গনতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখাই হবে অ-শুভশক্তি নিচ্ছিহ্ন করার উপযুক্ত হাতিয়ার--শেখ হাসিনার লক্ষই গনতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান।
      (রুহুল আমিন মজুমদার)

        পরিবর্তন, বিবর্তন, উত্থান, পতন, আবিস্কার, ধ্বংস, উন্নয়ন, অগ্রগতি ইত্যাদি যাই বলিনা কেন সবকিছুরই সময়ের প্রয়োজন হয়।তৎক্ষনাৎ কিছুই ঘটেনা, কিছুই অর্জন, বর্জন সম্ভব নয়। জম্মিতে লক্ষন শুভ হলে তাঁর ফলাফলও শুভই থাকে। শুরুর উদ্দেশ্য যদি মঙ্গলের নিমিত্তে হয় অবশ্যই তা মঙ্গলই বয়ে আনবে। ভাল পরিবেশে খারাপ ভাল হতে বাধ্য হয়, খারাপ পরিবেশে ভাল অনেক সময় খারাপের পথে পা বাড়ায়। গনতন্ত্রের দর্শন প্রকাশের অব্যবহিত পর হ'তে বিশ্বের দেশে দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, গনতান্ত্রিক শাষন, গনতন্ত্র রক্ষা, গনতন্ত্র চর্চার সংগ্রাম অব্যাহত আছে, থাকবে পৃথিবী ধ্বংশ পয্যন্ত।মানব সমাজ জ্ঞান, বিজ্ঞান,প্রযুক্তিতে যতবেশী অগ্রসরমান হচ্ছে গনতন্ত্রের ধারনাও ততবেশী পরিপুষ্টতা, সক্ষমতা, আধুনিকতা, নতুন নতুন সাজে সৌন্দয্যের অপরুপ ভঙ্গিমা  নিয়ে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে।

         বিশ্বব্যাপি এমন একটা দেশ খুঁজে পাওয়া যাবেনা--যে দেশটির জনগন গনতন্ত্রের সংগ্রামে লিপ্ত নেই--'তাহলে গনতন্ত্র নামক সোনার হরিনটি কোথায় ?গনতন্ত্র বাস করে পরমত সহিঞ্চুতার মধ্যে।বিরুধীদলের গঠনমূলক, উন্নয়নমূখী, জাতীয় সংকটে ঐক্যমতের মধ্যেই বাস করে। গনতন্ত্র শাষক শ্রেনী কতৃক শাষিত শ্রেনীর নিয়ন্তর কল্যানে নিয়োজিত থাকার মধ্যেই বাস করে।কল্যান রাষ্ট্র বিনির্মানের শাষকশ্রেণীর আন্তরীক প্রচেষ্টার মধ্যেই গনতন্ত্র। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের মধ্যেই গনতন্ত্র। সকল নাগরীকের সমঅধিকার, সমমায্যদার মধ্যেই গনতন্ত্র।দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, উৎসের প্রশ্নে সরকার ও সরকার বিরুধীদের অবস্থান এক ও অভিন্নের মধ্যেই গনতন্ত্রের সুখ, সাচ্ছন্দের আবাস। পিতাহীন সন্তান যেমন পারিবারিক স্বীকৃতি পায়না তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তথা দেশের উৎসমূলের বিরুধীরাও নাগরীকত্ব পেতে পারেনা।

    মাননীয় মন্ত্রী হাসানূল হক ইনু যথার্থই বলেছেন--সরকার গঠন করবে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি,সরকার বিরুধী রাজনৈতিক দলও থাকবে রাজপথে সংসদে স্বাধীনতার পক্ষশক্তি। মুক্তিযুদ্ধের আকাংক্ষাও ছিল তাই, স্বাধীন বাংলাদেশে কোন অশুভ শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতাবিরুধী শক্তির রাজনৈতিক অধিকার থাকবেনা। বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাত্র সাড়ে তিনবছরের মাথায় স্বাধীনতাবিরুধী শক্তির গোপন আঁতাতে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধার হাতে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাকে স্বপরিবারে জীবন দিতে হয়েছিল।বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দীর্ঘ তিনযুগ রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় একতরফা অপপ্রচার চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাঙ্গালী জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বহুদুরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। অশুভ শক্তির দীর্ঘ শাষনে তাঁদের শক্তি সামর্থ কয়েকগুন বেড়ে তাঁরা এখন অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে রুপান্তরীত হয়েছে।
   
    তাঁদের অর্জিত শক্তি সামর্থ নিস্তেজ করার লক্ষে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা বিভিন্নমূখি রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, গনতান্ত্রিক, আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। শেখ হাসিনার নেয়া উল্লেখিত বিভিন্নমূখী পদক্ষেপ দৃশ্যমান হওয়ার আগেই অশুভশক্তি, স্বাধীনতা বিরুধী শক্তি, দেশী বিদেশী শক্তি,সম্মিলীত ষড়যন্ত্রকারিদের যোগসাজসে ৫ই জানুয়ারী ২০১৫ ইং সালের সাধারন  নির্বাচন বর্জন পুর্বক গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাই বানচাল করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। সরকার উক্ত চক্রান্ত পরম ধৈয্য,অসীম সাহষ, রাজনৈতিক বিচক্ষনতার মাধ্যমে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।সরকারের বিভিন্নমূখি পদক্ষেপের সুফল আসা শুরু হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই স্বাধীনতা বিরুধীদের শক্তি নিস্তেজ হতে থাকবে।জোর জবরদস্তি শত্রুকে নিস্তেজ করা অসম্ভব, রাজনৈতিক কৌশলেই শত্রু নিচ্ছিন্ন করা গনতান্ত্রিক দল ও সরকারের কাম্য হওয়া উচিৎ,। আপাতদৃষ্টে দেঝা যায় জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা সেই দিকেই মনযোগি।
   
    এখানে প্রশ্ন আসতে পারে---কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি দিয়ে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদি শক্তির সঙ্গে শেখ হাসিনা আপোষ করেছেন, তিনি কিভাবে সাম্প্রদায়িকতামূক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন--কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক বিশাল এক জনগোষ্টি ইতিমধ্যে সমাজে অলস জীবনযাপন শুরু করেছে। অচিরেই সংখ্যগত দিক থেকে বিশাল এই শ্রেনী সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে জাতির জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে।তাঁদের সনদের স্বীকৃতিদান করে বহুধাভিবক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আরো একটি স্বতন্ত্র শিক্ষাব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে সত্য, তবে রাষ্ট্র ও সমাজের মাথার উপর থেকে পাহাড়সম অলস নিস্মকর্মার এক বিরাট বোঝা নামাতে পেরেছেন ইহাও চিরন্তন সত্য।
   
    তাছাড়াও রাজনৈতিক ভাবেও যদি চিন্তা করি--আগেই বলেছি রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় সাম্প্রদায়িক শক্তি সকল ক্ষেত্রে অন্য যেকোন সময়ের চাইতে বর্তমান সময়ে শক্তি সামর্থে অপ্রতিরোধ্য। শক্তিধর ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক সকল ফ্রন্টের সঙ্গে একই সময়ে একই উদ্দেশ্য সাধনে সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া কোনক্রমেই বুদ্ধিমান সংগ্রামীর রাজনৈতিক কৌশল হতে পারেনা। বড় শত্রু প্রথমেই চিহ্নিত করা হয়েছে-এবং তাঁদের সাথে্ সর্বাত্বক যুদ্ধ চলছে। ইতিমধ্যে তাঁদেরকে সাময়িক নিস্তেজ করা সম্ভব হয়েছে, নিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি।উক্ত শক্তিকে নিচ্ছিন্ন করার জন্যে সমশক্তি সম্পন্ন এবং তাঁদেরই সবযোগী এক বা একাধিক শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ মুলতবি করা বিচক্ষন সেনাপতির বিচক্ষন সিদ্ধান্ত বটে। ইহুদীবাদী প্রকৃত মসূলমানদের শত্রু, সাম্প্রদায়িক শক্তির আঁধার, ধর্মব্যাবসায়ী, মানবতা বিরুধী অপরাধী, স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরুধীতাকারি অশুভশক্তির প্রধানহোতা সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে নিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ছোট অস্ত্রে সজ্জিত শত্রুসেনার বহর এমনিতেই আত্মসমপমর্পন করতে বাধ্য হবে। সনদের স্বীকৃতি আত্মসমর্পনের প্রাথমিক মহড়া বললেও অতিরঞ্জিত বলা হবেনা।
   
    বিশ্বের কোন দেশেই সেই দেশের জম্মবিরুধী শক্তির রাজনৈতিক অধিকার নেই।এমন কোন দেশও নেই জম্মলগ্নের অঙ্গিকার এড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা হয়। একটি দেশও নেই স্বাধীনতার সর্বাপেক্ষা অবদানশীল ব্যাক্তির বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক দল প্রকাশ্য সমালোছনা করে।একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যাক্তিও নেই তাঁদের জাতির পিতার নাম অশ্রদ্ধাভরে উচ্চারন করে। বিশ্বে একটি দেশও নেই, সরাসরি দেশের বিরুধীতাকারি সেই দেশের রাষ্ট্রীয় সুযোগ ভোগ করতে পারে বা পেরেছে। একটি দেশের জাতীয় রাজনৈতিক দলও নেই স্বীকৃত স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে দেশবাসিকে মনগড়া মিথ্যা তথ্য দেয়। এইসমস্ত উপসর্গ বাংলাদেশেই একমাত্র দেখা যায়। বাংলাদেশে দেখা যাওয়ার মূলকারন স্বাধীনতা বিফুধী শক্তিকে সময়ের অভবে নিচ্ছিহ্ন করা সম্ভব হয়নি। উপরন্ত তাঁরাই নামে বেনামে তিনযুগ বাংলাদেশ শাষন করেছে এবং দি দীর্ঘ সময়ে তাঁদের রক্ষা করার জন্যে শক্তিশালী সমর্থক বাহিনী বাঙ্গালী সমাজের মধ্য থেকেই সৃষ্টি করতে পেরেছে।সুতারাং অপ্রতিরোধ্য আশুভ শক্তিকে শুধুমাত্র অসাম্প্রদায়িক সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করা অসম্ভব এবং অবাস্তব চিন্তা।
   
    জাতির জনকের কন্যা সাম্প্রদায়িক আশুভশক্তি, স্বাধীনতা বিরুধী শক্তি সমূহকে নিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে আইনগত দিকের পাশাপাশি রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বহুবীদ ফ্রন্টে একযোগে কাজ করে চলেছেন। ইহা একান্তই সত্য স্বাধীনতা বিরুধী শক্তিকে সমূলে উচ্ছেদ করার জন্যে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ধরে রাখা।যদিও সমাজের সাধারন নির্বাচনে কখনও পরাজিত হয়, পূণ: ফেরৎ আসার রাজনৈতিক কর্ম যে কিছুকাল ক্ষমতায় ছিল উক্ত সময়কালের মধ্যেই সম্পাদন করে রাখা।অর্থাৎ পরবর্তী নির্বাচনের আগেই জনগনের মনের মণিকোঠায় অবিস্মরনীয় থাকা। জাতির জনকের কন্যা সেই চিন্তা চেতনার আলোকেই তাঁর সকল কর্মকান্ড পরিচালিত করছেন।নিম্নে তাঁর বহুবীদ কর্মের মধ্যে সামান্যকিছু আলোকপাত করা প্রয়োজন মনে করি---

     বাংলাদেশের জম্মলগ্ন থেকে গনতন্ত্রের চর্চায় বহুবার বিগ্নতা এসেছে, অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়েছে, বাধাগ্রস্ত করেছে-কিন্তু জনগনের একান্ত ইচ্ছা গনতান্ত্রিক শাষন ব্যবস্থা প্রবর্তন, সেই ইচ্ছা এবং আখাংকা থেকে জনগনের মনকে সরাতে পারেনি। বারবার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে গনতন্ত্র পুরুদ্ধারের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। প্রত্যেকবারই জনগন জিতেছে---তারপরও কাঙ্ক্ষিত গনতন্ত্রের স্বাদ জনগন পায়নি।মুলত: গনতন্ত্রের মুলভীত্তি যে শিক্ষা-সেই শিক্ষায়ই বড় ধরনের গলদ রয়ে গেছে।দেশের অর্ধেক জনগোষ্টি নারী -সেই নারীরাই শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে। পাহাড়ি জনগোষ্টির শিক্ষাক্ষেত্রে কাংখীত লক্ষ অর্জন সম্ভব হয়নি। অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাদপদ জনগোষ্টিকে অতীতে শিক্ষামুখি করার কায্যকর উদ্যোগ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্বেও শাষকশ্রেনীর সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ ছিলনা--গনতন্ত্র! সে তো সুদুর পরাহত'।

     বিগত আটবছরে বর্তমান সরকার জনগনের মৌলিক অধিকারের অধিকাংশই পুরন করেছে। খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি রপ্তানীও করতে পেরেছে। বস্ত্রের চাহিদা পুরণ করে বিদেশে রপ্তানী করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বহুবীদ বাঁধা থাকা সত্বেও অনেকদুর অগ্রসর হতে পেরেছে, নারী শিক্ষায় উন্নতি ঘটাতে পেরেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে সাফল্যজনক উদাহরন সৃষ্টি হয়েছে এই সেদিন, দেশের বিরাট একটি অংশ ধর্মীয় শিক্ষার নামে কর্মবিমূখ শিক্ষায় ব্রতি থেকে দিনদিন সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা ভারি করে তুলছিল।তাঁদেরকে স্বতন্ত্র শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের পুর্বেকার বহুধাবিভক্ত  শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আরো একটি ধারা সংযুক্ত করে মূলস্রোতের সঙ্গে একিভূত করতে পেরেছে সরকার। বর্তমান সরকারের ইহা এক যুগান্তকরি সাফল্য হিসেবে ভবিষ্যতে বিবেচিত হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও অভাবনীয় উন্নতি লক্ষনীয়। বাংলাদেশের ঔষদ বিদেশে রপ্তানী হয়, হার্টের চিকিৎসায় আমদানী নির্ভর রিং নৈরাজ্য বন্ধ করে সরকারিভাবে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে--ইহা কেবলই ছোট অর্জন নয়।

        মোট কথা--শিক্ষা, চিকিৎসা,অন্ন, বস্ত্র বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা অনেকাংশে পূরণ সাপেক্ষে কতিপয় বিশেষায়িত ক্ষেত্রেও যুগান্তকরি অগ্রগতি লক্ষনীয়ভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। শিল্প ক্ষেত্রে নতুন করে একশটি শিল্প নগরীর সঙ্গে মোল্লাদের জন্যে বিশেষায়িত একটি শিল্পনগরিও স্থাপন করার উদ্যোগ শিল্প বিল্পব ঘটাবে আশা করা যায়। ভারি শিল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির মধ্যে জাহাজ, গার্মেন্টস, ঔষদ, মোটর যান, পাট, বস্ত্র, ইলেকট্রোনিক্স ইত্যাদির গানিতিক অগ্রগতি লক্ষনীয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি শিক্ষাকে দেশব্যাপি ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অবিস্মরনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সভ্যতার অন্যতম বাহন বিদ্যুত ক্ষেত্রের উন্নতি চোখে পড়ার মত।২০০৯ সালের ৪২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে যেখানে সর্বচ্ছো উৎপাদন ছিল ৩৩০০ মেঘাওয়ার্ড সেখানে সর্বশেষ মার্চ ১৭/২০১৭ ইং তারিখের তথ্যানুযায়ী ১০৭ টি বিদ্যুত উৎপাদনী কেন্দ্রের মাধ্যমে ১০ হাজার মেঘাওয়ার্ড বিদ্যুত জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তি ঘটিয়েছে।

একদা ক্ষুদা, মঙ্গা, অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের শেষ সীমানার বাংলাদেশকে ৬/৭ বছরের মধ্যে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে রুপান্তর করা দুর্নীনিতিহীন যে কোন দেশের মাপকাঠিতেই বিচার এক্স এক্সএক্স অর্জনই অবিস্মরনীয় হয়ে ধরা দিবে। গ্রাম্য পোল কালভার্ট নির্মানে যে দেশটি আন্তজাতিক সাহায্য সংস্থা 'এডিবি'র বরাদ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় ছিলনা, বন্ধুরাষ্ট্রের' সাহায্য নির্ভরতা ছাড়া সম্ভপর ছিলনা সেই দেশটিই পদ্মাসেতুর ন্যায় মেঘা অবকাঠামো নির্মানের সক্ষমতা অর্জন---দেশী-বিদেশী অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের শুধু নজরই কাড়েনি---'সমভাবে বিস্মিত, স্তম্ভিত করেছে।''বিদেশী সাহায্য, ঋন, ভিক্ষার উপর একদা যে দেশটি তাঁর বাৎসরিক বাজেট প্রনয়ন করতে বাধ্য হত, সেই দেশটিই শতকরা ৯০টাকা দেশীয় যোগান, বাকী ১০টাকা আন্তজাতিক ঋনদান সংস্থার ঋনের উপর এসে অবস্থান নিয়েছে। চিরায়ত সাহায্য নামক ভিক্ষার ঝুলিটি  যাদুঘরের কোথাও কোন এক কোণে বর্তমান প্রজম্মকেও খুঁজে নিতে হবে।

            "তাঁরপরেও বড় একটি প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে, এত সাফল্যের পালক থাকা সত্বেও  ৫ই জানুয়ারীর ভোটার বিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কি প্রয়োজনীয়তা ছিল?""বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই নির্বাচিত সরকার ছিল অবশ্যই-- "স্বল্পকালীন"---।শেখ হাসিনার সরকার কতিপয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য  সামনে রেখে ৫ই জানুয়ারী ২০১৫ইং নির্বাচনের ঝুঁকি নিয়েছিল। তম্মধ্যে প্রথম এবং প্রধান লক্ষ ছিল গনতন্ত্রকে তাঁর নির্দিষ্ট বৃত্তে ফিরিয়ে আনা। পাঁছ বছর নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রতিনীধিরা সরকার পরিচালনা করে তিনমাসের জন্যে অনির্বাচিত 'বিশেষ জ্ঞানী'দের হাতে খমতা দিয়ে তাঁদের ইচ্ছা অনিচ্ছার নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুনরায় রাজনীতিবীদেরা সরকার গঠন করবে-'ইহা নেহায়ৎ হীনমানষিকতা সম্পন্ন জাতির পরিচয় বহন করে।সভ্য দুনীয়ার নিকট বাঙ্গালী জাতির জন্য চরম গ্লানী ও -লজ্জা জনকও বটে।' প্রতিষ্ঠিত গনতান্ত্রিক সমাজ বা নব্য গনতান্ত্রিক চর্চারত: দেশের জন্যেও এই রুপ সরকারের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায়না। তদোপরি গনতন্ত্রের চর্চায় বাংলাদেশ এখনও তাঁর শিশুকাল পার না হলেও স্বাধীনতার সময়কাল থেকে বিবেচনায় নিলেও মধ্য সময়কাল পার করার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে।  প্রশ্ন আসতে পারে-"আওয়ামী লীগই তত্বাবধায়কের জম্মদাতা-অবশ্যই তাই"।আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা সামরিক,গনতান্ত্রিকতার আড়ালে ফ্যাসিবাদি শাষনের কবল থেকে জনগনের ভোটের অধিকার অর্জনের আর কোন বিকল্প ছিল কি?

    যেহেতু সামরিক শাষন, ফ্যাসিবাদি শাষনের ইতি ঘটেছে 'অনির্বাচিত জ্ঞানী'দের অনুষ্ঠানেয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার রাষ্ট্রের মালিক জনগনের পক্ষে অপমান জনক ব্যাবস্থাটি মাথার উপর থাকবে কেন? রাষ্ট্র যেহেতু জনগনের-পরিচালনার মালিকও জনগন। এখানেও আনাড়ীদের প্রশ্ন আসতে পারে-কিভাবে নিশ্চিত হল সরকার- সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পথ রুদ্ধ হল ? তাঁর প্রমান আপনার হাতেই রয়েছে। শাফলা চত্বরে হেফাজতীদের অবস্থানকালীন খালেদা জিয়া সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত থাকা সত্বেও এবং বার বার তাঁদেরকে ক্ষমতা দখলের আহব্বান জানানো সত্বেও তাঁরা এগিয়ে আসেনি।।দীর্ঘদিন  গুলশানের নিরাপদ দলীয় রাজনৈতিক কায্যালয়ে সুরক্ষিত কক্ষে অবস্থান নিয়ে, ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় বিবৃতি আপডেট, নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টির নির্দেশনা দিয়েও তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা দখলের উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারেনি।যদিও গনতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে এইরুপ  নজির বিশ্বের কোন দেশের ক্ষেত্রে সরকার বিরুধী আন্দোলনে দেখা যায়না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া নির্দিধায় তাই করেছিলেন। ৪২ দিন লাগাতার  অরাজকতা, নাশকতা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আগুনবোমায় মদদ দিয়েও সেনাবাহীনিকে  চুক্তি অনুযায়ী ক্ষমতা দখলে উৎসাহীত করতে পারেননি। তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা দখলে নেয়ার ব্যর্থতার মূলকারন--ক্ষমতা দখল করা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী অসম্ভব। "আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হওয়ার পর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার খেদোক্তিই প্রমান করে চতুর্মূখি ষড়যন্ত্রের মধ্যে সেনাবাহিনীর উচ্চপয্যায়ের অনেকের সম্পৃত্ততা ছিল। তাঁর আন্দোলন নাশকতা, সন্ত্রাস, আগুনবোমা নির্ভরতায় রুপধারন করায় জনগনের মনের তিব্র ক্ষোভের বহ্নিশিখার জলন্ত আগুনের ঘুর্ণয়মান কুন্ডলী মধ্যে ক্ষমতা দখল করে জ্বলতে চায়নি বলেই হেফাজতিদের পথ অনুসরন করে তৃতীয় শক্তিও  পিছুটান দিতে বাধ্য হয়েছিল।

         দ্বিতীয় সর্বচ্চ লক্ষ ছিল স্বাধীনতা বিরুধীদের আস্ফালন, ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে সংখ্যালুঘু জনগোষ্টির উপর নিয্যাতন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির উপর জুলুম, নিয্যাতনের চিরবসান ঘটিয়ে কষ্টার্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগনের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া।এই লক্ষ সামনে রেখে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত, রাজাকার আলবদর তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সামরিক সরকার জিয়া কতৃক বাতিলকৃত বিচার পূণ: অনুষ্ঠানের লক্ষে সর্বমহলে গ্রহনযোগ্য, স্বচ্ছ, আন্তজাতিক মান বজায় রেখে গঠিত ট্রাইবুনালের পুর্ণতাদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচ্য ছিল। গঠিত ট্রাইবুনাল চলমান রেখে এখনও জীবিত মানবতাবিরুধীদের বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করার স্বার্থে গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে অন্যকোন কোন বিকল্প ছিলনা।

    উক্ত মানবতাবিরুধী বিচার ট্রাইবুনাল আগত ক্ষমতাসীন দল কতৃক অব্যাহত রাখায় বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির জন্য সরকারের গনতন্ত্রের ধারায় দেশকে এগিয়ে নেয়া দায়িত্ব এবং কর্তব্য ছিল।  "সাংবিধানীক বাধ্যবাধকতা" শুধুমাত্র গনতন্ত্রের উপস্থীতিতেই সম্ভব-অন্যকোন শাষনে সংবিধান অনুসরনের প্রয়োজনীয়তা থাকেনা। আগত ক্ষমতাসীন দল মানবতাবিরুধী অপরাধের বিচার অব্যাহত রাখার কঠিন কাজ হ'তে কোন অজুহাতেই হাত গুটিয়ে নিতে নাপারে, তজ্জন্যই গনতন্ত্র সমুন্নত রাখার প্রয়োজন ছিল। আগামী প্রজম্মের বাসযোগ্য সমাজ নির্মানে আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘবছর রাজনৈতিক দল সমুহ বলে এলেও কোন সরকারই কায্যকর উদ্যোগ গ্রহন করেনি।আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার পুর্বশর্তই হচ্ছে অতীতের ঘটে যাওয়া অপরাধ সমুহের সুষ্ঠ তদন্ত পুর্বক আইনী কাঠামোর মধ্যেই নিস্পত্তি করা। পরবর্তী প্রজম্মের বাসযোগ্য ন্যায়নীতির সমাজ গঠনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার মানসে মানবতা বিরুধী অপরাধ সহ অপরাপর চাঞ্চল্যকর মামলা সমূহের নিস্পত্তির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকায্য। সরকার ন্যায়নীতির সমাজ বিনির্মানের গুরুত্ব অনুধাবন করে ৫ই জানুয়ারীর সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষাকল্পে 'স্বল্পকালীন সরকার' গঠনের উদ্দেশ্যে নির্বাচনী ঝুঁকি নিতে কূন্ঠাবোধ করেনি।

     দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশী রাষ্ট্র সমুহের অযাচিত হস্তক্ষেপ, শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের  জীবনহানীর সমূহ সম্ভাবনা, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত রাজনীতি ঝুঁকির মুখে রেখে ৫ই জানুয়ারীর সাধারন নির্বাচন যে কোনমুল্যে সফল করে "স্বল্পকালীন সরকার" গঠন  ছাড়া শেখ হাসিনার অন্যকোন গত্যান্তর ছিলনা। সফলভাবেই সরকার এই 'বন্ধুর' পথ অতিক্রম করতে পেরেছে।"

    বিশ্বব্যাপি জঙ্গিবাদের উত্থান বিশ্বনেতাদের মাথাব্যাথার কারন হয়ে দেখা দিয়েছে।সুষ্ঠ ও সাবলীল গনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা ছাড়া জঙ্গিবাদ রোধ কোন  অবস্থায় সম্ভব নয়। গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করার পুর্বশর্ত সব দলের অংশগ্রহনে সাধারন নির্বাচন-"অস্বীকারের কোন উপায় নেই।"৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপি সহ বৃহত্তর জোট অংশ না নেয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও তাঁর বৈধতা দেশে বিদেশে বিরাট চেলেঞ্জের মুখে পড়ে।পুর্বের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে উক্তজোট নির্বাচন সংক্রান্ত সরকারের একাধিক আহব্বান প্রত্যাখ্যান করে একের পর এক হঠকারী রাজনৈতিক কর্মসুচি মাধ্যমে জনজীবন অচল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।সঙ্গতকারনে নির্বাচন অনুষ্ঠান সরকারের পক্ষে দুরুহ হয়ে পড়ে।অথছ গনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ছাড়া জঙ্গীবাদ রোখার অন্যকোন সফল উপায় নেই।অগত্যা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, নাশকতার তোয়াক্কা না করে নির্বাচনের ঝুঁকি গ্রহন করে সরকার।নির্বাচন পরবর্তি নাশকতার, নৈরাজ্যকর পরিবেশ উত্তরনে সরকার আন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃত 'রাষ্ট্রীয়শক্তি'' প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে শান্তি ও স্থীতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

       সামরিক সরকার সমুহের চেতনার আলোকে শিক্ষাঙ্গনে ধারাবাহিক অস্থিরতা বিরাজমান থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে চরম অরজকতা, বিশৃংখলা, নৈরাজ্য দেখা দেয়। সেশনজট, নিয়মিত পরিক্ষা অনুষ্ঠান, শিক্ষাদান পদ্ধতি সমুলে  ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম দেখা দেয়। এমতবস্থায় শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান অরাজকতা, বিশৃংখলা দূর করে শৃংখলায় ফিরিয়ে আনা যুগের দাবিতে রুপান্তরীত হয়। উক্ত বিশৃংখলা প্রতিরোধ ও পরিত্রানের একমাত্র উপায় গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও নিবীড় চর্চা। গনতন্ত্রের চর্চা বা অনুশীলন অব্যাহত রাখার স্বার্থেই ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন অনুষ্ঠান সরকারের নৈতিক দায়িত্বের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। উক্ত নির্বাচনে সরকারের মেয়াদ স্বল্প হবে-না দীর্ঘ হবে- সেই চিন্তা দূরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানই মুর্খ্য বিষয় হয়ে পড়েছিল।

     ইহা অনস্বীকায্য যে স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও রাষ্ট্রের অতীব প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমুহে গনতান্ত্রিক ধারা, গনতান্ত্রিক কাঠামো সুদৃড করন,গনতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র সমূ উম্মোচন ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার লক্ষন কোন সরকারের শাষনকালেই দেখা যায়নি।গনতন্ত্রের অপরিহায্য ক্ষেত্র অবশ্যাম্ভাবি রাষ্ট্রের নিম্ন পয্যায় থেকে উচ্চপয্যায় পয্যন্ত বিস্তৃত। শাষকশ্রেনী কতৃক উদ্যোগী ভুমিকা নিয়ে চর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত ও অবারিত রাখা একান্ত বাঞ্চনীয়।আমাদের দেশের শাষক শ্রেনীর অবহেলা এবং ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার গোপন বাসনা পুরণের লক্ষে উক্ত বিষয়গুলী ধারাবাহিকভাবে উপেক্ষিত হয়ে এসেছে।

    ইহাও চিরন্তন সত্য যে- "বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দল সমুহের মধ্যে --যে সমস্ত দল দেশ শাষনে জনগনের সমর্থন আদায়ের সামর্থ্য রয়েছে, উক্ত দলগুলীর দলীয় অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রেও গনতন্ত্রের চর্চা অনুপস্হিত।"  রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্র অনুশীলন, চর্চা, বাস্তবায়নের উৎসমূখ বন্ধ রেখে-আর যাই হোক রাষ্ট্রে এবং সমাজে গনতন্ত্রের আবহ আশা করা যায়না।আবহমানকাল থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক দল গনতন্ত্র রক্ষার অঙ্গিকার বা উদ্ধারের শফথ গ্রহন করে আসছে।অথছ বিদ্যমান কোন দলেই গনতন্ত্রের আদৌ উপস্থীতি নেই। ব্যাক্তিও সংগঠনে গনতন্ত্র চর্চা ও প্রয়োগের শুন্যতা রেখে রাষ্ট্রে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার--"গনতন্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞ জনগনের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রতারনা ছাড়া আর কিইবা হতে পারে?

    এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যাতিক্রমি ভুমিকা রেখে চলেছে দলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে।জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে দলের গঠনতন্ত্রে সময়পোযোগী সংস্কার অব্যাহত রেখেছে। অদ্যাবদি কোন নেতাই দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিধারায় 'গোষ্টি স্বার্থে' বা শ্রেনীস্বার্থে বা অন্যকোন উপযোগিতায়  বিগ্নতা সৃষ্টি করেনি।এযাবতকাল অনুষ্ঠিত প্রতিটি জাতীয় কাউন্সিলে সংস্কারের মাধ্যমে অধিকতর গনতন্ত্রের চর্চায় দলকে নিবিষ্ট রাখতে সচেষ্ট ছিল। নিয়ন্তর চেষ্টার বাস্তব প্রতিফলন এবং চুড়ান্তরুপ ধারন করে দলের গত জাতীয় কাউন্সিলে। নেতা নির্বাচনে উপস্থীত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের পাশাপাশি  দেশব্যাপি লক্ষ লক্ষ কর্মী সমর্থকের সম্মিলীত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয় দলটি।

      দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্রকে সুদৃড ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার সাথে সাথে রাষ্ট্রের সকল পয্যায়, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমুহে গনতান্ত্রিক রীতি প্রতিফলনের প্রতি মনযোগী হতে কোনপ্রকার সময়ব্যায় করেনি। একই অধিবেশনে গঠনতন্ত্রের যুগান্তকারি, আমুল সংশোধনীর মাধ্যমে সরকারি বেসরকারী, স্বায়ত্বশাষিত প্রতিষ্ঠানে গনতন্ত্র চর্চার 'অঙ্গিকার' ব্যাক্ত করে। উক্ত অঙ্গীকার আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রের  'অঙ্গিকার পত্রে' সংযোজন করে। শুধু তাই নয়-তৃনমুল থেকে গনতন্ত্র চর্চার প্রতি মনযোগী হতে এবং জনগনকে গনতান্ত্রিক ভাবধারায় অভ্যস্ত করার লক্ষে ইউনিয়ন পয্যায় দলীয় প্রতিকে ইউপি নির্বাচনে মননোয়ন প্রথা চালু করে।যুগান্তকারী উদ্যোগের ফলে ইউপি পরিষদকে তৃনমুল পয্যায় ধরে গনতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতার শুভযাত্রা শুরু করে।এই উপলক্ষে  মননোয়ন প্রাপ্তি এবং দানের পুংখ্যানুপুংখ্য নীতি দলীয় গঠনতন্ত্রে সংযোজন করে। তৃনমূলের নির্বাচন এবং প্রার্থী মননোয়নে স্থায়ী ভাবে জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে  'মননোয়ন বোর্ড' গঠন করে। গনতন্ত্রকে শুধুমাত্র মুখের মিষ্টি ভাষায় সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করেছে একমাত্র 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'।অন্যসকল দলে উক্ত নীতি সংযোজনে কমকরে হলেও বিশবছর সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।

     বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র, সমাজ, সংগঠন তথা সর্বস্তরে গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছাশক্তির বহি:প্রকাশ ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন পরবর্তী 'স্বল্পকালিন সরকার গঠন। সরকারের পক্ষে মধ্যবর্তী নির্বাচনের একান্ত ইচ্ছা বার কয়েক প্রকাশ করার পরেও বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলী আবহ তৈরীতে কোন ভুমিকাই পালন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের বিগত জাতীয় কাউন্সিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়ার পরও বৃহৎ জোট এবং দল সমুহের মধ্যে চাঞ্চল্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। মুলত: নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশীদের নিকট কান্নাকাটি করলেও দেশের অভ্যন্তরে নির্বাচনী আবহ তৈরীতে কোন ভুমিকা দেখা যায়না। ফলত: স্বল্পমেয়াদী ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচিত সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদ দেশ পরিচালনার অনুমোদন একপ্রকার দেশের বিদ্যমান সরকার বিরুধী দল সমুহের নিকট থেকেই পাওয়া গেছে। সরকার বিরুধীদল সমূহের ব্যার্থতাই আওয়ামীলীগ সরকারের স্বল্পকালীন সরকার মেয়াদ শেষ করার সুবর্ন সুযোগ পেয়েছে?

     সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকার প্রধান জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ আশাতীত ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন। উক্ত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ সমাপনান্তে সুফলভোগী জনগোষ্টির কিয়দাংশও যদি অশুভ শক্তির প্রেতাত্বারা বিভ্রান্ত করতে না পারে, তাহলে ২০১৯ সালের সাধারন নির্বাচনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকারই দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে নিশ্চিত করেই বলা যায়।২০১৯ সালের সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সর্বশ্রেনীর রাষ্ট্রদ্রোহি, স্বাধীনতা বিরুধী, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারি, জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক শক্তি, দেশ ও জাতির অনিষ্টকারি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যুগৎপত চুড়ান্ত যুদ্ধ হবে, সেই যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিতবে ইনশাল্লাহ।স্বাধীনতা বিরুধী শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তির চিরতরে কবর রচনা করে জাতির জনকের উন্নত সমৃদ্ধ, প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন তাঁর জৈষ্ঠকন্যা জননেত্রী 'শেখ হাসিনা'। আগামী প্রজম্মের জন্যে বিপদমূক্ত উন্নত, মায্যদাশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই তাঁর একমাত্র লক্ষ।

   
               

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন