সাতখুনের মামলার রায়----" সরকারের  আইনের শাষন প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গিকার পূরণে যুগান্তকারি দৃষ্টান্ত"।
        (রুহুল  আমিন  মজুমদার)
-
          নি:সন্দেহে বাংলাদেশের এযাবৎ সংঘটিত লোমহর্ষক, চাঞ্চল্যকর, দেশে বিদেশে আলোচিত হত্যাকান্ড গুলীর মধ্যে নারায়ন গঞ্জের ৭খুনের ঘটনাটি অন্যতম না হলেও একটি।সরকারের প্রশাসন যন্ত্র, আইন শৃংখলা বাহিনী এবং পাবলিক সহযোগে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় হত্যাকান্ড গুলির মধ্যে ১৫ই আগষ্ট, ২১ শে আগষ্ট, জেল হত্যা, কিবরিয়া হত্যা, আহসান উল্যা মাষ্টার হত্যা, চট্রগ্রামে শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টায় সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের হত্যা,  উদিচি হত্যাকান্ড, রমনা বটমুলে হত্যাকান্ড গুলি অন্যতম হলেও তখনকার সরকার প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডকে ধামাচাপা দিয়ে ইতিহাসে কালোধ্যায় সৃষ্টি করেছিল।
   দেশের বিভিন্ন সেনাসদর সমূহে নাটকীয় অভ্যুত্থানের অজুহাতে অগনিত মেধাবি তরুন সেনা কর্মকর্তা হত্যা সংগঠিত হলেও কোন হত্যাকান্ডের অদ্যাবদি তদন্ত পয্যন্ত হয়নি।আনসার সদর দপ্তরে তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষে সংগঠিত হলে তাঁদেরকে 'আনসার বিদ্রোহে''র নামে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর যুগৎপত গুলি ও বোমা হামলার মাধ্যমে নির্বিচারে হত্যার ন্যাক্কারজনক ইতিহাসও এদেশে সংগঠিত হ'তে দেখা গেছে। যদিও অনেকগুলি প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্নও করা হয়--"আনসার বাহিনীর ন্যায় গুলি,বন্দুকহীন একটি বাহিনী সত্যিকার অর্থে বিদ্রোহ যদিও বা করে থাকে- সেই বিদ্রোহ কতদিন  পয্যন্ত তাঁরা চালিয়ে যেতে সক্ষম ছিল।"

    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭৫ ইং সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘ একুশ বছর অপ-প্রচারের শিকার হয়ে দেশ ও জনগনের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।বিরুধী দলে থেকেও সেনা শাষিত সরকারের সামরিক আইন প্রত্যাহার থেকে শুরু করে--স্বৈরাচার সরকার, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা, জনগনের মৌলিক অধিকার, ব্যাক্তি ও বাক স্বাধীনতা,সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, সভা সমাবেশের স্বাধীনতা, তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, ভোট ও ভাতের অধিকার, সর্বশেষ চারদলীয় জোট ও তত্ববধায়ক সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার সংগ্রাম অব্যাহত রাখে এবং ২০০৯ ইং সালের সাধারন নির্বাচন দিতে বাধ্য করে। বাংলাদেশকে সত্যিকারের গনতন্ত্র, উন্নয়ন, মৌলিক অধিকার,কল্যান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা, গনতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনতে গিয়ে বহু নেতাকর্মীকে রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হয়েছে,অনেক নেতাকর্মী সরকারের পৃষ্টপোষকতায় হত্যা, গুমের শিকার হয়েছে।

      অবশেষে ২০০৯ইং সালের সাধারন নির্বাচনে বিপুল সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে সরকার গঠন করে।সরকার গঠনের তিনমাসের মাথায় এযাবৎকালের সর্ব বৃহৎ লোমহর্ষক ঘটনা সংগঠিত হয় ঢাকা তৎকালীন  বি, ডি আর সদর দপ্তরে। "ফখরুল-মঈন আহম্মদে"র সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের শাষনামলে বি, ডি আর জোয়ানদের মধ্যে তিলে তিলে  রোপিত বীজ অবশেষে ঘৃনা আর ক্ষোবে রুপান্তরীত হয়। দেশী বিদেশী শক্তির মদদ পেয়ে উক্ত ঘৃনা ও ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটায় তাঁরা সেনাবাহিনীর ৬০/৭০ জন মেধাবি কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে।নতুন সরকারের জন্যে উক্ত বিদ্রোহ দমন এবং বিদ্রোহে অংশ নেয়া সদস্যদের বিচারের মুখামুখী করা, ষড়যন্ত্রকারি, ইন্দনদাতা  খুঁজে বের করে তাঁদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা, নি:সন্দেহে কঠিন একটি কাজ ছিল। শেখ হাছিনার সরকার সকল প্রকার রক্তপাত এড়িয়ে উক্ত ঘটনা অত্যান্ত স্বাভাবিক এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে  নিয়ন্ত্রন করেন এবং কি ঘটে যাওয়া মানবতা বিরুধী কর্মকান্ড ও সেনা কর্মকর্তা  হত্যার বিচার একাধিক দেশী বিদেশী  তদন্ত দলের দেয়া প্রতিবেদনের আলোকে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াও সমাপ্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করেন।

      বাংলাদেশের জনগনের আকাংক্ষীত     আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার লক্ষে '৭১ইং সালের মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া একাধিক আন্তজাতিক মানসম্পন্ন ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার ককায্য শুরু করে বর্তমান সময় পয্যন্ত চলমান রেখেছেন। ইতিমধ্যে শীর্ষ অপরাধী কয়েকজনের সাজা বাস্তবায়িত হয়েছে। '৭৫ ইং সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার ৯৬ইং সালে আওয়ামীলীগ সরকার শেখ হাছিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর শুরু করে নিম্ন আদালতের রায় পয্যন্ত চালিয়ে নিতে পেরেছিল।২০০১ ইং সালে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা না হওয়ায় উক্ত রায় কায্যকর করা সম্ভব হয়নি।চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে বিচারক স্বল্পতার অজুহাতে উক্ত বিচার কায্যক্রম দীর্ঘ পাঁছ বছর অঘোষিতভাবে স্থগিত করে রাখে।২০০৬ ইং সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার উচ্চ আদালতের রায় সাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারিদের সাজা কায্যকর করে।'

১৯৯৬ইং সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাছিনা  সরকার গঠন করে শুধুমাত্র জাতির জনক এবং তাঁর পরিবারের হত্যাকান্ড নয় জেলখানার অভ্যন্তরে চার জাতীয়নেতা হত্যা সহ পরবর্তী প্রায় সকল চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের বিচার কায্যক্রম শুরু করে।অধিকাংশ মামলা নিস্পত্তি হলেও  কিছু মামলা এখনও চুড়ান্ত নিস্পত্তির অপেক্ষায় উচ্চ আদালতে রয়েছে। আশা করা যায় প্রত্যকটি মামলার বিচার সম্পন্ন হবে এবং হত্যাকারি শাস্তির আওতায় আসবে।দীর্ঘ বিরতির কারনে অনেক মামলার সাক্ষী  হয় মৃত্যু বরন করেছে নয়তোবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় বেশীরভাগ মামলার আলামত পয্যন্ত ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে অথবা সুরক্ষিত আদালত কক্ষ হ'তে মামলার ডকেট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাদী-সাক্ষী, আলামত ইত্যাদি সংগ্রহ করে মামলাগুলী প্রমান করা সত্যি এক কঠিন ব্যাপার।তারপরও আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার পুরনে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে প্রত্যকটি মামলা নিস্পত্তির উদ্যোগ গ্রহন করেছে।

      ২০১৪ইং সালের সাধারন নির্বাচনের পর সরকারি বাহিনী ও ষড়যন্ত্রকারিদের যোগসাজসে সবচেয়ে বড় ও চাঞ্চল্যকর হত্যা কান্ডটি ঘটে নারায়ন গঞ্জ। সরকারের সবচেয়ে  উন্নত, চৌকস বাহিনী কতিপয় দুস্কৃতিকারীর প্ররোচনায়  সাতজন বিশিষ্ট নাগরিককে ঐদিন একই সাথে অপহরন করে হত্যা করে এবং কি  লাশ ঘুম করে।সাড়া জাগানো হত্যাকান্ড দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি সাংঘাতিক ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। উক্ত ঘটনা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় ষড়যন্ত্রকারিরা প্রকাশ্য অ-প্রকাশ্য বলতে থাকে-- "হত্যাকান্ডের বিচার সরকার ধামাচাপা দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।" সরকার উক্ত হত্যার বিচার করবেনা বা  করতে পারবে না।আদালত পাঁড়ার ভিতরে বাহিরে আসামী পক্ষের উদ্যত আচার আচরন বিরুধী পক্ষের অভিযোগের সত্যতা অনেকাংশে প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভুমিকা পালন করে। সাধারন মানুষও অনেকাংশে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিল হত্যাকারিদের নিশ্চয়ই সরকারের সাথে যোগসাজস রয়েছে।আসামীগন এতবড় ঘটনা করার পরও ছিল স্বাভাবিক কোন কোন ক্ষেত্রে প্রভাব প্রতিপত্তিও দেখা গেছে চোখে পড়ার মতই।

      নারায়ণগঞ্জের র্যব-১১-এর তৎকালীন সদস্যরা অপহৃত সাতজনকে  প্রথমে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে  অচেতন করেন। তারপর মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। সর্বশেষ নদীতে ফেলার সময় লাশগুলোর পেট চিরে দেন তাঁরা। জড়িত র্যব সদস্যদের জবানবন্দিতেই উঠে এসেছে ঘটনার নৃশংসতার বিবরণ।

      অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অদ্য  ৭খুনের মামলায় র্যব কর্মকর্তা সহ ২৬ জন প্রভাবশালী হত্যাকারির মৃত্যুদন্ডের রায়ের মাধ্যমে বিচার কায্য সম্পন্ন হয়েছে।সন্দেহ প্রবন সকল পক্ষের মুখে চুনকালি মেখে চাঞ্চল্যকর হত্যার বিচারের মাধ্যমে প্রমান হল বর্তমান সরকার আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার থেকে চুল পরিমানও বিচ্যুত হয়নি। বাংলাদেশকে সভ্য দুনিয়ায় একটি সভ্যদেশ ও জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা সর্বাজ্ঞে প্রয়োজন।বর্তমান শেখ হাছিনার সরকার প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সরকার প্রধান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সরকার সমুহের "ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কায্যকর একটি অমানবিক শাস্তির বিধান" অজুহাতে "ফাঁসি রহিতকরনের জন্য প্রচন্ড চাপ,দেশের অভ্যন্তরে সম্মিলীত অশুভশক্তির সকল ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে আদালতের দেয়া প্রত্যেকটি সাজা কায্যকর করেছে।বাংলাদেশকে এযাবৎ কাল  চলে আসা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত করার লক্ষে নীজের এবং পরিবারের জীবনহানীকেও তোয়াক্কা করেননি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী।তিনি এবং তাঁর সরকার  দৃডতার সাথে আইনের শাষন প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন---"তার উৎকৃষ্ট একটি প্রমান নারায়ন গঞ্জে সংঘটিত ৭জন বিশিষ্ট নাগরিক হত্যায় জড়িত সরকারের আইন শৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে এবং কি বিদ্যমান আদালতের মাধ্যমে বিচারকায্য সম্পন্ন করে সাজা নিশ্চিত করেছেন।"
   অতীতের কোন সরকার দেশে আইনের শাষন প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য কোন উদাহরন সৃষ্টি করতে পারেননি যাহা বর্তমান সরকারের আজকের দিনেও একটি বড় উদাহরন স্থাপিত হল ।

            masterruhulamin@gmail.com
              "জয়বাংলা----------জয়বঙ্গবন্ধু"

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন