বর্তমান সময় অন-লাইন শক্তিশালী বিরুধীদলের ভুমিকায় -- সরকার গুরুত্ব সহকারে প্রতিটি ঘটনার সুরাহা দিচ্ছে। __________________________________________ কাগজে চাপা পত্রিকার উপর কারো নজর এখন আর পড়ে না। তারচেয়ে বিশ্বের উন্নত দেশের জনগনের সংজ্ঞে তালমিলিয়ে বাংলাদেশের জনগনও অনলাইনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।বিশেষ করে সচেতন নারী পুরুষ বলতেই- একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যার একটা পেইজ বুক একাউন্ট নেই। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্ন মন্ত্রীগন, সরকারের উধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবি, কবি সাহিত্যিক সব শ্রেনী পেশার মানুষ পেইজবুকিং এ অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন বেশীরভাগ। ইদানিং দেখা যায় নামকরা কলামিষ্ট গন তাঁদের লিখাগুলী তাঁদের নীজস্ব ওয়েব সাইটে দিচ্ছেন,অন-লাইন পত্রিকায় বিষয়ভিত্তিক লিখাগুলীও চাপানো হচ্ছে। বেশীরভাগ নামকরা পত্রিকা তাঁদের অন-লাইন সংস্করন ইতিমধ্যে প্রকাশ করা শুরু করেছেন।অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে অচিরেই কাগজে চাপা পত্রিকা জাদুঘরেই খোঁজ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ওপর মানুষ যত বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে, তত বেশি কমছে কাগজে ছাপা জিনিসের প্রতি তার নির্ভরশীলতা। অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে পেপারলেস বা কাগজমুক্ত অফিস ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ তাদের সব কাজই হয় কম্পিউটারে। এতে একদিকে যেমন কাগজের খরচ বাঁচে, তেমনি কাগজের জঞ্জালের হাত থেকেও মুক্তি মেলে। যাঁরা নিয়মিত বাসায় এক বা একাধিক পত্রিকা রাখেন, মাস শেষে তাঁদের ঘরে কাগজের যে স্তূপ জমে যায়, সেটি এখন অনেকেরই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এই কারণেও অনেকে বাসায় নিয়মিত সংবাদপত্র রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন । তবে কাগজে ছাপা সংবাদপত্রের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোবাইল ফোন। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে যদি এখন ১০ কোটি মানুষও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাহলে ধরে নেওয়া যায় অন্তত এর অর্ধেক জনগোষ্ঠী মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর যাঁরা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তিনি কী কারণে বাসায় কাগজে ছাপা পত্রিকা রাখবেন, যেখানে তিনি প্রতিমুহূর্তেই মোবাইল ফোনে খবর জানতে পারছেন? মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এই সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকবে এবং সংগত কারণেই কাগজে ছাপা পত্রিকার চাহিদা কমতে থাকবে। সে সঙ্গে সব ক্ষেত্রে কাগজের ব্যবহার কমানো গেলে যে সেটি পরিবেশের জন্যও একটা আশীর্বাদ হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়, বিশেষ করে যখন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র উপকূলীয় গরিব দেশগুলো তো বটেই, উদ্বিগ্ন ধনী রাষ্ট্রগুলোও। ফলে পেপারলেস হওয়ার একটা আন্দোলন ভেতরে ভেতরে দানা বাঁধছে এবং পেপার ওয়ালারাও সেই আসন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জোর দিচ্ছেন অনলাইন মাধ্যমে। অবশ্য অনলাইন সংবাদমাধ্যমের বিপত্তিও এরই মধ্যে টের পাওয়া যাচ্ছে। হাতেগোনা কিছু অনলাইন সংবাদপত্র নিজেদের বস্তুনিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারলেও অখ্যাত অনামি বে-নামি সব ডটকমের উদ্ভট বানোয়াট আর উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ভুয়া খবর যেভাবে প্রতিনিয়ত ফেসবুকে শেয়ার হচ্ছে, এতে যে কোন সময়ে হঠাৎ করে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবেনা, হলফ করে বলা যায়না।এই সমস্ত উদ্ভট খবর বিশ্বাস করার লোকের সংখ্যাও কম নয়। ফলে সংবাদের নামে বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে এই তথাকথিত অনলাইন সংবাদপত্র গুলো। পত্রিকাগুলী বানোয়াট খবর চাপায় তেমন বড় কথা নয়, তাঁরা বিভিন্ন আইডিতে গিয়ে কমেন্ট বক্সে লিংক দিয়ে সে বানোয়াট খবর পড়তেও বাধ্য করে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, অনলাইন সংবাদমাধ্যমকেও একটি নীতিমালার আওতায় আনা হবে।অফ-লাইনের পত্রিকার জন্য নীতিমালা থাকা সত্বেও অখ্যাত অনেক পত্রিকা বানোয়াট খবর নিয়মিতই প্রকাশ করে যাচ্ছে। আইনের যথাযথ কায্যকারিতা সেখানে তেমন একটা দেখা যায়নি অতীতে। অন-লাইনের ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে গেলে সমুহ বিপদের সম্ভাবনাই বেড়ে যাবে আমি মনে করি।কারন কাগজের পত্রিকার পাঠক সর্বসাকুল্যে ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষের বেশী কখনই ছিলনা, সেখানে বর্তমানে অন-লাইনে বিচরন কমপক্ষে দশকোটির অধিক নারী পুরুষ। অতীতে যে খবরটি সর্বচ্ছো এককোটি মানুষের মধ্যে জানাজানি হত তা বেড়ে বর্তমানে দশ গুনের বেশী হয়ে গেছে। ইদানিং একটা দারুন সুখবর অনলাইন এক্টিভিষ্টদের আকৃষ্ট করেছে, উৎসাহিত করেছে খুববেশী। কিছু কিছু অনিয়ম, অপ্রীতিকর, অসামাজিক, বলদর্পি ঘটনায় অন-লাইনে প্রতিবাদের ঝড় উঠার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহন করতে দেখা গেছে। পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রোনিক মিডিয়া যে সমস্ত খবরকে গুরুত্বই দেয়নি অন-লাইন সে সমস্ত খবরকে গুরুত্ব দেয়ার কারনে সমাধানও মিলেছে তড়িৎ গতিতে। সরকার সুত্র উল্লেখ করার কারনে এক্টিভিষ্টগন বুঝতে পেরেছেন- সরকার তাঁদের প্রতিবাদের মুল্যায়ন করেছেন। যেমন নারায়ন গঞ্জের বর্তমান তোড়পাড় করা প্রধান শিক্ষককে সাংসদ কতৃক শাস্তি প্রদান, চাকুরীচ্যুতির বিষয়টি।অন-লাইনে প্রতিবাদের কারনে সরকার উক্ত বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে প্রধান শিক্ষকের চাকুরী পুর্নবহাল করেছেন। তাঁরও আগে একজন মন্ত্রী কতৃক মুক্তিযোদ্ধা প্রবির শিকদারকে জেলে প্রেরন ও রিমান্ড মঞ্জুরের পরও আদালত জামিন দিতে বাধ্য হয়েছেন। আরো বহু ঘটনাই উল্লেখ করা যায়-একমাত্র পেইজবুকের কারনে সমাধান পাওয়া গেছে।এর মধ্যে জনগনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় দ্রুত কায্যকরি ফললাভের উদাহরহনও আছে।যেমন-ঠিকাদার কতৃক রডের স্থলে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে সরকারি কাজের অর্থ আত্বসাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহনের নজীরও কম নয়। সাঈদীকে চান্দে দেখা যায় এইরুপ ওয়েব সাইটের সংখ্যা কম নয়।যারা প্রতিনিয়ত উদ্ভট পোষ্ট দিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের সমর্থকেরা মেয়ে আইডি খুলে মানবিক আবেদনের সুরে বিভিন্ন ঘটনা -যেমন হিন্দু ছেলে কতৃক কোরান অবমাননা, মসজিদ সংক্রান্ত অবাস্তব, অলৌকিক ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে মসুলমানদের বিভ্রান্ত করার প্রয়াস, মুক্তিযুদ্ধার ছবি চাপিয়ে ভিক্ষার পাত্র হাতে- অসত্য ঘটনা প্রকাশ, মানুষকে বিভিন্ন জন্তু জানোয়ারের ছবিতে রুপান্তর করে বলা- কোরান অবমাননার কারনে লোকটি এমন হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।এতে একদিকে লোকটি বড় গুনাহর কাজ করছে -অন্যদিকে হাজার হাজার পেইজবুকারকে বিশ্বাস করিয়ে তাঁদের ঈমানও নষ্ট করছে। সাম্প্রদায়িক উস্কানী তো দিচ্ছেই।আশার কথা হচ্ছে এইরুপ এয়েব সাইটের সংখ্যা এবার কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়ে করা অনুরোধে সাড়া দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তথ্য নিয়ে ২৮ এপ্রিল ফেসবুক প্রকাশিত ‘গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্টস রিপোর্ট’-এ বলা হয়, ওই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩১টি অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে ১২টি অনুরোধ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) অনুরোধে সাড়া দিয়ে চারটি কনটেন্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফেসবুক প্রতি ছয় মাস অন্তর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে কোন দেশের সরকার ফেসবুকের কাছে কী ধরনের অনুরোধ জানায়, তা তুলে ধরা হয়। তবে কোন অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়, তা উল্লেখ করা হয় না। পেইজবুক বাংলাদেশকে যেহেতু তথ্য দেয়া শুরু করেছে অশুভ শক্তির ওয়েব সাইট সম্পর্কে এখন থেকে নিয়মিত তথ্য পেতে সরকারের আর কোন অসুবিধা হএয়ার কথা নয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অনুরুধে অনেকগুলী পর্ণ সাইট কতৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে, লক্ষ করলে দেখা যায় পেইজবুকে অতীতের মত এখন আর পর্ণ সাইটের লিংক দেয়া যায়না, অটোমেটিক্যালি পেইজবুক উক্ত লিংক রিপোর্ট আকারে সরিয়ে নিচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অনলাইনের গুরুত্ব অধিখারে বেড়ে চলেছে।সাংবাদিকদের অনৈতিক আচরনের দাপট তুলনা মুলক হারে কমতে শুরু করেছে।সব কিছুওই হচ্ছে তথ্য ও প্রযুক্তির আর্শিবাদে। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্যপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের প্রচেষ্টা গুনে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে সভ্য দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন