বিচার বর্হিভূত হত্যা কি একান্ত প্রয়োজন সরকারের জন্য?? ============>=========== বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড সুফল ভয়ে আনে না।আইন শৃংখলা উন্নয়নের জন্য প্রথাটি কোন দেশে চালু হয়েছিল প্রথম তা সঠিক বলা মুস্কিল।বাংলাদেশে এই প্রথা প্রথম ব্যাপক চালু হয় ১৯৯১ ইং সালে।বাংলা দেশ জাতিয়তা বাদি দল সংখ্যা গরিষ্টতা পেয়ে সেইবার সরকার গঠন করার পর, আইন শৃংখলার উন্নতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মত জরুরী অবস্থা ঘোষনা ব্যতিরেকে, সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়।অপারেশন "ক্লিনহার্ট" নামে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড শুরু করে।কথিত আছে তখন পিটিয়ে বেশির ভাগ হত্যা করে। মারা যাওয়ার পর বলা হত হার্ট এটাকে মারা গেছে।আইন শৃংখলা বাহিনী কতৃক প্রথমবারের মত হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারনে সকল শ্রেনীর সন্ত্রাসি চাঁদাবাজদের মনে ভিতির সঞ্চার করতে সক্ষম হয়।ফলে স্বল্প সময়ে আইন শৃংখলার ব্যাপক উন্নতি হয় বটে,দেশে নজির হিসেবে এহেন কর্মকান্ড সকল সরকার অনুসরন করা শুরু করে। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদেও এই হত্যাকান্ডের প্রতি আগ্রহ কমেছে বলে মনে হয় না।অতিষ্ট জনগনের সমর্থন সরকারের যে কোন কাজের চাইতে বেশি ইহা সত্য।তারপরেও বলা যায় মানুষ হত্যা করে কি সমস্যার সমাধান করা যায়?সমাধান যদি হত ১৯৯১---২০১৫সময় কি একান্তই কম বলে মনে হয়।এই সময়ের মধ্যে দেশ সর্বক্ষেত্রে বহুগুন এগিয়ে গেলেও আইনশৃংখলা বাহিনি কতৃক মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি।আমি মনে করি সমাজে এই সমস্ত দুষ্ট চক্র সৃষি এবং বংশ বৃদ্ধির জন্য,যেই লোক টি হত্যার স্বিকার হল তার দায় একেবারেই নেই।কারন কেহই মায়ের পেট থেকে জম্ম নিতে সন্ত্রাসী হয়ে জম্ম নেয় না,সন্ত্রাসি তাকে বানানো হয়।এই সমাজ,রাষ্ট্র,ব্যাক্তি,চলমান অসুস্থ্য রাজনীতি,অর্থের অসম বন্টন ব্যবস্থাপনা,পুঁজির প্রতিযোগিতা ইত্যাদি কারনে স্কুল কলেজের মেধাবী ছেলেটি মাস্তান হতে বাধ্য হয়ে যায়। ক)আমাদের সমাজ স্বাধিনতার ৪৫বছর পর ও যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে।গোষ্টি বৈষম্য ,ধনী গরীবের ব্যবধান, ইংরেজদের ফেলে যাওয়া সমাজ যেমন ছিল তেমন রয়ে যাওয়ার কারনে, তরুনদের সমাজ ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোবতো কমেইনি,বরঞ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। খ)তরুন বয়সের ধর্মই বেপরোয়া জীবন যাপন।পরিবার বা সমাজ বেপরোয়া ভাবকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বিদ্যালয়মুখি না করে,শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে।এতে দুই একবার লজ্জার সম্মুখীন হওয়ার পর ছেলেটি অস্বাভাবিক হয়ে যায়।বন্ধু বান্ধবদের বৈরী আচরনে,নিজকে হিরু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বিপদগামিতার শেষ পয্যায় চলে যায়।তখনি সমাজের একশ্রেনীর শোষক নীজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে মাস্তান হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।হাতে তুলে দেয় অগ্নেয়াস্র।। গ) রাষ্ট্রের নীতি আদর্শ এক্ষেত্রে বেশী দায়ি বলে আমি মনে করি। আমাদের মত উন্নয়নকামী দেশ সমুহে মধ্যস্বত্ব ভোগীর নিয়মনীতি---যথারীতি প্রতিপালিত হয়ে আসছে।এই তৃতীয় ধারাটির উপস্থিতি ব্যতিরেকে কোনকায্য সম্পাদিত হয়না। সমাজের অভ্যন্তরে দুষ্টক্ষতটির কারনে মাস্তানের দৌরাত্ব অপিরিহায্য।মধ্যস্বত্ব শ্রেনীকে আবার রাষ্ট্র যথারীতি পৃষ্টপোষকতা করে থাকে।যেহেতু রাষ্ট্রীয়কাঠামো শোষনের হাতিয়ার হিসেবে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্টে পরিবর্তন আসেনি,চলতি নিয়মের ব্যত্যায় ঘটানো রাষ্ট্রের সম্ভব নহে।রাষ্ট্র তাঁর চিরায়ত বৈশিষ্ট পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিতে গেলেই একশ্রেনীর মানুষের আঁতে গা লাগে।তাঁরা সমাজে তৎক্ষনাৎ অশান্তি সৃষ্টি করে শুভ উদ্যোগ বানচাল করে দিতে ঊঠে পড়ে লেগে যায়। ঘ)সামান্তপ্রথার উচ্ছেদ যদিও আইনগত ভাবে নেয়া হয়,তাঁর অবশিষ্টাংশ সমাজে এখনও বিদ্যমান রয়ে গেছে।আইন টি জমিদার প্রথা উচ্ছেদ এবং প্রজাস্বত্ব কায়েম ছাড়া আর কোন অগ্রগতি সম্পন্ন করতে পারেনি।সুদক্ষ নেতৃত্বের অভাবই ইহার একমাত্র কারন।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যথারীতি পদক্ষেপ নিয়েও বাস্তবায়নের আগেই কায়েমি স্বার্থবাদিদের হাতে স্বপরিবারে নিহত হন।জাতির জনকের উদ্যোগ কিছুটা সময়ক্ষেপনের কারনে ,কায়েমী স্বার্থবাদিরা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।এতে পরিবারের সকলেই প্রান বিসর্জন দিয়ে, সমাজ পরিবর্তনের বিপ্লবের হাতিয়ার রেখে গেছেন আগামী প্রজর্ম্মের ধারক ও বাহকদের কাছে।নীজে পরিবর্তনের ধারা সুচনা করে যেতে পারেননি।ঘুনে ধরা সমাজ ভেঙ্গে নতুন সমাজ গড়ার মত সাহসি নেতৃত্ব সৃষ্টি হওয়া পয্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। (ঙ)সমাজে চলমান অসম প্রতিযোগিতা,ধনী আরো ধনী হওয়ার নিয়ন্তর প্রচেষ্টা যুব সমাজকে সাংঘাতিক প্রলুব্দ করে বলে আমি মনে করি।সৃজনশীল কাজের উপহার দেয়া যাদের নিকট ন্যস্ত,তাঁরা সর্বদা শোষনের ফিকিরে থাকে।কোন কাজটির প্রকল্প হাতে নিলে মধ্যস্বত্ব ভোগী অংশকে উপঢৌকন দিয়ে নিজেদের ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানো যাবে, সেই চিন্তায় অস্থির সময় কাটে।সৃজনশীল,উৎপাদন মূখী প্রকল্প হাতে নিয়ে সার্বিক বেকার সমস্যার সমাধানের প্রতি তাদের নজর থাকে না।এমত অবস্থায় মানষিক ভাবে বেকার ছেলেটি মা বাবার বোঝা হিসেবে নীজেকে চিন্তা করে। একসময় তাঁকে হতাশায় গ্রাস করে পেলে।গত্যান্তর না দেখে এলাকার বড়ভাইয়ের নিকট ধর্না দিতে বাধ্য হয়। বড় ভাই তাঁর স্বার্থসিদ্ধির মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া না করে কাজে লাগিয়ে দেয়। ইহা একান্তই বিদ্যমান আমাদের রাজনীতির ধারাবাহিকতার ফসল। (চ) আমাদের রাজনীতিতে বিদ্যমান রীতির বাহিরে যাওয়া কার ও পক্ষে সম্ভব নহে।বর্তমান গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা পশ্চিমাদের আমদানী করা পেশী শক্তির বহুদলীয় ভোটের গনতন্ত্র।এখানে নির্বাচিত হওয়াটাই প্রধান বিবেচ্য।সংসদে সংখ্যাগরিষ্ট আসন পেতেই হবে।এক রাজনৈতিক দল আর এক রাজনৈতিক দলের উপর প্রভাব বিস্তার করে, শক্তির মহড়ার প্রদর্শন করে একে অপরকে নিস্তেজ করে মসনদ দখল করাই মূখ্য।নীতি নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই মনে করেনা।প্রত্যেক দলেই গনসংগঠন হিসেবে বিবেচিত।দলে লোক সমাগম প্রধান বিষয়।নীতি নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া বা আদর্শ ধারন করার কোন বিষয় বিদ্যমান নেই বলে, পথভ্রষ্ট লোক ও দল করার সনদ সংগ্রহ করা দুষ্কর নহে।তাই দেখা যায় মুক্তি যুদ্ধের চেতনার বিরুদিতা কারি দলের মধ্যেও বহু মুক্তিযুদ্ধাই রাজনীতির শীর্ষ পয্যায় অবস্থান নিতে।আবার মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদান কারি দলের মধ্যেও বহু রাজাকার শীর্ষ পদে রাজনীতি অবলিলায় করছে।আদর্শ গত দিক বিবেচনা করতে গেলে যাহা কখনও সম্ভব নহে। দেখা যায় রাষ্ট্র, সমাজ,ব্যক্তির সম্মিলীত প্রয়াসের ফসল একজন সন্ত্রাসী।তাঁকে একক ভাবে জীবনহানী করে বাদবাকি সবাইকে খালাস দিয়ে সমস্যার কি সমাধান হবে?এই রুপে যদি সমাধান করা যেত রাষ্ট্রের অন্যসব বিষয় বিস্ময়কর উন্নতি হলেও, এই বিচার বর্হিভুত হত্যার ভুক্তিভুগিদের মধ্যে সামান্যতম উন্নতি কি সাধিত হল? তাঁদের ব্যবহার করে অর্থবিত্তের মালিক হব,ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যাব,সমালোচনার মুখে তাঁদেরই বলি দেব?যারা এই অসৎ ব্যাক্তিদের সমালোচনা করে বিচার বর্হিভুত হত্যায় উস্কানি দিল,তাঁদের স্বার্থে যখন ঐ সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করে, তখন তা কি জায়েজ হয়? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে তাঁর অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মিরা পথে ঘাটে বেওয়ারীশ লাশ হবে তাও কি সম্ভব!দেশের আইন কি অচল হয়ে গেল?যদি অচল হয়ে যায় সবাইকে নিয়ে তা কি সচল করার কোন উপায় নেই?।ভুক্তভুগি দুই দলইতো ক্ষমতায় আসে আর যায়,দুই দলের কর্মিরাইতো হত্যার শিকার হয়,তাঁরপর ও কেন ঐক্যমতে আসতে পারবেনা?আমাদের রক্তের উপর পা দিয়ে ক্ষমতায় যাবেন,আবার আমাদের রক্তের হুলিখেলে ক্ষমতার মসনদ পাকাপুক্ত করবেন,ইহাই কি অধম রাজনীতির চালিকাশক্তি হত্যার শিকার যুবকের নিয়তি? আর কোন যুবকের প্রান সংহার না করে উল্লেখিত কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহন করুন,তাই যদি না হয় যে বড় ভাইয়ের কারনে মাস্তান হলাম ,তাঁকে নিদেনপক্ষে দল থেকে বহিস্কার করুন,দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহন করে প্রমান করুন,আপনারা সন্ত্রাস,চাঁদাবাজি,টেন্ডারবাজী চান না। জনগন বুঝতে পারবে সন্ত্রাস দমনে আপনাদের সদিচ্ছা যথেষ্ট আছে। একদিকে শহিদ পরিবারের সন্তান হাতকড়া পড়ে কোর্টে যাবে,আর এক দিকে যুব লীগ,ছাত্রলীগ বেওয়ারিশ লাশ হবে তা চলতে দেয়া যায় না।সরকারের অভ্যন্তরে কোন দুষ্ট চক্র এহেন কর্মে জড়িত তা চির্হিত করার এখনি সময়। দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলে মারা যাবে উদিয়মান তরুন নেতারা,তথাকথিত ক্রসফায়ারে যাবে দলের প্রেসার গ্রুপের অন্যতম সদস্যরা,বুদ্ধিজীবিরা যাবে দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মোস্তাকের বংশের ষড়যন্ত্রে। রাজনীতি করবে কে? অথবা প্রত্যেক ইউনিটে দলের আদর্শ উদ্দেশ্য সম্বলীত বিষয়ে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করে আদর্শবান চারিত্রিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন নেতৃত্ব গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করা হোক,আর চাইনা ভাইয়ের রক্তের হলিখেলা।আর চাইনা পেশী শক্তির মহড়া,আর চাইনা বড়নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা,আর চাইনা অধিপত্য বিস্তারের রাজনীতির বিকাশ। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন