ভাগ্য গড়তে রাজনীতিতে আসিনি-জনগনের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে এসেছি--প্রধানমন্ত্রী। ___________________________________ জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করে ভাগ্য গড়তে আসিনি। আমি জাতির পিতার কন্যা। রাজনীতি করছি নিজের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নয়, মানুষের কল্যাণে। বাকিটা জীবন সেটাই করে যাবো। শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশের মানুষের জন্য আমার বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই জীবন দিয়ে গেছেন। আমি সব হারিয়েছি, আমার তো আর হারাবার কিছু নেই। চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। এখন এদেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখিত কথাগুলি বলেন।সমাবেশের আগে তিনি অত্যাধুনিক এই হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নকে অনেকে বিস্ময় বলেন, আমি বলি এটি বিস্ময় নয়, বিশ্বাস। জনগণের প্রতি বিশ্বাস। এই বিশ্বাস আছে বলেই দেশে উন্নতি করতে পারছি; নিয়ত ভালো বলেই যেখানেই হাত দিচ্ছি সেখানেই সাফল্য অর্জন করছি’। বিএনপি-জামায়াত পদ্মাসেতু নিয়ে যদি ষড়যন্ত্র না করতো তবে এ সেতুর কাজ এতো দিনে আরও এগিয়ে যেতো বলে মতপ্রকাশ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের জৈষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা। শুধু মাত্র গোপাল গঞ্জের অত্যাধুনিক হাস্পাতালটি নয়, স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারি পরিবর্তন এনেছে বর্তমান সরকার। স্বাস্থ্যখাতে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আরও তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা সরকারের হাতে আছে। গণমুখী স্বাস্থ্য নীতি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। নার্সদেরও পিএইছডি করার ব্যবস্থা সরকার করেছে,ফলে নার্সিং পে।শায়ও মেধাবী ছাত্রীদের আনাগোনা বাড়বে আশা করি। ‘বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়-জেলায় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পুরোদমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ১ কোটি ৭০ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে উচ্ছশিক্ষার জন্য মেধাবৃত্তি দিয়েছে সরকার চলতি অর্থবছর। বর্তমানে কোন ছাত্রছাত্রী বই-খাতা কিনতে হয় না, সরকার সরবরাহ করছে। দেশে এখন ৩ কোটি ৮৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য নিরাপত্তা হয়েছে। মানুষের চাহিদা বদলে গেছে কারণ পেটে খাবার আছে। এখন মানুষ বিদ্যুৎ চায়, স্কুল চায়- সরকার সেই সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ডই বাস্তবায়ন করে চলেছে। জাতির জনকের কন্যা অত্যান্ত দু:খ্য নিয়ে আরো একটি কথা বলেছেন --এক সময় গোপালগঞ্জবাসী বৈরিতার শিকার ছিল। অবহেলিত ছিল। সেটি হয়েছিল একটি বিশেষ কারণে। সে সময় বাজেটে টাকা দেওয়া হতো, তবে কাজ ও উন্নয়ন হতো না। এক সময় এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ও সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।বর্তমান সরকার সারাদেশকে বাংলাদেশ মনে করে,সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ জাতির জনকের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল,সুতারাং সারা বাংলাদেশের সুষম উন্নয়নই তাঁর সরকারের লক্ষ। একশ্রেনীর রাজনৈতিক দল ও ব্যাক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিচরন করছেন, তারা দেশে উন্নয়ন চায় না, অগ্রগতি চায়না,তাঁদের ৫বছরের শাষনামলে দেশ ৫বারই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, লুটপাট হয়েছিল সরকারের শীর্ষ পয্যায় থেকে নিম্নপয্যায় পয্যন্ত, এটাই বাস্তবতা। তারা ক্ষমতা হারিয়ে মানুষের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে, শুধু মানুষ পোড়াচ্ছে; গুপ্তহত্যা করছে। হত্যা আর ধ্বংস ছাড়া তারা আর কিছুই করতে জানে না । জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে,তাঁর কন্যার হাতেই দেশ উন্নয়ন অগ্রগতির শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছে। উল্লেখ্য হাসপাতালটি নির্মানশৈলী অত্যাধুনিক এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ অভুতপুর্ব উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকারের বিগত সাত বছরে।অতীতের সরকার সমুহ রাষ্ট্রের এই গুরুত্ব পুর্ন খাতকে শুধু অবহেলাই করেনি, আধুনিকায়নের সামান্যতম পদক্ষেপও গ্রহন করেনি। বরঞ্চ গ্রামের হতদরিদ্র জনগোষ্টির স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকারের প্রতি লক্ষ রেখে ১৯৯৬ ইং সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেই প্রতি ইউনিয়নে, প্রত্যেক সাবেক বৃহত্তর ওয়ার্ডে একটি করে কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প মাঝপথে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।২০০৮ ইং সালে জনগনের বিপুল সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে পুনরায় এই প্রকল্প বর্তমান সরকার চালু করে। গ্রামের মা-বোনদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিতকরনের জন্য জাতির জনকের কন্যা তাঁর নিজস্ব মেধা থেকে প্রকল্পটি গ্রহন করেছিলেন। তৃনমুলের হতদরিদ্র মা বোনদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার মানসে গৃহিত প্রকল্পটি প্রাথমিক অবস্থায় জনমনে তেমন গুরুত্ব বহন না করলেও সময়ের ব্যবধানে প্রকল্পটির কি প্রয়োজন জোট সরকার বন্ধকরে দেয়ার পরই টের পাওয়া গিয়েছিল। উল্লেখিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা, হতদরিদ্র জনগোষ্টির ভীড় লক্ষ করলে কারোই দ্বিমত করার কারন নেই প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়ত কতটুকু কায্যকরি ভুমিকা পালন করছে গ্রামীন জনপথে। দেশে বিদেশে শেখ হাসিনার তীক্ন মেধার যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত হিসেবে সর্বমহলে গৃহিত এবং নন্দিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বন্ধ করে ৪দলীয় জোট সরকার শেখ হাসিনার প্রতি অবজ্ঞাই করেনি গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারকেই অস্বিকার করেছিলেন। অন্যভাবে বলা যায়-গ্রামীন জনগোষ্টির প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছিল শুধু তাই নয়, চিকিৎসা পাওয়ার নাগরীক অধিকার থেকে গ্রামীন জনগোষ্টিকে বঞ্চিত করে সংবিধানকেই অবজ্ঞা করেছিলেন। জাতির জনকের কন্যা ক্ষমতা গ্রহন করে গ্রামের মানুষকে তাঁদের প্রাপ্য সাংবিধানিক অধিকার আবার তাঁদের কাছে ফেরৎ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করেন। তাছাড়া আরো কতিপয় গুরুত্ব পুর্ন সিদ্ধান্ত সরকার স্বাস্থ্যখাতে গ্রহন করে। ১১ টি সরকারি মেডিকেল কলেজ চালু করা হয়েছে। দারিদ্র সীমার নীছে ১লক্ষ পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ কার্ড বিতরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পয্যায়ক্রমে দেশের সব দারিদ্র পরিবারের মধ্যে এই কার্ড বিতরন করা হবে। বার হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।দুইদফায় ২৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের মানুষের ২০০৬ইং সালে গড় আয়ু ছিল ৬৬.৫ বছর, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭১ বছরের ও বেশী। কল্যান রাষ্ট্রের শর্তানুযায়ী রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা একটি গনতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম শর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতির জনকের কাংখিত সেই কল্যান রাষ্ট্রের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতির জনকের আজীবনের স্বপ্ন বাংলা দেশের কোন মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেনা।জাতির জনকের যোগ্য কন্যা সে লক্ষ বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জাতি আশাম্বিত অচিরেই জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ দ্রুত শেষ করে তাঁর কাংখিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে অভিষ্ট লক্ষে পৌছা সম্ভব হবে। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান,  শিক্ষা,  চিকিৎসা পাঁছটি মৌলিক চাহিদা পুরন রাষ্ট্রের নাগরীকদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন