গনতন্ত্রের বিতর্ক এবং বাংলা দেশ। ==========================    বর্তমান সময়ে দেশে অনেকেই গনতন্ত্র নিয়ে আশংকা প্রকাশ করতে দেখা যায়।কেউ মনে করে দেশে গনতন্ত্র নেই,কেউ মনে করে গনতন্ত্রের মধ্যেই আছি।সরকারের বিরুধিতা কারিরা সকলেই একবাক্যে বলেন,কোন গনতন্ত্রই নেই,যাহা আছে তা স্বৈরাচারের নামান্তর।সরকারের সমর্থকদের ধারনা প্রকৃত গনতন্ত্রের স্বাধ জনগন এই সরকারের সম্যে উপভোগ করছে।গনতন্ত্রের বিতর্ক দেশটির উষালগ্ন তেকে বিরাজমান।এই বিতর্ক সমাপ্তির লক্ষন আদৌ কোন সময়ে হবে কিনা তা ভবিতব্যই জানে।বিরুধিদলের যাহা মন চায় তাহা করার জন্য না দিলেই বলা হয় গনতন্ত্র নেই।আসলে গনতন্ত্র কি তাই?গনতন্ত্রের কি সীমারেখা নেই?সীমারেখা নেই এমন কোন তত্ব কি বেশী দিন স্থায়ী হয়। পৃথিবীতে আবিস্কৃত,প্রকৃতির সৃষ্ট,এমন কিছু কি আছে, যাহার প্রান্ত সীমা নেই।গনতন্ত্রের ও প্রান্তসীমা আছে,প্রচলিত আইনের দ্বারা উক্ত প্রান্ত সীমা নির্ধারন করা সংবিধানেই পরিলক্ষন করা যায়। গনতন্ত্র কি?গনতন্ত্র বলতে আমরা কি বুঝি? বাংলাদেশে কি গনতন্ত্র আছে? গনতন্ত্রের সংজ্ঞাটা কি? ইত্যকার নানাহ প্রশ্ন আমাদের মনে নিত্যদোলা দিয়ে যায়।প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক।   আমি যতটুকু মনে করি,এবং যাহা স্বিকৃত হিসেবে প্রচলিত,বাকস্বাধিনতা,সংগঠন করার অধিকার,সভাসমাবেশ করার অধিকার,সবোপরি ভোটাধিকারকেই সাধারন অথে আমরা গনতন্ত্র হিসাবে ধরে নিতে পারি।     বিস্তারীত আলোচনায় যাওয়ার আগে আমি গনতন্ত্রের কেন্দ্রিকতা সম্পকে সামান্য আলোকপাত করতে চাই।গন তান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা হচ্ছে মূলতঃ গনতন্ত্রের সুফল পাওয়ার একটা কায্যকর উপায়। যেমন দশজন লোক যে কোন একটি বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।দশ জন সেখানে একমত নাও হতে পারে।ছয় জন একপক্ষে মত ব্যক্ত করলে,চারজন দ্বিমত পোষন করলো।এখানে ছয়জনের মতকেই গ্রহন করতে হবে।আমরা ইহাকে বলি গনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বা অভিমত।বাকি চার জন নিদ্ধিদায় ছয় জনের মতের সাথে একমত হওয়াকেই গনতান্ত্রিক কেদ্রিকতা বলে।অন্যভাবে সিদ্ধান্ত মেনে নেয়াকে গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা বলে।    বতমান বিশ্বে গনতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচা লনার একমাত্র স্বিকৃত উপায়।যেসমস্ত দেশকে আমরা গনতন্ত্রের আবাসভুমি বা গনতন্ত্রের সুতিকাগার বা গনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে চিনি ও জানি তম্মধ্যে ভারত ও বৃটেনের নাম সবার আগে আসে-সবার মুখে।সেই সমস্ত দেশের গনতান্ত্রিক সিষ্টেম গুলির দিকে আমরা যদি চোখ ফিরাই দেখতে পাই,নিম্নে থেকে উদ্ধস্তর পয্যন্ত সেখানে নিবাচনি ব্যবস্থা সুদৃড়। সময়ে নিবাচন হচ্ছে, ক্ষমতার রদবদল হচ্ছে।ব্যত্যায় ঘটে তবে তা কদাচিত।   এবার গনতন্ত্রের বধ্যভুমির সাথে আমা দের বাংলাদেশের মিল অমিল খুজে দেখি?বাংলাদেশেও নিম্নে স্থানীয় ইউনি য়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উদ্ধে সংসদ নিবাচন পয্যন্ত যথারীতি নিবাচনী ব্যবস্থা বহাল আছে।নিয়ম অনুযায়ী নিদিষ্ট সম য়ান্তে নিবাচন যথারীতি সকল নিয়ম অনুসরন করে অনুষ্টিত হচ্ছে।আর এক ধাপ এগিয়ে বলা যায়,পাড়ার ক্লাব থেকে শুরু করে হাটবাজার কমিটির নিবাচন ,টেক্সি টেম্পু থেকে সবোচ্ছ বিচারালয় পয্যন্ত একটি ক্ষেত্র ও পাওয়া যাবে না    যেখানে নিবাচনী ব্যবস্থা সচল নেই।  তাহলে গনতন্ত্র নেই এ কথাটা যারা বলেন তারা কি আদৌ সত্য বলেন? গন তন্ত্র কি আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া?    গনতন্ত্র এমন একটি সিষ্টেম,যে সিষ্টেম প্রতিনিয়ত চচা করার বিষয়।ভারত এবং গ্রেটবৃটেন গনতন্ত্র কায়েম হয়ে গেছে এই কথাটা ঘুনাক্ষরেও বলে না।তারাও বলে গনতন্ত্রের চচায় নিজেদের নিবিষ্টরেখেছে। গনতন্ত্র মু্লত বহাল করার কোন বিষয় নয়।উহা একান্তই চচার বিষয়।   গনতন্ত্রকে সুচারু রুপে প্রতি পালন করতে হলে দেশের অভ্যন্তরে যে সমস্ত গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান আছে, সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অগ্রনি ভুমিকা পালন একটি জরুরী বিষয় বটে।একতরফা গনতান্ত্রিক চচা বা গনতন্ত্রের প্রতিপালন সম্ভব হয় না।  যেমন আমাদের দেশের প্রধান দু'টি দল যদি মিলিত ভাবে গনতন্ত্রের ধারাবা হিকতায় সামিল না হয় তাহলে একটি  দলের পক্ষে শতভাগ গনতান্ত্রিক ভাবে , গনতন্ত্রের সংজ্ঞা যথারীতি অনুসরন করা কোন মতেই সম্ভব নয়।    পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বৃহৎ দু'টি দলের মধ্যে একটি দল সামরিক চাউনিতে জম্মের কারনে গনতন্ত্রের চচা দলের মধ্যে ওনেই, জাতীয় রাজনীতিতেও গনতান্ত্রিক চচার শুন্যতার সৃষ্টি করে রেখেছেন।মুলত দলটির মধ্যে গনতন্ত্র চচার জন্য নিয়মা তান্ত্রিক রাজনীতির চচা করার যে অবশ্যিকতা বা পুর্বশর্ত তাও তারা বিশ্বাস করে কিনা সন্দেহ্।     যদি দলটি নিয়মাতান্ত্রিক রাজনীতির চচাই করতো তাহলে লাগাতার সন্ত্রাস, নৈরাজ্য,সম্পদহানি,মানুষ জীবন্ত দগ্ধ করার মত কোন রাজনৈতিক কমসুচি দিতনা।গনতন্ত্র লালন কারী কোন দল সন্ত্রাস নৈরাজ্যে বিশ্বাস করে না করতে পারে না।    প্রশ্ন আসতে পারে বতমান সরকারের অধিকাংশ সদস্য বিনা ভোটে নিবাচিত। কি ভাবে গনতন্ত্র রক্ষিত হলো?এখানে একটা বিষয় আমাদের পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।যথারীতি সকল নিয়ম প্রতিপালন করে ভোট অনুষ্ঠিত হলো কিনা? প্রচলিত সকল নিয়ম মেনে যদি নিবাচনের প্রক্রিয়ায় কোন প্রতিপক্ষ না থাকে সংবিধান অনুযায়ি ওই ব্যক্তি নিবাচিত বলে গন্য হবে।ইহার ব্যতিক্রম যদি হয় তাহলে, ওই ব্যাক্তির নাগরীক অধিকার ক্ষুন্ন হবে।সুতারাং এই খানে আইনের কোন ব্যত্যায় ঘটানোর সুযোগ সংবিধান রাষ্ট্র কে দেয়নি।    বিশ দলীয় জোট নিবাচনে কেন এলনা তা নিয়ে ভিন্নভাবে আলোচনা হতে পারে।এলেই বা ফল কি হত তাও আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আমার আলোচ্য বিষয় হলো গনতন্ত্র বাংলাদেশে আছে কি নেই সেই বিষয়।আমার উপসংহার হচ্ছে, বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় বাংলা দেশের বতমান গনতন্ত্রের চর্চা অনুসরন যোগ্য।তৃতীয় বিশ্বের যে কোন দেশের অনুকরনীয় হতে পারে বাংলাদেশ।   জয়বাংলা      জয়বংগবন্ধু জয়তু দেশনেত্রী শেখহাসিনা। জয় হোক গনতন্ত্রের।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন