তৃনমূলের আবিস্কৃত "হাউব্রিড" তত্ত্ব---ওবায়দুল কাদের সাহেবের "কাউয়া" তত্ত্বে বিলীন
(রুহুল আমিন মজুমদার)
দীর্ঘ আট/নয় বছর দল ক্ষমতায় থাকার কারনে সর্বস্তরে কিছু আগাছা জম্মেছে তা অস্বীকারের উপায় নেই।স্থান বিশেষে আগাছার বাড়ন্তিতে তারতম্য থাকতে পারে, একেবারে নেই এমন অঞ্চল বোধকরি বাংলাদেশের কোথাও নেই। জনাব ওবায়দুল কাদের তৃনমূল থেকে উঠে আসা পোঁড় খাওয়া এক অন্যন্ন রাজনীতিবিদ। তাই তিনি সহজে অনুধাবন করতে পেরেছেন দলের মুলত: সমস্যা কোথায়। আত্মসমালোচনা, আত্মপলব্দি গনতান্ত্রিক দলের অপরিহায্য অংশ অস্বিকারের উপায় নেই। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক গনসংগঠন। এইদলে সময়ে অ-সময়ে দলে দলে লোক আসবে আবার চলেও যাবে। দলের ভালকর্মে বা কর্মসূচিতে আপামর জনগনের সমর্থন বাড়বে আবার কোনকোন কর্মসূচিকে উপলক্ষ করে অনেকেই দলত্যাগ করতে পারে। এতে জনসমর্থনের ব্যারোমিটার উঠানামা করবে সত্য দলের অস্তিত্ব কখনই বিপন্ন হবেনা। কারন আওয়ামীলীগ একটি নির্দিষ্ট আদর্শ, উদ্দেশ্য সম্বলীত সুশিক্ষিত, আদর্শবান নেতাকর্মীদের অভায়ারণ্য ভিত্তিক দল। দলের দু:সময়ে আদর্শের অনুপ্রেরনায় অনুপ্রানিত নেতাকর্মীগন কখনই ঘরে বসে থাকতে পারেন না। আদর্শের টানে মাঠে তাদের ছুটে আসতেই হয় এবং আসেন।
"৭৫ পরবর্তীতে দীর্ঘ একুশ বছরের অধিক অ-গনতান্ত্রিক সামরিক শাষন সহ বিভিন্ন মুখী ফ্যাসিবাদি অ-রাজনৈতিক শাষনের প্রেক্ষাপটে বিবিধ ধারনার সুযোগসন্ধানী নেতাকর্মীদের সমাবেস ঘটেছে জাতির জনকের হাতে গড়া তাঁর আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে। জাতিরজনকের নেতৃত্বে একদল ত্যাগি আদর্শবান নেতাকর্মীর বিচরনে যে দলটি বিকশীত হয়ে বিপ্লবি দল না হওয়া সত্বেও মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় 'সামাজিক স্বসস্ত্র বিপ্লবে'র নেতৃত্ব দিতে পেরেছে। সে দলটি কালক্রমে তাঁর অকাল প্রয়ানে বিভিন্নমূখি সুযোগ সন্ধানী অনা-দর্শিক নেতাকর্মীর অনুপ্রবেশ ঘটে দলকেই গিলে খাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমান পাওয়া যায় এই সেইদিন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে। সবকিছু অনুকূলে থাকা সত্বেও দেশের সর্বকনিষ্ট কুমিল্লা সিটি নির্বাচনেও জিতে আসতে পারেনি দলটি-- "তাঁর একমাত্র এবং একমাত্র কারন দলের প্রভাব প্রতিপত্তির চাইতেও ব্যাক্তির প্রভাব প্রতিপত্তি অত্যাদিক বেড়ে যাওয়ায় কুমিল্লায় ব্যাক্তি দলকেই গিলে খেয়ে ফেলেছে। শুধুমাত্র কুমিল্লা নয়--এমন অঞ্চল বাকি নেই গুনে বলা সম্ভব--বাকি আছে বোধহয় এমন অঞ্চল গোনে বলা সম্ভব নয়।
রাজনীতির দুস্তর পথ পাড়ি দিতে '৭৫ পরবর্তীতে স্ব-স্ব এলাকার চলমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসী, মাস্তান, দুবৃত্ত, কালটাকার মালিক ব্যাবসায়ী, আত্মকেন্দ্রিক লুটেরা, অ-রাজনৈতিক দুবৃত্ত ব্যাক্তি বিশেষের হাতে আওয়ামী রাজনীতির চাবিকাঠি অনায়াসে চলে গেছে। তাঁরা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে অবস্থান করে ক্ষেত্র বিশেষ জেলা, উপজেলার নেতৃত্ব করায়ত্ব করে, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমাজের চিহ্নিত দুস্কৃতকারি, চোর, ডাকাত, ভুমিদুস্য, সন্ত্রাসি, মাস্তান সমন্বয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন। ক্ষমতাধর উল্লেখিত নেতা যতনা দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ধারন এবং তদানুযায়ি প্রচার প্রপাকান্ড এর মাধ্যমে আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত নেতাকর্মী সৃষ্টি, দলকে শক্তিশালী করার কাজে মনযোগী--তার চেয়ে ঢের অধিক নিজের আখের গোছানো, প্রভাব বলয় বৃদ্ধি, স্বজনপ্রীতি, আত্ম প্রচারনায় মনযোগী বহুগুন বেশি।'৭৫ পরবর্তী তৎসময়ের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থীতি বিবেচনায় তাঁদেরকে অনেকক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উৎসাহীত করা হয়নি, এমন কিন্তু হলফ করে বলা যাবেনা।
তবে আশার কথা--গত জাতীয় সম্মেলনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতিক এবং প্রার্থী বাছাইয়ের সুনির্দিষ্ট নিয়মরীতি দলীয় গঠনতন্ত্রে সংযোজিত হয়েছে। এই ধারা চলমান থাকলে অচিরেই দলের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী, মাস্তান, দখলদার, অনাদর্শিক নেতাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিলীন হতে বাধ্য হবে। তদস্থলে অধিকতর আদর্শবান, দলের প্রতি অনুগত, চরিত্রবান শিক্ষিত নেতাদের প্রভাব ধীরে ধীরে হলেও বৃদ্ধি পাবে।আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি। উল্লেখিত প্রথাটি গতবার অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সর্বস্তরে অনুসরনের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্বেও এলাকাভিত্তিক বলদর্পি নেতাগন মানেননি। তাঁরা একতরফা নিজস্ব পছন্দের প্রার্থীর নাম জেলা, উপজেলায় বসেই অনুমোদন করে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছেন।এতে লেনদেনের ব্যাপারটিও ছিল বলে লোকমূখে বলাবলি আছে। ত্যাগি নেতাদেরকে নমিনেশনের ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগ নাদেয়ার উদাহরন কেবল কম নয়। তথাপি বলতে পারি উল্লেখিত নিয়মের আওতায় সময়ে ঐসমস্ত অঞ্চলের নেতারাও আসতে বাধ্য হবে এবং আসবেন-ই। কারন ইহা দলীয় রীতি, বেশীদিন লংগন করা এত সহজ হবেনা।
আওয়ামীলীগের নবনির্বাচিত সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁর বেশ কিছু সত্য এবং নিগূঢ় বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে দেশবাসি লক্ষ করেছে। বক্তব্যগুলী অদ্যাবদি বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে---কায্যকর কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা।অবশ্য দীর্ঘদিনের লালিত অভ্যেস সহজে ইচ্ছে করলেই বদলানো যাবে ভাবাও অনেকটা বোকামি--রাজনীতির ক্ষেত্রে আরো বড় কঠিন বলা যায়। যেমন তিনি পারেননি আত্মপ্রচারনামূলক রাস্তায় রাস্তায় অসংখ্য বিলবোর্ড, তৌরণ, পোষ্টারের ক্ষেত্রে। যেখানে জাতির জনক এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি অত্যান্ত ছোটাকার (অনেকক্ষেত্রে চোখেও দেখা যায়না) করে তাঁর নিজের ছবি বিলবোর্ড ব্যাপি। (নিছে আবার বিভিন্ন ওয়ার্ড সভাপতি, সম্পাদক বা ব্যাক্তির ছবি ও নাম অংকিত, যার উৎসাহ, উদ্দিপনা, অর্থে উক্ত প্রচারকায্য) উক্তরুপ বিলবোর্ড সরানোর নির্দেশ দিয়ে কায্যকর করতে পেরেছেন? পারেননি---কেন পারেননি? কারন দলের চেয়ে দলের নেতার প্রভাব এখানে অনেকগুন বেশী ( নেতা নিজে নিজে মনে করে)।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের শ্রমিক লীগ আয়োজিত সভায় ওবায়দুর কাদের সাহেবের বক্তব্যটি পড়ে চমৎকৃত হয়েছি। তিনি বলেছিলেন 'নিউজ আর ছবি ছাপালে এ সব ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা সংগঠন উৎসাহিত হয় এবং চাঁদাবাজি করে।' সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন 'এদের উৎসাহিত করবেন না'। জাতীয় শ্রমিক লীগের আমন্ত্রণে তাদেরই সভায় উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন 'শ্রমিক লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার কি দরকার? বিদেশে শ্রমিক লীগের দরকারটা কি? কৃষক লীগের ধানমন্ডি শাখার বা গুলশান শাখার কি দরকার? ধানমন্ডিতে যে ধান চাষ হয় তা তো আমি জানি না। কৃষক লীগের কাতার শাখারই বা দরকার কি? তাঁতি লীগের নাম দেখলাম কুয়েত না কাতারে তার আবার পাল্টা দুই কমিটি।' তরুণ লীগ নামের এক ভুঁইফোড় দলের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন 'এই লীগের হেডকোয়ার্টার কোথায়? পাঁচশ' টাকা দিয়ে একটা রাবার স্ট্যাম্প বানালেই তো দল হয়ে যায় না? এই সব দোকানদারির স্বীকৃতি আমরা দেব না। এগুলো আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করছে, ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।'
সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার আগেও তিনি দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন কি তিনি আওয়ামী পরিচয়ের ঐ সব ভুঁইফোড় সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ্য করেননি? তখন কি তিনি দেখেননি তারই সতীর্থ অনেক নেতাই ওই সব সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক? তাদের আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি- অতিথি হয়ে কেতাদূরস্থ সেজে সভাস্থল উজ্জ্বল করে রাখতে? একটা কথা কাদের সাহেব এখন আর অস্বীকার করতে পারবেন না--তার নিজের দলের কোন না কোন নেতার আশীর্বাদ নিয়েই ঐ সব ভুঁইফোড় সংগঠনের জন্ম।
কেন এ ধরনের সংগঠন গড়তে সহযোগিতা করা হয় সেটাও কাদের সাহেব ভালো করেই জানেন। মূলত নিজেদের উপদল বা গ্রুপ শক্তিশালী করার জন্যই এটা করা হয়। উপদলীয় কোন্দলে আওয়ামীলীগ বোধহয় এখন সবচেয়ে বেশি জর্জরিত। অতীতেও কোন্দল ছিল তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা ছিল নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। কিন্তু এ কোন্দল, গ্রুপিং এখন সব সীমা অতিক্রম করেছে। উপরে উপরে ঐক্যের গান গাইলেও ভেতরে রয়েছে হিংসা, বিদ্বেস, অহংকার। নিজে পাইনি অন্যকেও পেতে দেব না। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়।এক্ষেত্রে উদ্বতন নেতাদের কারসাজি,পছন্দ, অপছন্দ সর্বত্র চোখে পড়ার মত পরিলক্ষিত হয়। উধ্বতন নেতাদের আর্শিবাদ তোলে নিলে সর্বত্র সমঝোতা সম্ভব--এতে কোন সন্দেহ নেই।
ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন তাঁর প্রমান। অন্য কেউ না জানলেও কাদের সাহেব তা ভালো করেই জানেন। অথবা এটাই সত্য যে, ৮০-এর পর থেকে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারতেন তাহলে সব নির্বাচনেই একজন সাধারন আওয়ামী কর্মীকেও সামনে রেখে জিতে আসতে পারতেন।
আমি মনে করি--সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীরা দলের বাইরে থেকে যতটুকু বুঝতে পেরেছেন তার চাইতে অনেক বেশি বুঝতে পেরেছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। আরো অনেকেই বুঝতে পারছেন যারা দলের মধ্যে থেকে প্রতিনিয়ত এমনতর উৎকট পরিস্থিতি ভোগ করে একসময় অতিষ্ট হয়ে রাজনীতিকেই গুডবাই জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপারটি হচ্ছে দলের সংকট সম্যক এবং নিবিড়ভাবে সাধারন সম্পাদক অনুধাবন করতে পেরেছেন।এবং তা ভুক্তভোগি তৃনমূলের অনেকের চাইতে অনেক গভীরে অনুভব করতে পেরেছেন।
অবশ্য সমস্যা শনাক্ত করা, সমস্যার গভীরে দেখার মানসিকতা থাকা এবং সংকট সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকার ব্যাপারটা সবার মাঝে এক ধরনের হয় না। আমাদের বিশ্বাস, নতুন সাধারণ সম্পাদক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিশাল সংগঠনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার স্বার্থে সংকট নিরসনের যথোপযুক্ত পন্থা বের করার চেষ্টা সতীর্থদের সহযোগে অব্যাহত রাখবেন।
আমরা জানি ওবায়দুল কাদেরের আন্তরিকতা রয়েছে সংকট সমাধানের ব্যাপারে। এ জন্য দরকার তার মনোবলে বলিয়ান সমমনা, ন্যায়পরায়ন, সৎসাহসী ও সৎসহযোগীর নিবিড় সমর্থন। দলীয় নেত্রী জাতির জনকের কন্যার নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে আন্তরিক সমর্থন রয়েছে। দলের নির্বাহী প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কাদের সাহেবের বিভিন্ন সময় যে সব বক্তব্য দেশের সচেতন মানুষ আলোড়িত, অনুপ্রানিত, আশার আলো দেখতে পেয়েছে তাতে এটা পরিষ্কার---"কাদের সাহেব বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছেন দলের সংকট কোথায়? তবে আমরা এটাও অনুমান করতে পারি, দীর্ঘ সময় ধরে দলের বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা সমস্যা সাধারণ সম্পাদক ইচ্ছা করলেই অল্পসময়ে খুব সহজে সমাধান করতে পারবেনা।
আমি খুববেশি উৎফুল্ল হয়েছি নোয়াখালীর এক সভায় জনাব 'ওবায়দুল কাদের সাহেব' দলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া 'মৌসুমিপাখি, হাইব্রিড', আত্মীয়করন দাপুটে" জাতীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় তাঁদেরকে 'কাউয়া' বলে সম্বোধন করেছেন। এতে তাঁর প্রচন্ড ক্ষোভ, ঘৃনাও উন্নাসিকতার চরম বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তৃনমুলে বহুল প্রচারিত, ব্যবহৃত, কথিত শব্দ "হাইব্রিডে"র চেয়ে অনেকবেশি তাৎপয্যমন্ডিত "কাউয়া" শব্দটি। হাইব্রিড উৎপাদনযোগ্য, মোটাতাজা অর্থে অনুপ্রবেশকারীদের ক্ষেত্রে আওয়ামী নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশের বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত একটি শব্দ। "কাউয়া" শব্দটি সর্বার্থে অনিষ্টকারি, কুৎসিৎ, অ-খাদ্য, অপোষনীয়, অ-প্রয়োজনীয় পাখী হিসেবে অনু-প্রবেশকারিদের ক্ষেত্রে "যথাপযুক্ত, মানানসই, সময় উপযোগী" শব্দবাছাই বলেই আমি মনে করি। একারনেই আগেও বলেছি--দলের ত্যাগি নেতাকর্মী, শুভাকাংক্ষী, শুভানুধ্যায়ী, সর্বোপরি ভুক্তভোগিরা অন্তরের যতটুকু গভীর থেকে অনুপ্রবেশকারিদের অনুধাবন করতে পেরেছেন--"দলের সাধারন সম্পাদক তাঁরচেয়ে ঢের বেশীগুন গভীর থেকে উপলব্দি করতে পেরেছেন কথিত "কাউয়া"র দৌরাত্ব কোনপয্যায় পৌঁছে গেছে।"
ruhulaminmujumder27@gmail.com
(রুহুল আমিন মজুমদার)
দীর্ঘ আট/নয় বছর দল ক্ষমতায় থাকার কারনে সর্বস্তরে কিছু আগাছা জম্মেছে তা অস্বীকারের উপায় নেই।স্থান বিশেষে আগাছার বাড়ন্তিতে তারতম্য থাকতে পারে, একেবারে নেই এমন অঞ্চল বোধকরি বাংলাদেশের কোথাও নেই। জনাব ওবায়দুল কাদের তৃনমূল থেকে উঠে আসা পোঁড় খাওয়া এক অন্যন্ন রাজনীতিবিদ। তাই তিনি সহজে অনুধাবন করতে পেরেছেন দলের মুলত: সমস্যা কোথায়। আত্মসমালোচনা, আত্মপলব্দি গনতান্ত্রিক দলের অপরিহায্য অংশ অস্বিকারের উপায় নেই। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক গনসংগঠন। এইদলে সময়ে অ-সময়ে দলে দলে লোক আসবে আবার চলেও যাবে। দলের ভালকর্মে বা কর্মসূচিতে আপামর জনগনের সমর্থন বাড়বে আবার কোনকোন কর্মসূচিকে উপলক্ষ করে অনেকেই দলত্যাগ করতে পারে। এতে জনসমর্থনের ব্যারোমিটার উঠানামা করবে সত্য দলের অস্তিত্ব কখনই বিপন্ন হবেনা। কারন আওয়ামীলীগ একটি নির্দিষ্ট আদর্শ, উদ্দেশ্য সম্বলীত সুশিক্ষিত, আদর্শবান নেতাকর্মীদের অভায়ারণ্য ভিত্তিক দল। দলের দু:সময়ে আদর্শের অনুপ্রেরনায় অনুপ্রানিত নেতাকর্মীগন কখনই ঘরে বসে থাকতে পারেন না। আদর্শের টানে মাঠে তাদের ছুটে আসতেই হয় এবং আসেন।
"৭৫ পরবর্তীতে দীর্ঘ একুশ বছরের অধিক অ-গনতান্ত্রিক সামরিক শাষন সহ বিভিন্ন মুখী ফ্যাসিবাদি অ-রাজনৈতিক শাষনের প্রেক্ষাপটে বিবিধ ধারনার সুযোগসন্ধানী নেতাকর্মীদের সমাবেস ঘটেছে জাতির জনকের হাতে গড়া তাঁর আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে। জাতিরজনকের নেতৃত্বে একদল ত্যাগি আদর্শবান নেতাকর্মীর বিচরনে যে দলটি বিকশীত হয়ে বিপ্লবি দল না হওয়া সত্বেও মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় 'সামাজিক স্বসস্ত্র বিপ্লবে'র নেতৃত্ব দিতে পেরেছে। সে দলটি কালক্রমে তাঁর অকাল প্রয়ানে বিভিন্নমূখি সুযোগ সন্ধানী অনা-দর্শিক নেতাকর্মীর অনুপ্রবেশ ঘটে দলকেই গিলে খাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমান পাওয়া যায় এই সেইদিন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে। সবকিছু অনুকূলে থাকা সত্বেও দেশের সর্বকনিষ্ট কুমিল্লা সিটি নির্বাচনেও জিতে আসতে পারেনি দলটি-- "তাঁর একমাত্র এবং একমাত্র কারন দলের প্রভাব প্রতিপত্তির চাইতেও ব্যাক্তির প্রভাব প্রতিপত্তি অত্যাদিক বেড়ে যাওয়ায় কুমিল্লায় ব্যাক্তি দলকেই গিলে খেয়ে ফেলেছে। শুধুমাত্র কুমিল্লা নয়--এমন অঞ্চল বাকি নেই গুনে বলা সম্ভব--বাকি আছে বোধহয় এমন অঞ্চল গোনে বলা সম্ভব নয়।
রাজনীতির দুস্তর পথ পাড়ি দিতে '৭৫ পরবর্তীতে স্ব-স্ব এলাকার চলমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসী, মাস্তান, দুবৃত্ত, কালটাকার মালিক ব্যাবসায়ী, আত্মকেন্দ্রিক লুটেরা, অ-রাজনৈতিক দুবৃত্ত ব্যাক্তি বিশেষের হাতে আওয়ামী রাজনীতির চাবিকাঠি অনায়াসে চলে গেছে। তাঁরা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে অবস্থান করে ক্ষেত্র বিশেষ জেলা, উপজেলার নেতৃত্ব করায়ত্ব করে, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমাজের চিহ্নিত দুস্কৃতকারি, চোর, ডাকাত, ভুমিদুস্য, সন্ত্রাসি, মাস্তান সমন্বয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন। ক্ষমতাধর উল্লেখিত নেতা যতনা দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ধারন এবং তদানুযায়ি প্রচার প্রপাকান্ড এর মাধ্যমে আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত নেতাকর্মী সৃষ্টি, দলকে শক্তিশালী করার কাজে মনযোগী--তার চেয়ে ঢের অধিক নিজের আখের গোছানো, প্রভাব বলয় বৃদ্ধি, স্বজনপ্রীতি, আত্ম প্রচারনায় মনযোগী বহুগুন বেশি।'৭৫ পরবর্তী তৎসময়ের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থীতি বিবেচনায় তাঁদেরকে অনেকক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উৎসাহীত করা হয়নি, এমন কিন্তু হলফ করে বলা যাবেনা।
তবে আশার কথা--গত জাতীয় সম্মেলনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতিক এবং প্রার্থী বাছাইয়ের সুনির্দিষ্ট নিয়মরীতি দলীয় গঠনতন্ত্রে সংযোজিত হয়েছে। এই ধারা চলমান থাকলে অচিরেই দলের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী, মাস্তান, দখলদার, অনাদর্শিক নেতাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিলীন হতে বাধ্য হবে। তদস্থলে অধিকতর আদর্শবান, দলের প্রতি অনুগত, চরিত্রবান শিক্ষিত নেতাদের প্রভাব ধীরে ধীরে হলেও বৃদ্ধি পাবে।আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি। উল্লেখিত প্রথাটি গতবার অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সর্বস্তরে অনুসরনের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্বেও এলাকাভিত্তিক বলদর্পি নেতাগন মানেননি। তাঁরা একতরফা নিজস্ব পছন্দের প্রার্থীর নাম জেলা, উপজেলায় বসেই অনুমোদন করে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছেন।এতে লেনদেনের ব্যাপারটিও ছিল বলে লোকমূখে বলাবলি আছে। ত্যাগি নেতাদেরকে নমিনেশনের ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগ নাদেয়ার উদাহরন কেবল কম নয়। তথাপি বলতে পারি উল্লেখিত নিয়মের আওতায় সময়ে ঐসমস্ত অঞ্চলের নেতারাও আসতে বাধ্য হবে এবং আসবেন-ই। কারন ইহা দলীয় রীতি, বেশীদিন লংগন করা এত সহজ হবেনা।
আওয়ামীলীগের নবনির্বাচিত সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁর বেশ কিছু সত্য এবং নিগূঢ় বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে দেশবাসি লক্ষ করেছে। বক্তব্যগুলী অদ্যাবদি বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে---কায্যকর কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা।অবশ্য দীর্ঘদিনের লালিত অভ্যেস সহজে ইচ্ছে করলেই বদলানো যাবে ভাবাও অনেকটা বোকামি--রাজনীতির ক্ষেত্রে আরো বড় কঠিন বলা যায়। যেমন তিনি পারেননি আত্মপ্রচারনামূলক রাস্তায় রাস্তায় অসংখ্য বিলবোর্ড, তৌরণ, পোষ্টারের ক্ষেত্রে। যেখানে জাতির জনক এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি অত্যান্ত ছোটাকার (অনেকক্ষেত্রে চোখেও দেখা যায়না) করে তাঁর নিজের ছবি বিলবোর্ড ব্যাপি। (নিছে আবার বিভিন্ন ওয়ার্ড সভাপতি, সম্পাদক বা ব্যাক্তির ছবি ও নাম অংকিত, যার উৎসাহ, উদ্দিপনা, অর্থে উক্ত প্রচারকায্য) উক্তরুপ বিলবোর্ড সরানোর নির্দেশ দিয়ে কায্যকর করতে পেরেছেন? পারেননি---কেন পারেননি? কারন দলের চেয়ে দলের নেতার প্রভাব এখানে অনেকগুন বেশী ( নেতা নিজে নিজে মনে করে)।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের শ্রমিক লীগ আয়োজিত সভায় ওবায়দুর কাদের সাহেবের বক্তব্যটি পড়ে চমৎকৃত হয়েছি। তিনি বলেছিলেন 'নিউজ আর ছবি ছাপালে এ সব ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা সংগঠন উৎসাহিত হয় এবং চাঁদাবাজি করে।' সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন 'এদের উৎসাহিত করবেন না'। জাতীয় শ্রমিক লীগের আমন্ত্রণে তাদেরই সভায় উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন 'শ্রমিক লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার কি দরকার? বিদেশে শ্রমিক লীগের দরকারটা কি? কৃষক লীগের ধানমন্ডি শাখার বা গুলশান শাখার কি দরকার? ধানমন্ডিতে যে ধান চাষ হয় তা তো আমি জানি না। কৃষক লীগের কাতার শাখারই বা দরকার কি? তাঁতি লীগের নাম দেখলাম কুয়েত না কাতারে তার আবার পাল্টা দুই কমিটি।' তরুণ লীগ নামের এক ভুঁইফোড় দলের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন 'এই লীগের হেডকোয়ার্টার কোথায়? পাঁচশ' টাকা দিয়ে একটা রাবার স্ট্যাম্প বানালেই তো দল হয়ে যায় না? এই সব দোকানদারির স্বীকৃতি আমরা দেব না। এগুলো আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করছে, ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।'
সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার আগেও তিনি দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন কি তিনি আওয়ামী পরিচয়ের ঐ সব ভুঁইফোড় সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ্য করেননি? তখন কি তিনি দেখেননি তারই সতীর্থ অনেক নেতাই ওই সব সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক? তাদের আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি- অতিথি হয়ে কেতাদূরস্থ সেজে সভাস্থল উজ্জ্বল করে রাখতে? একটা কথা কাদের সাহেব এখন আর অস্বীকার করতে পারবেন না--তার নিজের দলের কোন না কোন নেতার আশীর্বাদ নিয়েই ঐ সব ভুঁইফোড় সংগঠনের জন্ম।
কেন এ ধরনের সংগঠন গড়তে সহযোগিতা করা হয় সেটাও কাদের সাহেব ভালো করেই জানেন। মূলত নিজেদের উপদল বা গ্রুপ শক্তিশালী করার জন্যই এটা করা হয়। উপদলীয় কোন্দলে আওয়ামীলীগ বোধহয় এখন সবচেয়ে বেশি জর্জরিত। অতীতেও কোন্দল ছিল তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা ছিল নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। কিন্তু এ কোন্দল, গ্রুপিং এখন সব সীমা অতিক্রম করেছে। উপরে উপরে ঐক্যের গান গাইলেও ভেতরে রয়েছে হিংসা, বিদ্বেস, অহংকার। নিজে পাইনি অন্যকেও পেতে দেব না। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়।এক্ষেত্রে উদ্বতন নেতাদের কারসাজি,পছন্দ, অপছন্দ সর্বত্র চোখে পড়ার মত পরিলক্ষিত হয়। উধ্বতন নেতাদের আর্শিবাদ তোলে নিলে সর্বত্র সমঝোতা সম্ভব--এতে কোন সন্দেহ নেই।
ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন তাঁর প্রমান। অন্য কেউ না জানলেও কাদের সাহেব তা ভালো করেই জানেন। অথবা এটাই সত্য যে, ৮০-এর পর থেকে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারতেন তাহলে সব নির্বাচনেই একজন সাধারন আওয়ামী কর্মীকেও সামনে রেখে জিতে আসতে পারতেন।
আমি মনে করি--সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীরা দলের বাইরে থেকে যতটুকু বুঝতে পেরেছেন তার চাইতে অনেক বেশি বুঝতে পেরেছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। আরো অনেকেই বুঝতে পারছেন যারা দলের মধ্যে থেকে প্রতিনিয়ত এমনতর উৎকট পরিস্থিতি ভোগ করে একসময় অতিষ্ট হয়ে রাজনীতিকেই গুডবাই জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপারটি হচ্ছে দলের সংকট সম্যক এবং নিবিড়ভাবে সাধারন সম্পাদক অনুধাবন করতে পেরেছেন।এবং তা ভুক্তভোগি তৃনমূলের অনেকের চাইতে অনেক গভীরে অনুভব করতে পেরেছেন।
অবশ্য সমস্যা শনাক্ত করা, সমস্যার গভীরে দেখার মানসিকতা থাকা এবং সংকট সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকার ব্যাপারটা সবার মাঝে এক ধরনের হয় না। আমাদের বিশ্বাস, নতুন সাধারণ সম্পাদক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিশাল সংগঠনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার স্বার্থে সংকট নিরসনের যথোপযুক্ত পন্থা বের করার চেষ্টা সতীর্থদের সহযোগে অব্যাহত রাখবেন।
আমরা জানি ওবায়দুল কাদেরের আন্তরিকতা রয়েছে সংকট সমাধানের ব্যাপারে। এ জন্য দরকার তার মনোবলে বলিয়ান সমমনা, ন্যায়পরায়ন, সৎসাহসী ও সৎসহযোগীর নিবিড় সমর্থন। দলীয় নেত্রী জাতির জনকের কন্যার নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে আন্তরিক সমর্থন রয়েছে। দলের নির্বাহী প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কাদের সাহেবের বিভিন্ন সময় যে সব বক্তব্য দেশের সচেতন মানুষ আলোড়িত, অনুপ্রানিত, আশার আলো দেখতে পেয়েছে তাতে এটা পরিষ্কার---"কাদের সাহেব বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছেন দলের সংকট কোথায়? তবে আমরা এটাও অনুমান করতে পারি, দীর্ঘ সময় ধরে দলের বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা সমস্যা সাধারণ সম্পাদক ইচ্ছা করলেই অল্পসময়ে খুব সহজে সমাধান করতে পারবেনা।
আমি খুববেশি উৎফুল্ল হয়েছি নোয়াখালীর এক সভায় জনাব 'ওবায়দুল কাদের সাহেব' দলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া 'মৌসুমিপাখি, হাইব্রিড', আত্মীয়করন দাপুটে" জাতীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় তাঁদেরকে 'কাউয়া' বলে সম্বোধন করেছেন। এতে তাঁর প্রচন্ড ক্ষোভ, ঘৃনাও উন্নাসিকতার চরম বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তৃনমুলে বহুল প্রচারিত, ব্যবহৃত, কথিত শব্দ "হাইব্রিডে"র চেয়ে অনেকবেশি তাৎপয্যমন্ডিত "কাউয়া" শব্দটি। হাইব্রিড উৎপাদনযোগ্য, মোটাতাজা অর্থে অনুপ্রবেশকারীদের ক্ষেত্রে আওয়ামী নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশের বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত একটি শব্দ। "কাউয়া" শব্দটি সর্বার্থে অনিষ্টকারি, কুৎসিৎ, অ-খাদ্য, অপোষনীয়, অ-প্রয়োজনীয় পাখী হিসেবে অনু-প্রবেশকারিদের ক্ষেত্রে "যথাপযুক্ত, মানানসই, সময় উপযোগী" শব্দবাছাই বলেই আমি মনে করি। একারনেই আগেও বলেছি--দলের ত্যাগি নেতাকর্মী, শুভাকাংক্ষী, শুভানুধ্যায়ী, সর্বোপরি ভুক্তভোগিরা অন্তরের যতটুকু গভীর থেকে অনুপ্রবেশকারিদের অনুধাবন করতে পেরেছেন--"দলের সাধারন সম্পাদক তাঁরচেয়ে ঢের বেশীগুন গভীর থেকে উপলব্দি করতে পেরেছেন কথিত "কাউয়া"র দৌরাত্ব কোনপয্যায় পৌঁছে গেছে।"
ruhulaminmujumder27@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন