পাঠ্যপুস্তকে শুধু বানান,প্রচ্ছদে ভুল তাই নয়----"মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, বর্তমান সরকারের শিক্ষানীতিরও সম্পূর্ণ বিপরীত। (রুহুল আমিন মজুমদার) পত্র পত্রিকা, ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় বিভিন্ন খবর দেখে শুনে একটি বিষয় নিশ্চিত হ'তে পেরেছি--"এবারের পাঠ্য বই কেলেংকারি এক অর্থে ভয়াবহ ; নিকট অতীতে বাংলাদেশের ইতিহাসে একত্রে, এতগুলী পরিবর্তন, একসাথে আর কখনই ঘটেনি।" বলতে গেলে অ-সাম্প্রদায়িক চেতনার আবরণ ঝেড়ে ফেলে রাতারাতি সাম্প্রদায়িক আলখেল্লা পরিধান করার যুগান্তকারি সাহষিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছেন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের নেতৃদানকারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের "শিক্ষা মন্ত্রনালয়"।তাও জাতীরজনকের কন্যা জীবিতবস্থায় এবং কি তাঁর নেতৃত্বে চলমান সরকারের শাষমলে। এবারের পাঠ্যপুস্তকের কেলেংকারি শুধুমাত্র বানানে, প্রচ্ছদ অংকনে সীমাবদ্ধ তাই নয়; ধর্মনিরপেক্ষতায় পরিপুষ্ট শিশুমেধা ধোলাই করে রাতারাতি ইসলামীকরনের অভিনব পদক্ষেপ। বাস্তবতা হচ্ছে---"কোন কো'রানে হাফেজ মাওলানা যদি পথভ্রষ্ট হয় তবে তাঁর আচার আচরন কায্যকলাপ নাস্তিক খোদাদ্রোহীকেও হারমানায়।"আমাদের শিক্ষামন্ত্রী সাহেবের "পাঠ্যপুস্তক'' সম্পর্কীত সদ্য সিদ্ধান্ত তাঁর চেয়ে অধিকগুনে গুনাম্ভিত। তাঁর ছাত্রজীবন হতে তিনি লালন করেছেন অ-সাম্প্রদায়িক চেতনা। এখন বলতে দ্বিধা নেই তাঁর ধারনকৃত অসাম্প্রদায়িক বিশ্বাস ছিল হঠকারি, উগ্র, তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক--"যাহা চৈনিক আদর্শে উজ্জিবীত কমিউনিষ্টদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট।" তিনি যে চেতনা ধারন করে নেতৃত্বে উঠে এসেছেন;--ভুমিষ্ট থেকে বর্তমান সময় পয্যন্ত একান্ত স্বচ্ছ, বাঙ্গালী জাতি একাধিকবার সংগ্রামে বিজয়ী, সর্বসাধারনে গ্রহনযোগ্য, জাতির জনকের লালিত আদর্শ,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় আদর্শের অন্যতম নীতি "অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে জাতি গঠন" নীতিনিষ্ট দলে যোগদান করে, মন্ত্রীত্বের বলে বলিয়ান হয়ে, এমন পদস্থলন ঘটেছে-- "একটি অসাম্প্রদায়িক জাতিকে উগ্র সাম্প্রদায়িক জাতিতে রুপান্তরের দায়িত্ব এককভাবে নীজ কাঁধে তোলে নেয়ার সাহষ দেখাতে পেরেছেন"। দেখে শুনে মনে হচ্ছে 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' তার জম্মব্দি জাতির জনকের লালিত আদর্শ 'ধর্মনিরপেক্ষতা'র আবরন খুলে পেলে দিতে চাইছেন।বর্তমান আওয়ামী লীগকে একক "মুসলিম জাতীয়তাবাদে"র দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ (টেষ্টকেস) নিয়েছেন 'জাতির মেরুদন্ড বলে কথিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে" খৎনার মাধ্যমে। কিন্তু কেন? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারন করে কি আওয়ামী লীগ সদর্পে বঙ্গবন্ধুকে সহ ভুমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে ২০০৯ ইং সালে ক্ষমতায় আসেনি?তাঁর আগে ১৯৯৬ ইং সালের সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জাতির জনকের স্ব-পরিবারে হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেনি?জাতির জনকের ভূবনজয়ী আদর্শ ধারন করে১৯৭১ ইং সালে বাঙ্গালী জাতি সর্বস্ব ত্যাগ করে বাঁশের লাঠি হাতে দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করার লক্ষে সসস্ত্র পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে 'সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প' তথা 'দ্বিজাতি তত্ব'কে কবর দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেনি? '৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর ক্ষমতা দখলকারি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ 'চেতনার আলোকবর্তিকা' হয়ে প্রজম্ম থেকে প্রজম্মান্তরে লালন করতে গিয়ে, লাখ লাখ তরুন, যুবক, ছাত্র জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রঞ্জিত করেনি? বিগত ১৫ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ দুইবার ক্ষমতায় আসতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কি কোনই প্রয়োজন হয়নি? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যদি লড়াই সংগ্রামে প্রয়োজন হয়, ক্ষমতার মসনদে উঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হয় ;ক্ষমতা উপভোগে তাঁর আদর্শ বিসর্জন দিতে হবে কেন, কোন যুক্তিতে? ধর্মাশ্রয়ী দল এবং তাঁদের প্রতিভুদের বাংলাদেশের ক্ষমতায় আনার জন্যে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জনগন স্বত:স্ফুর্ত কোন আন্দোলনে, সংগ্রামে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে? যতবারই তাঁরা ক্ষমতায় এসেছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অথবা বিদেশী প্রভূদের ষড়যন্ত্রে। বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলিমগন ধর্ম ভীরু কিন্ত্যু ধর্মান্ধ নয়; ইহা বহুবার তিক্ত অভিজ্ঞতায় প্রমানীত সত্যে রুপান্তরীত হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রমানীত সত্য-- বাঙ্গালী মসুলমানগন ধর্মান্ধ হলে '৭১এ মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হতনা। তাঁর আগে ভাষা রক্ষার সাংস্কৃতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে '৬৯ এর গনভ্যুত্থান সংগঠিত হত না।বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানগন বিজাতীয় পাকিস্তানী শাষক শোষকদের তাঁবেদারীই করতেন। যদি এমন ঘটনা চলতে থাকে তবে জামায়াত, বিএনপি আর হেফাজতের সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্য রইল কোথায়? স্বৈরাচার সেনা শাষক জিয়া, সেনা শাষক এরশাদ, সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দীর্ঘ ২৭ বছর দোদন্ড প্রতাপে শাষন করার পরেও যে কাজটি করতে সাহস পায়নি। মাত্র একমাসের মধ্যে তড়িৎকর্মা, অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাহেব অবলীলায় করে গেলন সেই কাজটি। আওয়ামী লীগ সরকারের "শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক, বাহক তথাকথিত কমিনিউনিষ্ট নেতা মাননীয় মন্ত্রী জনাব নাহিদ সাহেব--"যে পথে নিতে চেয়েছেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে, বর্তমান শিক্ষানীতি কি সেই অন্ধকার পথেই প্রনীত?" মাননীয় মন্ত্রীর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন দেখার আগে বর্তমান সরকারের শিক্ষানীতি দেখে আসা সমচিন মনে করি।শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ নিয়ে ত্রিশটি যুগ উপযোগি কায্যধারায় বিস্তারীত আলোকপাত করা আছে '২০১০ইং সালের শিক্ষা নীতিতে। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারীতে উক্ত কায্যসুচি হালনাগাদ করা হলেও লক্ষ ও উদ্দেশ্যে কোন রুপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা হয়নি।এখানে বিস্তারীত আলোচনা না করে উল্লেখযোগ্য দুটি ধারা সম্মানীত পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করি। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে--ত্রিশ দফার প্রত্যেক দফায় প্রগতিশীলতার সুস্পষ্ট লক্ষন অনুভব সম্ভব--"যেকোন সচেতন পাঠকের"। ******* শিক্ষার লক্ষ ও উদ্দেশ্য::******* ধারা---(৩) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রানীত করে তোলার ও তাঁদের চিন্তা চেতনায় দেশাত্ববোধ,জাতীয়তাবাদ এবং তাঁদের চরিত্রে সুনাগরীকের গুনাবলী যেমন-- ন্যায়বোধ, অ-সাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃংখলা, সৎ জীবন যাপনের মানষিকতা, সৌদার্দ ও অধ্যবসায়) ইত্যাদি বিকাশ ঘটানো। ধারা--(৭) জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থসামাজিক শ্রেনী বৈশম্য ও নারী পুরুষের বৈশম্য দূর করা।অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব ভাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ ওমানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলা। উল্লেখিত শিক্ষানীতির দু'টি ধারাও যদি বিশ্লেষন করা হয়, তাহলে বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন তাঁর আওতায় পড়ে কিনা, সম্মানীত পাঠক বর্গ বিচার বিশ্লেষন করে দেখার অনুরুধ রইল। পাঠ্যপুস্তকের বিশদ পরিবর্তনের তালিকা স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।আমি শুধুমাত্র সরকারের শিক্ষানীতি সংশ্লিষ্ট কতিপয় পরিবর্তনের তালিকা তুলে ধরার প্রয়াস নিচ্ছি। (১) স্বর্ণকুমারী দেবীর 'উপদেশ' ' কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।অভিমত-- শুধুমাত্র পিতামাতাকে দেবতুল্য বলায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গল্প 'লালু' বাদ দেওয়া হয়েছে অভিমত:-- কালীপূজা ও পাঁঠা বলির উল্লেখ আছে। (২) উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী রচিত 'রামায়ণ কাহিনী 'আদিখন্ড' গল্প। জ্ঞান দাস রচিত 'সুখের লাগিয়া' কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।অভিমত:-- 'কবিতাটিতে রামকৃষ্ণের ভক্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।' (৩) ভারতচন্দ্র গুণাকর রচিত 'আমার সন্তান' এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'সাঁকোটা দুলছে' কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে। অভিমত:-- উক্ত কবিতায় ৪৭ এর দেশভাগকে তিরস্কার করা হয়েছে । (৪) রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের 'স্বাধীনতা' কবিতা।লালন শাহ রচিত 'সময় গেলে সাধন হবে না' কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে। (৫) সবচেয়ে বড় চমক হলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বাংলাদেশের হৃদয়' কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিমত:-- 'দেবী দুর্গার প্রশংসা বাণী রয়েছে। (৬) এদের কাছে 'পশু ' 'ফুল ' সবকিছুই অস্পৃস্য।সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যসূচি থেকে নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের 'লাল ঘোড়া ' নামক গল্প এবং সুকুমার রায়ের 'আনন্দ ' কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র পশুপ্রেমী এবং ফুলকে ভালবাসার অপরাধে।অভিমত:-- লাল ঘোড়া গল্পে 'লালু ' নামক পশুটির প্রতি ভালবাসা মুসলমানদের পশু কোরবানি বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র। তাছাড়া, ফুলের প্রতি ভালবাসা ইসলাম বিরোধী। (৭) কালীদাস রায়ের 'অপূর্ব প্রতিশোধ' বাদ দেওয়া হয়েছে। এই কবিতাটি ইসলামি ধ্যান -ধারনা সম্বলিত ছিল। তারপরও বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিমত:--লেখক হিন্দু। (৮) সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'মে দিনের কবিতা'। রণেশ দাশগুপ্তের 'মাল্যদান' যেখানে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইতে বুদ্ধদেব বসুর 'নদীর স্বপ্ন' কবিতা। নবম শ্রেণীর বাংলা বইতে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পালামৌ' গল্প। (৯) হুমায়ূন আজাদ স্যারের 'বই ' এর পরিবর্তে 'বিদায় হজ্ব ' এর অন্তর্ভুক্তি করা হচ্ছে।স্বীকৃত মাধ্যম না হলেও হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো তথ্য। অভিমত:--"আগের পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রাখা নৈতিক দায়িত্ব বটে।" হুমায়ূন আজাদ স্যারের 'বই' কবিতাটিতে কুরআন শরীফকে ইঙ্গিত করে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ। যদিও উক্ত কবিতায় কোন নির্দিষ্ট 'বই' এর কথা উল্লেখ করা হয়নি। আমরা দেখিছি--সরকারের শিক্ষানীতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে অসাম্প্রদায়িক, বর্ণ বৈশম্যহীন, গোত্র ভেদাভেদহীন, নারীর সমধিকার, অ-সাম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে। হিন্দু কবি, সাহিত্যিক, গল্পকারদের লেখাগুলী একতরফা বাতিল করে কোন অসাম্প্রদায়িক চেতনার সাক্ষর রাখতে চাইলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী? মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কোন দেশের, কোন সাম্প্রদায়িক সরকারের শিক্ষানীতি অনুসরন করে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন--"জানতে চাওয়া কি অপরাধ হিসেবে গন্য হবে?" শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের এবারের পাঠ্যপুস্তক রদবদলের মাধ্যমে জাতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে--"ধর্মবর্ণ, গোত্রভেদ, নারী পুরুষের সমধিকার, অ-সাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর শব্দগুলী শুধুমাত্র প্রবন্ধ, কবিতা, নীতি, আদর্শে, বক্তৃতা, বিবৃতির জন্যে সংরক্ষিত--"বাস্তবতায় জাতি গঠনের হাতিয়ার শিক্ষানীতিতে শব্দগুলীর প্রয়োগ আদৌ সম্ভব নয়।" ruhulaminmujumder27@gmail.com "জয়বাংলা------জয়বঙ্গবন্ধু"

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন