জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চাই সর্বাত্বক যুদ্ধ ঘোষনা--প্রয়োজনে "অপারেশন ব্লাক লাইট"।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে আবারও ১৪টি প্রাতিষ্ঠানিক দল গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার আট পরিচালক দলগুলোর নেতৃত্ব দেবেন।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান বিভাগের মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানে এসব দল কাজ করলেও সংস্থার মহাপরিচালক মুনির চৌধুরী এসব দলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। গঠিত তিন সদস্যের ওই সব দলে একজন করে উপরিচালক ও সহকারী পরিচালক রয়েছেন।
পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায় ব্যাকিং সেক্টরে খেলাপি ঋনের পরিমাণ নব্বই হাজার কোটি টাকা।এর মধ্য অধিকাংশ খেলাপি ঋন ব্যাংকের মালিকদের নিকট।সরকারি ব্যাংক গুলিতে সরকার কতৃক নিয়োগকৃত পরিচালকগন নীজ নামে ঋন না নিলেও প্রভাব খাটিয়ে নীজের নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাক্তি ও সংস্থার নামে ঋন বরাদ্ধ দিতে কতৃপক্ষকে বাধ্য করছেন।
বেসরকারি ব্যাংকের মালিকগন সরকারি নিষেদাজ্ঞার কারনে শেয়ারের পঞ্চাশ শতাংশের বেশী ঋন নিতে না পারলেও সম্পকীত অন্যব্যাংকের মালিকদের যোগসাজসে একে অপরের নামে ঋন বরাদ্ধ দিয়ে --"শেয়ারের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশী টাকা ইতিমধ্যে উত্তোলন করে নিয়ে গেছে"।উল্লেখিত ঋনের টাকা বাংলাদেশে বিনীয়োগ না করে বিদেশে বাড়ী, প্লট, প্লাট কিনে তাঁরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কখনও সমস্যা বা রাষ্ট্রীয় অভি্যান দেখা দিলে যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে সেখানে থাকতে পারে। ব্যাংক পরিচালকদের মধ্যে সিংহভাগ দ্বৈত নাগরীকত্ব আগেভাগে পকেটস্ত করে রেখেছেন।খোঁজ নিলে দেখা যায় দুর্নীতি গ্রস্তব্যাক্তি, রাজনীতিক,আমলাদের সিংহভাগের বিদেশে প্লট, প্লাট একাধিক বাড়ী গাড়ী এবং কি পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে আগেভাগে সেই দেশে স্যাটেল করে রেখেছে।বাংলাদেশের একটি ব্যাংককেও আমনতিদের সমপরিমান টাকা ব্যাংককের স্বচ্ছ বিনিয়োগে নেই।প্রত্যেকটি ব্যাংক "যুবক" সমতুল্য উপরে পিটপাট ভিতরে সদর ঘাট।
শুধুমাত্র ব্যাংক বীমা নয়--সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাষিত প্রতিষ্ঠান কোথাও দুর্নীতি নেই এমন স্বপ্নেও ভাবা যায়না।দুর্নীতি সর্বগ্রাসি রুপধারন করেছে। একশ্রনী দুর্নীতির টাকায় ঘি খাচ্ছে আর এক শ্রেনী তাঁর খেসারৎ দিচ্ছে রুদ্রে পুঁড়ে বৃষ্টিতে ভিজে--' মাথার ঘাম পায়ে ফেলে'।তাঁরা ন্যায্য মজুরী থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বছরের পর বছর।
বর্তমান সরকারের বিগত আট বছরের শাষনে দেশ অনেক এগিয়েছে, জনগনের জীবন যাত্রায় এসেছে যুগান্তকারি পরিবর্তন, দারিদ্রতা কমেছে গানিতিক হারে, উন্নয়ন অগ্রগতিতে এসেছে জোয়ার-- সবকয়টি বিষয় একান্তই সত্য।কিন্তু ভেতরে ভেতরে আর একটি মহাব্যাধি ব্যাক্তি সমাজ, রাষ্ট্রে ব্যাপৃত হয়ে মহামারি আকার ধারনের পয্যায় পৌছে গেছে--"এই মহাব্যাধির নাম "অর্থনৈতিক বৈষম্য"।" উন্নয়ন অগ্রগতির উষালগ্নে উক্ত ব্যাধি সারানোর যথাযথ টিকার ব্যাবস্থা করা নাগেলে--"ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রকে কুড়ে কুড়ে ধংস করে দিবে মহাব্যাধিটি"।
"অর্থনৈতিক বৈষম্য" নামক ব্যাধির উৎপত্তিস্থল ''দুর্নীতি'' নামক লুটপাটের মহাসাগর"।উক্ত মহাসাগরের পানিতে 'দুষনরোধ' করার এখনই সময়।সরকারের নিম্নপয্যায় থেকে উধ্বতন পয্যায় সর্বাত্বক "ব্লাক লাইট অপারেশন" আকারে বা প্রকারে পরিচালনা করা ছাড়া মরণব্যাধি নিয়ন্ত্রনের অন্যকোন উপায় নেই।
দুর্নীতি দমন সংস্থা"র নামেও বহু দুর্নীতির কাহিনী পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে।দুর্নীতি দমন কমিশনের পিয়ন দারোয়ান, পরিচালক, উপ-পরিচালক, সদস্যদের দুর্নীতির মুখরোচক কাহিনী পথে প্রান্তরে চড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদারকির জন্যে অন্যকোন সংস্থা নিয়োগ দিলেও তাঁদের কায্যের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।দুর্নীতি দমনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হতে পারে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনীধিদের মধ্য থেকে একাধিক শক্তিশালী তদারকি টিম গঠন করা হলে 'আইনের ব্যাত্যায়' হবে মনে করিনা।কারন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারিগন জনগনের সেবক, তাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন হয়। 'ভৃত্বের কাজের তদারকি মনিব করতেই পারে'।
সুতারাং দুনীতি দমন কমিশনকে নজরদারীতে রাখার জন্য---সৎ, ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে উল্লেখিত সমপরিমান তদারকি কমিটি করা যায় কিনা সরকারকে ভেবে দেখা দরকার। সরকারি বিশেষ কয়েকটি দপ্তরে দুর্নীতির উৎস খোঁজার নিমিত্তে কমিশন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।শুধুমাত্র সরকারি দপ্তরে দুর্নীতি সীমাবদ্ধ নয় বেসরকারি সংস্থা,স্বায়ত্বশাষিত প্রতিষ্ঠান, প্রভাবশালী রাজনীতিক, স্বল্প বেতনের চাকুরীজীবি সর্বত্র রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির দুষিত রক্ত প্রবাহমান। সিটি কর্পোরেশনের ঝাড়ুদার, তিতাসের মিটার রিডার, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের গেইট কিপার, ব্যাংকের নাইটগার্ড, থানা জেলা পয্যায়ের রাজনীতিক পয্যন্ত নামে বেনামে একাধিক গাড়ী, বাড়ী, বেসুমার স্থাবর অ-স্থাবর সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সরকার উপযুক্ত সার্জিকেলের হাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যোগান দিয়ে সর্বত্র "ব্লাক লাইট" অপারেশনের মাধ্যমে দুষিতরক্ত বের করে নিয়ে আসতে হবে।
ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতির মূল উৎপাটন সহজ কাজ নয়। তবে উপযুক্ত নজরদারি আর দুর্নীতিলব্ধ অর্থ ব্যয়ের সুযোগ না থাকলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রিত হ'তে বাধ্য।এক্ষেত্রে আমাদের পাশের দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের নাগরিকদের অভ্যন্তরীন সম্পদ আহরনের জবাবদিহীতার অভিজ্ঞতা ধার করা যেতে পারে। জ্ঞাত কোনো আয়-রোজগার নেই; অথচ বাড়ি-গাড়ির চমকে চোখ ঝলসে যায় এমন লোক তো আমরা হামেশাই দেখি। এরা বেআইনিভাবে পরধন নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে তা করছে। এটা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করতে পারলেও রাষ্ট্র উপকৃত হবে। আইনের বেড়াজালে এনে তাদের অর্জিত সম্পদ ভোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। গুটিকয়েক দিয়ে শুরু করা হলেও অন্যরা সতর্ক বার্তা পাবে। রাষ্ট্রের পক্ষে নামে শুধু নয় সত্যিকারের‘ওয়াচ-ডগ’ হয়ে দুদককে নিয়ন্তর তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে হবে, বছরান্তে তাঁর কর্ম পরিধি বিস্তৃত করতে হবে।
উল্লেখ্য, এ দেশে এ রকম অনেক দুঃসাধ্য কাজ সম্ভব হয়েছে। নিয়মিত খাদ্য ঘাটতি নিয়তি ছিল এই কিছুদিন আগেও।চাষাবাদ যোগ্য জমির পরিমান কমেছে কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়ে হয়েছে পাঁছগুণ। একসময় জনসংখ্যা বৃদ্ধিরোধে সরকারি উদ্যোগকে ধর্মবিরুধী আখ্যা দিয়ে অব্যাহত প্রচারনা চালানো হয়েছে তা সত্বেও জম্ম হার নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। শিক্ষা,চিকিৎসাক্ষেত্রে ঘটেছে বিপ্লব। শিক্ষায় ঘটেছে ব্যাপক প্রসারতা ও বহুমূখিতা।অথচ একসময় এগুলি অর্জন করাকে প্রায় অসাধ্য মনে হয়েছে।
ছোটবেলায় শুনেছি- সুঁই সুতা বানাতে পারেনা যেই দেশ-"সেই দেশকে "মুজিব" পাকিস্তান থেকে আলাদা করে ভারতকে দিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে, মুজিব ভারতে দালাল।" সেই মুজিবের জৈষ্ঠকন্যা 'ভারত থেকে সমপরিমান বাংলাদেশ মুক্ত করে" প্রমান করেছে "মুজিব পরিবার দিতে জানেনা-আনতে জানে"। দেশবিক্রি করেনা--অন্যের দেশ ক্রয় করে। মুজিবের নেতৃত্বে মুক্ত দেশেই তাঁর কন্যার নেতৃত্বে প্রত্যহ জাহাজ নির্মান হয়, মিশাইল বানায়, ক্ষেপনাস্ত্র পরিক্ষা করে, মহাশুন্যে " বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট" পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রাখে, পারমানবিক চুল্লি বসায়, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থ এবং প্রযুক্তিতে বানাতে জানে।"
তবে ইহা সত্য---"পুঁজিবাদি সমাজে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয় তবে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব --"যদি নেতৃত্বের দেশপ্রেম জাগ্রত থাকে"। সর্বক্ষেত্রে উপরে উঠার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত সমাজে নিছে নামতে চাইবে কে? যাকে যেখানেই দেয়া হয়না কেন--'সে সেখানেই টাকা আহরনের চিন্তায় সদা ব্যাস্ত।' তা সত্ত্বেও হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।সবল ও দৃঢ়, ধীর, স্থীর হতে হবে প্রতিটি পদক্ষেপ। বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতকে অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
দুদক সম্পর্কে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাকারে সম্ভব স্বল্পসময়ে অবশ্যই কিছু কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে। এবার আর চমক নয়, নজির সৃষ্টির জন্য তৎপরতা চালাতে হবে। দেশ যেমন সর্বক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান সফলতা অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছে-- দুদককে ক্রমবর্ধমান এগিয়ে চলা বাংলাদেশের সফলতার স্থীতি রক্ষার্থে সার্বক্ষনিক সঙ্গী হয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকতে হবে।
জাতিরজনকের কন্যা উপযুক্ত সময় সঠিক সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন।২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে রুপান্তরের স্বপ্ন পুরনে সবচেয়ে বড় বাঁধা এইমুহুর্তে 'দুর্নীতি' নামক মহাব্যাধি। দুর্নীতির 'মহাব্যাধি'র লাগাম টেনে ধারার উপযুক্ত সময় এখনই।
বলাবাহুল্য--"দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, দখলবাজি, মাস্তানী, চাঁদাবাজি, ঘুষ, মাদক, চোরাচালানি, অর্থপাচার ইত্যাদি বে-আইনি, রাষ্ট্রদ্রোহী, সমাজদ্রোহী ব্যাধিসমূহ বিগতদিনে অপ-শাষকদের পৃষ্টপোষকতা, আস্কারা, ক্ষেত্র বিশেষ সহযোগীতা পেয়ে বর্তমান সময়ে মহিরুহ আকার ধারন করে মহাব্যাধিতে রুপান্তরীত হয়েছে।
এই মহুর্তে গঠিত কমিটি সদস্যদের অন্তরের গহীনে গভীর দেশপ্রেম, দৃডপ্রত্যয়, কঠোর মনোভাব, একাগ্রতা নিয়ে নিয়ন্তর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দুর্নীতি উচ্ছেদের স্বার্থে সরকার প্রয়োজনে জরুরী অবস্থা সমতুল্য "অপারেশন ব্লাক লাইট" নামকরনে রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করার ক্ষমতা দুদককে দিতে হবে।দেশপ্রেমিক প্রত্যেক নাগরিকের এই মহুর্ত থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগ্রাসি ভুমিকায় অবতিন্ন না হতে পারলে-- "মহাব্যাধি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা সম্ভব হবেনা।''
masterruhulamin@gmail.com
"জয়বাংলা---------জয়বঙ্গবন্ধু"

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন