্ত্রনালয়টি দেশের জন্যে গুরুত্বপুর্ণ হলেও কর্মকান্ড ছিল একান্তই দপ্তর কেন্দ্রিক।ফলে দল ও সরকার পরিচালনায় খুব বেশী সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা ছিলনা।তদপোরি বিভিন্ন সময়ে দলের কায্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিলে দেশব্যাপি আলোচনার ঝড় বয়ে যেতেও আমরা দেখেছি।
জনাব ওবায়দুল কাদেরের সড়ক মন্ত্রনালয় এবং বাড়তি দায়িত্ব 'সেতু মন্ত্রনালয়' নিশ্চয়ই তাঁর কর্মক্ষমতার অতিরিক্ত ছিল আগেই পরিলক্ষিত হয়েছে। তার উপর দেশের সর্ববৃহৎ দলের দলীয় দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রনালয়দ্বয় ও দলীয় দায়িত্ব উভয়ের অস্বাভাবিক ভারে ন্যুজ হওয়াই তাঁর স্বাভাবিক, বয়সও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর।তিনি কোনকাজ ফেলে রাখার পাত্র নন, সময়ের কাজ সময়ে করাই তাঁর অভ্যেস ছিল আগে থেকে। সময়ানুবর্তিতা, কর্মদক্ষতা, নিয়মানুবর্তিতা, প্রজ্ঞা, নিষ্টা তাঁকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে।
এমনিতেই আমাদের দেশের লক্ষনীয় রাজনৈতিক দিক-যিনি যতবেশী কাজে ব্যাস্ত থাকেন তার সমালোচনাও ততোধিক বেশী হয়। তাঁর ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হবেনা জানি। কিন্তু উদ্ভুত ঘটনা তদ্রুপ কোন কাজের আওতায় পড়েনা- "ইহা সম্পুর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারের আওতায় পড়ে বিধায় রাজনৈতিক সচেতন মহল কোন অবস্থায় মেনে নিতে পারছেন না"। এইরুপ রাজনৈতিক কালচার ভবিষ্যতে দলকে চলমান 'বিগবসের' তুলনায় আরো গভীর ভাবে "বিগবস" এর খপ্পরে নিয়ে যেতে পারে।যেখান থেকে দলকে আর হয়ত মুক্ত করা আদৌ সম্ভব হবে না।
"জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
ruhulaminmujumder27@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন