খালেদা জিয়ার ধংসস্তুপে দাঁড়িয়ে "শেখ হাছিনার" সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মান---
          (রুহুল  আমিন  মজুমদার)
বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেহাল দশা ও অপাক্তেয় হওয়ার পিছনে বহু কারনের মধ্যে দু'টি কারন অন্যতম----
(১)২০০৯ ইং সালের অবাধ ও সুষ্টু নির্বাচনের অব্যবহিত পর হ'তে অদ্যাবদি খালেদা জিয়া এবং তাঁর পরিবারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ রক্ষার অপচেষ্টায় দল ও জোটকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবহার।
(২) মুক্তিযুদ্ধে স্বীকৃত বিরুধীতাকারী এবং মানবতা বিরুধী অপরাধে জড়িতদের  রক্ষায় বিএনপি দল ও  জোটকে অ-ঘোষিত ভাবে ব্যবহার।জনগনের উপর আস্থা না রেখে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে মনযোগি হওয়া। প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে, ঘোষিত-অ-ঘোষিত অপ-রাজনীতির কারনে--'দল ও জোটে একদিকে অধিকতর সৎ ও ত্যাগি রাজনীতি মনস্ক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যাক্তিও দল রাজনীতি বিমূখ হয়েছে অন্যদিকে সরকার বিরুধী মনোভাবাপন্ন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যাক্তি ও দল সরকার বিরুধী আন্দোলনে সমর্থন দেয়নি বা শীর্ষ নেতার অদুরদর্শিতায় আদায় করতে ব্যার্থ হওয়া।
অবশেষে খালেদা জিয়া নিজমূখে স্বীকার করতে বাধ্য হলেন---"বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে-"নেতাকর্মীরা কেউ মাঠে নামেনি।" গতকাল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভার একপয্যায়ে নেতাকর্মীদের--'খালেদা তোমার ভয় নাই- রাজপথ ছাড়ি নাই, খালেদা তোমার ভয় নাই--আমরা আছি লাখ ভাই" শ্লোগান দিতে থাকলে তাঁদের থামিয়ে--'মুল সত্যটি স্বীকার করে নিলেন'।
তিনি এই প্রসংঙ্গে আরো একটি কঠিন সত্য স্বীকার করে বলেন--"এখন আন্দোলনের কোন প্রয়োজন নেই, এখন কাজ হচ্ছে ভাল ছেলেদের ছাত্র দলে নিয়ে আসা। বস্তির ছেলেপেলে দিয়ে ছাত্রদলের সংখ্যা বাড়িয়ে কোন লাভ হবেনা। আমি নির্বাচন কমিশন সংস্কারে কি প্রস্তাব দিয়েছি--"তোমরা কেউ পড় নাই, মেজর শহীদ জিয়ার জীবনী কেউ পড় নাই।" ছাত্র দলে কোন ছাত্রই নেই--
      একই মঞ্চে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের বিষয়ে আমি শুধুমাত্র একটি কথাই বলতে চাই--"দেরীতে হলেও বেগম খালেদা জিয়া মধ্যরাতের টকবাজদের মুখে চুনকালি মেখে দিয়ে 'সূর্য্যালোকের ন্যায় সত্য কথাটি দল ও জোটের পতনোম্মুখ সময় প্রকাশ করেছেন"। তিনি অকপটে বলেন-'বিগত তিনমাসব্যাপি জোটের ঘোষিত 'হরতাল', 'অবরোধ' আন্দোলন কর্মসূচি প্রতিপালনে মাঠে কোন নেতাকর্মীই ছিল না'। ছাত্রদলে সৎ, ত্যাগি, মেধাসম্পন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোন নেতাকর্মীই নেই।যারা আছেন তাঁরা সবাই দুই চারটা ছেলেমেয়ের পিতা। তাঁরা হয় একান্ত সংসার মূখী নয়ত ব্যবসায়ী। প্রথমত: তাঁরা বস্তির ছেলেপেলে ছাত্র দলের নেতা কর্মী পরিচয়ে পরবর্তীতে "পাঁড়া মহল্লার মাস্তান, সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজ।"বর্তমানের ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাঁর ঘোষিত নির্বাচন সংস্কার প্রস্তাব এবং মেজর শহীদ জিয়ার জীবনী কেউ পড়ে নাই।
     এখন জাতির নিকট বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে--প্রথমত: --তাঁর স্বীকারোক্তি মোতাবেক "তিনমাস" চারদেয়ালের অভ্যন্তরে সুরক্ষিত প্রাসাদে বসে প্রতিনিয়ত,  দৈনন্দিন ডিজিটাল মিডিয়ায় বিবৃতির মাধ্যমে হরতাল, অবরোধ পালন করার জন্য কারপ্রতি তিনি বা তাঁর মূখপাত্র হুকুম জারি করেছেন?"  যেহেতু দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিলনা-- "কাদের কে  নাশকতা, অরজকতা, আগুন সন্ত্রাস, আগুন বোমা, লুটপাট করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল?" প্রত্যহ বিকেলে ডিজিটাল মিডিয়ায়  বার্তা/বিবৃতির মাধ্যমে কাদেরকে ধন্যবাদ জানাতেন!! কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্যে প্রতিনিয়ত জনগনকেও অভিনন্দিত করেছেন! নতুন নতুন কর্মসূচির ঘোষনা দিয়ে সরকার পতনের প্রতিজ্ঞা সহ আশ্বাস প্রদান  করেছেন তিনি অথবা তাঁর পক্ষে দলের মূখপাত্র !!        বিশেষভাবে পাঠকদের স্বরণ করিয়ে দিতে চাই--"জোটনেত্রী খালেদা জিয়া অদ্যাবদি তাঁর ঘোষিত চলমান হরতাল, অবরোধ প্রত্যাহার করেননি।"
          জাতির নিকট দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন--"ছাত্র রাজনীতিকে অছাত্র, মাস্তান, সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়ে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের অপরাধে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াকে মরণোত্তর বিচারের আওতায় সরকার আনবে কি-না?  মেজর শহীদ জিয়া গঠিত ছাত্রদলের ধারাবাহিকতা রক্ষার অপরাধে  সংগঠন হিসেবে বিএনপি, অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল,সাংগঠনিক  নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে আইনের আওতায় আনা হবে কি- না? যেহেতু খালেদা জিয়া নীজের মুখে স্বীকার করেছেন-- 'ছাত্রদলে ছাত্র নেই।'
      সংগঠনটি ভুমিষ্টের পর থেকে তাঁদের হাতে লক্ষ লক্ষ ছাত্রের প্রানহানীর ঘটনা ঘটেছে।চর দখলের ন্যায় বছরের পর বছর কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের হল দখল করে রেখেছে।  অ-ছাত্র কতৃক হল দখলে রেখে নিয়মিত ছাত্রদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে। ছাত্রদলের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজি করেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন মার্কেট সমূহে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছে।প্রতিবছর ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের  একাধিক বিদেশ সফর, রাষ্ট্রীয় সফর, শিক্ষা সফর, প্রধানমন্ত্রী/ রাষ্ট্রপতির সফর সঙ্গী, কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যান তহবিলের কোটি কোটি টাকা ছাত্রদলের নাম ভাঙ্গিয়ে বস্তির মাস্তানদের পেটে হজম হয়েছে।সম্পুর্ণ দায় খালেদা জিয়া যেহেতু নীজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন সেহেতু তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে কবে ?"
      মধ্যরাতের সুশীলদের নিকট জাতির জিজ্ঞাসা--"দিনের পর দিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে, কথার চাতুয্যে জাতিকে বিভ্রান্ত করার দায় কি আপনারা নিবেন?' আন্দোলন সংগ্রামের জন্য গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সু-শিক্ষিত নেতাকর্মীর প্রয়োজন।দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের দেশপ্রেমিক নেতাকর্মী ছাড়া কোন রাজনৈতিক দল বেঁচে থাকতে পারেনা। বিএনপি দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্রের অনুপস্থীতি স্বীকৃত--' খালেদা জিয়া ঘোষিত কর্মসূচি পালনের নিমিত্তে রাজপথে কোন নেতাকর্মী ছিলনা।তিনি তাঁর নেতৃত্বের ব্যার্থ্যতা স্বীকার করে পরোক্ষভাবে জাতিকে গনতন্ত্র সুরক্ষার প্রশ্নে ঘোর শংকায় ঠেলে দিয়েছেন।'
        আমরা জানি--বর্তমান আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছে অধিকতর জন কল্যানকর, প্রত্যক্ষভাবে জনগন কতৃক নিয়ন্ত্রিত, জনগন কতৃক শাষিত, স্বচ্ছ, নির্ভেজাল, আবশ্যকীয় জবাবদিহীমূলক, আধুনিক, যুগ উপযোগী 'গনতান্ত্রিক দর্শনের ভিত্তিতে। উল্লেখিত 'গনতান্ত্রিক দর্শনে'র ধারাবাহিকতা রক্ষা,বিকশীত ও প্রাতিষ্ঠানীক ভিত্তি দেয়ার লক্ষ অর্জনের নিমিত্তে কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান প্রত্যেক রাষ্ট্রে, সমাজে,  সরকারে থাকা একান্ত কাম্য বা পুর্বশর্ত।
              তম্মধ্যে শক্তিশালী মাধ্যম গুলীর অন্যতম একটি মাধ্যম নিয়মিত মেয়াদান্তে নির্বাচন কমিশন কতৃক সরকারের সর্বস্তরে সকলের অংশগ্রহনে নির্বাচন অনুষ্ঠান।ঘোষিত নির্বাচনে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশনে তালিকাভুক্ত বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহন নিশ্চিত থাকা বাঞ্চনীয়। উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে প্রয়োজন একাধিক সমশক্তি সম্পন্ন গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও জোট।ঐ সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্যে প্রয়োজন সু-শিক্ষিত কর্মীবাহিনী, বুদ্ধিদিপ্ত নেতা, দলীয় মুলনীতি নির্ভর আদর্শ, দলীয় উদ্দেশ্য সাধনের বিস্তারীত বিবরণ সংকলিত গঠনতন্ত্র, নির্দিষ্ট কর্মসূচি সংবলিত লিখিত নির্বাচনী অঙ্গিকার বা মেনিফেষ্টো।
দু:খ্যজনক হলেও সত্য--"বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধুনিক, দেশপ্রেমিক, দেশ ও জনগনের কল্যানকামী গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের প্রকট সংকট দেখা দিয়েছে।' এই সত্যটি প্রকট ভাবে পরিদৃষ্ট হয়েছে বিগতদিনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের তিনটি স্তরে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সহ তাঁর আগে অনুষ্ঠানেয় জাতীয় সংসদের নির্বাচনে। স্থানীয় সরকারের তিনস্তরেই   বিদ্যমান রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যাতিত অন্যকোন দলের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহন পরিলক্ষিত হয়নি। অনুষ্ঠানেয় জাতীয় নির্বাচনেও একই  পরিস্থীতি বিরাজমান থাকায় গনতন্ত্র কক্ষচ্যুতির সম্ভাবনায় অভিজ্ঞমহল, বুদ্ধিজীবি, জাতীর বিবেক বলে পরিচিত সব মহল আশংকীত হয়ে পড়েছিলেন।বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র সমূহের সরকার ও জনগন হতাশ হয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।
স্থানীয় সরকারের তিনটি স্তরেই সরকার বিরুধীদের হতাশাজনক অংশগ্রহনের ফলে দলহীন নির্বাচিত নির্দলীয় প্রার্থীদের অর্ধেকেরও কম ইউপিতে ও সরকার বিরুধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা জিতে আসতে পারেনি।স্থানীয় সরকারের অন্য দু'টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উপজেলা পরিষদে নামকা ওয়াস্তে অংশ নেয়ার কারনে ফলাফল আরো বেশী হতাশাজনক। প্রায় ৬৫ বছরের ইতিহাসে স্থানীয় সরকারের সর্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদের পরোক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দেশে বিদ্যমান কোন রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহন করেনি।অত্যাচায্য বিষয়টি হচ্ছে--"কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রত্যাখ্যানও করেনি।" এতে-ই প্রতিয়মান হয়--"বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলীর মধ্যে অদ্যাবদি কোনপ্রকারের পরিপক্ষতা বা ম্যাচুরিটি আসেনি।"
জাতীয় নির্বাচনে শক্তিহীন জাতীয় পার্টি সহ আরো কয়েকটি দল অংশ নিলেও বৃহৎ বিরুধী দল ও জোট অজ্ঞাত কারনে অংশ না নেয়ায় নির্বাচন অনেক ক্ষেত্রে প্রহসনে পরিণত হয়।সরকারের বিকল্প ছায়া সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলা সরকার বিরুধী রাজনৈতিক দলের গনতান্ত্রিক কৌশলি উপায়। সরকারের গনবিরুধী কায্যক্রমের গঠনমূলক সমালোচনা,আন্দোলন, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। সরকার এবং সরকারি দলের-"দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখল, অসম চুক্তি এককথায় দেশও জনগনের স্বার্থ্য বিরুধী কর্মকান্ড জনগনের নিকট তুলে ধরে তাঁদের পক্ষে জনমত সংগঠিত করাই রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ।
দু:খ্যজনক হলেও সত্য--'বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলীর অভ্যন্তরে গনতন্ত্রের উপস্থীতি না থাকায় দলীয় প্রধানের ব্যাক্তি স্বার্থেই দলকে পরিচালিত করতে দেখা যায়'। খমতায় থেকে অবাধ স্বেচ্ছাচারিতা,  দুনীতি মামলা, দখল, প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে অবৈধ কাল টাকা আহরন ইত্যাদি অপকর্মের বিরুদ্ধে নেয়া রাষ্ট্রীয় আইনানুগ ব্যবস্থার মোকাবেলায় প্রচলীত আইনের মাধ্যমে   না করে দলকে ব্যবহার করার সুযোগের সন্ধানে থাকে।এতে জনকল্যানের পরিবর্তে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দেশ ও জনগনের দু:খ্য দুর্দশা বাড়াতে তাঁদের বিবেকে সাড়া দেয়না।তাঁর সাথে আমাদের দেশের অধিকাংশ নেতা পদপদবি মন্ত্রীত্ব, এমপির নমিনেশনের লোভে উক্ত নেতার পায়ের নীছে পুঁজা দিতে ব্যাস্ত থাকে।
মুলত:  বিদ্যমান সরকার বিরুধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রতি অনাগ্রহের অনেকগুলী কারনের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারন--"নেতৃত্বের অদক্ষতা, রাজনৈতিক জ্ঞানসমৃদ্ধ কর্মীর অভাব, ত্যাগের চেয়ে ভোগবিলাসি নেতাকর্মীর আধিক্য, আদর্শ, উদ্দেশ্য, দর্শনহীন রাজনৈতিক দল জনগনের মানষিক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়না।রাজনৈতিক দল গুলীর মধ্যে অধিকাংশের মতাদর্শে ভিন্নতা না থাকায়  জনমনে উক্ত দলগুলীর কোন একটির একক প্রভাব ও দৃষ্ট হয়না।যেহেতু নির্বাচক মন্ডলীর দলের প্রতি  আগ্রহ সৃষ্টি হয়না সেহেতু নির্বাচনকারি নেতাও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হ'তে পারেনা।
 জাতীয় ও স্থানীয় নেতারা রাজনীতির গুড় তাৎপয্যের গভীরে প্রবেশ না করে হতাশায় ভোগতে থাকে।  নির্বাচনে অর্থব্যায়কে অ-পাত্রে বিনিয়োগ, অযথা অপ-ব্যায়, নির্বাচনকালীন সময় ব্যায়কে পন্ডশ্রম মনে করতে থাকে। নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দুরত্ব বজায় রাখার নিমিত্তে বিভিন্ন  কৌশল খুঁজতে থাকে। বিকল্প যেকোন ভাবে সহজ পথে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে রাজনীতি বহির্ভুত পথ অবলম্বন করে। রাজনৈতিক দল ও জোট সমুহের নির্বাচন ভীতি বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।দায়িত্বশীল গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং সর্বগ্রাহ্য,  নিবেদিত, নির্লোভ, দেশপ্রেমিক, জ্ঞানী, জনপ্রীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের অভাবে চলমান গনতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্র বিকশীত না হয়ে সংকোচিত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়।
এমতবস্থায় বর্তমান সরকারের অভিষ্ট লক্ষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নঘেরা শোষনমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ,  গনতান্ত্রিক সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্ন কন্টাকাকির্ণ হয়ে পড়ে। সম্মীলিত অ-শুভশক্তি রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিনিয়ত বাধার সৃষ্টি করে উন্নয়ন, অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার লক্ষে বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহন করে। জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশররত্ম'শেখ হাছিনার' অভিষ্ট লক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক গনতান্ত্রিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর, কৃষি-শিল্পোন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনাকে বহুলাংশে হুমকির সম্মুখ্যিন করে তোলে।
এমত:বস্থায় জাতির জনকের কন্যা 'শেখ হাছিনা' দলের অভ্যন্তরে দুষ্টচক্রকে পর্দার আড়ালে ঢেকে, জাতীয় ও আন্তজাতিক ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে, দেশও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে,নীজের এবং পরিবারের জীবন বিপন্ন হওয়ার শতভাগ আশংকাকে তোয়াক্কা না করে-- অসীম সাহষ, ধৈয্যের পরাকাষ্টা প্রদর্শন করে অশুভশক্তির বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে জয়ী হতে সক্ষম হন।এরফলে মানব সৃষ্ট রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক মহা দুর্দিনে তিনি গনতন্ত্রের বৈঠাকে শক্তহাতে ধরে রাখতে সক্ষম হন।
            বেগম খালেদা জিয়া কতৃক স্বীকায্য 'তিনমাস' সম্মিলীত অশুভশক্তি কতৃক পরিচালিত অপ-তৎপরতায় নেতাকর্মীশুন্য রাজপথে-বিরামহীন নাশকতা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, পবিত্র কোরানের হাজার হাজার কপিতে আগুন, ব্যাংক বীমা লুট, স্বর্ণদোকান লুট, আগুন বোমায় জ্যান্ত মানুষকে নিমিষে কাঠকয়লায় রুপান্তর, চলন্ত বাস, ট্রেনে আগুন বোমায় বেসুমার জীবনহানী ও সম্পদহানী, বোমা আগুন তান্ডব চালিয়ে জনজীবন অচল করে দেয়। তাঁদের সফলতা এক্ষেত্রে মধ্যযুগীয় বর্বতাকেও হার মানিয়েছিল।সদাশয় সরকার, বুদ্ধিজীবিগন, সাংবাদিক রাজনৈতিক মহলে উক্ত সময়কে এযাবৎকাল ৪২দিন গননা করে এসেছেন।"খালেদা জিয়া স্বরণ করিয়ে দিলেন ৪২ দিন নয় একনাগাড়ে তিনমাস"। বিস্মৃত বাঙ্গালী জাতি তাঁর উপর বর্ষিত মহাদুয্যোগের দিনগুলীও সঠিকভাবে মনে রাখতে পারেনি।
    উক্ত সময়ে   দৃড মনোবল, আসীম সাহষ নিয়ে জাতির জনকের কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  বঙ্গনেত্রী শেখ হাছিনা যদি মহাপ্রলয় মোকাবেলায় কোনকারনে ব্যার্থ্য হতেন--"তাহলে আজকের এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, পদ্মা সেতু, পারমাণবিক চুল্লি, সাবমেরিন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ, দ্বিগুন বাংলাদেশ, উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ, মায্যদাশীল আধুনিক বাংলাদেশ, গনতন্ত্রের রোল মডেল বাংলাদেশ যে অভিধায় অভিহীত করিনা কেন,  যে নামেই ডাকি না কেন-- বাংলাদেশ কোথায় পেত?
      বাংলাদেশ ব্যাতীত বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের,  যে কোন নেতার ক্ষেত্রে বৈরী এই পরিবেশে এত বিশাল, অগুনতি ও পাহাড়সম কীর্তির অধিকারী হতেন---"সেই দেশ এবং জাতী আ-মৃত্যু তাঁকে মাথায় তোলে রাখতেন।" বাঙ্গালী এতই অ-কৃতজ্ঞ জাতি--"এখনও আমরা তাঁর ছিদ্রান্বসনে ব্যাস্ত থাকি।আমাদের গুটিকতক আবাল নেতা তো সর্বক্ষন চিন্তায় মগ্ন,  কখন সময় ফুরিয়ে যায়-- 'যা কিছু করার, এখনই করা প্রয়োজন'।
         তাঁদের উদ্দেশ্যে আমি একটি কথাই বলতে চাই-- "মহান আল্লাহ যতদিন বঙ্গরত্মের হায়াৎ বরাদ্ধ রেখেছেন, ততদিন ভয়ের কোন কারন নেই।" বাংলাদেশের জনগন গতজীবনে রত্ম হারিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে--''মায়ের চেয়ে আপন- পৃথিবীতে আর কেউ নেই'। 'মায়ের আদর, ভালবাসা 'মাসী' কখনই দিতে পারেনি, পারেনা।' সুতারাং তাড়াহুড়ার কিছুই নেই-- 'ধৈয্য, সহনশীলতা, একাগ্রতা রেখে জনগনের আপন হতে চেষ্টা করুন, তাঁদেরকে দেন। সময় অনেক লম্বা, পথ অনেক দুর---"পরিবারকে দিয়ে আত্মীয় স্বজন, পাঁড়া প্রতিবেশীকে দিলেও শেষ হবেনা।"
        উপসংহারে শুধু এই টুকুই বলতে চাই-- আগামী প্রজম্ম কৃতজ্ঞচিত্তে শেখ হাছিনার গনতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের দৃডতা স্বীকার করবে। তাঁদের ইতিহাস চর্চায় শুধুই দেখবে একটি মাত্র নাম স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত-- বাংলাদেশের জাতির পিতার কন্যা ''শেখ হাছিনা" তিনি শতবছরের ইতিহাসের পাতায় একমাত্র গনতন্ত্রের ধারক, বাহক, পুজারী।একবিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ গনতন্ত্রের পূজারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের জৈষ্ঠ কন্যা, গনতন্ত্রের মানসকন্যা, বঙ্গকন্যা 'শেখ হাসিনা'। যার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান নীজের জীবন বিপন্ন করে বাঙ্গালী জাতিকে দিয়েছিলেন ৫৫০০০ বর্গমাইলের স্বাধীন সার্বভৌম  বাংলাদেশ, বাঙ্গালী জাতি কৃতজ্ঞতায় বলতেন "জাতির পিতা"। তাঁর জৈষ্ঠকন্যা  শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন--"সুখী,  সমৃদ্ধশালী, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর,আধুনিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক,একলক্ষ বর্গমাইলের অধিক 'ডিজিটাল গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ।' কৃতজ্ঞ বাঙ্গালীজাতি তাঁকে সম্মান করে ডাকেন "দেশরত্ম"।
                   ruhulaminmujumder27@gmail.com
                           

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন