১লা মে আন্তজাতিক শ্রমদিবস এবং বর্তমান বাংলাদেশের শ্রমজীবি।
রুহুল আমিন মজুমদার

১৮৮৬ সালে আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়। সেদিন দৈনিক আটঘন্টার কাজের দাবীতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলীবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। [১][২][৩][৪] ১৮৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের শতবার্র্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক-এর প্রথম কংগ্রেস অণুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। [৫] ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এরপরপরই ১৮৯৪ সালের মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অণুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবী আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহবান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না খাকলে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে’র ১ তারিখে “বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার” সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। (বাংলা উইকিপিডিয়া)

মে দিবসের তাৎপয্য:--

 দিবসটি প্রতি বছর পালিত হয় নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে। এটি শ্রমিকশ্রেণির বিজয়ের দিন, আনন্দ-উৎসবের দিন, তার সংগ্রাম ও সংগ্রামের শপথগ্রহণের দিন। সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্প্রদায় দিবসটি তাদের সংহতি প্রকাশের জন্যও পালন করে থাকে।
      ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা যে রক্তক্ষরা সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন, সেটি কালক্রমে সারা দুনিয়াতেই ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনটি সুনির্দিষ্টভাবেই ছিল আটঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে। শ্রমিকদের ভাষায়, আমরা আটঘণ্টা কাজ করব, আটঘণ্টা বিশ্রাম করব, আর বাকি আটঘণ্টা বিনোদন বা সংগ্রাম করব। এভাবে প্রতিটি কর্মদিবস ভাগ করে দাবি উত্থাপন করার মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলনে একটি বিরাট গুণগত পরিবর্তন এসেছে। একে বিশ্লেষণ করলে আমরা শ্রমিকদের শ্রেণিসচেতন হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করতে পারি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মে দিবস:--

     কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী, কাজের ঘন্টা, কাজের পরিবেশ নিশ্চিতে বিভিন্ন নামে শ্রমিক  সংগঠনের অস্তিত্ব লক্ষনীয় ছিল।কৃষি শ্রমিকদের দৈনিক কর্মঘন্টা আট ঘন্টা এবং মজুরী সাড়ে তিন কেজি চালের সমপরিমানে নির্ধারনের জন্যে দীর্ঘ আন্দোলনে জড়িয়ে ছিল ক্ষেতমজুর সমিতি সহ আরো কতক কৃষিশ্রমিক সংগঠন। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক ইউনিয়নের পাশাপাশি অসংগঠিত কৃষিশ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজেও লক্ষনীয় তৎপরতা দেখা গেছে এই সেদিনও।

কৃষি শ্রমিকের উন্নতি :---

 কৃষিকাজে উন্নত বীজ, চাষাবাদে যন্ত্রের ব্যবহার বিস্তৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষি শ্রমিকের মুজুরী বেড়ে সংগঠনগুলীর দাবীকৃতের চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় সংগঠন গুলীর আবেদন ধীরে ধীরে কমে শুন্যের কোটায় এসে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়াও জনজীবনে উন্নতি, অগ্রগতির ছোঁয়ায় কৃষি শ্রমিকের দুস্প্রাপ্যতা স্বয়ংক্রিয় তাঁদের মজুরী ও কর্মঘন্টা নিশ্চিত করে দিতে পেরেছে। একজন দিন মজুরের বেতন সাড়ে তিন কেজি চালের সমপরিমানের আন্দোলনের স্থলে বর্তমান সময়ে কৃষি শ্রমিকের প্রাপ্যতা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১২/১৫ কেজি চালের সমপরিমান মজুরী। ফলে কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের দাবী আদায়ের উদ্দেশ্যে গঠিত সংগঠনগুলী এক্ষেত্রে আবেদন হারিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে।

   কৃষিতে  নারী শ্রমিক:--

     বাংলাদেশে কৃষিতে আবহমানকাল থেকেই নারী শ্রমিকদের অবদান লক্ষনীয় ছিল এবং তাঁদের বিচরন এখনও বহমান।দু:খ্যজনক হলেও সত্য কৃষিকাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকগন পুরুষের অর্ধেক মজুরীতে কাজ করতে বাধ্য হয়। কৃষিকাজে নারী শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে আমাদের দেশে তেমন কোন নারী সংগঠন গড়ে উঠেনি। "কর্মজীবি নারী" নামে মাঝে মধ্যে যে সংগঠনটির কর্মকান্ড চোখে পড়ে সামগ্রিক অর্থে উক্ত সংগঠনটি নারী শ্রমিকের দাবী আদায় কল্পে নিয়োজিত নয়।উক্ত সংগঠনটি এন, জি,ও নির্ভর সংগঠন হওয়ায় কর্মজীবি নারীদের কর্মের মানোন্নয়ন নিয়েই কাজ করে থাকে।ফলে কৃষি কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী আদায়ে তেমন কোন কায্যকর সঙ্গঠনের অস্তিত্ব আবহমান কাল থেকেই নজরে আসে না।ফলে এইক্ষেত্রে পুরুষের সমান শ্রম দিয়ে নারী তাঁর অর্ধেক মজুরীতে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে যুগের পর যুগ।

 শিল্প শ্রমিক--

অত্যান্ত আনন্দের বিষয় যে, দীর্ঘবছর শিল্প কারখানার বিস্তার স্থবির থাকার পর বর্তমান সরকারের সময়ে এসে শিল্পস্থাপন, বিকাশ, উৎপাদনী যন্ত্রের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে সবিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর বৃহৎ শিল্পকারখানা জাতীয়করনের মাধ্যমে উৎপাদনী যন্ত্রের অংশিদারিত্ব এবং উৎপাদিত পণ্যে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল।৭৫ পরবর্তী সরকার সমূহ উক্ত আইন বাতিল করে ভারী শিল্প কল কারখানা মালিকদের ফেরৎ, ক্ষেত্র বিশেষ অ-দাবিকৃত শিল্প কারখানা বিক্রির মাধ্যমে শিল্প কলকারখানায় শ্রমিদের শ্রম, শ্রমের বিকাশ, উৎপাদন, উৎপাদনী যন্ত্রের বিকাশ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। তাছাড়া পণ্যের গুনগত মান হালনাগাদ করতে না পারার কারনে একসময়ের সোনালী আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সবগুলী পাটকল বিরাষ্ট্রীয়করন করার পর এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজি জুট মিলকেও নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করে দেয়া হয়। আদমজি পাটকল বিক্রির মাধ্যমে পাটশিল্প বিকাশের পথে শেষ পেরেকটি গেঁথে দেয়া হয়।

গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ:---

পাট, চা, চামড়া শিল্পের ধ্বংসপ্রাপ্তির লুটপাটে অংশগ্রহন করে উল্লেখিত  সময়ের মধ্যে একটি মুৎসূদ্ধি শ্রেনী গড়ে উঠে বাংলাদেশে। এই সময়ে শ্রমঘন গার্মেন্টস শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে। একদিকে নারী শ্রমিকের সহজ প্রাপ্যতা এবং নামমাত্র মজুরীতে উৎপাদনী যন্ত্র সচল রাখার নিশ্চয়তা মুনাফাখোর একশ্রেনীর শিল্পপতি দ্রুত শিল্পটির বিকাশ ঘটায়।শহরের যত্রতত্র স্থাপনের বিশেষ সুবিধা থাকায় যেনতেন ভাবে কিছু মেশিনপত্র আমদানীর মাধ্যমে যেখানে সেখানে কারখানা স্থাপন করে।তাঁরা সস্তায় কোন কোন ক্ষেত্রে বিনাবেতনে নারী ও শিশুদের উক্ত উৎপাদনী যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃত্ত করে।  উক্ত প্রক্রিয়ায় রাতারাতি শ্রেনীটি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে রুপান্তরীত হয়। নারী শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী প্রাপ্তি, কাজের পরিবেশ নিশ্চিত, কর্মঘন্টা নিশ্চিতের অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক কোন সংগঠনের শক্তিশালী অবস্থান শুন্য থাকায় মাধ্যমটিতে ব্যাপক শ্রমশোষনের শিকার হয়। উক্ত শ্রেনীটি গরীব নারী ও শিশুদের শ্রম শোষনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অর্থবিত্তের মালিক হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রনের দিকেও মনযোগী হয়ে উঠে।
     
 গার্মেন্টস শ্রমিক নিয্যাতনের মধ্যযুগীয় বর্বরতা:--

        দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা আছে শ্রমিকদের নির্যাতন আর বঞ্চনার কথা। এ রাষ্ট্রে শ্রমিকদের গার্মেন্টস এর ভিতরে ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে দেয় মেইন গেইট, অবর্ণনীয় কষ্টকর পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে রেখে শ্রমিকদের খাটানো হয়, নিয়োগপত্রহীন-মনুষ্যোচিত বাঁচার মতো মজুরী ব্যতীত ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা বাধ্যতামূলক ওভারটাইম করতে বাধ্য করা হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১,৫০০ শ্রমিক মারা গেছে, ২৫০ এর বেশি ঘটেছে দুর্ঘটনা যার মধ্যে ৮০টি বড়।
   হত্যালীলা চলছে বিগত ৪৫ বছর ধরে। শ্রমিক মরছে আগুনে পুড়ে বা পদদলিত হয়ে বা বিল্ডিং ভেঙ্গে। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল সাভারের স্পেকট্রাম গার্মেন্ট ভবন ধ্বসে প্রায় ৮০ জন মারা যায়। ভবন ধ্বসের ঘটনায় হাইকোর্টের জারি করা রুলের জবাব দীর্ঘ আট বছরে দেয়নি সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা। ওই ঘটনায় সরকারের তদন্ত রিপোর্টও আদালতে দাখিল করা হয়নি।
        ২০১২ সালে তাজরিন ফ্যাশনস লিমিটেড নামের ওই কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ২০০ এর বেশি শ্রমিক, আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককে। কিন্তু কারো বিচার হয়েছে কি তাজরিন ফ্যাশন লিমিটেড এর মালিক পক্ষীয়দের? ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের জীবন এবং ভাগ্যও রয়ে গেছে দূর্ঘটনার মতই বিশ্রী এবং শোচনীয় অবস্থাতেই। এরই মাঝে ঘটে গেলো সাভার ট্রাজেডী, লাশ হলো প্রায় পাঁচশ নিরীহ শ্রমিক, আহত হাজারের উপর ! এই অবর্ণনীয় ক্ষয়-ক্ষতির কি কোন ক্ষতিপূরণ সম্ভব হবে? কখনই সম্ভব নয়। যারা শারীরিকভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বরণ করে নিয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীনতাকেও।
  রানা প্লাজায় ধ্বংসলীলার খবর আমরা সকলেই অবগত আছি।মজার ব্যাপারটি হচ্ছে রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহত নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরনের তালিকায় বিল্ডিং এর মালিক রানা নিজেও নাকি তালিকাভুক্ত হওয়ার আবেদন জমা দিয়েছেন। ইহা যেন শ্রমিক হত্যাকান্ডের জন্যে অপরাধবোধ জাগ্রত নয়, শ্রমিকদের সঙ্গে একপ্রকার মস্করা।

   শিল্প স্থাপনে নবযুগের সূচনা:---

       বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে দেশব্যাপি গড়ে উঠছে বহু শিল্পাঞ্চল। হালকা থেকে ভারী এই সব শিল্প কলখারখানায় প্রযুক্তি নির্ভরতার কারনে শ্রমনির্ভরতা অনেকাংশে কম।জাহাজ শিল্প থেকে শুরু করে কৃষি উপকরন প্রক্রিয়াজাতকরন নির্ভর শিল্পস্থাপনাও রয়েছে এদের অন্তভূক্ত।এই সমস্ত শিল্প কারখানায় পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহনও তাৎপয্যপূর্ণ।এক্ষেত্রেও নবগঠিত শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সীমিত পয্যায় বিধায় শ্রমিকেরা নিয্যাতীত হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায়না। ঔষদ শিল্পে যুগান্তকরি সাফল্য অর্জিত হলেও এক্ষেত্রে উৎপাদনী সংশ্লিষ্ট শ্রমিকগন ন্যয্য বেতন ভাতাদি প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে রয়েছে পাহাড়সম বৈশম্য।

   নারী ও শিশুশ্রম:---

   বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী প্রক্রিয়াজাত কারখানা, মৎস প্রক্রিয়াজাত কারখানায় রিয়েছে নারী ও শিশু শ্রমিকের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহন। এই স্থলেও রয়েছে বেতন প্রাপ্তির স্থলে পুরুষ শ্রমিকদের সাথে নারী ও শিশুদের আকাশ পাতাল  ব্যবধান। উল্লেখিত কারখানা সমূহে রয়েছে উল্লেখযোগ্য শিশুশ্রমের ব্যবহার, শিশুশ্রম কাগজে কলমে নিষিদ্ধ হলেও আইনটি মান্য করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও মনে করেন না মালিকপক্ষ। নামমাত্র বেতন অথবা শিক্ষানবীশ অজুহাতে বিনাশ্রমে নারী ও শিশুদের সহজ শ্রমপ্রাপ্তি লোভাতুর মালিকপক্ষকে তাঁদেরকে যত্রতত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে।

   শ্রমিক আন্দোলন--বর্তমান বাংলাদেশ: ---

      বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একসময়ে বিদেশী তাঁবেদার সরকার সমূহ শিল্পকলকারখানা বন্ধ করে দেয়ার কারনে শ্রমিক আন্দোলন তাঁর গতি হারিয়ে নিস্তেজ আকার ধারন করেছে। স্বল্পসংখ্যক শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থীতি বিচারে শ্রমিক আন্দোলনে সম্পৃত্ত সংগঠনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পরিদৃষ্ট ছিল। নতুন করে কারখানা চালু ও নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠনগুলীর তৎপরতা লক্ষনীয় হয়ে দেখা দেয়নি।তাছাড়া উপযুক্ত শ্রমিক সংগঠনের উপস্থীতিও এক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য। শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির চেয়ে তাঁদের নীজেদের আখের ঘোচানো অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূখ্য হয়ে দেখা দেয়ায়, শ্রমিকদের মধ্যে বিদ্যমান অনেকগুলী সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা শুন্যের কোটায় এসে ঠেকেছে। এমত:বস্থায় আদর্শবাদী শ্রমিক সংগঠনের যুগৎপত অবস্থান নিশ্চিত না হলে শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে একশ্রেনীর মালিক অর্থবিত্তের পাহাড়ই গড়বে, শ্রমিকদের জীবনযাত্রায় কোন পরিবর্তন হবেনা। এতে সমাজে অর্থনৈতিক বৈশম্যের পাহাড় উঁচুই হতে থাকবে, যাহা  বর্তমান সরকারের কল্যান রাষ্ট্র বিনির্মানের ক্ষেত্রকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলবে।

দেশ ও জনগনের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।দেশের অর্থনীতির আকার ধারন করেছে দ্বিগুনেরও অধিক আয়তন। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটলেও মালিকদের শোষণের ইতিহাস এখনও বদলায়নি এই বাংলাদেশে। আন্তজাতিকভাবে মে দিবসকে ঘোষণ করা হয়েছিলো রক্তাক্ত অগ্নি শপথের দিন হিসাবে। বলা হয় এই দিবসই শ্রমজীবি মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের এক রক্তাক্ত ফসল। কিন্তু সে ফসল আবাদ যারা করে যাচ্ছে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে; তাঁরা কি ভোগ করতে পারছে বাংলাদেশের সেই শ্রমজীবি মানুষজন? এই প্রশ্নের পরেও প্রশ্ন থাকে ১ মে দিবসের বিপ্লব এবং চেতনা কি ডুকরে কেঁদে ওঠে না আমাদের দেশের দুর্ঘটনায় কবলিত হতভাগা শ্রমিকদের লাশ এবং রক্তের হোলিখেলার  মধ্যে?

 এবারের  ১লা মে আন্তজাতিক শ্রমিক দিবসের শফথ হোক সর্বস্তরে নারী শ্রমিকের মজুরী পুরুষ সমতুল্য এবং শিশুশ্রম আদায় সর্বস্তরে নিষিদ্ধ করার। আইন প্রয়োগকারি সংস্থা কতৃক কঠিনভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুশ্রম বন্ধ করা হোক।শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরপত্তা নিশ্চিত করা হোক।প্রতিটি শিল্পকারখানা গড়ে উঠুক দুষনমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। পরিবেশ গড়ে উঠুক প্রতিটি শিল্পাঞ্চলে ন্যায্য দাবী আদায়ের শ্রমিকবান্ধব একাধিক শ্রমিক সংগঠনের।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন