পত্রিকায় প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ময়নাতদন্ত।
   (রুহুল আমিন মজুমদার)

      বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এতদঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক গনতান্ত্রিক সংগঠন। বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে জড়িয়ে আছে এই দলটির এবং দলের  নেতা বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধের  জম্মদাতা, শ্রেষ্ঠবাঙ্গালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নাম। মুক্তিযুদ্ধের পর জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়ে। দলে দলে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার শফথ নিতে থাকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক দলের নেতাকর্মী, চীনপন্থি কম্যুনিষ্ট পার্টির তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামীলীগ ছাড়া বাকি কোন দলের অস্তিত্ব খুঁজে নিতে দুরবীন যন্ত্রের সাহায্য নিলেও খোঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল।

     এমন পরিস্থীতিতে সাম্রাজ্যবাদি চক্রের কূটচালে ছাত্রলীগের একটি অংশ দলত্যাগ করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষে সরকার বিরুধী একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। রাতারাতি দলটি সারাদেশব্যাপি শাখা, প্রশাখা ছড়িয়ে শক্তিশালী দলে রুপান্তরীত হয়। আশু বিপ্লবের লক্ষে তৎক্ষনাৎ দলটির একটি সামরিক শাখারও বিকাশ ঘটে।সামরিক শাখাটি গনবাহিনী নাম নিয়ে আত্মপ্রকাশ করার উষালগ্নেই  অত্যাধুনিক  সমরাস্ত্রের সজ্জিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিল। তখনকার তরুন প্রজম্ম একটুখানিও চিন্তা করেনি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশে সামরিক বাহিনীর হাতে যেখানে অস্ত্র নেই,  তাঁদের হাতে এই সমস্ত ভীনদেশী অত্যাধুনিক অস্ত্র কোত্থেকে আসে, কেন আসে।

      ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট ঘাতকচক্রের হাতে বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবারে নিহত হলে আওয়ামী লীগের উপর চরম বিপয্যয় নেমে আসে। দলের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা মীর জাপরের বংশ তাঁদের আসল চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর রক্তস্রোতের উপর দাঁড়িয়ে সেইদিন ভোর থেকে ঘাতক চক্র ভীরু ভীরু কন্ঠে সাধু-চলিত ভাষার সংমিশ্রনে হৎচকিতভাবে যে ঘোষনাটি বাংলাদেশ বেতারে(রেডিও বাংলাদেশ) পাঠ করেছিল বার বার, সেই ঘোষনানুযায়ী তাঁরা শুধুমাত্র সেই দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি---হত্যা করেছিল বাংলাদেশ, বাঙ্গালী জাতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধকে।

  তাঁর পরবর্তী ইতিহাস আওয়ামী নিধনের ইতিহাস, সংখ্যালুঘু নিধনের ইতিহাস, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি উত্থানের ইতিহাস, পবিত্র ধর্ম ইসলামকে বেচাকেনার ইতিহাস। সেদিন থেকে দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামীলীগ নিধন হয়েছিল ঠিকই, যাদের কাঁধে ভর দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়েছিল, সেই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের অস্তিত্ব কোনপ্রকার নিড়ানী ছাড়াই কালক্রমে নিধন হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে লক্ষ লক্ষ বিপ্লবীর মিছিল, গগনবিদারী শ্লোগান,গনভবন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ঘেরাও এর হঠকারি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন অব্যাহত ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর একই বিপ্লবীদল ঢাকা শহরের সববস্তির টোকাই ভাড়া করেও অদ্যাবদি একটি মফস্বল শহরে অনুষ্ঠিত সমপরিমানের জঙ্গীমিছিলও কোনদিন করা সম্ভব হয়নি।

      তদ্রুপ রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থীতি আবারো উত্থান ঘটানোর চক্রান্তে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারি দল জাতির জনকের জৈষ্ঠকন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার নেতৃত্বাধীন  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। দেশী-বিদেশী একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ০১/০৪/২০১৭ ইং শনিবার প্রখ্যাত দুটি পত্রিকা "দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক আজকের সূয্যদয়" পত্রিকায় জনাব "আবুল খায়ের ও মেহেদী হাসানের" একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট চাপা হয়েছে। রিপোর্টের মর্মানুযায়ী সরকারের আকাশচুম্ভি উন্নয়ন অগ্রগতির রথ থামানোর উদ্দেশ্যে দেশীবিদেশী চক্রান্তে, উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে দলে দলে জামায়াত শিবির সহ অন্যান্ন স্বাধীনতা বিরুধীদের অনুপ্রবেশ সুনিশ্চিত করা হয়েছে। একাজে দলের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা মোস্তাকচক্রের সরাসরি জড়িত থাকার ইঙ্গিতও রয়েছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে।

     গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া রিপোর্টের সত্যতা যাছাইকল্পে জনাব "আবুল খায়ের ও মেহেদী হাসান" দেশব্যাপি অনুসন্ধান চালিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ এবং তাঁর নেত্রী শেখ হাসিনার জীবন নাশের উপযোগি ভয়ংকর চিত্রের সন্ধান পেয়েছেন। তাঁদের ভাষায়--"দলে দলে সরকারি দলে বিএনপি-জামায়াত। হাইব্রিডদের মাঠ দখল। গত চার বছরে ঢুকেছে ৩০ হাজারের বেশি। অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি, ফৌজদারী অপরাধ থেকে রক্ষা ও দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই যোগদানের উদ্দেশ্য। হাইকমান্ডের নির্দেশনা উপেক্ষিত, উদ্বিগ্ন ১৪ দলের শরিকরাও।

      রিপোর্টের একটি ছোট একটি অংশ সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করি---"জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য তৃণমূল আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।"

     দল শক্তিশালী করতে ২০১১ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করে আওয়ামী লীগ। সারা দেশে দুই টাকা মূল্যের সদস্য ফরম পাঠানো হয়। কিন্তু পরে তা আর বেশি দূর এগোয়নি। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অভিযান শুরুর পর তা বাস্তবায়নে আর আগ্রহ দেখাননি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়াত ও তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির নেতাকর্মীদের দলে ভেড়ানো হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এতে মদদ দেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় প্রশাসনেও অনুপ্রবেশকারীদের লোকরাই চাকরি পাচ্ছে বেশি। জামায়াতের টাকায় তারা চাকরি পাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীদের একক আধিপত্য বিরাজ করছে।"

     উল্লেখিত রিপোর্টে সামান্যতম অংশও যে বাতুলতা নয়, তাঁর চাক্ষুস প্রমান সহকারে---আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে, আমার অনেক লেখায় তুলে ধরেছিলাম। এবং কি আমার নীজ ইউনিয়নে কিভাবে আওয়ামী নিধন পরিবারের সন্তান, আওয়ামী লীগে যোগদান ব্যাতিরেকে একলাফে দলের ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি পদ সহ ইউ,পি চেয়ারম্যান মনোনয়ন পেয়েছে"---তাঁর সম্পূর্ণ বিবরণী তোলে ধরেছি। চাকুরী ক্ষেত্রেও আমার এলাকার ইউনিয়ন বিএনপি নেতার ছেলে, ঢাকা ইউনিভারসিটির শিবির নেতা কিভাবে, কার মাধ্যমে, কতটাকার বিনিময়ে পুলিশ সার্জেন্টের ন্যায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী লাভ করেছিল--তাঁর বিশদ বিবরনী সহ উল্লেখ করেছিলাম। অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়--আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারক পয্যায়ের কারো নজরেই আমার লেখা গুলি কখনও পড়েনি।

       এমনতর ঘটনা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটেছে তাঁর প্রমানাদি সহ গোয়েন্দাদের একাধিক রিপোর্ট, দলের উধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট জমা দেয়া হয়েছে। দলের সাধারন সম্পাদক একাধিকবার ঐসমস্ত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন ঘোষনাও দিয়েছেন। তিনি তাঁদেরকে তৃনমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের "হাইব্রিড" উপাদিকে চাপিয়ে আরো নিগূড় তাৎপয্যপূর্ণ উপাদি "কাউয়া" বলে সম্বোধন করে তাঁর অন্তরে জমানো ক্ষোভের বহি:প্রকাশও ঘটিয়েছেন।

    ব্যাক্তিগতভাবে আমি একজন ক্ষুদ্র বঙ্গবন্ধু প্রেমি হিসেবে যতটুকু বুঝি-- বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সদ্য স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তর থেকে জাসদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। নতুন দল জাসদের  কাঁধে ভর দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল সাম্রাজ্যবাদি মূৎসুদ্ধি গোষ্টি এবং তাঁদের এদেশীয় দোসরেরা। উদ্দেশ্য ছিল সমৃদ্ধ অত্রাঞ্চলকে তাঁদের পদানত রেখে শাষনশোষন অব্যাহত রাখা। তাঁদের উদ্দেশ্যের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল ''একমাত্র এবং একমাত্র'' 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' এবং তাঁর অবিসংবদিত নেতা, জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।

     বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে একঢিলে দুই পাখি শিকার সম্ভব করেছিল সাম্রাজ্যবাদি চক্র।একদিকে ব্যাক্তি মুজিবকে হত্যা করে তাঁর আদর্শের কবর রচনা এবং তাঁর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে অত্রাঞ্চলে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তোলে দেয়া অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বকারি দল আওয়ামীলীগকে চিরতরে বাংলার মাটি থেকে উচ্ছেদ করে, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে কনফেডারেশন গঠনের পথ পরিস্কার করা। ইতিমধ্যে আমেরিকার গোপন নথি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপি ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে ব্যাপক  আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং বিশ্বনেতৃত্বে নতুন সমীকরনের পথ প্রসস্ত হয়েছে। উল্লেখ্য দেশী--বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা কমপক্ষে ছয়মাস আগে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন হত্যা পরিকল্পনাকারিদের সম্পর্কে কিন্তু তিনি উক্ত সতর্কবাণী হেলায় হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল বাঙ্গালীরা তাঁকে কোনদিনও হত্যা করতে পারেনা।
   
      গত ০১/০৪/২০১৭ ইং তারিখের 'দৈনিক ইত্তেফাক ও আজকের সুর্য্যদয় পত্রিকায় জনাব ''আবুল খায়ের ও মেহেদী হাসানের" অনুসন্ধানী রিপোর্টটি চোখে পড়ার পর নিজকে আর সংযত রাখতে পারিনি। বাংলা নাটকের দৃশ্যের ন্যায় চোখের তারায় শুধুই ভেসে উঠছে একের পর এক ২১ আগষ্ট বোমা হামলা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র পুত্রসন্তান "সজিব ওয়াজেদ জয়" হত্যা পরিকল্পনা। অখ্যাত অজ্ঞাত চট্রগ্রামের ব্যাবসায়ীর বিএনপি দলের যুগ্ম মহাসচিব পদ প্রাপ্তি এবং তাঁর ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা "মোসাদ" কানেকশান। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারি বিমানে নাশকতার চেষ্টা, দেশব্যাপি জঙ্গী উত্থান, হেফাজতে ইসলামের উত্থান এবং তাঁদের ইসলাম রক্ষার নামে শাফলা চত্বরে অবস্থান।ইসলাম রক্ষার নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার তৎক্ষনাৎ নেতাকর্মীদের প্রতি হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ, ঢাকাবাসিকে রাজপথে নেমে আসার আহব্বান, সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলের জন্যে প্রকাশ্য উস্কানী ইত্যাদি সরকার বিরুধী দল সমূহের মঞ্চায়ীত নাটকের দৃশ্যাবলী।

     গোয়েন্দা রিপোর্ট যতটুকু আঁচ করতে পেরেছি---এতে মনে হচ্ছে যেন অবিকল '৭২--৭৫' এর ষড়যন্ত্রের সাথে বর্তমান সময়ের ষড়যন্ত্রের হুবহু  মিল রয়েছে। তখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রকারিদের রাজপথে থাকার জন্যে একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করতে হয়েছিল। বর্তমান সময়ে তাঁর আর দরকার হয়নি। তাঁদের ৭৫ এর ষড়যন্ত্রের ফসল মেজর জিয়ার বিএনপি দীর্ঘবছর তাঁদের পরিচয্যায় বাংলাদেশের জনগনের একটি বিরাট অংশের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে। নি:সন্দেহে সদ্য স্বাধীন দেশের নবগঠিত জাসদের চেয়ে বর্তমানের, তাঁদের ষড়যন্ত্রে সৃষ্ট বিএনপি অনেক বেশি বিশ্বস্থ, জনসম্পৃত্ত, নেতৃত্ব গুনে রাজপথের কায্যকর রাজনৈতিক শক্তি।

    '৭২--৭৫ এ জামায়াতে ইসলাম ৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরুধীতার কারনে লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। শীর্ষনেতারা বিদেশে পালিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ষড়যন্ত্রে ইন্দন যুগিয়েছিল। মাঝারি মাঠপয্যায়ের নেতাকর্মীগন দলে দলে আওয়ামীলীগ ও নতুন জম্মনেয়া জাসদের ছাতার তলায় মুখ লুকিয়েছিল। ছাত্রসংঘের প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ক্যাডার বাহিনী গনবাহিনীতে যোগ দিয়ে গনবাহিনীকে অ-প্রতিরোধ্য বিপ্লবী রণবাহিনীতে রুপান্তর করেছিল।

      বর্তমান সময়েও তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরুধী বিচারের কাঠগড়ায় থাকায় লোকচক্ষুর অন্তরালে তাঁদের অবস্থান। '৭২--৭৫ এর ন্যায় এবারও তাঁদের অনেকে বিদেশে পালিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।মাঝারি পয্যায়ের নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে বিলীন হয়ে আছে।তাঁদের অপ্রতিরোধ্য ছাত্র শাখার অধিকাংশ মেধাবিরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে চাকুরীর সুযোগ করে নিয়েছে। একাংশ জঙ্গিদলে মিশে গেছে। জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন দলের ব্যানারে থেকে শুধুমাত্র সময়ে সময়ে তাঁদের উপস্থীতি জানান দিচ্ছে। বাদবাকীরা হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যান্ন সমমনা দলের সাথে মিশে আছে। ফলে বিশদলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল হওয়া সত্বেও জোটনেত্রী জামায়াতকে ডাকার প্রয়োজন অনুভব করেন না।       অ-প্রয়োজনের একমাত্র কারন--বিএনপি নেত্রী জানেন তাঁরা অধিকাংশই ইতিমধ্যে বিএনপিতে মিশে আছে।

      উল্লেখিত গুপ্ত কাজটি তাঁদের বিদেশী প্রভুদের পরামর্শে এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরার অনুমোদন ক্রমেই ঘটেছে। কৌশলটি স্বাধীনতার পরবর্তী পয্যায় তাঁদের বিলুপ্ত দলের ক্ষেত্রে খুব ভাল রাজনৈতিক ফায়দা দিয়েছিল।বিলুপ্ত দলকে স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্বিগুন শক্তির সমাহারে উজ্জিবীত করতে পেরেছিল। এবারও বিলুপ্ত প্রায় দলের স্বল্পসময়ে পুর্ণজ্জীবনের লক্ষে---তাঁদের নেতাকর্মীদের আওয়ামীলীগে  অনুপ্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।উদ্দেশ্য পুরাতন-- একদিকে আওয়ামী লীগ দলের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি অন্যদিকে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ছাত্র শাখার নেতাকর্মীদের জঙ্গীদলে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে  দেশব্যাপি হত্যাকান্ড, নাশকতা, অরাজকতার সৃষ্টির কৌশল বাস্তবায়ন। শুধু তাই নয়--তাঁদের দলের ছাত্র শাখার বড় একটি অংশকে দলীয় অর্থসাহায্যে আওয়ামী নেতা, এমপি, মন্ত্রীদের নগদ টাকার প্রলোভনে, কেউবা আত্মীয়তার সুত্রে সরকারের গুরুত্ব পুর্ণ ক্যাডার ভিত্তিক পদপদবি দখল, অতিশয় কম শিক্ষায় শিক্ষিতদের সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, বিজিবিতে স্থান করে দিয়েছেন।উদ্দেশ্য পরিস্কার--সরকারি কাজে বিভ্রান্তি ঘটানো। দলের অতিক্ষুদ্রাংশ বিভিন্ন সরকার বিরুধী ক্ষেত্র বিশেষ সরকারি দলে মিশে 'পবিত্র কোরান অবমাননা সহ নানাহ সাম্প্রদায়িক উস্কানি মূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে।যার গণ্ডা চারেক উদাহরনের স্মৃতি "মুজিব ভক্তদে"র মনোপীড়ার কারন হয়ে চোখের জলে আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হয়েছে।

    লক্ষ করলে দেখা যায়--বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করার পর দেশব্যাপি পাইকারি হারে জামায়াত শিবির, বিএনপি নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে।কোন ককোন স্থানে এখনও তা অব্যাহতই রয়েছে। তার আগে "অ-শুভশক্তি এবং তাঁদের দোসর প্রেতাত্বা বিএনপি" এর ধারনা ছিল সরকারের গৃহিত উন্নয়ন কর্মকান্ড যেহেতু দৃশ্যমান হয়নি ; সেহেতু স্বল্প সময়ে ধর্মকে সামনে রেখে দেশব্যাপি নাশকতা, হত্যা, সাজানো গুমখুনের কল্পকাহিনী প্রচারের মাধ্যমে আইনশৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে। তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি--সরকার নাশকতা, জঙ্গিপনা, আগুনবোমায় মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁদের চক্রান্ত রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে। এ-ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীনদেশে অপ্রতুল পাকিস্তান ফেরৎ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়ে যাহা পারেননি তাঁর কন্যা স্বাধীন দেশের স্বাধীনতাপ্রেমি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শতভাগ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
   
      অ-শুভশক্তিবিহীন সাধারন নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠানের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করেন। পুর্ব সরকারের গৃহিত "ভিষন ২০২১" অনুযায়ী "ডিজিটাল বাংলাদেশ" গড়ার লক্ষে নেয়া মেঘা উন্নয়ন কর্মকান্ড একে একে দৃশ্যমান হতে থাকে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে "নিম্নমধ্য আয়ে"র দেশ হিসেবে ঘোষনা প্রদান করে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী 'শেখ হাসিনা'কে সর্বাধিক সম্মানিত উপঢৌকন "ধরিত্রীর মানষকন্যার" উপাদিতে ভুষিত করে।দেশের অভ্যন্তরে ব্যাবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনৈতিক দল,শুসীল সমাজও পিছিয়ে থাকেনি--তাঁরাও জাতির জনকের কন্যাকে "দেশরত্ম" উপাদিতে ভূষিত করে সম্মান জানায়। বিদেশী বন্ধুরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশ  সরকারের গানিতিক উন্নয়ন অগ্রগতিকে তৃতীয় বিশ্বের "রোল মডেল" হিসেবে অভিহীত করে অন্যান্ন দারিদ্রপীড়িত দেশ সমুহকে অনুসরনের পরামর্শ দিতে থাকে।
   
    এমত:বস্থায় অ-শুভশক্তি তাঁদের কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন এনে '৭২--৭৫ এর অবিকল কৌশল কাজে লাগানোর চেষ্টায় আংশিক সফলতা অর্জন করেছে বলে মনে করি। পূর্ণাঙ্গ সফলতার আগেই তাঁদের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা দেশীবিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের নজরে চলে আসে।
       এককথায় বলা যায় কাকতালীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুকে যে সমস্ত দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা হত্যা পরিকল্পনার বিশদ বিবরন সহ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কমপক্ষে ছয়মাস আগে দিয়েছিলেন, তাঁর কন্যাকেও একই দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা, তাঁর সরকার উচ্ছেদ ও পরিবার নাশের বিশদ বিবরনী সহ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রদান করে। উক্ত রিপোর্টের আলোকে জনাব 'আবুল খায়ের ও মেহেদী হাসানের' অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দৈনিক 'আজকের সুয্যদয় ও দৈনিক ইত্তেফাক' পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে ছাপানো হয়েছে।

     তবে আশার কথা বঙ্গবন্ধুকন্যা জাতির পিতার মর্মান্তিক হত্যাকান্ড অক্ষরে অক্ষরে স্মরণ রেখেছেন, প্রতিনিয়ত জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। গোয়েন্দা রিপোর্ট দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর দলের নবনির্বাচিত সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের কঠোর হুমকি দিয়ে বলেছেন--"জামাত- শিবির অনুপ্রবেশে সহায়াতাকারি নেতাদের পরিণতি ভাল হবেনা।"শেখ হাসিনা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে দ্ব্যার্থ্যহীন কন্ঠে ঘোষনা দিয়ে বলেছেন--"বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারি অ-শুভশক্তির সকল চক্রান্ত বাংলাদেশের জনগনকে সাথে নিয়ে তিনি প্রতিহত করবেন। দেশ ও জনগনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারি কাউকেই তিনি রেহাই দেবেন না----সকল অ-পশক্তিকে তিনি সময়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।
    বঙ্গবন্ধুপ্রেমী অগনিত কর্মী জাতিরজনকের কন্যার ঘোষনায় নি:সন্দেহে আশ্বস্ত হতে পারি। তিনি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল আছেন।
   
               মহান আল্লাহ তাঁর জীবন হেফাজতকারী-----
            ruhulaminmujumder27@gmail.com
   
   
   

 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন