'জিয়া' পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পক্ষের বেতনধায্য "চর"--'জিয়া' রচিত নাটকের অন্যতম নায়িকা "খালেদা জিয়া।"
রুহুল আমিন মজুমদার
মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও তিনি পাকিস্তানের পক্ষেই তাঁর ভূমিকা অক্ষুন্ন রেখেছিলেন।বিষয়টি মুজিব নগর সরকারের নজরে এলেও তার বিরুদ্ধে তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা গ্রহন মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার আশংকায় বিরত ছিলেন। ঠান্ডা মস্তিস্কের মেজর জিয়ার যুদ্ধরত: সমগ্র সেনাবাহিনীর সাধারন সসৈনিক ও কর্মকর্তাদের উপর ব্যাক্তিগত প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিদ্যমান ছিল অস্বীকার করা যায়না। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্ত করার একাধিক প্রমান মুজিবনগর সরকারের নজরে আসার পর তাঁকে ১১ নং সেক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদান করেন,কিন্তু শাস্তি দেয়া থেকে উল্লেখিত কারনে বিরত থাকেন। চতুর মেজর জিয়া চাকুরীচ্যুতির পর নীজ নামে জেডফোর্স নামীয় আলাদা একটি ব্রিগেড স্থাপন করে মুক্তি যুদ্ধের নামে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় পুরো যুদ্ধকাল সময় পার করেন। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্বল্প সময় আগে উন্নততর প্রশিক্ষনের জন্যে আমেরিকান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রীত একটি একাডেমীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কতৃক প্রেরীত হয়েছিলেন। ধারনা করা যায় সেখানেই জিয়ার আসন্ন বাংলাদেশ অভ্যুদ্বয়ে তাঁর করণীয় নির্ধারিত হয়েছিল।
ইহা অনস্বিকায্য যে--লক্ষ লক্ষ সাধারন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে রাজাকার, আলবদরের সহযোগীতায় দখলদার পাকিস্তানী সেনাদের অত্যাচার নিয্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি, অনেক পরিবার সব ছেড়ে ভারতে শরনার্থী ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছেন।তথাকথিত সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়ার পরিবার দখলকৃত পাঞ্জাবী সেনাদের ক্যান্টনম্যান্টে পাঞ্জাবী সেনাদের তত্বাবধানে মেজর পদবীর পাকিস্তান সরকারের সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহন পুর্বক বসবাস, সাধারনে বিস্মিত না করে পারেনা। যুদ্ধকালে এইরুপ চর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত পারস্পারিক যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও এর ব্যাত্যায় ঘটেনি, ইহাই বাস্তনতা। ১৯৭৫ ইং সালের ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানী চর মেজর জিয়া স্বরুপে আত্মপ্রকাশ করে।
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলেছে দেশজুড়ে। স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে করেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্ত রয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান বলে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করে দেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।
১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ড প্রাপ্ত সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।
প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বে না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি প্রধান কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করার ফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো, তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবৎ করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।
১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাস পেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বে উল্লেখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটক, অবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউকেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে। যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি,বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে সর্বাত্মক বিরুধীতায় লিপ্ত ছিল।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেনি।
শহিদ জননী জাহানারা ইমাম দীর্ঘবছরে যুদ্ধ অপরাধীদের অপরাধ,অত্যাচার নিয্যাতন, স্বাধীনতার বিরুধীতা,মানবতা বিরুধী কর্মকান্ড জনমন থেকে বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে, তাঁদের বিচারের দাবীকে নতুন করে জনসমক্ষে নিয়ে আসেন।তিনি দলনিরপেক্ষ 'ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে '৭১ মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন।এতদোপলক্ষে তিনি দেশব্যাপি ব্যাপক প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে দেশব্যাপি উক্ত বিচার অনুষ্ঠানের পক্ষে ব্যাপক গনজাগরন সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে গড়ে উঠা ব্যাপক জনসমর্থনের বিষয়টি দেশে বিদেশে তৎসময়ে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়।তিনি সরওয়ার্দী উদ্যানে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম সহ কতিপয় রাজাকারের প্রতিকী বিচার অনুষ্ঠান করে প্রতিকী ফাঁসীর রায় প্রদান করেন এবং উক্ত বিচারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেন।
গন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠা জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি দল 'বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ' ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার সাধারন নির্বাচনের ঘোষনা দিলে, দলের নির্বাচনী ইসতেহারে ৭১ এর মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচারের অঙ্গিকার, অন্যতম অঙ্গিকার হিসেবে নির্বাচনী ইশতেহারে সংযোজন করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার ঘোষনার স্থলে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরুধী অপরাধীদের বিচারের অঙ্গিকার করে ভোট যুদ্ধে অবতিন্ন হয়। উল্লেখিত দুই যুগোপযোগী অঙ্গিকার জনমনে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়, বিশেষ করে নতুন প্রজম্ম দুটি বিষয়কে লুপে নেয়।ফলে ২০০৯ ইং সালের সাধারন নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের জনগন উক্ত দুটি বিষয়কে উপলক্ষ করে তাঁদের গনরায় প্রদান করায় আওয়ামীলীগের পক্ষে উক্ত জনমত উপেক্ষা করার পথ রুদ্ধ হয়ে উঠে। ফলে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ঘোষিত নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়নের লক্ষে মানবতা বিরুধী বিচার প্রক্রিয়া অনুষ্ঠানের লক্ষে সংসদে "মানবতা বিরুধী অপরাধ বিচার আন্তজাতিক ট্রাইবুনাল" বিল উত্থাপন করেন এবং সংসদে সর্ব সম্মত ভোটে উক্ত আইন পাস হয়। উক্ত আইন পাসের পর সরকার বিচারের উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং এখনও উক্ত ট্রাইবুনাল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানবতা বিরুধী অপরাধীদের খূঁজে বের করে তাঁদের বিচার অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এমন অনেকেই আছেন অবস্থার প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন কিন্তু তাঁর মুল কাজ ছিল পাকিস্থানের পক্ষে। আবার বহু রাজাকার ছিলেন যারা সর্বতোভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই ছিলেন,অবস্থার প্রেক্ষাপটে বা মুক্তিযোদ্ধাদের পরামর্শে রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন।তাঁরা অবশ্যাম্ভাবি সাহষি হৃদয়ের অধিকারি ছিলেন।পাঞ্জাবী সেনাদের অভ্যন্তরে থেকে তাঁরা সর্বাত্বক সহযোগীতা দিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের। এইরুপ ফেনী অঞ্চলে যেমন পশ্চিমা সেনাদের চরের ভূমিকায় মেজর জিয়া ছিলেন তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের চরের ভুমিকায়ও ছিলেন ছাগলনাইয়া থানা রাজাকার কমান্ডার (নামটা এই মহুর্তে আমার স্মরণে আসছেনা, আমি দু:খিত)।
অবশ্য যুদ্ধের শেষ পয্যায়ে উক্ত রাজাকার কমান্ডার মহান ব্যাক্তিকে পাঞ্জাবী সেনারা 'ফায়ারিং স্কোয়ার্ড়ে' হত্যা করে। কিন্তু পাঞ্জাবী সেনাদের আন্তজাতিক ভাবে নিয়োগকৃত চর 'মেজর জিয়া' বঙ্গবন্ধুর বদন্যতায় বেঁচে যান। বরঞ্চ উপসেনা অধিনায়কের নতুন পদ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু তাঁকে সেখানে পদায়ন করে অসিম সম্মানে ভুষিত করেন।ইহা সম্ভব করতে পেরেছিলেন সুচুতুর জিয়া কতৃক মঞ্চস্ত নাটকে সুক্ষ দক্ষতায় অভিনয়ের মাধ্যমে পাঞ্জাবী সেনাদের তত্ববধানে থাকা তাঁর সহধর্মীনি 'বেগম খালেদা জিয়া'। খালেদা জিয়ার চোখের পানি সিংহ হৃদয়ের অধিকারি বঙ্গবন্ধুকে পরাজিত করেছিল। মেজর জিয়ার সাজানো নাটক তাঁরপত্নি গ্রহন, বর্জনের নাটকীয় অভিনয়ে পরবর্তী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের বীজ সেদিনই রোপন করতে পেরেছিলেন মেজর জিয়া এবং তাঁর ছলনাময়ী সহধর্মীনি বেগম খালেদা জিয়া।
রুহুল আমিন মজুমদার
মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও তিনি পাকিস্তানের পক্ষেই তাঁর ভূমিকা অক্ষুন্ন রেখেছিলেন।বিষয়টি মুজিব নগর সরকারের নজরে এলেও তার বিরুদ্ধে তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা গ্রহন মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার আশংকায় বিরত ছিলেন। ঠান্ডা মস্তিস্কের মেজর জিয়ার যুদ্ধরত: সমগ্র সেনাবাহিনীর সাধারন সসৈনিক ও কর্মকর্তাদের উপর ব্যাক্তিগত প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিদ্যমান ছিল অস্বীকার করা যায়না। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্ত করার একাধিক প্রমান মুজিবনগর সরকারের নজরে আসার পর তাঁকে ১১ নং সেক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদান করেন,কিন্তু শাস্তি দেয়া থেকে উল্লেখিত কারনে বিরত থাকেন। চতুর মেজর জিয়া চাকুরীচ্যুতির পর নীজ নামে জেডফোর্স নামীয় আলাদা একটি ব্রিগেড স্থাপন করে মুক্তি যুদ্ধের নামে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় পুরো যুদ্ধকাল সময় পার করেন। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্বল্প সময় আগে উন্নততর প্রশিক্ষনের জন্যে আমেরিকান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রীত একটি একাডেমীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কতৃক প্রেরীত হয়েছিলেন। ধারনা করা যায় সেখানেই জিয়ার আসন্ন বাংলাদেশ অভ্যুদ্বয়ে তাঁর করণীয় নির্ধারিত হয়েছিল।
ইহা অনস্বিকায্য যে--লক্ষ লক্ষ সাধারন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে রাজাকার, আলবদরের সহযোগীতায় দখলদার পাকিস্তানী সেনাদের অত্যাচার নিয্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি, অনেক পরিবার সব ছেড়ে ভারতে শরনার্থী ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছেন।তথাকথিত সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়ার পরিবার দখলকৃত পাঞ্জাবী সেনাদের ক্যান্টনম্যান্টে পাঞ্জাবী সেনাদের তত্বাবধানে মেজর পদবীর পাকিস্তান সরকারের সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহন পুর্বক বসবাস, সাধারনে বিস্মিত না করে পারেনা। যুদ্ধকালে এইরুপ চর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত পারস্পারিক যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও এর ব্যাত্যায় ঘটেনি, ইহাই বাস্তনতা। ১৯৭৫ ইং সালের ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানী চর মেজর জিয়া স্বরুপে আত্মপ্রকাশ করে।
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলেছে দেশজুড়ে। স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে করেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্ত রয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান বলে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করে দেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।
১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ড প্রাপ্ত সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।
প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বে না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি প্রধান কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করার ফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো, তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবৎ করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।
১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাস পেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বে উল্লেখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটক, অবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউকেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে। যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি,বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে সর্বাত্মক বিরুধীতায় লিপ্ত ছিল।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেনি।
শহিদ জননী জাহানারা ইমাম দীর্ঘবছরে যুদ্ধ অপরাধীদের অপরাধ,অত্যাচার নিয্যাতন, স্বাধীনতার বিরুধীতা,মানবতা বিরুধী কর্মকান্ড জনমন থেকে বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে, তাঁদের বিচারের দাবীকে নতুন করে জনসমক্ষে নিয়ে আসেন।তিনি দলনিরপেক্ষ 'ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে '৭১ মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন।এতদোপলক্ষে তিনি দেশব্যাপি ব্যাপক প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে দেশব্যাপি উক্ত বিচার অনুষ্ঠানের পক্ষে ব্যাপক গনজাগরন সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে গড়ে উঠা ব্যাপক জনসমর্থনের বিষয়টি দেশে বিদেশে তৎসময়ে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়।তিনি সরওয়ার্দী উদ্যানে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম সহ কতিপয় রাজাকারের প্রতিকী বিচার অনুষ্ঠান করে প্রতিকী ফাঁসীর রায় প্রদান করেন এবং উক্ত বিচারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেন।
গন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠা জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি দল 'বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ' ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার সাধারন নির্বাচনের ঘোষনা দিলে, দলের নির্বাচনী ইসতেহারে ৭১ এর মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচারের অঙ্গিকার, অন্যতম অঙ্গিকার হিসেবে নির্বাচনী ইশতেহারে সংযোজন করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার ঘোষনার স্থলে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরুধী অপরাধীদের বিচারের অঙ্গিকার করে ভোট যুদ্ধে অবতিন্ন হয়। উল্লেখিত দুই যুগোপযোগী অঙ্গিকার জনমনে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়, বিশেষ করে নতুন প্রজম্ম দুটি বিষয়কে লুপে নেয়।ফলে ২০০৯ ইং সালের সাধারন নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের জনগন উক্ত দুটি বিষয়কে উপলক্ষ করে তাঁদের গনরায় প্রদান করায় আওয়ামীলীগের পক্ষে উক্ত জনমত উপেক্ষা করার পথ রুদ্ধ হয়ে উঠে। ফলে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ঘোষিত নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়নের লক্ষে মানবতা বিরুধী বিচার প্রক্রিয়া অনুষ্ঠানের লক্ষে সংসদে "মানবতা বিরুধী অপরাধ বিচার আন্তজাতিক ট্রাইবুনাল" বিল উত্থাপন করেন এবং সংসদে সর্ব সম্মত ভোটে উক্ত আইন পাস হয়। উক্ত আইন পাসের পর সরকার বিচারের উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং এখনও উক্ত ট্রাইবুনাল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানবতা বিরুধী অপরাধীদের খূঁজে বের করে তাঁদের বিচার অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এমন অনেকেই আছেন অবস্থার প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন কিন্তু তাঁর মুল কাজ ছিল পাকিস্থানের পক্ষে। আবার বহু রাজাকার ছিলেন যারা সর্বতোভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই ছিলেন,অবস্থার প্রেক্ষাপটে বা মুক্তিযোদ্ধাদের পরামর্শে রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন।তাঁরা অবশ্যাম্ভাবি সাহষি হৃদয়ের অধিকারি ছিলেন।পাঞ্জাবী সেনাদের অভ্যন্তরে থেকে তাঁরা সর্বাত্বক সহযোগীতা দিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের। এইরুপ ফেনী অঞ্চলে যেমন পশ্চিমা সেনাদের চরের ভূমিকায় মেজর জিয়া ছিলেন তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের চরের ভুমিকায়ও ছিলেন ছাগলনাইয়া থানা রাজাকার কমান্ডার (নামটা এই মহুর্তে আমার স্মরণে আসছেনা, আমি দু:খিত)।
অবশ্য যুদ্ধের শেষ পয্যায়ে উক্ত রাজাকার কমান্ডার মহান ব্যাক্তিকে পাঞ্জাবী সেনারা 'ফায়ারিং স্কোয়ার্ড়ে' হত্যা করে। কিন্তু পাঞ্জাবী সেনাদের আন্তজাতিক ভাবে নিয়োগকৃত চর 'মেজর জিয়া' বঙ্গবন্ধুর বদন্যতায় বেঁচে যান। বরঞ্চ উপসেনা অধিনায়কের নতুন পদ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু তাঁকে সেখানে পদায়ন করে অসিম সম্মানে ভুষিত করেন।ইহা সম্ভব করতে পেরেছিলেন সুচুতুর জিয়া কতৃক মঞ্চস্ত নাটকে সুক্ষ দক্ষতায় অভিনয়ের মাধ্যমে পাঞ্জাবী সেনাদের তত্ববধানে থাকা তাঁর সহধর্মীনি 'বেগম খালেদা জিয়া'। খালেদা জিয়ার চোখের পানি সিংহ হৃদয়ের অধিকারি বঙ্গবন্ধুকে পরাজিত করেছিল। মেজর জিয়ার সাজানো নাটক তাঁরপত্নি গ্রহন, বর্জনের নাটকীয় অভিনয়ে পরবর্তী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের বীজ সেদিনই রোপন করতে পেরেছিলেন মেজর জিয়া এবং তাঁর ছলনাময়ী সহধর্মীনি বেগম খালেদা জিয়া।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন