শেখ হাসিনার বর্তমানে বাংলাদেশ দর্শনের ধারনা পরিস্কার হওয়া উচিৎ।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
মহান বিজয়ের মাস শেষ, সাথে নিয়ে যাচ্ছে পুরাতন একটি বছরকেও। ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় মেয়াদের শাষনের দ্বিতীয় বর্ষফুর্তি হতে মাত্র আর কয়টা দিন বাকি। এরই মাঝে বিশেষ কয়েকটি দিক জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।দেশী বিদেশী উন্নয়ন সহযোগি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির আশাব্যাঞ্জক উক্তি,উন্নয়ন সুচকের ব্যাপক উধ্বগতি, বিশাল বিশাল উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি নিয়ে---"বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে জনগনকে নিশ্চয়ই অবগত করছেন এবং আরো করবেন।যে বিষয় গুলীর প্রতি কারো দৃষ্টি নিবন্ধিত হবেনা;তেমন কিছু বিষয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করি।তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু-তিনটি বিষয় আমি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
(১)২০১৬ ইং সালের বিজয় দিবসের উৎসাহ উদ্দিপনায় স্ব-প্রনোদিত ভাব গাম্ভিয্যতা ফিরে আসা
(২) দীর্ঘ ক্ষমতা উপভোগের পরেও আওয়ামী লীগ এবং তাঁর প্রার্থীর জনপ্রিয়তায় ধ্বস না নেমে বরঞ্চ উচ্চতায় পৌঁছা।
(৩) বাংলাদেশকে বর্তমানের মুক্তিযুদ্ধের সরকার কতটুকু স্বাধীনতাযুদ্ধের মুল চেতনায় ফিরিয়ে নিতে পেরেছে।
(আমি মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বিশেষ ভাবে বলে রাখতে চাই---"সম্মিলীত অ-শুভ শক্তির মূল কাজ গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যা, অপ-প্রচার গুজবাকারে বাজারে ছেড়ে দেয়া--সত্যতা থাক বা নাথাক কিছুই আসে যায়না, বাজারে ঘুরলেই বক্তব্যটি হল।"ইতিমধ্যে তাঁর হাজারো প্রমান আমরা পেয়েছি।)
২০০৮ইং এর ২৯ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘মহাজোট’ ভূমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা 'শেখ হাসিনা' দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর পরবর্তী একবছরের মাথায় ২০০৯-এর ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক সর্বসম্মত রায়ে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির চূড়ান্ত রায় দিয়েছে।জাতির জনকের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্তিতে দেশ ও জনগনকে পিতা হত্যার দায়মুক্ত করেছে সর্ব উচ্চ আদালত। পিতৃহত্যার দায়ে বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের কটাক্ষপুর্ণ চাহনি থেকে বাঙ্গালী জাতি মুক্ত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারের হত্যার পর ৩৫ বছর (মাঝে ৫ বছর আওয়ামী লীগ শাসন ছাড়া) তাঁর সৃষ্ট দেশে তাঁকেই অপাঙ্ক্তেয় করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস উদযাপন ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।এই সময়কালে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা আওয়ামী লীগ, প্রতিবেশী মিত্র দেশ ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে এবং সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উসকে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। তারা কথায় কথায় ভারতকে বাংলাদেশের সব সমস্যার জন্য দায়ী করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তাদের স্বার্থ হাসিল করার প্রয়াস পেয়েছে।
জিয়া-এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার জোট সরকারের আমলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালের বন্ধু প্রতিবেশী ভারতকে হেয় করার জন্য সর্ব বিষয়ে "ভারত বিদ্বেস" ছড়ানোর উদ্দেশ্যে মিডিয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে চলতে স্বস্তিবোধ করে। তাদের শাসনামলে পাকিস্তানের কুখ্যাত 'আইএসআই' রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেছে। ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য আইএসআইকে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে ট্রেনিং, অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে অকারণে কুৎসা রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।
ভারত ৯ মাস বাংলাদেশের ১কোটি শরণার্থীকে খাইয়ে-পরিয়ে অতুলনীয় সহযোগিতা করেছে। লাখ লাখ মুক্তিবাহিনীর সদস্যকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে হানাদার পাক বাহিনীর মোকাবেলা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের হাজার হাজার সেনাবাহিনী সদস্য রক্ত দিয়েছে। অপ-প্রচার বাজারে চালু আছে--ভারতীয় সৈন্য ফিরে যাওয়ার সময় আমাদের সব সম্পদ নিয়ে গেছে। সেগুলো ফলাও করে প্রচার করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এ দেশীয় পাকিস্তানি দালালরা কখনো বিবেকের দংশন অনুভব করেনি।
শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাসীন না হয়ে অন্য কেউ ক্ষমতাসীন থাকলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাফল্য আসতে কত যুগের প্রয়োজন হত তিব্বতের দালাইলামার দিকে তাকালেও অনুমান করা যেতে পারে। অথবা পাকিস্তানের অন্য দুই প্রদেশের দিকে তাকালেও বিবেকবানদের বুঝা কষ্ট হয়না। যুগ যুগ ধরে দালাইলামা যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছেন, আমাদেরও তেমন অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। মহান নেত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী নিজের দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করে, পরাশক্তি আমেরিকা ও চীনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, ভারতকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি দিতে মিত্রবাহিনী গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নেত্রীকে খাটো করতেও পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা পিছ-পা হয়নি। এর চেয়ে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে বাঙ্গালী--'আর কি হতে পারে'?
যে রেসকোর্স ময়দানের মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীনতার পর--ঢাকা সফরকালে বঙ্গবন্ধুসহ ভাষণ দিয়েছিলেন রেসকোর্সের ময়দান থেকে। পাকিস্তানের তিরানব্বই হাজার সু-সজ্জিত সৈন্য আত্মসমর্পন করেছিল রেসকোর্স ময়দানে।রেসকোর্স ময়দানকে মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ঘোড়া দৌড়ানীর নামে বিশাল অংকের 'জুয়া' নিষিদ্ধ করে গাছের বাগান করে নাম রেখেছিলেন 'সরওয়ার্দী উদ্যান।' সেই সরওয়ার্দী উদ্যানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছিল স্বৈরচারি সরকার সমুহ। তাঁদের মিত্রের মাথানিছু করে আত্মসমর্পনের গ্লানিমুক্ত করতে ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ ভেঙে শিশু পার্ক নির্মাণ করেছিলেন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া। অথছ উদার মনোভাব প্রদর্শন করে ভারতের জনগণ কলকাতা শহরে দুটি সড়কের নামকরণ করেছে --"শেরেবাংলা ও বঙ্গবন্ধুর নামে।" বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধী বা ইন্দিরা গান্ধীর নামে কোনো সড়ক বা স্থাপনার নামকরণ করতে পারেনি।
বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ টাওয়ার ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ করে জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট, বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকাজুড়ে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ার প্রচেষ্টা চলছে।মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক আরো অনেক স্থাপনা সেখানে নির্মাণের পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে।সর্বপেক্ষা ভাল হত যদি 'ইন্দিরামঞ্চ'কে আবার পুন:প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হত।অহিংস দর্শনের জনক 'মহাত্মা গান্ধীজির' নামে কোন স্থাপনা নির্মান করা সম্ভব কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার।বিশ্বের দেশে দেশে মহত্মা গান্ধীজির নামে স্থাপনা রয়েছে--বাংলাদেশ ব্যাতিক্রম হতে পারেনা ঐতিহাসিক কারনেই।ভারতীয় উপমহাদেশ ইংরেজ শাষন শোষন মুক্ত করতে গান্ধীজির ভুমিকা অ-স্বীকারের কোন উপায় নেই, আমরাও তাঁরই অংশ।ইতিহাসের পরতে পরতে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা হয়ে গেছে।
বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদরদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।যুদ্ধাপরাধীদের পরিবার পরিজনদের দ্বিতীয় শ্রনীর নাগরিক করার উদ্যোগ এখনই নেয়া উচিৎ।সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করার তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন পয্যায় কর্মে নিয়োজিতদের ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করা সময়ের দাবি।তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
লক্ষ করলে দেখা যায়--অশুভ শক্তিসমূহের বিচার প্রক্রিয়া যতই ত্বরান্বিত হচ্ছে জাতিয় দিবস সমূহের প্রানচাঞ্চল্যতা ততই ভাবগম্বিরতা নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে।এবারের বিজয়দিবসে স্ব-প্রনোদিত প্রানচাঞ্চল্যতা তাঁরই প্রমান বহন করে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চক্রান্তে পরিচালিত 'আগুন সন্ত্রাসের' বিচারকায্য সম্পন্ন করা হলে তাঁদের অস্তিত্ব বাংলার মাটিতে আর খোঁজে পাওয়া যাবেনা।
অশুভশক্তি নিচ্ছিন্ন হতে চলেছে তাঁর ঈঙ্গিত বহন করে ; কিছুদিন আগে অনুষ্ঠানেয় 'নাসিক' নির্বাচনের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দিলে। বাংলাদেশের জনগন দুইবার কোন প্রার্থীকে নির্বাচিত করার নজির খুব কম। দুইবার সরকার পরিচালনা করার সুযোগ দেয়ার নজির এযাবৎ কালের বাংলাদেশের( পাকিস্তান আমল সহ) ইতিহাসে নেই। নারায়ন গঞ্জের নির্বাচনে উভয় নেতিবাচক দিক বিদ্যমান থাকা সত্বেও সর্বকালের অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর বিশাল বিজয়--"মুক্তিযুদ্ধের মুলচেতনায় ফিরে যাওয়ার জনগনের ইচ্ছার বহিপ্রকাশই-- আমি মনে করি"।
বাংলাদেশের সংবিধানকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতিকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে পুনর্বিন্যাস করার সময় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ফেব্রুয়ারি (২০১৭) মাসে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন, এই সুযোগে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর (বিশেষ করে ভিসা জটিলতা, তিস্তাসহ অন্যান্ন অভিন্ন নদীর পানি বন্টন) মীমাংসা এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ও সহযোগিতার নবযুগের সূচনা হবে। পঁয়তাল্লিশতম বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত জনগণের সামনে যে সুযোগ উপস্থিত হয়েছে তা কাজে লাগিয়ে একাত্তরের চেতনায় জেগে ওঠার সময় এসেছে।
যে তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ ইং সালে, সেই তত্ব জনগণের কাছে সঠিকভাবে এককেন্দ্রিকভাবে হচ্ছেনা। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য সমুহকে নিয়ে সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ বক্তব্য উপস্থাপন করা। এখানে কোনো প্রকার অ-স্বচ্ছতার স্থান নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে একেকজন একেক রকম উক্তি করবেন এটা একেবারেই অবাঞ্ছনীয়। জাতীয় চার মূলনীতি সম্পর্কে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের যারা বিরোধী তারা তো বাংলাদেশের শত্রু। তারা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে না। তাঁরা চায় জাতি রাষ্ট্রকে ধর্মরাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এই বিতর্কের অবসান হওয়া খুবই প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় আদর্শকে উহ্য রেখে তাঁর দর্শনকে ভুলুন্ঠিত করে জাতি হিসেবে আমরা অগ্রসর হতে পারবনা।এবারের বিজয় দিবসে স্ব-প্রনোদিত আনন্দ উল্লাস এবং নাসিক নির্বাচনে বিশাল জয়--"সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের মুলচেতনায় ফিরে যাওয়ার জনইচ্ছাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের মুল্যায়ন করা উচিৎ বলে আমি দৃড়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি।
বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রধান নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার অবস্থান অদ্বিতীয়। জাতির জনকের কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা যতটুকু জাতীয়তাবাদের ধারনা ধারন করতে পেরেছেন তাঁর সিকিভাগও অন্যকোন নেতানেত্রী ধারন করতে পারেননি। বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল দর্শনের সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসের কারণে অশুভ শক্তি এখনও শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাঁরা জানে শেখ হাসিনা নেই--"বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই, বাংলাদেশের দর্শন নেই"। স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁদের ধ্যানে জ্ঞানে শেখ হাসিনা হত্যা ছাড়া আর কিছুই নেই।শেখ হাসিনা ছিল বলেইতো বঙ্গবন্ধু সদর্পে, স্বমহিমায়,আরো উজ্জল আলোকচ্ছটায় ফিরে এসেছে--তাঁদের বিধ্বংসি মনোভাব অমূলক নয়, বরঞ্চ আমাদের বিশ্বাসে ফাঁকা রয়েছে যথেষ্ট।
masterruhulamin@gmail.com
(রুহুল আমিন মজুমদার)
মহান বিজয়ের মাস শেষ, সাথে নিয়ে যাচ্ছে পুরাতন একটি বছরকেও। ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় মেয়াদের শাষনের দ্বিতীয় বর্ষফুর্তি হতে মাত্র আর কয়টা দিন বাকি। এরই মাঝে বিশেষ কয়েকটি দিক জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।দেশী বিদেশী উন্নয়ন সহযোগি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির আশাব্যাঞ্জক উক্তি,উন্নয়ন সুচকের ব্যাপক উধ্বগতি, বিশাল বিশাল উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি নিয়ে---"বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে জনগনকে নিশ্চয়ই অবগত করছেন এবং আরো করবেন।যে বিষয় গুলীর প্রতি কারো দৃষ্টি নিবন্ধিত হবেনা;তেমন কিছু বিষয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করি।তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু-তিনটি বিষয় আমি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
(১)২০১৬ ইং সালের বিজয় দিবসের উৎসাহ উদ্দিপনায় স্ব-প্রনোদিত ভাব গাম্ভিয্যতা ফিরে আসা
(২) দীর্ঘ ক্ষমতা উপভোগের পরেও আওয়ামী লীগ এবং তাঁর প্রার্থীর জনপ্রিয়তায় ধ্বস না নেমে বরঞ্চ উচ্চতায় পৌঁছা।
(৩) বাংলাদেশকে বর্তমানের মুক্তিযুদ্ধের সরকার কতটুকু স্বাধীনতাযুদ্ধের মুল চেতনায় ফিরিয়ে নিতে পেরেছে।
(আমি মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বিশেষ ভাবে বলে রাখতে চাই---"সম্মিলীত অ-শুভ শক্তির মূল কাজ গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যা, অপ-প্রচার গুজবাকারে বাজারে ছেড়ে দেয়া--সত্যতা থাক বা নাথাক কিছুই আসে যায়না, বাজারে ঘুরলেই বক্তব্যটি হল।"ইতিমধ্যে তাঁর হাজারো প্রমান আমরা পেয়েছি।)
২০০৮ইং এর ২৯ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘মহাজোট’ ভূমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা 'শেখ হাসিনা' দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর পরবর্তী একবছরের মাথায় ২০০৯-এর ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক সর্বসম্মত রায়ে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির চূড়ান্ত রায় দিয়েছে।জাতির জনকের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্তিতে দেশ ও জনগনকে পিতা হত্যার দায়মুক্ত করেছে সর্ব উচ্চ আদালত। পিতৃহত্যার দায়ে বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের কটাক্ষপুর্ণ চাহনি থেকে বাঙ্গালী জাতি মুক্ত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারের হত্যার পর ৩৫ বছর (মাঝে ৫ বছর আওয়ামী লীগ শাসন ছাড়া) তাঁর সৃষ্ট দেশে তাঁকেই অপাঙ্ক্তেয় করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস উদযাপন ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।এই সময়কালে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা আওয়ামী লীগ, প্রতিবেশী মিত্র দেশ ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে এবং সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উসকে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। তারা কথায় কথায় ভারতকে বাংলাদেশের সব সমস্যার জন্য দায়ী করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তাদের স্বার্থ হাসিল করার প্রয়াস পেয়েছে।
জিয়া-এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার জোট সরকারের আমলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালের বন্ধু প্রতিবেশী ভারতকে হেয় করার জন্য সর্ব বিষয়ে "ভারত বিদ্বেস" ছড়ানোর উদ্দেশ্যে মিডিয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে চলতে স্বস্তিবোধ করে। তাদের শাসনামলে পাকিস্তানের কুখ্যাত 'আইএসআই' রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেছে। ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য আইএসআইকে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে ট্রেনিং, অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে অকারণে কুৎসা রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।
ভারত ৯ মাস বাংলাদেশের ১কোটি শরণার্থীকে খাইয়ে-পরিয়ে অতুলনীয় সহযোগিতা করেছে। লাখ লাখ মুক্তিবাহিনীর সদস্যকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে হানাদার পাক বাহিনীর মোকাবেলা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের হাজার হাজার সেনাবাহিনী সদস্য রক্ত দিয়েছে। অপ-প্রচার বাজারে চালু আছে--ভারতীয় সৈন্য ফিরে যাওয়ার সময় আমাদের সব সম্পদ নিয়ে গেছে। সেগুলো ফলাও করে প্রচার করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এ দেশীয় পাকিস্তানি দালালরা কখনো বিবেকের দংশন অনুভব করেনি।
শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাসীন না হয়ে অন্য কেউ ক্ষমতাসীন থাকলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাফল্য আসতে কত যুগের প্রয়োজন হত তিব্বতের দালাইলামার দিকে তাকালেও অনুমান করা যেতে পারে। অথবা পাকিস্তানের অন্য দুই প্রদেশের দিকে তাকালেও বিবেকবানদের বুঝা কষ্ট হয়না। যুগ যুগ ধরে দালাইলামা যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছেন, আমাদেরও তেমন অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। মহান নেত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী নিজের দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করে, পরাশক্তি আমেরিকা ও চীনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, ভারতকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি দিতে মিত্রবাহিনী গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নেত্রীকে খাটো করতেও পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা পিছ-পা হয়নি। এর চেয়ে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে বাঙ্গালী--'আর কি হতে পারে'?
যে রেসকোর্স ময়দানের মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীনতার পর--ঢাকা সফরকালে বঙ্গবন্ধুসহ ভাষণ দিয়েছিলেন রেসকোর্সের ময়দান থেকে। পাকিস্তানের তিরানব্বই হাজার সু-সজ্জিত সৈন্য আত্মসমর্পন করেছিল রেসকোর্স ময়দানে।রেসকোর্স ময়দানকে মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ঘোড়া দৌড়ানীর নামে বিশাল অংকের 'জুয়া' নিষিদ্ধ করে গাছের বাগান করে নাম রেখেছিলেন 'সরওয়ার্দী উদ্যান।' সেই সরওয়ার্দী উদ্যানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছিল স্বৈরচারি সরকার সমুহ। তাঁদের মিত্রের মাথানিছু করে আত্মসমর্পনের গ্লানিমুক্ত করতে ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ ভেঙে শিশু পার্ক নির্মাণ করেছিলেন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া। অথছ উদার মনোভাব প্রদর্শন করে ভারতের জনগণ কলকাতা শহরে দুটি সড়কের নামকরণ করেছে --"শেরেবাংলা ও বঙ্গবন্ধুর নামে।" বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধী বা ইন্দিরা গান্ধীর নামে কোনো সড়ক বা স্থাপনার নামকরণ করতে পারেনি।
বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ টাওয়ার ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ করে জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট, বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকাজুড়ে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ার প্রচেষ্টা চলছে।মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক আরো অনেক স্থাপনা সেখানে নির্মাণের পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে।সর্বপেক্ষা ভাল হত যদি 'ইন্দিরামঞ্চ'কে আবার পুন:প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হত।অহিংস দর্শনের জনক 'মহাত্মা গান্ধীজির' নামে কোন স্থাপনা নির্মান করা সম্ভব কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার।বিশ্বের দেশে দেশে মহত্মা গান্ধীজির নামে স্থাপনা রয়েছে--বাংলাদেশ ব্যাতিক্রম হতে পারেনা ঐতিহাসিক কারনেই।ভারতীয় উপমহাদেশ ইংরেজ শাষন শোষন মুক্ত করতে গান্ধীজির ভুমিকা অ-স্বীকারের কোন উপায় নেই, আমরাও তাঁরই অংশ।ইতিহাসের পরতে পরতে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা হয়ে গেছে।
বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদরদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।যুদ্ধাপরাধীদের পরিবার পরিজনদের দ্বিতীয় শ্রনীর নাগরিক করার উদ্যোগ এখনই নেয়া উচিৎ।সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করার তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন পয্যায় কর্মে নিয়োজিতদের ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করা সময়ের দাবি।তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
লক্ষ করলে দেখা যায়--অশুভ শক্তিসমূহের বিচার প্রক্রিয়া যতই ত্বরান্বিত হচ্ছে জাতিয় দিবস সমূহের প্রানচাঞ্চল্যতা ততই ভাবগম্বিরতা নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে।এবারের বিজয়দিবসে স্ব-প্রনোদিত প্রানচাঞ্চল্যতা তাঁরই প্রমান বহন করে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চক্রান্তে পরিচালিত 'আগুন সন্ত্রাসের' বিচারকায্য সম্পন্ন করা হলে তাঁদের অস্তিত্ব বাংলার মাটিতে আর খোঁজে পাওয়া যাবেনা।
অশুভশক্তি নিচ্ছিন্ন হতে চলেছে তাঁর ঈঙ্গিত বহন করে ; কিছুদিন আগে অনুষ্ঠানেয় 'নাসিক' নির্বাচনের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দিলে। বাংলাদেশের জনগন দুইবার কোন প্রার্থীকে নির্বাচিত করার নজির খুব কম। দুইবার সরকার পরিচালনা করার সুযোগ দেয়ার নজির এযাবৎ কালের বাংলাদেশের( পাকিস্তান আমল সহ) ইতিহাসে নেই। নারায়ন গঞ্জের নির্বাচনে উভয় নেতিবাচক দিক বিদ্যমান থাকা সত্বেও সর্বকালের অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর বিশাল বিজয়--"মুক্তিযুদ্ধের মুলচেতনায় ফিরে যাওয়ার জনগনের ইচ্ছার বহিপ্রকাশই-- আমি মনে করি"।
বাংলাদেশের সংবিধানকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতিকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে পুনর্বিন্যাস করার সময় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ফেব্রুয়ারি (২০১৭) মাসে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন, এই সুযোগে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর (বিশেষ করে ভিসা জটিলতা, তিস্তাসহ অন্যান্ন অভিন্ন নদীর পানি বন্টন) মীমাংসা এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ও সহযোগিতার নবযুগের সূচনা হবে। পঁয়তাল্লিশতম বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত জনগণের সামনে যে সুযোগ উপস্থিত হয়েছে তা কাজে লাগিয়ে একাত্তরের চেতনায় জেগে ওঠার সময় এসেছে।
যে তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ ইং সালে, সেই তত্ব জনগণের কাছে সঠিকভাবে এককেন্দ্রিকভাবে হচ্ছেনা। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য সমুহকে নিয়ে সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ বক্তব্য উপস্থাপন করা। এখানে কোনো প্রকার অ-স্বচ্ছতার স্থান নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে একেকজন একেক রকম উক্তি করবেন এটা একেবারেই অবাঞ্ছনীয়। জাতীয় চার মূলনীতি সম্পর্কে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের যারা বিরোধী তারা তো বাংলাদেশের শত্রু। তারা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে না। তাঁরা চায় জাতি রাষ্ট্রকে ধর্মরাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এই বিতর্কের অবসান হওয়া খুবই প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় আদর্শকে উহ্য রেখে তাঁর দর্শনকে ভুলুন্ঠিত করে জাতি হিসেবে আমরা অগ্রসর হতে পারবনা।এবারের বিজয় দিবসে স্ব-প্রনোদিত আনন্দ উল্লাস এবং নাসিক নির্বাচনে বিশাল জয়--"সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের মুলচেতনায় ফিরে যাওয়ার জনইচ্ছাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের মুল্যায়ন করা উচিৎ বলে আমি দৃড়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি।
বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রধান নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার অবস্থান অদ্বিতীয়। জাতির জনকের কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা যতটুকু জাতীয়তাবাদের ধারনা ধারন করতে পেরেছেন তাঁর সিকিভাগও অন্যকোন নেতানেত্রী ধারন করতে পারেননি। বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল দর্শনের সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসের কারণে অশুভ শক্তি এখনও শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাঁরা জানে শেখ হাসিনা নেই--"বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই, বাংলাদেশের দর্শন নেই"। স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁদের ধ্যানে জ্ঞানে শেখ হাসিনা হত্যা ছাড়া আর কিছুই নেই।শেখ হাসিনা ছিল বলেইতো বঙ্গবন্ধু সদর্পে, স্বমহিমায়,আরো উজ্জল আলোকচ্ছটায় ফিরে এসেছে--তাঁদের বিধ্বংসি মনোভাব অমূলক নয়, বরঞ্চ আমাদের বিশ্বাসে ফাঁকা রয়েছে যথেষ্ট।
masterruhulamin@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন