' জাতির জনক সার্বজনীন,কোন একক দলের নয় ======================>> অনেক সুশিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের মহত্ব নিয়ে সমালোচনার খই ফুটিয়ে দেন ইলেক্ট্রিক মিডিয়া গুলিতে।তখন ইলেক্ট্রিক মিডিয়া ছিল না,যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না।সীমিত পরিসরে বনঙ্গবন্ধু একটা জাতিকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার দ্ধারপ্রান্তে নিয়ে গেলেন,এখনকার সুশিলগন এত সুযোগ থাকার পর ও দশ জন মানুষের সমর্থন কেন যোগাড় করতে পারেননা?,৭০ এর নির্বাচনে অংশ নেয়ার যে সিদ্ধান্ত সেই দিন বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার মত সুদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করার মত নেতাও তখন মুলত ছিল না।বঙ্গবন্ধু দেশ এবং জাতিকে নিয়ে যে ভাবে চিন্তা করতেন, আজ পয্যন্ত উদাহরন থাকার পর ও,একজন ও কি সেই রীতির চিন্তা চেতনার আশেপাশে যেতে পেরেছেন? ১৯৬৯ সালের মার্চে গণআন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পদত্যাগ কিংবা আসলে পাক সামরিক জান্তা কর্তৃক তাঁর অপসারিত হওয়ার পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হাতে নিয়েই দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। বলা হয় সার্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত দেশের উভয় অংশের জনপ্রতিনিধিরা দেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়ন করবেন। তবে নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) বা আইনগত কাঠামো আদেশ নামে একটি আদেশও জারি করেন। সেই আদেশ জারির মাধ্যমে কার্যত সংবিধান প্রণয়নের ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, জনপ্রতিনিধিদের প্রণীত সেই সংবিধানে যেমন ইসলাম তেমনি পাকিস্তানের ঐক্য বা সংহতির পরিপন্থী কিছু থাকতে পারবে না। আর প্রেসিডেন্ট অনুমোদন পাওয়ার পরই কেবল সে সংবিধান কার্যকর হবে। তারপরই ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারটি ঘটবে, আগে নয়। কী পাকিস্তানের ঐক্য বা সংহতির পরিপন্থী আর কী তা নয়, সেটা কে বিচার বা নির্ধারণ করবে? বলা বাহুল্য, প্রেসিডেন্ট নিজেই। এভাবে নির্বাচনের পরও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের হাতেই রেখে দেওয়া হল। এলএফও-র ২৫নং ধারায় বলা হয়, জনপ্রতিনিধিদের প্রণীত সে সংবিধান যদি প্রেসিডেন্ট অনুমোদন না করেন তবে জাতীয় পরিষদ আপনা আপনি বাতিল হয়ে যাবে। সেদিন এলএফও জারির পর দুই ন্যাপসহ অনেকগুলো দলই তার সমালোচনা করেছিল। তারা এলএফও-র ওই ধারাগুলো বাতিল না করা পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে মত ব্যক্ত করেছিল। বিশেষ করে মস্কোপন্থী ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচনে না গিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য নিয়ন্তর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছিলেন।পুর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব দল এবং কি পশ্চিম পাকিস্তানের দুই একটি দল ছাড়া সবাই চাইছিলেন ইয়াহিয়া খাঁন কতৃক জারী কৃত আদেশ প্রত্যাহার ব্যতিত ইলেকশান করে কোন লাভ হবে না।বঙ্গবন্ধু এরই মাঝে আন্দোলন এবং নির্বাচনের দিকেই মতামত রাখলেন।মাওলানা ভাসানী ভোটের আগে ভাত চাই বলে মাঠেই নেমে গেলেন।সবাই সবাইকে পাকিস্তানের জনগনের মুল প্রতি নিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টায় লিপ্ত।সবাই মনে করে জনগন তাঁর সাথেই আছে,কিন্তু কার আইনগত ভিত্তি নেই।কোন নির্বাচনের মাধ্যমে তখনও প্রমান হয়নি,জনগনের প্রতিনিধিত্ব কে করছে। "৬৯এর গন আন্দোলনের ফসল তখন বঙ্গবন্ধুর গোলায়,তা ঠিকই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন।কিন্তু জনগনের প্রত্যক্ষ রায়ের অভাবে একক কোন সিদ্ধান্ত দেশে বিদেশে কোথাও কায্যকর হবে না।বঙ্গবন্ধুর মুল যে উদ্দেশ্য তাতো তিনি পাকিস্তানের জম্মলগ্ন থেকেই পোষন করে আসছেন।প্রকাশ করা যাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং জনগনের প্রত্যক্ষ রায়ের অভাবে।ক্ষমতা দিবে না পাকিস্তানীরা তাও বঙ্গবন্ধু জানতেন,ভোটে না গেলে বিশ্ব বাসি তা বিশ্বাস করবে কেন?ইয়াহিয়া যে নীতি কাঠামো ঘোষনা করেছেন এর ভিতরে থেকে নির্বাচন করেও লাভ হবে না, তাও সত্য।ভার্গিন করার একক ম্যান্ডেট কোন দলের নেই।সুতারাং ভার্গিন করবে কিভাবে?বঙ্গবন্ধু সেই দিন যদি নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়ে নির্বাচনে একক সংখ্যগরিষ্টতা না পেতেন তাহলেও কি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের মত সসস্ত্র যুদ্ধের দিক নেয়া যেত?দেশে বিদেশে কি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ন্যায়সংগত দাবী প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হত? ৭০এর নির্বাচনের আগে বনঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি চাইছেন ছয় দফার ভিত্তিতে বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে। যদি মেজরিটি সিট পেয়ে তা করতে পারেনও ইয়াহিয়া খান তা মেনে নেবে না। হয়তো জাতীয় পরিষদই বাতিল করে দেবে। তাহলে নির্বাচনে জয়লাভ করে কী লাভ হবে?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘লাভ আছে, আমি সমগ্র পৃথিবীকে দেখাতে পারব বাংলার মানুষ কী চায়। আজ দেশে অনেক দল, অনেক নেতা। সবাই বলে জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু জনগণ কার সঙ্গে আছে তার কোনো আইনগত প্রমাণ নেই। আমি জানি, বাংলার মানুষ আমার সঙ্গে আছে। কিন্তু এই পরম সত্যেরও বিধিগত কোনো ভিত্তি নেই। যদি নির্বাচনে জয়লাভ করি, জনগণের ম্যান্ডেট পাই, সেই আইনগত ভিত্তি অর্জিত হবে। আর তখন জনগণের নির্বাচিত নেতা হিসেবেই আমি জনগণের পক্ষ হয়ে ইয়াহিয়ার সেচ্ছাচারী নীতি-পদক্ষেপ চ্যালেঞ্জ করতে পারব। বিশ্ববাসী দেখবে—শেখ মুজিব যা বলেছে, যা চাইছে, তা তার একার কথা নয়, গোটা দেশবাসীর কথা, আর এভাবেই বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম বিশ্ববাসীরও সমর্থন লাভ করবে।’ এমনই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। এই দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার কারণেই অর্জিত হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। ৭০এর নির্বাচনে না গিয়ে আন্দোলনের পথে পা বাড়ালে মার্শাল ল' আরো কঠোরতর ভাবে প্রয়োগ হত।হয়ত এমন পরিস্থিতিতে দুই এক বছর পার হয়ে যেতে পারতো।ফলাফল মুলত কিছুই আসতো না।তাছাড়া ৬৯এর গন অভ্যুত্থানের রেশ তখন পয্যন্ত নাও থাকতে পারতো।স্বাধিনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে আরো কয়েক যুগের অপেক্ষার দরকার হত । তা কি হলফ করে বলা যায়? ইয়াহিয়া চাইছিলেন এই ধরনের প্রজ্ঞাপন জারী করে রাজনোতিক দল গুলিকে নির্বাচনের বাহিরে রাখতে।নির্বাচনে যদিও আসে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তাঁদের মনমত না হলে সংসদ নিয়ম অনুযায়ী ভেঙ্গে যেত,নতুন করে ঘোষনার প্রয়োজন হত না।তাঁরপরও বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের পক্ষেই তাঁর অবস্থান নিলেন। আজ স্বাধীনতার ঘোষনা নিয়ে অনেকে বিতর্ক করার চেষ্টা করেন।৭ই মার্চের ভাষন তারা ভাল করে না শুনে বিতর্ক করার চেষ্টা করেন।মেজর জিয়া নিজেই যেখানে তাঁর বিচিত্রায় দেয়া নিবন্ধে লিখেছেন,বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনেই বাঙ্গালী অফিসারেরা স্বাধীনতার গ্রীন সিগনাল পেয়ে গিয়েছিলাম।পাকিস্তান পুর্ববাংলা আক্রমন করে ন্যায্য দাবী ধুলিসাৎ করার জন্য আলোচনার নামে সময় ক্ষেপন করছেন তা কি বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেননি?না পারলে তিনি কেন বলবেন,"তোমাদের যা কিছু আছে,তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে"।তিনি থাকবেন না,বা কারাগারে দেয়া হবে ,তাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন,তাইতো সেই দিনই বলে দিলেন,"আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি।"তাঁর পর ও জ্ঞান পাপিরা বিতর্কে লিপ্ত হতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করেন না। নিদ্বিধায় বলা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জম্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না,বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালীর ঘরে জম্ম না নিলে বাঙ্গালীও কোন কালে মুক্তির স্বাধ গ্রহন করতে পারতো না।হাজার বছরে বাঙ্গালী জাতী পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে,তাই আজ বাঙ্গালী বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে বলতে পারছে আমি বাঙ্গালী,বাংলাদেশ আমার জম্মভুমি। "জয়। বাংলা, জয়বঙ্গবন্ধু জয়তূ দেশরত্ম শেখহাসিনা""

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন