তিস্তা শেষাবদি ভারতের শতবছরের ঐতিহ্যে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে,যৌথবিবৃতিতে মমতার প্রস্তাব অগ্রাহ্য।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
মায়ের দুধের অধিকার একমাত্র বাচ্চার যেমন চিরন্তন তেমনি উজানের নদীর পানিও বাংলাদেশের পাওয়ার অধিকার চিরন্তন। মা এবং বাচ্চার সম্পর্কে কোনপ্রকার খাদ আছে বলতে পারেন? না কখনও মা ছেলের সম্পর্কে খাদ থাকতে পপারেনা। তার পরেও মা যতক্ষন বাচ্চা সংগ্রাম না করে ততক্ষনে তাঁর দুধ বের করে দিতে দেখেছেন কেউ? এবং কি স্বামী স্ত্রীর একান্ত মহুর্তেও সংগ্রামের তিব্রতায় বিরক্ত হলেও ঐ মহুর্তে বাচ্চার দুধ বের করে দিতেই হয়। মা-ছেলের নাড়ির সম্পর্কে মা থেকে দুধ বাহির করার জন্যে যেখানে বাচ্চার আন্দোলনের প্রয়োজন হয়---সেখানে আজীবনের লালিত শত্রুদেশ থেকে সহজ একেবারে সহজ উপায় পানি গরগর করে চলে আসবে, এইরুপ যারা চিন্তা করে তাঁদের সুস্থ্যতা নিয়েই আমার যতসব চিন্তা। মা দুধ দেয়ার জন্যে বাচ্চাকে যখন কোলে তোলে নেয় বাচ্চা তাঁর স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।মাও তাঁর অন্তরের সমস্ত অনুভূতি দিয়ে বাচ্চাকে দুধ বের করে দেয়।তদ্রুপ কোন আচরন বিগত ৪০ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ কি ভারতের সাথে করেছে?
নদীর পানির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এই পয্যন্ত যত আলোচনা, সমালোচনা হয়েছে আন্দোলন কি এই পয্যন্ত কেউ একবারও দেখেছেন? আমরা কি কখনও তাঁদের প্রতি কোন উপকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি? বরঞ্চ সবকাজের বিকল্প কটুক্তি ছাড়া কি দিতে পেরেছি? অনন্তকাল বলেই যাচ্ছি আমাদের গিলে খাচ্ছে, নিয়ে গেছে, নিয়ে যাচ্ছে।এর বাহিরে কোন সু-সমালোচনা আমরা কি তাঁদের উপহার দিতে পেরেছি? এই জাতির মুক্তির জন্যে তাঁরা তাঁদের রক্ত ঢেলে দেয়নি? রক্ত ঢেলে দেয়া তাঁদের সেনাবাহিনীর কোন জোয়ানের জন্যে, আমরা কোন দিন একমিনিট স্মরণ করার উদ্দেশ্যে নিরবতা পপালনের উদ্যোগ গ্রহন করেছি? যে মহান নেতার অবদানে মাত্র নয়মাসের যুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছিলাম, আমাদের মুক্তির দিশারীকে স্ব-শরীরে ফেরৎ পেয়েছিলাম, সেই মহান নেতা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে স্মরনে রাখার কোন ব্যবস্থা করেছি? আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশের কোথাও একটুকরো ভুমিও কি বরাদ্ধ রাখতে পেরেছি? গঙ্গার পানিও দিয়েছে আমরা কি সম্মীলিত ভাবে আজ পয্যন্ত তাঁদের কে একটা ধন্যবাদ দিতে পেরেছি? কেন পারিনি?
তিস্তার পানি দেয়ার আগেই বলছি তাঁদের নিকট বিক্রি হয়ে গেছি! যেহেতু বিক্রিই হয়ে গেলাম আইনত: তাঁরাই এই দেশের মালিক! তাঁদের দেশে তাঁরা পানি দিবে কি দিবেনা, তাঁদের কি সেই ইচ্ছা থাকতে পারেনা? আপনার বন্দর ব্যবহার করার জন্যে চাইলে বলবেন, তাঁরা দখল করে নিবে। পানি চান কোন চোখে।পানির উপর আপনার অধিকার যেমন সত্য, তেমনি পানির উপর প্রতিষ্ঠিত বন্দরের উপর তাঁর অধিকার কেন সত্য নয়? আপনার সব শতভাগ তাঁর বেলায় শুন্যভাগ কেন হতে হবে? আপনার নিকট চাইলে বলবেন অভ্যন্তরিন রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমন অভ্যন্তরিন কোন ব্যাপার কি তাঁদের দেশে থাকতে পারে না?
সুপ্রীয় পাঠক, বাংলাদেশের উজানে ৫৭টি নদী আছে।প্রত্যেকটা নদীর উপর গত চল্লিশ বছর যাবৎ তাঁরা তিলে তিলে বাঁধ গড়ে তোলে একতরফা পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তিস্তা আলোচিত বটে বিভিন্ন কারনে কিন্ত্যু তাঁর চেয়েও প্রয়োজনীয় নদীর পানি আমরা পাচ্ছিনা। বিগত চল্লিশবছর একতরফা বাঁধ নির্মান প্রাক্কালে বাংলাদেশের কোন সরকার বা বিরুধীদল দেশে বা আন্তজাতিক পয্যায় কোন প্রতিবাদ করেনি।একমাত্র গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মানের সময় মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী লং মার্চের ঘোষনা দিয়ে আন্তজাতিক দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন।গঙ্গার উপর আমাদের ন্যায্যতা তোলে ধরেছিলেন।তিস্তা মুখে গজলডুবা বাঁধ নির্মানের বিরুদ্ধে আমরা কি তদ্রুপ একটা কর্মসূচি পালন করতে পারতামনা? কেন করিনি? এখনও কেন করছিনা? তিস্তার পানির অভাবে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে আমরা কি কোন ডকুমেন্টারি তৈরী করেছি? ঐ ডকুমেন্টারি দিয়ে আমরা কি ভারত সহ বিশ্বের দেশে দেশে প্রচার চালিয়ে জনমত গড়ে তুলতে পারতামনা? কেন প্রচার চালাইনি? ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ কেটে দেয়ার উদ্দেশ্যে যে লং মার্চ করেছিলেন সেই লং মার্চ কি আসলেই বাঁধ কাটার জন্যে? না, বিশ্বজনমতের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে?
এখন পয্যন্ত ভারত সরকার বা মমতা তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কি অপারগতা প্রকাশ করেছেন? উভয় দেশের সরকার প্রধান এবং কি মমতা এখনও কি আশাবাদ ব্যাক্ত করে যাচ্ছেন না? মমতা তিস্তার পানি স্বল্পতার কারন উল্লেখ করে তৎসংলগ্ন আরো চারটি নদীর সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব কি দেয়নি? মমতা এমনও তো বলেছেন--বাংলাদেশের যে পরিমান পানির প্রয়োজন, তিস্তা তা সরবরাহ করতে পারবেনা। এই না পারার কারনও তিনি ব্যাখ্য করেছেন। তিস্তার পানি প্রবাহ বাড়ানোর বিকল্প ব্যবস্থা করা সাপেক্ষে--তোর্সা সহ আরো কয়েক নদীর পানিবন্টনের কথাই বলেছেন তিনি। যে নদীগুলী তিস্তার প্রবাহমান এলাকায় পানি সরবরাহ করা সম্ভব। তাঁর প্রস্তাবিত চার নদীতেও পশ্চিমবঙ্গকে সাথে রাখার অনুরুধ রেখেছেন বাংলাদেশ ও তাঁর সরকারের নিকট।
তাঁর রাজনীতির স্বার্থ নিশ্চয়ই এখানে লুকিয়ে আছে। এমনও তো হতে পারে--এখন সে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের অভ্যন্তরে লুকিয়ে রেখেছেন। তাঁর কি সর্বভারতীয় প্রধান মন্ত্রীর হওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারেনা? আমরা যেহেতু দেশবিক্রির স্টেন্ড নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি প্রস্তুত করতে পারি, সে পানি আটকিয়ে সর্বভারতের স্বার্থরক্ষকের ভুমিকায় অবতীন্ন হতে পারবেনা কেন? সে কি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দেখতে পারেনা? সকলেই জানে দেশ এমন কোন পণ্য নয় সকাল বিকাল বিক্রি করা যায়, তেমনি অভিন্ন নদীর পানিও এমন কোন বিষয় নয়, যুগের পর যুগ আটকিয়ে রাখতে পারবে।
মমতা তিস্তার বদলে নয় গ্রহনযোগ্য প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।মৌদি সরকার কোন প্রস্তাবেই সায় দেয়নি।একটা কথা বলে রাখতে চাই--বাংলাদেশ এবং ভারতের যে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা গ্রহন করেছে, দুই সরকার প্রধান এবং এতে ভারতের প্রধান বিরুধীদল যে ভুমিকা পালন করছে, বাংলাদেশের বিরুধীদল তাঁর বিন্দু পরিমান ভুমিকাও পালন করতে পারলে ভারত- বাংলাদেশের বিদ্যমান সমস্যা নিমীষেই সমাধান হ'তে পারে। ভারতের ইতিহাসে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে বাদ দিয়ে কোন বিদেশী রাষ্ট্রের সংঙ্গে চুক্তি হয়েছে---এমন কোন নজীর নেই। দেশটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে চলমান রীতি তিস্তা দিয়ে ভাঙ্গার নজীর সৃষ্টি হলেও আশ্চায্য হওয়ার কিছুই থাকবে না, আমি মনে করি।
এই প্রসংঙ্গে ১০/৪/২০১৭ ইং তারিখের বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর সফর সংক্রান্ত বিষয়ে প্রখ্যাত বাংলা পত্রিকা "দৈনিক আনন্দ বাজারে"র সর্বশেষ সংস্করনে প্রকাশিত নিবন্ধ হুবহু পাঠকদের জানার জন্যে কপি পেষ্ট তুলে দিলাম---
গ্রহনযোগ্য নয়প্রস্তাব--কোন প্রস্তাবেই কেন্দ্রের সায় নেই।
দৈনিক আনন্দবাজার।১০/০৪/ ২০১৭ ইং
কাল রাতে মমতা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কেবল মাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, হায়দরাবাদ হাউসের মধ্যাহ্নভোজেও তিনি ভারতীয় নেতৃত্বকে তাঁর বিকল্প প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সন্ধ্যায় ভারত যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে সেই প্রস্তাবের উল্লেখটুকুও নেই। বরং বলা রয়েছে উল্টো কথা। যৌথ বিবৃতির নথির ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে, ‘২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে দুই সরকারের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সই করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করেছেন। মোদী জানিয়েছেন, ওই চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার সংশ্লিষ্ট মহলগুলির সঙ্গে কথা বলছেন।’ শুধু তাই নয়, ফেনি, মানু, ধরলা-সহ ৭টি নদীর জলবণ্টন নিয়ে চুক্তি সইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। তোর্সার নামই নেই সে তালিকায়।
মুখ্যমন্ত্রী তিস্তার বদলে তোর্সার জলের প্রস্তাব দেওয়ার পর এখনও সরকারি ভাবে মুখ খোলেননি কেন্দ্রীয় কর্তারা। খোলার কথাও নয়। হাসিনার সফর এখনও চলছে। তবে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছে না কেন্দ্র। তার কারণ, জলের অভাবে বাংলাদেশে তিস্তা অববাহিকা শুকিয়ে জীবন-জীবিকায় বিপর্যয় নামার বিষয়টি তো রয়েছেই। নয়াদিল্লি জানে, তিস্তা নিছক একটি নদীর নাম নয়। বাংলাদেশের মানুষের আবেগের নাম। ২০১৮-র শেষে নির্বাচনে যাওয়ার আগে মুজিব কন্যার প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে চলেছে এই তিস্তা চুক্তি। তিনি তা সই করে ভোটে যেতে পারলে সরকারে ফিরতে সুবিধা হবে বলে মনে করে আওয়ামি লিগ। অন্য দিকে আগ্নেয় প্রতিবেশী বলয়ের মধ্যে থাকা ভারতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা-সমঝোতা জরুরি। মোদীর কথায়, ‘‘হাসিনা যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করছেন, তাঁর জন্য আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রয়েছে।’’ কূটনীতিকরা বলছেন, এমন নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলাটা দিল্লির লক্ষ্য নয়। বরং প্রতিবেশী দেশের এই নেতৃত্বকে সর্বতো ভাবে সহযোগিতা করাই নীতি হওয়া উচিত।
শেখ হাসিনাকে পাশে নিয়ে কাল প্রধানমন্ত্রী কার্যত তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের সময়সীমাই ঘোষণা করে দিয়েছেন। মোদী বলেছেন, ‘‘আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আমার এবং আপনার সরকারই তিস্তা চুক্তির দ্রুত সমাধান করতে পারবে।’’ তাঁর এই মন্তব্যের পর জল্পনা— আগামী বছরের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আর প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মঞ্চে তাঁর পাশেই ছিলেন।
এর পরেও বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল এবং মুর্খ্য রাজনীতিবীদেরা যদি বলতে চায় ভারত একতরফা বাংলাদেশের উপর তাঁর প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তাঁদেরকে কি বলে সমবেদনা জানাতে পারি, আমি ক্ষুদ্র একজন নাগরিক বুঝতে পারিনা।
তিস্তার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোনপ্রকার আপোষ করেছেন যারা বলেন--তারা আহম্মকের স্বর্গেই বাস করছেন বলতে হয়। সকলেরই জানা আছে--শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল। শেখ হাসিনা উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন।এতেই বুঝা যায় জাতির পিতার কন্যা স্বস্তিতে নেই।দেশের স্বার্থরক্ষায় অবাঞ্চিত বাঁধায় তাঁর মনের মধ্যেও চৈতালী হাওয়া বইছে। সুতারাং এই মহুর্তে তাঁর অবস্থানকে শক্তিশালী করার কর্মসূচি দেশের সচেতন মহল এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। তিস্তার ন্যায্যতা তুলে ধরে দেশের অভ্যন্তরে অন্তত: মহানগর কেন্দ্রিক আন্দোলনের কর্মসুচি এখনই প্রয়োজন। অযথা টিভি পর্দায় জ্ঞানগর্ব বক্তব্যের তুফান তোলে কোন লাভ নেই---তিস্তার ন্যায্যতা নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলুন, দেশে বিদেশে জনমত গড়ে তুলুন। যাতে অন্তত: সরকার আন্তজাতিক সংস্থায় তিস্তার ন্যায্যতা তোলে ধরার অজুহাত সৃষ্ট্রি করতে পারে।
আশাকরি সকল পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে--বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবি হবে।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
মায়ের দুধের অধিকার একমাত্র বাচ্চার যেমন চিরন্তন তেমনি উজানের নদীর পানিও বাংলাদেশের পাওয়ার অধিকার চিরন্তন। মা এবং বাচ্চার সম্পর্কে কোনপ্রকার খাদ আছে বলতে পারেন? না কখনও মা ছেলের সম্পর্কে খাদ থাকতে পপারেনা। তার পরেও মা যতক্ষন বাচ্চা সংগ্রাম না করে ততক্ষনে তাঁর দুধ বের করে দিতে দেখেছেন কেউ? এবং কি স্বামী স্ত্রীর একান্ত মহুর্তেও সংগ্রামের তিব্রতায় বিরক্ত হলেও ঐ মহুর্তে বাচ্চার দুধ বের করে দিতেই হয়। মা-ছেলের নাড়ির সম্পর্কে মা থেকে দুধ বাহির করার জন্যে যেখানে বাচ্চার আন্দোলনের প্রয়োজন হয়---সেখানে আজীবনের লালিত শত্রুদেশ থেকে সহজ একেবারে সহজ উপায় পানি গরগর করে চলে আসবে, এইরুপ যারা চিন্তা করে তাঁদের সুস্থ্যতা নিয়েই আমার যতসব চিন্তা। মা দুধ দেয়ার জন্যে বাচ্চাকে যখন কোলে তোলে নেয় বাচ্চা তাঁর স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।মাও তাঁর অন্তরের সমস্ত অনুভূতি দিয়ে বাচ্চাকে দুধ বের করে দেয়।তদ্রুপ কোন আচরন বিগত ৪০ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ কি ভারতের সাথে করেছে?
নদীর পানির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এই পয্যন্ত যত আলোচনা, সমালোচনা হয়েছে আন্দোলন কি এই পয্যন্ত কেউ একবারও দেখেছেন? আমরা কি কখনও তাঁদের প্রতি কোন উপকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি? বরঞ্চ সবকাজের বিকল্প কটুক্তি ছাড়া কি দিতে পেরেছি? অনন্তকাল বলেই যাচ্ছি আমাদের গিলে খাচ্ছে, নিয়ে গেছে, নিয়ে যাচ্ছে।এর বাহিরে কোন সু-সমালোচনা আমরা কি তাঁদের উপহার দিতে পেরেছি? এই জাতির মুক্তির জন্যে তাঁরা তাঁদের রক্ত ঢেলে দেয়নি? রক্ত ঢেলে দেয়া তাঁদের সেনাবাহিনীর কোন জোয়ানের জন্যে, আমরা কোন দিন একমিনিট স্মরণ করার উদ্দেশ্যে নিরবতা পপালনের উদ্যোগ গ্রহন করেছি? যে মহান নেতার অবদানে মাত্র নয়মাসের যুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছিলাম, আমাদের মুক্তির দিশারীকে স্ব-শরীরে ফেরৎ পেয়েছিলাম, সেই মহান নেতা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে স্মরনে রাখার কোন ব্যবস্থা করেছি? আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশের কোথাও একটুকরো ভুমিও কি বরাদ্ধ রাখতে পেরেছি? গঙ্গার পানিও দিয়েছে আমরা কি সম্মীলিত ভাবে আজ পয্যন্ত তাঁদের কে একটা ধন্যবাদ দিতে পেরেছি? কেন পারিনি?
তিস্তার পানি দেয়ার আগেই বলছি তাঁদের নিকট বিক্রি হয়ে গেছি! যেহেতু বিক্রিই হয়ে গেলাম আইনত: তাঁরাই এই দেশের মালিক! তাঁদের দেশে তাঁরা পানি দিবে কি দিবেনা, তাঁদের কি সেই ইচ্ছা থাকতে পারেনা? আপনার বন্দর ব্যবহার করার জন্যে চাইলে বলবেন, তাঁরা দখল করে নিবে। পানি চান কোন চোখে।পানির উপর আপনার অধিকার যেমন সত্য, তেমনি পানির উপর প্রতিষ্ঠিত বন্দরের উপর তাঁর অধিকার কেন সত্য নয়? আপনার সব শতভাগ তাঁর বেলায় শুন্যভাগ কেন হতে হবে? আপনার নিকট চাইলে বলবেন অভ্যন্তরিন রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমন অভ্যন্তরিন কোন ব্যাপার কি তাঁদের দেশে থাকতে পারে না?
সুপ্রীয় পাঠক, বাংলাদেশের উজানে ৫৭টি নদী আছে।প্রত্যেকটা নদীর উপর গত চল্লিশ বছর যাবৎ তাঁরা তিলে তিলে বাঁধ গড়ে তোলে একতরফা পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তিস্তা আলোচিত বটে বিভিন্ন কারনে কিন্ত্যু তাঁর চেয়েও প্রয়োজনীয় নদীর পানি আমরা পাচ্ছিনা। বিগত চল্লিশবছর একতরফা বাঁধ নির্মান প্রাক্কালে বাংলাদেশের কোন সরকার বা বিরুধীদল দেশে বা আন্তজাতিক পয্যায় কোন প্রতিবাদ করেনি।একমাত্র গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মানের সময় মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী লং মার্চের ঘোষনা দিয়ে আন্তজাতিক দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন।গঙ্গার উপর আমাদের ন্যায্যতা তোলে ধরেছিলেন।তিস্তা মুখে গজলডুবা বাঁধ নির্মানের বিরুদ্ধে আমরা কি তদ্রুপ একটা কর্মসূচি পালন করতে পারতামনা? কেন করিনি? এখনও কেন করছিনা? তিস্তার পানির অভাবে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে আমরা কি কোন ডকুমেন্টারি তৈরী করেছি? ঐ ডকুমেন্টারি দিয়ে আমরা কি ভারত সহ বিশ্বের দেশে দেশে প্রচার চালিয়ে জনমত গড়ে তুলতে পারতামনা? কেন প্রচার চালাইনি? ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ কেটে দেয়ার উদ্দেশ্যে যে লং মার্চ করেছিলেন সেই লং মার্চ কি আসলেই বাঁধ কাটার জন্যে? না, বিশ্বজনমতের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে?
এখন পয্যন্ত ভারত সরকার বা মমতা তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কি অপারগতা প্রকাশ করেছেন? উভয় দেশের সরকার প্রধান এবং কি মমতা এখনও কি আশাবাদ ব্যাক্ত করে যাচ্ছেন না? মমতা তিস্তার পানি স্বল্পতার কারন উল্লেখ করে তৎসংলগ্ন আরো চারটি নদীর সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব কি দেয়নি? মমতা এমনও তো বলেছেন--বাংলাদেশের যে পরিমান পানির প্রয়োজন, তিস্তা তা সরবরাহ করতে পারবেনা। এই না পারার কারনও তিনি ব্যাখ্য করেছেন। তিস্তার পানি প্রবাহ বাড়ানোর বিকল্প ব্যবস্থা করা সাপেক্ষে--তোর্সা সহ আরো কয়েক নদীর পানিবন্টনের কথাই বলেছেন তিনি। যে নদীগুলী তিস্তার প্রবাহমান এলাকায় পানি সরবরাহ করা সম্ভব। তাঁর প্রস্তাবিত চার নদীতেও পশ্চিমবঙ্গকে সাথে রাখার অনুরুধ রেখেছেন বাংলাদেশ ও তাঁর সরকারের নিকট।
তাঁর রাজনীতির স্বার্থ নিশ্চয়ই এখানে লুকিয়ে আছে। এমনও তো হতে পারে--এখন সে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের অভ্যন্তরে লুকিয়ে রেখেছেন। তাঁর কি সর্বভারতীয় প্রধান মন্ত্রীর হওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারেনা? আমরা যেহেতু দেশবিক্রির স্টেন্ড নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি প্রস্তুত করতে পারি, সে পানি আটকিয়ে সর্বভারতের স্বার্থরক্ষকের ভুমিকায় অবতীন্ন হতে পারবেনা কেন? সে কি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দেখতে পারেনা? সকলেই জানে দেশ এমন কোন পণ্য নয় সকাল বিকাল বিক্রি করা যায়, তেমনি অভিন্ন নদীর পানিও এমন কোন বিষয় নয়, যুগের পর যুগ আটকিয়ে রাখতে পারবে।
মমতা তিস্তার বদলে নয় গ্রহনযোগ্য প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।মৌদি সরকার কোন প্রস্তাবেই সায় দেয়নি।একটা কথা বলে রাখতে চাই--বাংলাদেশ এবং ভারতের যে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা গ্রহন করেছে, দুই সরকার প্রধান এবং এতে ভারতের প্রধান বিরুধীদল যে ভুমিকা পালন করছে, বাংলাদেশের বিরুধীদল তাঁর বিন্দু পরিমান ভুমিকাও পালন করতে পারলে ভারত- বাংলাদেশের বিদ্যমান সমস্যা নিমীষেই সমাধান হ'তে পারে। ভারতের ইতিহাসে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে বাদ দিয়ে কোন বিদেশী রাষ্ট্রের সংঙ্গে চুক্তি হয়েছে---এমন কোন নজীর নেই। দেশটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে চলমান রীতি তিস্তা দিয়ে ভাঙ্গার নজীর সৃষ্টি হলেও আশ্চায্য হওয়ার কিছুই থাকবে না, আমি মনে করি।
এই প্রসংঙ্গে ১০/৪/২০১৭ ইং তারিখের বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর সফর সংক্রান্ত বিষয়ে প্রখ্যাত বাংলা পত্রিকা "দৈনিক আনন্দ বাজারে"র সর্বশেষ সংস্করনে প্রকাশিত নিবন্ধ হুবহু পাঠকদের জানার জন্যে কপি পেষ্ট তুলে দিলাম---
গ্রহনযোগ্য নয়প্রস্তাব--কোন প্রস্তাবেই কেন্দ্রের সায় নেই।
দৈনিক আনন্দবাজার।১০/০৪/ ২০১৭ ইং
কাল রাতে মমতা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কেবল মাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, হায়দরাবাদ হাউসের মধ্যাহ্নভোজেও তিনি ভারতীয় নেতৃত্বকে তাঁর বিকল্প প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সন্ধ্যায় ভারত যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে সেই প্রস্তাবের উল্লেখটুকুও নেই। বরং বলা রয়েছে উল্টো কথা। যৌথ বিবৃতির নথির ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে, ‘২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে দুই সরকারের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সই করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করেছেন। মোদী জানিয়েছেন, ওই চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার সংশ্লিষ্ট মহলগুলির সঙ্গে কথা বলছেন।’ শুধু তাই নয়, ফেনি, মানু, ধরলা-সহ ৭টি নদীর জলবণ্টন নিয়ে চুক্তি সইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। তোর্সার নামই নেই সে তালিকায়।
মুখ্যমন্ত্রী তিস্তার বদলে তোর্সার জলের প্রস্তাব দেওয়ার পর এখনও সরকারি ভাবে মুখ খোলেননি কেন্দ্রীয় কর্তারা। খোলার কথাও নয়। হাসিনার সফর এখনও চলছে। তবে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছে না কেন্দ্র। তার কারণ, জলের অভাবে বাংলাদেশে তিস্তা অববাহিকা শুকিয়ে জীবন-জীবিকায় বিপর্যয় নামার বিষয়টি তো রয়েছেই। নয়াদিল্লি জানে, তিস্তা নিছক একটি নদীর নাম নয়। বাংলাদেশের মানুষের আবেগের নাম। ২০১৮-র শেষে নির্বাচনে যাওয়ার আগে মুজিব কন্যার প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে চলেছে এই তিস্তা চুক্তি। তিনি তা সই করে ভোটে যেতে পারলে সরকারে ফিরতে সুবিধা হবে বলে মনে করে আওয়ামি লিগ। অন্য দিকে আগ্নেয় প্রতিবেশী বলয়ের মধ্যে থাকা ভারতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা-সমঝোতা জরুরি। মোদীর কথায়, ‘‘হাসিনা যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করছেন, তাঁর জন্য আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রয়েছে।’’ কূটনীতিকরা বলছেন, এমন নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলাটা দিল্লির লক্ষ্য নয়। বরং প্রতিবেশী দেশের এই নেতৃত্বকে সর্বতো ভাবে সহযোগিতা করাই নীতি হওয়া উচিত।
শেখ হাসিনাকে পাশে নিয়ে কাল প্রধানমন্ত্রী কার্যত তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের সময়সীমাই ঘোষণা করে দিয়েছেন। মোদী বলেছেন, ‘‘আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আমার এবং আপনার সরকারই তিস্তা চুক্তির দ্রুত সমাধান করতে পারবে।’’ তাঁর এই মন্তব্যের পর জল্পনা— আগামী বছরের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আর প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মঞ্চে তাঁর পাশেই ছিলেন।
এর পরেও বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল এবং মুর্খ্য রাজনীতিবীদেরা যদি বলতে চায় ভারত একতরফা বাংলাদেশের উপর তাঁর প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তাঁদেরকে কি বলে সমবেদনা জানাতে পারি, আমি ক্ষুদ্র একজন নাগরিক বুঝতে পারিনা।
তিস্তার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোনপ্রকার আপোষ করেছেন যারা বলেন--তারা আহম্মকের স্বর্গেই বাস করছেন বলতে হয়। সকলেরই জানা আছে--শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল। শেখ হাসিনা উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন।এতেই বুঝা যায় জাতির পিতার কন্যা স্বস্তিতে নেই।দেশের স্বার্থরক্ষায় অবাঞ্চিত বাঁধায় তাঁর মনের মধ্যেও চৈতালী হাওয়া বইছে। সুতারাং এই মহুর্তে তাঁর অবস্থানকে শক্তিশালী করার কর্মসূচি দেশের সচেতন মহল এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। তিস্তার ন্যায্যতা তুলে ধরে দেশের অভ্যন্তরে অন্তত: মহানগর কেন্দ্রিক আন্দোলনের কর্মসুচি এখনই প্রয়োজন। অযথা টিভি পর্দায় জ্ঞানগর্ব বক্তব্যের তুফান তোলে কোন লাভ নেই---তিস্তার ন্যায্যতা নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলুন, দেশে বিদেশে জনমত গড়ে তুলুন। যাতে অন্তত: সরকার আন্তজাতিক সংস্থায় তিস্তার ন্যায্যতা তোলে ধরার অজুহাত সৃষ্ট্রি করতে পারে।
আশাকরি সকল পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে--বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবি হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন