অর্থনীতিই রাজনীতির চালিকাশক্তি তত্বের সার্থক প্রয়োগ-- বর্তমা সরকারের সাফল্যের অন্যতম ভিত্তি।
অর্থনীতিই রাজনীতির চালিকা শক্তি 'তত্বের' সার্থক প্রয়োগ~বর্তমান সরকারের সাফল্যের অন্যতম ভিত্তি।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
উনিশ শতকের প্রারম্ভে রাষ্ট্র ব্যবস্থা বা রাজনীতি প্রাতিষ্ঠানীক ভীত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। তাঁর আগে নগর কেন্দ্রীক রাষ্ট্রব্যবস্থা বা নগররাষ্ট্র, ছোট ছোট সমাজ ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোর অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। উনিশ শতকের বিপ্লবী মতবাদের ¯স্রষ্টা কার্ল মার্কস এর মতে--"রাজনীতি হচ্ছে অর্থনীতির অন্তনীহিত অংশ। অর্থনীতির ভিত্তির উপর রাজনীতি নির্ভরশীল। অর্থনীতি সুদৃড না হলে রাজনীতি বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা টিকে থাকেনা। অর্থনীতির কাঠামোর বৈশিষ্টই রাজনীতি নিয়ন্ত্রনের মূল ভিত্তি।"
এক কথায় মার্কসীয় তত্ত্ব অনুসারে অর্থনীতিই হচ্ছে রাজনীতির নিয়ামক বা পরিচালক। শ্রেনীবিভক্ত সমাজে উৎপাদিকা শক্তি হিসেবে উৎপাদন যন্ত্র অর্থাৎ জায়গা জমি,কলকারখানা ইত্যাদির উপর শ্রমিক শ্রেণীর অংশীদারিত্ব না থাকার সুযোগে রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে বুর্জোয়া ধনিক শ্রেণি। বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসান, সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং শ্রেনীহীন, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা রাজনীতির মর্মকথা হয়ে উঠে উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে। প্রথমোক্তটির গুনে গড়ে উঠে সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারনবাদ, সামন্তবাদী বুর্জুয়া ধনীক শ্রেনী কতৃক শাষন শোষনের নতুন মতবাদ। শঠতায় নিমজ্জিত এই শ্রেনী নীজেদের পরিচিতি--আপন গোত্রের নামে না রেখে 'গনতন্ত্রের' নাম ধারন করে (মুলত সামন্তবাদ)।
একের পর এক রাজ্য দখল করে শাষন শোষনের নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিস্কারের পর--ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে গনতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করে।তাঁদের শাষন শোষন অব্যাহত রাখতে গ্রহন করে জোর যার মুল্লুক তাঁর নীতি। এই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রের মালিকানা বংশানুক্রমিক অর্থাৎ রাজা মারা গেলে যুবরাজ রাষ্ট্রের শাষনভার পাওয়ার অধিকারি হতেন। ক্ষমতাসীনদের আশেপাশের প্রত্যেকটি পরিবার এবং তার সুবিধাভোগীরা হতেন ক্ষমতাবান অভিজাত শ্রেনী। দ্বিতীয়টির উৎসমতে শ্রেনীভেদ লোপ না পেলেও বিশেষ করে ইংল্যান্ডে গনতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাণীর শাষনস্থলে জনপ্রতিনীধি কতৃক শাষন এবং ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের উপর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত গতিতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আমেরিকার স্বাধীনতা ও লিখিত আকারে সংবিধান এই প্রক্রিয়াকে অনেকটাই অগ্রসর করে দেয়। অনেক স্থানে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ হয়ে প্রজাতন্ত্র কায়েম হয়। অনেক স্থানে মার্ক্সীয় মতবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে নতুন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কেবল তাত্ত্বিকভাবেই নয় বাস্তবে রাষ্ট্র শাসনে জনগণের অংশগ্রহন, নির্বাচন ব্যবস্থা, সরকারের জবাবদিহীতা প্রভৃতি ক্রমেই বিকাশমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। উনিশ শতকের প্রারম্ভে কেবল পুরুষের সীমিত ভোটাধিকার ছিল। ক্রমশ: তাহা প্রক্রিয়াগত সংস্কারে সর্বজনীন ভোটাধিকারের রীতিতে উন্নিত হয়, যাহা জনগনের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবে অর্জিত।
অনেকগুলো দেশে বিশেষ করে আমেরীকা ও বৃটেনে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নারীর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। নারী নির্বাচিত হওয়ার অধিকার বিংশ শতাব্দীতে অর্জিত হলেও রাষ্ট্রক্ষমতায় এখনও কোন কোন দেশে সমান অংশীদারিত্ব অর্জিত হয়নি। গনতন্ত্রের ধ্বজাধারী আমেরীকায় এই পয্যন্ত কোন নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেনি।বৃটেনে মার্গারেট থ্যাচার ছাড়া সম্ভবত: আর কোন নারী নেতৃত্ব উল্লেখ করার মত আসেনি।
এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শিশু গনতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হলেও জেন্ডার সমতায় বিশ্বের সকল দেশকে পেছনে পেলে উদার গনতান্ত্রিক চর্চায় এবং নারীর অংশীদারিত্বে শীর্ষস্থানটি দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার থেকে রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ পয্যায় পর্যন্ত জনগণের সচেতন সক্রিয় অংশগ্রহণ, জনকল্যাণে রাষ্ট্রের অবদান, আদর্শবাদ, দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক বৈষম্য লোপ, সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন, সংসদে নারীর সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচন ব্যাবস্থায় উত্তরন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্টির নাগরীক অধিকার রক্ষা, বিশ্বায়ন ও পরিবেশ দূষণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রভৃতির জনকল্যান মুলক কর্মকান্ড হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের রাজনীতির মূলভিত্তি।
অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের শতবছর আগে দেয়া সংজ্ঞা "কল্যান মুলক রাষ্ট্রের" দিকে প্রতিনিয়ত ধাবমান।উন্নয়ন অগ্রগতিকে সর্ব উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নাগরীকদের জীবনমানে বৈসম্যের অবসান ঘটানো বর্তমান সরকারের রাজনীতির উপজিব্য বিষয়। লক্ষ স্থীর হওয়ার কারনে রাষ্ট্রের সকল সামাজিক, অর্থনৈতিক সূচক ইতিমধ্যে উধ্বমুখি হওয়া শুরু হয়েছে। দারিদ্রতা কাটিয়ে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে রুপান্তরীত হয়েছে, মঙ্গা দূর হয়েছে, শিক্ষা-বিশেষ করে নারী শিক্ষা ও চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই সকল ক্ষেত্রে আন্তজাতিক স্বীকৃতি ও সমীহ আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে বাংলাদেশ।
একদা সম্পুর্ন বিদেশনির্ভর বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনের ফলে স্বাবলম্বি বাংলাদেশে উন্নিত হয়েছে।আমদানী নির্ভর দেশ রপ্তানী নির্ভর বাংলাদেশে রুপান্তরীত হয়েছে। শুন্য টাকা নিয়ে পথচলা বাংলাদেশ গত সপ্তাহে তাঁর আগের হিসেব রিজার্ভমানী ৩০ বিলিয়নকে ছাড়িয়ে ৩২ হাজার বিলিয়নে স্থীর হয়েছে।দ্বিতীয় পদ্মাসেতুর পরিকল্পনা চুড়ান্ত,দ্বিতীয় পারমানবিক চুল্লির পরিকল্পনাও অনেক এগিয়ে গেছে। মহাশুন্যে ২০১৭ সালের শেষদিকেই "বঙ্গবন্ধু স্যটেলাইট" স্থাপনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সরকার।
বৃদ্ধভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দ্বিগুন বৃদ্ধি, মেধা বৃত্তি, মেয়েদের প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা পয্যন্ত শিক্ষা বৃত্তি, কৃষি কার্ড়, চিকিৎসা ভাতা, চিকিৎসা কার্ড়, দুস্ত মাতা ও শিশুদের সাংবাৎসরিক খাদ্য সহায়তা, গরীব পরিবারে দশ টাকা কেজী চালের কার্ড় বিতরন, চাকুরী জীবিদের উৎসব ভাতা, বাংলা নববর্ষের উৎসব ভাতা, শিক্ষাবৃত্তির আওতা বৃদ্ধি করে ডিগ্রি পয্যন্ত বিনা- বেতনে অধ্যায়নের সুযোগ,শিক্ষায় উপবৃত্তি প্রথা সম্প্রসারিত করে প্রাথমিক স্তর নির্ধারন, বি, এ পয্যন্ত সরকারি পাঠ্যবই বিতরণ ইত্যাদি নানাহ নাগরিক সেবামূলক কর্মকান্ড ফি বছর সম্প্রসারীতের ধারা অব্যাহত রেখেছে।
আন্তজাতিক সংস্থা সমুহে একের পর এক নেতৃত্বের পদে সমাসীন হচ্ছে। এশিয়ার বৃহত্তম গনতান্ত্রীক ফোরাম সমুহে নেতৃত্ব করায়াত্ব করেছে। মুসলিম দেশ সমুহ বিশেষ করে তেল সমৃদ্ধ আরবদেশ সমুহের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক পয্যায় থেকে উন্নতর পয্যায় নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে।ফলে তাঁদের দেশে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগে বিগত সরকার সমুহের সময়ে আরোপিত নিষেদাজ্ঞা একে একে প্রত্যাহারীত হয়ে কাজের বৃহত্তর পরিসর উম্মুক্ত হচ্ছে। জাতির জনকও চেয়েছিলেন গনতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র। মালিকানা ঠিক রেখে উৎপাদনে শ্রমিক শ্রেনীর অংশীদারিত্ব। শোষনহীন সমাজ, সামাজিক বৈশম্য রোধ, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগনের সর্বাধিক অংশগ্রহন নিশ্চিত।রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বক্ষেত্রে জবাব দিহীতা নিশ্চিত করাই ছিল জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পুরনে তাঁর জৈষ্ঠ কন্যা রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতিতে সম্ভব দ্রুত সংষ্কার কায্যক্রম গ্রহন করেন। কায্যক্রমের ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত সমুহ বাস্তবায়নে যুগ যুগান্তরের অমিমাংশীত বিষয় সমুহ মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহন করে সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। চিরায়ত কৃষি নীর্ভর অর্থনীতির ধ্যান ধারনার সঙ্গে শিল্পসমৃদ্ধ অর্থনীতির সংযোগ ঘটানোর নিয়ন্তর প্রচেষ্টায় সফলভাবেই এগিয়ে নিচ্ছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে অতীতের তলাবিহীন জুড়ীর বদনাম গুছিয়ে বিশ্বদরবারে সম্ভাবনার উর্বরভূমি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
গত শতাব্দির শেষের দিকে স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর থেকে চলতি শতাব্দির অনেকটা সময় ক্ষুদা, দারিদ্রতা, সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে হুমকির মধ্যে পেলে দিয়েছিল। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রটি টিকবে কিনা অনেকেই সন্দিহান হয়ে উঠেছিলেন। দারীদ্রতা, দুর্নীতি, নেতৃত্বের অ-যোগ্যতা, রাষ্ট্রীয় ভীত্তি "গনতান্ত্রীক প্রজাতন্ত্রের" অংশ থেকে "প্রজাতন্ত্রকে" আড়ালে রেখে "গনতন্ত্র'কে" গ্রহন করার অদম্য বাসনা, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মুলভিত্তি সমুহকে আড়ালে রেখে "প্রভুত্ববাদ" কায়েমের চেষ্টা, আন্তজাতিক সংস্থা সমুহে নেতৃত্বের অপারগতা, প্রতিবেশি রাষ্ট্র সহ মুসলিম রাষ্ট্র সমুহের সাথে সম্পর্কের শীতলতা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যার্থতার সুযোগে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে জম্ম নিতে শুরু করেছিল--নিয়তিবাদ বা অদৃষ্টবাদ, প্রভুত্ববাদ, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রধর্মীয় গোষ্টির উত্থান, জঙ্গিবাদ।
সমাজের অশুভশক্তি সমুহ মারাত্মক আকারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। সাম্রাজ্যবাদী চক্র তাঁদের ফর্মুলা সফলভাবে বাস্তবায়নের কারনে চার দলীয় সরকারের সময় বাংলাদেশকে "আধুনীক মুসলিম দেশ(modarete muslim country) উপাদিতেও ভুষিত করেছিল"। মুলত: বাংলাদেশকে ব্যার্থ রাষ্ট্র বানানোর সকল প্রক্রিয়া চার দলীয় জোট সরকারে থাকাকালিন সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। আন্তজাতিকভাবে বাংলাদেশ জোট সরকারের শাষনকালে পরপর পাঁছ বছরে পাঁছবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উপহাসের উদাহরন হয়ে দেখা দিয়েছিল। সঙ্গত কারনে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নিতে পেরেছিল একশ্রেনীর বুর্জুয়া সুবিধাবাদি ধনীক, ব্যবসায়ী, সরকারী আমলা, সেনা আমলা গোষ্টি। শেষ পয্যন্ত একই চক্রের ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাঁরা ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত "তত্বাবধায়ক সরকারকে বিতর্কিত ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অ-প্রয়োজনীয় ও ভীতিকর শাষন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কারনে তিনমাসের সরকারকে দুইবছর টেনে নিয়ে যেতে পেরেছিল।
গনতান্ত্রীক আন্দোলনে গড়ে উঠা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং তাঁর নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কীত করতে সাহষ করেছিল একমাত্র খালেদা জিয়ার পরিবারকে শাষনকালের পাঁছবছর অবাধ লুন্টন,মেয়াদ শেষে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্ত বাস্তবায়ন করার সুযোগ দিয়ে। তাঁদেরই কুপরামর্শে সংবিধান, প্রচলিত ধারা তোয়াক্কা না করে একতফা নির্বচন কমিশন এবং নীজ দলের প্রেসিডেন্টকে 'তত্বাবধায়ক সরকার' প্রধান করার সুযোগ দিয়ে। ক্ষমতার লোভে "স্বল্প শিক্ষিত খালেদা জিয়া এবং তাঁর ছেলে তারেক জিয়া" তাঁদের ষড়যন্ত্রে সহজে ধরা দিয়ে বাংলাদেশের চলমান গনতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাকে তাঁদের উদ্দেশ্যের "ষড়যন্ত্রের গর্তে" ফেলে দেয়। সদ্য দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতা লোভীর ক্ষমতাচ্যুতি জনমনে বিরাজমান থাকা অবস্থায় যথারীতি সেই তকমা ব্যবহার করে তাঁর সাথে শেখ হাসিনাকেও একিভূত করে। জনগনের সমর্থন পাওয়ার কৌশল হিসেবে জোটের লুটপাট, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্তকে সামনে নিয়ে আসে।
দুই শীর্ষ নেতাকে বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ অযোগ্য আখ্যা দেয়ার লক্ষে নতুন ফর্মুলা বাহির করে,""মাইনাস টু ফর্মুলা""।.ক্ষমতা দখলের দিনকে ভবিষ্যত প্রজম্মের নিকট বিরত্বের প্রকাশ ঘটানোর লক্ষে তাঁদের পোষ্য শুসিল কতৃক নাম দেয়া হয় '১/১১ এর সরকার।'
সেনা সমর্থিত আমেরিকার চর "ফখরুল-মঈন তত্বাবধায়ক সরকার" ক্ষমতায় আরোহন করেই বিরাজনীতিকরন প্রক্রিয়ায় মনযোগী হয়ে পড়ে। রাজনীতিবীদদের ঢালাও দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে জেলে নিতে শুরু করে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের ভয় দেখিয়ে দেশান্তরীত করার কৌশল গ্রহন করে। সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমুহকে নিস্তেজ করে প্রতিবাদের উৎসমুখে বরফ ঢেলে দেয়।তিনমাসের তত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর আপ্রান চেষ্টা করেও ফলপ্রসু ভীত গড়তে না পারায় জাতীয় নেতাদের মুক্তি দিয়ে সাধারন নির্বাচনের ঘোষনা দিতে বাধ্য হয়।
আগেই আলোচনা করেছি এইরুপ পরিস্থীতি সৃষ্টি করে তাঁদের ক্ষমতা দখলের পথটি পরিষ্কার করে দিয়েছিল ফ্যসিস্ট চার দলীয় জোট সরকারের "প্রভুত্ববাদ" প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে নেয়া রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত সমুহ। তাঁদের "প্রভুত্বতন্ত্রের" অদম্য আক্ষাংকা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জাতি অনেকদুর পিছনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের সংরক্ষিত মুল্যবান বৈদিশীক মুদ্রা, ডলার, স্বর্ণ বিদেশে পাচার হয়ে অর্থনীতিতে তখন বিরাট সংকটের সৃষ্টি করেছিল। তাঁরা সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সর্বক্ষেত্রে ভীতিকর শাষন কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল। ভয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী গন----"টাকা, গাড়ী রাস্তার ধারে ফেলে রেখে অজানা উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশ হতে বাধ্য হয়েছিল।"
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন রাজনীতি ও রাজনৈতিক ধ্যান ধারনায় "প্রভুত্বতন্ত্রের" যে ধারানাটি পোষন করা শুরু করেছিল সেই একই ধারনা পরিত্যাগ করতে পারেননি। মুখে 'গনতন্ত্রের' জন্য মায়াকান্না দেখালেও দলীয় গঠনতন্ত্রকে 'প্রভুত্বতন্ত্র' কায়েমের ভিত্তিমূল করে রেখেছেন। এবারকার কাউন্সিলের আগে দলের দুই শক্তিধর নীতিনির্ধারক পদের নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন বিক্রির চাতুরতার ন্যক্কারজনক এই দৃশ্যটি স্পষ্ট দেখা গেছে। ঐ দুই পদে দলের কোন পয্যায়ের মেম্ভার ফরম খরিদ করেননি। বিনাভোটে "মা-ছেলে" দুই জনই নির্বাচিত হয়েছেন।
দলের রাজনৈতিক কাঠামোকে "মা-ছেলের" পায়ের নীছে রেখে-- "প্রতিযোগিতার আহব্বান জানালেই দলে গনতন্ত্র কায়েম হয়ে যাবে?" যেখানে তাঁবেদারি সন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে দলীয় পদপদবি, মন্ত্রিত্ব, ব্যবসাবানিজ্য--"সেখানে তাঁদের সঙ্গে পদের লড়াইতে নামবে নেতারা--!! মা-ছেলের পাঁয়ের নীছে বসে জুতা পরিস্কার করে যারা উচ্চ পদে সমাসীন হবেন--"তাঁরা কেন প্রতিদ্বন্ধিতা করে দলীয় প্রভু-ভক্তির প্রতিযোগিতায় অযথা পেছনে যাবেন?" "ফ্যসিষ্ট শক্তির উৎসস্থলের প্রধান শক্তি জামায়াত কে প্রশ্রয় দিয়ে সন্ত্রাস অরাজকতার বিষবাস্প সমাজের রন্ধে রন্ধে বপন করে অ-শুভশক্তির আগমনের পথকে সুগম করার চিরায়ত নীতি থেকে দলটি ১/১১ এর বড় রকমের ঝাঁকুনির পরও শিক্ষা নিতে পারেনি। দলীয় কাঠামোতে গনতন্ত্রের চর্চার অভাব রেখে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে গনতন্ত্রের কথা বলা ফ্যসিষ্ট শাষন কায়েমের পুর্বেকার লক্ষন নয় কি? "গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের "প্রজাতন্ত্রের" অংশকে আড়াল করার কৌশল স্থীর রেখে রাষ্ট্র খমতা দখল করার ইচ্ছা ভবিষ্যত বাংলাদেশে আর সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থায়ও বড় রকমের সংস্কার কায্যক্রম গ্রহন করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।স্থানীয় সরকার সমুহে দলীয় প্রর্থী ও প্রতিকে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। দলীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় কায্যক্রম সফল বাস্তবায়নের লক্ষকে সামনে রেখে চিরায়ত নির্বাচনী প্রক্রিয়া ভেঙ্গে অধিকতর জবাবদিহীতামুলক, সকল দল ও সামাজিক শক্তির অংশ গ্রহন নিশ্চিতপুর্বক নির্বাচনী ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন।বৃটিশ সরকারের প্রতিষ্ঠিত ত্রিস্তরের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা পুর্ণবহাল করেছেন।"সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি সংস্থায় "গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার" লক্ষে 'দলীয় গঠনতন্ত্রে' যুগোপযোগী সংস্কার সাধন করে দলের "গঠনতন্ত্রের অঙ্গিকার নামায়" অন্যতম অঙ্গিকারের মায্যদায় স্থান দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকারের তিনটি স্তরেই অবাধ নির্বাচনের শুভ উদ্যোগও কায়েমী স্বার্থবাদীদের অপপ্রচার, অংশগ্রহনের অনা-গ্রহ, বিরুধীতায় সুষ্ঠ ও প্রতিযোগীতামূলক করা যায়নি। তাঁদের সম্মিলীত নেতিবাচক মন্তব্য ও বিবৃতির কারনে স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহন বিঘ্নিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন একতরফায় পয্যবসিত হয়। গনতনন্ত্রের অভিযাত্রায় প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদিও কিছুটা নিস্তেজ, অ-নানন্দদায়ক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়-'অচিরেই তাঁদের সৃষ্ট বন্ধাত্ব কেটে যাবে আশা করি। আগামীতে দ্বিতীয়বারের স্থানীয় সরকারের তিনটি স্তরেই স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন নিশ্চিত হয়ে নির্বাচন রাষ্ট্রীয় উৎসবে পরিনত হবে ইনশাল্লহ---"হতি সংস্কারের বিরুদ্ধে অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র নিস্ফল হবেই হবে"।
বর্তমান সরকার রাজনীতিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রগতির গনতান্ত্রিক ধারায় সংযোগ স্থাপন করে সমাজের সর্বক্ষেত্রে সফল বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। "গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত সংবিধানের শীর্ষে উপস্থাপিত ব্যবস্থাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সর্বক্ষেত্রে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনীধির নিকট জবাবদিহীতার অঙ্গিকার পূরনে নিয়ন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।"" মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার, ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগ, প্রায় পৌনে চারলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার মহান দায়িত্ব নিয়ে জাতির জনকের কন্যা ২০০৮ইং সালে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ইতিমধ্যে সফল ভাবে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সংস্কার সাধন পুর্বক "অর্থনীতিকে রাজনীতির পরিপূরক" নীতিতে পরিনত করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। কায়েমী স্বার্থবাদি চক্রের ষড়যন্ত্রকে অসীম ধৈয্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সমুহ বাস্তবায়িত করে চলেছেন।"রুপকল্প ২০২১" সফল বাস্তবায়নের কারনে ইতিমধ্যে দেশ দারিদ্রতা জয় করে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে রুপান্তরীত হয়েছে। অচিরেই কাংক্ষীত "মধ্যম আয়ের" দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে যাচ্ছে--"জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা।" "রুপকল্প ২০৪১" এর কায্যক্রমও দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমুহকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। বিদ্যুৎ, সমুদ্রবন্দর, সড়ক ও সেতু, বিমান বন্দর, নৌবন্দর, জ্বালানী সহ আনুষাঙ্গিক বিষায়াদির কয়েকটি বড় বড় প্রজেক্টের কাজ উদ্ভোধন করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অচিরেই প্রকল্পগুলীর সফলতা দৃশ্যমান হবে। উল্লেখিত সংস্কার এবং অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি-রাজনীতির পরিপুরক হওয়ায় দৃশ্যত অগ্রগতির সফলতায় বিশ্ব আজ হতবাক।
তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমুহের উন্নয়নের রোল মডেল বর্তমান জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ।" গনের সাথে "প্রজা"র সার্থক সমন্বয়ের কারনেই উন্নতি অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে। গনতন্ত্রকে রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বক্ষেত্রে "প্রাতিষ্ঠানীক ভিত্তির" উপর দাঁড় করিয়ে "অর্থনীতির" সাথে সফল সংযোগ ঘটিয়েছেন। ইতিমধ্যে জনমনেও নতুন ধারনাটি সফল ভাবে উপস্থাপন করে অগ্রগতি সাধনের সফলতা দৃশ্যমান করতে পেরেছেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নতুন ধারনার পুরস্কারও বাংলাদেশ নগদেই পেয়েছে। স্বীকৃতি মিলছে বিশ্বজুড়ে---"হার্ভার্ড ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে করা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট" ২০১৫’-তে রাষ্ট্রক্ষমতায় নারীর অবস্থান বিবেচনায় সবাইকে পেছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।
তথাকথিত সভ্যদুনিয়াকে বিস্মিত করে বাংলাদেশ "মডারেট মুসলিম কান্ট্রি"র তকমা ঝেড়ে উদার গনতান্ত্রিক দেশের সাটিফিকেট অর্জনে সক্ষম হয়েছে।" জাতির জনক বাঙালী জাতিকে অসীম ত্যাগের বিনিময়ে দিয়েছেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় পতাকা ৫৫ হাজার বর্গমাইলের একটি নতুন "বাংলা দেশ।" তাঁর কন্যা জাতির জনকের আদর্শে উজ্জিবীত হয়ে জাতিকে নিয়ন্তর পরিশ্রমের বিনীময়ে, সদা মৃত্যুর ঝুঁকি উপেক্ষা করে, অশুভ শক্তির প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র ধৈয্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে বাঙ্গালী জাতিকে দিয়ে যাচ্ছেন অর্থনৈতিক উন্নতি, অগ্রগতি, সম্মান, মায্যদা, বাঙ্গালিত্বের মহিমা সর্বপরি একলক্ষ বর্গমাইলের অধিক "বর্ধিত নতুন বাংলাদেশ"।
প্রচলিত ধারনার রাজনীতিকে পরিহার করে নতুন ধারার রাজনীতির প্রচলন করার লক্ষে--"রাজনীতিকে গড়ে তুলছেন অর্থনীতির পরিপুরক হিসেবে"। জনগনের আশা আক্ষাংকার প্রতিফলন ঘটাতে স্বাধীনতার স্বাদ ঘরে ঘরে পৌছানোর লক্ষে--"গনতন্ত্রের সঙ্গে অর্থনীতির সার্থক সমন্বয়ের মাধ্যমে দিয়ে যাচ্ছেন--"সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানীকতা।"ইহাই বর্তমানে কায়েমী স্বার্থবাদিদের মাথাব্যাথার অন্যতম কারন।দেশ উন্নত, সমৃদ্ধ হলে তাঁদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন কখনই সম্ভব হবেনা--- " ইহাই মুল চিন্তার বিষয়।"
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন