বিজয়ের ঊষালগ্নে বুদ্ধিজীবি হত্যা--বাঙ্গালী জাতীকে মেধাশুন্য করার চক্রান্ত-----
বিজয়ের উষালগ্নে বুদ্ধিজীবি হত্যা--বাঙ্গালী জাতীকে মেধাশুন্য করার চক্রান্ত।
( রুহুল আমিন মজুমদার)
আজ ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে, সারা বাংলা উল্লাসে মাতোয়ারা, দখলদার বাহিনীকে ঢাকায় অবরুদ্ধ করে সারেন্ডার করার জন্য মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে- ঠিক সেই সময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে' পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাঁদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকদের হত্যা করে--" বাঙ্গালী জাতী সত্বার ওপর চরম আঘাত হানে। সুপরিকল্পিতভাবে বাঙ্গালী জাতীকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী দিকপাল মানুষদের বাড়ি থেকে ধরে এনে ঢাকার রায়ের বাজার, কাটাসুর ও মিরপুরসহ দেশের অসংখ্য বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মম পৈশাচিকতার সঙ্গে হত্যা করে।
তাঁদের হত্যার কারন--"তাঁরা সকলেই ছিলেন দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।" তাঁরা ছিলেন--"পাকিস্তানি শাসকচক্রের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে দিকনির্দেশক এবং সোচ্চার কণ্ঠ, মুক্তমনের অধিকারি, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন, বাঙ্গালী জাতীয়তা বাদের অনুসারী, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার ধারক ও বাহক সর্বোপরি একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার চালিকাশক্তি। কবিতায়, গানে, সাহিত্যে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে নিয়ন্তর জাতীরজনকের স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের আক্ষাংকা লালন করতেন "শহীদ বুদ্ধিজীবিগন"।
প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবিদের হত্যার উদ্দেশ্য---" পাকিস্তানি কুচক্রী মহল তাঁদের এদেশীয় দোসর ধর্মান্ধগোষ্ঠী যখন আঁচ করতে পেরেছে তাঁদের পরাজয় সময়ের ব্যাপার। মিত্র বাহিনী তাঁদেরকে চতুর্দিকে অবরুদ্ধ করে পেলেছে, পরাজয় সময়ের দ্বারপ্রান্তে, বাঙালীর স্বাধীনতা সমাসন্ন, তখন তারা জাতির দিকপালদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িগড়ি তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহন করে। বাঙালী জাতী যাতে তাঁদের সৃজনশীলতা, মানবিক গুনাবলী রক্ষনশক্তি হারিয়ে ফেলে। স্বাধীনতা পেয়েও যেন নতুনদেশ সুস্থ চেতনা ও বিচার বুদ্ধির ক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট হয়ে নিঃস্ব, দুর্বল ও দিক নির্দেশনা হীন হয়ে অন্ধকার গর্তে নিমজ্জিত হতে বাধ্য হয়।
বাঙ্গালী জাতী সত্যিকার অর্থে অন্ধকার গব্বরে নিমজ্জিত হয়েছে কিনা জাতীর বিবেক শুন্য করেও তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেনি। তাঁদের হীনমানষিকতা চরিতার্থের নিমিত্তে এবার চক্রান্তে লিপ্ত হয় নেতৃত্ব শুন্য করার চক্রান্তে।স্বাধীনতা যুদ্ধের পরেও অব্যাহত থাকে কুচক্রীদের সেই ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই একাত্তরের পরাজিত শক্তি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাহায্যে স্ব-পরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার চেতনায় সমৃদ্ধ নেতৃত্ব সমূলে বিনাশ করার লক্ষ্যে জেলের ভেতর হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, প্রবাসি মুজিব নগর সরকারের দিকপাল--"চার জাতীয় নেতাকে"।
পরিণামে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তা বাদের যে চেতনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আপামর বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল, নয় মাসব্যাপি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, স্বাধীন দেশে সে অর্জন থেকে দিনে দিনে আমরা অনেকদুর পিছিয়ে যাই--'পিছিয়ে যাই প্রগতির ধারা থেকে'। একাত্তরের ঘাতক আলবদর, আলশামস, রাজাকারেরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষশক্তি তথা পরাজিত শত্রুরা সাম্রাজ্যবাদী আমেরীকার চক্রান্তে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদারও হতে পেরেছিল।
তবে আশার কথা-- দেরিতে হলেও বাঙালী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে। বাঙ্গালী জাতি যুদ্ধাপরাধী মানবতা বিরুধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আয়োজন করেছে। একে একে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা দণ্ডিত হচ্ছে, তাদের ফাঁসি হচ্ছে বাংলার মাটিতে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামি ফাঁসির রায়ে দন্ডিত হয়ে যুদ্ধ অপরাধের দায় স্বীকার করে সাজা মওকুপের আবেদনের প্রেক্ষিতে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্তই স্থাপিত হয়েছে। মুলত: সেই দিন থেকে মানবতাবিরুধী বিচার আদালত নিয়ে দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্রের মুখে বরফ জমেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহাজোট সরকার সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে ধীরে হলেও গনমানুষের প্রানের দাবি পুরন করার নিয়ন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ম 'শেখ হাসিনা' জাতীকে বিচারহীনতার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য বদ্ধপরিকর।ইতিমধ্যে অনেকের রায় কায্যকর করে তাঁর সরকারের সদিচ্ছার সেই স্বাক্ষরও রেখেছেন।আশা করি সকল যুদ্ধ অপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে বাঙ্গালী জাতীকে অচিরেই কলংকমুক্ত করবেন।
জাতি গভীর শ্রদ্ধা, বিনম্রচিত্তে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করবে।সারা জাতী দিনভর তাঁদের স্মরণ করবে তাঁদের অন্তরের সকল ভালবাসা উজাড় করে।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু
( রুহুল আমিন মজুমদার)
আজ ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে, সারা বাংলা উল্লাসে মাতোয়ারা, দখলদার বাহিনীকে ঢাকায় অবরুদ্ধ করে সারেন্ডার করার জন্য মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে- ঠিক সেই সময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে' পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাঁদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকদের হত্যা করে--" বাঙ্গালী জাতী সত্বার ওপর চরম আঘাত হানে। সুপরিকল্পিতভাবে বাঙ্গালী জাতীকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী দিকপাল মানুষদের বাড়ি থেকে ধরে এনে ঢাকার রায়ের বাজার, কাটাসুর ও মিরপুরসহ দেশের অসংখ্য বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মম পৈশাচিকতার সঙ্গে হত্যা করে।
তাঁদের হত্যার কারন--"তাঁরা সকলেই ছিলেন দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।" তাঁরা ছিলেন--"পাকিস্তানি শাসকচক্রের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে দিকনির্দেশক এবং সোচ্চার কণ্ঠ, মুক্তমনের অধিকারি, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন, বাঙ্গালী জাতীয়তা বাদের অনুসারী, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার ধারক ও বাহক সর্বোপরি একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার চালিকাশক্তি। কবিতায়, গানে, সাহিত্যে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে নিয়ন্তর জাতীরজনকের স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের আক্ষাংকা লালন করতেন "শহীদ বুদ্ধিজীবিগন"।
প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবিদের হত্যার উদ্দেশ্য---" পাকিস্তানি কুচক্রী মহল তাঁদের এদেশীয় দোসর ধর্মান্ধগোষ্ঠী যখন আঁচ করতে পেরেছে তাঁদের পরাজয় সময়ের ব্যাপার। মিত্র বাহিনী তাঁদেরকে চতুর্দিকে অবরুদ্ধ করে পেলেছে, পরাজয় সময়ের দ্বারপ্রান্তে, বাঙালীর স্বাধীনতা সমাসন্ন, তখন তারা জাতির দিকপালদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িগড়ি তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহন করে। বাঙালী জাতী যাতে তাঁদের সৃজনশীলতা, মানবিক গুনাবলী রক্ষনশক্তি হারিয়ে ফেলে। স্বাধীনতা পেয়েও যেন নতুনদেশ সুস্থ চেতনা ও বিচার বুদ্ধির ক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট হয়ে নিঃস্ব, দুর্বল ও দিক নির্দেশনা হীন হয়ে অন্ধকার গর্তে নিমজ্জিত হতে বাধ্য হয়।
বাঙ্গালী জাতী সত্যিকার অর্থে অন্ধকার গব্বরে নিমজ্জিত হয়েছে কিনা জাতীর বিবেক শুন্য করেও তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেনি। তাঁদের হীনমানষিকতা চরিতার্থের নিমিত্তে এবার চক্রান্তে লিপ্ত হয় নেতৃত্ব শুন্য করার চক্রান্তে।স্বাধীনতা যুদ্ধের পরেও অব্যাহত থাকে কুচক্রীদের সেই ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই একাত্তরের পরাজিত শক্তি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাহায্যে স্ব-পরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার চেতনায় সমৃদ্ধ নেতৃত্ব সমূলে বিনাশ করার লক্ষ্যে জেলের ভেতর হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, প্রবাসি মুজিব নগর সরকারের দিকপাল--"চার জাতীয় নেতাকে"।
পরিণামে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তা বাদের যে চেতনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আপামর বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল, নয় মাসব্যাপি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, স্বাধীন দেশে সে অর্জন থেকে দিনে দিনে আমরা অনেকদুর পিছিয়ে যাই--'পিছিয়ে যাই প্রগতির ধারা থেকে'। একাত্তরের ঘাতক আলবদর, আলশামস, রাজাকারেরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষশক্তি তথা পরাজিত শত্রুরা সাম্রাজ্যবাদী আমেরীকার চক্রান্তে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদারও হতে পেরেছিল।
তবে আশার কথা-- দেরিতে হলেও বাঙালী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে। বাঙ্গালী জাতি যুদ্ধাপরাধী মানবতা বিরুধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আয়োজন করেছে। একে একে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা দণ্ডিত হচ্ছে, তাদের ফাঁসি হচ্ছে বাংলার মাটিতে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামি ফাঁসির রায়ে দন্ডিত হয়ে যুদ্ধ অপরাধের দায় স্বীকার করে সাজা মওকুপের আবেদনের প্রেক্ষিতে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্তই স্থাপিত হয়েছে। মুলত: সেই দিন থেকে মানবতাবিরুধী বিচার আদালত নিয়ে দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্রের মুখে বরফ জমেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহাজোট সরকার সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে ধীরে হলেও গনমানুষের প্রানের দাবি পুরন করার নিয়ন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ম 'শেখ হাসিনা' জাতীকে বিচারহীনতার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য বদ্ধপরিকর।ইতিমধ্যে অনেকের রায় কায্যকর করে তাঁর সরকারের সদিচ্ছার সেই স্বাক্ষরও রেখেছেন।আশা করি সকল যুদ্ধ অপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে বাঙ্গালী জাতীকে অচিরেই কলংকমুক্ত করবেন।
জাতি গভীর শ্রদ্ধা, বিনম্রচিত্তে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করবে।সারা জাতী দিনভর তাঁদের স্মরণ করবে তাঁদের অন্তরের সকল ভালবাসা উজাড় করে।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন