প্রেমিক জেনারেল ও তিনটি ছবি আসিফ জাভেদ | ২৬ মার্চ, ২০১৬ প্রথম আলো। (পাকিস্তানি শাষকদের ইসলাম রক্ষার দমবন্ধকরা এক বাস্তব চিত্র।লেখক পাকিস্তানী একজন চিকিৎসক।বর্তমান প্রজম্মের বন্ধুদের জন্য কপিপেষ্ট করার লোভ সামলাতে পারলামনা।আশা করি সব বন্ধুরা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন প্রবন্ধটি) মার্চ ১৯৭১: ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে ​ইয়াহিয়া খান বললেন, ‘মেরা দেমাগ মে তো কুছ নেহি আতা’। ছবি: রশীদ তালুকদার১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের নওয়া-ই-ওয়াকত-এর সংখ্যাটি আমার মনে যে ছাপ ফেলেছিল, তা এখনো অক্ষত আছে। সেদিন এই পত্রিকায় তিনটি ছবি পাশাপাশি ছাপ হয়—মাঝখানের ছবিটি ছিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর। ক্যাপশন: ‘পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা’। সে ছবির এক পাশে শেখ মুজিবুর রহমান। সেটির ক্যাপশন: ‘পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতক’। তৃতীয় ছবিটি একজন সেনা কর্মকর্তার। তাঁর বুকে বিচিত্র পদক ও স্মারক। সে ছবির ক্যাপশন: ‘পাকিস্তানের রক্ষক’। ১৯৬০-এর দশকের শেষভাগে আমার মা রাওয়ালপিন্ডিতে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে যেতেন। আমার মামা ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তা। তেমন একটি সফরের পরপর আমার মা একটি কৌতূহলোদ্দীপক গল্প বললেন: একদিন আমার মামার বাসায় বেশ উত্তেজনা। বাসায় একজন ভিআইপি আসবেন, ফলে মাকে কয়েক ঘণ্টা নিজের ঘরে থাকার জন্য বলা হলো। অতিথিটি একজন নারী। তিনি কিছুক্ষণ মামার সঙ্গে সময় কাটান। আমার মামা তখন সামরিক আইনের অধীনে বেসামরিক কাজের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর মা তাঁর হাফ ছেড়ে বেঁচে যাওয়া ভাইকে অতিথি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। চাপা কণ্ঠে মামা বললেন, ভদ্রমহিলা এসেছিলেন তাঁর কাছে কিছু আনুকূল্য চাইতে। নারীটির প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যাপক। তাঁকে উপেক্ষা করলে বিপদের সম্ভাবনা আছে। আশা করি, এই লেখা পড়তে পড়তে পাঠকেরা সেই নারীটিকে চিনে ফেলবেন। ইয়াহিয়া খানের আরেকটি ছবি আছে, যা আমি ভুলতে পারব না: তিনি হাসিমুখে নূরজাহানের পাশে হাতে একটি গ্লাস নিয়ে বসে আছেন, গ্লাসে সম্ভবত সুরা। ছবিতে আরও কিছু মানুষ, সবাই বেশ উপভোগ করছেন। অনেক বছর পর নূরজাহান খালিদ হাসানের কাছে স্বীকার করেছিলেন, ইয়াহিয়া খান তাঁর সঙ্গ উপভোগ করতেন। তিনি তাঁকে নূরি বলে ডাকতেন। আর আমাদের মালেকা-ই-তারান্নুম তাঁকে ডাকতেন সরকার। একটি গান প্রেসিডেন্টের খুব পছন্দ ছিল। তিনি তাঁর জন্য সেই গানটি গাইতেন। খালিদ হাসানকে তিনি বলেছিলেন, ‘অতুলনীয় লেখক সাদাত হাসান মান্টো গাঞ্জে ফারিশতে বইয়ে নূরির যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, প্রেমিক প্রেসিডেন্টের তা অবশ্যই পড়া উচিত ছিল।’ নূরজাহান যে পটভূমি থেকে এসেছিলেন, তার সব বৈশিষ্ট্যই তাঁর মধ্যে ছিল। তাঁর সবকিছুই ছিল বানানো। তিনি ছিলেন প্রেমবিলাসী, কিন্তু তাঁর মধ্যে পরিশীলন ছিল না। শওকতের মতো উত্তর প্রদেশের কেন্দ্র থেকে উঠে আসা একজন মানুষ কীভাবে তাঁর মতো ঘোর পাঞ্জাবি কৃষক মেয়ের সঙ্গে থাকল, তা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। মান্টো এ কথা লেখার ২০ বছর পর ইয়াহিয়া খান যখন নূরির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, জেনারেল মানেক শ তখন অপেক্ষা করছেন, তুষার পড়ে হিমালয়ের পথ কখন বন্ধ হয়ে যাবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে দক্ষিণের দিকে চীন আর সৈন্য পাঠাতে পারবে না। জেনারেল আতিক-উর-রহমানের অতিথি হয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজহার লাহোরের গভর্নর হাউসে একটি রাত কাটান। জেনারেল আতিককে পাঞ্জাবের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরদিন সকালে দুজন প্রাতরাশ করতে বসলেন। আতিক অতিথিকে জিজ্ঞেস করলেন, ঘুম ভালো হয়েছিল কি না। জেনারেল আজহারের ঘুম ভালো হয়নি। ওপর তলার ঘরে অনেক হইচই হয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘ওপরের ঘরে কারা ছিল?’ লজ্জিত হয়ে আতিক বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান। তিনি বান্ধবীদের সান্নিধ্য উপভোগ করছিলেন।’ সময়টা ১৯৭১ সাল। পূর্ব পাকিস্তানের তখন পতন ঘনিয়ে আসছে। পরবর্তীকালে অনেকেই একটি ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছেন, কিন্তু ওই সময় তা চেপে গিয়েছিলেন। পারস্য সাম্রাজ্যের আড়াই হাজার বছর পূর্তি উৎসবে পারসেপোলিসে গিয়ে ইয়াহিয়া খান গাড়ি পার্কিংয়ে প্রস্রাব করেছিলেন। তিনি এত বেশি পান করে ফেলেছিলেন যে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি। তাই ঝোপের আড়ালে গিয়ে নিজেকে খালি করে দেন। ইয়াহিয়া খানের প্রথম ছবিটির কথা মনে পড়লে আমার জানতে ইচ্ছে করে, নওয়া-ই-ওয়াকত-এর মাজিদ নিজামি আসলে কী ভাবছিলেন? তিনি বহন করছিলেন তাঁর কিংবদন্তিতুল্য ভাই হামিদ নিজামির উত্তরাধিকার। এই পত্রিকাটি ছিল পাকিস্তানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ উর্দু দৈনিক, যারা দাবি করত, স্বৈরাচারকে মুখের ওপর সত্য বলতে তারা ভয় পায় না। তিনি সম্ভবত স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। নওয়া-ই-ওয়াকতই একমাত্র সংবাদপত্র নয়, আরও অনেকেই ওই সংক্ষুব্ধ সময়ে জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। পুরো জাতি জাতীয়তাবাদের মাতলামিতে ভেসে গিয়েছিল। সংবাদপত্র ও সরকার-নিয়ন্ত্রিত রেডিও-টিভির তথ্যে বিভ্রান্ত হয়েছিল। আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের লেখা পড়লে দেখবেন, তাঁরা বলছেন, ইয়াহিয়া খান একজন অসাধারণ কর্মকর্তা। যদিও এ কথার সমর্থনে তাঁরা কোনো প্রমাণ দেননি। ইয়াহিয়া খান মগ্ন ছিলেন নূরিদের মতো মানুষদের নিয়ে। মান্টো সরস মন্তব্য করে বলেছেন, পাকিস্তানের তরুণেরা যখন দেশের জন্য জীবন দিচ্ছে, প্রেমিক জেনারেল তখন ‘চাতাউরের দুর্গ দখলে’ ব্যস্ত। ঢাকার পতনের পর জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা হস্তান্তরের গল্পটিও রূপকথা। আসলে মংলা গ্যারিসনে অভ্যুত্থানের কথা শুনে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। ইয়াহিয়ার কার্যক্রমের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বিবরণ দিয়েছেন পুলিশ বিভাগের রাওয়ালপিন্ডির বিশেষ শাখার সুপার সি এইচ সরদার। তিনি লিখেছেন: প্রেসিডেন্ট ভবন ছিল তখন বেশ একটা জায়গা। নানা মানুষজন আসছে। প্রেসিডেন্ট নিজে মাতাল আর রমণীমোহন।...দেহজীবিনী আর তাদের দালালেরা তো বটেই, সমাজে মর্যাদাবান অনেকেও ছিলেন। আকলিম আখতার, মিসেস কে এন হোসেন ও লায়লা মোজাফ্ফর ছিলেন অন্যতম। বহু নিন্দিত কিন্তু আকর্ষণীয় নারীও আসত। তারা প্রেসিডেন্ট হাউসজুড়ে নাচত, গাইত, পান করত। প্রেসিডেন্ট হাউসকে ওখানকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী বলত কঞ্জরখানা, আর সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর বলত ডাঙ্গরখানা। একবার ইরানের শাহ পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সফরে এলে গভর্নর হাউসে ওঠেন। প্রেসিডেন্টও তখন সেখানে। শাহের বাইরে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট তখনো শয়নকক্ষ থেকে বেরোচ্ছেন না। প্রটোকল নিয়ে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিল। কিন্তু কারও সেখানে যাওয়ার উপায় নেই। প্রেসিডেন্টের এম এস জেনারেল ইসহাক আকলিম আখতারকে বললেন, তিনি যেন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আসেন। আকলিম জেনারেল রানি হিসেবে পরিচিতি ছিলেন—প্রেসিডেন্টের রানি, আদতে বেশ্যার দালাল। ঘরে গিয়ে দেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান গায়িকার সঙ্গে প্রেসিডেন্টকে তিনি যে অবস্থায় দেখেন, তাতে তারই আক্কেল গুড়ুম। প্রেসিডেন্টকে তিনি নিজে কাপড় পরিয়ে নিচে নিয়ে আসেন।...ফুর্তি করার জন্য ইয়াহিয়ার বহু বান্ধবী ছিল।...এক সন্ধ্যায় তিনি চলে গেলেন মিসেস কে এন হোসেনের বাড়িতে, যাঁকে সবাই ‘কালো সুন্দরী’ বলে জানত...সবার অগোচরে প্রেসিডেন্ট সেখানে তিন দিন তিন রাত কাটিয়ে দেন। চতুর্থ দিন মিসেস হোসেনকে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় নিয়ে তিনি তাকে অভ্যন্তরীণ সজ্জাকরের স্থায়ী চাকরি দিয়ে দেন। তাঁর স্বামীকে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত করা হয়। প্রেসিডেন্ট কেন তিন দিন তাঁর বাড়িতে ছিলেন, এ নিয়ে পরে প্রশ্ন করা হলে মিসেস হোসেন বলেন, প্রেসিডেন্টকে তিনি বাংলা গান শিখিয়েছেন। ঢাকার পতনের পর ইয়াহিয়া খান টিভিতে ঘোষণা দেন, ‘পূর্ব ফ্রন্টে সাময়িকভাবে পিছিয়ে এলেও’ পশ্চিম ফ্রন্টে যুদ্ধ চলবে। কিন্তু পরদিনই ভারতের এককভাবে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি তিনি মেনে নেন। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়াকে নিয়ে অাঁকা শিল্পী কামরুল হাস​ানের পোস্টার১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সরদার উইসুফ চানদিও আর ইয়াহিয়া খানের মধ্যে যে আলাপ হয়, তা নিচে তুলে দিচ্ছি। এ ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন সি এইচ সরদার। দায়িত্বে নিয়োজিত এক ডিএসপির কাছে তিনি গল্পটি শুনেছিলেন। জায়গাটা ছিল করাচির কাছাকাছি একটি হ্রদ। উপলক্ষ ছিল হাঁস শিকার: ইউসুফ: এখন কী হবে? নির্বাচনে তো একদিকে জিতেছে মুজিব (কটু কথা), আরেক দিকে ভুট্টো (কটু কথা)? ইয়াহিয়া খান: বাচ্চু, চিন্তা কোরো না, তামাশা দ্যাখো। আমি এমন টোপ ফেলব যে তারা যেকোনো একজন আরেকজনকে মেরে ফেলবে। ইয়াহিয়ার কিছু ঘোষণা শুনে মার্কিন গৃহযুদ্ধের এক কৌতূহলোদ্দীপক চরিত্রের কথা মনে পড়ে যায়। চ্যান্সেলর্সভিলের যুদ্ধের আগে জেনারেল হুকার উত্তরের সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি তখন অমার্জিত মন্তব্য করে বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা একদম নিখুঁত, আল্লাহ্ জেনারেল লিকে (প্রতিপক্ষ) দয়া করুন।’ কিন্তু পরদিন হুকার মারাত্মকভাবে পরাজিত হলেন। তার জায়গায় দায়িত্ব পেলেন লিঙ্কন। ইয়াহিয়া খান নাকি কোয়েটা স্টাফ কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি কি মার্কিন গৃহযুদ্ধের ওই অধ্যায়টি পড়েননি? টিক্কা খান ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অভিযান শুরু করলে লাখ লাখ শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিম বাংলায় চলে যায়। পাকিস্তানের এই রক্ষক তখন কী করছিলেন, সি এইচ সরদারের বিবরণে পড়ুন: ইয়াহিয়া খান মৌজ-ফুর্তিতে মেতে ছিলেন। পছন্দের কোনো মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে প্রতি রাতে তিনি রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদের রাস্তায় ঘুরতে বেরোতেন। পাহারাদারেরা তো যথারীতি থাকতই। কখনো কখনো গাড়ির ছাদ খুলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তিনি মৌজে মশগুল হয়ে যেতেন। রক্ষীরাও তা দেখতে পেত। ইসলামি রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এমন অসংযমী আচরণে তাদের মন তেতো হতো। এ কথা জানানো হলে পুলিশের সুপার বলতেন, ‘প্রেসিডেন্ট তো গুরুতর সমস্যা নিয়ে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত থাকেন। তার একটু বিনোদনের দরকার।’ বিনোদন বটে! ইয়াহিয়ার সহমর্মীরা কখনো কখনো বলেন, উপদেষ্টারা তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। কিন্তু তাদের নিয়োগ দিয়েছে কে? অনেক ভালো উপদেশও ছিল, কিন্তু সব উপেক্ষিত হয়েছে। কিছু দৃঢ়চিত্ত মানুষ তাঁকে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করতে মানা করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেনারেল ইয়াকুব খান ও অ্যাডমিরাল আহ্সান তাঁকে বলেন, অধিবেশন স্থগিত করা খুবই অবিবেচকের কাজ হবে। স্ট্যানলি উলপার্ট লিখেছেন, ‘এর কয়েক সপ্তাহ আগে এস এম আহসান খুবই সাহসের সঙ্গে হরতালরত বাঙালির ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করেন। তাঁর জায়গায় তখন জেনারেল ইয়াকুবকে বসানো হয়। তিনিও গণহত্যার আদেশ অগ্রাহ্য করেন।’ ইয়াহিয়া যখন মদ্যপ ইয়ারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে তাদের অনুরোধ দূরে ঠেলেন, তখন তারা হতভম্ব হয়ে যান। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পদগোর্নি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব দিলেও তিনি তা বেকুবের মতো প্রত্যাখ্যান করেন। রক্ষকের খুব তাড়া ছিল, বাঙালিদের ‘ওপর বাঘ লেলিয়ে দিতে তার আর তর সইছিল না’, সে তাতে যা হয় হোক। ক্ষমতার দম্ভে উন্মত্ত এবং চাটুকারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে তিনি একবার গর্বভরে বলেছিলেন, তাঁর সমরাস্ত্র ভারতের চেয়ে উন্নত। ফলে জেনারেল ইয়াকুবকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিয়ে এসে পদাবনতি দেওয়া হয়, এমনকি অবসরেও পাঠানো হয়। প্রেসিডেন্ট তাঁর জায়গায় জেনারেল নিয়াজিকে পাঠান। তাঁকে বরণ করতে বিমানবন্দরে এলে জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার কাছে নিয়াজির প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘আমার জন্য কয়টা মেয়ে ঠিক করে রেখেছ?’ কয়েক মাস পরই দেখা গেল, নিয়াজি লেজ গুটিয়ে তাঁর নিজ ব্যাচের জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করছেন। নিয়াজি আবার নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানিত জেনারেল মনে করতেন। এই ছিল তার নমুনা। এবার দ্রুত লয়ে ১৯৭২ সালে চলে যাই। ইয়াহিয়া খানকে রাখা হয়েছিল সুরক্ষিত বান্নি বাংলোয়। হামুদুর রহমান কমিশনের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল শিয়ালা রেস্টহাউসে। সি এইচ সদর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তার বিবরণ রেখে গেছেন: ইয়াহিয়া হেলিকপ্টারের বদলে সড়কপথে ফিরতে চাইলেন। ব্যাপারটাতে ঝুঁকি ছিল বলে আমি সে জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সড়কপথে ঝুঁকি কেন, ইয়াহিয়া তা জানার জন্য পিড়াপিড়ি করতে লাগলেন। আমি বললাম, ‘কারণ লোকে আপনাকে হেনস্তা করতে পারে।’ ‘মানুষ আমার বিপক্ষে যাবে কেন?’ ‘কারণ পূর্ব পাকিস্তানে আপনি হেরে গেছেন।’ ইয়াহিয়া দেখালেন চিরাচরিত প্রতিক্রিয়া, ‘কেন, আমি কি অস্পৃশ্য? আমি কারও স্পর্শকাতর অঙ্গ কি ছুঁয়ে ফেলেছি?’ পাঞ্জাবি ভাষায় তাঁর কথা আরও রংদার শোনাল। সড়কপথে যাত্রা শুরু হলো। সিহালা রেলসড়কের গাড়ি থেমে গেল। কারণ, লোকে তাঁকে চিনতে পেরে পাথর ছুড়তে শুরু করেছে। ইয়াহিয়ার মুখ শুকিয়ে এল। যেন মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। অবস্থা দেখে আমি বললাম, রাজাবাজার যাওয়া যাক। তিনি তখন কাঁপছেন। অনুনয়-বিনয় করে তিনি বললেন, তাঁকে যেন বান্নি রেস্টহাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছে আরেক আবদার, তাঁকে অ্যাবোটাবাদে নিয়ে যাওয়া হোক। ‘কেন?’ তাঁর জবাব, ‘এ জায়গাটা আমার পছন্দ নয়। এখানে অনেক শেয়াল। রাতে খুবই চেঁচামেচি করে।’ আমি বললাম, ‘সঙ্গী হিসেবে তারা খারাপ কী?’ ঢাকা পতনের পর পাকিস্তান টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোয়েদাদ খান তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুল আমিনের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন: নূরুল আমিনের মতো খাঁটি দেশপ্রেমিককে কখনোই এতটা রাগান্বিত দেখিনি। দুদিন ধরে তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ইয়াহিয়ার সঙ্গে সবুজ ফোনে সেদিন সন্ধ্যায় সাক্ষাতের সময় নিলাম। ইয়াহিয়া আমাকে প্রেসিডেন্ট হাউস পর্যন্ত নূরুল আমিনকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য বললেন। আমরা যখন গেলাম, জেনারেল হামিদও তখন সেখানে। তাঁরা সবাই—ভেবে দেখুন—পান করছেন। নূরুল আমিন বিস্ফোরিত হয়ে বললেন, ‘ঢাকার পতন হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তান হাতছাড়া হয়ে গেছে। আর আপনি হুইস্কি খাচ্ছেন?’...ইয়াহিয়া সব দোষ মুজিবের ওপর দিলেন। আমি জীবনে যত বৈঠক করেছি, সেটি ছিল সবচেয়ে বেদনাদায়ক। পাকিস্তানের এই রক্ষকের আরও একটি ছবি অনেকের মনে পড়বে: ভুট্টোর সামনে ইয়াহিয়া বসে আছেন। তাঁর স্বাক্ষরের জন্য টেবিলের ওপর একটি কাগজ মেলে ধরা। ইয়াহিয়ার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, তিনি বিমর্ষ ও অপমানিত। কারও পতন আর কতটা হতে পারে! তিনি কি নিরোর আধুনিক রূপ? অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন ড. আসিফ জাভেদ: যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়ামসপোর্টে কর্মরত পাকিস্তানি চিকিৎসক।

   দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সৃষ্টি যে একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল তাহাই হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছিল পাকিস্তানী মুসলিম বিদ্বেষী তথাকথিত জেনারেলদের ক্ষমতা গ্রহন করে বেপরোয়া জীবন যাপনের প্রতি নজর দিলে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা