খালেদার জাতীয় ঐক্যের আহব্বান-ভোটহীন হাইপ্রোফাইল রাজনীতিবীদদের কাঁধে ভর করে রাজনীতিতে ফিরে আসার কৌশল।
খালেদার জাতীয় ঐক্যের আহব্বান--রাজনীতি, রাজপথ, নির্বাচনে ফিরে আসার কৌশল।
_____________________________________
জাতীয় ঐক্য বললেই তো আসবে জাতি প্রশ্নটি। পাকিস্তানের উম্মেসলগ্ন থেকে জাতি প্রশ্নে বিতর্ক শুরু হয়। বিতর্কের মুলকারিগর ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী (জিন্নাহ)। পুর্ব-পশ্চিমের বিশাল বাংলা ভাষাবাসিদের দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য মহান নেতা এ,কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী সহ প্রতিযসা বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দ ভঙ্গবঙ্গ প্রস্তাব উত্থাপন করে অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর, কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নার নেতৃত্বে হিন্দু এবং মসুলমান দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দুটি রাষ্ট্র কাঠামোর প্রাস্তাব উত্থাপন করেন।
"প্রস্তাবনার নাম দেয়া হয় " দ্বিজাতিতত্ব। "
বাঙ্গালীরা সেদিনও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার জাতীয়তাবাদ মেনে নিতে পারেননি। অবস্থার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে পাকিস্তানের জম্ম লাভ করে। বছর না ঘুরতেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের চেহারায় পুর্ব পাকিস্তানকে শোষন করার জন্য কলোনী হিসেবে পেতে ধর্মকেই হাতিয়ার করেছিল তাঁর প্রমান মেলে।১৯৪৭এ দেশভাগের পরের বছরই ১৯৪৮ ইং সালেই সরকারের নীতিনির্ধারক পয্যায় থেকে বলা হতে থাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হবে। অথছ বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে উর্দুতে কথা বলে মাত্র শতকরা সাত ভাগ মানুষ।বাংলায় কথা বলে শতকরা চাপ্পান্ন ভাগ মানুষ।পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেই সংখ্যা লগিষ্ট মানুষ তখন উর্দুতে কথা বলে।রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার আগেই শুরু হয় বাংলাকে খতনা পড়ানোর কাজ।একমাত্র বঙ্গোবসাগর ছাড়া আর কিছুই বাকি রাখেনি খতনাবিহীন।
তাঁর পরবর্তি ইতিহাস পাকিস্তানের পুর্বাংশে মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে গড়ে উঠে ভাষা আন্দোলন।ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের বাঙ্গালীরা মহৎ এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়, তাঁর ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা।
উক্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাবাসীদের মধ্যে গড়ে উঠে অসাম্প্রদায়িক ভাষাভিত্তিক বাঙালী জাতীয়তাবোধের চেতনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬দফা ঘোষিত হলে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে বাঙ্গালীদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য। সেই জাতীয় ঐক্যের পরিনতি লাভ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের। ঐক্যবদ্ধ জাতি দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী সসস্ত্র যুদ্ধে জয়লাভ করে "দ্বিজাতিতত্ব ভিত্তিক" সাম্প্রদায়িকতার কবর দিয়ে ভাষাভিত্তিক "অ-সাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ " প্রতিষ্ঠিত করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের অব্যবহিত পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান নতুন দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন।তিনি প্রথমেই দীর্ঘ সংগ্রাম,ত্যাগ, সর্বপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সম্মান রেখে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের শাষনতন্ত্রে গনতন্ত্র, শোষনহীন সমাজ কায়েমের লক্ষে 'সমাজতন্ত্র' ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে' রাষ্ট্রের মুলভিত্তি ধরে অপরিবর্তনীয়, অমোচনীয়কারে প্রস্তাবনার শীর্ষে ঠাঁই দেন।
বাঙ্গালী জাতী , ত্যাগ, সংগ্রামের, সাগরসম রক্ত, প্রায় পৌঁনে পাছ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনীময়ে অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় স্বস্থিবোধ করে এবং সহমর্মীতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরে নীজেদেরকে বীরের জাতী হিসেবে অবিহীত করে।
এবার বর্তমানের দেশব্যাপি আলোচনার বিষয় বস্তুতে ফিরে আসি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অখন্ড পাকিস্তানের দীর্ঘ তেইশ বছরের সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষার ফসল অসাম্প্রদায়িক বাঙালী জাতীয়তাবাদ। অন্যদিকে শোষন বঞ্চনা আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উৎপত্তি ভুয়া ধর্মীয় চেতনায় বিশ্বাসী সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতিতত্ব ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ।
"জাতীয় ঐক্য কি হতে পারে?"
মুলকথা হল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্য সংগঠিত হওয়ার জন্য এই আহব্বান জানায়নি।একাধিক দলের মধ্যে সমাঝোতা হলেই জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে ধারানাটা নিতান্তই ভুল।আবার একদলের ডাকেও জাতীয় ঐক্য হয়না এই ধারনাটিও ভুল।বহুদলের মিলনে জোটবদ্ধতার উদাহরন আছে-জাতীয় ঐক্যের কোন উদাহরন নেই। একদলের ডাকে জাতীয় ঐক্য হতে পারে প্রকৃষ্ট উদাহরন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবের--
"৬দফা কেন্দ্রিক শিষাঢালাই জাতীয় ঐক্য।"
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি নেত্রী কোন জাতীর 'জাতীয় ঐক্য চাইলেন? 'দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক সাম্প্রদায়িক জাতীয়তার নাকি অসাম্প্রদায়িক বাঙালী জাতীয়তার।'
এই কারনেই বলছিলাম জাতীয় ঐক্য হওয়ার জন্য আহব্বান করা হয়নি,এই আহব্বান ষড়যন্ত্রের আহব্বান।এই আহব্বান ষড়যন্ত্রীদের মেধা থেকে বের হওয়া সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রান দেয়ার জাতীয় ঐক্যের আহব্বান।
বিধ্বস্ত বিএনপি অগনীতবার চেষ্টার পরও যখন রাজপথে আসতে পারেনি-ষড়যন্ত্রীদের মিলনও ঘটেনি। দীর্ঘ চেষ্টার পর গুলশান হামলা তাঁদের ষড়যন্ত্রকে সফল করার সুযোগ দিয়েছে।
এই ষড়যন্ত্রে জড়িত বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের রচয়িতা দাবিদার ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবন্ধুর স্নেহতুল্য, পুত্রতুল্য কাদের সিদ্দিকি সাহেব, অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার সমাজতন্ত্রের বাংলাদেশী প্রবক্তা মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম গং এবং তদীয় বুদ্ধির জাহাজ সমতুল্য গভীর রাতের টকশো বুদ্ধিজীবিগন।
উল্লেখিত ব্যাক্তিগন এবং তাঁদের সংগঠনকে বিশদলীয় জোটের অন্তভুক্ত করার মহাপরিকল্পনার অংশই হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের আহব্বান।এতে যদিও দীর্ঘদিনের পরিক্ষীত সমমনা বন্ধু জামায়াতকে কিছু সময়ের জন্য ভল্টে রাখার প্রয়োজন হয়, তাতেও রাজী উভয় দল এবং তাঁদের নেতাগন।বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করার সুত্র ধরেই জামায়াত উক্ত প্রস্তাব বিশদলের নেত্রীর উপর ছেড়ে দিয়েছেন,আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে।
পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা-ক্যুয়ের ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে কবর দেয়া যে বিতর্ক ফিরিয়ে এনেছিল মেজর জিয়া। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা বিতর্ককে কবর দেয়ার জন্য জাতির জনকের কন্যা একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছেন। ঠিক চুড়ান্ত সফলতার আগেই সাম্প্রদায়িকতার প্রভুর পায়ে পানি ঢেলে প্রান ফিরিয়ে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হলেন কথিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলখেল্ল্যা পরিহীত কিছু বেঈমান কুলাংগার।
এই চক্রান্তের সুত্রপাত হয়েছিল বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল থেকে। শেষ দিন তিনি দেশের বিশিষ্টজনদের প্রয়োজনে সরকারের অংশিদারিত্ব দেবেন ঘোষনা করেছিলেন।বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে প্রেসিডেন্ট করার ওয়াদাও করেছিলেন ভারতের প্রধান মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে। মুলত: তাঁদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভুলের কারনে তাঁদের দল বিপযস্তায় পড়ে রাজপথ, নির্বাচন থেকে চিটকে পড়েছে।, তাঁদেরকে আবার রাজপথে আনার ঠিকাদারী গ্রহন করেছেন আমাদের দেশের তথাকথিত ভোটবিহীন হাই- প্রোফাইল রাজনীতিবীদগন। যাদের জনসমর্থন. `০০১ পার্সেন্ট আছে কিনা সন্দেহ। তবে তাঁদের বিএনপিকে রাজপথে আনার ক্ষমতা অবশ্যই আছে, অস্বিকার করিনা। জাতি হিসেবে এখানেই আমাদের শংকরতার প্রমান মিলে।
এই বেঈমানের দল কতবড় বিপদ বাংলাদেশের মাথার উপর আবার তুলে দিতে উদ্যত হয়েছে জাতির বিশিষ্টজনেরা হয়ত অনেকে লক্ষও করতে পারেননি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে যতবেশি বাড়ছে পবিত্র ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা, ততই ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্য শব্দটির ব্যবহার।পাকিস্তানি শাষকেরাও শব্দটির বারংবার ব্যবহার করেছেন।
ষড়যন্ত্রীদের জাতীয় ঐক্যের প্রধান ভিত্তি হলো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে নীজ স্বার্থ চরিতার্থ করা। চার দলীয় জোট খমতায় থাকাকালে সাম্প্রদায়িক গোষ্টির ষড়যন্ত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ভারতের সেভেন সিস্টারের বিচ্ছিন্নবাদী তৎপরতাকে সাম্প্রদায়িক গোষ্টি ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে বাংলাদেশের মাটিতে তাঁদের অবস্থানের সুযোগ দেয়া। তার পরিণতি চট্রগ্রাম বন্দরে ধৃত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনা।
সর্বশেষ উৎকন্টার বিষয়টি হচ্ছে- বিএনপি নেত্রী বাংলাদেশের বর্তমানের উগ্র জঙ্গি তৎপরতাকে-ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়ার চেষ্টা। এই চক্রান্তের পরিণতি হতে পারে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিপন্নতা। যারা এই বিপদ বাড়িয়ে চলার অবস্থান ও নীতি নিয়ে পূর্বাপর অগ্রসর হচ্ছে, তাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির হতে পারে না, হবে না।
বস্তুতপক্ষে যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল ৬দফা ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে,সেই চেতনায় সব মহল ফিরে এলে জাতীয় ঐক্য হতে আপত্তি থাকার কথা নয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে জাতীয় সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফিরে আসতে পারে। যদি জাতীয়ভাবে সবাই বাংলাদেশের জন্মলগ্নের অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে মেনে নিতে পারে। জাতির জম্মের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যদি জাতীয় ঐক্য গড়া হয়, তবে তা হবে জাতির আত্মহননেরই নামান্তর।
অখন্ড পাকিস্তানের শাষনতন্ত্র রচনাকল্পে বহুবার চেষ্টা করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলীর মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার, কিন্তু হয়নি।৬৫সালের ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধকে সামনে রেখে পাকিস্তানের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমাঝোতার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।সব দল মিলে বিবৃতিতে স্বাক্ষরও করেছিল। পরবর্তিতে দেখা গেছে সেই জাতীয় ঐক্য মরিচিকায় পরিনত হয়েছে।মাত্র পাঁছ বছরের মাথায় নতুন জাতি সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের মধ্য দিয়ে।
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র-উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য আমাদের জাতির জন্য একান্ত প্রয়োজন ছিল। জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য বিদ্যমান বাস্তবতায় কোন অবস্থায় তা সম্ভব নয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেমনি ভাবে ৬ দফাকে তৃনমুল থেকে সংগঠিত করে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অনিবায্যতায় জাতিকে ঠেলে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি ভাবে তাঁর জৈষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাও জঙ্গীবাদ রোধে তৃণমূল অর্থাৎ ইউনিয়ন পয্যায় থেকে জঙ্গীবিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বস্তরের জনগনকে নিয়ে কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। জঙ্গীরোধ করে উন্নয়ন অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস গ্রহন করেছেন।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী মুলধারার রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে যথাপোযুক্ত সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পেরেছেন জাতির জনকের কন্যা। এটাই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল এবং তাঁর নেতার দায়িত্ব এবং কর্তব্য ছিল। তিনি তাই করেছেন।
সরকারি দলের অন্যান্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ঘোষনার মত প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষনাও যদি শুধু ঘোষনায় সীমাবদ্ধ রাখেন আওয়ামী নেতারা, তাহলে জাতীয় জীবনে আবারও নেমে আসবে ঘোর অন্ধকারের অমানিশা। জেলা উপজেলা পয্যায়ের নেতাদের মনে রাখতে হবে চলমান ষড়যন্ত্র পুর্বের ষড়যন্ত্রের চাইতে চারিত্রিক বৈশিষ্ঠগত দিক থেকে একেবারেই ভিন্ন। পুর্বেকার ষড়যন্ত্র গুলী ছিল বলপ্রয়োগে ক্ষমতা দখল করার নিমিত্তে পরিবেশ সৃষ্টি করার অপকৌশল। এবারকার ষড়যন্ত্রের রুপ হচ্ছে মেধার ভিত্তিতে রাজপথে, রাজনীতিতে, নির্বাচনে ফিরে আসার কৌশল। জাতীয়তাবাদের দ্বান্ধিকতাকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করা। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থই হচ্ছে জঙ্গী উত্থানকে ত্বরান্বিত করা। জঙ্গী উত্থান নিশ্চিত হওয়ার অর্থই হচ্ছে অকাতরে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিস্বাসী লেখক সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাদের জীবনহানী, সম্পদ বিনষ্ট।দেশ ও জাতিকে নিয়ে যাওয়া অন্ধকার যুগের পাকিস্তানী ধারায়।
পরিশেষে বলতে চাই, পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ দু:খ্যকে ভুলে গিয়ে জাতির এই চরম সংকট কালে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দগতভাবে জনগনের দ্বারে দ্বারে গিয়ে জঙ্গী উত্থানের কুফল সম্পর্কে বলতে হবে। সমাজের সকলকে জঙ্গীরোধে সামিল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।এরই মধ্যে যে সমস্ত নেতৃবর্গ দল ও জনগনের উপর প্রভুত্ব কায়েম করেছেন, তাঁরাও প্রভুত্ববাদ ভুলে জনগনের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রভুত্ববাদ, কতৃত্ববাদ গনতন্ত্রে বিজয়ী করতে পারেনা। জনগনই বিজয়ী করার একমাত্র মালিক। সুতারাং জঙ্গীবিরোধী এই গুরুত্বপুর্ণ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে জনগনের সঙ্গে মেশার বড় সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। দেশ, জাতি, জনগনের ক্ষতির পাল্লাভারী করবেন না।কারন আওয়ামী লীগ মেহনতি মানুষের প্রানের সংগঠন।
আওয়ামী লীগের তৃনমুলে জঙ্গীরোধের কায্যক্রমের সফলতার উপর নির্ভর করবে উল্লেখীত ষড়যন্ত্রীদের সফলতা বি-ফলতা। উল্লেখীত ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে জাতির জনকের কন্যার উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে সচল রাখতে পারলেই জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার আক্ষাংকা বাস্তবে রুপায়িত হবে।গড়ে উঠবে সুখী, সমৃদ্ধশালী, উন্নত, বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাজ, জাতি পাবে সমৃদ্ধ, উন্নত দেশ।
'জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু'
_____________________________________
জাতীয় ঐক্য বললেই তো আসবে জাতি প্রশ্নটি। পাকিস্তানের উম্মেসলগ্ন থেকে জাতি প্রশ্নে বিতর্ক শুরু হয়। বিতর্কের মুলকারিগর ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী (জিন্নাহ)। পুর্ব-পশ্চিমের বিশাল বাংলা ভাষাবাসিদের দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য মহান নেতা এ,কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী সহ প্রতিযসা বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দ ভঙ্গবঙ্গ প্রস্তাব উত্থাপন করে অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর, কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নার নেতৃত্বে হিন্দু এবং মসুলমান দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দুটি রাষ্ট্র কাঠামোর প্রাস্তাব উত্থাপন করেন।
"প্রস্তাবনার নাম দেয়া হয় " দ্বিজাতিতত্ব। "
বাঙ্গালীরা সেদিনও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার জাতীয়তাবাদ মেনে নিতে পারেননি। অবস্থার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে পাকিস্তানের জম্ম লাভ করে। বছর না ঘুরতেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের চেহারায় পুর্ব পাকিস্তানকে শোষন করার জন্য কলোনী হিসেবে পেতে ধর্মকেই হাতিয়ার করেছিল তাঁর প্রমান মেলে।১৯৪৭এ দেশভাগের পরের বছরই ১৯৪৮ ইং সালেই সরকারের নীতিনির্ধারক পয্যায় থেকে বলা হতে থাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হবে। অথছ বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে উর্দুতে কথা বলে মাত্র শতকরা সাত ভাগ মানুষ।বাংলায় কথা বলে শতকরা চাপ্পান্ন ভাগ মানুষ।পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেই সংখ্যা লগিষ্ট মানুষ তখন উর্দুতে কথা বলে।রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার আগেই শুরু হয় বাংলাকে খতনা পড়ানোর কাজ।একমাত্র বঙ্গোবসাগর ছাড়া আর কিছুই বাকি রাখেনি খতনাবিহীন।
তাঁর পরবর্তি ইতিহাস পাকিস্তানের পুর্বাংশে মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে গড়ে উঠে ভাষা আন্দোলন।ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের বাঙ্গালীরা মহৎ এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়, তাঁর ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা।
উক্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাবাসীদের মধ্যে গড়ে উঠে অসাম্প্রদায়িক ভাষাভিত্তিক বাঙালী জাতীয়তাবোধের চেতনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬দফা ঘোষিত হলে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে বাঙ্গালীদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য। সেই জাতীয় ঐক্যের পরিনতি লাভ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের। ঐক্যবদ্ধ জাতি দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী সসস্ত্র যুদ্ধে জয়লাভ করে "দ্বিজাতিতত্ব ভিত্তিক" সাম্প্রদায়িকতার কবর দিয়ে ভাষাভিত্তিক "অ-সাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ " প্রতিষ্ঠিত করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের অব্যবহিত পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান নতুন দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন।তিনি প্রথমেই দীর্ঘ সংগ্রাম,ত্যাগ, সর্বপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সম্মান রেখে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের শাষনতন্ত্রে গনতন্ত্র, শোষনহীন সমাজ কায়েমের লক্ষে 'সমাজতন্ত্র' ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে' রাষ্ট্রের মুলভিত্তি ধরে অপরিবর্তনীয়, অমোচনীয়কারে প্রস্তাবনার শীর্ষে ঠাঁই দেন।
বাঙ্গালী জাতী , ত্যাগ, সংগ্রামের, সাগরসম রক্ত, প্রায় পৌঁনে পাছ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনীময়ে অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় স্বস্থিবোধ করে এবং সহমর্মীতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরে নীজেদেরকে বীরের জাতী হিসেবে অবিহীত করে।
এবার বর্তমানের দেশব্যাপি আলোচনার বিষয় বস্তুতে ফিরে আসি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অখন্ড পাকিস্তানের দীর্ঘ তেইশ বছরের সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষার ফসল অসাম্প্রদায়িক বাঙালী জাতীয়তাবাদ। অন্যদিকে শোষন বঞ্চনা আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উৎপত্তি ভুয়া ধর্মীয় চেতনায় বিশ্বাসী সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতিতত্ব ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ।
"জাতীয় ঐক্য কি হতে পারে?"
মুলকথা হল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্য সংগঠিত হওয়ার জন্য এই আহব্বান জানায়নি।একাধিক দলের মধ্যে সমাঝোতা হলেই জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে ধারানাটা নিতান্তই ভুল।আবার একদলের ডাকেও জাতীয় ঐক্য হয়না এই ধারনাটিও ভুল।বহুদলের মিলনে জোটবদ্ধতার উদাহরন আছে-জাতীয় ঐক্যের কোন উদাহরন নেই। একদলের ডাকে জাতীয় ঐক্য হতে পারে প্রকৃষ্ট উদাহরন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবের--
"৬দফা কেন্দ্রিক শিষাঢালাই জাতীয় ঐক্য।"
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি নেত্রী কোন জাতীর 'জাতীয় ঐক্য চাইলেন? 'দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক সাম্প্রদায়িক জাতীয়তার নাকি অসাম্প্রদায়িক বাঙালী জাতীয়তার।'
এই কারনেই বলছিলাম জাতীয় ঐক্য হওয়ার জন্য আহব্বান করা হয়নি,এই আহব্বান ষড়যন্ত্রের আহব্বান।এই আহব্বান ষড়যন্ত্রীদের মেধা থেকে বের হওয়া সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রান দেয়ার জাতীয় ঐক্যের আহব্বান।
বিধ্বস্ত বিএনপি অগনীতবার চেষ্টার পরও যখন রাজপথে আসতে পারেনি-ষড়যন্ত্রীদের মিলনও ঘটেনি। দীর্ঘ চেষ্টার পর গুলশান হামলা তাঁদের ষড়যন্ত্রকে সফল করার সুযোগ দিয়েছে।
এই ষড়যন্ত্রে জড়িত বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের রচয়িতা দাবিদার ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবন্ধুর স্নেহতুল্য, পুত্রতুল্য কাদের সিদ্দিকি সাহেব, অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার সমাজতন্ত্রের বাংলাদেশী প্রবক্তা মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম গং এবং তদীয় বুদ্ধির জাহাজ সমতুল্য গভীর রাতের টকশো বুদ্ধিজীবিগন।
উল্লেখিত ব্যাক্তিগন এবং তাঁদের সংগঠনকে বিশদলীয় জোটের অন্তভুক্ত করার মহাপরিকল্পনার অংশই হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের আহব্বান।এতে যদিও দীর্ঘদিনের পরিক্ষীত সমমনা বন্ধু জামায়াতকে কিছু সময়ের জন্য ভল্টে রাখার প্রয়োজন হয়, তাতেও রাজী উভয় দল এবং তাঁদের নেতাগন।বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করার সুত্র ধরেই জামায়াত উক্ত প্রস্তাব বিশদলের নেত্রীর উপর ছেড়ে দিয়েছেন,আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে।
পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা-ক্যুয়ের ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে কবর দেয়া যে বিতর্ক ফিরিয়ে এনেছিল মেজর জিয়া। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা বিতর্ককে কবর দেয়ার জন্য জাতির জনকের কন্যা একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছেন। ঠিক চুড়ান্ত সফলতার আগেই সাম্প্রদায়িকতার প্রভুর পায়ে পানি ঢেলে প্রান ফিরিয়ে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হলেন কথিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলখেল্ল্যা পরিহীত কিছু বেঈমান কুলাংগার।
এই চক্রান্তের সুত্রপাত হয়েছিল বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল থেকে। শেষ দিন তিনি দেশের বিশিষ্টজনদের প্রয়োজনে সরকারের অংশিদারিত্ব দেবেন ঘোষনা করেছিলেন।বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে প্রেসিডেন্ট করার ওয়াদাও করেছিলেন ভারতের প্রধান মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে। মুলত: তাঁদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভুলের কারনে তাঁদের দল বিপযস্তায় পড়ে রাজপথ, নির্বাচন থেকে চিটকে পড়েছে।, তাঁদেরকে আবার রাজপথে আনার ঠিকাদারী গ্রহন করেছেন আমাদের দেশের তথাকথিত ভোটবিহীন হাই- প্রোফাইল রাজনীতিবীদগন। যাদের জনসমর্থন. `০০১ পার্সেন্ট আছে কিনা সন্দেহ। তবে তাঁদের বিএনপিকে রাজপথে আনার ক্ষমতা অবশ্যই আছে, অস্বিকার করিনা। জাতি হিসেবে এখানেই আমাদের শংকরতার প্রমান মিলে।
এই বেঈমানের দল কতবড় বিপদ বাংলাদেশের মাথার উপর আবার তুলে দিতে উদ্যত হয়েছে জাতির বিশিষ্টজনেরা হয়ত অনেকে লক্ষও করতে পারেননি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে যতবেশি বাড়ছে পবিত্র ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা, ততই ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্য শব্দটির ব্যবহার।পাকিস্তানি শাষকেরাও শব্দটির বারংবার ব্যবহার করেছেন।
ষড়যন্ত্রীদের জাতীয় ঐক্যের প্রধান ভিত্তি হলো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে নীজ স্বার্থ চরিতার্থ করা। চার দলীয় জোট খমতায় থাকাকালে সাম্প্রদায়িক গোষ্টির ষড়যন্ত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ভারতের সেভেন সিস্টারের বিচ্ছিন্নবাদী তৎপরতাকে সাম্প্রদায়িক গোষ্টি ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে বাংলাদেশের মাটিতে তাঁদের অবস্থানের সুযোগ দেয়া। তার পরিণতি চট্রগ্রাম বন্দরে ধৃত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনা।
সর্বশেষ উৎকন্টার বিষয়টি হচ্ছে- বিএনপি নেত্রী বাংলাদেশের বর্তমানের উগ্র জঙ্গি তৎপরতাকে-ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়ার চেষ্টা। এই চক্রান্তের পরিণতি হতে পারে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিপন্নতা। যারা এই বিপদ বাড়িয়ে চলার অবস্থান ও নীতি নিয়ে পূর্বাপর অগ্রসর হচ্ছে, তাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির হতে পারে না, হবে না।
বস্তুতপক্ষে যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল ৬দফা ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে,সেই চেতনায় সব মহল ফিরে এলে জাতীয় ঐক্য হতে আপত্তি থাকার কথা নয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে জাতীয় সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফিরে আসতে পারে। যদি জাতীয়ভাবে সবাই বাংলাদেশের জন্মলগ্নের অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে মেনে নিতে পারে। জাতির জম্মের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যদি জাতীয় ঐক্য গড়া হয়, তবে তা হবে জাতির আত্মহননেরই নামান্তর।
অখন্ড পাকিস্তানের শাষনতন্ত্র রচনাকল্পে বহুবার চেষ্টা করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলীর মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার, কিন্তু হয়নি।৬৫সালের ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধকে সামনে রেখে পাকিস্তানের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমাঝোতার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।সব দল মিলে বিবৃতিতে স্বাক্ষরও করেছিল। পরবর্তিতে দেখা গেছে সেই জাতীয় ঐক্য মরিচিকায় পরিনত হয়েছে।মাত্র পাঁছ বছরের মাথায় নতুন জাতি সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের মধ্য দিয়ে।
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র-উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য আমাদের জাতির জন্য একান্ত প্রয়োজন ছিল। জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য বিদ্যমান বাস্তবতায় কোন অবস্থায় তা সম্ভব নয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেমনি ভাবে ৬ দফাকে তৃনমুল থেকে সংগঠিত করে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অনিবায্যতায় জাতিকে ঠেলে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি ভাবে তাঁর জৈষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাও জঙ্গীবাদ রোধে তৃণমূল অর্থাৎ ইউনিয়ন পয্যায় থেকে জঙ্গীবিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বস্তরের জনগনকে নিয়ে কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। জঙ্গীরোধ করে উন্নয়ন অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস গ্রহন করেছেন।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী মুলধারার রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে যথাপোযুক্ত সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পেরেছেন জাতির জনকের কন্যা। এটাই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল এবং তাঁর নেতার দায়িত্ব এবং কর্তব্য ছিল। তিনি তাই করেছেন।
সরকারি দলের অন্যান্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ঘোষনার মত প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষনাও যদি শুধু ঘোষনায় সীমাবদ্ধ রাখেন আওয়ামী নেতারা, তাহলে জাতীয় জীবনে আবারও নেমে আসবে ঘোর অন্ধকারের অমানিশা। জেলা উপজেলা পয্যায়ের নেতাদের মনে রাখতে হবে চলমান ষড়যন্ত্র পুর্বের ষড়যন্ত্রের চাইতে চারিত্রিক বৈশিষ্ঠগত দিক থেকে একেবারেই ভিন্ন। পুর্বেকার ষড়যন্ত্র গুলী ছিল বলপ্রয়োগে ক্ষমতা দখল করার নিমিত্তে পরিবেশ সৃষ্টি করার অপকৌশল। এবারকার ষড়যন্ত্রের রুপ হচ্ছে মেধার ভিত্তিতে রাজপথে, রাজনীতিতে, নির্বাচনে ফিরে আসার কৌশল। জাতীয়তাবাদের দ্বান্ধিকতাকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করা। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থই হচ্ছে জঙ্গী উত্থানকে ত্বরান্বিত করা। জঙ্গী উত্থান নিশ্চিত হওয়ার অর্থই হচ্ছে অকাতরে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিস্বাসী লেখক সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাদের জীবনহানী, সম্পদ বিনষ্ট।দেশ ও জাতিকে নিয়ে যাওয়া অন্ধকার যুগের পাকিস্তানী ধারায়।
পরিশেষে বলতে চাই, পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ দু:খ্যকে ভুলে গিয়ে জাতির এই চরম সংকট কালে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দগতভাবে জনগনের দ্বারে দ্বারে গিয়ে জঙ্গী উত্থানের কুফল সম্পর্কে বলতে হবে। সমাজের সকলকে জঙ্গীরোধে সামিল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।এরই মধ্যে যে সমস্ত নেতৃবর্গ দল ও জনগনের উপর প্রভুত্ব কায়েম করেছেন, তাঁরাও প্রভুত্ববাদ ভুলে জনগনের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রভুত্ববাদ, কতৃত্ববাদ গনতন্ত্রে বিজয়ী করতে পারেনা। জনগনই বিজয়ী করার একমাত্র মালিক। সুতারাং জঙ্গীবিরোধী এই গুরুত্বপুর্ণ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে জনগনের সঙ্গে মেশার বড় সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। দেশ, জাতি, জনগনের ক্ষতির পাল্লাভারী করবেন না।কারন আওয়ামী লীগ মেহনতি মানুষের প্রানের সংগঠন।
আওয়ামী লীগের তৃনমুলে জঙ্গীরোধের কায্যক্রমের সফলতার উপর নির্ভর করবে উল্লেখীত ষড়যন্ত্রীদের সফলতা বি-ফলতা। উল্লেখীত ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে জাতির জনকের কন্যার উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে সচল রাখতে পারলেই জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার আক্ষাংকা বাস্তবে রুপায়িত হবে।গড়ে উঠবে সুখী, সমৃদ্ধশালী, উন্নত, বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাজ, জাতি পাবে সমৃদ্ধ, উন্নত দেশ।
'জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু'
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন