মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরার অবদান অস্বিকার---বাঙ্গালী জাতির হীনমন্যতার পরিচয় বহন করে।
মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরার অবদান অস্বিকার--বাঙ্গালী জাতির হীনমন্যতার পরিচয় বহন করে।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
বাংলাদেশের কিছু কিছু বুদ্ধিজীবি বলতে শুনি---'ভারত তাঁর স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে।' আবার অনেকে বলতে শুনা যায় ভারত বাংলাদেশকে গিলে খাওয়ার জন্যে পাকিস্তান থেকে আলাদা করেছে।বিব্রতকর বিষয়টি হচ্ছে -মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা, আবার তাঁদের অবদানের স্বিকৃতি দিতে গেলে ঐ সমস্ত বুদ্ধিজীবিদের মাথায় ভাঁজ পড়া। ইদানিং তাঁরা নতুন একটি বাক্যালাপ বাজারে ছেড়ে দিয়েছে--"ভারত সাহায্য না করলেও মুক্তিযোদ্ধারা এককভাবে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে পারত।"
ঐ সমস্ত বুদ্ধিজীবিরা কি জানে না-- যে কোন ঘটনার অন্দরে বহু ঘটনা থাকে? সাধারনভাবে গনতান্ত্রিক আন্দোলন রাজপথে সংঘঠিত হতে দেখা যায়, যাহা দেশ বিদেশের জনগনের দৃষ্টিতে থাকে। কিন্তু অন্দর মহলে সরকার এবং আন্দোলনকারী শক্তির মধ্যে কিছু কিছু বুঝাপড়া হয়--তা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে?
কোন কোন ফ্যাসিবাদি রাজনৈতিক দল তাঁদের কায়েমী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে সম্পুর্ণ বিপরীত মুখী একাধিক দেশী বিদেশী শক্তির সঙ্গে আঁতাতে লিপ্ত হয়-ইহাও কি অস্বীকার করা সম্ভব? যেমন---''২০১৪/১৫ সালের বিগত চার দলীয় জোটের আন্দোলনে জঙ্গী সম্পৃত্ততা প্রমানীত সত্য হিসেবে দেরীতে হলেও সর্বমহলের বোধগম্যতায় আসেনি? মুসলিম বিশ্বের শত্রু ইসরাইলের 'মোসাদ' (গোয়েন্দা সংস্থা)এর সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের ঘটনাটি দিবালোকের মত সত্যি হয়ে বাংলাদেশ সহ ইসলামী বিশ্বকে বিব্রত করেনি?"।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় এতবড় একটি ঘটনা, যাহা বিশ্ব ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই, তাঁর নেপথ্যৈ কোন ঘটনা থাকবেনা তাও কি সম্ভব? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কি মিথ্যা? ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের কত বছর আগে আগড়তলা ষড়যন্ত্র পাকিস্তান সরকারের নজরে এসেছিল? বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতাই না চাইতেন- বাঙ্গালী তরুন সেনা অফিসার সমন্বয়ে অভিযুক্ত দলটিকে কেন আগড়তলা পাঠিয়েছিলেন? তাঁর আগে তাঁর বিশ্বস্ত সহচরকে কেন জহরলাল নেহেরুর নিকট পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিলেন--"বাংলাদেশ স্বাধীন হতে গেলে ভারতের মনোভাব কি হবে? কেমন সাহায্য সহযোগীতা পাওয়া যাবে?"
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঐ মহলটি দীর্ঘ ত্রিশবছরের অধিক সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি,গনতন্ত্রকে বিপথে নিয়ে গিয়েছিল একটিমাত্র সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে---"বাংলাদেশে কি আছে, পাকিস্তান থাকাই ভাল ছিল"।২০০১ ইং থেকে ২০০৬ ইং সাল ছিল তাঁদের জন্যে স্বর্ণযুগ--" বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পেরেছিল।"বাংলাদেশ প্রত্যেকটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতির সূচকে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে একনম্বর স্থানটি একনাগাড়ে পাঁছবার দখলে রাখতে পেরেছিল।" তাঁরা সম্পুর্ণ একটি হতাশাগ্রস্ত জাতি বিনির্মানে যা যা করার প্রয়োজন ছিল সকল শক্তি উজাড় করে সেই চেষ্টা করে গেছেন।অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা সফলও হয়েছেন।
সমাজে বলি আর ব্যাক্তিতে বলি-স্বার্থ ছাড়া কে কাকে সাহায্য করে? স্বার্থ অবশ্যই একটা ছিল।স্বার্থটি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগন যে আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়েছিল---"গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ"।ভারতের সংবিধানে দেশটির স্বাধীনতা প্রাপ্তির লগ্ন থেকে উল্লেখীত চারটি মুলনীতির মধ্যে তিনটিরই অনুসারী(কংগ্রেস দলীয়ভাবেও তাই)। সুতারাং আদর্শিক দিক থেকে সমমনা পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী--"সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যাক্তি"--কে না চায়?
ধর্মভিত্তিক দল বি, জি পি ভারতের সাধারন নির্বাচনে জয়ী হলে ঐ সমস্ত বুদ্ধিজীবি এবং তাঁদের অনুসরনকারি, জামায়াত বিএনপি--" সবাই মিলে সারা দেশে মিষ্টির দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিলেন কেন?"
এই কেন এর উত্তর হচ্ছে---"মৌদির বিজিপি দলীয়ভাবে যে আদর্শ ধারন করে, বাংলাদেশের চারদলীয় জোটও একই আদর্শ ধারন করে।সঙ্গত কারনে বিজিপি সংখ্যাগরিষ্ট আসনে এগিয়ে থাকাবস্থায় প্রতিবেশী আনন্দে আত্মহারা হওয়ারই কথা।সুখে দু:খ্যে সাহায্য তো পাওয়া যাবে।" বিজিপি ক্ষমতা পাওয়ার ছয়মাসের মধ্যে মিষ্টিমুখের হাসিতে কালিমা লাগার কারনটি হচ্ছে--"ভারতের শতবছরের গনতন্ত্র চর্চা। বিগ্নহীন চর্চার ফলে বর্তমানে ভারতের গনতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া। ফলে মৌদি দাদা ইচ্ছা করলেও প্রাতিষ্ঠানিক ধারার বাহিরে যেতে পারেন না। যেমন পারেননি বাবরি মসজিদের ক্ষেত্রে। বিজিপি 'বাবরী মসজীদ'কে ইস্যু করে আঞ্চলিক দল থেকে একলাফে সর্বভারতীয় দলে রুপান্তরীত হয়ে দুইবারের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করার পয্যায় থাকা সত্তেও বাবরী মসজিদের দিকে তাকালেন না কেন? বিরুধী দলে থাকলে বাবরি মসজিদ "হিন্দুদের মন্দির" ক্ষমতায় গেলে মসুলমানের মসজিদ?
আমরা জানি-- '৭০ এর দশকে বিশ্ব দুইভাগে বিভক্ত ছিল, একপক্ষে অধুনা সৌভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সামাজতান্ত্রিক বিশ্ব অন্যপক্ষে সাম্রাজ্যবাদি আমেরীকার নেতৃত্বে পুঁজিবাদি বিশ্ব। ভারত-রাশিয়া আন্তজাতিক সংস্থার যে কোন ইস্যুতে বরাবরই ছিল এক ও অভিন্ন মতাদর্শের বিশ্বস্ত সহচর।চীন, আমেরিকা যেহেতু পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্র ছিল সঙ্গত কারনে ভারত রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষেই থাকবে। অন্যান্ন আন্তজাতিক বিষয়গুলীর দিকে চোখ ফেরালেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
তাছাড়াও নিক্সন খুবই অ-পছন্দ করতেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। তাঁর সামনে তিনি বিব্রত বোধ করতেন, তাঁর ব্যক্তিত্বের সামনে নিক্সনের অস্বস্তি হতো। বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের কর্ণধার উন্নয়নকামী দেশ ভারতের কর্ণধারের সামনে নিস্প্রভ মনে হওয়া কোন অবস্থায় সহ্য হওয়ার কথা নয়।আমেরিকার জনগন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা সত্বেও নিক্সন এবং কিসিঞ্জার মিলে পাকিস্তানকে সাহায্য করে গেছেন।তাঁদের সাহায্য এমন পয্যায় পৌছানোর সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয় নস্যাৎ করার প্রয়োজনে বিশ্বযুদ্ধ অথবা পারমানবিক বোমা ব্যাবহার করার উদ্যোগিও ছিল। দুই পরাশক্তির আন্তজাতিক রাজনীতির আবর্তে 'নীজ দেশ এবং জনগনের উপর সমূহ বিপদ' মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সফলতার পয্যায় পৌছে দেয়ার কাজটি করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী 'ইন্দিরা গান্ধী'।
পরাশক্তির আন্তজাতিক রাজনীতি এবং "প্রভাব বলয় ধরে রাখা এবং সৃষ্টি করা"র স্নায়ু যুদ্ধের ফসল---"সহজে চীন, পাকিস্তান, আমেরিকা জোটবদ্ধ হয়েছিল।" পাকিস্তান এবং আমেরিকার সরকার পয্যায় বন্ধুত্ব ছিল খুবই উন্নত । চীন রাশিয়ার বিপরীতমূখি সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়ার কারনে আমেরিকার বন্ধু ছিল। আমেরিকা--'বন্ধু রাষ্ট্র চীন এবং পাকিস্তানকে বলেছিল ভারত আক্রমন করার জন্য।'আমেরিকার ধারনা ছিল-- "ভারত এবং রাশিয়ার মৈত্রী চুক্তি" অনুযায়ী ভারতকে রক্ষা করার জন্য রাশিয়া চীন আক্রমনে এগিয়ে আসবে। রাশিয়া কতৃক চীন আক্রান্ত হলে আমেরিকা রাশিয়া আক্রমন করবে। প্রয়োজনে আমেরিকা এক্ষেত্রে পারমানবিক বোমার ব্যবহার করতেও প্রস্তুত ছিল।বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে গেলেও নিক্সন কিসিঞ্জার পিছ পা হতেন না।( তথ্যসুত্র:--হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের অবমুক্ত দলিল। দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম, শ্রীনাথ রাঘবনের ১৯৭১ বই, প্রথমা প্রকাশিত হাসান ফেরদৌসের ১৯৭১: বন্ধুর মুখ শত্রুর ছায়া।)
এক্ষত্রে প্রনিধান যোগ্য আরো একটি উদাহরন দিতে পারি--- "গ্যারি জে ব্যাস তাঁর দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম বইয়ে বলেছেন, নিক্সন ও কিসিঞ্জার বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞে তাঁদের ভূমিকা আড়াল করতে সক্ষম হয়েছেন, আমেরিকানদের জন্য এটাই উৎকৃষ্ট সময় নিক্সন ও কিসিঞ্জারের সেই ভয়াবহ সময়ের ভূমিকাকে রুখে দাঁড়ানোর (কনফ্রন্ট)"।
ত্রি-দেশীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তান ভারত আক্রমন করলেও চীন অস্বীকৃতি জানায়। নিক্সন ও কিসিঞ্জারের সাধ ভেস্তে যায়।তাঁদের সেইদিনের ক্ষোভের বহ্নিশিখা ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ ইং স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিয়ে প্রশমন করতে হল।
ফিরে আসি মুলবক্তব্যে----পাকিস্তান কতৃক ভারত আক্রান্ত হওয়ার পর ভারতীয় সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর সহযোগে মিত্র বাহিনী গঠন করে দ্রুত ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়।পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তান কতৃক আক্রান্ত সীমান্তে ভারত একাই প্রতিরোধ করে। বরঞ্চ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হাজার হাজার জঙ্গি বিমান বোমাহামলার মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাদের পশ্চিম পাকিস্তানেই ব্যতিব্যাস্ত করে রাখে।
আমি ঐ সমস্ত বুদ্ধিজীবিদের জিজ্ঞাসা করতে চাই--"পাকিস্তান রক্ষা করার জন্যে স্বার্থ ছিল না আমেরিকার? আমেরিকার ইহুদী রাষ্ট্রের স্বার্থ পুরণ করতে আপনারা রাজী--ভারতের হিন্দুদের স্বার্থ দেখলে ভয় পান কেন? "ইহুদীরা নবী করিম (স:) এর দুশমন --হিন্দুরা বিধর্মী তবে নবীর দুশমন ছিল না"। নবীর দুশমনকে এত ভালবাসেন কেন আপনারা-----আপনারা না আস্তিক??
বাংলাদেশের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ, তাঁর বিজয়, স্বাধীনতায় ভারতের জনগন এবং তাঁর প্রধানমন্ত্রী ' মহাত্মা ইন্দিরা' গান্ধীর নাম আষ্টেপৃষ্ট্রে জড়িয়ে আছে।ইচ্ছা করেও কেউ মুছে দিতে পারবেনা, হয়ত প্রজম্মকে সাময়িক বিভ্রান্ত করা যাবে। সময়ে ইতিহাস আপন গতিতেই তাঁর অবদান স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশের পক্ষে দূতিয়ালি করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশ প্রশ্নে একটি সম্মানজনক সমাধান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য তিনি বিশ্বনেতাদের কাছে দেন দরবার করেছেন। বিশ্বনেতাদের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটাতে পারলেও মার্কিন প্রশাসনের মনোভাব পরিবর্তন করা যায়নি। ইন্দিরা ও মুজিবের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা অধ্যাপক হেনরি কিসিঞ্জারের বিন্দুমাত্র আগ্রহ কিংবা শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। ৪ ও ৫ নভেম্বর নিক্সন-ইন্দিরা বৈঠক হয়। নিক্সনের মনোভাব ছিল শীতল। দ্বিতীয় দিন সকালের বৈঠকের আগে ইন্দিরা গান্ধীকে প্রায় ৪৫ মিনিট বসিয়ে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য ইন্দিরা এই উপেক্ষা ও অপমান নীরবে হজম করেছিলেন।
৩ ডিসেম্বর খোলামেলাভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। ৬ ডিসেম্বর সোমবার লোকসভায় বিবৃতি দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী জানান---"বাংলাদেশকে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।" লোকসভায় ইন্ধীরা গান্ধী বলেন-- '‘উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ সরকারের বারবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, সতর্কতার সঙ্গে সবকিছু বিবেচনা করে ভারত "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ"কে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (গান্ধী, প্রাগুক্ত)।’' পরদিন মঙ্গলবার ৭ ডিসেম্বর "ভুটান বাংলা দেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি" দেয়।মানষিক রোগী বুদ্ধিজীবিরা এক্ষেত্রেও ইন্ধীরা গান্ধীর অবদানকে খাট করে দেখানোর জন্যে ভূটান আগে স্বীকৃতি দিয়েছে প্রচার করে যাচ্ছে।
১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ইন্দিরা গান্ধী সুইডেনের একটি টেলিভিশনের কর্মীদের সঙ্গে পুর্ব নির্ধারীত সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। এমন সময় জেনারেল স্যাম মানেকশ ডাকার সরওয়ার্দী উদ্যান থেকে তাঁকে টেলিফোনে জানান--"ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর"। ইন্দিরা গান্ধী দ্রুত চলে যান লোকসভায়---"অধিবেশন কক্ষে তখন উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা।" তৎক্ষনাৎ লিখিত বিবৃতিতে ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় দাঁড়িয়ে বলেন--"পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। ঢাকা এখন একটি স্বাধীন বাংলাদেশের দেশের মুক্ত রাজধানী।"
এ যুদ্ধে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হয়েছিলেন। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় একজন সাংবাদিক ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলেন। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী--" বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে আপনার দেশ অনেক মূল্য দিয়েছে। বিনিময়ে আপনার দেশ ভারত কি পেয়েছে?" এ প্রশ্নের জবাব ইন্দিরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসা র্যা লফ চ্যাপলিনের একটি কবিতার চার লাইন উদ্ধৃত করে বলেন---"মৃতের জন্য কেঁদো না, বরং জমে থাকা ভুলের জন্য কাঁদো।জগতের সব দুঃখ আর অন্যায় দেখেওকেন প্রতিবাদ করে না কেউ।" ইন্দিরা গান্ধী আরও বলেছিলেন---'‘ভারত কথা বলেছে কেবল বাংলাদেশের--মানুষের জন্য। ভারতের জন্য নয় শুধু--দুনিয়ার সব নির্যাতিত মানুষের জন্য।(গান্ধী, প্রাগুক্ত) ।’'
বাংলাদেশ বর্তমানে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার শাষনে মাত্র আটবছরে বিশ্বের বহু রাষ্ট্রকে সকল সুচকে পিছনে ফেলে সার্বিক ভাবে ত্রিশতম অর্থনৈতিক উন্নতির দেশে অবস্থান করে নিয়েছে।অনেক সামাজিক সূচকে বিশ্বে একনম্ভরে অবস্থান নিয়ে প্রমান করেতে পেরেছে বাঙ্গালী সত্যিকার অর্থে বীরের জাতি। যুদ্ধকরে দেশ যেমন স্বাধীন করতে জানে তেমনি সংগ্রাম করে নীজেদের ভাগ্যও পরিবর্তন করে নিতে জানে।বিশ্বব্যাপি অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়া সত্তেও বাংলাদেশ তাঁর জিডিপি ধরে রেখেছে শুধু তাই নয় সামনে দিকে এগিয়েও নিয়ে যেতে পেরেছে।
ভারত বাংলাদেশকে গত ৪৫ বছর গিলে খায়নি---"বরঞ্চ পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে আঁতাত করে বাংলাদেশের যে সমস্ত অঞ্চল "ভারত ও বার্মাকে" ইংরেজেরা গিলে খেতে দিয়েছিল, সেই সমস্ত এলাকা বর্তমান সরকারের একক কৃতিত্বে তাঁদের পেট থেকে বের করে নিয়ে এসেছে।" বিশ্বব্রমান্ধ সৃষ্টির পর হতে অদ্য পয্যন্ত একটিমাত্র নজিরবিহীন উদাহরন সৃষ্টি হয়েছে শেখ হাসিনার হাতে--"বিন্দু পরিমান বারুদের কণা খরছ ব্যাতিরেকে দ্বি-গুন হজম করা বাংলাদেশ তিনি একক প্রচেষ্টায় তাঁদের পেট থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন"।
তথাকথিত মাছের কান্নাজীবি(বুদ্ধিজীবি), রাজনৈতিক দল(ফ্যাসিবাদিজোট) পাকিস্তানের শাষনকালের ২৩ বছর(ভারত বিদ্বেসি সামরিক সরকার) কখনই কেউ বলেনি আরেকটি বাংলাদেশ ভারত এবং বার্মার পেটে আছে---" আমরা ক্ষমতা পেলে সেই বাংলাদেশ উদ্ধার করে নিয়ে আসব।" দু:খ্যজনক হলেও সত্য তাঁদের কাছেই আমাদের শুনতে হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গনতন্ত্র, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সার্বভৌমত্বের ইতিহাস।
masterruhulamin@gmail.com
(রুহুল আমিন মজুমদার)
বাংলাদেশের কিছু কিছু বুদ্ধিজীবি বলতে শুনি---'ভারত তাঁর স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে।' আবার অনেকে বলতে শুনা যায় ভারত বাংলাদেশকে গিলে খাওয়ার জন্যে পাকিস্তান থেকে আলাদা করেছে।বিব্রতকর বিষয়টি হচ্ছে -মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা, আবার তাঁদের অবদানের স্বিকৃতি দিতে গেলে ঐ সমস্ত বুদ্ধিজীবিদের মাথায় ভাঁজ পড়া। ইদানিং তাঁরা নতুন একটি বাক্যালাপ বাজারে ছেড়ে দিয়েছে--"ভারত সাহায্য না করলেও মুক্তিযোদ্ধারা এককভাবে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে পারত।"
ঐ সমস্ত বুদ্ধিজীবিরা কি জানে না-- যে কোন ঘটনার অন্দরে বহু ঘটনা থাকে? সাধারনভাবে গনতান্ত্রিক আন্দোলন রাজপথে সংঘঠিত হতে দেখা যায়, যাহা দেশ বিদেশের জনগনের দৃষ্টিতে থাকে। কিন্তু অন্দর মহলে সরকার এবং আন্দোলনকারী শক্তির মধ্যে কিছু কিছু বুঝাপড়া হয়--তা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে?
কোন কোন ফ্যাসিবাদি রাজনৈতিক দল তাঁদের কায়েমী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে সম্পুর্ণ বিপরীত মুখী একাধিক দেশী বিদেশী শক্তির সঙ্গে আঁতাতে লিপ্ত হয়-ইহাও কি অস্বীকার করা সম্ভব? যেমন---''২০১৪/১৫ সালের বিগত চার দলীয় জোটের আন্দোলনে জঙ্গী সম্পৃত্ততা প্রমানীত সত্য হিসেবে দেরীতে হলেও সর্বমহলের বোধগম্যতায় আসেনি? মুসলিম বিশ্বের শত্রু ইসরাইলের 'মোসাদ' (গোয়েন্দা সংস্থা)এর সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের ঘটনাটি দিবালোকের মত সত্যি হয়ে বাংলাদেশ সহ ইসলামী বিশ্বকে বিব্রত করেনি?"।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় এতবড় একটি ঘটনা, যাহা বিশ্ব ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই, তাঁর নেপথ্যৈ কোন ঘটনা থাকবেনা তাও কি সম্ভব? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কি মিথ্যা? ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের কত বছর আগে আগড়তলা ষড়যন্ত্র পাকিস্তান সরকারের নজরে এসেছিল? বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতাই না চাইতেন- বাঙ্গালী তরুন সেনা অফিসার সমন্বয়ে অভিযুক্ত দলটিকে কেন আগড়তলা পাঠিয়েছিলেন? তাঁর আগে তাঁর বিশ্বস্ত সহচরকে কেন জহরলাল নেহেরুর নিকট পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিলেন--"বাংলাদেশ স্বাধীন হতে গেলে ভারতের মনোভাব কি হবে? কেমন সাহায্য সহযোগীতা পাওয়া যাবে?"
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঐ মহলটি দীর্ঘ ত্রিশবছরের অধিক সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি,গনতন্ত্রকে বিপথে নিয়ে গিয়েছিল একটিমাত্র সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে---"বাংলাদেশে কি আছে, পাকিস্তান থাকাই ভাল ছিল"।২০০১ ইং থেকে ২০০৬ ইং সাল ছিল তাঁদের জন্যে স্বর্ণযুগ--" বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পেরেছিল।"বাংলাদেশ প্রত্যেকটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতির সূচকে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে একনম্বর স্থানটি একনাগাড়ে পাঁছবার দখলে রাখতে পেরেছিল।" তাঁরা সম্পুর্ণ একটি হতাশাগ্রস্ত জাতি বিনির্মানে যা যা করার প্রয়োজন ছিল সকল শক্তি উজাড় করে সেই চেষ্টা করে গেছেন।অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা সফলও হয়েছেন।
সমাজে বলি আর ব্যাক্তিতে বলি-স্বার্থ ছাড়া কে কাকে সাহায্য করে? স্বার্থ অবশ্যই একটা ছিল।স্বার্থটি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগন যে আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়েছিল---"গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ"।ভারতের সংবিধানে দেশটির স্বাধীনতা প্রাপ্তির লগ্ন থেকে উল্লেখীত চারটি মুলনীতির মধ্যে তিনটিরই অনুসারী(কংগ্রেস দলীয়ভাবেও তাই)। সুতারাং আদর্শিক দিক থেকে সমমনা পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী--"সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যাক্তি"--কে না চায়?
ধর্মভিত্তিক দল বি, জি পি ভারতের সাধারন নির্বাচনে জয়ী হলে ঐ সমস্ত বুদ্ধিজীবি এবং তাঁদের অনুসরনকারি, জামায়াত বিএনপি--" সবাই মিলে সারা দেশে মিষ্টির দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিলেন কেন?"
এই কেন এর উত্তর হচ্ছে---"মৌদির বিজিপি দলীয়ভাবে যে আদর্শ ধারন করে, বাংলাদেশের চারদলীয় জোটও একই আদর্শ ধারন করে।সঙ্গত কারনে বিজিপি সংখ্যাগরিষ্ট আসনে এগিয়ে থাকাবস্থায় প্রতিবেশী আনন্দে আত্মহারা হওয়ারই কথা।সুখে দু:খ্যে সাহায্য তো পাওয়া যাবে।" বিজিপি ক্ষমতা পাওয়ার ছয়মাসের মধ্যে মিষ্টিমুখের হাসিতে কালিমা লাগার কারনটি হচ্ছে--"ভারতের শতবছরের গনতন্ত্র চর্চা। বিগ্নহীন চর্চার ফলে বর্তমানে ভারতের গনতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া। ফলে মৌদি দাদা ইচ্ছা করলেও প্রাতিষ্ঠানিক ধারার বাহিরে যেতে পারেন না। যেমন পারেননি বাবরি মসজিদের ক্ষেত্রে। বিজিপি 'বাবরী মসজীদ'কে ইস্যু করে আঞ্চলিক দল থেকে একলাফে সর্বভারতীয় দলে রুপান্তরীত হয়ে দুইবারের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করার পয্যায় থাকা সত্তেও বাবরী মসজিদের দিকে তাকালেন না কেন? বিরুধী দলে থাকলে বাবরি মসজিদ "হিন্দুদের মন্দির" ক্ষমতায় গেলে মসুলমানের মসজিদ?
আমরা জানি-- '৭০ এর দশকে বিশ্ব দুইভাগে বিভক্ত ছিল, একপক্ষে অধুনা সৌভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সামাজতান্ত্রিক বিশ্ব অন্যপক্ষে সাম্রাজ্যবাদি আমেরীকার নেতৃত্বে পুঁজিবাদি বিশ্ব। ভারত-রাশিয়া আন্তজাতিক সংস্থার যে কোন ইস্যুতে বরাবরই ছিল এক ও অভিন্ন মতাদর্শের বিশ্বস্ত সহচর।চীন, আমেরিকা যেহেতু পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্র ছিল সঙ্গত কারনে ভারত রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষেই থাকবে। অন্যান্ন আন্তজাতিক বিষয়গুলীর দিকে চোখ ফেরালেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
তাছাড়াও নিক্সন খুবই অ-পছন্দ করতেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। তাঁর সামনে তিনি বিব্রত বোধ করতেন, তাঁর ব্যক্তিত্বের সামনে নিক্সনের অস্বস্তি হতো। বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের কর্ণধার উন্নয়নকামী দেশ ভারতের কর্ণধারের সামনে নিস্প্রভ মনে হওয়া কোন অবস্থায় সহ্য হওয়ার কথা নয়।আমেরিকার জনগন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা সত্বেও নিক্সন এবং কিসিঞ্জার মিলে পাকিস্তানকে সাহায্য করে গেছেন।তাঁদের সাহায্য এমন পয্যায় পৌছানোর সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয় নস্যাৎ করার প্রয়োজনে বিশ্বযুদ্ধ অথবা পারমানবিক বোমা ব্যাবহার করার উদ্যোগিও ছিল। দুই পরাশক্তির আন্তজাতিক রাজনীতির আবর্তে 'নীজ দেশ এবং জনগনের উপর সমূহ বিপদ' মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সফলতার পয্যায় পৌছে দেয়ার কাজটি করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী 'ইন্দিরা গান্ধী'।
পরাশক্তির আন্তজাতিক রাজনীতি এবং "প্রভাব বলয় ধরে রাখা এবং সৃষ্টি করা"র স্নায়ু যুদ্ধের ফসল---"সহজে চীন, পাকিস্তান, আমেরিকা জোটবদ্ধ হয়েছিল।" পাকিস্তান এবং আমেরিকার সরকার পয্যায় বন্ধুত্ব ছিল খুবই উন্নত । চীন রাশিয়ার বিপরীতমূখি সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়ার কারনে আমেরিকার বন্ধু ছিল। আমেরিকা--'বন্ধু রাষ্ট্র চীন এবং পাকিস্তানকে বলেছিল ভারত আক্রমন করার জন্য।'আমেরিকার ধারনা ছিল-- "ভারত এবং রাশিয়ার মৈত্রী চুক্তি" অনুযায়ী ভারতকে রক্ষা করার জন্য রাশিয়া চীন আক্রমনে এগিয়ে আসবে। রাশিয়া কতৃক চীন আক্রান্ত হলে আমেরিকা রাশিয়া আক্রমন করবে। প্রয়োজনে আমেরিকা এক্ষেত্রে পারমানবিক বোমার ব্যবহার করতেও প্রস্তুত ছিল।বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে গেলেও নিক্সন কিসিঞ্জার পিছ পা হতেন না।( তথ্যসুত্র:--হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের অবমুক্ত দলিল। দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম, শ্রীনাথ রাঘবনের ১৯৭১ বই, প্রথমা প্রকাশিত হাসান ফেরদৌসের ১৯৭১: বন্ধুর মুখ শত্রুর ছায়া।)
এক্ষত্রে প্রনিধান যোগ্য আরো একটি উদাহরন দিতে পারি--- "গ্যারি জে ব্যাস তাঁর দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম বইয়ে বলেছেন, নিক্সন ও কিসিঞ্জার বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞে তাঁদের ভূমিকা আড়াল করতে সক্ষম হয়েছেন, আমেরিকানদের জন্য এটাই উৎকৃষ্ট সময় নিক্সন ও কিসিঞ্জারের সেই ভয়াবহ সময়ের ভূমিকাকে রুখে দাঁড়ানোর (কনফ্রন্ট)"।
ত্রি-দেশীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তান ভারত আক্রমন করলেও চীন অস্বীকৃতি জানায়। নিক্সন ও কিসিঞ্জারের সাধ ভেস্তে যায়।তাঁদের সেইদিনের ক্ষোভের বহ্নিশিখা ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ ইং স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিয়ে প্রশমন করতে হল।
ফিরে আসি মুলবক্তব্যে----পাকিস্তান কতৃক ভারত আক্রান্ত হওয়ার পর ভারতীয় সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর সহযোগে মিত্র বাহিনী গঠন করে দ্রুত ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়।পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তান কতৃক আক্রান্ত সীমান্তে ভারত একাই প্রতিরোধ করে। বরঞ্চ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হাজার হাজার জঙ্গি বিমান বোমাহামলার মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাদের পশ্চিম পাকিস্তানেই ব্যতিব্যাস্ত করে রাখে।
আমি ঐ সমস্ত বুদ্ধিজীবিদের জিজ্ঞাসা করতে চাই--"পাকিস্তান রক্ষা করার জন্যে স্বার্থ ছিল না আমেরিকার? আমেরিকার ইহুদী রাষ্ট্রের স্বার্থ পুরণ করতে আপনারা রাজী--ভারতের হিন্দুদের স্বার্থ দেখলে ভয় পান কেন? "ইহুদীরা নবী করিম (স:) এর দুশমন --হিন্দুরা বিধর্মী তবে নবীর দুশমন ছিল না"। নবীর দুশমনকে এত ভালবাসেন কেন আপনারা-----আপনারা না আস্তিক??
বাংলাদেশের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ, তাঁর বিজয়, স্বাধীনতায় ভারতের জনগন এবং তাঁর প্রধানমন্ত্রী ' মহাত্মা ইন্দিরা' গান্ধীর নাম আষ্টেপৃষ্ট্রে জড়িয়ে আছে।ইচ্ছা করেও কেউ মুছে দিতে পারবেনা, হয়ত প্রজম্মকে সাময়িক বিভ্রান্ত করা যাবে। সময়ে ইতিহাস আপন গতিতেই তাঁর অবদান স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশের পক্ষে দূতিয়ালি করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশ প্রশ্নে একটি সম্মানজনক সমাধান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য তিনি বিশ্বনেতাদের কাছে দেন দরবার করেছেন। বিশ্বনেতাদের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটাতে পারলেও মার্কিন প্রশাসনের মনোভাব পরিবর্তন করা যায়নি। ইন্দিরা ও মুজিবের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা অধ্যাপক হেনরি কিসিঞ্জারের বিন্দুমাত্র আগ্রহ কিংবা শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। ৪ ও ৫ নভেম্বর নিক্সন-ইন্দিরা বৈঠক হয়। নিক্সনের মনোভাব ছিল শীতল। দ্বিতীয় দিন সকালের বৈঠকের আগে ইন্দিরা গান্ধীকে প্রায় ৪৫ মিনিট বসিয়ে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য ইন্দিরা এই উপেক্ষা ও অপমান নীরবে হজম করেছিলেন।
৩ ডিসেম্বর খোলামেলাভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। ৬ ডিসেম্বর সোমবার লোকসভায় বিবৃতি দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী জানান---"বাংলাদেশকে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।" লোকসভায় ইন্ধীরা গান্ধী বলেন-- '‘উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ সরকারের বারবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, সতর্কতার সঙ্গে সবকিছু বিবেচনা করে ভারত "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ"কে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (গান্ধী, প্রাগুক্ত)।’' পরদিন মঙ্গলবার ৭ ডিসেম্বর "ভুটান বাংলা দেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি" দেয়।মানষিক রোগী বুদ্ধিজীবিরা এক্ষেত্রেও ইন্ধীরা গান্ধীর অবদানকে খাট করে দেখানোর জন্যে ভূটান আগে স্বীকৃতি দিয়েছে প্রচার করে যাচ্ছে।
১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ইন্দিরা গান্ধী সুইডেনের একটি টেলিভিশনের কর্মীদের সঙ্গে পুর্ব নির্ধারীত সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। এমন সময় জেনারেল স্যাম মানেকশ ডাকার সরওয়ার্দী উদ্যান থেকে তাঁকে টেলিফোনে জানান--"ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর"। ইন্দিরা গান্ধী দ্রুত চলে যান লোকসভায়---"অধিবেশন কক্ষে তখন উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা।" তৎক্ষনাৎ লিখিত বিবৃতিতে ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় দাঁড়িয়ে বলেন--"পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। ঢাকা এখন একটি স্বাধীন বাংলাদেশের দেশের মুক্ত রাজধানী।"
এ যুদ্ধে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হয়েছিলেন। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় একজন সাংবাদিক ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলেন। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী--" বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে আপনার দেশ অনেক মূল্য দিয়েছে। বিনিময়ে আপনার দেশ ভারত কি পেয়েছে?" এ প্রশ্নের জবাব ইন্দিরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসা র্যা লফ চ্যাপলিনের একটি কবিতার চার লাইন উদ্ধৃত করে বলেন---"মৃতের জন্য কেঁদো না, বরং জমে থাকা ভুলের জন্য কাঁদো।জগতের সব দুঃখ আর অন্যায় দেখেওকেন প্রতিবাদ করে না কেউ।" ইন্দিরা গান্ধী আরও বলেছিলেন---'‘ভারত কথা বলেছে কেবল বাংলাদেশের--মানুষের জন্য। ভারতের জন্য নয় শুধু--দুনিয়ার সব নির্যাতিত মানুষের জন্য।(গান্ধী, প্রাগুক্ত) ।’'
বাংলাদেশ বর্তমানে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার শাষনে মাত্র আটবছরে বিশ্বের বহু রাষ্ট্রকে সকল সুচকে পিছনে ফেলে সার্বিক ভাবে ত্রিশতম অর্থনৈতিক উন্নতির দেশে অবস্থান করে নিয়েছে।অনেক সামাজিক সূচকে বিশ্বে একনম্ভরে অবস্থান নিয়ে প্রমান করেতে পেরেছে বাঙ্গালী সত্যিকার অর্থে বীরের জাতি। যুদ্ধকরে দেশ যেমন স্বাধীন করতে জানে তেমনি সংগ্রাম করে নীজেদের ভাগ্যও পরিবর্তন করে নিতে জানে।বিশ্বব্যাপি অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়া সত্তেও বাংলাদেশ তাঁর জিডিপি ধরে রেখেছে শুধু তাই নয় সামনে দিকে এগিয়েও নিয়ে যেতে পেরেছে।
ভারত বাংলাদেশকে গত ৪৫ বছর গিলে খায়নি---"বরঞ্চ পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে আঁতাত করে বাংলাদেশের যে সমস্ত অঞ্চল "ভারত ও বার্মাকে" ইংরেজেরা গিলে খেতে দিয়েছিল, সেই সমস্ত এলাকা বর্তমান সরকারের একক কৃতিত্বে তাঁদের পেট থেকে বের করে নিয়ে এসেছে।" বিশ্বব্রমান্ধ সৃষ্টির পর হতে অদ্য পয্যন্ত একটিমাত্র নজিরবিহীন উদাহরন সৃষ্টি হয়েছে শেখ হাসিনার হাতে--"বিন্দু পরিমান বারুদের কণা খরছ ব্যাতিরেকে দ্বি-গুন হজম করা বাংলাদেশ তিনি একক প্রচেষ্টায় তাঁদের পেট থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন"।
তথাকথিত মাছের কান্নাজীবি(বুদ্ধিজীবি), রাজনৈতিক দল(ফ্যাসিবাদিজোট) পাকিস্তানের শাষনকালের ২৩ বছর(ভারত বিদ্বেসি সামরিক সরকার) কখনই কেউ বলেনি আরেকটি বাংলাদেশ ভারত এবং বার্মার পেটে আছে---" আমরা ক্ষমতা পেলে সেই বাংলাদেশ উদ্ধার করে নিয়ে আসব।" দু:খ্যজনক হলেও সত্য তাঁদের কাছেই আমাদের শুনতে হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গনতন্ত্র, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সার্বভৌমত্বের ইতিহাস।
masterruhulamin@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন