যারা বলে আওয়ামী লীগই বঙ্গবন্ধুকে সার্বজনীন হতে দেয়নি তাঁরাই বর্ণচোরা। ========================= আগষ্ট মাস প্রায় শেষ পয্যায়।আর মাত্র কয় দিন পরই চল্লিশ দিনের জাতিয় শোক দিবসে কর্মসুচি ইতি ঘটবে।এবারের শোক দিবস বিভিন্ন দিক থেকে ইতি বাচক কিছু দিকের যেমন প্রস্ফুটিত হয়েছে আবার কিছু নেতিবাচক বাড়াবাড়ি ও লক্ষ করা গেছে।সর্বিক বিবেচনায় আমি মনে করি ইতিবাচক ঘটনাবলীর চাপায় নেতিবাচক ঘটনাবলী জনসম্মুখ থেকে হারিয়ে গেছে।এই বছরের শোক দিবসের সব ইতিবাচক-নেতিবাচক ঘটনার মুল্যায়ন পুর্বক আগামী বছরের শোক দিবসের কর্মসুচি প্রনয়ন করা নৈতিক ভাবেই সরকারের উচিৎ হবে বলে আমি মনে করি। আজ স্বাধীনতার ঘোষনা নিয়ে অনেকে বিতর্ক করার চেষ্টা করেন।৭ই মার্চের ভাষন তারা ভাল করে না শুনে বিতর্ক করার চেষ্টা করেন।মেজর জিয়া নিজেই যেখানে তাঁর বিচিত্রায় দেয়া নিবন্ধে লিখেছেন,বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনেই বাঙ্গালী অফিসারেরা স্বাধীনতার গ্রীন সিগনাল পেয়ে গিয়েছিলাম।পাকিস্তান পুর্ববাংলা আক্রমন করে ন্যায্য দাবী ধুলিসাৎ করার জন্য আলোচনার নামে সময় ক্ষেপন করছেন তা কি বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেননি?না পারলে তিনি কেন বলবেন,"তোমাদের যা কিছু আছে,তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে"।তিনি থাকবেন না,বা কারাগারে দেয়া হবে ,তাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন,তাইতো সেই দিনই বলে দিলেন,"আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি।"তাঁর পর ও জ্ঞান পাপিরা বিতর্কে লিপ্ত হতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করেন না।তাঁরাই আবার অনেকে এখন দেখা যায় বঙ্গবন্ধু পয্যন্ত বলা শুরু করেছে।আশা করা যায় আগামী বছরের মধ্যে জাতির জনক ও বলা শুরু করতে পারে। দেশকে, দেশের মানুষকে যতখানি ভালোবাসা যায়, তার চেয়েও হয়তো বেশিই ভালোবেসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ, জাতি তার প্রতিদান দিল নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে! বাঙালি জাতির তো বটেই গোটা বিশ্বের ইতিহাসে এর চেয়ে জঘন্য, কলঙ্কজনক হত্যাকাণ্ড আর ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না। ঘৃণ্য সেই ষঢ়যন্ত্রের এত বছর পর আজ আমার মনে হয়, ঘাতকরা আসলে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি ছিলেন না। দেশ-কাল-সময়ের সীমানা পেরিয়ে তিনি যেন কিংবদন্তির এক মহানায়ক। আপনি ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারেন। কিন্তু আদর্শকে? কখনো নয়। জাতীর জনকের, অসিম সাহস, দৃড়চেতা মনোবল ,দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, প্রখর জ্ঞান, সমস্যা মোকাবেলা করার অভাবনীয় মনোবল, মাটি ও মানুষের প্রতি অসিম ভাল বাসা ,বাঙ্গালি জাতীয়তার প্রতি আস্হা ও বিশ্বাস,ধর্ম বর্ণ, ছোট বড় সব মানুষের প্রতি গভীর ভালবাসা ছিল বলেই টুঙ্গীপাড়ার দামাল ছেলে "খোকা "ক্রমান্বয়ে কলকাতা রেসিডেনসিয়ালের শেখ মুজিবর রহমান,ছাত্র জনতার বঙ্গবন্ধু,সর্বশেষ মহান মুক্তিযোদ্ধের মহা নায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হতে পেরে ছিলেন।যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জ্বল জ্বল করে জ্বলবে প্রতিটি বাঙ্গালীর হৃদয়ের মানসপটে। ৭৫ পরবর্তি আওয়ামী লীগের দুরদর্শি নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন,জীবিত বঙ্গবন্ধুর চাইতে মৃত বঙ্গবন্ধুকে যত বেশী আন্দোলন সংগ্রামের প্রেরনায় ফিরিয়ে আনা যাবে তত বেশী আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরার পথ প্রসস্থ হবে। ইতিমধ্যে অনেকে বলে বেড়ান,বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগই সার্বজনীন হতে দেয় নাই।আওয়ামী লীগের একক দখলে থাকার কারনে বঙ্গবন্ধু সার্বজনীন হতে পারেনি।এরাই আসলে বর্নচোরা।৭৫থেকে '৯১ইং পয্যন্ত অঘোশিত ভাবে সরকারী সকল অনুষ্ঠানে তখন তাঁরা একবার ও বলেন নাই, বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় পয্যায় অবহেলা করা হচ্ছে।'৭৫ এর পর আওয়ামী লীগ স্বল্প পরিসরে যদি অন্তরে ধরে না রাখতেন, তাহলে আজকে স্বমহিমায় ফিরে আসতো কিভাবে।ফিরে এসেছে বলেই আজ সর্বমহল থেকে দাবী উঠেছে সার্বজনীন করার। বঙ্গবন্ধু আসলে কতবড় মাপের নেতা সেটা সর্ব প্রথম বুঝতেই পারেনি, দলের নেতাকর্মীরা।বিশ্ববরেন্য ব্যাক্তি,বিশ্বের স্বাধীনতা কামী নিপিড়িত মানুষের যখন বনঙ্গবন্ধুকে স্বরন করে বই লিখা শুরু করেছেন,আন্দোলনের শ্লোগানের প্রেরনায় দিক্নির্দেশনায় নিয়ে এসেছেন তখননি কেবল বুঝা গেল বঙ্গবন্ধু আসলে কে ছিলেন,তাঁর আদর্শই বা কি ছিল।বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরেও আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁর উদ্ভাবীত বাকশাল সম্পর্কে কোন চিন্তা বা গভেষনাও করেন নাই।বিদেশীরা ঠীকই গভেষনা করে প্রমান করেছেন, মুলতই বঙ্গবন্ধু শোষিত নীপিড়িত মানুষেরই নেতা।আদর্শবাদী নেতা।সামাজতান্ত্রীক দুনিয়ায় যদি সামাজতন্ত্রের ধ্বস না নামতো,রাশিয়ার ক্ষমতায় ব্রেজনেব,সংস্কার প্রক্রিয়া সাধনের নামে পুঁজি বাদের ধারনাকে প্রাধান্য না দিতেন,আমি বিশ্বাশ করি লেলিন,মাও সেতুং এর নামের পাশে বাংলা দেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হতেন, আধুনিক ধ্যান ধারনা সম্পন্ন,ধর্মীয় মুল্যবোধ সম্পন্ন,বিজ্ঞানের আধুনীক গনতান্ত্রিক সমাজ তন্ত্রের প্রবক্তা।ধর্ম কর্ম করেও সমাজতন্ত্র এর ধ্যান ধারনা পোষন করা যায়, তাই বঙ্গবন্ধু নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।আমরা গভেষনা করে তথ্য উৎঘাটন করতে পারিনি,বিদেশীরা পেরেছে।১৬ই আগষ্ট বি,বি,সি, সংবাদ মাধ্যমে যেই ভাবে বঙ্গবন্ধুকে, তাঁর দর্শনকে মুল্যায়ন করেছিল, তাঁর আশেপাশেও আমাদের দেশের গভেষকেরা পা মাড়াননি।বিদেশীদের মুল্যায়নের পর আমাদের দেশেও ইদানিং অনেকের চিন্তাচেতনায় বঙ্গবন্ধুকে পিরিয়ে আনার চেষ্টায় আছেন।তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছেন।কোন কোন ইতিহাসবিদ বিখ্যাত হওয়ার স্বপ্নেও বিভোর হয়ে আছেন,কখন তথ্য বহুল বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস রচনা করে জাতির মনিকোঠায় স্থান নিতে পারেন। মৃত্যুর এত বছর পর এসে আবার মনে হচ্ছে- জীবিত মুজিবের চাইতে মৃত মুজিব অনেক বেশি শক্তিশালী ও ব্যাপক। '৭৫ পরবর্তীতে আমাদের প্রত্যয় ছিল মৃত মুজিবই বেশি শক্তিমান হবেন ইতিহাসের পাতায়। আজকে দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি- মৃত মুজিবকে এক শ্রেণীর আওয়ামী লীগ নেতারা ভাগ্য গড়ার দৃষ্টিতে অবলোকন করা শুরু করেছেন।তাঁদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে আমবশ্যার চাঁদ হয়ে যান।আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এমন ভাব প্রদর্শন করেন যেন,বঙ্গবন্ধু দেবতার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও পুঁজনীয় । এটা যে নেতার প্রতি কতবড় অসম্মানের ব্যাপার তা বোঝার মতো জ্ঞান বুদ্ধিও এক শ্রেণীর মানুষের লোপ পেয়েছে। লোভী,ধান্ধাবাজ,কপট,ব্যক্তি ও সংগঠনের মুজিব চরিত্র হননের হাত থেকে রক্ষা পেতে কিছু সুনির্দিষ্ট কাজ করা দরকার আমি মনে করি। (ক) স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান এখনি প্রয়োজন। যার সরাসরি তত্ত্বাবধান করবে আওয়ামী লীগ বা যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন সেই দল বা সরকার। (খ)বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক লেখার একটি জাতীয় লেখক প্যানেল তৈরি করার সময় হয়ে গেছে।বঙ্গবন্ধুর নানাহ দিক নিয়ে লিখা বই, রচনা, প্রবন্ধ ইত্যাদি লেখার পর রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। (গ) স্বনামধন্য বঙ্গবন্ধুর অনুরক্ত ইতিহাসবিদদের নিয়ে একটা জাতীয় কমিশন গঠন করতে হবে, যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মূল্যবান উন্নতমানের ইতিহাস পুস্তক রচনা করবে। (ঘ)আগামী ১৫ আগষ্ট আসার কমপক্ষে তিনমাস আগে শোক দিবস পালনের সুনির্দিষ্ট নীতি মালা সরকারী ভাবে ঘোষনা করার ব্যবস্থা করতে হবে। (ঙ) সর্বোপরি শোক দিবসসহ অন্যান্ন দিবস সমুহের পালনের জন্য একটি নীতিমালা সরকারী ভাবে তৈরি করে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে আইনে রুপ দেয়া যায় কিনা ভেবে দেখার এখনি সময়। (চ)সকল জাতীয় দিবস রাষ্ট্রীয় অনুকুল্লে পালন করা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার। সবকিছু একটা নিয়মতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করতে পারলেই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসার মৌলিকত্ব আসতে বাধ্য হত। নিয়মের মধ্যে না এনে, নেতারা দায়িত্ব পালন না করে বঙ্গবন্ধুকে এখন হাটবাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে এখন কেউ মিষ্টির প্যাকেটে বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করছে, কেউবা আত্মপ্রচারে ব্যবহার করছে। ভবিষ্যতে যদি অশ্লীল আরও কোন স্থানে তার ছবি ব্যবহার করা হয় তাতেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। আগস্ট মাস শেষ হচ্ছে। পরের মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। লেখার বিষয় তাই শোক পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম। ব্যতিক্রম শুধু- মহান নেতার এই মহাপ্রয়াণ দিবস পালনে যেসব বিচ্যুতি-ভ্রান্তি ও ক্ষতিকর বিষয় সে সম্পর্কেই কিঞ্চিৎ আলোকপাত। এখনও সময় আছে, যদি আমরা বঙ্গবন্ধুকে যথার্থ ভালোবাসি তাহলে তাকে খন্ডিত, বিকৃত, ব্যবসা, ভাগ্য গড়ার হাতিয়ার না বানিয়ে প্রকৃত সার্বজনীন সমাদরে আকৃষ্ট ও সমুজ্জল করে তোলার মহাপরিকল্পনা নিতে হবে দূরদর্শী দেশরত্ম জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। ""জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখহাসিনা।"

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন