ডিজিটাল বাংলাদেশ: সোনার বাংলার আধুনিক রূপ লিখেছেন --জুনায়েদ আহমেদ পলক,মাননীয় প্রতিমন্ত্রী,গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।২৩/০৬/২০১৬ ইং ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। হত্যা করা হয় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে। পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ করা হয় বাংলা ও বাংলার মানুষকে। প্রায় দুশ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি এবং ১৯৪৭ সালে তাদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি’ থেকে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ভোর আনার প্রত্যাশায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়। জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হয়। আর এই ভিত্তি রচনায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব। তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইতে বলেছেন: “১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তারিখে ফজলুল হক মুসলিম হলের এসেম্বলি হলে এক সভা ডাকা হল, সেখানে স্থির হল একটা ছাত্র প্রতিষ্ঠান করা হবে।… ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে বিরাট সাড়া পাওয়া গেল ছাত্রদের মধ্যে। এক মাসের ভেতর আমি প্রায় সকল জেলায় কমিটি করতে সক্ষম হলাম। যদিও নইমউদ্দিন কনভেনর ছিল, কিন্তু সকল কিছুই প্রায় আমাকেই করতে হত। একদল সহকর্মী পেয়েছিলাম, যারা সত্যিকারের নিঃস্বার্থ কর্মী।” [অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ৮৮-৮৯] পরবর্তীকালে মূলত পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে পরিচালিত ছাত্র আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক গণআন্দোলনে রূপ দিতেই আওয়ামী লীগ গঠন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে’ বলে ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে শেখ মুজিব এর প্রতিবাদ জানান। ফজলুল হক হলের বৈঠকে শেখ মুজিবের প্রস্তাবক্রমে গঠন করা হয় ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি আবারও খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’। এর প্রতিবাদে ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জেলখানায় অনশন করেন। সেই থেকে শুরু হয় পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংগ্রাম। এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্টের শরীক দল আওয়ামী লীগ ১৪৩ আসন পায়। গোপালগঞ্জের আসনে প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে হারিয়ে শেখ মুজিব জয়ী হন এবং মাত্র ৩৪ বছর বয়সে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলে তিনি কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। Bangabandhu - 16 বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ একই সূত্রে গাঁথা কিন্তু মন্ত্রিত্বের চেয়ে দলের স্বার্থকে বড় করে দেখে আওয়ামী লীগ। তাই দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই দীর্ঘ পথচলায় তিনি অনেকবার কারাবরণ করেছেন। অনেক অত্যাচার,নির্যাতন সহ্য করেছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগই মূলত পূর্ব বাংলার জনগণের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। শত বাধা-বিপত্তির মুখেও আওয়ামী লীগ তার গণতান্ত্রিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে মার্শাল ল’ জারি করে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। সে সময় আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৬৪ সালের ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ প্রতিরোধে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’। ইতিহাসে ‘ছয় দফা’কে বিবেচনা করা হয় ‘বাঙালির ম্যাগনা কার্টা’ হিসেবে। বঙ্গবন্ধু ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছয় দফা দাবির পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ব্যাপক গণসংযোগ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে ‘পাকিস্তানের শত্রু’ আখ্যায়িত করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। শেখ মুজিব কারান্তরীণ হলে ছাত্র সমাজ আওয়ামী লীগের ছয় দফার অনুসরণে ‘এগার দফা’ কর্মসূচি প্রণয়ন করে। ছাত্রসমাজের এগার দফায় মূলত ছয় দফা দাবিরই প্রতিফলন দেখা যায়। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে সামরিক সরকার। ছাত্র-জনতার কঠোর আন্দলনের মুখে শেষ পর্যন্ত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ব্যর্থ হয় এবং সামরিক সরকার শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হয়ে শেখ মুজিব তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক জনসভায় ভাষণ দেন। সেই জনসভায় বাংলার ছাত্রসমাজ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ছয় দফা থেকে জন্ম নেওয়া এগার দফা এবার রূপ নেয় এক দফা আন্দোলনে। স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন ধাবিত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন: “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে… একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোনো কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই… জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি, আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’ এর পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’।’’ [অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ২৯৭] flag স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন ধাবিত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে তালবাহানা শুরু করে। ১৯৭১ সালের শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এই ধারাবাহিকতায় ৭ মার্চ, ১৯৭১ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বর্তমানে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অলিখিত ভাষণ হিসেবে স্বীকৃত। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আসন্ন মুক্তিসংগ্রামের ইঙ্গিত প্রদান করে জনগণকে এর জন্য সর্বতোভাবে প্রস্তুত থাকতে বলেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন: “আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।… ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুল।… রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।… আমাদের এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” এরপর শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী এই সংগ্রামে জয়লাভের মধ্য দিয়ে বিশ্বমানচিত্রে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার সমার্থক। বঙ্গবন্ধু শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি প্রতিষ্ঠান– একটি বিপ্লব– একটি অভ্যুত্থান– জাতি নির্মাণের কারিগর– একটি ইতিহাস, যার ব্যাপ্তি হাজার বছর বিস্তৃত। তাই তো তিনি বাঙালি ‘জাতির পিতা’। তাই তো সমকাল তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ ২৩ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। তিনিই বাংলাদেশের মানুষকে ভাষার অধিকার আর রাজনৈতিক স্বাধীনতা এনে দেন। তাঁর আজীবনের সংগ্রাম ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানো। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তোলার। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: “রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায় যদি অর্থনৈতিক মুক্তি না আসে।” তিনি মনে করতেন যে, কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমেই দেশ খাদ্যশস্যে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে এবং জমির ফলন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য দেশের কৃষক সমাজকেই সচেষ্ট হতে হবে। এই লক্ষ্যে তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে অনেক কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন জাতি পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছিলেন তখনই ঘাতকের বুলেট তাঁকে জনগণের কাছে থেকে চিরতরে কেড়ে নেয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মহলেও বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন একজন আলোচিত এবং উদীয়মান বিশ্বনেতা। সারাবিশ্বের মুক্তিকামী, শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এমনকি ঘাতকের বুলেট থেকে রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলও। সেই সময় বিদেশে অবস্থান করায় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা কেবল প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তথা সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আগমন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু করেন। মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। প্রতি মুহূর্তে ঘাতকের বুলেট তাঁকে তাড়া করে ফিরেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে পরবর্তী পাঁচ বছরে একুশ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করে দ্রুত দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গা চুক্তি সম্পাদন করেন। স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করেন, মোবাইলের মনোপলি ভেঙে দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের দ্বার উন্মোচন করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস কাজ শুরু করেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতাসীন হলে আবারও উল্টো পথে দেশ পরিচালিত হয়। স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয় রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সরকারি মদদে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তাঁর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত ২১ বার হামলা করা হয় তাঁর উপর। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন ‘রূপকল্প ২০২১’ যার মূল উপজীব্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’এর স্বপ্নদ্রষ্টা তাঁর মেধাবী পুত্র, আন্তর্জাতিক মহলে সমাদৃত প্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়। তারুণ্যের মেধা ও শক্তিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানোর এক অনবদ্য ও প্রেরণাদায়ী কর্মসূচি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঘোষিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে এসেছে। ১ জুলাই, ২০১৫ বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদগণ একে দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাফল্যের অনন্য স্বীকৃতি হিসেবে অভিহিত করছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হত উন্নয়নের টেস্ট কেস হিসেবে। আর আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বগুণে। নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ বাজেট নিয়েও বিশ্বমিডিয়ায় শেখ হাসিনা ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপই মূলত আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ। ‘রূপকল্প ২০২১’এর অধীনে ঘোষিত সময়ের আগেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যে মশাল বঙ্গবন্ধু জ্বালিয়ে রেখে গিয়েছিলেন ৬৭ বছর আগে, তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরীরা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে তা বহন করে চলেছেন। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয়তু শেখ হাসিনা।

  বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি রাজনৈতিক প্লাটফরম বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অদ্য প্রতিষ্ঠা বার্ষীকি।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন