বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল প্রচলিত রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের শুভ সূচনা--

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল বিদ্যমান রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনের শুভসূচনা --
____________________________________________________________

         বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সফল কাউন্সিলের আবেদন বছরব্যাপি আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হল।আমাদের প্রীয় নেতা জনাব তোফায়েল আহম্মেদ এমপি সাহেব যথার্থই বলেছেন--"আওয়ামীলীগ আজ যাহা চিন্তা করে --অন্যদল দশ বছর পর তা চিন্তা করে।আওয়ামীলীগ শ্রষ্ঠার ভুমিকা পালন করে -অন্যরা তা অনুসরন করে।" সত্যি বলতে কি---"শতভাগ সত্য উক্তি তিনি করেছেন।"
      বাংলাদেশের রাজনীতির যতসব গুনগত পরিবর্তন সব পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, বিয়োজন এসেছে আওয়ামী লীগের মেধা থেকে। রাজনৈতিক দল গঠন, অ-সাম্প্রদায়িক শব্দের পরিচিতি এবং লালন,জাতি সত্বার পরিচিতি এবং উম্মেষ, জাতীয়তাবাদকে অন্তর দিয়ে ধারন এবং তাঁর বিকাশ, গনতন্ত্রের সঙ্গে সখ্যতা এবং অন্তরে ধারন, সফল অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্বদান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, তত্বাবধায়কের ধারনা প্রচলন ও বাস্তবায়ন, তত্বাবধায়ক বিলুপ্তির কৃতিত্ব, দলীয় সংস্কার, রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি, সময়ের সাথে তালমিলিয়ে সংস্কার অব্যাহত রাখার প্রক্রিয়ার শিক্ষা, ডিজিটাল শব্দের আমদানী, রাষ্ট্রীয় পয্যায় সফল ডিজিটালাইজেসনের প্রয়োগের কৃতিত্ব,  উন্নয়ন লক্ষমাত্রা শব্দের প্রচলন, লক্ষমাত্রা স্থীরিকরনে ভিশন নির্দিষ্টকরন, গরিবীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা, সফল আন্দোলনের মাধ্যমে -মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরের কৃতিত্ব অর্জন, দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, দুভিক্ষকে পরাজিত করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ দেশে পরিনতকরন, খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিনত করন সহ সর্ব বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং তাঁর সরকারের অগ্রগন্য ভুমিকার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। বিরুধীদলে থেকে যেমন যুগান্তকারি পরিবর্তনের কৃতিত্ব সমুহের দাবিদার হতে পেরেছে-সরকারে থেকেও যুগান্তকারি সব অর্জনের কৃতিত্ব আওয়ামীলীগের দখলেই রাখতে পেরেছে।

   আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল শেষ হয়েছে। কিন্তু বহুল আলোচিত এ কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ হয়নি,অচিরে শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। একবাক্যে স্বীকার করতে হবে জৌলুসপূর্ণ সম্মেলনটি উদ্যোক্তাদের আকাংক্ষা যেমন ষোল আনা পূর্ণ করেছে--",দলীয় নেতাকর্মী এবং দেশ ও জনগনের আশা আকাংখাও ষোল আনাই  পূর্ণ হয়েছে।" আমাদের দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলনে এমন জাঁকজমক, দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা--এর আগে কখনও দেখা যায়নি--এমনকি আওয়ামী লীগের অতীতের কোনো সম্মেলনেও না।
     রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক দিক থেকে এই কাউন্সিলের একটি ভিন্নমাত্রার আবেদন ছিল। একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলন যেসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে--"আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে তার সবগুলোই পুংখ্যানুপুংখ্য ভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।" অতীতে পুরো দিন কাউন্সিলের কাজে বসে থাকার প্রয়োজন হতনা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব কর্মযজ্ঞ শেষ; এবার কিন্তু তা হয়নি।
     "আওয়ামীলীগের দলীয়  গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবারের কাউন্সিলে। দলে সভাপতিমন্ডলীর পদের সংখ্যা চারটি বেড়েছে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও বেড়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি করা হয়েছে। স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী তার মুল্যবান  প্রস্তাব কমিটির কাছে তুলে ধরেছেন। কমিটি আলাপ-আলোচনার পর তা অনুমোদন করে নির্বাহী কমিটিতে জমা দিয়েছে। নির্বাহী কমিটিতে তা পাস হওয়ার পর কাউন্সিলে উত্থাপিত ও অনুমোদিত হয়েছে। কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদনের পরই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবার কাউন্সিল কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে দলীয় সভানেত্রী একক সিদ্ধান্তে কমিটির বাকি সব পদে মনোনয়ন দেননি। সভাপতিমন্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এবার কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলে। নতুন সাধারন সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করেছেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক।গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে,গনতন্ত্রের সৌন্দর্যও নিহীত আছে উক্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে।। বাদবাকি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নাম প্রস্তাব করেছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজে। নতুন কমিটির ঘোষিত নেতারা সভানেত্রী কর্তৃক মনোনীত নন, কাউন্সিল কর্তৃক সরাসরি অনুমোদিত, বলা চলে নির্বাচিত। এটি সম্পূর্ণই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।"

      রাজনীতির ভাষায় উল্লেখিত প্রক্রিয়াকে গণতন্ত্রের চর্চা বা অনুশীলন বলে। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক এই ধরনের শুভ উদ্যোগ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অনুসরন করতে উদ্বুদ্ধ হবে। সাংগঠনিক বিষয়াদিসহ সব ক্ষেত্রে এ ধরনের গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণে অনুপ্রাণিত হবে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের তরফ থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল গঠন-পুনর্গঠনে চাপের মধ্যে পড়বে বড় দলের পদ-পদবি, বিভিন্ন স্তরের কমিটি ‘বেচা-কেনার বেপারীরা’। নির্বাচনে যে কোনো পর্যায়ের মনোনয়ন বাণিজ্য ক্রমে শক্তি হারিয়ে নিস্তেজ হতে বাধ্য হবে।

      গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল--"গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চর্চা আওয়ামী লীগের সংগঠন পর্যায়েই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়সহ জাতীয় রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই যেন গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা মূল্য পায়"। আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলে জাতির জনকের কন্যা স্পষ্ট করেছেন গনতন্ত্রের পক্ষে তাঁর অবস্থান কত সুদৃড ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।দেশের বিদ্যমান বিরুধীদল সমুহের সহযোগীতা পেলে গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানীক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হ'তনা--"জনগনের বিশ্বাসে আনতে পেরেছে এই সম্মেলন"। একদিকে নীজ দলের অভ্যন্তরে প্রথমে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরন করে দেশের সকল গনতান্ত্রীক প্রতিষ্ঠানে পুর্ণাঙ্গ গনতান্ত্রীক চর্চার শুভ ঈঙ্গিত দিলেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। অন্যদিকে যুগ যুগ গনমানুষের নির্ভেজাল গনতন্ত্র চর্চার আশা আকাঙ্ক্ষার প্রত্যাশা পুরণের শুভসুচনা উদ্ভোধন করলেন।

 বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে পরিবর্তনের সুর আগাম প্রস্তুতির ধরন দেখেই অনেকটা আশা করা গিয়েছিল।অন্তত: কিছু পরিবর্তন এবার হবে। নেতাকর্মীদের সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে সর্ব বিষয়ে গনতন্ত্রের রীতিনীতি অনুসরন করা হবে--"নেতাকর্মীরা এতটুকু প্রত্যাশা করেনি।" বলা যায় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি হাজার গুনে বেড়ে তাঁদের মনকে তো দোলা দিলই; আপামর জনগনের মনেও মিষ্টি হাওয়ার বাতাবরনে দোলা দিতে সক্ষম হল। ইহা একান্তই অনাকাংখিত প্রাপ্তি,না চাইতেই মেঘ।

    আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সচেতন জনগণের মধ্যে একটি আশাবাদ  জাগ্রত হয়েছে। দলের নেতাদের মনে রাখতে হবে যে--"আমাদের দেশের মতো দুর্নীতিপ্রবণ একটি দেশে একটানা আট বছর ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতা ভোগকারী একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র্র করে দেশব্যাপী সাজ সাজ রব হওয়া স্বাভাবিক।"এইরুপ চিন্তা করা নেহাৎই বোকামি।" আমি বলব--"জনগন গভীরভাবে লক্ষ করেছে শীর্ষ পয্যায়ের নেতাদের কর্মকান্ড, তাঁরা কতটুকু দুর্নীতিপরায়ন।অতীতের ন্যায় হাওয়া ভবন গড়ে উঠেছে কিনা।দেশ দুর্নীতিতে আবার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে না সেই বৃত্ত থেকে বের হয়ে উন্নতি অগ্রগতির শীর্ষে যাচ্ছে। দেশব্যাপি উন্নয়ন, অগ্রগতির চোঁয়া লেগেছে কিনা? বিদেশী রাষ্ট্র সমুহ সমীহ করে না আগের মত তুচ্ছতাচ্ছিল্য ব্যবহার করে? আন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান কি? ইত্যাদি ইতিবাচক দিকগুলী সরকার সম্পর্কে পজেটিভ ধারনা জনমনে আরো বেশী প্রাপ্তির  আশা আকাংখ্যার জম্ম দিয়েছে। অতীতে জনগনের  ইচ্ছার পুর্ণতায় ঘাটতির বেদনা বিগত আট বছরে প্রাপ্তির মধ্যে আশার চেয়ে অনেক বেশী পুর্নণতার কারনে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের আগ্রহ এবার অনেক উচ্চতায় ছিল।জাতির জনকের কন্যা "ভীশন ২০২১ এবং ২০৪১" এর গঠনমূলক আলোচনা থেকে জনগন তাঁদের ভবিষ্যত বশধরদের উন্নত জীবনের প্রাপ্তিও খুঁজে পেয়েছে।তাই দেশব্যাপি আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে জনগনের উৎসুক ছিল অভাবনীয়, অকল্পনীয়।
এবারের দলীয় সম্মেলনে আরো একটি দিক কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে দেখা গেছে। সরকারি দল হোক বা বিরুধীদল হোক সম্মেলন, সভা, সমাবেশ, মিটিং-মিছিল মানেই চাঁদাবাজী, ব্যবসায়ীদের হয়্রানী,যানবাহনে ধায্য তোলা আদায়। একশ্রেনীর নেতাকর্মীর এই ধরনের অনুষ্ঠান ঈদের খুশী থেকে বেশী খুশি বয়ে আনতে দেখা যেত। সরকারি দলের এবারের অনুষ্ঠিত সম্মেলন সেই চিরাচরিত চাঁদাবাজি, জগনকে অহেতুক হয়রানীর মুলেও কুঠারাধাত করতে সক্ষম হয়েছে।
     
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি-তোলাবাজি না হয় সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছিল, সব খরচ জোগান দেয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল দেড় কোটি টাকা।এর বাইরেও দলের কেন্দ্রীয় নেতা,দলের অনুগত শিল্পপতিরাও যোগান দিয়েছেন প্রয়োজনীয় টাকার।তার পরেও কিছু কিছু এলাকায় চাঁদাবাজি হয়নি তা বলবনা-পুরাতন অভ্যেস কি আর যায়- কয়লা ধুলেও ময়লা যায়না।সুযোগ সন্ধানী নেতাদের চাঁদাবাজি ছিল তবে তা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় নিতান্তই কম।আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিল থেকে দলের বাইরের সাধারণ ও সচেতন মানুষের আশাবাদ বা প্রত্যাশা পুরন হওয়ার কারনে চাঁদাবাজির ন্যায় নেতিবাচক দিকগুলী অনেকাংশে মানুষ মেনে নিয়েছে হয়তোবা।আগে যেমনটি হাঁক ডাক দেখা যেত এবার কিন্তু তদ্রুপ হাকডাক নেই বললেই চলে।
  এবারের সম্মেলনে আর একটি প্রত্যাশা জনমনে প্রচন্ডভাবে জাগ্রত হচ্ছে-

প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ বর্তমান সরকার নিবে।’ কাউন্সিলে আগামী জাতীয় সংসদ (একাদশ সংসদ) নির্বাচনের বিষয় খুবই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। সাধারণ মানুষও নির্বাচন নিয়ে ভাবে। আগাম হোক বা নির্ধারিত সময়ে হোক সে নির্বাচনটি সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে তাঁর শুভ ঈঙ্গিতও জনগন,বুদ্ধিজীবি মহল অনুধাবন করতে পেরেছেন। সম্মেলনের সমাপনি দিনে সভানেত্রীর নির্বাচন সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা মুলক বক্তব্য থেকে।প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্য নি:সন্দেহে বিরুধীদলের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার জন্য প্রচন্ড চাপের সম্মুখ্যিন করবে জনগনের পক্ষ থেকে।
 দেশে নির্মল গণতান্ত্রিক শাসন তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্তরীক চেষ্টার বহি:প্রকাশ সর্বস্তরের মানুষকে আশাম্ভিত করেছে। বর্তমানে  আওয়ামী লীগ একাই দেশ চালাচ্ছে। সংসদ আছে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিরোধী দলহীন। এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বলা হচ্ছে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল।’ রাজপথে আন্দোলন নেই, সভানেই, দাবী আদায়ের হরতাল, অবরোধ নেই, শক্তিশালী বিরুধীদল সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে কিনা তাঁর নিশ্চয়তা নেই।তারপরেও গনতন্ত্রের বিঘ্ন ঘটার কোনরুপ উপকরন, নির্দেশনা সম্মেলন থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে সমস্ত কাজ সভানেত্রী একক করলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়না বা হতোনা সেই সমস্ত কাজ গুলীও স্বচ্ছভাবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করেছেন সভানেত্রী। বিগত সাত বছরের উন্নয়ন, অগ্রগতির চিত্র নিয়ে জনগনের দজায়, পাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।এই নির্দেশটি অনুসরন কররেই জনগন বেশী বেশী আশাম্ভিত শেখ হাসিনা সুষ্ঠ,নিরপেক্ষ নির্বাচন আন্তরিক ভাবেই কামনা করেন বিরুধী দলের সহযোগীতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে হোচট খেতে হচ্ছে। বিরুধী দলের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্পটির অন্যতম কারনও উক্ত বক্তব্য।
এবারের সম্মেলনে আরো একটি দিক মানুষের মুখে মুখে --যা অতীতে কখনই দেখা যায়নি।অতীতে বড় দুই দলের নেত্রী কেউ কারো সম্মেলনে অংশ গ্রহন করেনি, বড় জোর প্রতিনীধি পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন। সমাজের কোন অংশেই আলোচনায়ও আসেনি।এবারের চিত্র সম্পুর্ণ ভিন্ন---বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সবাই আশা করেছিলেন যে, তারা তাতে যোগ দেবেন। আমন্ত্রণপত্র গ্রহণকালে মির্জা ফখরুল যদিও বলেছিলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তবুও ধারণা করা গিয়েছিল যে, সিদ্ধান্তটা অনুকূলেই হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ২০তম এ জাতীয় কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করে মির্জা ফখরুল যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, এই কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র চর্চার পথ আরও উন্মুক্ত হবে এবং রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাতে গিয়ে সবাই সমান সুযোগ ভোগ করবে। আমি মনে করি মির্জা ফকরুল যথার্থই বলেছেন-গনতান্তিক সংগঠনের শীর্ষনেতার বক্তব্য যেমনটি হওয়া উচিৎ তেমনটিই হয়েছে।
     এখানে একটি বিষয়ে পাঠক ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই-"একহাতে তালি বাজেনা, বাদক দল ছাড়া গানেও সুর আসেনা"।গনতন্ত্রের সংকট সমাধানের সব দায়িত্ব সরকারের বা সরকারি দলের একার  নয়---বিরুধী দলের সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন।আমি এখানে একটা ছোট্র উদাহরন দিতে চাই-- "আমার এলাকা ফেনী জেলার ফুলগাজী এবং পরশুরাম উপজেলার স্থগিত দশ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১তারিখে। আমি নির্দ্ধিধায় বলতে পারি--"উল্লেখিত  ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সরকারের শত ইচ্ছা থাকলেও সুষ্ঠ করা সম্ভব হবে না; এবং কি সরকার প্রধান কেন্দ্রে বসে থাকলেও না।" কারন এখানে বিরুধীদলের অংশগ্রহন নামকা ওয়াস্তে।মার্কা আছে-প্রার্থীও নেই, কর্মীও নেই। মিছিল মিটিং গনসংযোগ প্রচার প্রচারনা কিছুই নেই। কোন কোন এলাকার প্রার্থী নমিনেশন নিয়ে আবার বিদেশ তাঁর কর্মস্থলে চলে গেছেন।একতরফা ভোট ও নয় আবার দো-তরফাও নয়। প্রত্যেক এলাকায় কিছু ভোট পাগল 'চক্কা ছয়ফুর' আছে-তাঁরা ভোটে দাঁড়ান কিন্তু ভোট করেন না।এই ধরনের একাধিক প্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে।সরকারি দলের প্রার্থী দশ বিশ হাজার টাকা দিলেই ওনারা খুশী হয়ে কেন্দ্রে যাবেন না। বিএনপি,জাতীয় পার্টি, জাসদ এর ন্যায় শক্তিশালী দলীয় প্রার্থী না থাকায় নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যেও আগ্রহের তেমন কোন লক্ষন নেই।এমতবস্থায় সরকারি দলের প্রার্থীর কি করনীয়? নিশ্চয়ই তাঁর চেয়ারম্যান হওয়ার প্রয়োজন আছে। সুতারাং যা হওয়ার তাই হবে।ভোটের পরের দিন লম্বা এক বিবৃতি পত্রিকায় দেখা যাবে।টেলিভিশনে ভোট কাটার দৃশ্য দেখানো হবে। সরকারি দল সব নিয়ে গেছে, গনতন্ত্র এই সরকারের শাষনে ধুলিসাৎ হয়ে গেছে--"তাঁরা যে পাহারায়ও ছিলনা--"একথাটি ঘুনাক্ষরেও বলবেনা"।
 মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর যথার্থই বলেছেন-এভাবে বিএনপি রাজনীতি চলতে থাকলে আগামী ৫/৭ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্রেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা বিএনপি নামক দলটিকে। রাজনীতির সকল রীতি নীতি, শিষ্টাচার ভঙ্গ করে একজন অফিস কর্মচারীকে বিদেশী রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে স্থান দেয়া কোনক্রমেই মেনে নেয়া যায়না।কর্মচারি দিয়ে দল চালাতে পারলে প্রত্যেক কোটি টাকার মালিকের একটা করে রাজনৈতিক দল অবশ্যই থাকতো। কর্মচারিকে নেতাদের সাথে বসতে দিয়ে চরম অপমান করার পরেও তাঁরা কি বিএনপি দল মুখে আনতে পারে? যারা পারেন না তাঁরা ইতিমধ্যে সরে গেছেন-যারা পারেন তাঁরা আছেন কিন্তু মুলে কেউ নেই।
আর একটা কথা না বলে পারিনা--"যে কারো ব্যাক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে-থাকাটাও স্বাভাবিক।" কোনক্রমেই দেশের শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রে ইহা স্বাভাবিক নয়।পাশ্চাত্যের অবাধ যৌন সম্পর্কের দেশ সমুহেও এইরুপ সম্পর্কের কারনে বহুবার ক্ষমতার রদবদল হওয়ার উদাহরন আছে।আমাদের ন্যায় রক্ষনশীল দেশে গভীর রাতের সম্পর্ককে প্রকাশ্যে বিদেশী রাষ্ট্রের মেহমানের সামনে নিয়ে আসা---"জাতি হিসেবে কতটুকু সম্মানের অধিকারি হলাম শুসীল ভাইদের নিকট আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা"!!!!
জনাব ফকরুল আরো একটি গোপন সত্য সেই আলোচনায় প্রকাশ করেছেন---"কেউ আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে চিন্তা করা ভুল হবে"। ইহা কিসের ঈঙ্গিত দিলেন জনাব ফকরুল? আওয়ামী লীগ যা এতদিন বলে আসছেন তাঁদের দলের মহাসচিবও ঠিক একই ঈঙ্গিত দিলেন। তারপরেও বলবেন বিএনপি? তারপরেও সরকারের  দোষ দিতে একশ্রেনীর সুশিলের মুখে আটকায় না। আমি সেই সমস্ত শুসীলদের জিজ্ঞেস করতে চাই--"কখন, কোথায়, কোন দেশে আন্দোলন সংগ্রাম, নিয্যাতন, নিপীড়ন ছাড়া গনদাবী পুরন হয়েছে"? আলোচনার টেবিলে বসে যদি জাতীয় সমস্যার সমাধান করা যেত ১/১১ হ'ত না।তারেকের কোমরের চিকিৎসার জন্য আট বছর বিদেশের হাসপাতালেও থাকার প্রয়োজন ছিলনা। কোকো বেওয়ারিশ লাশ হয়ে বিদেশের রাস্তায় পড়ে থাকতে হত না,আপন ভাইয়ের চেহারা না দেখার করুন পরিনতি ভোগেরও প্রয়োজন হ'তনা।

গণতন্ত্রের জন্য, কখনও বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াইয়ের অনেক ঐতিহ্য আছে। বিএনপি বলছে, তাদের সব গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত করা হচ্ছে, প্রকাশ্যে তাদের কর্মকান্ড চালাতে দেয়া হচ্ছে না। সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে সে অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কি তাঁরা আদৌ করেছে? জ্বালাও, পোড়াও,আগুনবোমা কি সংবিধান সম্মত?    

এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগ সম্পর্ক উন্নয়নের শর্ত সাপেক্ষ একটি সুযোগ দিয়েছিল। যদিও কোন তরফ থেকেই বর্তমানে কোন চাপ সরকারের উপর নেই। আওয়ামীলীগ- "বিএনপি দলকে আমন্ত্রন না জানিয়ে সভানেত্রী--মহাসচিবকে দাওয়াত দিয়েছিল" তাঁদের সম্মেলনে অতিথি হতে।শীর্ষ দুই নেতার সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা আছে কিনা যাছাইয়ে পরিক্ষা নিতে চেয়েছিল--"নিমিষেই আটকে গেলেন খালেদা ফকরুল আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে"। বিএনপি সম্পর্কোন্নয়নের পথই রুদ্ধ করেনি চিরশত্রু আওয়ামীলীগ তাও প্রমান করে  দিল। জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত কবুল করতে দলের কেউ আপত্তি করে না, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে অতিথি হতে কেন আপত্তি উত্থাপিত হয়? বাংলাদেশের জনগন, বাহির রাষ্ট্রের যেসব অতিথি যোগদান করেছেন তাদের কাছে বিএনপি কী বার্তা দিল? যদি বলা হয়, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক  সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান বিএনপি চায় না- 'তার জবাব কী?'
 মানুষ এখন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে যাওয়ার পর অত্যন্ত অসৌজন্যমূলকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে গেট থেকে ফেরত দেয়ার নিন্দিত ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে অতিথি হওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানকে একই মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে দেখছে। নেতৃত্বের যোগ্যতা ও সংগঠনের শক্তি থাকলে জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন, মামলা-হামলার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যেভাবে গন আন্দোলন গড়ে তুলেছিল অতীতে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিও তা করতে পারে।
শান্তিপূর্ণ সমঝোতার কোনো সুযোগ কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলই হাতছাড়া করে না। বেগম খালেদা জিয়ার উচিত ছিল কাউন্সিলে গিয়ে দুই দলের বিশেষ করে দুই নেত্রীর দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক অবসানের একটা পরিবেশ তৈরি করা। এতে সারা দেশে দুই দলের তৃণমূল স্তর পর্যন্ত নেতাকর্মী-সংগঠকদের মধ্যে সুসম্পর্কের একটি নবদিগন্ত উন্মোচিত হতো, যা দেশে গণতন্ত্র চর্চা ও অনুশীলনের ব্যাপারে প্রেরণা জোগাত। শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে দাওয়াত করে বেগম জিয়ার প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে আবারও রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় শেখ হাসিনা কয়েক শ ধাপ এগিয়ে খালেদা বহুধাপ পেছনে প্রমান করেছেন। অথচ বেগম জিয়া যদি সেই কাউন্সিলে যেতেন তিনি হতেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মুখ্য চরিত্র। মিডিয়ায়ও জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে তিনি উঠে আসতেন এক উজ্জ্বল অবয়ব নিয়ে। রাজনৈতিক দুরদর্শীতার মাইলফলক স্থাপন করতে পারতেন,দেশও উপকৃত হত,দলও স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ সুগম হত।

   পরিশেষে বলতে চাই- উন্নত পদ্ধতি গ্রহনে লজ্জার কিছুই নেই--"দলে গনতন্ত্রের চর্চা না থাকলে দেশে গনতন্ত্রের আশা করা যায়না।গনতন্ত্রে অভ্যস্ত করতেও জনগনকে যুগের পর যুগ অপেক্ষা করার প্রয়োজন হয়।শতকরা আশিজন মানুষ এখনও মনে করে 'সুষ্ঠ নির্বাচনের অর্থই গনতন্ত্র',যা ইচ্ছা তাই করার নাম স্বাধীনতা"। দেরীতে হলেও খালেদা জিয়া স্বীকার করেছেন-- "শুধুমাত্র নির্ভেজাল নির্বাচন গনতন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা বা চর্চা না হলে নির্বাচনে গনতন্ত্র রক্ষিত হচ্ছে বলা যাবেনা।" গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত শতবছরেও হয়নাইহা প্রতিষ্ঠার বিষয় নয়- চর্চার বিষয়। গনতন্ত্রের রাণী অভিহীত বৃটিশদের দেশেও গনতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে এবং চলবে।গনতন্ত্রের সংজ্ঞা আমরা সবাই জানি কিন্তু গনতন্ত্রের প্রধান শর্ত কি বুঝিনা। শক্তিশালী একাধিক বিরুধী দল,সমশক্তি সম্পন্ন বিরুধীদল, সুশিক্ষিত রাজনৈতিকর্মী, সহনশীলতার শিক্ষা, শক্তিশালী আইনী বেষ্টনী গনতন্ত্রের পুর্বশর্ত। আমাদের দেশে ইহার একটিও কি পুর্ণাঙ্গ আছে? অথছ উল্লেখীত বিষয়গুলীর ঘাটতি দেখা দিলে গনতন্ত্র শতইচ্ছায়ও প্রতিষ্ঠিত হবেনা। একারনে সবার মুখে গনতন্ত্রের চর্চার বিষয়টি আগে আসে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গনতন্ত্রের চর্চায় বিশ্বের বহু রাজনৈতিক দলের চেয়ে অনেক অগ্রসরমান-- বাংলাদেশতো বটেই।তাঁদের নিকট গনতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন হয়না-সহনশীলতার প্রয়োজন।সহনশীলতা বিএনপি এবং তাঁর নেত্রীর নিকট কিঞ্চিত পরিমান নেই --আবারও প্রমানীত হল।

                       ruhulaminmujumder27@gmail.com

                          " জয়বাংলা            জয়বঙ্গবন্ধু"
,

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন