"সৌদির উপহার ২০০কোটি ডলার ফেরৎ দাবি, বিশ্বদরবারে একঘরে পাকিস্তান--"শেখ হাসিনার বাংলাদেশের স্বার্থ উদ্ধারের কুটনীতি"--


২০০ কোটি ডলার এক সপ্তাহের মধ্যে ফেরত চায় সৌদি আরব, একঘরে পাকিস্তান-- "শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা বাংলাদেশের স্বার্থ উদ্ধার।"
___________________________________________________________

            ভাগ্য খারাপ হলে শালার ছেলেও বাবা ডাকে।পাকিদের হয়েছেও তাই।আজিবনের বর্বর জাতি পাকিস্তান পরের সম্পদে বাহাদুরী করতে সিদ্ধহস্ত"। "মুসলিম কা ল্যাড়কা হ্যয় আরব কো দোস্তি বনেগা"।অশিক্ষিত বর্বর পাকিস্তানকে শুধুমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবে অন্যান্ন মুসলিম দেশগুলী সহযোগীতা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল।আরব মুসলিম ভাইদের সম্পদ এবং '৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের আগে প্রায় ২৪ বছর বাংলাদেশ লুট করা অর্থে দিব্যি বাহাদুরীও করেছে--দীর্ঘ শতবছরের কাছাকাছি।
        তাঁদের উদ্যতপুর্ণ আচরনের পারদ এত বেশী শীর্ষে উঠে গিয়েছিল- ",বাংলাদেশের মানবতা বিরুধী বিচারের রায় কায্যকর করার প্রাক্কালে 'ঐ ব্যাক্তি তাঁদের বন্ধু হয়ে যায়'।" বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কুটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভুত 'আচরন করতে সামান্য লজ্জাবোধ করেনি।রাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্র' হয় অর্থাৎ 'জনগনের সংগে জনগনের বা সরকারের সঙ্গে সরকারের বন্ধুত্ব হয়'--"সরকারের ( পাকিস্তানি জনগনের) ব্যাক্তিগত বন্ধু থাকতে পারে" এই অসভ্য সরকারের কাছ থেকেই বিশ্ববাসি প্রথম জানতে পেরেছে।
বাংলাদেশের আপামর জনগনের পক্ষথেকে পাকিস্তানীদের সঙ্গে সকল প্রকার সম্পর্ক চিহ্ন করার জোর দাবী জানালেও শেখ হাসিনার সরকার সেদিকে কর্ণপাত করেননি।বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন মহামানবীতে রুপান্তর হয়েছেন কে জানত? তাঁর চোখে দিব্যি তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন- "পাকিস্তান অচিরেই বিশ্বদরবারে একঘরে হয়ে যাচ্ছে। " বাংলাদেশ কেন অযথা একঘরে করার প্রক্রিয়ায় প্রথমেই অংশ নিবে? শুরু করার দায়িত্ব তিনি না নিয়ে অপেক্ষায় থাকা শ্রেয় মনে করেছেন।মোক্ষম সময়টা আসতে খুব বেশী দেরী হয়নি। এদেশীয় পাকি জারজেরা যখন বাংলাদেশ আক্রমন করার জন্য পাকি সরকারকে আহব্বান জানায় তখনও নির্বিকার বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী।কারন একটাই-কি আক্রমন করবে পাকিস্তান-নীজে বাঁচতেই লাগবে নয়মণ ঘি।
ভারতে সেনা সদরে পাকিস্তানী জঙ্গী কতৃক আক্রমনের প্রেক্ষাপটে সার্ক বর্জনের প্রসঙ্গ আসতেই বাংলাদেশ সরকার শর্ত সাপেক্ষে সার্ক বর্জনের সিদ্ধান্ত আন্তজাতিক মহলে ঘোষনা দিল।শর্ত খুব বড় কিছুই নয়-জীবন মরন সমস্যাও নয়।ভারতের প্রাদেশিক সরকার সমুহের বাঁধার কারনে যে সমস্যাটি আন্তরিকতা থাকা সত্বেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কায্যকর উদ্যোগ নিতে পারছেন না বাস্তবে রুপান্তরের জন্য। (কি সেটা -কি? 'খালেদার মতই ভুলে গেলেন') "তিস্তার পানি বন্টন।"বেশী কিছু বলে নাই বাংলাদেশ সরকার--মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী ভারত সফরে "তিস্তার বিষয়টি" প্রধান আলোচ্য বিষয়ের তালিকায় স্থান দেয়ার অনুরুধ জানিয়েছেন মাত্র।
এবার প্রসঙ্গেই আসি।ভারতের আক্রমন পালটা আক্রমনের মাঝে  পাকিস্তানের পরিক্ষীত বন্ধু আমেরিকা ভারতের পক্ষে থাকার ঘোষনা দিয়েছে। চিরবন্ধু রাশিয়া ঘোষনা দিয়ে বলেছে ভারতের বিপদে রাশিয়া বসে থাকতে পারে না।" ইরান তাঁর সিমান্তে কয়েকদফা আক্রমন করে প্রমান করেছে পাকিরা জঙ্গীর গডফাদার"। আফগান সিমান্তে তাঁরাও আক্রমন করে বুঝিয়ে দিল 'পাকিস্তান আমাদের ও শান্তি দেয়নি।'শেষাবদি আরব রাষ্ট্র-" বন্ধুকে উপহার দেয়া অর্থ " ফেরৎ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে প্রমান করেছে পাকিস্তানের সঙ্গে গোটা বিশ্বের কোন দেশই  বন্ধু হিসেবে পাশে নেই।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, আগামী দুই সপ্তার মধ্যে পাকিস্তানকে দেয়া ২০০ কোটি ডলার ফেরত চেয়েছে সৌদি আরব। এই অর্থ পাকিস্তানকে "উপঢৌকন" হিসেবে দিয়েছিল "সৌদি আরব"।পাকিস্তানের সরকারি টিভি’র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে এই অর্থ ফেরত চেয়েছে সৌদি আরব। যা ২০১৩ সালে পাকিস্তানকে "উপঢৌকনস্বরূপ"দেয়া হয়েছিল।
       পাক ভারত উত্তেজনার মধ্যে সৌদি আরবের অর্থ ফেরত চাওয়া অত্যন্ত বেদনায়ক উল্লেখ করে ইসহাক দার বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ এমন সময়ে এই অর্থ ফেরত চাচ্ছে-'যখন পাক-ভারত সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।'
        *আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।* অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সৌদি আরব এই পরিমাণ অর্থ পাকিস্তানকে দিয়েছিল অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য। কিন্তু দেশটির ক্ষমতাসীন দল মুসলিম লিগ (এন) সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।তাই অর্থগুলী ফেরৎ নেয়াই সৌদি আরব যৌক্তিক মনে করেছে।
         এদিকে বাংলাদেশ সরকার অনেক আগেই পাকিস্তানের নিকট "পাওনা সম্পদ" আদায়ে আন্তজাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কাজ শুরু করে। নতুনভাবে  "মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরুধী অপরাধে" জড়িত পাকিস্তানী নাগরিক ও সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু করে।দু'টি বিষয়ে  প্রক্রিয়াগতভাবে অগ্রসরতার গতি এত দিন ধীরে হলেও সাম্প্রতিক সময়ে উভয়ক্ষেত্রে গতি পেয়েছে বলে জানা গেছে।"মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঈঙ্গিত দিয়ে বলে দিলেন -পাকিস্তানের সঙ্গে "ঝগড়াও হবে -কুটনৈতিক সম্পর্কও থাকবে।" "অর্থাৎ তাঁদের সঙ্গে ঝগড়ার পাশাপাশি মিমাংসার দরজা খোলা রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ উদ্ধারেই মনযোগী হলেন জাতির জনকের কন্যা-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা।
সুপ্রীয় পাঠক বন্ধুরা-- লক্ষ করুন---"সার্ক বর্জনের সিদ্ধান্তে ভারতের নিকট তিস্তা চুক্তির গতি দাবি এবং পাকিস্তানকে বিশ্বসভায় একঘরে করার প্রক্রিয়া চলাকালিন কূটনৈতিক সম্পর্ক বহাল রেখে "পাওনা সম্পদ" আদায়ে চাপের মধ্যে রাখার কৌশল গ্রহন "দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির প্রতি অন্ধ ভালবাসা" না থাকলে কি সম্ভব হ'ত?প্রেমে গভীরতা না থাকলে কবিতা কি চয়ন করা যায়? আপনারাই বিচার করুন-- "বঙ্গবন্ধু পরিবার" বাংলাদেশকে, বাঙ্গালী জাতিকে উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছেন-- নাকি স্যুটকেস ভর্তি করে আরাম আয়েশে দিন কাটানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।"

         " জয়বাংলা           জয়বঙ্গবন্ধু"
     

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন