নির্বাচনে অগ্রিম শর্তারোপ ঘোড়ার আগে গাড়ীর আমদানী---"সরকার বিরুধী শিবিরে নেতৃত্ব সংকটের বহি: প্রকাশ।
     (রুহুল  আমিন  মজুমদার)

      প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ১২/১/২০১৭ ইং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন।আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।  প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রত্যাশার জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম মোট ছয়টি শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেন:--"‘আমরা তো নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে।’১৩/১ শুক্রবার বিকালে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপি নেতা। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের তিন বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের জবাব দিতেই এই সংবাদ সম্মেলন করেন ফখরুল।

  প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেছিলেন--'দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোট বর্জন করলেও আগামী নির্বাচনে সব দল আসবেন এবং ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন।’

  নির্বাচনে অংশগ্রহনের প্রশ্নে বিএনপি নেতা ফখরুল, একটি ‘নিরপেক্ষ, সাহসী, যোগ্য নির্বাচন কমিশন’ গঠনের পাশাপাশি ছয়টি শর্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি বাকি যেসব শর্তের কথা বলেছেন, সেগুলো হলো- ‘১. বিরোধী দল নির্মূল করার যে প্রক্রিয়া চলছে তা বন্ধ করতে হবে। ২. সকল রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দিতে হবে। ৩.মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৪. সভা, মিছিল, সমাবেশ করার সমান সুযোগ দিতে হবে। ৫. গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিতে হবে।

     সম্মানীত পাঠক বর্গ-আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন---আমার বিগত দিনের অনেকগুলী লেখাতেই উল্লেখ করেছিলাম---"বিশদলীয় জোট(মুলত: বিষ দলীয় জোট) বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুলত: সকল অশুভ শক্তির সম্মিলীত অবস্থান।তাঁরা গনতন্ত্র কি, কিভাবে গনগন্ত্র সুরক্ষা হতে পারে, নির্বাচন এবং গনতন্ত্রের মধ্যে সম্পর্ক কি ইত্যাদি কোন কিছু জানার তাঁদের প্রয়োজন নেই।"গনতন্ত্র, আইনের শাষন, সুশাষন, উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি, আধুনিকতা, প্রযুক্তি, ইত্যাদি কল্যান রাষ্ট্রে পরিনত হওয়ার উপযোগী ব্যবস্থা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিশ্চিত করার প্রয়োজন আছে কিনা তাঁদের চিন্তায়ও নেই, লক্ষেও নেই,অতীতে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন ভিশনও ছিলনা, তাঁদের মুল লক্ষ কেবলমাত্র কয়েকটি ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষে পরিচালিত।তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়তি দিক হচ্ছে----

(১) ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল। ক্ষমতার জোরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশকে ক্রমশ: নিয়ে যাওয়া,বাংলাদেশকে মধ্যযুগীয় শাষনব্যবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া।
(২)জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে আনীত তত্বাবধায়ক সরকারের শাষনামলের মামলা সমূহ হতে রক্ষা, সমুহ অবশ্যাম্ভাবী সাজা থেকে রক্ষায় প্রচলিত  আইন, আদালতের তোয়াক্কা না করে প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাধ্য করা।
(৩) মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরুধী অপরাধে অনুষ্ঠিত বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করার উদ্দেশ্যে ঘোলাটে পরিস্থীতি সৃষ্টি করা। সরকারকে বাধ্য করা মামলা প্রত্যাহারে। পরাজিত শক্তি সুখে শান্তিতে রাষ্ট্রীয় আনুকুল্যে বসবাসের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা।

      উল্লেখিত কায্যসাধনে ২০১৪-১৫ ইং সালে নেয়া তাঁদের সকল হিংসাত্মক উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর দল ও জোট রক্ষা তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠে। দেশী বিদেশী চক্রান্ত ব্যর্থ হলে 'জোট ও দল'  চার দেয়ালের অভ্যন্তরে 'বিবৃতি" 'হুমকি-ধমকি' সর্বস্ব হয়ে পড়ে। রাজপথে নামার হাজারো ইস্যু পেলেও শীর্ষনেতার আজ্ঞাত নিরবতায় অন্যসকল উধ্বতন নেতৃবর্গ স্ব-স্ব কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়েন। এমনতর সময়ে বিএনপি দলের জাতীয় সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে আসে। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থীতি নেতৃবৃন্দ আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু সম্মেলন শেষে নেতা নির্বাচনে গনতন্ত্রহীনতা তাঁদের সকল স্বপ্ন তৎক্ষনাৎ ধূলায় মিশিয়ে দেয়।

    দীর্ঘ দিন অপক্ষা করেও গনতন্ত্রহীনতার ধকল কাটিয়ে উঠতে না পেরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও আলোর মুখ দেখেনি।শেষপয্যন্ত কমিটি ঘোষিত হলেও উক্ত কমিটি থেকে বেশ কিছু ক্ষমতাধর শীর্ষ নেতার তাৎক্ষনীক নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষনা সারা দেশের উৎসুক নেতাকর্মীদের হতাশায় নিমজ্জিত করে। তাছাড়াও দলের শীর্ষ পয্যায়ে ইসরাইল কানেকশানের নিমিত্তে নিয়োগ দেয়া অখ্যাত অজ্ঞাত চট্রগ্রামের একব্যাবসায়ী সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে গোয়েন্দা জালে আটকে গেলে মুলভরসা সাম্প্রদায়িক গোষ্টির সঙ্গে জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার সম্পর্কে চিড় ধরে।অনেক ইসলামী দল জোটত্যাগ করে আলাদা অবস্থান নিলে জোটগত ভাবে বিএনপি আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

       সরকারি দলের জন্য রাজপথ শুন্যতা স্বর্গীয় সুখের বার্তা বয়ে নিয়ে আসতে থাকে।এযাবৎ কালের সেরা সময় হাতে পেয়ে সরকার তাঁর কাংখীত লক্ষ অর্জনে সকল মেধা ঢেলে দিয়ে দেশকে উন্নয়ন অগ্রগতির মহাসড়কে তুলে আনতে সক্ষম হয়।দেশে বিদেশে সরকারের স্তুতিতে দিশেহারা বিএনপি এবং তাঁদের জোট রাজপথে নামার সুযোগ খুজতে থাকে। দুই বছরেরও অধিককাল অপক্ষার পর সেই মোক্ষম সুযোগও তাঁরা পায়।নির্বাচন কমিশন কতৃক স্থানীয় সরকারের ইউপি এবং পৌরসভা নির্বাচনের দিনক্ষন ঘোষিত হলে।

    উক্ত নির্বাচনে শত চেষ্টা করেও ইতিমধ্যে সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে প্রার্থীও দিতে পারেনি।অনেক স্থানে প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও তাঁদের বেশীরভাগ মার্কা নিয়ে ঘরে বসে থাকে।দেশের কোথাও সামান্যতম প্রতিযোগিতা গড়ে তোলার নেতাকর্মী তৃনমূলে পাওয়া যায়নি।ফলে নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর চেয়েও কম ইউপি এবং পৌরসভায় নির্বাচিত হওয়ায় তাঁদের রাজনৈতিক  অবস্থান তৃনমূলে তলানীতে নেমে আসে।

        বিএনপি এবং তাঁদের জোটের এহেন দুর্বলতাকে সরকারি দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শতভাগ কাজে লাগিয়ে অঞ্চল অনুযায়ী পঁচা, পুঁতিগন্ধময় আত্মীয়স্বজন--"যেখানে যে ছিল,সবাই সবাইকে দলীয় নমিনেশন দিয়ে দেয়।" কোথাও বা মনোনীত প্রার্থীদেরকে টাকার  মেশিন বানিয়ে ব্যাক্তিস্বার্থের আখের গুছিয়ে নেয়। বিএনপি এবং জোটের একাধিক কেন্দ্রীয় নির্বাচন্ পয্যবেক্ষক টিমের রিপোর্টে দলীয় হযরলব অবস্থার চিত্র ফুঁটে উঠার কারনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সুষ্ঠতা নিয়ে তেমন জোরালো কোন অবস্থান নেয়ার সাহষও করতে পারেনি।"ছেড়ে দে মা--কেঁদে বাঁচি" অবস্থায় আন্দোলন সংগঠিত করার চিন্তাও করেনি।তৃনমূলের বেহাল দশা উধ্বতন মহল, সরকারের দমন পীড়নের ফসল হিসেবে আত্বতুষ্টির অভিনয়ে কর্মীদের চাঙ্গা রাখার কৌশল অবলম্বন করে।

              এমতবস্থায় তাঁরা দুটি সুনির্দিষ্ট কায্যপদ্ধতি বিবেচনায় নেয়-----(১) সরকারের সঙ্গে সহযোগীতামুলক রাজনীতির(মুলত: প্রতারনা) মাধ্যমে রাজপথে অবস্থান নিশ্চিত।

(২)উপযুক্ত ইস্যু নির্বাচিত করে রাজপথে জামাতবিহীন আন্দোলন সংগঠিত করে শক্তির মহড়া প্রদর্শন। উল্লেখীত দুই ইস্যুতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে বিএনপি এবং তাঁর অ-শুভ জোট।

    ইত্যবসরে উল্লেখীত প্রথম সুযোগটি তাঁদের হাতের নাগালে এসে যায়--"হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলাকে ইস্যু করে সরকারের দুর্বল মুহুর্তকে কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপি "জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টির" ধুম্রজাল সৃষ্টি করে।তাঁদের পক্ষের গোটা পঞ্চাশেক বুদ্ধিজীবি "জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা নিয়ে ইলেকট্রোনিক মিড়িয়ায় দীর্ঘ আলোচনা, পত্র পত্রিকায় প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গুটি কতেক পত্রিকায় উপযাজক সেজে সম্পাদকীয়--উপসম্পাদকীয় রচনা করতে থাকে।  সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার হিড়িক পড়ে যায়--যেন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিকে ছাড়া বিদেশী জঙ্গীহামলা, জঙ্গী উত্থান রোধ, সরকারের একার পক্ষে কোন অবস্থায় সম্ভব হবেনা। তাঁরা বিদেশী শক্তির উৎস হিসেবে "জঙ্গী হামলা গুলি"কে চিত্রিত করতে থাকে।উদ্দেশ্য পরিস্কার--"তাঁরা যেহেতু ব্যর্থ হয়েছে বিদেশী বৃহৎ শক্তি কতৃক বাংলদেশ আক্রান্ত হোক, তাঁদের উপলক্ষ করে অ-শুভ জোটটি উদ্দেশ্য সাধন করে নেয়া"। সরকার তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ঘন ঘন উদ্দেশ্য প্রনোদিত আহব্বান জানাতে থাকে।

       বাংলাদেশের জনগন অতীতে দলটির রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে সম্যক অবগত আছে।সরকার জনগনের মনের ভাষার প্রতিধ্বনী অনুভব করতে সক্ষম হয়। ফলে  সরকার প্রধান কতৃক তৎক্ষনাৎ তাঁদের আহব্বান প্রত্যাখ্যান করে জনগনের ঐক্য কামনা করা হয়।এই যাত্রাও তাঁরা বিমুখ হয়ে দ্বিতীয় ইস্যুটির অপেক্ষায় থাকে।ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সুযোগটিও হাতের নাগালে এসে যায় "নাসিক" নির্বাচন ঘোষিত হলে। এর আগে ঘোষিত "জেলা পরিষদ নির্বাচনে" অ-ঘোষিত অংশ গ্রহন না করে "নাসিক" নির্বাচনকে একাধিক রাজনৈতিক বিকল্প ব্যবস্থা হাতে রেখে অংশ নেয়ার ঘোষনা প্রদান করে।

   বিকল্পগুলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য--(১)নির্বাচন সুষ্ঠ ও অবাধ হলে দেশে-বিদেশে সমালোচিত এবং বিশিষ্টজনদের ধারনা-- "বিএনপি দলের পতনের অন্যতম কারন জামায়াত সংশ্লিষ্টতা" তাঁদের ব্যাতিত দলীয় জনসমর্থন যাছাই।

(২) উক্ত নির্বাচনে সরকার বা নির্বাচন কমিশন যদি পক্ষপাতিত্ব করে, ভোট কারচুপির আশ্রয় গ্রহন করে; তবে প্রচার প্রপাগান্ডার মাধ্যমে রাজপথে নামার ইস্যু পাবে।  তাঁদের দেয়া নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পক্ষে যুক্তি দিয়ে জনমত পক্ষে নেয়া সম্ভব হবে। বর্তমান সরকার কতৃক অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয় এবং  অ-জনপ্রিয়তার অজুহাতে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ে দেশী-বিদেশী শক্তির দৃষ্টি আকর্ষন করাও সহজ হবে।

        উক্ত বিষয়ের আলোকে জামায়াতকে পরিক্ষামূলক বাহিরে রেখে বিএনপি এবং অন্যান্ন দলের দলীয় সর্বশক্তি নিয়োগ করার মানসে একাধিক কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা, পয্যবেক্ষন, তদারকি কমিটি গঠন করে। গঠিত কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিক টিমের নেতৃত্বে  সর্বস্তরের নেতাকর্মী নির্বাচনী কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে।ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রশ্নে "রাষ্ট্রপতির" সাথে সংলাপ বৈঠকের আমত্রন পেয়ে দলীয় প্রধানের নেতৃত্বে অংশগ্রহন করে-- "নির্বাচন কমিশন সংস্কার  প্রস্তাব উত্থাপন করে"।"নাসিক" নির্বাচন নিয়েও নিরপেক্ষতার গ্যারান্টি নিয়ে যথারীতি উৎসব মূখর পরিবেশে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে। নির্বাচনের দিন সার্বক্ষনীক  নেতাকর্মীদের কেন্দ্রিয় অফিস থেকে নির্দেশনার মাধ্যমে  সর্বশক্তি নিয়োগ করে সন্ধায় ভোট গননায় চরম ভাবে হেরে যায়।
   
       তাঁরা নাসিক নির্বাচনের আগে 'মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব আবদুল হামিদের' সঙ্গে দেখা করে বলেছিল--"রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে--আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট।" রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রশ্নে যে সিদ্ধান্ত নেন, সেই সিদ্ধান্ত তাঁরা মেনে নিবেন। তাঁদের সাংগঠনিক সকল শক্তি কাজে লাগিয়ে যখন এযাবৎকালের সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ,অবাধ নির্বাচনে চরম পরাজিতভাবে হয়----"তখন নতুন করে তাঁদের চেতনা ফিরে আসতে থাকে।" তাঁরা বুঝতে পারে--"তাঁরা  এতদিন জনসমর্থনের স্বপ্নের জগতেই বাস করেছেন"। মুলত: জনগন তাঁদের থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।

       সুতারাং বিগত 'ফখরুল-মঈন' এর সেনাসমর্থিত সরকার কতৃক "জিয়া পরিবারে"র বিরুদ্ধে দায়ের করা লুটতরাজ এবং মানবতা বিরুধী অপরাধ ট্রাইবোনালের বিচার থেকে রক্ষা পাওয়া রাষ্ট্রক্ষমতা রদবদল ছাড়া আর সম্ভব হবেনা। জামায়াতে ইসলামী এবং জিয়া পরিবারহীন জোট বাংলাদেশে এইমহুর্তে আওয়ামী জোটের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে অবতিন্ন হয়ে বিরুধীদলের আসন রক্ষা করাও সম্ভব হবেনা। "নাসিক" নির্বাচন স্পষ্টত: তাঁদেরকে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে।

    গনতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসতে হলে তাঁদেরকে গনতন্ত্রের অন্যতম মাধ্যম সাধারন  নির্বাচনে অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ট আসনে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। বিএনপি এবং তাঁর জোটের এইমহুর্তে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির মহাসড়কে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগ এবং তাঁর মহাজোটকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসা কোন অবস্থায়  সম্ভব হবে না। "নজীর বিহীন অবাধ ও সুষ্ঠ "নাসিক" নির্বাচনে চরম ভরাডুবি তাঁদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে চোখ খুলে দিয়েছে"। ফলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ এবং সংলাপ পরবর্তী হাস্যজ্জল আত্মতুষ্টির বিবৃতি--"রাষ্ট্রপতির অন্যান্ন দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে; নির্বাচনের দুই বছর আগে থেকে দফাভিত্তিক দাবিনামা উত্থাপন করে--"পুনরায় অরাজকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার ইঙ্গিতই দিচ্ছে।"
   
    তাছাড়াও ইতিপুর্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংলাপে অংশগ্রহনের আমন্ত্রন পেয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাছিনার নেতৃত্বে গনভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সক্ষাৎ করে--"অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে  চারদফা মতামত সংবলিত প্রস্তাব উত্থাপন করে।" তম্মধ্যে ছোট বড় সকল দলের সাথে প্রায়  সামঞ্জস্য শর্ত "নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধানের আলোকে আইন প্রনয়নে"র প্রস্তাবও রয়েছে।নতুন আরেক একটি বিষয় সংযোজন করে--'উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নির্বাচনকে সুষ্ঠ গ্রহনযোগ্য, অধিকতর স্বচ্ছ, আধুনিক নির্ভেজাল করার লক্ষে উন্নত প্রযুক্তি "ই-ভোটিং" ব্যবস্থাপনার প্রস্তাবও উত্থাপন করে"।
   
      উল্লেখ্য যে উপরে উল্লেখিত দু'টি বিষয়ের কোনটিই বিএনপি উত্থাপিত প্রস্তাবের মধ্যে নেই।ছোট বড় সকল দলের যেহেতু উল্লেখীত নির্বাচন কমিশন গঠনে ''আইন প্রনয়ন' বিষয়টি যুক্ত হয়েছে--রাষ্ট্রপতিও ইহা গ্রহন করার নিশ্চিত  সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নতুন উত্থাপিত প্রস্তাব "ই-ভোটিং" ব্যবস্থাপনা যেহেতু স্বচ্ছ, গ্রহনযোগ্য, নির্ভেজাল প্রযুক্তি নির্ভর, উন্নত বিশ্বে আগে থেকেই প্রচলিত সেহেতু জাতীয় ও আন্তজাতিক নির্বাচন পয্যবেক্ষন সংস্থা, উন্নত দেশসমুহের সরকার প্রধান, বিদেশী কূটনৈতিক মহলের নিকট ইহা অধিকতর গ্রহনযোগ্য "প্রস্তাব" এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে বর্তমান সরকারের আন্তরীকতার বহি:প্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।
   
    উল্লেখীত দু''টি বিষয় রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে নির্বাচন নিয়ে কোনপ্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করা বিজিত দলের সম্ভাবনা শূন্য শতাংশও থাকবেনা।সুতারাং নির্বাচন পরবর্তী চরম পরাজয়ের গ্লানি মোচার অন্যতম উপায় হাতছাড়া হওয়ার আশংকায় শর্তযুক্ত দাবীনামা উত্থাপন করে----"নির্বাচনে অংশগ্রহন না করে ষড়যন্ত্রের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে বিএনপি এবং তাঁর গঠিত অ-শুভ জোট।"
   
     বিশ্বব্যাপি সমাদৃত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার রদবদলই একমাত্র রাষ্ট্রীয় শাষন পরিবর্তনের স্বীকৃত উপায়। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে "নির্বাচন কমিশন" গনতান্ত্রিক সরকারের "সাংবিধানিক স্বশাষিত" শক্তিশালী মাধ্যম গুলীর অন্যতম একটি মাধ্যম। নিয়মিত মেয়াদান্তে নির্বাচন কমিশন কতৃক সরকারের সর্বস্তরে "নির্বাচনে অংশ নেয়া সকল দল ও ব্যাক্তির" প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের একমাত্র সাংবিধানিক দায়িত্ব। ঘোষিত নির্বাচনে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশনে তালিকাভুক্ত  দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের  স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহন নিশ্চিত থাকা বাঞ্চনীয় নয়। গনতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, অংশগ্রহন মুলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে প্রয়োজন একাধিক সমশক্তি সম্পন্ন গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও জোট। ঐ সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্যে প্রয়োজন সু-শিক্ষিত কর্মীবাহিনী, বুদ্ধিদিপ্ত নেতা, দলীয় মুলনীতি নির্ভর আদর্শ, দলীয় উদ্দেশ্য সাধনের বিস্তারীত বিবরণ সংকলিত গঠনতন্ত্র, নির্দিষ্ট কর্মসূচি সংবলিত লিখিত নির্বাচনী অঙ্গিকার বা মেনিফেষ্টো।

      দু:খ্যজনক হলেও সত্য--"বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধুনিক, দেশপ্রেমিক, দেশ ও জনগনের কল্যানকামী গনতান্ত্রিক সরকার বিরুধী রাজনৈতিক দলের প্রকট সংকট বিরাজমান।' এই সত্যটি এইমহুর্তে আরো প্রকট আকার ধারন করেছে বলে মনে হচ্ছে।

     ২০১৬ ইং সালে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের তিনটি স্তর সহ তাঁর আগে ২০১৪ ইং সালের ৫ই জানুয়ারী অনুষ্ঠানেয় জাতীয় সংসদের নির্বাচনে সরকার বিরুধী শক্তিশালী কোন দলের অবস্থান পরিলক্ষিত হয়নি। স্থানীয় সরকারের তিনস্তরেই   বিদ্যমান রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যাতিত অন্যকোন দলের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহনও পরিলক্ষিত হয়নি। অনুষ্ঠানেয় জাতীয় নির্বাচনেও একই  পরিস্থীতি বিরাজমান থাকায় গনতন্ত্র কক্ষচ্যুতির সম্ভাবনায় অভিজ্ঞমহল, বুদ্ধিজীবি, জাতীর বিবেক বলে পরিচিত সব মহল আশংকীত হয়ে পড়ে।বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র সমূহের সরকার ও জনগন হতাশ হয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে।

    এমত:বস্থায় জাতিরজনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা গনতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্র সম্প্রসারীতকরনে বিভিন্ন পদক্ষেপ, জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টা, চলমান গনতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা, নাগরিক অধিকার  সুরক্ষা, দেশ ও জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতিতে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ  দেশী বিদেশী সর্বমহলে ব্যাপক প্রসংশীত হতে থাকে। বাংলাদেশের জনগন শেখ হাছিনার সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং তাঁর সরকারের নেয়া নানামূখী গনতান্ত্রিক পদক্ষেপ সমুহে বাংলাদেশকে  গনতন্ত্রের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গিকার স্পষ্ট হয়ে উঠে। শেখ হাছিনার গনতান্ত্রিক নেতৃত্ব বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয় এবং তাঁর প্রতি দৃড আস্থা স্থাপিত হয়।
   
    একদিকে অর্থনৈতিক স্বাবলবিতা অর্জনের লক্ষ পূরণে দেশব্যাপি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ অন্যদিকে দেশ ও জনগনের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের অনমনীয় মনোভাব বাংলাদেশের জনগনের সু-দৃষ্টি সরকারের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে।অপরপক্ষে সরকার বিরুধী শিবিরে ব্যাক্তি ও দলীয় স্বার্থ প্রাধান্য নির্ভর আন্দোলন সংগ্রামে জনগনের সম্পৃত্ততা নিম্নমূখী হতে হতে তলানীতে ঠেকে।এমতবস্থায় যেকোন বিশ্বব্যাপি সমাদৃত গনতান্ত্রিক সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা দখল কস্মিনকালেও সম্ভব হবেনা ইতিমধ্যেই তাঁদের সম্যক উপলব্দিতে এসেছে।
   
     যেহেতু জামায়াত ব্যাতিত বিশদলীয় জোটের অন্যান্ন শরিক দল সমুহ আদর্শিক দল নয় সেহেতু জনগনের প্রতি তাঁদের কমিটম্যান্টও নেই। আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠলে নেতার অনুপস্থীতিতেও আদর্শ জীবিত থাকার সম্ভাবনা  ছিল--"বিএনপি একটি আদর্শ, উদ্দেশ্যবিহীন দল।" সুতারাং ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে নিস্তেজ হতে হতে সময় বিলীন হতে বাধ্য বিএনপি এবং তাঁর অশুভ জোট। ইতিহাসের অমোঘ বিধান কোন ক্ষেত্রেই ব্যাতিক্রম  হতে পারেনা, রাজনীতির ক্ষেত্রেতো নহেই।
   
     "স্থানীয় সরকারের তিনটি স্তরেই সরকার বিরুধীদের হতাশাজনক অংশগ্রহনের ফলে দলহীন নির্বাচিত নির্দলীয় প্রার্থীদের অর্ধেকেরও কম ইউপিতেও সরকার বিরুধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা জিতে আসতে পারেনি।স্থানীয় সরকারের অন্য দু'টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উপজেলা পরিষদে নামকা ওয়াস্তে অংশ নেয়ার কারনে ফলাফল আরো বেশী হতাশাজনক। প্রায় ৬৫ বছরের ইতিহাসে স্থানীয় সরকারের সর্ব উচ্চ প্রতিষ্ঠান "জেলা পরিষদে"র পরোক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দেশে বিদ্যমান কোন রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহন করেনি।অত্যাচায্য বিষয়টি হচ্ছে--"কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচন সরাসরি প্রত্যাখ্যানও করেনি।"

       প্রতিয়মান হয়--"বাংলাদেশের বর্তমানে বিদ্যমান সরকার বিরুধী রাজনৈতিক দলগুলীর মধ্যে জনকল্যানকর, দেশপ্রেমিক, আধুনিক, প্রগতিশীল, নতুন প্রজম্মের ধ্যান ধারনা ধারনকারি ''বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' ব্যাতিত অন্যকোন জাতীয়দলের রাজনৈতিক পরিপক্ষতা বা ম্যাচুরিটি এখনও আসেনি।নেতৃত্বের গুনাবলী বিশ্লেষনে দেখা যায় 'বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাছিনা'' ব্যাতিত অন্যকোন নেতা/নেত্রী জাতীয় নেতা বা জননেতা/জননেত্রীর যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।" বিদ্যমান শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেহই অদূর ভবিষ্যতে জনপ্রীয় নেতায় রুপান্তরীত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

       আমাগীর বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা নতুন প্রজম্ম থেকে উঠে আসা তথ্য ও প্রযুক্তি জ্ঞান সমৃদ্ধ জাতির জনকের দৌহিত্র জনাব সজিব ওয়াজেদ জয় ছাড়া অন্য কারো অস্তিত্ব এখনও জনহনের চোখে আসেনি।তিনি ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে তথ্য ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের নেতৃত্ব করায়ত্ত করে চালকের আসনে রুপান্তরীত করে তাঁর যোগ্যতা এ বিচক্ষনতার সাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
        "জয়বাংলা    জয়বঙ্গবন্ধু"
         
ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন