সর্বগ্রাসী দূর্নীতির উৎপত্তি--টি আইবি'র ভূমিকা--বর্তমান সরকারের দূর্নীতি বিরুধী মনোভাব। (পঞ্চম কিস্তি)
রুহুল আমিন মজুমদার:-- '৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালী জাতি শুধুমাত্র পাকিস্তানী শাষক শ্রেনীর ৯৩ হাজার আধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত সেনাসদস্যকে পরাজিত করে স্বাধীনতার লাল সূর্য্য চিনিয়ে আনেনি।তাঁর সঙ্গে পরাজিত করেছিল--'পাকিস্তান সরকার কতৃক গৃহিত রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত সকল 'নীতি আদর্শ'কেও।পাকিস্তান সরকারের অনূসৃত নীতি আদর্শের উল্লেখযোগ্য দিক সমূহের মধ্যে--(১) ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি (২)সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভাবিত শোষন শাষনের গনতন্ত্র (৩) লুটপাটের পূঁজিবাদী অর্থনীতি (৪)ধর্মবর্ণ, জাতিগোষ্টি শ্রেনী ভেদাবেদের শাষন শোষন পদ্ধতি।
উল্লেখিত নীতি আদর্শের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছর সর্বাত্মক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে জাতির জনক 'বঙ্গবন্ধু' বাঙ্গালী জাতিকে সংগঠিত করেন। পরিশেষে অনিবায্য মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী শাষক শোষক, তাঁদের তল্পিবাহক সর্বোপরি তাঁদের অনূসৃত নীতি আদর্শকে চিরতরে পরাজিত করেন।অত:পর সঙ্গতকারনে তাঁদের অনূসৃত নীতির বিপরীতে বাঙ্গালী 'জাতিসত্বা ভিত্তিক,শোষন শাষন মুক্ত, সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মান, জনগনতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মবর্ণ, সম্প্রদায় নিরপেক্ষ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নতুন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নিয়ে, উল্লেখিত পরাজিত শক্তির নীতি আদর্শের বিপরীতে, 'দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের অনিবায্য পরিণতি মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার অনুযায়ী' স্বল্প সময়ের মধ্যে নীতিনৈতিকতা পরিপূর্ণ রাষ্ট্রপরিচালনার একটি পূর্ণাঙ্গ লিখিত দলিল 'সংবিধান' রচনা করেন।
''বঙ্গবন্ধু" শোষনহীন সমাজ বিনির্মানের নিমিত্তে গৃহিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির আলোকে সামাজিক শোষনহীন, সমতা ভিত্তিক গনতান্ত্রিক অর্থনীতির ধারার প্রবর্তন করেন। উক্ত নীতির আলোকে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে--রাষ্ট্র, রাজনীতি সহ মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে তিনি অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন---"জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, আবিস্কার, উদ্ভাবন, শিল্প, সংস্কৃতি, নীতি, আদর্শ সর্বোপরি নৈতিকতার উপর।
খুনিচক্র বঙ্গবন্ধুকে নৃসংশভাবে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতি পূণ:রায় জাতির ঘাঁড়ে চাপিয়ে দেয়। তাঁদের চাপিয়ে দেয়া পুঁজিবাদী অর্থনীতি'র কল্যানে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজের--নীতি-নৈতিকতা, সম্মান, ব্যাক্তিত্ব অনায়াসে দখল করে নেয় অনৈতিকতায় ভরপূর সমাজের ঘৃনিত, নিন্দিত, নিকৃষ্টতম ব্যাক্তি কাল টাকার মালিক দূর্নীতিবাজ গন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু "দূর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রচন্ড ঘৃনা করতেন। বিষয়টি দিব্যচোখে উপলব্দি করা যায় যখন তিনি তাঁর আ-জীবনের সংগ্রাম সাধনা 'পশ্চিমা লুটপাটের গনতান্ত্রিক ধারা' পরিত্যাগ করে 'শোষনমুক্ত সামাজিক ন্যায়নীতি ভিত্তিক জনগনতান্ত্রিক ধারায়' তাঁর শাষন ব্যাবস্থা প্রবর্তন করেন। সমসাময়িক কালের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানদের মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই প্রকাশ্য জনসভায় 'দূর্নীতি"র স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসে দূর্নীতির মূল উৎপাটনে রাষ্ট্রীয় শীর্ষপদে থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষনাও করেছিলেন একমাত্র 'বঙ্গবন্ধু।' রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পদে থেকে সর্বপ্রকার দূর্নীতি অস্বীকার করে "সাধু সরকার পরিচালনার' সংস্কৃতি পূর্বেও ছিল এখনও আছে। প্রচলিত রীতিনীতি উপেক্ষা করে "বঙ্গবন্ধু" দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুধু যুদ্ধ ঘোষনাই করেননি-- সামাজিক বিপ্লব সংগঠন এবং জাতিকে উদ্ভোদ্ধ করার জন্যে বিদ্যমান সকল শ্রেনীপেশার জনগনকে সম্পৃত্ত করে "বাকশাল জাতীয় সরকার" প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
'বাকশাল' শাষন ব্যাবস্থা প্রবর্তনের আগে পরে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষন মনযোগ দিয়ে শ্রবন করলে--'যে কেউ আমার কথার সত্যতা পাবেন'। বাকশাল' গঠনের কারন উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন--"দুর্নীতি আমার কৃষক করেনা, দুর্নীতি আমার শ্রমিক করেনা।দুর্নীতি করে আমার কৃষক, শ্রমিকের টেক্সের টাকায় যারা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন, ডাক্তার হয়েছেন, অফিসার হয়েছেন তাঁরা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে তিনি আরো বলেন--"প্রয়োজন হলে আমি লাল ঘোড়া দাবড়াবো।"
বঙ্গবন্ধুর মূল আদর্শ ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সততা,ন্যায়পরায়নতা, আইনের শাষন, সমতা ভিত্তিক ন্যায়নীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সমতা সর্বোপরি সর্বস্তরে নৈতিকতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই ন্যায়নীতির সমাজ, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার মূল দর্শন ছিল "বাকশাল" অর্থাৎ "বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ"। মূলত: "বাকশাল দর্শন" ছিল দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতি সহ সকল অনৈতিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মারাণাস্ত্র। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন দুর্নীতিমূক্ত ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যাতিত তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশের কাংখীত উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, জনগনের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোন অবস্থায় সম্ভব হবেনা। তাই তিনি তাঁর "রাজনৈতিক পরিপক্কতায় সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে তাঁর মেধায় দীর্ঘকাল সঞ্চিত অভিজ্ঞতার আলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক চিন্তাচেতনা দর্শনাকারে প্রকাশ করেছিলেন।বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের লক্ষে "কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ"কে সংক্ষিপ্ত করে 'বাকশাল' নামে দর্শনভিত্তিক ''জাতীয় সরকার ব্যাবস্থা" প্রবর্তন করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে শুধুমাত্র নতুন বাংলাদেশের শাষক পরিবর্তনের ইচ্ছার বশবর্তি হয়ে দেশীয় ও আন্তজাতিক ষড়যন্ত্রে হত্যা করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর "বাকশাল জাতীয় সরকারে"র ঘোষনা--'পুজিবাদী শোষন,শাষন,তাঁদের তল্পিবাহক, ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি, সর্বোপরি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শোষনের বিরুদ্ধে প্রচন্ড আঘাত সৃষ্টি করেছিল। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্টি "বাকশাল জাতীয় সরকার"কে তাঁদের রক্ষিত পুঁজিবাদী অর্থনীতি ভিত্তিক শোষনশাষন, লুটপাটের প্রতিষ্ঠিত সমাজের বিপরীতে শোষনমূক্ত, সমতা ভিত্তিক, ন্যায়নীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা" হিসেবে বিবেচনা করে।" এবং এও মনে করে যে-- 'বাকশাল" ব্যবস্থা পূরিপূর্ণতা পেলে দ: পূর্ব এশিয়ায় তাঁদের লূটপাটের বৃহত্তর বাজার হাতছাড়া হবে।'' উক্ত বিবেচনায় 'সর্বকালের সেরা বাঙ্গালী দার্শনিক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রনায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সকল অশুভ শক্তি মিলিত হয়ে নৃসংশভাবে হত্যা করে।
উল্লেখিত দূর্নীতি বিরুধী "বঙ্গবন্ধু"র অবস্থান সম্পর্কে আমার বক্তব্যের সত্যতা নির্ণয়ের জন্যে বেশীদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা জানি "টিআইবি'র জন্ম হয়েছিল ১৯৯৬ সালে।এবং অবশ্যই ক্ষমতাসীন "আওয়ামী লীগ সরকারে"র প্রত্যক্ষ সহযোগীতায়। কিন্তু জম্ম থেকে সংস্থাটি সকল সরকারের রোষানলের আগুনে দগ্ধ। অবশ্য টিআইবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল "বঙ্গবন্ধুর আদর্শ"কে ধারন করে, এবং তাঁর আদর্শকে লালন করার মানষে।উল্লেখিত বক্তব্য কোনমতেই আমার মনগড়া নয়--"টিআইবি'র প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধারদের অন্যতম জনাব ড. ইফতে খারুজ্জমান' সাহেবের কথা। অতিসম্প্রতি তাঁর একটি নিবন্ধে বিষয়টির বিশদ বর্ণনা দিয়ে অবলীলায় "দূর্নীতি'র বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান" স্বীকার করে "বাকশাল জাতীয় সরকারের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন।
তিনি একপয্যায় বলেন---"টিআইবির কার্যক্রমের ধারণাগত কাঠামোর অন্যতম উৎস ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। যেখানে তিনি বলেছিলেন-- "দুর্নীতিবিরোধী আইনের কথা, দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় না দেওয়ার কথা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার কথা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা, আর বলেছিলেন ছাত্র-তরুণ-বুদ্ধিজীবী সহ সব নাগরিকের সংঘবদ্ধ গণ-আন্দোলনের কথা।"
জনাব ড. ইফতেখারুজ্জমান সাহেবের নিবন্ধের বক্তব্যের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিলে দেখা যায়---'১৫ আগষ্ট কালরাতে খুনীরা শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি।তাঁরা হত্যা করেছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের "প্রধান সেনাপতিকে। খুনীরা দুর্নীতি বিরুধী লড়াইয়ের প্রধান সেনাপতিকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ; কেড়ে নিয়েছিল--নীতি নৈতিকতায় সমৃদ্ধ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সাম্য, নীতিনৈতিকতা বিকশিত করার আবশ্যকীয় পাঠ, প্রধান মারাণাস্ত্র "বাকশাল জাতীয় সরকারে"র দর্শন। (চলমান পাতা:-৫)
ruhulaminmujumder27@gmail.com
রুহুল আমিন মজুমদার:-- '৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালী জাতি শুধুমাত্র পাকিস্তানী শাষক শ্রেনীর ৯৩ হাজার আধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত সেনাসদস্যকে পরাজিত করে স্বাধীনতার লাল সূর্য্য চিনিয়ে আনেনি।তাঁর সঙ্গে পরাজিত করেছিল--'পাকিস্তান সরকার কতৃক গৃহিত রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত সকল 'নীতি আদর্শ'কেও।পাকিস্তান সরকারের অনূসৃত নীতি আদর্শের উল্লেখযোগ্য দিক সমূহের মধ্যে--(১) ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি (২)সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভাবিত শোষন শাষনের গনতন্ত্র (৩) লুটপাটের পূঁজিবাদী অর্থনীতি (৪)ধর্মবর্ণ, জাতিগোষ্টি শ্রেনী ভেদাবেদের শাষন শোষন পদ্ধতি।
উল্লেখিত নীতি আদর্শের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছর সর্বাত্মক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে জাতির জনক 'বঙ্গবন্ধু' বাঙ্গালী জাতিকে সংগঠিত করেন। পরিশেষে অনিবায্য মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী শাষক শোষক, তাঁদের তল্পিবাহক সর্বোপরি তাঁদের অনূসৃত নীতি আদর্শকে চিরতরে পরাজিত করেন।অত:পর সঙ্গতকারনে তাঁদের অনূসৃত নীতির বিপরীতে বাঙ্গালী 'জাতিসত্বা ভিত্তিক,শোষন শাষন মুক্ত, সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মান, জনগনতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মবর্ণ, সম্প্রদায় নিরপেক্ষ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নতুন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নিয়ে, উল্লেখিত পরাজিত শক্তির নীতি আদর্শের বিপরীতে, 'দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের অনিবায্য পরিণতি মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার অনুযায়ী' স্বল্প সময়ের মধ্যে নীতিনৈতিকতা পরিপূর্ণ রাষ্ট্রপরিচালনার একটি পূর্ণাঙ্গ লিখিত দলিল 'সংবিধান' রচনা করেন।
''বঙ্গবন্ধু" শোষনহীন সমাজ বিনির্মানের নিমিত্তে গৃহিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির আলোকে সামাজিক শোষনহীন, সমতা ভিত্তিক গনতান্ত্রিক অর্থনীতির ধারার প্রবর্তন করেন। উক্ত নীতির আলোকে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে--রাষ্ট্র, রাজনীতি সহ মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে তিনি অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন---"জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, আবিস্কার, উদ্ভাবন, শিল্প, সংস্কৃতি, নীতি, আদর্শ সর্বোপরি নৈতিকতার উপর।
খুনিচক্র বঙ্গবন্ধুকে নৃসংশভাবে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতি পূণ:রায় জাতির ঘাঁড়ে চাপিয়ে দেয়। তাঁদের চাপিয়ে দেয়া পুঁজিবাদী অর্থনীতি'র কল্যানে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজের--নীতি-নৈতিকতা, সম্মান, ব্যাক্তিত্ব অনায়াসে দখল করে নেয় অনৈতিকতায় ভরপূর সমাজের ঘৃনিত, নিন্দিত, নিকৃষ্টতম ব্যাক্তি কাল টাকার মালিক দূর্নীতিবাজ গন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু "দূর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রচন্ড ঘৃনা করতেন। বিষয়টি দিব্যচোখে উপলব্দি করা যায় যখন তিনি তাঁর আ-জীবনের সংগ্রাম সাধনা 'পশ্চিমা লুটপাটের গনতান্ত্রিক ধারা' পরিত্যাগ করে 'শোষনমুক্ত সামাজিক ন্যায়নীতি ভিত্তিক জনগনতান্ত্রিক ধারায়' তাঁর শাষন ব্যাবস্থা প্রবর্তন করেন। সমসাময়িক কালের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানদের মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই প্রকাশ্য জনসভায় 'দূর্নীতি"র স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসে দূর্নীতির মূল উৎপাটনে রাষ্ট্রীয় শীর্ষপদে থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষনাও করেছিলেন একমাত্র 'বঙ্গবন্ধু।' রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পদে থেকে সর্বপ্রকার দূর্নীতি অস্বীকার করে "সাধু সরকার পরিচালনার' সংস্কৃতি পূর্বেও ছিল এখনও আছে। প্রচলিত রীতিনীতি উপেক্ষা করে "বঙ্গবন্ধু" দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুধু যুদ্ধ ঘোষনাই করেননি-- সামাজিক বিপ্লব সংগঠন এবং জাতিকে উদ্ভোদ্ধ করার জন্যে বিদ্যমান সকল শ্রেনীপেশার জনগনকে সম্পৃত্ত করে "বাকশাল জাতীয় সরকার" প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
'বাকশাল' শাষন ব্যাবস্থা প্রবর্তনের আগে পরে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষন মনযোগ দিয়ে শ্রবন করলে--'যে কেউ আমার কথার সত্যতা পাবেন'। বাকশাল' গঠনের কারন উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন--"দুর্নীতি আমার কৃষক করেনা, দুর্নীতি আমার শ্রমিক করেনা।দুর্নীতি করে আমার কৃষক, শ্রমিকের টেক্সের টাকায় যারা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন, ডাক্তার হয়েছেন, অফিসার হয়েছেন তাঁরা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে তিনি আরো বলেন--"প্রয়োজন হলে আমি লাল ঘোড়া দাবড়াবো।"
বঙ্গবন্ধুর মূল আদর্শ ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সততা,ন্যায়পরায়নতা, আইনের শাষন, সমতা ভিত্তিক ন্যায়নীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সমতা সর্বোপরি সর্বস্তরে নৈতিকতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই ন্যায়নীতির সমাজ, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার মূল দর্শন ছিল "বাকশাল" অর্থাৎ "বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ"। মূলত: "বাকশাল দর্শন" ছিল দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতি সহ সকল অনৈতিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মারাণাস্ত্র। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন দুর্নীতিমূক্ত ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যাতিত তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশের কাংখীত উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, জনগনের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোন অবস্থায় সম্ভব হবেনা। তাই তিনি তাঁর "রাজনৈতিক পরিপক্কতায় সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে তাঁর মেধায় দীর্ঘকাল সঞ্চিত অভিজ্ঞতার আলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক চিন্তাচেতনা দর্শনাকারে প্রকাশ করেছিলেন।বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের লক্ষে "কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ"কে সংক্ষিপ্ত করে 'বাকশাল' নামে দর্শনভিত্তিক ''জাতীয় সরকার ব্যাবস্থা" প্রবর্তন করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে শুধুমাত্র নতুন বাংলাদেশের শাষক পরিবর্তনের ইচ্ছার বশবর্তি হয়ে দেশীয় ও আন্তজাতিক ষড়যন্ত্রে হত্যা করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর "বাকশাল জাতীয় সরকারে"র ঘোষনা--'পুজিবাদী শোষন,শাষন,তাঁদের তল্পিবাহক, ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি, সর্বোপরি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শোষনের বিরুদ্ধে প্রচন্ড আঘাত সৃষ্টি করেছিল। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্টি "বাকশাল জাতীয় সরকার"কে তাঁদের রক্ষিত পুঁজিবাদী অর্থনীতি ভিত্তিক শোষনশাষন, লুটপাটের প্রতিষ্ঠিত সমাজের বিপরীতে শোষনমূক্ত, সমতা ভিত্তিক, ন্যায়নীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা" হিসেবে বিবেচনা করে।" এবং এও মনে করে যে-- 'বাকশাল" ব্যবস্থা পূরিপূর্ণতা পেলে দ: পূর্ব এশিয়ায় তাঁদের লূটপাটের বৃহত্তর বাজার হাতছাড়া হবে।'' উক্ত বিবেচনায় 'সর্বকালের সেরা বাঙ্গালী দার্শনিক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রনায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সকল অশুভ শক্তি মিলিত হয়ে নৃসংশভাবে হত্যা করে।
উল্লেখিত দূর্নীতি বিরুধী "বঙ্গবন্ধু"র অবস্থান সম্পর্কে আমার বক্তব্যের সত্যতা নির্ণয়ের জন্যে বেশীদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা জানি "টিআইবি'র জন্ম হয়েছিল ১৯৯৬ সালে।এবং অবশ্যই ক্ষমতাসীন "আওয়ামী লীগ সরকারে"র প্রত্যক্ষ সহযোগীতায়। কিন্তু জম্ম থেকে সংস্থাটি সকল সরকারের রোষানলের আগুনে দগ্ধ। অবশ্য টিআইবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল "বঙ্গবন্ধুর আদর্শ"কে ধারন করে, এবং তাঁর আদর্শকে লালন করার মানষে।উল্লেখিত বক্তব্য কোনমতেই আমার মনগড়া নয়--"টিআইবি'র প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধারদের অন্যতম জনাব ড. ইফতে খারুজ্জমান' সাহেবের কথা। অতিসম্প্রতি তাঁর একটি নিবন্ধে বিষয়টির বিশদ বর্ণনা দিয়ে অবলীলায় "দূর্নীতি'র বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান" স্বীকার করে "বাকশাল জাতীয় সরকারের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন।
তিনি একপয্যায় বলেন---"টিআইবির কার্যক্রমের ধারণাগত কাঠামোর অন্যতম উৎস ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। যেখানে তিনি বলেছিলেন-- "দুর্নীতিবিরোধী আইনের কথা, দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় না দেওয়ার কথা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার কথা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা, আর বলেছিলেন ছাত্র-তরুণ-বুদ্ধিজীবী সহ সব নাগরিকের সংঘবদ্ধ গণ-আন্দোলনের কথা।"
জনাব ড. ইফতেখারুজ্জমান সাহেবের নিবন্ধের বক্তব্যের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিলে দেখা যায়---'১৫ আগষ্ট কালরাতে খুনীরা শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি।তাঁরা হত্যা করেছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের "প্রধান সেনাপতিকে। খুনীরা দুর্নীতি বিরুধী লড়াইয়ের প্রধান সেনাপতিকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ; কেড়ে নিয়েছিল--নীতি নৈতিকতায় সমৃদ্ধ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সাম্য, নীতিনৈতিকতা বিকশিত করার আবশ্যকীয় পাঠ, প্রধান মারাণাস্ত্র "বাকশাল জাতীয় সরকারে"র দর্শন। (চলমান পাতা:-৫)
ruhulaminmujumder27@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন