বঙ্গোবসাগরের তলদেশে প্রথমিক অনুসন্ধান--অঢেল সম্পদের সন্ধান।
(রুহুল  আমিন  মজুমদার)

      ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ভারত এবং এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা (টেরিটোরিয়াল সি), ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অ-প্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার পেয়েছে। এ বিশাল অঞ্চলে কি পরিমাণ মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ১৯টি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্লু ইকোনমি বা নীল সমুদ্রের অর্থনীতি হিসেবে খ্যাত এ খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে পারলে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যাবে বাংলাদেশের।
  মন্ত্রনালয় সমুহ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিশেষজ্ঞকমিটি গঠন করে তাঁদের কর্মতৎপরতা শুরু করে।বিশেষজ্ঞরা তাদের রিপোর্টে মন্ত্রনালয়কে জানান,  সমুদ্রে মূলত দুই ধরনের সম্পদ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রাণিজ (লিভিং) ও অপ্রাণিজ (নন-লিভিং) সম্পদ। অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস, চুনাপাথর প্রভৃতি। খনিজের মধ্যে আরও রয়েছে ১৭ ধরনের খনিজ বালু। এর মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, মোনাজাইট, কায়ানাইট, লিকোঙ্নি উল্লেখযোগ্য। এ আটটি খনিজ বালু বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এগুলোর দামও বেশি। বঙ্গোপসাগরের অর্জিত সমুদ্রসীমা থেকে প্রায় ১০ লাখ টন এসব খনিজ বালু আহরণ করা সম্ভব। এছাড়াও সাগরের তলদেশে ক্লেসার ডেপোজিট, ফসফরাস ডেপোজিট, এভাপোরাইট, পলিমেটালিক সালফাইড, ম্যাঙ্গানিজ নডিউল, ম্যাগনেসিয়াম নডিউল নামক খনিজ পদার্থ আকরিক অবস্থায় পাওয়া যাবে। এদের নিষ্কাশন করে লেড, জিংক, কপার, কোবাল্ট, মলিবডেনামের মতো দুষ্কর ধাতুগুলো আহরণ করা সম্ভব হবে। এসব দুষ্কর ধাতু উড়োজাহাজ নির্মাণ, রাসায়নিককাজে এবং বিভিন্ন কলকারখানায় ব্যবহার করাযাবে।(সংগৃহিত)
      মহান সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় বাংলাদেশব্যাপি সমতল ভুমিতে একের পর এক তেল, গ্যাস,কয়লা, পদ্মার বালুচরে মুল্যবান ইউরিনিয়াম, সিমেন্ট তৈরীর উন্নতমানের কাঁচামাল প্রাপ্তির পর নতুন করে খবর আসতে শুরু করেছে বঙ্গোবসাগরের তলদেশেও প্রচুর উত্তোলনযোগ্য সম্পদ মজুদ রয়েছে।নি:সন্দেহে উক্ত সম্পদ প্রাপ্তি ছোট আয়তনের ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের জনগনের জন্যে উদ্বেলীত হওয়ার মতই সংবাদ।বাংলাদেশের চলমান অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে সমুদ্রের বিশালকায় সম্পদ,গরীব দেশের জনগনের জন্যে উক্ত সম্পদ অবশ্যই অমূল্য রত্মভান্ডার হিসেবেই চিহ্নিত হবে।
    জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাঙ্গালী জাতিকে দিয়েছেন, সর্বভৌম বাংলাদেশ।নৈরাশ্যবাদিরা যখন ষড়যন্ত্র করেছেন শেখ মজিব ভারতকে অত্র ভুখন্ড দিয়ে দিতেই পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে চায়, স্বাধীনতা চায়।এই দেশ চলবে কিভাবে, যেখানে একটা সুঁই বানাতে পারেনা যেই দেশের মানুষ।
    ষড়যন্ত্রকারিদের চক্রান্তের বিপরীতে বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে অঢেল সম্পদের প্রাচুয্য এবং সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার সম্পর্কে আশাবাদি করে স্বাধীনতার পক্ষে উদ্বেলীত করেছিলেন জাতিকে। ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙ্গালী জাতিকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন বলেই ২৫শে মার্চ হায়নারা বাঙ্গালী নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে তৎক্ষনাৎ বাঙ্গালী দামাল ছেলেরাও প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী অসম যুদ্ধে জয়ী হয়ে 'বাঙ্গালী' বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল।
    অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়, যে মহান ব্যাক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার আদেশ পাওয়ার পরও পাকিস্তানী শাষকগোষ্টি হত্যা করার সাহষ করেনি,মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। সেই মহান জাতির জনককে তাঁরই স্বাধীন দেশে কতিপয় বিপদগামি সেনাসদস্য '৭৫ এ ১৫ই আগষ্ট 'রাতের অন্ধকারে স্বপরিবারে হত্যা করে। বাংলাদেশের উন্নতি অগ্রগতি তথা জাতির জনকের "স্বপ্নের সোনার বাংলা" গড়ার অপার সম্বাবনাকে খুনিচক্র একরাতেই কবর রচনা করে।
     তাঁর জীবিত দুই কন্যার এককণ্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দীর্ঘ একুশবছর একই অভিযোগে একতরফা অপপ্রচার (ভারতের নিকট দেশবিক্রি) চালিয়েছে। শেখ হাছিনাও হাজারো ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে বার বার অশুভশক্তির মৃত্যু পরওয়ানাকে উপেক্ষা করে দুর্নীতি, দু:শাষন, লুটপাটের বিরুদ্ধে বিরামহীন সংগ্রাম অব্যাহত রেখে বাংলাদেশের জনগনকে একতাবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন।
    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রীত্বে মহাজোট ২০০৯ইং সালে বিশাল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে, আওয়ামী লীগের নেত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধ্র জৈষ্ঠকন্যা শেখ  হাছিনা সররারের প্রধানমন্ত্রীর শফথ গ্রহন করেন। বিগতদিনের জাতিসংঘ কতৃক পাঁছবারের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ, দারিদ্র সীমার নীছে অবস্থান প্রাপ্তের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সরকারের দায়িত্বগ্রহন করে বিচক্ষনতা, দেশপ্রেম, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে  তড়িৎ পদক্ষেপের মাধ্যমে  কঠোরভাবে সরকারের কায্যাবলী নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসেন।
    সরকারের স্থীরতার পর পরই তিনি বৃটিশ পাকদের কারসাজিতে পুর্ববঙ্গের হাতছাড়া ভুখন্ড---" যাহা পাকিস্তানের তেইশবছর শাষন, বাংলাদেশের ত্রিশ বৎসরের শাষনকালে কোন সরকার উক্ত ভুখন্ড উদ্ধার করার চেষ্টা করেনি, যদিও বঙ্গবন্ধু আদায়ের পথ খুলে রেখেছিলেন।সমুদ্রের বিশাল জলরাশির অংশ পড়ে আছে--"কোন সরকার দাবি করেনি, কোন সরকার জনগনকে জানতেও দেয়নি।" অজানা,  অ-প্রাপ্য সেই সমস্ত ভুমি ও জলরাশি উদ্ধার করে বাংলাদেশের সীমানা রেখাকে দ্বিগুনের চাইতেও বড় করেছেন একমাত্র জাতির জনকের কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী "শেখ হাছিনা"। তাই নতুন বাংলাদেশের জনক মানননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের জৈষ্ঠকন্যা "শেখ হাছিনা"।
    বঙ্গবন্ধু দেশ কাউকে দেননি--"তিনি আজম্ম সাধনায় ৫৫,০০০ বর্গমাইলের স্বাধীন সার্বর্ভৌম বাংলাদেশ বাঙ্গালী জাতিকে উদ্ধার করে স্বাধীন করে দিয়েছেন।" তাঁর জৈষ্ঠকন্যাও কারো নিকট দেশ বিক্রি করেননি--"নীজের জীবন এবং পরিবারের জীবনের তোয়াক্কা নাকরে "মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধুরাষ্ট্র ভারত এবং বার্মা থেকে নিয়ে এসেছেন একলক্ষ বর্গমাইলেরও অধিক ভুখন্ড।" অধিকৃত অংশের  মধ্যে "দশহাজার একর চাষযোগ্য ভুমি"ও অন্তভুক্ত রয়েছে। এত বড় বিশাল অর্জনের পিছনে--"তিনি এককনা বারুদ খরছ করেননি, একজন সৈন্যও মোতায়েন করেননি, আকাশে একটিও জঙ্গিবিমান উড়াননি, তাঁর একবাক্য সামরিক হুমকির ও প্রয়োজন হয়নি।" "যাহা বিশ্ব ইতিহাসে অতীতে কখনই সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও  কখনই হওয়ার সম্ভাবনা নেই"।
    আজকের  শক্তিশালী দেশসমুহের অন্তজ্বালা সৃষ্টি করে রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে "শেখ হাছিনার অর্জিত বাংলাদেশের  সম্পদরাজির প্রাচুর্য্য।" তাঁরা জাতির জনকের "সোনার বাংলা" গড়ার স্বপ্নকে বানচাল করতে তাঁকে হত্যা করার জন্যে যাঁদেরকে ভাড়া করেছিল '৭৫ এ আজকেও তাঁর কন্যার "ডিজিটাল বাংলাদেশ" এর স্বপ্নকে বানচাল করতে এবং তাঁকেও হত্যা করার জন্যে তাঁদেরকেই ভাড়ায় নিয়েছে।তাঁদের আন্দোলন সংগ্রামের জোট এবং  ধরন দেখেই বুঝা যায় তাঁদের উদ্দেশ্য কি?
    বিশ্বের কোন দেশেই  রাজনৈতিক  কর্মসূচিতে কোন গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের ইতিহাসে নেই আগুনসন্ত্রাস, পেট্রোল বোমাবাজি, লুটপাট, নাশকতা, হত্যা, গুম রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করার হঠকারিতা।  একমাত্র বাংলাদেশে জাতির জনকের কন্যা "শেখ হাছিনা"কে খমতা থেকে সরাতে মোড়ল রাষ্ট্র সমুহ 'সম্মিলীত অ-শুভজোট'কে তাই করার অনুমোদন দিয়েছে। তাঁরাও একই সাথে "বিপজ্জনক রাষ্ট্র" বাংলাদেশ কর্মসুচি যুগৎপৎ এযাবৎকাল পালন করেছে। বাংলাদেশের সম্মিলীত অশুভ শক্তির 'মহাজোট' সাময়িক পরাজয়ের পর তাঁরও গতমাসে কর্মসূচি আপাতত: প্রত্যাহার করে সাময়িক পরাজয় বরণ করে নিয়েছে। বাংলাদেশের অশুভশক্তির যেমন লজ্জাবোধ নেই তাঁদেরও পরাজয়ে গ্লানি নেই--"তাই তো সর্বমহলে বঙ্গকন্যাকে নিয়ে যত ভয়"।
        ruhulaminmujumder27@gmail.com
        "জয়বাংলা     জয়বঙ্গবন্ধু"
   

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন