টুঙ্গী পাঁড়ার (খোকা) বঙ্গবন্ধু মুজিব--বাঙ্গালী জাতি, বাংলাদেশের জাতির পিতায় রুপান্তরের ইতিকথা-----

       টুঙ্গিপাড়ার (খোকা) বঙ্গবন্ধু মুজিব--বাঙ্গালী, বাংলাদেশের জাতির পিতায় রুপান্তরের ইতিকথা------
         (রুহুল আমিন মজুমদার)১৬/১২/২০১৬

      "শেখ মজিবুর রহমানে"র ৬৬ইং সালে প্রনীত ছয়দফা পুর্ববাংলার রাজনৈতিক দাবি মাত্র তিন বছরের মাথায় বাঙ্গালী জাতি সত্তায় "অস্তিত্বের দলিলে" রুপান্তরীত হয়ে একদফা একদাবি "স্বাধীনতার" দাবিতে রুপান্তর হয়। গানিতিক এই অগ্রগতির মহানায়ক একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর ররহমানের দুরদর্শীতা। আন্দোলন দমন করার কৌশল বা দমনপিড়নের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপি চাঞ্চল্যকর আগড়তলা  মামলায় শেখ মজিবুর রহমানকে অন্যতম অভিযুক্ত আসামী করে কারাগারে বন্দি করা হয়। শেখ মজিবুর রহমানকে সংক্ষীপ্ত বিচারের নামে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় পাকিস্তান সরকার। মূলত: শেখ মজিবুর রহমানকে বন্দি করে বিচার অনুষ্ঠান হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দেয় পাকিস্তানীদের জন্যে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার 'অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট' হয়ে দাঁড়ায় 'আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা।' যতবেশি শেখ মজিবুর রহমানকে দমন করার চেষ্টা করা হতে থাকে ততবেশী বাঙ্গালীর প্রানের নেতায় পরিণত হতে থাকেন তিনি।

        ছয়দফা আন্দোলন ক্রমান্বয়ে গনআন্দোলনের সীমা ছাড়িয়ে গনভ্যুত্থানের রুপান্তর হতে থাকে।আওয়ামী লীগের ছয়দফার সাথে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারদফা যুক্ত হয়ে ছাত্রজনতার গনআন্দোলনে রুপপরিগ্রহ করে আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। রাজপথে, গ্রামে গঞ্জে স্বত:স্ফুর্ত জনতার অন্তর থেকে স্লোগান উঠে--"জেলের তালা ভাঙ্গব, শেখ মজিবকে আনব।"তোমার আমার ঠিকানা--পদ্মা মেঘনা যমুনা"। "জয়বাংলা---জয়বঙ্গবন্ধু"। "জয়বাংলা বাংলার জয়" গনসঙ্গীতটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল জনতার স্বত:স্ফুর্ততায়। কাজী নজরুল ইসলামের অমর বিদ্রোহী রণসঙ্গীত---"কারার ঐ লৌহ কপাট--ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট" গানটি বাঙ্গালীর মননে শক্তিশালী টনিকের কাজ করে।গানটি বাঙ্গালী হৃদয়ে মারাণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে বেজে উঠে।পুর্ব বাংলা আন্দোলনের প্লাবনে স্থবির হয়ে পড়ে--আন্দোলনের তিব্রতার স্রোত পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক মহলেও আঁছড়ে পড়ে। তাঁদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হতে থাকে 'শেখ মজিব'কে মুক্তি দিতে--পুর্ব পাকিস্তানের ন্যায্যদাবী "রাজনৈতিক ভাবে মীমাংসার পক্ষে জনমত জোরালো হয়ে উঠে।গনআন্দোলন গন অভ্যুত্থানে রুপান্তরীত হলে বাধ্য হন আইয়ুব শাহী "শেখ মজিবুর রহমান"কে মুক্তি দিতে।

     '১৯৬৯ এর গনআন্দোলনের মুখে টিকতে না পেরে লৌহমানব খ্যাত আইয়ুব খাঁন রাতের আধাঁরে তাঁরই জাত ভাই আর এক সেনা কর্মকর্তা ইয়াহিয়া খাঁনের হাতে খমতা দিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে গেলেন। ইয়াহিয়া জনগনের দীর্ঘ আন্দোলন  সংগ্রামের ফসল "সাধারন নির্বাচনের" দাবী মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার ছিদ্র অন্বষনে ব্রতি হলেন। একজন এক ভোট নীতিতে সাধারন নির্বাচনের দাবী মেনে না নিয়ে তখনকার পরিস্থীতিতিতে উপায় ছিলনা। ততোদিনে পাকিস্তানের উভয় অংশে আন্দোলন এমন এক পয্যায় গিয়ে পৌঁছে গেছে সেখান থেকে কোন অবস্থায় নির্বাচনের আয়োজন ব্যাতিরেকে নিস্তেজ করা সম্ভব ছিলনা।

       গনভ্যুত্থানের মুখে  "শেখ মজিবুর রহমানের কারা মুক্তি ছাত্রজনতার জয় উপলক্ষে "ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ" সংবর্ধনার আয়োজন করে। আয়োজিত সংবর্ধনা ছাত্রসমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইলনা--"আপামর জনগনের স্বত:স্ফুর্ত অংশ গ্রহনে ছাত্রজনতার মিলনমেলায় পরিনত হয়ে গনসংবর্নায় পরিণত হয়।উক্ত গনসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ ছাত্রজনতার উপস্থীতিতে স্বত:স্ফুর্ত এবং মহুমহু জয়ধ্বনিতে মুখরীত সংবর্ধনাস্থলে সকলের সমম্বিত সমর্থনে সদ্য কারামুক্ত জননেতা "শেখ মজিবুর রহমান''কে "বঙ্গবন্ধু" উপাদিতে ভুষিত করেন ছাত্র জনতা।"

       "এবার শুরু হয় নতুন আঙ্গিকে জনমতকে বিভ্রান্ত করার নতুন নতুন ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র পাকিস্তানের সীমানা অতিক্রম করে আন্তজাতিকতার রুপ পরিগ্রহ করে। উক্ত ষড়যন্ত্রে যুক্ত হতে থাকে একে একে আমেরীকা, চীন, বৃটেন সহ ইয়াহীয়া-ভুট্রোর গোপন আঁতাত বা প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। পুর্বাঞ্চলের জনমতকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া গনদাবী মেনে নেয়ার অভিনয়ের অংশ হিসেবে শর্তযুক্ত নির্বাচন দেয়ার ঘোষনা দিলেন।"

    প্রেসিডেন্ট ইয়াহীয়া অধ্যাদেশ জারী করে বলেন:--"প্রেসিডেন্ট যদি মনে করেন নির্বাচিত জনপ্রতিনীধি বা সংসদ পাকিস্তানের অখন্ডতার জন্য হুমকি হতে পারে--'গঠিত সংসদ তিনি একক ক্ষমতাবলে ভেঙ্গে দিতে পারবেন(ঘোষিত পি,ও, অধ্যাদেশ)। উভয় পাকিস্তানের বিদ্যমান রাজনৈতিক দল ও ব্যাক্তিবর্গ এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য  জোর দাবি জানাতে থাকেন। অনেকেই শর্তযুক্ত নির্বাচন অপমানজনক, একদেশদর্শী, ষড়যন্ত্রের নির্বাচন মন্তব্য করে নির্বাচন বয়কট করার হুমকি দিয়ে উক্ত অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।

       পাকিস্তানে সংখ্যাগরীষ্ট জনগনের নেতার পরিচিতি যেহেতু নির্দিষ্ট ছিলনা ;সবাই সবাইকে মনে করতেন পুর্ববাংলার নিয়ন্তা--" অথছ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কারো কোন বৈধ স্বীকৃতি ছিলনা।"বিদ্যমান দলগুলীর মধ্যে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি করে রাখার তদ্রুপ একটি চক্রান্ত ভিতরে ভিতরে সব সময়েই লক্ষ করা গেছে"। আইয়ুব খাঁন কতৃক বঙ্গবন্ধুকেও বহু লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে অংশীদার করার চক্রান্ত একাধিকবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। পুর্বঞ্চলের ন্যায্য দাবী আদায়ে কেহ কাউকে ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। জনগনের একক নেতা বা জনগনের পক্ষে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন বা নির্বাচিত নেতার উত্থান বঙ্গবন্ধু প্রচন্ডভাবে অনুভব করেন।

     যেহেতু জাতীয় সংসদের কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি; সবাই সবাইকে জনগনের একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে ভাবনা ফ্যাসানে পরিণত হয়েছিল। মুলত তাঁদের কারোই সংসদ সদস্য হওয়ার মত জনসমর্থন ছিলনা।যেহেতু তাঁর আগে কোন সাধারন নির্বাচন অনুষ্টিত হয়ে সংখ্যা গরিষ্ট দলের নেতা নির্বাচিত হয়নি ; তাঁদের অনৈতিক ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়ার নৈতিক কোন শক্তিও বঙ্গবন্ধুর ছিলনা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নির্বাচিত প্রতিনীধি ছাড়া আন্তজাতিক ভাবে গ্রহনযোগ্য হবেনা। 'বঙ্গবন্ধুর' যে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে "বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন" আখ্যা দিয়ে দমনের সামরিক ষ্টিমরোলার চালিয়ে নস্যাৎ করে দেবে; আন্দোলনের ব্যার্থতা পুর্ববাংলা যুগ যুগান্তর শোষনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের ইস্যু হবে।

        বঙ্গবন্ধু জানতেন নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্টতা পেলেও পশ্চিমারা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা দিবেনা। ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পরিনতি কি হতে পারে সুদুরপ্রসারী চিন্তাবীদ ততোদিনে পুর্ব বাংলার জনগনের  আঁতের খবর বুঝতে বেগ পেতে হয়নি কিন্তু তদ্রুপ পশ্চিমের রাজনীতিবীদদের চিন্তাচেতনায় আসেনি। সদ্য গনভ্যুত্থানে কারামুক্তির রেস বিদ্যমান থাকাবস্থায় জনমতের পাল্লা যে কোন অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে "বঙ্গবন্ধু" দিকে ঝুঁকে থাকবে--"সংখ্যা গরীষ্ট আসনে আওয়ামীলীগ জিতবে"। গনভ্যুত্থানের ফলে এমনিতেই পুর্বঞ্চলের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থীতিতে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র ভাগ্য নির্ধারনে সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক। কিন্তু আগেই বলেছি---"নির্বাচনী ম্যান্ডেট ছাড়া এই জনসমর্থনের কোন মুল্য ছিল না ; আন্তজাতিক ভাবেও গ্রহনযোগ্যতা ছিলনা"।

      এদিকে অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে নির্বাচন না করে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর উপর চাপ দিচ্ছিল কোন কোন মহল। এই চাপ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তর থেকে যেমন ছিল তেমনি রাজনৈতিক মিত্র অন্য বিরুদী দল গুলীর পক্ষ হতেও ছিল। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাচেতনায় তখন একমাত্র নির্বাচন। 'পুর্ববাংলার একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারি হয়ে তাঁর মনের অভ্যন্তরের সুপ্ত বাসনা "স্বাধীনতার স্বপ্ন" বাস্তবায়নের ক্ষনকাল' সময়ের প্রহর গুনছে। তিনি তাঁর দিব্যচোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন। বিদেশি রাষ্ট্র সমুহের সমর্থন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য যাহা একান্তই প্রয়োজন ছিল।

     ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু জীবিত থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘনিষ্ট এক বন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন ভারতের মনোভাব জানতে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার উদ্যোগ নিলে ভারতের ভুমিকা কি হবে। ভারত বাঙ্গালীর স্বাধীকারের লড়াইয়ে সাহায্য সহযোগীতা করতে পারবেন কি না--জানার জন্যে।" বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ নেহেরু তাঁর দুতকে বলেন--"মুজিবকে বলবে জনমত সৃষ্টি করার জন্যে;জনমতই মুজিবকে সাহায্য করবে, নেহেরুর প্রয়োজন হবেনা।"বিজ্ঞ রাজনীতিবীদ "শেখমুজিব" ভারতের 'প্রধানমন্ত্রীর' সংক্ষিপ্ত উপদেশের মর্মাথ্য বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি।

      নির্বাচনকে আরো কঠিন শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করলেও নির্বাচন করা ঐ মহুর্তে জরুরি মনে করেন "বঙ্গবন্ধু"। তিনি সকল মহলের চাপকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার ঘোষনা দিয়ে মাঠে নেমে গেলেন। অভিজ্ঞ রাজনীতিক মাওলানা ভাসানি সহ আরো কিছু চীন সমর্থিত দল নির্বাচন বয়কট করে শ্লোগান দিতে থাকেন--"ভোটের বাক্সে লাথী মার--পুর্ববাংলা স্বাধীন কর।" অন্য একপক্ষ চৈনিক কমিনিষ্ট নামে খ্যাত--"তাঁরা প্রথমাবস্থা থেকেই বলে আসছিলেন বাঙ্গালীর গনতান্ত্রিক আন্দোলনকে " দুই কুকুরের লড়াই"।

 "বঙ্গবন্ধু" উল্লেখিত উগ্র স্লোগানের মধ্যে বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পেতে সামান্যতম কষ্ট হয়নি। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে থেকে এই ধরনের বিচ্ছিন্নতার শ্লোগান দেয়া সত্বেও ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোন রুপ আইনানূগ ব্যাবস্থা গ্রহন না করে বরঞ্চ রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচ্ছিল।এই থেকেই বুঝতে অসুবিধা হয়নি ভোট বর্জন করার কি কারন থাকতে পারে।

 "বঙ্গবন্ধু" চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহনের ঘোষনা দিয়ে ৬দফা দাবীর সমর্থনে গনরায় চেয়ে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে সফর শুরু করেন।ভোটের ঝড়ো হাওয়ার ঘোরপাকে সকল ষড়যন্ত্র উবে গেল। পুর্ব পাকিস্তানে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জীতে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ট আসন লাভ করে একমাত্র নেতা হিসেবে দেশ বিদেশের স্বীকৃতি নিয়ে নিলেন।ষড়যন্ত্রকারিদের হাতে পুর্ব পাকিস্তান বিষয়ে আর কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনগত ভিত্তি রইলোনা।

 সংখ্যাগরিষ্ট আসনের অধিকারি "বঙ্গবন্ধুর" নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে এইবার শুরু হয় আর এক নতুন নাটক। শুরু হল প্রাসাদ ষড়যন্ত্র,খমতা হস্তন্তর না করার ফন্দিফিকির, অযথা গড়িমসি। সংসদের অধিবেশন ডেকেও তা স্থগিত করে দেন ইয়াহিয়া। ষড়যন্ত্রের মঞ্চে আভিভূত হন জনাব 'জুলফিকার আলী  ভুট্রো'--"তিনি কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর হাতে খমতা দিতে রাজী নন"।খমতার অংশীদারীত্ব দাবী করে বসেন।খমতা যাতে বঙ্গবন্ধুর হাতে না আসে তাঁর জন্য ঘোষিত অর্ডিনেন্স এর খমতা প্রয়োগ করার জন্য ভূট্রো সহ অনেকে  "প্রেসিডেন্ট"কে প্ররোচিত করতে থাকেন।

 এমনি অবস্থায় ইয়াহিয়া "ঘোষিত সংসদ অধিবেশন" স্থগিত করে  দেন। স্থগিত করার ঘোষনা প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পুর্ববাংলা ফুঁসে উঠে। কিছুতেই জনগন এই ঘোষনা মেনে নিতে রাজী নয়।জনাব ভূট্রোর পরামর্শে ইয়াহিয়া আলোচনার আহব্বান জানান। কৌশলি "ভুট্রো--ইয়াহিয়া" আলোচনার নামে সময়ক্ষেপন করে পুর্বপাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর বুঝতে অসুবিধা হয়নি, পশ্চিম পাকিস্তানীরা গায়ের জোরে আন্দোলন দমন করার কৌশল অবলম্বন করেছে।

বঙ্গবন্ধু সব দিক নেড়েচেড়ে দেখে নিলেন ঠিকঠাক আছে কিনা। জোয়ারের মত বত্রিশ নম্ভরের বাড়িতে মানুষের স্রোত আসতে শুরু করে। সারাদেশ "মিছিলের দেশে" পরিনত হতে থাকে। নগর বন্দর, গ্রামগঞ্জ,সব বয়সের মানুষ মিছিলে সামিল হতে থাকে। জনতা গগনবিদারি শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে।স্বায়ত্ব শাষনের আন্দোলন নিমিষেই রুপান্তরীত হতে থাকে স্বাধীনতার সংগ্রামে। পুর্ববাংলার অফিস আদালত--"বঙ্গবন্ধু নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পুর্ববাংলার জনগন।অঘোষিত সরকার প্রধান 'বঙ্গবন্ধু'র আঙ্গুলির হেলনে দিকের নিশানা খুঁজে নিচ্ছেন পুর্ব বাংলার সর্বস্তরের প্রসাশন।

 উত্তাল পুর্ববাংলার সব স্রোত তখন বঙ্গবন্ধুর "বত্রিশ নম্বর" বাড়িতে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের উত্তাল বাংলার জনগনের জোয়ারের  স্রোতের ঢেউ সমবেত হতে থাকে রেসকোর্স ময়দানে।বাংলার অবিসংবধিত নেতা আজ দিক নির্দেশনা মুলক ভাষন দিবেন।দেশী বিদেশী সকল শক্তি অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বাংলার নেতা এই জটিল পরিস্থিতিতে কি বলেন--"শুনার অপেক্ষায়। অবশেষ এলেন নেতা, ধীর স্থীর গম্ভীর দৃডপায়ে।জনতা বাঁশের লাঠি আর বাদ্যযন্ত্রের আমোঘ সুরমুর্চনায় নেতাকে সম্ভাষন জানাতে থাকে।নেতা দুই হাত উদ্ধে তুলে বিশাল বুকের সব ভালবাসা বিলিয়ে দিলেন জনতার উদ্দেশ্যে।সেই এক অন্যরকম দৃশ্যের অবতারনা করলো নিমিশে সরওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্র।

  ভাবগম্ভীর দরাজ গলায় বঙ্গবন্ধু ভাষন দিলেন জাতির উদ্দেশ্যে। এইতো ভাষন নয়, স্বল্প সময়ে পাঠ করলেন বিশাল এক মহাকাব্য। অতুলনীয় ভাষার মাধুর্য্য, নিচ্ছিদ্র গাঁথুনী, বজ্রকঠিন আওয়াজ, কঠোর হুংকারে ছন্দের মিলন, দৃডতায় ব্যঘ্রতার দৃষ্টি, শিকারের ক্ষিপ্রতা, শফথের অন্যন্ন,অসাধারন, অমলিন মহাকাব্যিক ভাষন। এমনতর ভাষন বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আর কখনও কোন স্থানে--কোন সময়ে দিয়েছিলেন--"তথ্য আজও পাওয়া যায়না।"

বাংলাদেশের কোন অঞ্চলের ভাষায় তিনি সর্বগ্রায্য, সর্বজনবোধ্য ভাষনটি দিয়েছেন গভেষনা করেও খুঁজে পাবেনা। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি চয়ন, প্রতিটি বাক্য বিশ্নেষনে পাওয়া যাবে--"মহাকাব্যের অমোঘ মহাকবির অমরকাব্যের শব্দগুচ্ছের অবিচ্ছিন্ন মিলন, শব্দরাজির ফাঁকশুন্য গাঁথুনী'। যুগযুগান্তর ভাষাবীদ, পন্ডিত,ঐতিহাসিক, চিন্তাবীদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের গভেষনায়ও সঠিক মর্মাথ্য অনুধাবন করা যায় কিনা জানিনা। ৭ই মার্চের ভাষনের তাৎপয্য বিশ্বব্রম্মান্ড যতদিন আলোবিকরন করবে ততদিন অমলিন থাকবে।

 সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্নতাবাদি শব্দগুচ্ছের সমন্বয়ে প্রনিত বাক্যাবলী অনায়াসে গনতান্ত্রিক ভাষায় রুপান্তর করে দৃডচিত্তে মুল আক্ষাংকার ঘোষনা দিলেন----"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম--এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম"। তিনি আরো বললেন--"তোমাদের যার যা কিছু আছে--তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো। আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি--তোমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।" "এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ"।

নেতার নেতৃত্বের অন্যতম বৈশিষ্টের অন্যন্ন উদাহরনের সাক্ষর রাখতেও "বঙ্গবন্ধু"। তিনি শর্ত সাপেক্ষে আলোচনার দরজাও খোলা রাখলেন।ততদিনে দেশের বিভিন্নস্থানে অগনিত মানুষ পাকিস্তানী সেনাদের প্রতিরোধ যুদ্ধে,  সভ্যসমাজের রীতিনীতি লংগন করে, সেনাবাহিনীর অস্ত্রের ব্যবহারে, নির্বিচারে গুলিবর্ষনেদের অগনীত মানুষের প্রানহানী ঘটে গেছে। ইয়াহীয়ার আলোচনার আহব্বান রক্ষন বা প্রত্যাক্ষান না করে শব্দ ব্যবহারের কারুকায্যে 'বঙ্গবন্ধু' বলেন--"রক্তের দাগ শুকায় নাই-- শহীদের রক্তের উপর পা দিয়ে আমি আলোচনায় বসতে পারিনা"। তিনি শর্ত দিয়ে বলেন---"যাদের হত্যা করা হয়েছে তাঁদের তদন্ত পুর্বক ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে আগে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, তারপর বিবেচনা করে দেখব, আলোচনায় বসতে পারি কি-না।"

২০১৫ ইং সালে জাতিসংঘ যুগশ্রেষ্ঠ ভাষন হিসেবে ৭ই মার্চের ভাষনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।৭ই মার্চের ভাষনে "বঙ্গবন্ধু" প্রচ্ছন্ন স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা দিলেও রাজনৈতিক ভাষা ব্যবহারে কারুকায্যের আবরনের  কারনে বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ আনা সম্ভব হয়নি। তিনি কি বলেননি ৭ই মার্চ--প্রতিরোধ, বিহারিদের রক্ষা, মুক্তির নির্দেশনা, স্বাধীনতার অর্জনের করনীয়, অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ--কি কথাটি বলেননি বঙ্গবন্ধু!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দৃশ্যত একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু হলেও এর প্রেক্ষাপট রচিত হয় '৪৭ইং সালের বাঙালীর উপলব্দি থেকে।মুলত তখন থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘদিনের--'সামাজিক, রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই আন্দোলনের পুরোভাগে কখনও শারিরীক উপস্থীতির মাধ্যমে কখনও শারিরীক অনুপস্থীতি দ্বিগুনের চেয়েও অধিক শক্তিতে রুপান্তরীত হয়ে অবচেতন মনের অভ্যন্তরে--"বিবেচিত স্বপ্নিল উপস্থীতি নিশ্চিত করে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই-তো--বন্ধুরাষ্ট্র সমুহের সরকার প্রধানদের বক্তব্যে তাঁকে সাড়ে সাত কোটি মানুষের "অবিসংবাদিত নেতার" সম্মানে ভুষিত সম্বোধন করে জাতিসংঘ সহ আন্তজাতিক সংস্থায় বক্তব্য দিতেন।
 মুলত ৭০ এর জাতীয় নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে ও নির্দেশে, সার্বিক তত্বাবধানে তখনকার পুর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ চলছিল। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের কারনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বিশ্বজনমতের সমর্থন লাভ সহজতর হয়েছিল।
     মুক্তিযুদ্ধের সময় যদিও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছিল। যুদ্ধকালে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার 'মুজিব নগর সরকার' নামেই পরিচিত ছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার জন্য পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগকে এককভাবে দায়ী করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করবার পথ সুগম করার অপরাধে পাকিস্তানী সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মৃত্যুদণ্ড দিতে বদ্ধপরিকর হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বজনমতের ভয়ে সেই দণ্ড কার্যকর করতে পারেনি।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই শেখ মুজিবকেই মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল।
   
   ব বাংলাদেশ এক ঘোষণায় স্বাধীন হয়ে গেছে যারা ভাবেন, তারা আসলে এদেশকেই মেনে নিতে পারেন না বা ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান করে পরাজিত শক্তির পক্ষাবলম্বন করেন। বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তিনি আমাদের বাঙালি জাতিসত্তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

      স্বাধীনতার প্রক্রিয়া হঠাৎ করে শুরু হয়নি। বাঙালির দীর্ঘদিনের আত্মানুসন্ধান, দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সংগ্রামের অমোঘ পরিণতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথমে 'পূর্ববাংলা' এবং পরে 'পূর্বপাকিস্তান' নাম দিয়েছিল শাষকেরা। ১৯৬৯ ইং সালের ৫ই ডিসেম্বর 'বাংলাদেশ' সেই ভুখন্ডকেই ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই জাঁদরেল পাকিস্তানী সামরিক শাসক গোষ্ঠীর ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু "বাংলাদেশ" নামটি বেচে নিয়েছিলেন। প্রত্যেক সভায় বাংলাদেশের নাম বলেই বক্তৃতা দিতেন।
   
      বঙ্গবন্ধুই এদেশের রাজনীতিকে মধ্যযুগীয় ধর্মীয় সামপ্রদায়িক আবর্ত থেকে উদ্ধার করে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ ধারায় প্রবাহিত করার উদ্যোগতা।অন্য আরো অনেকেই ছিলেন, শেখ মুজিবের অবদান ছিল অন্যন্ন। বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত ইচ্ছার ধারক বাহক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে জাতীয় চেতনার উন্মেষের ফলে আমাদের ছোট বেলার সময়কালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটেছে, সেই জাতীয় চেতনার উন্মেষের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়।

   পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী "বঙ্গবন্ধু" প্রতিই বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেছিলেন। তাকেই বার বার জেলে পুরেছেন, তাঁরজন্যই আগরতলা মামলা সাজিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলেন।২৫ শে মার্চ তাঁকেই বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়েছিলেন।৭ই মার্চের স্বাধিনতার দিক নির্দেশনামুলক ভাষন শুধু বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন।লাখো জনতা সে দিন বঙ্গবন্ধু কি বলেন সেই দিকেই মনোনিবেশ রেখেছিলেন।তিনিই বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাঙ্গালীরা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর উপর নির্য্যাতনের প্রতিবাদেই ফুঁসে উঠেছিল।

পরিশেষে বলতে পারি---"২৩ বছরের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের পরিনতি আমাদের প্রিয় এই স্বাধীনতা।এই সমস্ত আন্দোলনের সম্মুখে যিনি ছিলেন তিনি আমাদের জাতির জনক, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।"
   ruhulaminmujumder27@gmail.com




মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন