"নাসিক" নির্বাচন, বিমানে নাশকতা-"বিএনপির হাসির তাৎপয্যের সাথে সম্পৃত্ত।"
(রুহুল আমিন মজুমদার)
রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনার পর বিএনপি যারপরনাই খুশীর ভাব প্রদর্শনের বহুবিদ কারন রয়েছে।রাজনীতির ধারাবাহিকতা অনুযায়ী গনতান্ত্রিক কোন দলের ভুল সিদ্ধান্তের কারনে একবার যদি জনবিচ্ছিন্ন হয় সেই দলটি ঘুরে দাঁড়াতে বহু সময়ের প্রয়োজন হয়।রাজনীতির এই সুত্রটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়--পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের ক্ষেত্রে যেমন উদাহরন টি দেয়া যায় তেমনি ভারতের কংগ্রেস দলের ক্ষেত্রেও একই ভাবে উদাহরনটি টেনে আনা যেতে পারে।
'৭৪ ইং সালে ইন্দিরা গান্ধী দেশব্যাপি জরুরী অবস্থা ঘোষনা করে যে ভুলটি করেছিলেন তাঁর খেসারত আজও বয়ে বেড়াচ্ছে দলটি।ভারতব্যাপি একক দল ক্রমান্বয়ে শক্তি হারিয়ে ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে চলে যাওয়ার কারনে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে হিন্দুত্ববাদি দলের ক্রমশ উত্থান ঘটাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। হিন্দুত্ববাদি বিজেপির শুধুমাত্র বিস্তৃতি ঘটেছে বললে ভুল হবে-- ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতেও পৌছে গেছে।এবারকার নির্বাচনে সব প্রদেশে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে তাঁদের শেকড়ের গভীরতাও প্রমান করেছে। কত গভীরে পৌছে গেছে ভারতের সব প্রদেশে উপস্থীতি জানান দিয়ে তাঁর সত্যতা বিশ্ববাসির নিকট তুলে ধরতেও সক্ষম হয়েছে।কংগ্রেস ৭৪ ইং সালের ভুলটি যদি না করতেন তবে অন্য ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটলেও---"হিন্দু জাতিয়তাবাদি দলের উত্থান কোন ভাবেই সম্ভব হতনা।"পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথামার্ধে বাঙ্গালীর ভাষা কেড়ে নেয়ার প্রচেষ্টা না করলে মুসলিম লীগের পতন পাকিস্তানের পুর্বাংশে সহজেই ঘটতনা--বাংলাদেশের অভ্যুদয় অন্যকোন ইস্যুতে হলেও ভাষা রক্ষার সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতার আদলে হয়ত সংঘঠিত হ'ত না।"
বিএনপি প্রতিনীধি দলের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে উৎফুল্লতার সবিশেষ কারন তাঁদেরকে দেখা করার সুযোগ দেয়া,সামনে অনুষ্ঠিত নাসিক নির্বাচনে নেতাকর্মীদের ভোটযুদ্ধে স্বাভাবিক অংশগ্রহন নিশ্চিত করে সাধারন ভোটারদের তাঁদের প্রতি মুল্যায়ন কেমন হয় তা যাছাই-- "একমাত্র উদ্দেশ্য।" সারাদেশের স্থানীয় সরকারে অংশ গ্রহন নিশ্চিত করতে না পেরে তাঁরা ঠিকই বুঝতে পেরেছে সরকারের একতরফা নীতির কারনে ভোট একতরফা হয়নি--"তাঁদের অংশগ্রহন নিশ্চিত ছিলনা বলেই একতরফা হয়েছে অনেকাংশে"।
" নাসিক" নির্বাচনকে বেছে নেয়ার অন্যতম কারন---"বিগত দিনে নারায়নগঞ্জে সাত খুনের কারন সহ সরকার দলের আরো কিছু নেতিবাচক কর্মকান্ডে আওয়ামীলীগ জনগন থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে"।এই সু্যোগে বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী করে নিয়ে আসতে পারলে জাতীয় ও আন্তজাতিকভাবে বিএনপির অবস্থান জানান দেয়া যাবে এই বলে--"সুষ্ট নির্বাচন হলে বিএনপি সারা দেশে ঠিক নারায়ন গঞ্জের মতই জিততে পারবে"।তাই সারাদিন দেখা গেছে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের উৎসাহ দেয়ার লক্ষে ইতিবাচক বিবৃতি দেয়া হচ্ছে এবং কোন অবস্থায় এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বাহিরে না আসার ব্রিফিং দেয়া হচ্ছে।তাঁদের ধারনা আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতিবাচক কর্মকান্ডে তাঁদের জেতার পাল্লা ভারী হয়ে আছে--"নীরবে তাঁদের পক্ষে ভোটের বিপ্লব ঘটবে।"
তাঁদের ধারনা অমূলক হ'তনা যদিনা তাঁদের দ্বারা ২০১৪/১৫ সালে হঠকারি রাজনীতি সংগঠিত না হ'ত।এই লেখাটি যখন শুরু করতে বসেছি তখন সবেমাত্র নির্বাচন শেষ হয়ে গননার জন্য কর্মকর্তারা প্রস্তুতি গ্রহন করছেন।আশা করি স্থানীয় নেতাদের নেতিবাচক কর্মকান্ডকে নারায়নগঞ্জ বাসি খুব বেশী ধর্তব্যের মধ্যে নেয়নি।সকাল থেকে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থীতি তাই প্রমান করে। ভোটারের উপস্থীতির অর্থই হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়--"সন্ত্রাসী মাস্তানের উপস্থীতির অর্থই হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি"।কারন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেয় সাধারন মানুষ- সাধারন মানুষের সমাগম যেহেতু ভোট কেন্দ্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ও অনেকাংশে নিশ্চিত ভাবা অমূলক হবে না।তাঁদের সৃষ্ট হটকারী রাজনীতির কারনে দেশ ও জনগন যে ক্ষতির সম্মুখ্যিন হয়েছিল নারায়ন গঞ্জের সাতখুন এবং আইভি বনাম শামীম ওসমানের কাঁদাছোড়াছোড়ি তাঁর চেয়ে হাজার গুন কম ইহা বুঝতে বিএনপির হাই থর্টের রাজনীতিবীদদের যে ভুল হয়েছে----"রাত পোয়ালেই আমার কথার সত্যতা পাওয়া যাবে আসা করি।" যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতি জনগন বিমূখ হন তাহলেও খুব বেশী ভোটে বিএনপি প্রার্থী যে জিতবেনা ইহা আমি হলফ করেই বলতে পারি। সাত খুনের ঘটনা না ঘটলে কম করে হলেও একলক্ষ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিতে যেত নির্দ্ধিধায় বলতে পারতাম।
সংসদ বয়কট, প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন আমন্ত্রণ বয়কট, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান বয়কট, নির্বাচন বয়কটের পটভূমিতে পাকিস্তানি মদদে পর পর দুইবার আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করার পর বিএনপির হাতে রাজপথে আসার বর্তমানে কোন ইস্যু নেই। আগেই উল্লেখ করেছি---"একবার বাস্তবতাবর্জিত গণবিচ্ছিন্ন হঠকারী কিছু করে ফেললে বাস্তবভিত্তিক গণসম্পৃক্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল স্বাভাবিক রাজনৈতিক পদ্ধতিতে ফেরা খুবই জটিল কঠিন ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে উঠে।ততদিন ধৈয্য ধরে রাজনীতি করার নেতা বিএনপিতে একজন ও যে নেই--" ইহা বলার অপেক্ষা রাখেনা।"
তাই দেখা গেছে নির্বাচন বর্জন করে অশুভশক্তিকে ক্ষমতায় আনার চক্রান্তে ষড়যন্ত্রমুলক অপ- প্রচার থেকে হঠকারী নাশকতামূলক কর্মকান্ড কিছুই বাদ যায়নি-- "যাহা তাঁদের দ্বারা সংঘটিত করার বাকী আছে।" সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর দেশ পরিচালনায় শীর্ষস্থানীয়দের চোরাগুপ্তা নাশকতার মাধ্যমে হত্যা করে হলেও শুন্যতা সৃষ্টির একটি লক্ষন ইতিমধ্যেই লক্ষ করা গেছে।আমি সেই দিনেই লিখেছিলাম দায়িত্ব প্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং দলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাটবল্টু খুলে রাখার চক্রান্ত "নাশকতা না অবহেলা" বুঝা যাবে।অবশ্যই ইহা যে একটি বড় ধরনের নাশকতা ছিল ইতিমধ্যেই তা প্রমানীত হয়েছে। একইভাবে রাষ্ট্রপতির বিমানেও দায্য পদার্থের সংমিশ্রন ঘটিয়ে আকাশে অগ্নি প্রজ্জলনের মাধ্যমে হত্যা প্রচেষ্টা হয়েছিল--"ইহাও সত্য হয়ে দেখা দিবে কিছু দিনের মধ্যেই।"
তাই দেশ পরিচালনায় নেতৃত্বে আসীন এক বা একাধিক নেতাকে হত্যা বা অন্য যে কোনভাবে ভাগ্যবিড়ম্বিত পথটি লাফ দিয়ে পার হওয়ার একাধিক সুযোগের অপেক্ষার প্রহর গুনছে বিএনপি দলটি।অতি সহজে রাজনীতিতে সচল ও সক্রিয় হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে অবৈধ শক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার ইস্যু পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ইস্যু দলটির এখন চাই-ই চাই।
ইস্যু যদি পেতে হয় তবে দলটিকে এখন খুশি খুশি ভাব দেখাতে হবে। রাষ্ট্রপতি গার্জিয়ান, রাষ্ট্রপতি আশার বাণী শুনিয়েছেন, সংলাপ সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উষ্ণতম, সংলাপ ফলপ্রসূ প্রভৃতি বলে রাষ্ট্রপতির প্রশংসায় বিএনপি এখন গদগদ থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। ভেতরে ভেতরে বিএনপির ঝুঁকে থাকা অপরিপক্ষ সুশীল সমাজও এই খুশি ভাবটা মধ্যরাতের টকসো গুলীতে সামনে আনতে তৎপর থাকবে। এখন খুশিতে গদগদ না হলে পরে সরকারকে দোষারোপ করে মাঠে নামার ইস্যু পাবে কিভাবে দলটি? জনগনের মধ্যে এখন বিএনপি তীব্র আশাবাদ সৃষ্টি করতে চাইবে --"নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সদিচ্ছা রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা কুক্ষিগত ও দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য সমঝোতা চায়না। প্রকৃতপক্ষে এই আশাবাদ আরো ব্যাপকভাবে সৃষ্টি করতেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে সরে এসে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি সামনে এনেছে বিএনপি। কেননা জনগণকে তারা এই বুঝ দিতে চায় যে---"বিএনপি এখন নির্বাচন বিষয়ে যে কোনো ধরনের সমঝোতায় রাজি"।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং সহায়ক সরকারের আলোচনায় অনির্ধারীত সময় দিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে এক বা একাধিক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তাঁর প্রতিবাদে হলেও মাঠে আসাই তাঁদের এখন মূর্খ্য উদ্দেশ্য। সরকারের উচ্চ পয্যায় হত্যাকান্ড ঘটানোর কাজটি বাংলাদেশ থেকে মনিটর করা হচ্ছেনা--"ইহা মনিটর করা হচ্ছে তাঁদের কোটি কোটি ডলার ব্যায়ে নিয়োগকৃত লবিষ্ট ফার্মকে দিয়ে। বিমান কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিদেশ সফর বাতিল করে দিলে কখনই বিমানে নাশকতার চেষ্টা পরিলক্ষিত হবে না। অচিরেই ধৃতব্যাক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে দেখা যাবে--"বিদেশ সফর করে আসা কোন এক কর্মকর্তার যোগ সাজসে পর পর দুইবার বিমানে নাশকতা করার চেষ্টা হয়েছিল"।আমার এই বক্তব্য কখনই অসার হবেনা --" এই আমার দৃড বিশ্বাস"।
ফিরে আসি বিএনপির খুশির তাৎপয্যে---" আমি মনে করি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপিকে বর্তমান সরকারের গনতন্ত্রের চর্চার প্রতি আগ্রহের বোধোদয় সৃষ্টি করার সর্বৈব চেষ্টা করেছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে লক্ষ্য করেই বলেছেন--"যে কোনো আলোচনা সমস্যা সমাধানে বহুমুখী পথ দেখায়।'’ বলাই বাহুল্য, এই বিষয়টা বুঝতেই অতীতে বিশেষত বিগত নির্বাচনের আগে চরম ভুল করেছেন বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী খালেদা জিয়া। কেবল ভুলই নয়, রাজনীতিতে মাত্রাতিরিক্ত লিফট পাওয়া অর্বাচীন এবং পাকিস্তানি কানেকশনে দুর্দমনীয় হয়ে ওঠা ছেলে তারেকের পরামর্শে এর সম্পূর্ণ বিপরীত পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি।তাঁর খেসারত দিতে দিতেই দলটি সময়ে বিলীন হয়ে যাবে--" মুসলিম লীগ এবং ভারতের কংগ্রেসের প্রতি নজর দিলে বিএনপি কর্মীদের ভালভাবেই উপলব্দিতে আসবে।"
" নাসিক" নির্বাচনে কোন কারনে যদি বিএনপির ভরাডুবি ঘটে তাহলে ধরেই নিতে পারি আর কোন স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি ভাল ফলাফল করতে পারবেনা বিএনপি দলটি। যদিও কখনও কোথাও জিতে যায় তল্লাসি দিলে দেখা যাবে বিজিত ব্যাক্তি বিএনপির নমিনেশন না পেয়ে-- 'স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি হতেন আরো ভাল ভোট পেয়ে জিতে আসতেন।'প্রত্যেক এলাকায় রাজনীতির বাইরেও কিছু সাদামনের মানুষ আছেন যারা ভোটে দাঁড়ালে দলমত নির্বিশেষে সাধারন মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়ে দেয়-- "সময় সময় বিএনপির ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে, এর চেয়ে বেশী নয়।"
তবে কামনা করি বিএনপির এই হাসি অমলিন থাকুক। গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় তাঁদের অংশ গ্রহন গনতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট " নাই মামার চেয়ে কানা মামার" কাজ দিলেও কোনরকমে চালাতে পারবেন।"যেহেতু ক্ষমতা ভোগের কোন লক্ষন দেশরত্ম শেখ হাসিনার বিগত শাষনকালে ফুঁটে উঠেনি--ভবিষ্যতেও দেখা যাবেনা--এই বিশ্বাস রাখতেই পারি।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
(রুহুল আমিন মজুমদার)
রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনার পর বিএনপি যারপরনাই খুশীর ভাব প্রদর্শনের বহুবিদ কারন রয়েছে।রাজনীতির ধারাবাহিকতা অনুযায়ী গনতান্ত্রিক কোন দলের ভুল সিদ্ধান্তের কারনে একবার যদি জনবিচ্ছিন্ন হয় সেই দলটি ঘুরে দাঁড়াতে বহু সময়ের প্রয়োজন হয়।রাজনীতির এই সুত্রটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়--পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের ক্ষেত্রে যেমন উদাহরন টি দেয়া যায় তেমনি ভারতের কংগ্রেস দলের ক্ষেত্রেও একই ভাবে উদাহরনটি টেনে আনা যেতে পারে।
'৭৪ ইং সালে ইন্দিরা গান্ধী দেশব্যাপি জরুরী অবস্থা ঘোষনা করে যে ভুলটি করেছিলেন তাঁর খেসারত আজও বয়ে বেড়াচ্ছে দলটি।ভারতব্যাপি একক দল ক্রমান্বয়ে শক্তি হারিয়ে ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে চলে যাওয়ার কারনে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে হিন্দুত্ববাদি দলের ক্রমশ উত্থান ঘটাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। হিন্দুত্ববাদি বিজেপির শুধুমাত্র বিস্তৃতি ঘটেছে বললে ভুল হবে-- ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতেও পৌছে গেছে।এবারকার নির্বাচনে সব প্রদেশে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে তাঁদের শেকড়ের গভীরতাও প্রমান করেছে। কত গভীরে পৌছে গেছে ভারতের সব প্রদেশে উপস্থীতি জানান দিয়ে তাঁর সত্যতা বিশ্ববাসির নিকট তুলে ধরতেও সক্ষম হয়েছে।কংগ্রেস ৭৪ ইং সালের ভুলটি যদি না করতেন তবে অন্য ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটলেও---"হিন্দু জাতিয়তাবাদি দলের উত্থান কোন ভাবেই সম্ভব হতনা।"পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথামার্ধে বাঙ্গালীর ভাষা কেড়ে নেয়ার প্রচেষ্টা না করলে মুসলিম লীগের পতন পাকিস্তানের পুর্বাংশে সহজেই ঘটতনা--বাংলাদেশের অভ্যুদয় অন্যকোন ইস্যুতে হলেও ভাষা রক্ষার সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতার আদলে হয়ত সংঘঠিত হ'ত না।"
বিএনপি প্রতিনীধি দলের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে উৎফুল্লতার সবিশেষ কারন তাঁদেরকে দেখা করার সুযোগ দেয়া,সামনে অনুষ্ঠিত নাসিক নির্বাচনে নেতাকর্মীদের ভোটযুদ্ধে স্বাভাবিক অংশগ্রহন নিশ্চিত করে সাধারন ভোটারদের তাঁদের প্রতি মুল্যায়ন কেমন হয় তা যাছাই-- "একমাত্র উদ্দেশ্য।" সারাদেশের স্থানীয় সরকারে অংশ গ্রহন নিশ্চিত করতে না পেরে তাঁরা ঠিকই বুঝতে পেরেছে সরকারের একতরফা নীতির কারনে ভোট একতরফা হয়নি--"তাঁদের অংশগ্রহন নিশ্চিত ছিলনা বলেই একতরফা হয়েছে অনেকাংশে"।
" নাসিক" নির্বাচনকে বেছে নেয়ার অন্যতম কারন---"বিগত দিনে নারায়নগঞ্জে সাত খুনের কারন সহ সরকার দলের আরো কিছু নেতিবাচক কর্মকান্ডে আওয়ামীলীগ জনগন থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে"।এই সু্যোগে বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী করে নিয়ে আসতে পারলে জাতীয় ও আন্তজাতিকভাবে বিএনপির অবস্থান জানান দেয়া যাবে এই বলে--"সুষ্ট নির্বাচন হলে বিএনপি সারা দেশে ঠিক নারায়ন গঞ্জের মতই জিততে পারবে"।তাই সারাদিন দেখা গেছে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের উৎসাহ দেয়ার লক্ষে ইতিবাচক বিবৃতি দেয়া হচ্ছে এবং কোন অবস্থায় এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বাহিরে না আসার ব্রিফিং দেয়া হচ্ছে।তাঁদের ধারনা আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতিবাচক কর্মকান্ডে তাঁদের জেতার পাল্লা ভারী হয়ে আছে--"নীরবে তাঁদের পক্ষে ভোটের বিপ্লব ঘটবে।"
তাঁদের ধারনা অমূলক হ'তনা যদিনা তাঁদের দ্বারা ২০১৪/১৫ সালে হঠকারি রাজনীতি সংগঠিত না হ'ত।এই লেখাটি যখন শুরু করতে বসেছি তখন সবেমাত্র নির্বাচন শেষ হয়ে গননার জন্য কর্মকর্তারা প্রস্তুতি গ্রহন করছেন।আশা করি স্থানীয় নেতাদের নেতিবাচক কর্মকান্ডকে নারায়নগঞ্জ বাসি খুব বেশী ধর্তব্যের মধ্যে নেয়নি।সকাল থেকে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থীতি তাই প্রমান করে। ভোটারের উপস্থীতির অর্থই হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়--"সন্ত্রাসী মাস্তানের উপস্থীতির অর্থই হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি"।কারন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেয় সাধারন মানুষ- সাধারন মানুষের সমাগম যেহেতু ভোট কেন্দ্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ও অনেকাংশে নিশ্চিত ভাবা অমূলক হবে না।তাঁদের সৃষ্ট হটকারী রাজনীতির কারনে দেশ ও জনগন যে ক্ষতির সম্মুখ্যিন হয়েছিল নারায়ন গঞ্জের সাতখুন এবং আইভি বনাম শামীম ওসমানের কাঁদাছোড়াছোড়ি তাঁর চেয়ে হাজার গুন কম ইহা বুঝতে বিএনপির হাই থর্টের রাজনীতিবীদদের যে ভুল হয়েছে----"রাত পোয়ালেই আমার কথার সত্যতা পাওয়া যাবে আসা করি।" যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতি জনগন বিমূখ হন তাহলেও খুব বেশী ভোটে বিএনপি প্রার্থী যে জিতবেনা ইহা আমি হলফ করেই বলতে পারি। সাত খুনের ঘটনা না ঘটলে কম করে হলেও একলক্ষ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিতে যেত নির্দ্ধিধায় বলতে পারতাম।
সংসদ বয়কট, প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন আমন্ত্রণ বয়কট, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান বয়কট, নির্বাচন বয়কটের পটভূমিতে পাকিস্তানি মদদে পর পর দুইবার আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করার পর বিএনপির হাতে রাজপথে আসার বর্তমানে কোন ইস্যু নেই। আগেই উল্লেখ করেছি---"একবার বাস্তবতাবর্জিত গণবিচ্ছিন্ন হঠকারী কিছু করে ফেললে বাস্তবভিত্তিক গণসম্পৃক্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল স্বাভাবিক রাজনৈতিক পদ্ধতিতে ফেরা খুবই জটিল কঠিন ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে উঠে।ততদিন ধৈয্য ধরে রাজনীতি করার নেতা বিএনপিতে একজন ও যে নেই--" ইহা বলার অপেক্ষা রাখেনা।"
তাই দেখা গেছে নির্বাচন বর্জন করে অশুভশক্তিকে ক্ষমতায় আনার চক্রান্তে ষড়যন্ত্রমুলক অপ- প্রচার থেকে হঠকারী নাশকতামূলক কর্মকান্ড কিছুই বাদ যায়নি-- "যাহা তাঁদের দ্বারা সংঘটিত করার বাকী আছে।" সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর দেশ পরিচালনায় শীর্ষস্থানীয়দের চোরাগুপ্তা নাশকতার মাধ্যমে হত্যা করে হলেও শুন্যতা সৃষ্টির একটি লক্ষন ইতিমধ্যেই লক্ষ করা গেছে।আমি সেই দিনেই লিখেছিলাম দায়িত্ব প্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং দলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাটবল্টু খুলে রাখার চক্রান্ত "নাশকতা না অবহেলা" বুঝা যাবে।অবশ্যই ইহা যে একটি বড় ধরনের নাশকতা ছিল ইতিমধ্যেই তা প্রমানীত হয়েছে। একইভাবে রাষ্ট্রপতির বিমানেও দায্য পদার্থের সংমিশ্রন ঘটিয়ে আকাশে অগ্নি প্রজ্জলনের মাধ্যমে হত্যা প্রচেষ্টা হয়েছিল--"ইহাও সত্য হয়ে দেখা দিবে কিছু দিনের মধ্যেই।"
তাই দেশ পরিচালনায় নেতৃত্বে আসীন এক বা একাধিক নেতাকে হত্যা বা অন্য যে কোনভাবে ভাগ্যবিড়ম্বিত পথটি লাফ দিয়ে পার হওয়ার একাধিক সুযোগের অপেক্ষার প্রহর গুনছে বিএনপি দলটি।অতি সহজে রাজনীতিতে সচল ও সক্রিয় হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে অবৈধ শক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার ইস্যু পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ইস্যু দলটির এখন চাই-ই চাই।
ইস্যু যদি পেতে হয় তবে দলটিকে এখন খুশি খুশি ভাব দেখাতে হবে। রাষ্ট্রপতি গার্জিয়ান, রাষ্ট্রপতি আশার বাণী শুনিয়েছেন, সংলাপ সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উষ্ণতম, সংলাপ ফলপ্রসূ প্রভৃতি বলে রাষ্ট্রপতির প্রশংসায় বিএনপি এখন গদগদ থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। ভেতরে ভেতরে বিএনপির ঝুঁকে থাকা অপরিপক্ষ সুশীল সমাজও এই খুশি ভাবটা মধ্যরাতের টকসো গুলীতে সামনে আনতে তৎপর থাকবে। এখন খুশিতে গদগদ না হলে পরে সরকারকে দোষারোপ করে মাঠে নামার ইস্যু পাবে কিভাবে দলটি? জনগনের মধ্যে এখন বিএনপি তীব্র আশাবাদ সৃষ্টি করতে চাইবে --"নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সদিচ্ছা রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা কুক্ষিগত ও দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য সমঝোতা চায়না। প্রকৃতপক্ষে এই আশাবাদ আরো ব্যাপকভাবে সৃষ্টি করতেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে সরে এসে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি সামনে এনেছে বিএনপি। কেননা জনগণকে তারা এই বুঝ দিতে চায় যে---"বিএনপি এখন নির্বাচন বিষয়ে যে কোনো ধরনের সমঝোতায় রাজি"।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং সহায়ক সরকারের আলোচনায় অনির্ধারীত সময় দিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে এক বা একাধিক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তাঁর প্রতিবাদে হলেও মাঠে আসাই তাঁদের এখন মূর্খ্য উদ্দেশ্য। সরকারের উচ্চ পয্যায় হত্যাকান্ড ঘটানোর কাজটি বাংলাদেশ থেকে মনিটর করা হচ্ছেনা--"ইহা মনিটর করা হচ্ছে তাঁদের কোটি কোটি ডলার ব্যায়ে নিয়োগকৃত লবিষ্ট ফার্মকে দিয়ে। বিমান কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিদেশ সফর বাতিল করে দিলে কখনই বিমানে নাশকতার চেষ্টা পরিলক্ষিত হবে না। অচিরেই ধৃতব্যাক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে দেখা যাবে--"বিদেশ সফর করে আসা কোন এক কর্মকর্তার যোগ সাজসে পর পর দুইবার বিমানে নাশকতা করার চেষ্টা হয়েছিল"।আমার এই বক্তব্য কখনই অসার হবেনা --" এই আমার দৃড বিশ্বাস"।
ফিরে আসি বিএনপির খুশির তাৎপয্যে---" আমি মনে করি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপিকে বর্তমান সরকারের গনতন্ত্রের চর্চার প্রতি আগ্রহের বোধোদয় সৃষ্টি করার সর্বৈব চেষ্টা করেছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে লক্ষ্য করেই বলেছেন--"যে কোনো আলোচনা সমস্যা সমাধানে বহুমুখী পথ দেখায়।'’ বলাই বাহুল্য, এই বিষয়টা বুঝতেই অতীতে বিশেষত বিগত নির্বাচনের আগে চরম ভুল করেছেন বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী খালেদা জিয়া। কেবল ভুলই নয়, রাজনীতিতে মাত্রাতিরিক্ত লিফট পাওয়া অর্বাচীন এবং পাকিস্তানি কানেকশনে দুর্দমনীয় হয়ে ওঠা ছেলে তারেকের পরামর্শে এর সম্পূর্ণ বিপরীত পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি।তাঁর খেসারত দিতে দিতেই দলটি সময়ে বিলীন হয়ে যাবে--" মুসলিম লীগ এবং ভারতের কংগ্রেসের প্রতি নজর দিলে বিএনপি কর্মীদের ভালভাবেই উপলব্দিতে আসবে।"
" নাসিক" নির্বাচনে কোন কারনে যদি বিএনপির ভরাডুবি ঘটে তাহলে ধরেই নিতে পারি আর কোন স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি ভাল ফলাফল করতে পারবেনা বিএনপি দলটি। যদিও কখনও কোথাও জিতে যায় তল্লাসি দিলে দেখা যাবে বিজিত ব্যাক্তি বিএনপির নমিনেশন না পেয়ে-- 'স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি হতেন আরো ভাল ভোট পেয়ে জিতে আসতেন।'প্রত্যেক এলাকায় রাজনীতির বাইরেও কিছু সাদামনের মানুষ আছেন যারা ভোটে দাঁড়ালে দলমত নির্বিশেষে সাধারন মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়ে দেয়-- "সময় সময় বিএনপির ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে, এর চেয়ে বেশী নয়।"
তবে কামনা করি বিএনপির এই হাসি অমলিন থাকুক। গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় তাঁদের অংশ গ্রহন গনতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট " নাই মামার চেয়ে কানা মামার" কাজ দিলেও কোনরকমে চালাতে পারবেন।"যেহেতু ক্ষমতা ভোগের কোন লক্ষন দেশরত্ম শেখ হাসিনার বিগত শাষনকালে ফুঁটে উঠেনি--ভবিষ্যতেও দেখা যাবেনা--এই বিশ্বাস রাখতেই পারি।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন