সর্বগ্রাসী দূর্নীতির উৎপত্তি--টি আইবি'র ভূমিকা--বর্তমান সরকারের দূর্নীতি বিরুধী মনোভাব। (পঞ্চম  কিস্তি)

    রুহুল আমিন মজুমদার:-- '৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালী জাতি শুধুমাত্র পাকিস্তানী শাষক শ্রেনীর ৯৩ হাজার আধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত সেনাসদস্যকে পরাজিত করে স্বাধীনতার লাল সূর্য্য চিনিয়ে আনেনি।তাঁর সঙ্গে পরাজিত করেছিল--'পাকিস্তান সরকার কতৃক গৃহিত রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত সকল 'নীতি আদর্শ'কেও।পাকিস্তান সরকারের অনূসৃত নীতি আদর্শের উল্লেখযোগ্য দিক সমূহের মধ্যে--(১) ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি (২)সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভাবিত শোষন শাষনের গনতন্ত্র (৩) লুটপাটের পূঁজিবাদী অর্থনীতি (৪)ধর্মবর্ণ, জাতিগোষ্টি শ্রেনী ভেদাবেদের শাষন শোষন পদ্ধতি।

    উল্লেখিত নীতি আদর্শের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছর সর্বাত্মক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে জাতির জনক 'বঙ্গবন্ধু' বাঙ্গালী জাতিকে সংগঠিত করেন। পরিশেষে অনিবায্য মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী শাষক শোষক, তাঁদের তল্পিবাহক সর্বোপরি তাঁদের অনূসৃত নীতি আদর্শকে চিরতরে পরাজিত করেন।অত:পর সঙ্গতকারনে তাঁদের অনূসৃত নীতির বিপরীতে বাঙ্গালী 'জাতিসত্বা ভিত্তিক,শোষন শাষন মুক্ত, সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মান, জনগনতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মবর্ণ, সম্প্রদায় নিরপেক্ষ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।

     জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নতুন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নিয়ে,  উল্লেখিত পরাজিত শক্তির নীতি আদর্শের বিপরীতে, 'দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের অনিবায্য পরিণতি মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার অনুযায়ী' স্বল্প সময়ের মধ্যে নীতিনৈতিকতা পরিপূর্ণ রাষ্ট্রপরিচালনার একটি পূর্ণাঙ্গ লিখিত দলিল 'সংবিধান' রচনা করেন।

         ''বঙ্গবন্ধু" শোষনহীন সমাজ বিনির্মানের নিমিত্তে গৃহিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির আলোকে সামাজিক শোষনহীন, সমতা ভিত্তিক গনতান্ত্রিক অর্থনীতির ধারার প্রবর্তন করেন। উক্ত নীতির আলোকে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে--রাষ্ট্র, রাজনীতি সহ মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে তিনি অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন---"জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, আবিস্কার, উদ্ভাবন, শিল্প, সংস্কৃতি, নীতি, আদর্শ সর্বোপরি নৈতিকতার উপর।

    খুনিচক্র বঙ্গবন্ধুকে নৃসংশভাবে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতি পূণ:রায় জাতির ঘাঁড়ে চাপিয়ে দেয়। তাঁদের চাপিয়ে দেয়া পুঁজিবাদী অর্থনীতি'র কল্যানে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজের--নীতি-নৈতিকতা, সম্মান, ব্যাক্তিত্ব অনায়াসে  দখল করে নেয় অনৈতিকতায় ভরপূর  সমাজের ঘৃনিত, নিন্দিত, নিকৃষ্টতম ব্যাক্তি কাল টাকার মালিক দূর্নীতিবাজ গন।

   জাতির জনক বঙ্গবন্ধু "দূর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে  প্রচন্ড ঘৃনা  করতেন। বিষয়টি দিব্যচোখে উপলব্দি করা যায় যখন তিনি তাঁর আ-জীবনের সংগ্রাম সাধনা 'পশ্চিমা লুটপাটের গনতান্ত্রিক ধারা' পরিত্যাগ করে 'শোষনমুক্ত সামাজিক ন্যায়নীতি ভিত্তিক জনগনতান্ত্রিক ধারায়' তাঁর শাষন ব্যাবস্থা প্রবর্তন করেন। সমসাময়িক কালের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানদের মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই  প্রকাশ্য জনসভায় 'দূর্নীতি"র স্বীকারোক্তি  দিয়েছিলেন।  বিশ্ব ইতিহাসে দূর্নীতির মূল উৎপাটনে রাষ্ট্রীয় শীর্ষপদে থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষনাও করেছিলেন একমাত্র 'বঙ্গবন্ধু।'  রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পদে থেকে  সর্বপ্রকার দূর্নীতি অস্বীকার করে "সাধু সরকার পরিচালনার' সংস্কৃতি  পূর্বেও ছিল এখনও আছে। প্রচলিত রীতিনীতি উপেক্ষা করে "বঙ্গবন্ধু" দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুধু যুদ্ধ ঘোষনাই করেননি-- সামাজিক বিপ্লব সংগঠন এবং জাতিকে উদ্ভোদ্ধ করার জন্যে বিদ্যমান সকল শ্রেনীপেশার জনগনকে সম্পৃত্ত করে "বাকশাল জাতীয় সরকার" প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

      'বাকশাল' শাষন ব্যাবস্থা প্রবর্তনের আগে পরে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষন  মনযোগ দিয়ে শ্রবন করলে--'যে কেউ আমার কথার সত্যতা পাবেন'। বাকশাল' গঠনের কারন উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন--"দুর্নীতি আমার কৃষক করেনা, দুর্নীতি আমার শ্রমিক করেনা।দুর্নীতি করে আমার কৃষক, শ্রমিকের টেক্সের টাকায় যারা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন, ডাক্তার হয়েছেন, অফিসার হয়েছেন তাঁরা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে তিনি আরো বলেন--"প্রয়োজন হলে আমি লাল ঘোড়া দাবড়াবো।"

     বঙ্গবন্ধুর মূল আদর্শ ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সততা,ন্যায়পরায়নতা, আইনের শাষন, সমতা ভিত্তিক ন্যায়নীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সমতা সর্বোপরি সর্বস্তরে নৈতিকতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই ন্যায়নীতির সমাজ, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার মূল দর্শন ছিল "বাকশাল" অর্থাৎ "বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ"। মূলত: "বাকশাল দর্শন" ছিল  দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতি সহ সকল অনৈতিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মারাণাস্ত্র। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন দুর্নীতিমূক্ত ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যাতিত তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশের কাংখীত উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, জনগনের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোন অবস্থায় সম্ভব হবেনা। তাই তিনি তাঁর "রাজনৈতিক পরিপক্কতায় সর্বোচ্চ  স্তরে পৌঁছে তাঁর মেধায় দীর্ঘকাল সঞ্চিত অভিজ্ঞতার আলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক চিন্তাচেতনা দর্শনাকারে প্রকাশ করেছিলেন।বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের  লক্ষে "কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ"কে  সংক্ষিপ্ত করে 'বাকশাল' নামে দর্শনভিত্তিক ''জাতীয় সরকার ব্যাবস্থা" প্রবর্তন করেছিলেন।
 
 বঙ্গবন্ধুকে শুধুমাত্র নতুন বাংলাদেশের শাষক পরিবর্তনের ইচ্ছার বশবর্তি হয়ে দেশীয় ও আন্তজাতিক  ষড়যন্ত্রে হত্যা করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর "বাকশাল জাতীয় সরকারে"র ঘোষনা--'পুজিবাদী শোষন,শাষন,তাঁদের  তল্পিবাহক, ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি, সর্বোপরি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শোষনের বিরুদ্ধে প্রচন্ড আঘাত সৃষ্টি করেছিল। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্টি "বাকশাল জাতীয় সরকার"কে তাঁদের রক্ষিত পুঁজিবাদী অর্থনীতি ভিত্তিক শোষনশাষন, লুটপাটের প্রতিষ্ঠিত সমাজের বিপরীতে শোষনমূক্ত, সমতা ভিত্তিক, ন্যায়নীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা" হিসেবে বিবেচনা করে।" এবং এও মনে করে যে-- 'বাকশাল" ব্যবস্থা পূরিপূর্ণতা পেলে দ: পূর্ব এশিয়ায় তাঁদের লূটপাটের বৃহত্তর বাজার হাতছাড়া হবে।'' উক্ত বিবেচনায় 'সর্বকালের সেরা বাঙ্গালী দার্শনিক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রনায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সকল অশুভ শক্তি মিলিত হয়ে নৃসংশভাবে হত্যা করে।  

      উল্লেখিত দূর্নীতি বিরুধী "বঙ্গবন্ধু"র অবস্থান সম্পর্কে আমার বক্তব্যের সত্যতা নির্ণয়ের জন্যে বেশীদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা জানি "টিআইবি'র জন্ম হয়েছিল ১৯৯৬ সালে।এবং অবশ্যই ক্ষমতাসীন "আওয়ামী লীগ সরকারে"র প্রত্যক্ষ সহযোগীতায়। কিন্তু জম্ম থেকে সংস্থাটি সকল সরকারের রোষানলের আগুনে দগ্ধ। অবশ্য টিআইবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল "বঙ্গবন্ধুর আদর্শ"কে ধারন করে, এবং তাঁর আদর্শকে লালন করার মানষে।উল্লেখিত বক্তব্য কোনমতেই আমার মনগড়া নয়--"টিআইবি'র প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধারদের অন্যতম  জনাব  ড. ইফতে খারুজ্জমান' সাহেবের কথা। অতিসম্প্রতি তাঁর একটি নিবন্ধে বিষয়টির বিশদ বর্ণনা দিয়ে  অবলীলায় "দূর্নীতি'র বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান"  স্বীকার করে "বাকশাল জাতীয় সরকারের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন।

    তিনি একপয্যায় বলেন---"টিআইবির কার্যক্রমের ধারণাগত কাঠামোর অন্যতম উৎস ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ দেওয়া বঙ্গবন্ধুর  ভাষণ। যেখানে তিনি বলেছিলেন-- "দুর্নীতিবিরোধী আইনের কথা, দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় না দেওয়ার কথা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার কথা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা, আর বলেছিলেন ছাত্র-তরুণ-বুদ্ধিজীবী সহ সব নাগরিকের সংঘবদ্ধ গণ-আন্দোলনের কথা।"

   জনাব ড. ইফতেখারুজ্জমান সাহেবের নিবন্ধের বক্তব্যের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিলে দেখা যায়---'১৫ আগষ্ট কালরাতে খুনীরা শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি।তাঁরা হত্যা করেছিল দুর্নীতির  বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের "প্রধান সেনাপতিকে। খুনীরা দুর্নীতি বিরুধী লড়াইয়ের প্রধান সেনাপতিকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ; কেড়ে নিয়েছিল--নীতি নৈতিকতায় সমৃদ্ধ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সাম্য, নীতিনৈতিকতা বিকশিত করার  আবশ্যকীয় পাঠ, প্রধান মারাণাস্ত্র  "বাকশাল জাতীয় সরকারে"র দর্শন।  (চলমান পাতা:-৫)
           ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন