এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মা'য়ের প্রতিক্ষা--ছেলে অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে এসে ভাত খাবে।
  (রুহুল আমিন মজুমদার)

      ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ--হাজারো, লাখো  হৃদয়স্পর্ষী কাহিনী বাংলার আনাছে কানাছে অ-প্রকাশিত রয়ে গেছে।অনুমান করাটা আসলে কঠিন ব্যাপার। বিজাতীয় পাকিস্তানী শাষনশোষনের যাঁতাকলে পিষ্ট বাঙ্গালীকে শেকলমুক্ত করতে, বঙ্গবন্ধুর আহব্বানে সাড়া দিয়ে, লাখো লাখো তরুন, যুবক, আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা কতজন কতভাবে জীবনের সর্বস্ব তুচ্ছ করেছিল। কাংক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষে অবদান রাখতে গিয়ে, করুন, মর্মস্পর্ষী, হৃদয়হীনভাবে মৃত্যুমূখে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল--তাঁর কোন ইয়াত্তা নেই। হৃদয়স্পর্ষি সমূদয়  ঘটনার শিকারে পরিণত পাত্র, পাত্রীর  তথ্য, উপাত্ত  রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অদ্যাবদি সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত হয়নি। যদিও জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরব মুক্তিযুদ্ধের খুঁটিনাটি তথ্য উপাত্ত সংরক্ষনে রাখা রাষ্ট্রের নৈতিক, আইনগত, মানবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং আবশ্যই পালনীয় ছিল।

       বর্তমান সরকার ২০০৯ইং সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাওয়ার পর সমম্বিত কিছু উদ্যোগ লক্ষ করা গেছে। এর আগে সময়ে সময়ে কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা মুক্তিযুদ্ধের এই সমস্ত স্মৃতি, বাঙ্গালী জাতির ত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অবদান সংরক্ষনের উদ্যোগ নিয়েছিল সত্য--মাঝপথে বাঁধাগ্রস্ততার কারনে  উদ্যোগ বাতিল অথবা থেমে গেছে। ঢাকা ইউনিভারসিটি কেন্দ্রিক একদল নতুন প্রজম্মের মেধাবী তরুন ২০১৩/১৪ সালে নীজেদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করে অনেকদুর অগ্রসর হতে পেরেছেন। মুক্তিযোদ্ধা আর্কাইবসও এক্ষেত্রে তাঁদের কাজের অগ্রগতি লক্ষনীয়ভাবে তুলে ধরেছেন। 

'৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ অশুভশক্তি বাঙ্গালী জাতিকে উলটো দিকে অনেকদূর পয্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। ফলে বহু মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের নীজেদের বিরত্বগাঁথার সংবাদ, ত্যাগের মহিমা প্রকাশতো দুরের কথা--মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেও ভীত ছিলেন। অনেকেই নিজকে মুক্তিযুদ্ধা ভাবতেও গ্লানীতে আত্মহননের ইচ্ছা জেগে উঠার পরিবেশ বিরাজমান ছিল।

     মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগ এবং তাঁর নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বল্পকালিন শাষনকালে উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর অন্যসব ইতিহাসের ন্যায় ইহাও হারিয়ে যায় হিংস্রতার আগুনে।  মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো আত্মত্যাগের কাহিনী, বীরত্বের কাহিনী বিগত চল্লিশ/বিয়াল্লিশ বছরে অনেকের স্মৃতির পাতা থেকে মুছে গেছে। মুছে যাওয়া ঐ সমস্ত স্মৃতি, ত্যাগ, বিরত্বের কাহিনী ইতিহাসের পাতায়  আসার কথা নয়। এখনও এমন হাজারো অজানা আত্মত্যাগ, কিংবদন্তির বীরত্ব গাঁথা বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোক মুখে জীবন্ত রয়েছে---সদিচ্ছা নিয়ে হাত বাড়ালেই পাওয়া যেতে পারে।  এখনও কুড়িয়ে পাওয়া হৃদয় বিদারক, মর্মস্পষী কাহিনী গুলীও যদি কখনও প্রকাশিত হয়-- নিশ্চিত আরব্য রজনীর রুপকল্পকে হার মানাবে। বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও বাস্তবতা সর্বস্ব এতসব লোমহর্ষক কাহিনী যথাতথা চড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

      মূলত: মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ, বীরত্বগাঁথা, মুক্তিযোদ্ধাদের শৌয্যবিয্য, সাধারন মানুষের অসীম সাহষী কর্মকান্ডের শতভাগের একভাগও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায় শেষ পয্যন্তও  স্থান হবেনা। ইতিহাসে স্থান না পাওয়া এখনও অজস্র আত্মত্যাগ, বীরত্বগাঁথা বাংলার হাটেঘাটে, পথেপ্রান্তরে  পরিবার, সমাজ, পাড়াপড়শী, বন্ধুমহলের চোখের পানিতে স্বরনীয়, বরনীয় হয়ে জীবন্ত রয়েছে। সময়ে ইতিহাসের অতলগব্বরে অধিকাংশ হারিয়ে যাবে ; ইতিমধ্যে যেমনি ভাবে হারিয়ে  গেছে হাজারো কাহিনী।

           কত হাজারো বিকৃত উপায়ে, পাষন্ডতায়, শৃগাল কুকুরের মানষিকতায়, বিকৃত, ধিকৃত, পাশবিকতায়, অচিন্তনীয় রুচিতে এদেশের মা, বোনদের উপর অত্যাচার, নিয্যাতন, নিস্পেষন চালিয়েছিল---অধিকাংশের খোঁজখবরও হয়নি। হাজারো বিকৃত প্রক্রিয়ায় বাঙ্গালী মা, বোন ভাইদের  জীবন  কেড়ে নিয়েছিল---সেই সমস্ত হৃদয় নিংড়ানো অব্যাক্ত কাহিনী, শতভাগের একভাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবেনা শত চেষ্টার পরেও।হাজারো অমরত্বের বিরত্বগাঁথা লোকের মূখে মুখে অনেক বছর প্রচলিত ছিল কিন্তু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ছিলনা বিধায় সংগৃহিত হয়নি। অনেক ঘটনা পরিবেশ পরিস্থীতির কারনে ইচ্ছাকৃত হারাতে বাধ্য হয়েছে। হাজারো হৃদয়স্পর্ষী ঘটনা প্রথম থেকেই লোক লজ্জায় অ-প্রকাশিত থেকে গেছে---সেই সমস্ত ঘটনা কেউ কোন দিন জানবে না।

  তেমনি এক ভিডিওচিত্র 'ফেইছবুক বন্ধু অন-লাইন পোর্টাল বাংলাদেশ প্রেসের সম্পাদক জনাব Asrarul Huq Mahmood Rumy ভাইয়ের মাধ্যমে আমার হাতে এসেছে।' সত্যি ভিডিওটি দেখে চমৎকৃত, হতবিহব্বল, হৎচকিৎ, শিহরীত হলাম। এমনও কি হয়!! হতে পারে!!!

     ফিরোজপুরের এক মুক্তিযোদ্ধার মায়ের হৃদয় নিংড়নো, নাড়িচেড়া ধনের ফিরে আসার অপেক্ষায় দীর্ঘ ৪৬ বছর প্রতিক্ষার বাস্তব তার অম্লান, মর্মস্পর্ষী উপাখ্যান। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক পাকবাহিনীর নিয্যাতনে শহিদ হন।তাঁর নাড়িচেড়া মা বিগত ৪৬ বছর ছেলের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাননা তাঁর ছেলে আর কখনও ফিরে আসবেনা।পাকবাহিনীর চরম শারিরীক নিয্যাতনে আজ থেকে ৪৬ বছর আগে তাঁর মর্মান্তিক  মৃত্যু ঘটেছে।

 ফিরোজ পুর সদর উপজেলার শহর মাজিম পুর গ্রামের এক নিবৃত পল্লি। রাঁতের আধাঁরে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, জেগে থাকে এক মা কুলসুম বেগম। তাঁর ছেলে ( মায়ের আদূরে নাম ফারুক সাহেব) বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিল--"মা আমি সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ী ফিরে আসব"। ছেলের এই একটি বাক্যই 'জননী মা'কে রেখেছে ৪৬ বছর নির্ঘুম প্রতিক্ষায়।

      মায়ের ফারুক সাহেব আর আসেননি। আজও মা তাঁর ফারুক সাহেবের অপেক্ষায় দরজা খোলা রেখে ঘুমান। ঘুমের ক্লান্তি যদি কখনও এসে যায় ঘরের সবাইকে সজাগ করে দেন প্রত্যহ, দরজায় খেয়াল রাখতে, যাতে তাঁর ফারুক সাহেব দরজা খোলা না পেয়ে ফেরৎ চলে না যায়।  প্রতিদিন মা' ভাতের চাল দিয়ে রাখেন, অনেক সঙ্গি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ভাত খেতে আসবে তার সাহেব ! ফারুকের বোন অঝোরে কেঁদে বলছিল--কোনদিন যদি আমরা চালের পরিমাণ কম দেই, মা খুব রাগ হয়ে যায় এবং কি মেয়ের জামাই বাড়ীতে বা কোথাও বেড়াতে গেলেও একই নিয়ম সবাইকে পালন করতে হয়।

 মো: ওমর ফারুক। বয়স সবেমাত্র ২১ বছর। সরকারি শহীদ সরওয়াদী কলেজ ছাত্র সংসদের ভি,পি। ৭১ এর উত্তাল দিনগুলীতে লুকিয়ে লুকিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার মূল দায়িত্ব ছিল ছাত্রনেতা ওমর ফারুকের উপর। শুরুতে জড়িয়ে পড়েন 'স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস গ্রুপে'র সঙ্গে।১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ফিরোজপুর টাউন হল চত্বরে  প্রথম 'স্বাধীন বাংলাদেশের' পতাকা উত্তোলন করেন ওমর ফারুক। সেদিন তাঁর নেতৃত্বে পুড়িয়ে ফেলা হয় সব পাকিস্তানী পতাকা। সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পিরোজপুর ট্রেজারী ভেঙ্গে লুট করে নিয়ে আসেন সব অস্ত্র। প্রথম তিনমাস দেশের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তি যুদ্ধ করলেও পরবর্তীতে ভারত চলে যাওয়ার প্রয়োজনীতা দেখা দেয়।
 
   ২৯ মে, স্বরুপ  আটঘর কুরিয়ানা থেকে ভারত যাওয়ার পথে কির্তনখোলা নদীর তীরে ধরা পড়ে যায় এই অকুতোভয় বীর সেনানী পাকবাহিনীর হাতে। ধরাপড়ার সময় তার কাছে রক্ষিত ছিল সাতটি স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। তার একটি পতাকা নিষ্ঠুর,পাশবিক কায়দায় হাতুড়ি পেটা করে ডুকিয়ে দেয়া হয় তার মাথার মগজে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়--পাকিস্তানী সেনারা বারবার বলেছিল "পাকিস্তান জিন্দাবাদ বললে ছেড়ে দেবে। তেজস্বী যুবক নিয্যাতনে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে থাকা সত্বেও গাঁয়ের সমস্ত শক্তি উজাড় করে চিৎকার করে বলে উঠেছিল "জয়বাংলা"।

সেদিনই ওমর ফারুককে মৃত্যু নিশ্চিত করে কির্তন খোলা নদীতে তাঁর লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়।অনেক খুঁজাখুঁজি করেও সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর লাশের কোন সন্ধান পাননি। সমসাময়িক সময়ের এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন--ফারুক ভাই ছিলেন অগ্নিঝরা বক্তা।প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনিই সংগঠিত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। পিরোজপুর কালেক্ট্রোরিয়েট মাঠে তিনিই প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।অথছ আজও আমরা তাঁকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা সেই সম্মানটুকুও দিতে পারিনি।

     তানবীর আহম্মদের তথ্য ও ছবি নিয়ে মাকসুদুর নবীর প্রতিবেদনটি বেসরকারি টিভি  'চ্যানেল ২৪'' এ প্রচারিত হয়। বোনের চোখের পানি এখনও ঝর ঝর করে পড়ছিল।তাঁর বৃদ্ধ মা আজও বিশ্বাস করেন না তার ছেলে আর কখনও ফিরে আসবেনা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযূদ্ধ চলাকালিন দশম শ্রনীর একছাত্রের সাক্ষাৎকারও সংযোজিত রয়েছে ভিডিও চিত্রটিতে।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
https://www.youtube.com/watch?v=NfSA3qsRQg0&sns=em

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন