বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল প্রচলিত রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের শুভ সূচনা--
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল বিদ্যমান রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনের শুভসূচনা --
____________________________________________________________
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সফল কাউন্সিলের আবেদন বছরব্যাপি আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হল।আমাদের প্রীয় নেতা জনাব তোফায়েল আহম্মেদ এমপি সাহেব যথার্থই বলেছেন--"আওয়ামীলীগ আজ যাহা চিন্তা করে --অন্যদল দশ বছর পর তা চিন্তা করে।আওয়ামীলীগ শ্রষ্ঠার ভুমিকা পালন করে -অন্যরা তা অনুসরন করে।" সত্যি বলতে কি---"শতভাগ সত্য উক্তি তিনি করেছেন।"
বাংলাদেশের রাজনীতির যতসব গুনগত পরিবর্তন সব পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, বিয়োজন এসেছে আওয়ামী লীগের মেধা থেকে। রাজনৈতিক দল গঠন, অ-সাম্প্রদায়িক শব্দের পরিচিতি এবং লালন,জাতি সত্বার পরিচিতি এবং উম্মেষ, জাতীয়তাবাদকে অন্তর দিয়ে ধারন এবং তাঁর বিকাশ, গনতন্ত্রের সঙ্গে সখ্যতা এবং অন্তরে ধারন, সফল অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্বদান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, তত্বাবধায়কের ধারনা প্রচলন ও বাস্তবায়ন, তত্বাবধায়ক বিলুপ্তির কৃতিত্ব, দলীয় সংস্কার, রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি, সময়ের সাথে তালমিলিয়ে সংস্কার অব্যাহত রাখার প্রক্রিয়ার শিক্ষা, ডিজিটাল শব্দের আমদানী, রাষ্ট্রীয় পয্যায় সফল ডিজিটালাইজেসনের প্রয়োগের কৃতিত্ব, উন্নয়ন লক্ষমাত্রা শব্দের প্রচলন, লক্ষমাত্রা স্থীরিকরনে ভিশন নির্দিষ্টকরন, গরিবীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা, সফল আন্দোলনের মাধ্যমে -মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরের কৃতিত্ব অর্জন, দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, দুভিক্ষকে পরাজিত করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ দেশে পরিনতকরন, খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিনত করন সহ সর্ব বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং তাঁর সরকারের অগ্রগন্য ভুমিকার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। বিরুধীদলে থেকে যেমন যুগান্তকারি পরিবর্তনের কৃতিত্ব সমুহের দাবিদার হতে পেরেছে-সরকারে থেকেও যুগান্তকারি সব অর্জনের কৃতিত্ব আওয়ামীলীগের দখলেই রাখতে পেরেছে।
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল শেষ হয়েছে। কিন্তু বহুল আলোচিত এ কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ হয়নি,অচিরে শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। একবাক্যে স্বীকার করতে হবে জৌলুসপূর্ণ সম্মেলনটি উদ্যোক্তাদের আকাংক্ষা যেমন ষোল আনা পূর্ণ করেছে--",দলীয় নেতাকর্মী এবং দেশ ও জনগনের আশা আকাংখাও ষোল আনাই পূর্ণ হয়েছে।" আমাদের দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলনে এমন জাঁকজমক, দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা--এর আগে কখনও দেখা যায়নি--এমনকি আওয়ামী লীগের অতীতের কোনো সম্মেলনেও না।
রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক দিক থেকে এই কাউন্সিলের একটি ভিন্নমাত্রার আবেদন ছিল। একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলন যেসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে--"আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে তার সবগুলোই পুংখ্যানুপুংখ্য ভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।" অতীতে পুরো দিন কাউন্সিলের কাজে বসে থাকার প্রয়োজন হতনা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব কর্মযজ্ঞ শেষ; এবার কিন্তু তা হয়নি।
"আওয়ামীলীগের দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবারের কাউন্সিলে। দলে সভাপতিমন্ডলীর পদের সংখ্যা চারটি বেড়েছে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও বেড়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি করা হয়েছে। স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী তার মুল্যবান প্রস্তাব কমিটির কাছে তুলে ধরেছেন। কমিটি আলাপ-আলোচনার পর তা অনুমোদন করে নির্বাহী কমিটিতে জমা দিয়েছে। নির্বাহী কমিটিতে তা পাস হওয়ার পর কাউন্সিলে উত্থাপিত ও অনুমোদিত হয়েছে। কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদনের পরই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবার কাউন্সিল কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে দলীয় সভানেত্রী একক সিদ্ধান্তে কমিটির বাকি সব পদে মনোনয়ন দেননি। সভাপতিমন্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এবার কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলে। নতুন সাধারন সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করেছেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক।গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে,গনতন্ত্রের সৌন্দর্যও নিহীত আছে উক্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে।। বাদবাকি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নাম প্রস্তাব করেছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজে। নতুন কমিটির ঘোষিত নেতারা সভানেত্রী কর্তৃক মনোনীত নন, কাউন্সিল কর্তৃক সরাসরি অনুমোদিত, বলা চলে নির্বাচিত। এটি সম্পূর্ণই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।"
রাজনীতির ভাষায় উল্লেখিত প্রক্রিয়াকে গণতন্ত্রের চর্চা বা অনুশীলন বলে। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক এই ধরনের শুভ উদ্যোগ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অনুসরন করতে উদ্বুদ্ধ হবে। সাংগঠনিক বিষয়াদিসহ সব ক্ষেত্রে এ ধরনের গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণে অনুপ্রাণিত হবে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের তরফ থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল গঠন-পুনর্গঠনে চাপের মধ্যে পড়বে বড় দলের পদ-পদবি, বিভিন্ন স্তরের কমিটি ‘বেচা-কেনার বেপারীরা’। নির্বাচনে যে কোনো পর্যায়ের মনোনয়ন বাণিজ্য ক্রমে শক্তি হারিয়ে নিস্তেজ হতে বাধ্য হবে।
গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল--"গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চর্চা আওয়ামী লীগের সংগঠন পর্যায়েই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়সহ জাতীয় রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই যেন গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা মূল্য পায়"। আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলে জাতির জনকের কন্যা স্পষ্ট করেছেন গনতন্ত্রের পক্ষে তাঁর অবস্থান কত সুদৃড ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।দেশের বিদ্যমান বিরুধীদল সমুহের সহযোগীতা পেলে গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানীক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হ'তনা--"জনগনের বিশ্বাসে আনতে পেরেছে এই সম্মেলন"। একদিকে নীজ দলের অভ্যন্তরে প্রথমে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরন করে দেশের সকল গনতান্ত্রীক প্রতিষ্ঠানে পুর্ণাঙ্গ গনতান্ত্রীক চর্চার শুভ ঈঙ্গিত দিলেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। অন্যদিকে যুগ যুগ গনমানুষের নির্ভেজাল গনতন্ত্র চর্চার আশা আকাঙ্ক্ষার প্রত্যাশা পুরণের শুভসুচনা উদ্ভোধন করলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে পরিবর্তনের সুর আগাম প্রস্তুতির ধরন দেখেই অনেকটা আশা করা গিয়েছিল।অন্তত: কিছু পরিবর্তন এবার হবে। নেতাকর্মীদের সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে সর্ব বিষয়ে গনতন্ত্রের রীতিনীতি অনুসরন করা হবে--"নেতাকর্মীরা এতটুকু প্রত্যাশা করেনি।" বলা যায় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি হাজার গুনে বেড়ে তাঁদের মনকে তো দোলা দিলই; আপামর জনগনের মনেও মিষ্টি হাওয়ার বাতাবরনে দোলা দিতে সক্ষম হল। ইহা একান্তই অনাকাংখিত প্রাপ্তি,না চাইতেই মেঘ।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সচেতন জনগণের মধ্যে একটি আশাবাদ জাগ্রত হয়েছে। দলের নেতাদের মনে রাখতে হবে যে--"আমাদের দেশের মতো দুর্নীতিপ্রবণ একটি দেশে একটানা আট বছর ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতা ভোগকারী একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র্র করে দেশব্যাপী সাজ সাজ রব হওয়া স্বাভাবিক।"এইরুপ চিন্তা করা নেহাৎই বোকামি।" আমি বলব--"জনগন গভীরভাবে লক্ষ করেছে শীর্ষ পয্যায়ের নেতাদের কর্মকান্ড, তাঁরা কতটুকু দুর্নীতিপরায়ন।অতীতের ন্যায় হাওয়া ভবন গড়ে উঠেছে কিনা।দেশ দুর্নীতিতে আবার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে না সেই বৃত্ত থেকে বের হয়ে উন্নতি অগ্রগতির শীর্ষে যাচ্ছে। দেশব্যাপি উন্নয়ন, অগ্রগতির চোঁয়া লেগেছে কিনা? বিদেশী রাষ্ট্র সমুহ সমীহ করে না আগের মত তুচ্ছতাচ্ছিল্য ব্যবহার করে? আন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান কি? ইত্যাদি ইতিবাচক দিকগুলী সরকার সম্পর্কে পজেটিভ ধারনা জনমনে আরো বেশী প্রাপ্তির আশা আকাংখ্যার জম্ম দিয়েছে। অতীতে জনগনের ইচ্ছার পুর্ণতায় ঘাটতির বেদনা বিগত আট বছরে প্রাপ্তির মধ্যে আশার চেয়ে অনেক বেশী পুর্নণতার কারনে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের আগ্রহ এবার অনেক উচ্চতায় ছিল।জাতির জনকের কন্যা "ভীশন ২০২১ এবং ২০৪১" এর গঠনমূলক আলোচনা থেকে জনগন তাঁদের ভবিষ্যত বশধরদের উন্নত জীবনের প্রাপ্তিও খুঁজে পেয়েছে।তাই দেশব্যাপি আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে জনগনের উৎসুক ছিল অভাবনীয়, অকল্পনীয়।
এবারের দলীয় সম্মেলনে আরো একটি দিক কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে দেখা গেছে। সরকারি দল হোক বা বিরুধীদল হোক সম্মেলন, সভা, সমাবেশ, মিটিং-মিছিল মানেই চাঁদাবাজী, ব্যবসায়ীদের হয়্রানী,যানবাহনে ধায্য তোলা আদায়। একশ্রেনীর নেতাকর্মীর এই ধরনের অনুষ্ঠান ঈদের খুশী থেকে বেশী খুশি বয়ে আনতে দেখা যেত। সরকারি দলের এবারের অনুষ্ঠিত সম্মেলন সেই চিরাচরিত চাঁদাবাজি, জগনকে অহেতুক হয়রানীর মুলেও কুঠারাধাত করতে সক্ষম হয়েছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি-তোলাবাজি না হয় সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছিল, সব খরচ জোগান দেয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল দেড় কোটি টাকা।এর বাইরেও দলের কেন্দ্রীয় নেতা,দলের অনুগত শিল্পপতিরাও যোগান দিয়েছেন প্রয়োজনীয় টাকার।তার পরেও কিছু কিছু এলাকায় চাঁদাবাজি হয়নি তা বলবনা-পুরাতন অভ্যেস কি আর যায়- কয়লা ধুলেও ময়লা যায়না।সুযোগ সন্ধানী নেতাদের চাঁদাবাজি ছিল তবে তা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় নিতান্তই কম।আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিল থেকে দলের বাইরের সাধারণ ও সচেতন মানুষের আশাবাদ বা প্রত্যাশা পুরন হওয়ার কারনে চাঁদাবাজির ন্যায় নেতিবাচক দিকগুলী অনেকাংশে মানুষ মেনে নিয়েছে হয়তোবা।আগে যেমনটি হাঁক ডাক দেখা যেত এবার কিন্তু তদ্রুপ হাকডাক নেই বললেই চলে।
এবারের সম্মেলনে আর একটি প্রত্যাশা জনমনে প্রচন্ডভাবে জাগ্রত হচ্ছে-
প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ বর্তমান সরকার নিবে।’ কাউন্সিলে আগামী জাতীয় সংসদ (একাদশ সংসদ) নির্বাচনের বিষয় খুবই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। সাধারণ মানুষও নির্বাচন নিয়ে ভাবে। আগাম হোক বা নির্ধারিত সময়ে হোক সে নির্বাচনটি সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে তাঁর শুভ ঈঙ্গিতও জনগন,বুদ্ধিজীবি মহল অনুধাবন করতে পেরেছেন। সম্মেলনের সমাপনি দিনে সভানেত্রীর নির্বাচন সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা মুলক বক্তব্য থেকে।প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্য নি:সন্দেহে বিরুধীদলের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার জন্য প্রচন্ড চাপের সম্মুখ্যিন করবে জনগনের পক্ষ থেকে।
দেশে নির্মল গণতান্ত্রিক শাসন তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্তরীক চেষ্টার বহি:প্রকাশ সর্বস্তরের মানুষকে আশাম্ভিত করেছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ একাই দেশ চালাচ্ছে। সংসদ আছে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিরোধী দলহীন। এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বলা হচ্ছে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল।’ রাজপথে আন্দোলন নেই, সভানেই, দাবী আদায়ের হরতাল, অবরোধ নেই, শক্তিশালী বিরুধীদল সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে কিনা তাঁর নিশ্চয়তা নেই।তারপরেও গনতন্ত্রের বিঘ্ন ঘটার কোনরুপ উপকরন, নির্দেশনা সম্মেলন থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে সমস্ত কাজ সভানেত্রী একক করলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়না বা হতোনা সেই সমস্ত কাজ গুলীও স্বচ্ছভাবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করেছেন সভানেত্রী। বিগত সাত বছরের উন্নয়ন, অগ্রগতির চিত্র নিয়ে জনগনের দজায়, পাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।এই নির্দেশটি অনুসরন কররেই জনগন বেশী বেশী আশাম্ভিত শেখ হাসিনা সুষ্ঠ,নিরপেক্ষ নির্বাচন আন্তরিক ভাবেই কামনা করেন বিরুধী দলের সহযোগীতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে হোচট খেতে হচ্ছে। বিরুধী দলের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্পটির অন্যতম কারনও উক্ত বক্তব্য।
এবারের সম্মেলনে আরো একটি দিক মানুষের মুখে মুখে --যা অতীতে কখনই দেখা যায়নি।অতীতে বড় দুই দলের নেত্রী কেউ কারো সম্মেলনে অংশ গ্রহন করেনি, বড় জোর প্রতিনীধি পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন। সমাজের কোন অংশেই আলোচনায়ও আসেনি।এবারের চিত্র সম্পুর্ণ ভিন্ন---বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সবাই আশা করেছিলেন যে, তারা তাতে যোগ দেবেন। আমন্ত্রণপত্র গ্রহণকালে মির্জা ফখরুল যদিও বলেছিলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তবুও ধারণা করা গিয়েছিল যে, সিদ্ধান্তটা অনুকূলেই হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ২০তম এ জাতীয় কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করে মির্জা ফখরুল যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, এই কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র চর্চার পথ আরও উন্মুক্ত হবে এবং রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাতে গিয়ে সবাই সমান সুযোগ ভোগ করবে। আমি মনে করি মির্জা ফকরুল যথার্থই বলেছেন-গনতান্তিক সংগঠনের শীর্ষনেতার বক্তব্য যেমনটি হওয়া উচিৎ তেমনটিই হয়েছে।
এখানে একটি বিষয়ে পাঠক ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই-"একহাতে তালি বাজেনা, বাদক দল ছাড়া গানেও সুর আসেনা"।গনতন্ত্রের সংকট সমাধানের সব দায়িত্ব সরকারের বা সরকারি দলের একার নয়---বিরুধী দলের সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন।আমি এখানে একটা ছোট্র উদাহরন দিতে চাই-- "আমার এলাকা ফেনী জেলার ফুলগাজী এবং পরশুরাম উপজেলার স্থগিত দশ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১তারিখে। আমি নির্দ্ধিধায় বলতে পারি--"উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সরকারের শত ইচ্ছা থাকলেও সুষ্ঠ করা সম্ভব হবে না; এবং কি সরকার প্রধান কেন্দ্রে বসে থাকলেও না।" কারন এখানে বিরুধীদলের অংশগ্রহন নামকা ওয়াস্তে।মার্কা আছে-প্রার্থীও নেই, কর্মীও নেই। মিছিল মিটিং গনসংযোগ প্রচার প্রচারনা কিছুই নেই। কোন কোন এলাকার প্রার্থী নমিনেশন নিয়ে আবার বিদেশ তাঁর কর্মস্থলে চলে গেছেন।একতরফা ভোট ও নয় আবার দো-তরফাও নয়। প্রত্যেক এলাকায় কিছু ভোট পাগল 'চক্কা ছয়ফুর' আছে-তাঁরা ভোটে দাঁড়ান কিন্তু ভোট করেন না।এই ধরনের একাধিক প্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে।সরকারি দলের প্রার্থী দশ বিশ হাজার টাকা দিলেই ওনারা খুশী হয়ে কেন্দ্রে যাবেন না। বিএনপি,জাতীয় পার্টি, জাসদ এর ন্যায় শক্তিশালী দলীয় প্রার্থী না থাকায় নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যেও আগ্রহের তেমন কোন লক্ষন নেই।এমতবস্থায় সরকারি দলের প্রার্থীর কি করনীয়? নিশ্চয়ই তাঁর চেয়ারম্যান হওয়ার প্রয়োজন আছে। সুতারাং যা হওয়ার তাই হবে।ভোটের পরের দিন লম্বা এক বিবৃতি পত্রিকায় দেখা যাবে।টেলিভিশনে ভোট কাটার দৃশ্য দেখানো হবে। সরকারি দল সব নিয়ে গেছে, গনতন্ত্র এই সরকারের শাষনে ধুলিসাৎ হয়ে গেছে--"তাঁরা যে পাহারায়ও ছিলনা--"একথাটি ঘুনাক্ষরেও বলবেনা"।
মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর যথার্থই বলেছেন-এভাবে বিএনপি রাজনীতি চলতে থাকলে আগামী ৫/৭ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্রেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা বিএনপি নামক দলটিকে। রাজনীতির সকল রীতি নীতি, শিষ্টাচার ভঙ্গ করে একজন অফিস কর্মচারীকে বিদেশী রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে স্থান দেয়া কোনক্রমেই মেনে নেয়া যায়না।কর্মচারি দিয়ে দল চালাতে পারলে প্রত্যেক কোটি টাকার মালিকের একটা করে রাজনৈতিক দল অবশ্যই থাকতো। কর্মচারিকে নেতাদের সাথে বসতে দিয়ে চরম অপমান করার পরেও তাঁরা কি বিএনপি দল মুখে আনতে পারে? যারা পারেন না তাঁরা ইতিমধ্যে সরে গেছেন-যারা পারেন তাঁরা আছেন কিন্তু মুলে কেউ নেই।
আর একটা কথা না বলে পারিনা--"যে কারো ব্যাক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে-থাকাটাও স্বাভাবিক।" কোনক্রমেই দেশের শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রে ইহা স্বাভাবিক নয়।পাশ্চাত্যের অবাধ যৌন সম্পর্কের দেশ সমুহেও এইরুপ সম্পর্কের কারনে বহুবার ক্ষমতার রদবদল হওয়ার উদাহরন আছে।আমাদের ন্যায় রক্ষনশীল দেশে গভীর রাতের সম্পর্ককে প্রকাশ্যে বিদেশী রাষ্ট্রের মেহমানের সামনে নিয়ে আসা---"জাতি হিসেবে কতটুকু সম্মানের অধিকারি হলাম শুসীল ভাইদের নিকট আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা"!!!!
জনাব ফকরুল আরো একটি গোপন সত্য সেই আলোচনায় প্রকাশ করেছেন---"কেউ আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে চিন্তা করা ভুল হবে"। ইহা কিসের ঈঙ্গিত দিলেন জনাব ফকরুল? আওয়ামী লীগ যা এতদিন বলে আসছেন তাঁদের দলের মহাসচিবও ঠিক একই ঈঙ্গিত দিলেন। তারপরেও বলবেন বিএনপি? তারপরেও সরকারের দোষ দিতে একশ্রেনীর সুশিলের মুখে আটকায় না। আমি সেই সমস্ত শুসীলদের জিজ্ঞেস করতে চাই--"কখন, কোথায়, কোন দেশে আন্দোলন সংগ্রাম, নিয্যাতন, নিপীড়ন ছাড়া গনদাবী পুরন হয়েছে"? আলোচনার টেবিলে বসে যদি জাতীয় সমস্যার সমাধান করা যেত ১/১১ হ'ত না।তারেকের কোমরের চিকিৎসার জন্য আট বছর বিদেশের হাসপাতালেও থাকার প্রয়োজন ছিলনা। কোকো বেওয়ারিশ লাশ হয়ে বিদেশের রাস্তায় পড়ে থাকতে হত না,আপন ভাইয়ের চেহারা না দেখার করুন পরিনতি ভোগেরও প্রয়োজন হ'তনা।
গণতন্ত্রের জন্য, কখনও বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াইয়ের অনেক ঐতিহ্য আছে। বিএনপি বলছে, তাদের সব গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত করা হচ্ছে, প্রকাশ্যে তাদের কর্মকান্ড চালাতে দেয়া হচ্ছে না। সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে সে অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কি তাঁরা আদৌ করেছে? জ্বালাও, পোড়াও,আগুনবোমা কি সংবিধান সম্মত?
এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগ সম্পর্ক উন্নয়নের শর্ত সাপেক্ষ একটি সুযোগ দিয়েছিল। যদিও কোন তরফ থেকেই বর্তমানে কোন চাপ সরকারের উপর নেই। আওয়ামীলীগ- "বিএনপি দলকে আমন্ত্রন না জানিয়ে সভানেত্রী--মহাসচিবকে দাওয়াত দিয়েছিল" তাঁদের সম্মেলনে অতিথি হতে।শীর্ষ দুই নেতার সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা আছে কিনা যাছাইয়ে পরিক্ষা নিতে চেয়েছিল--"নিমিষেই আটকে গেলেন খালেদা ফকরুল আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে"। বিএনপি সম্পর্কোন্নয়নের পথই রুদ্ধ করেনি চিরশত্রু আওয়ামীলীগ তাও প্রমান করে দিল। জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত কবুল করতে দলের কেউ আপত্তি করে না, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে অতিথি হতে কেন আপত্তি উত্থাপিত হয়? বাংলাদেশের জনগন, বাহির রাষ্ট্রের যেসব অতিথি যোগদান করেছেন তাদের কাছে বিএনপি কী বার্তা দিল? যদি বলা হয়, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান বিএনপি চায় না- 'তার জবাব কী?'
মানুষ এখন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে যাওয়ার পর অত্যন্ত অসৌজন্যমূলকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে গেট থেকে ফেরত দেয়ার নিন্দিত ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে অতিথি হওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানকে একই মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে দেখছে। নেতৃত্বের যোগ্যতা ও সংগঠনের শক্তি থাকলে জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন, মামলা-হামলার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যেভাবে গন আন্দোলন গড়ে তুলেছিল অতীতে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিও তা করতে পারে।
শান্তিপূর্ণ সমঝোতার কোনো সুযোগ কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলই হাতছাড়া করে না। বেগম খালেদা জিয়ার উচিত ছিল কাউন্সিলে গিয়ে দুই দলের বিশেষ করে দুই নেত্রীর দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক অবসানের একটা পরিবেশ তৈরি করা। এতে সারা দেশে দুই দলের তৃণমূল স্তর পর্যন্ত নেতাকর্মী-সংগঠকদের মধ্যে সুসম্পর্কের একটি নবদিগন্ত উন্মোচিত হতো, যা দেশে গণতন্ত্র চর্চা ও অনুশীলনের ব্যাপারে প্রেরণা জোগাত। শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে দাওয়াত করে বেগম জিয়ার প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে আবারও রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় শেখ হাসিনা কয়েক শ ধাপ এগিয়ে খালেদা বহুধাপ পেছনে প্রমান করেছেন। অথচ বেগম জিয়া যদি সেই কাউন্সিলে যেতেন তিনি হতেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মুখ্য চরিত্র। মিডিয়ায়ও জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে তিনি উঠে আসতেন এক উজ্জ্বল অবয়ব নিয়ে। রাজনৈতিক দুরদর্শীতার মাইলফলক স্থাপন করতে পারতেন,দেশও উপকৃত হত,দলও স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ সুগম হত।
পরিশেষে বলতে চাই- উন্নত পদ্ধতি গ্রহনে লজ্জার কিছুই নেই--"দলে গনতন্ত্রের চর্চা না থাকলে দেশে গনতন্ত্রের আশা করা যায়না।গনতন্ত্রে অভ্যস্ত করতেও জনগনকে যুগের পর যুগ অপেক্ষা করার প্রয়োজন হয়।শতকরা আশিজন মানুষ এখনও মনে করে 'সুষ্ঠ নির্বাচনের অর্থই গনতন্ত্র',যা ইচ্ছা তাই করার নাম স্বাধীনতা"। দেরীতে হলেও খালেদা জিয়া স্বীকার করেছেন-- "শুধুমাত্র নির্ভেজাল নির্বাচন গনতন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা বা চর্চা না হলে নির্বাচনে গনতন্ত্র রক্ষিত হচ্ছে বলা যাবেনা।" গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত শতবছরেও হয়নাইহা প্রতিষ্ঠার বিষয় নয়- চর্চার বিষয়। গনতন্ত্রের রাণী অভিহীত বৃটিশদের দেশেও গনতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে এবং চলবে।গনতন্ত্রের সংজ্ঞা আমরা সবাই জানি কিন্তু গনতন্ত্রের প্রধান শর্ত কি বুঝিনা। শক্তিশালী একাধিক বিরুধী দল,সমশক্তি সম্পন্ন বিরুধীদল, সুশিক্ষিত রাজনৈতিকর্মী, সহনশীলতার শিক্ষা, শক্তিশালী আইনী বেষ্টনী গনতন্ত্রের পুর্বশর্ত। আমাদের দেশে ইহার একটিও কি পুর্ণাঙ্গ আছে? অথছ উল্লেখীত বিষয়গুলীর ঘাটতি দেখা দিলে গনতন্ত্র শতইচ্ছায়ও প্রতিষ্ঠিত হবেনা। একারনে সবার মুখে গনতন্ত্রের চর্চার বিষয়টি আগে আসে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গনতন্ত্রের চর্চায় বিশ্বের বহু রাজনৈতিক দলের চেয়ে অনেক অগ্রসরমান-- বাংলাদেশতো বটেই।তাঁদের নিকট গনতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন হয়না-সহনশীলতার প্রয়োজন।সহনশীলতা বিএনপি এবং তাঁর নেত্রীর নিকট কিঞ্চিত পরিমান নেই --আবারও প্রমানীত হল।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
" জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
,
____________________________________________________________
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সফল কাউন্সিলের আবেদন বছরব্যাপি আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হল।আমাদের প্রীয় নেতা জনাব তোফায়েল আহম্মেদ এমপি সাহেব যথার্থই বলেছেন--"আওয়ামীলীগ আজ যাহা চিন্তা করে --অন্যদল দশ বছর পর তা চিন্তা করে।আওয়ামীলীগ শ্রষ্ঠার ভুমিকা পালন করে -অন্যরা তা অনুসরন করে।" সত্যি বলতে কি---"শতভাগ সত্য উক্তি তিনি করেছেন।"
বাংলাদেশের রাজনীতির যতসব গুনগত পরিবর্তন সব পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, বিয়োজন এসেছে আওয়ামী লীগের মেধা থেকে। রাজনৈতিক দল গঠন, অ-সাম্প্রদায়িক শব্দের পরিচিতি এবং লালন,জাতি সত্বার পরিচিতি এবং উম্মেষ, জাতীয়তাবাদকে অন্তর দিয়ে ধারন এবং তাঁর বিকাশ, গনতন্ত্রের সঙ্গে সখ্যতা এবং অন্তরে ধারন, সফল অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্বদান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, তত্বাবধায়কের ধারনা প্রচলন ও বাস্তবায়ন, তত্বাবধায়ক বিলুপ্তির কৃতিত্ব, দলীয় সংস্কার, রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি, সময়ের সাথে তালমিলিয়ে সংস্কার অব্যাহত রাখার প্রক্রিয়ার শিক্ষা, ডিজিটাল শব্দের আমদানী, রাষ্ট্রীয় পয্যায় সফল ডিজিটালাইজেসনের প্রয়োগের কৃতিত্ব, উন্নয়ন লক্ষমাত্রা শব্দের প্রচলন, লক্ষমাত্রা স্থীরিকরনে ভিশন নির্দিষ্টকরন, গরিবীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা, সফল আন্দোলনের মাধ্যমে -মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরের কৃতিত্ব অর্জন, দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, দুভিক্ষকে পরাজিত করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ দেশে পরিনতকরন, খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিনত করন সহ সর্ব বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং তাঁর সরকারের অগ্রগন্য ভুমিকার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। বিরুধীদলে থেকে যেমন যুগান্তকারি পরিবর্তনের কৃতিত্ব সমুহের দাবিদার হতে পেরেছে-সরকারে থেকেও যুগান্তকারি সব অর্জনের কৃতিত্ব আওয়ামীলীগের দখলেই রাখতে পেরেছে।
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল শেষ হয়েছে। কিন্তু বহুল আলোচিত এ কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ হয়নি,অচিরে শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। একবাক্যে স্বীকার করতে হবে জৌলুসপূর্ণ সম্মেলনটি উদ্যোক্তাদের আকাংক্ষা যেমন ষোল আনা পূর্ণ করেছে--",দলীয় নেতাকর্মী এবং দেশ ও জনগনের আশা আকাংখাও ষোল আনাই পূর্ণ হয়েছে।" আমাদের দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলনে এমন জাঁকজমক, দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা--এর আগে কখনও দেখা যায়নি--এমনকি আওয়ামী লীগের অতীতের কোনো সম্মেলনেও না।
রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক দিক থেকে এই কাউন্সিলের একটি ভিন্নমাত্রার আবেদন ছিল। একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলন যেসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে--"আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে তার সবগুলোই পুংখ্যানুপুংখ্য ভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।" অতীতে পুরো দিন কাউন্সিলের কাজে বসে থাকার প্রয়োজন হতনা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব কর্মযজ্ঞ শেষ; এবার কিন্তু তা হয়নি।
"আওয়ামীলীগের দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবারের কাউন্সিলে। দলে সভাপতিমন্ডলীর পদের সংখ্যা চারটি বেড়েছে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও বেড়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি করা হয়েছে। স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী তার মুল্যবান প্রস্তাব কমিটির কাছে তুলে ধরেছেন। কমিটি আলাপ-আলোচনার পর তা অনুমোদন করে নির্বাহী কমিটিতে জমা দিয়েছে। নির্বাহী কমিটিতে তা পাস হওয়ার পর কাউন্সিলে উত্থাপিত ও অনুমোদিত হয়েছে। কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদনের পরই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবার কাউন্সিল কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে দলীয় সভানেত্রী একক সিদ্ধান্তে কমিটির বাকি সব পদে মনোনয়ন দেননি। সভাপতিমন্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এবার কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলে। নতুন সাধারন সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করেছেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক।গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে,গনতন্ত্রের সৌন্দর্যও নিহীত আছে উক্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে।। বাদবাকি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নাম প্রস্তাব করেছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজে। নতুন কমিটির ঘোষিত নেতারা সভানেত্রী কর্তৃক মনোনীত নন, কাউন্সিল কর্তৃক সরাসরি অনুমোদিত, বলা চলে নির্বাচিত। এটি সম্পূর্ণই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।"
রাজনীতির ভাষায় উল্লেখিত প্রক্রিয়াকে গণতন্ত্রের চর্চা বা অনুশীলন বলে। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক এই ধরনের শুভ উদ্যোগ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অনুসরন করতে উদ্বুদ্ধ হবে। সাংগঠনিক বিষয়াদিসহ সব ক্ষেত্রে এ ধরনের গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণে অনুপ্রাণিত হবে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের তরফ থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল গঠন-পুনর্গঠনে চাপের মধ্যে পড়বে বড় দলের পদ-পদবি, বিভিন্ন স্তরের কমিটি ‘বেচা-কেনার বেপারীরা’। নির্বাচনে যে কোনো পর্যায়ের মনোনয়ন বাণিজ্য ক্রমে শক্তি হারিয়ে নিস্তেজ হতে বাধ্য হবে।
গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল--"গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চর্চা আওয়ামী লীগের সংগঠন পর্যায়েই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়সহ জাতীয় রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই যেন গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা মূল্য পায়"। আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলে জাতির জনকের কন্যা স্পষ্ট করেছেন গনতন্ত্রের পক্ষে তাঁর অবস্থান কত সুদৃড ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।দেশের বিদ্যমান বিরুধীদল সমুহের সহযোগীতা পেলে গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানীক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হ'তনা--"জনগনের বিশ্বাসে আনতে পেরেছে এই সম্মেলন"। একদিকে নীজ দলের অভ্যন্তরে প্রথমে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরন করে দেশের সকল গনতান্ত্রীক প্রতিষ্ঠানে পুর্ণাঙ্গ গনতান্ত্রীক চর্চার শুভ ঈঙ্গিত দিলেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। অন্যদিকে যুগ যুগ গনমানুষের নির্ভেজাল গনতন্ত্র চর্চার আশা আকাঙ্ক্ষার প্রত্যাশা পুরণের শুভসুচনা উদ্ভোধন করলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে পরিবর্তনের সুর আগাম প্রস্তুতির ধরন দেখেই অনেকটা আশা করা গিয়েছিল।অন্তত: কিছু পরিবর্তন এবার হবে। নেতাকর্মীদের সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে সর্ব বিষয়ে গনতন্ত্রের রীতিনীতি অনুসরন করা হবে--"নেতাকর্মীরা এতটুকু প্রত্যাশা করেনি।" বলা যায় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি হাজার গুনে বেড়ে তাঁদের মনকে তো দোলা দিলই; আপামর জনগনের মনেও মিষ্টি হাওয়ার বাতাবরনে দোলা দিতে সক্ষম হল। ইহা একান্তই অনাকাংখিত প্রাপ্তি,না চাইতেই মেঘ।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সচেতন জনগণের মধ্যে একটি আশাবাদ জাগ্রত হয়েছে। দলের নেতাদের মনে রাখতে হবে যে--"আমাদের দেশের মতো দুর্নীতিপ্রবণ একটি দেশে একটানা আট বছর ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতা ভোগকারী একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র্র করে দেশব্যাপী সাজ সাজ রব হওয়া স্বাভাবিক।"এইরুপ চিন্তা করা নেহাৎই বোকামি।" আমি বলব--"জনগন গভীরভাবে লক্ষ করেছে শীর্ষ পয্যায়ের নেতাদের কর্মকান্ড, তাঁরা কতটুকু দুর্নীতিপরায়ন।অতীতের ন্যায় হাওয়া ভবন গড়ে উঠেছে কিনা।দেশ দুর্নীতিতে আবার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে না সেই বৃত্ত থেকে বের হয়ে উন্নতি অগ্রগতির শীর্ষে যাচ্ছে। দেশব্যাপি উন্নয়ন, অগ্রগতির চোঁয়া লেগেছে কিনা? বিদেশী রাষ্ট্র সমুহ সমীহ করে না আগের মত তুচ্ছতাচ্ছিল্য ব্যবহার করে? আন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান কি? ইত্যাদি ইতিবাচক দিকগুলী সরকার সম্পর্কে পজেটিভ ধারনা জনমনে আরো বেশী প্রাপ্তির আশা আকাংখ্যার জম্ম দিয়েছে। অতীতে জনগনের ইচ্ছার পুর্ণতায় ঘাটতির বেদনা বিগত আট বছরে প্রাপ্তির মধ্যে আশার চেয়ে অনেক বেশী পুর্নণতার কারনে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের আগ্রহ এবার অনেক উচ্চতায় ছিল।জাতির জনকের কন্যা "ভীশন ২০২১ এবং ২০৪১" এর গঠনমূলক আলোচনা থেকে জনগন তাঁদের ভবিষ্যত বশধরদের উন্নত জীবনের প্রাপ্তিও খুঁজে পেয়েছে।তাই দেশব্যাপি আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে জনগনের উৎসুক ছিল অভাবনীয়, অকল্পনীয়।
এবারের দলীয় সম্মেলনে আরো একটি দিক কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে দেখা গেছে। সরকারি দল হোক বা বিরুধীদল হোক সম্মেলন, সভা, সমাবেশ, মিটিং-মিছিল মানেই চাঁদাবাজী, ব্যবসায়ীদের হয়্রানী,যানবাহনে ধায্য তোলা আদায়। একশ্রেনীর নেতাকর্মীর এই ধরনের অনুষ্ঠান ঈদের খুশী থেকে বেশী খুশি বয়ে আনতে দেখা যেত। সরকারি দলের এবারের অনুষ্ঠিত সম্মেলন সেই চিরাচরিত চাঁদাবাজি, জগনকে অহেতুক হয়রানীর মুলেও কুঠারাধাত করতে সক্ষম হয়েছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি-তোলাবাজি না হয় সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছিল, সব খরচ জোগান দেয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল দেড় কোটি টাকা।এর বাইরেও দলের কেন্দ্রীয় নেতা,দলের অনুগত শিল্পপতিরাও যোগান দিয়েছেন প্রয়োজনীয় টাকার।তার পরেও কিছু কিছু এলাকায় চাঁদাবাজি হয়নি তা বলবনা-পুরাতন অভ্যেস কি আর যায়- কয়লা ধুলেও ময়লা যায়না।সুযোগ সন্ধানী নেতাদের চাঁদাবাজি ছিল তবে তা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় নিতান্তই কম।আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিল থেকে দলের বাইরের সাধারণ ও সচেতন মানুষের আশাবাদ বা প্রত্যাশা পুরন হওয়ার কারনে চাঁদাবাজির ন্যায় নেতিবাচক দিকগুলী অনেকাংশে মানুষ মেনে নিয়েছে হয়তোবা।আগে যেমনটি হাঁক ডাক দেখা যেত এবার কিন্তু তদ্রুপ হাকডাক নেই বললেই চলে।
এবারের সম্মেলনে আর একটি প্রত্যাশা জনমনে প্রচন্ডভাবে জাগ্রত হচ্ছে-
প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ বর্তমান সরকার নিবে।’ কাউন্সিলে আগামী জাতীয় সংসদ (একাদশ সংসদ) নির্বাচনের বিষয় খুবই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। সাধারণ মানুষও নির্বাচন নিয়ে ভাবে। আগাম হোক বা নির্ধারিত সময়ে হোক সে নির্বাচনটি সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে তাঁর শুভ ঈঙ্গিতও জনগন,বুদ্ধিজীবি মহল অনুধাবন করতে পেরেছেন। সম্মেলনের সমাপনি দিনে সভানেত্রীর নির্বাচন সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা মুলক বক্তব্য থেকে।প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্য নি:সন্দেহে বিরুধীদলের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার জন্য প্রচন্ড চাপের সম্মুখ্যিন করবে জনগনের পক্ষ থেকে।
দেশে নির্মল গণতান্ত্রিক শাসন তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্তরীক চেষ্টার বহি:প্রকাশ সর্বস্তরের মানুষকে আশাম্ভিত করেছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ একাই দেশ চালাচ্ছে। সংসদ আছে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিরোধী দলহীন। এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বলা হচ্ছে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল।’ রাজপথে আন্দোলন নেই, সভানেই, দাবী আদায়ের হরতাল, অবরোধ নেই, শক্তিশালী বিরুধীদল সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে কিনা তাঁর নিশ্চয়তা নেই।তারপরেও গনতন্ত্রের বিঘ্ন ঘটার কোনরুপ উপকরন, নির্দেশনা সম্মেলন থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে সমস্ত কাজ সভানেত্রী একক করলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়না বা হতোনা সেই সমস্ত কাজ গুলীও স্বচ্ছভাবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করেছেন সভানেত্রী। বিগত সাত বছরের উন্নয়ন, অগ্রগতির চিত্র নিয়ে জনগনের দজায়, পাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।এই নির্দেশটি অনুসরন কররেই জনগন বেশী বেশী আশাম্ভিত শেখ হাসিনা সুষ্ঠ,নিরপেক্ষ নির্বাচন আন্তরিক ভাবেই কামনা করেন বিরুধী দলের সহযোগীতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে হোচট খেতে হচ্ছে। বিরুধী দলের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্পটির অন্যতম কারনও উক্ত বক্তব্য।
এবারের সম্মেলনে আরো একটি দিক মানুষের মুখে মুখে --যা অতীতে কখনই দেখা যায়নি।অতীতে বড় দুই দলের নেত্রী কেউ কারো সম্মেলনে অংশ গ্রহন করেনি, বড় জোর প্রতিনীধি পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন। সমাজের কোন অংশেই আলোচনায়ও আসেনি।এবারের চিত্র সম্পুর্ণ ভিন্ন---বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সবাই আশা করেছিলেন যে, তারা তাতে যোগ দেবেন। আমন্ত্রণপত্র গ্রহণকালে মির্জা ফখরুল যদিও বলেছিলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তবুও ধারণা করা গিয়েছিল যে, সিদ্ধান্তটা অনুকূলেই হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ২০তম এ জাতীয় কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করে মির্জা ফখরুল যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, এই কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র চর্চার পথ আরও উন্মুক্ত হবে এবং রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাতে গিয়ে সবাই সমান সুযোগ ভোগ করবে। আমি মনে করি মির্জা ফকরুল যথার্থই বলেছেন-গনতান্তিক সংগঠনের শীর্ষনেতার বক্তব্য যেমনটি হওয়া উচিৎ তেমনটিই হয়েছে।
এখানে একটি বিষয়ে পাঠক ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই-"একহাতে তালি বাজেনা, বাদক দল ছাড়া গানেও সুর আসেনা"।গনতন্ত্রের সংকট সমাধানের সব দায়িত্ব সরকারের বা সরকারি দলের একার নয়---বিরুধী দলের সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন।আমি এখানে একটা ছোট্র উদাহরন দিতে চাই-- "আমার এলাকা ফেনী জেলার ফুলগাজী এবং পরশুরাম উপজেলার স্থগিত দশ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১তারিখে। আমি নির্দ্ধিধায় বলতে পারি--"উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সরকারের শত ইচ্ছা থাকলেও সুষ্ঠ করা সম্ভব হবে না; এবং কি সরকার প্রধান কেন্দ্রে বসে থাকলেও না।" কারন এখানে বিরুধীদলের অংশগ্রহন নামকা ওয়াস্তে।মার্কা আছে-প্রার্থীও নেই, কর্মীও নেই। মিছিল মিটিং গনসংযোগ প্রচার প্রচারনা কিছুই নেই। কোন কোন এলাকার প্রার্থী নমিনেশন নিয়ে আবার বিদেশ তাঁর কর্মস্থলে চলে গেছেন।একতরফা ভোট ও নয় আবার দো-তরফাও নয়। প্রত্যেক এলাকায় কিছু ভোট পাগল 'চক্কা ছয়ফুর' আছে-তাঁরা ভোটে দাঁড়ান কিন্তু ভোট করেন না।এই ধরনের একাধিক প্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে।সরকারি দলের প্রার্থী দশ বিশ হাজার টাকা দিলেই ওনারা খুশী হয়ে কেন্দ্রে যাবেন না। বিএনপি,জাতীয় পার্টি, জাসদ এর ন্যায় শক্তিশালী দলীয় প্রার্থী না থাকায় নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যেও আগ্রহের তেমন কোন লক্ষন নেই।এমতবস্থায় সরকারি দলের প্রার্থীর কি করনীয়? নিশ্চয়ই তাঁর চেয়ারম্যান হওয়ার প্রয়োজন আছে। সুতারাং যা হওয়ার তাই হবে।ভোটের পরের দিন লম্বা এক বিবৃতি পত্রিকায় দেখা যাবে।টেলিভিশনে ভোট কাটার দৃশ্য দেখানো হবে। সরকারি দল সব নিয়ে গেছে, গনতন্ত্র এই সরকারের শাষনে ধুলিসাৎ হয়ে গেছে--"তাঁরা যে পাহারায়ও ছিলনা--"একথাটি ঘুনাক্ষরেও বলবেনা"।
মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর যথার্থই বলেছেন-এভাবে বিএনপি রাজনীতি চলতে থাকলে আগামী ৫/৭ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্রেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা বিএনপি নামক দলটিকে। রাজনীতির সকল রীতি নীতি, শিষ্টাচার ভঙ্গ করে একজন অফিস কর্মচারীকে বিদেশী রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে স্থান দেয়া কোনক্রমেই মেনে নেয়া যায়না।কর্মচারি দিয়ে দল চালাতে পারলে প্রত্যেক কোটি টাকার মালিকের একটা করে রাজনৈতিক দল অবশ্যই থাকতো। কর্মচারিকে নেতাদের সাথে বসতে দিয়ে চরম অপমান করার পরেও তাঁরা কি বিএনপি দল মুখে আনতে পারে? যারা পারেন না তাঁরা ইতিমধ্যে সরে গেছেন-যারা পারেন তাঁরা আছেন কিন্তু মুলে কেউ নেই।
আর একটা কথা না বলে পারিনা--"যে কারো ব্যাক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে-থাকাটাও স্বাভাবিক।" কোনক্রমেই দেশের শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রে ইহা স্বাভাবিক নয়।পাশ্চাত্যের অবাধ যৌন সম্পর্কের দেশ সমুহেও এইরুপ সম্পর্কের কারনে বহুবার ক্ষমতার রদবদল হওয়ার উদাহরন আছে।আমাদের ন্যায় রক্ষনশীল দেশে গভীর রাতের সম্পর্ককে প্রকাশ্যে বিদেশী রাষ্ট্রের মেহমানের সামনে নিয়ে আসা---"জাতি হিসেবে কতটুকু সম্মানের অধিকারি হলাম শুসীল ভাইদের নিকট আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা"!!!!
জনাব ফকরুল আরো একটি গোপন সত্য সেই আলোচনায় প্রকাশ করেছেন---"কেউ আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে চিন্তা করা ভুল হবে"। ইহা কিসের ঈঙ্গিত দিলেন জনাব ফকরুল? আওয়ামী লীগ যা এতদিন বলে আসছেন তাঁদের দলের মহাসচিবও ঠিক একই ঈঙ্গিত দিলেন। তারপরেও বলবেন বিএনপি? তারপরেও সরকারের দোষ দিতে একশ্রেনীর সুশিলের মুখে আটকায় না। আমি সেই সমস্ত শুসীলদের জিজ্ঞেস করতে চাই--"কখন, কোথায়, কোন দেশে আন্দোলন সংগ্রাম, নিয্যাতন, নিপীড়ন ছাড়া গনদাবী পুরন হয়েছে"? আলোচনার টেবিলে বসে যদি জাতীয় সমস্যার সমাধান করা যেত ১/১১ হ'ত না।তারেকের কোমরের চিকিৎসার জন্য আট বছর বিদেশের হাসপাতালেও থাকার প্রয়োজন ছিলনা। কোকো বেওয়ারিশ লাশ হয়ে বিদেশের রাস্তায় পড়ে থাকতে হত না,আপন ভাইয়ের চেহারা না দেখার করুন পরিনতি ভোগেরও প্রয়োজন হ'তনা।
গণতন্ত্রের জন্য, কখনও বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াইয়ের অনেক ঐতিহ্য আছে। বিএনপি বলছে, তাদের সব গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত করা হচ্ছে, প্রকাশ্যে তাদের কর্মকান্ড চালাতে দেয়া হচ্ছে না। সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে সে অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কি তাঁরা আদৌ করেছে? জ্বালাও, পোড়াও,আগুনবোমা কি সংবিধান সম্মত?
এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগ সম্পর্ক উন্নয়নের শর্ত সাপেক্ষ একটি সুযোগ দিয়েছিল। যদিও কোন তরফ থেকেই বর্তমানে কোন চাপ সরকারের উপর নেই। আওয়ামীলীগ- "বিএনপি দলকে আমন্ত্রন না জানিয়ে সভানেত্রী--মহাসচিবকে দাওয়াত দিয়েছিল" তাঁদের সম্মেলনে অতিথি হতে।শীর্ষ দুই নেতার সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা আছে কিনা যাছাইয়ে পরিক্ষা নিতে চেয়েছিল--"নিমিষেই আটকে গেলেন খালেদা ফকরুল আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে"। বিএনপি সম্পর্কোন্নয়নের পথই রুদ্ধ করেনি চিরশত্রু আওয়ামীলীগ তাও প্রমান করে দিল। জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত কবুল করতে দলের কেউ আপত্তি করে না, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে অতিথি হতে কেন আপত্তি উত্থাপিত হয়? বাংলাদেশের জনগন, বাহির রাষ্ট্রের যেসব অতিথি যোগদান করেছেন তাদের কাছে বিএনপি কী বার্তা দিল? যদি বলা হয়, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান বিএনপি চায় না- 'তার জবাব কী?'
মানুষ এখন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে যাওয়ার পর অত্যন্ত অসৌজন্যমূলকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে গেট থেকে ফেরত দেয়ার নিন্দিত ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে অতিথি হওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানকে একই মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে দেখছে। নেতৃত্বের যোগ্যতা ও সংগঠনের শক্তি থাকলে জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন, মামলা-হামলার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যেভাবে গন আন্দোলন গড়ে তুলেছিল অতীতে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিও তা করতে পারে।
শান্তিপূর্ণ সমঝোতার কোনো সুযোগ কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলই হাতছাড়া করে না। বেগম খালেদা জিয়ার উচিত ছিল কাউন্সিলে গিয়ে দুই দলের বিশেষ করে দুই নেত্রীর দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক অবসানের একটা পরিবেশ তৈরি করা। এতে সারা দেশে দুই দলের তৃণমূল স্তর পর্যন্ত নেতাকর্মী-সংগঠকদের মধ্যে সুসম্পর্কের একটি নবদিগন্ত উন্মোচিত হতো, যা দেশে গণতন্ত্র চর্চা ও অনুশীলনের ব্যাপারে প্রেরণা জোগাত। শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে দাওয়াত করে বেগম জিয়ার প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে আবারও রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় শেখ হাসিনা কয়েক শ ধাপ এগিয়ে খালেদা বহুধাপ পেছনে প্রমান করেছেন। অথচ বেগম জিয়া যদি সেই কাউন্সিলে যেতেন তিনি হতেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মুখ্য চরিত্র। মিডিয়ায়ও জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে তিনি উঠে আসতেন এক উজ্জ্বল অবয়ব নিয়ে। রাজনৈতিক দুরদর্শীতার মাইলফলক স্থাপন করতে পারতেন,দেশও উপকৃত হত,দলও স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ সুগম হত।
পরিশেষে বলতে চাই- উন্নত পদ্ধতি গ্রহনে লজ্জার কিছুই নেই--"দলে গনতন্ত্রের চর্চা না থাকলে দেশে গনতন্ত্রের আশা করা যায়না।গনতন্ত্রে অভ্যস্ত করতেও জনগনকে যুগের পর যুগ অপেক্ষা করার প্রয়োজন হয়।শতকরা আশিজন মানুষ এখনও মনে করে 'সুষ্ঠ নির্বাচনের অর্থই গনতন্ত্র',যা ইচ্ছা তাই করার নাম স্বাধীনতা"। দেরীতে হলেও খালেদা জিয়া স্বীকার করেছেন-- "শুধুমাত্র নির্ভেজাল নির্বাচন গনতন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা বা চর্চা না হলে নির্বাচনে গনতন্ত্র রক্ষিত হচ্ছে বলা যাবেনা।" গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত শতবছরেও হয়নাইহা প্রতিষ্ঠার বিষয় নয়- চর্চার বিষয়। গনতন্ত্রের রাণী অভিহীত বৃটিশদের দেশেও গনতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে এবং চলবে।গনতন্ত্রের সংজ্ঞা আমরা সবাই জানি কিন্তু গনতন্ত্রের প্রধান শর্ত কি বুঝিনা। শক্তিশালী একাধিক বিরুধী দল,সমশক্তি সম্পন্ন বিরুধীদল, সুশিক্ষিত রাজনৈতিকর্মী, সহনশীলতার শিক্ষা, শক্তিশালী আইনী বেষ্টনী গনতন্ত্রের পুর্বশর্ত। আমাদের দেশে ইহার একটিও কি পুর্ণাঙ্গ আছে? অথছ উল্লেখীত বিষয়গুলীর ঘাটতি দেখা দিলে গনতন্ত্র শতইচ্ছায়ও প্রতিষ্ঠিত হবেনা। একারনে সবার মুখে গনতন্ত্রের চর্চার বিষয়টি আগে আসে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গনতন্ত্রের চর্চায় বিশ্বের বহু রাজনৈতিক দলের চেয়ে অনেক অগ্রসরমান-- বাংলাদেশতো বটেই।তাঁদের নিকট গনতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন হয়না-সহনশীলতার প্রয়োজন।সহনশীলতা বিএনপি এবং তাঁর নেত্রীর নিকট কিঞ্চিত পরিমান নেই --আবারও প্রমানীত হল।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
" জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন