ষোড়শ সংশোধনী বাতিল প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি আবদুর রশীদ যা বললেন---
রুহুল আমিন মজুমদার:--ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ করার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সাবেক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব আবদুর রশিদ।তিনি বলেন জনগনই সার্বভৌম রাষ্ট্রের মালিক।জনগনের সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার বৈধ অধিকারী তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনীধিদের মাধ্যমে গঠিত সংসদ।জনগনের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগে আইন প্রনয়নে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার কোন কারন আছে বলে তিনি মনে করেন না।এইরুপ মনে করাকে সংবিধানের আলোকে বে- আইনী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।আইন প্রনয়ন, বাতিল ইত্যাদি করার একমাত্র অধিকারী সংসদ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সার্বভৌম জনগণ নির্দিষ্ট সময় পর পর সংসদ নির্বাচিত করে, সেই জনগণকে আদালতের কোনো নির্দেশনা দিয়ে বাধ্য করা যায় না। আপিল বিভাগের রায়ের কার্যকারিতা বিলোপ করে সংসদ যে কোনো আইন তৈরি করতে পারে।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে তা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। পরে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিলেও আপিল বিভাগের রায়ে তা বাতিল হয়ে যায়।
ষোড়শ সংশোধনীকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে ওই রায়ে বলা হয়, ওই সংশোধনীর আগে যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ব্যবস্থা ছিল, তা পুনঃস্থাপিত হল।কোন ধরনের অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে একজন বিচারককে অপসারণ করা হবে তা নির্ধারণের জন্য ৩৯ দফার নতুন একটি আচরণবিধিও যুক্ত করে দেওয়া হয় রায়ে।
সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এ রায় ‘ঐতিহাসিক’।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও আপিল বিভাগের রায়কে ‘ভ্রমাত্মক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, আমরা এতকাল জেনে এসেছি, দিস ইজ পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, কিন্তু এ রায়ের পরে মনে হচ্ছে, উই আর নো লংগার ইন দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। উই আর রাদার ইন জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। খায়রুল হকের আগে ২০০৯ সালের এপ্রিল থেকে ১৮ মাস আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রশিদ।
তিনি লিখেছেন, ষোড়শ সংশোধনীতে ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে বলে যে ধারণা দেওয়া হয়, তার পক্ষে কোনো সমর্থন সংবিধানে পাওয়া যায় না। আর আপিল বিভাগ যেভাবে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সেই জায়গায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করেছে, তাও সংবিধান সমর্থন করে না।সংবিধানে নেই এমন কিছু সংবিধানে লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিজে থেকে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার সংবিধানে আপিল বিভাগকে দেওয়া হয়নি। প্রধান বিচারপতি যেভাবে ভালো মনে করেন, সেভাবে সংবিধানের কোনো কিছু সংশোধন বা নতুন করে লিখে দেওয়ার এখতিয়ারও তাকে সংবিধান দেয়নি।
বিচারপতি রশিদ বলছেন, সংবিধানের অধীনে কেবল সংসদ ছাড়া আর কারও সংবিধানে কোনো পরিবর্তন আনার এখতিয়ার নেই। সেই এখতিয়ার আছে বলে মনে করাটাও সংবিধানের লঙ্ঘন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (ফাইল ছবি) প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (ফাইল ছবি) নিবন্ধে বলা হয়েছে, ওই রায়ের মূল অংশে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ধারা সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পুনঃস্থপিত করার কথা বলা হয়েছে। এই ধারণার ভিত্তিতে তা করা হয়েছে যে, কোনো আইনের একটি সংশোধনী যদি বাতিল করা হয়, তাহলে আগের মূল আইনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃস্থপিত হবে। কিন্তু সংবিধানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম খাটে না। সংবিধানের কোনো একটি অংশ বাতিল বা সংযোজন-বিয়োজনের কাজটি ১৪২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী করতে পারে কেবলমাত্র সংসদ।
রুহুল আমিন মজুমদার:--ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ করার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সাবেক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব আবদুর রশিদ।তিনি বলেন জনগনই সার্বভৌম রাষ্ট্রের মালিক।জনগনের সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার বৈধ অধিকারী তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনীধিদের মাধ্যমে গঠিত সংসদ।জনগনের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগে আইন প্রনয়নে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার কোন কারন আছে বলে তিনি মনে করেন না।এইরুপ মনে করাকে সংবিধানের আলোকে বে- আইনী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।আইন প্রনয়ন, বাতিল ইত্যাদি করার একমাত্র অধিকারী সংসদ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সার্বভৌম জনগণ নির্দিষ্ট সময় পর পর সংসদ নির্বাচিত করে, সেই জনগণকে আদালতের কোনো নির্দেশনা দিয়ে বাধ্য করা যায় না। আপিল বিভাগের রায়ের কার্যকারিতা বিলোপ করে সংসদ যে কোনো আইন তৈরি করতে পারে।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে তা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। পরে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিলেও আপিল বিভাগের রায়ে তা বাতিল হয়ে যায়।
ষোড়শ সংশোধনীকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে ওই রায়ে বলা হয়, ওই সংশোধনীর আগে যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ব্যবস্থা ছিল, তা পুনঃস্থাপিত হল।কোন ধরনের অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে একজন বিচারককে অপসারণ করা হবে তা নির্ধারণের জন্য ৩৯ দফার নতুন একটি আচরণবিধিও যুক্ত করে দেওয়া হয় রায়ে।
সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এ রায় ‘ঐতিহাসিক’।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও আপিল বিভাগের রায়কে ‘ভ্রমাত্মক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, আমরা এতকাল জেনে এসেছি, দিস ইজ পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, কিন্তু এ রায়ের পরে মনে হচ্ছে, উই আর নো লংগার ইন দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। উই আর রাদার ইন জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। খায়রুল হকের আগে ২০০৯ সালের এপ্রিল থেকে ১৮ মাস আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রশিদ।
তিনি লিখেছেন, ষোড়শ সংশোধনীতে ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে বলে যে ধারণা দেওয়া হয়, তার পক্ষে কোনো সমর্থন সংবিধানে পাওয়া যায় না। আর আপিল বিভাগ যেভাবে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সেই জায়গায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করেছে, তাও সংবিধান সমর্থন করে না।সংবিধানে নেই এমন কিছু সংবিধানে লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিজে থেকে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার সংবিধানে আপিল বিভাগকে দেওয়া হয়নি। প্রধান বিচারপতি যেভাবে ভালো মনে করেন, সেভাবে সংবিধানের কোনো কিছু সংশোধন বা নতুন করে লিখে দেওয়ার এখতিয়ারও তাকে সংবিধান দেয়নি।
বিচারপতি রশিদ বলছেন, সংবিধানের অধীনে কেবল সংসদ ছাড়া আর কারও সংবিধানে কোনো পরিবর্তন আনার এখতিয়ার নেই। সেই এখতিয়ার আছে বলে মনে করাটাও সংবিধানের লঙ্ঘন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (ফাইল ছবি) প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (ফাইল ছবি) নিবন্ধে বলা হয়েছে, ওই রায়ের মূল অংশে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ধারা সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পুনঃস্থপিত করার কথা বলা হয়েছে। এই ধারণার ভিত্তিতে তা করা হয়েছে যে, কোনো আইনের একটি সংশোধনী যদি বাতিল করা হয়, তাহলে আগের মূল আইনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃস্থপিত হবে। কিন্তু সংবিধানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম খাটে না। সংবিধানের কোনো একটি অংশ বাতিল বা সংযোজন-বিয়োজনের কাজটি ১৪২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী করতে পারে কেবলমাত্র সংসদ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন