ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কাজী গোলাম মাহমুদ সাহেবের মৃত্যু--তৃনমুল আওয়ামী লীগে বঞ্চনার শংকা প্রতিষ্ঠিত।
(রুহুল আমিন মজুমদার)

        গত ৩/১২/০০১৬ ইং রোজ শনিবার বিকেল সাড়ে চার ঘটিকায় কাজী গোলাম মাহমুদ সাহেবের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ফুল গাজী থানা পরবর্তীতে উপজেলার দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আপোষহীন, ত্যাগী,নিবেদিত আওয়ামী লীগার হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। যদিও দুইবার নির্বাচিত হন -রাজনৈতিক টানাপোড়নের কারনে প্রায় ২০০০ ইং সাল পয্যন্ত তাঁকে উক্ত সভাপতি পদ বহন করতে হয়েছিল।প্রায় বিশ বছর ফুলগাজী থানা আওয়ামী লীগের মায্যদাপুর্ণ সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও নির্লোভ নেতা কোন স্তরেই জনপ্রতিনীধিত্ব করার জন্য খুব বেশী বাড়াবাড়ি করেননি।গত শনিবার এই অকতোভয় বীর সেনানী ৭৮ বছর বয়সে ঢাকার শমরীতা হাসপাতালে পরলোকগমন করেন।তাঁকে তাঁর নীজবাড়ী ফুলগাজী উপজেলার মুন্সির হাট ইউনিয়নের শ্রিপুর গ্রামে কাজী পরিবারের নীজস্ব কবরস্থানে দাপন করা হয়।
      শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মরহুম কাজী গোলাম মাহমুদ যে বছর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ঠিক সেই বছরই আমি সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই।  আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল খুব অল্প বয়স হলেও  নিবেদিত নেতার সাথে একত্রে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি আমার  ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক থাকা অবস্থায় ঐ কমিটিরই সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দু'টি গুরুত্বপুর্ণ পদ দীর্ঘবছর বহন করি। ঐ একই সময়কালে বসন্তপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের গুরুদায়িত্ব আমার উপর ছিল।পরবর্তী কাউন্সিলে 'দুই জন যুগ্ম সম্পাদকের' পদ সৃষ্টি হলে আমি এক নম্ভর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত  হই।উল্লেখ্য যে ফুলগাজীর মাটি ও মানুষের নেতা,উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জনাব আজিজুল হক মজুমদার ১৯৯৬ ইং সালে আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য গেলে ফকিরা পুল আবাসিক হোটেল কক্ষে তাঁর মৃত্যু ঘটে। তাঁর অকাল মৃত্যুতে ফুলগাজী বাসির উপর  বিনামেঘে বজ্রাঘাত তুল্য,  কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে পড়ে।চতুর্দিকে হতাশার চাদরে ঢেকে পড়লে সভাপতি কাজী গোলাম মাহমুদ শক্ত হাতে পরিস্থীতি নিয়ন্ত্রনে মনযোগী হন।
     একদিকে ২১ বছরে দল ক্ষমতা পাওয়ায় সংগত কারনে নেতাকর্মীরা অসংযত,অধৈয্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে জনাব আজিজুল হক মজুমদার সাহেবের হঠাৎ অনুপস্থীতি দলে বিশৃংখলা চরম আকার ধারন করে।এমনতর মহুর্তে পদাধিকার বলে আমাকে ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক এর দায়িত্ব দিয়ে তিনি শক্তভাবে হাল ধরে বিশৃংখলা মোকাবেলা করার উদ্যোগ গ্রহন করেন।স্বল্প সময়ে রাজনৈতিক বিচক্ষনতার গুনে তিনি দলকে নিয়মাতান্ত্রিক পয্যায় নিয়ে আসেন। যদিও আমাকে তিনি সঙ্গী হিসেবে নিয়েছিলেন তের/ চৌদ্দটি মামলা এবং বসন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের গুরুত্বপুর্ণ পদে দায়িত্বরত: থাকায় আমি রানিংমেট হিসেবে তাঁকে তেমন উল্লেখযোগ্য সময় দিতে পারিনি।২০০০ ইং সালের কাউন্সিলে বাধ্যক্যজনীত কারনে তিনি সভাপতি পদ নীজ থেকে ত্যাগ করেন।২০০১ ইং সালের দলীয় বিপয্যয়ের মহুর্তে নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক পালিয়ে গেলে আবারও ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন দল পরিচালনায় সার্বিক সহযোগীতা পেয়েছিলাম আমি মরহুম জনাব কাজী গোলাম মাহমুদ সাহেবের নিকট থেকে।২০০৯ ইং সাল পয্যন্ত যদিও আমি ফুলগাজীর রাজনীতিতে পুর্বের পদবি নিয়ে সক্রিয় ছিলাম কিন্তু যাদের নেতৃত্বে রাজনীতিতে ছিলাম তাঁদের দু'জনের কেউই ছিলেন না।
       কাজী গোলাম মাহমুদ সাহেব প্রথম জীবনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্টিলারী কন্টিজেন্সে যোগদান করে স্বাধীনতা উত্তর চাকুরী পরিত্যাগ করে চট্রগ্রামে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঢামাডোল বেজে উঠলে তিনি তাঁর এলাকা ফুলগাজীর মুন্সির হাট  চলে আসেন। এলাকার যুবক ভাইদের সংগঠিত করে আলী আজম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন এবং তিনি নিজেই প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মাতৃভুমি শত্রুমুক্ত করার মহান লক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসমসাহষিকতা এবং বিরত্বপুর্ণ অবদান এলাকাবাসি এখনও স্মরণ করেন।
      তিনি  যুদ্ধশেষে কর্মস্থল চট্রগ্রাম চলে গেলেও তাঁর মন সেখানে স্থীত হয়নি। তিনি ফিরে এসে ফুলগাজী উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘদিন ফুলগাজীতে শিক্ষকতার সুবাদে সর্বশ্রেনীর মানুষের নিকট সৎ, ব্যাক্তিত্বশীল, মায্যদাবান মানুষ হিসেবে তাঁর ইমেজ গড়ে উঠে।পরবর্তীতে তাঁর এলাকার আলী আজম হাইস্কুলে চলে গেলেও ফুলগাজী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ অলংকৃত করতে তাঁকে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
     তিনি ছিলেন অত্যান্ত ব্যাক্তিত্ববান, স্বল্পবাসি, অসাধারন বাগ্মিতার অধিকারি ত্যাগি নেতা। খালেদা জিয়ার কথিত বাড়ীর দরজায় উপজেলা আওয়ামী লীগের একটানা বিশ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সহজ ব্যাপার নয়।তিনি উক্ত কঠিন বিষয়টিকে ব্যাক্তিত্বের প্রভাবে সহজ করেছিলেন এবং সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
     তিলে তিলে সংসার, অর্থ সম্পদ ধ্বংস করে যেই সমস্ত নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের পতাকাকে আগামী প্রজম্মের হাতে তুলে দিতে নিবেদিত ছিলেন, সারাজীবন আন্দোলন সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশ  আজ আর জীবিত নেই। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য---'সর্বজনাব আজিজুল হক মজুমদার(চেয়ারম্যান, সাধারন সম্পাদক),আজিজুল হক(ছোট্র মিয়া,ভেন্ডার,ফুলগাজী),সফিকুর রহমান ভুইয়া(ভেন্ডার, মুন্সির হাট) আবুল মজুমদার(ফুলগাজী, শ্রিপুর, খালেদা জিয়ার কথিত বাড়ীর একমাত্র আওয়ামী পরিবার) আবুল কালাম আজাদ (হাজী হুদামিয়া,ফুলগাজী), আবুল মিয়া(ফুলগাজী,বরইয়া) বিষু চৌধুরী( ফুলগাজী, বরইয়া) হাজী ইব্রাহীম মজুমদার ( চেয়ারম্যান, আমজাদ হাট), মোশারফ হোসেন মজুমদার (আমজাদ হাট) মোশারফ হোসেন মজুমদার( ফুলগাজী), ডাক্তার আফাজ উদ্দিন  মজুমদার (আমজাদ হাট) আবদুল মন্নান( দরবার পুর) সামছু উদ্দিন মজুমদার( চেয়ারম্যান বক্সমাহমুদ)সহ আরো অনেকেই চলে গেছেন পরপারে।
          জীবিতদের মধ্যে তেমন কাউকে আজ আর চোখে পড়েনা। নাইয়ের মধ্যে সর্বজনাব আজিজ আহাম্মদ চৌধুরী (বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) হাবিবুর রহমান মজুমদার (সাবেক সভাপতি, আনন্দপুর, বন্ধুয়া, ভেন্ডার) আবদুল মন্নান ভুঁইয়া (বক্সমাহমুদ) হাবিলদার জহির উদ্দিন ভুইয়া(সভাপতি, জিএম হাট) রুহুল আমিন মজুমদার( সাবেক সভাপতি, ফুলগাজী থানা), আবুল কাশেম মাষ্টার( চেয়ারম্যান, আমজাদ হাট) দুলাল মজুমদার(সাবেক সাধারন সম্পাদক, আনন্দপুর ইউনিয়ন) কাজী গিয়াস উদ্দিন ( সভাপতি, দরবারপুর) আবদুস ছালাম ভুঁইয়া(সাবেক সাধারন সম্পাদক, ফুলগাজী থানা)হাজী জামাল উদ্দিন ( বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ফুলগাজী থানা) সবার চেয়ে কম বয়সের মাষ্টার রুহুল আমিন মজুমদার এখনও বেঁচে আছেন।
     প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, নিশ্চয়ই আপনাদেরকে অযথা বিরক্ত করছি--'মনের জ্বালা নিবারনের গত্যান্তর খুঁজে না পেয়ে অদ্য আপনাদের  বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছি।' উপরে উল্লেখিত জীবিত এবং মৃত সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গ সহ আরো অনেকেই জনাব মরহুম কাজী গোলাম মাহমুদ সাহেবের একান্ত রাজনৈতিক বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন।শুধু সহচর বললে আংশিক বলা হয় ; দীর্ঘদিনের আন্দোলনে সংগ্রামে জড়িত থেকে একে অপরের পুরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন।দলীয় গণ্ডির সীমারেখা অতিক্রম করে  ব্যাক্তিগত এবং পারিবারিক বন্ধুত্বে রুপ নিয়েছিল উল্লেখিত ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে।
        "মরহুম কাজী গোলাম মহামুদ সেনাবাহিনীতে দশবছর চাকুরীর কারনে একদল চৌকস সেনাদল 'মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকের জানাজা পুর্ব গার্ড অব অনার দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করেছেন।' মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন স্বীকৃতি স্বরুপ একদল পুলিশ গর্ড় অব অনার প্রদান করে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের পর সমাহিত করে। ফুলগাজী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কারনে স্বরণ সভার আয়োজন করেছে।শেষ কর্ম স্থল আলী আজম স্কুল এন্ড কলেজ সৃতিচারন সভার আয়োজন করে তাঁর বনাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে আলোকপাত করার উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।"
      "মরহুম জনাব কাজী গোলাম গোলাম মাহমুদের জানাজায় সর্বস্তরের শিক্ষক,ছাত্রছাত্রী, আত্মীয়স্বজন উপস্থীত থেকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে নয়মাস যুদ্ধের ময়দানে সাথীদের সঙ্গদানের প্রতিদানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা এবং থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড  কাউন্সিল জানাজা পুর্ব নেতৃত্ব প্রদান করে জনগনের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছেন।"
          অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়, সকল একত্রিত লাভজনক পেশার চেয়ে দীর্ঘতম সময় (প্রায় পয়তাল্লিশ বছর)যে কাজে নিয়োজিত ছিলেন, যে আদর্শ ধারন করে সোনালী দিনগুলী হেলায় হারিয়েছেন, অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁদের সম্মান শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন, যাদের সাথে কর্মজীবনের বেশীরভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন ; সেই মুজিব আদর্শের উধ্বতন নেতা একমাত্র জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আবদুর রহমান  (বিকম) ছাড়া আর কোন উল্লেখযোগ্য নেতাকে জানাজায় উপস্থীত দেখা যায়নি।হাজার হাজার মানুষের উপস্থীতির মধ্যেও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থীতির হার ছিল অত্যান্ত নগন্য, মাত্র হাতে গোনা কয়জন।
             তাঁর রাজনীতির বিচরন ভুমি ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হয়তো স্মৃতি চারণ মূলক সভার আয়োজন করা হবেনা। অতীতের প্রতিতযসা অনেকের মৃত্যুতে যেহেতু কোন স্বরণসভার আয়োজন করা হয়নি; মরহুম কাজী গোলাম মাহমুদের ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হবে বলে মনে হয়না।যদিও দীর্ঘতম সময় বিনাবেতনে,পরিবার পরিজন বিমুখ করে মুজিব আদর্শ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আওয়ামী লীগ সংগঠনে শ্রম মেধা, অর্থ সম্পদ, মুল্যবান সময় সবকিছুই উজাড় করে ঢেলে দিয়েছিলেন। সেই প্রানের সংগঠন যদি একটা স্মৃতিচারন সভার আয়োজনও না করে--এর চেয়ে বড় দু:খ্যজনক ঘটনা তাঁর পরিবার,ভক্ত অনুরাগীদের জন্যে আর কি হতে পারে। প্রসিদ্ধ ব্যাক্তিবর্গের বেলায় এমন অনিহা পোষন করা হলে ; আমাদের ন্যায় যৎসামান্য অবদান রাখা মুজিব প্রেমিকদের বেলায় জানাজায়ও কেউ অংশ নিতে আসবেন না।
       "এমন হওয়ারতো কথা ছিলনা- দলের শীর্ষনেতা বিবৃতি দিয়ে শোক প্রকাশ করার কথা ছিল তদস্থলে আঞ্চলিক নেতারাও যদি শোক প্রকাশ না করেন, বিবৃতি না দেন -এই দু:খ্য কি তাঁর পরিবার, বন্ধুমহল,শুভাকাংখীরা ভুলতে পারবে?"
     আমি মহান শিক্ষাগুরু, মুজিবাদর্শের লড়াকু সৈনিক কাজী গোলাম মাহমুদ সাহেবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে দেশব্যাপি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আদর্শবান, ত্যাগি, মুজিবাদর্শের প্রকৃত সৈনিক, সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের--'বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।'
       ruhulaminmujumder27@gmail.com
          "জয়বাংলা    জয়বঙ্গবন্ধু"

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন