জঙ্গী সংকট সহ অন্য সকল সমস্যা সমাধানে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার পুর্ণ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নাই।

    জঙ্গী সংকট সহ সকল সমস্যা সমাধানে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার পুর্ণ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নাই।
______________________________________________


    বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে ব-দ্বীপে আমাদের এই বসতি গড়ে উঠেছে প্রায় ৪ হাজার বছর আগে। প্রাচীন জনপদ হলেও সভ্যতা তেমন বিকশিত হতে পারেনি এই জনপদে। তবে একটি স্বতন্ত্র  বৈশিষ্টে অত্র অঞ্চলের কৃষ্টিও সংস্কৃতি টিকে রয়েছে যুগে যুগে। প্রকৃত অর্থে কোনো পর্যায়েই কখনই সম্পূর্ণ স্বাধীন ও একতাবদ্ধভাবে আপন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারেনি এ জনপদ। তবে ব্যতিক্রমী ধ্যান-ধারণা ও বৈশিষ্ট্যের কারণে কখনো কারো সম্পূর্ণ অধীনতাও স্বীকার করেনি এ জনপদের মানুষ। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় অনেক বিদ্রোহের জন্ম হয়েছে এ অঞ্চলে। প্রকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এ অঞ্চল বারবার লুণ্ঠিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন জাতি গোষ্টির দ্বারা। শেষাবদি ইংরেজ বেনিয়া গোষ্ঠীর দ্বারা শাষিত ও শোষিত হয়েছে প্রায় দুই শত বছরের কাছাকাছি। ফলে স্থানীয় ও বিদেশি শাসক দ্বারা শাসিত হওয়ার কারনে মজ্জাগতভাবে এ অঞ্চলের মানুষ ভিন্ন জাতি গোষ্টির সংস্কৃতি ও কৃষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখা যায় অতি সহজে।

খ্রিস্টীয় চতুর্থ হতে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত রাজবংশ দীর্ঘ সময় শাষন করে অত্র অঞ্চল।  পরবর্তীতে খুব কম সময়ের জন্য শশাঙ্ক নামের একজন স্থানীয় রাজা ক্ষমতা দখল করে নিতে পেরেছিল। পরবর্তী প্রায় একশ বছরের অরাজকতা, বিশৃংখলা, অধ:পতন, শাষনকর্তাহীন অবস্থায় থাকতে হয়েছিল এই অঞ্চল।শেষতক অরাজক পরিস্থীতির সুযোগ নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী 'পাল রাজবংশ' প্রায় চারশ বছর শাসন করেছে অত্র অঞ্চল।

   বৌদ্ধ শাষনকে পরাজিত করে 'সেন রাজবংশ' ক্ষমতায় আসে। সেনদের শাষনের সময় বিচ্ছিন্নভাবে আরবের মুসলিম সেনাপতিরা বার বার হানা দিয়েছে অত্র অঞ্চলে। যাওয়ার সময় লুটপাট করে যাহাই পেয়েছে হাতের কাছে তাই নিয়ে গেছে।স্থায়ী শাষনের জন্য আক্রমন রচনা করেনি কোন অধিপতি-বাংলার সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লুটপাট করার জন্য রচিত হত এই সমস্ত আক্রমন।পরবর্তিতে দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে চুড়ান্ত  সামরিক অভিযান চালায় আরবীয়রা এবং রাজা 'বল্লাল সেনকে' পরাজিত করে যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে মুসলিম শাসকরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

    আরবীয় অধিপতি 'বাদশাহী' শাষন শোষন চলে দ্বাদশ শতকের শেষ দিক থেকে ষোড়ষ শতকের প্রথমার্ধ পয্যন্ত। আরবীয় মুসলিম শাষকদের 'বাদশাহী সুখে' গা ভাসিয়ে দেয়ার দুর্বলতার সুযোগে মোগলেরা হানা দেয় অত্র অঞ্চলে। মোগলীয়রা আরবদের পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা, অতিমাত্রায় আরাম আয়েসের সুযোগে আরবের মুসলিম শাষকদের চরমভাবে যুদ্ধে  পরাজিত করে  শাষনভার নিয়ে যায় অত্র অঞ্চলের এই ষোড়ষ শতকেই।

     ষোড়শ শতকে মোগল শাসকদের হাত থেকে ষড়যন্ত্র, বেঈমানীর কারনে 'ব্যবসা করার অনুমতি প্রাপ্ত' ইংরেজ বেনীয়াদের হাতে ক্ষমতা চলে যায় অত্র অঞ্চলের।মুলত: ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে নবাবের প্রধান সেনাপতি  মীর জাপর আলী খাঁ সহ অন্য আরো কতক পাইক পেয়াদার নবাব সিরাজের সংঙ্গে মিরজাপরী, বেঈমানীর কারনে অনায়াসে ইংরেজেরা  যুদ্ধ জয় করে বৃটিশ রাজ কায়েম করে।

বৃটিশ রাজপরিবারের নিয়োগ দেয়া লর্ডদের মাধ্যমে বাংলার শাসনকায্য চলতে থাকে। দীর্ঘ প্রায় দুইশত বছর ব্রিটিশ শাসনের পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বাস্তবতায় এই অঞ্চল ত্যাগ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ইংরেজ বেনীয়া শাষকদের। তখনি অত্র অঞ্চলে দানা বেঁধে উঠে স্ব-শাষনের নিমিত্তে জাতিগত স্বাধীনতার। বাংলা ভাষাবাসি অধ্যুষিত বিশাল বাংলাকে পুর্ব ও পশ্চিমে দুইভাগ করে বাঙ্গালীরা স্বাধীনতা পাওয়ার আক্ষাংকায়  গড়ে তোলে 'বঙ্গভঙ্গ' আন্দোলন। সর্বস্তরে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন গৃহিত হলে কুচক্রি মহল অকস্মাৎ ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে। ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গকে পাস কাটিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হিন্দু মুসলিম দুইগোষ্ট্রির দুইধর্ম ভিত্তিক বিভাজন সৃষ্টি করে। মুলত: অত্র অঞ্চলকে পশ্চিমাদের করতলগত করার হীন উদ্দেশ্যে চতুর শিয়া ধর্মালম্বি পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ "দ্বিজাতিতত্ত্ব" নামে ধর্মভিত্তিক এই তত্ব হাজির করে। ধর্মীয় সুরাপানে বেঁহুস বাঙ্গলা ভাষাবাসি মসুলমানদের নিয়ন্ত্রন করে  শেষ পয্যন্ত ষড়যন্ত্রকারিরাই সফল হয়। 'দ্বিজাতি তত্বের'  ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দুই হাজার মাইলের ব্যবধানে দুই অঞ্চল একিভুত করে স্বাধীনতা লাভ করে। ব-দ্বিপ অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে এবং পশ্চিমাঞ্চল পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। দুই অংশ সম্মিলীত ভাবে স্বাধীন 'পাকিস্তান' রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

     "উল্লেখীত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় চার হাজার বছরের ইতিহাসে 'কোন অংশেই কোন বাঙ্গালী মুসলিম বা হিন্দু সম্মিলিত বা পৃথকভাবে নিদেন পক্ষে অত্র অঞ্চলে বসবাসরত: অন্য জাতিগোষ্টির শাষন চোখে পড়েনা। অত্র অঞ্চলে দীর্ঘ বসবাসের কারনে অঞ্চল্প্রীতি জাগরুক আছে (যেকোন জাতি গোষ্টির হোক)তেমন ব্যাক্তি বা গোষ্টি অত্র অঞ্চলের অধিবাসির পক্ষ থেকে শাষক শ্রেনী সৃষ্ট্রি হয়ে শাষন করার দৃশ্যমান কোন উদাহরন নেই।"

     আলোচনায় স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায় যে--বঙ্গবসাগর বিদৌত অত্র ব-দ্বিপের জনগন অদৌ কখনই স্বাধীন ছিলনা এবং স্বাধীনতা কি বস্তু জানেনা। সুতারাং স্বাধীনতার মর্মবাণী বুঝার কথাও নয়। বিভিন্ন জাতি গোষ্ট্রির তাঁবেদারি করার কারনে মজ্জাগত ভাবে দাসত্বের সুপ্তবাসনা লুকায়িত রয়েছে প্রত্যেক নাগরীকের চারিত্রিক বৈশিষ্টে। সেই বৈশিষ্টই টেনে নিয়ে যায় তাঁদের মনের অজান্তে ভীন দেশী কোন আদর্শ বা মতবাদে অথবা ব্যাক্তি বা জাতির গুনগানে। চোখের সামনে স্বর্নের খনি পড়ে আছে সেই দিকে আদৌ খেয়াল করার প্রয়োজন আছে--তাও মনে করেনা।" কথাটি অকাট্য হলেও বাস্তব-।"

      হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্ট্রি করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও অত্র অঞ্চলের মানুষ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঔপনিবেশিক পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গন্য করা শুরু করে। প্রথমেই তারা আঘাত হানে বাঙালির মাতৃভাষার ওপর। ভাষা রক্ষার আন্দোলন মুলত: সংস্কৃতিক কৃষ্টিগত আন্দোলন। তাই ভাষা আন্দোলনকে বলা হয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

'ভাষা আন্দোলন যদিও 'অ-রাজনৈতিক' সাংস্কৃতিক আন্দোলন হয় তথাপি এই আন্দোলনই বাঙ্গালীদের চোখ-কান খুলে দিয়েছিল। বাঙ্গালী হিন্দু মুসলিম নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন পশ্চিমাদের সাথে এই অঞ্চলের বসবাস সম্ভব হবেনা। এই কারনেই বলা হয়  ১৯৫২ সালে সংঘটিত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়ছিল।'

   ভাষা আন্দোলনে হিন্দু মুসলিম বাংলা ভাষাবাসী সকল শ্রেনী পেশার মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহন করেছিল। একতাবদ্ধ অংশগ্রহন করার কারন 'বাংলাভাষা অত্র অঞ্চলের মুসলিম বাঙ্গালীদের যেমন মাতৃভাষা তেমনি বাঙ্গালী হিন্দুদেরও মাতৃভাষা।' ধর্মভিত্তিক তত্ব 'দ্বিজাতিতত্বের' মাধ্যমে হিন্দু মুসলিম বৈরীতা সৃষ্টি করে কুচক্রি মহল একই সংস্কৃতি, কৃষ্টি লালনকারি বাঙ্গলা ভাষাবাসির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। শুধু তাই নয়,  "উদ্দেশ্যমুলক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে সেই বিভাজনকে একে অপরের প্রতি 'প্রচন্ড ঘৃনার'   বীজ এ রুপান্তরীত করেছিল। "পাকিস্তানের২৩ বছর  শাষনে 'উদ্দেশ্যমুলক সীমান্তযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হিন্দুধর্মালম্বিদের বিতাড়নের উদ্দেশ্যে ধর্ম্ম পালনে অঘোষিত নিষেদাজ্ঞা, সম্পদ হস্তান্তরে ইউনিয়ন বোর্ডের নজরদারী আরোপ' করে বাঙালী মসুলমানদের মননে গেঁথে দিতে সক্ষম হয়েছে যে-- "হিন্দুদের জন্য 'হিন্দুস্থান' শুধু মসুলমানদের জন্য পাকিস্থান।"
 
    ধর্মীয় চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষে আবাসস্থলের যে বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছিল পাকি শাষকেরা- সেই বিভাজন রেখা কালক্রমে রুপ নিয়েছে 'পাকিস্তান-ভারত বিদ্বেসে।' বিদ্বেসের মাত্রা এতবেশী কায্যকর তাঁদের মননে--ভারতে বসবাসরত:  ত্রিশকোটি মসুলমানের জীবন ও সম্পদের  চিন্তাও মাথায় আসেনা। তাঁরা মনে করে পাকিস্তানের এগারকোটি মসুলমানই তাদের জাতভাই অন্যরা সব ভীন্নজাতি।

    ভাষা আন্দোলন সেই বিদ্বেস এবং বিভাজন রেখাকে অতিক্রম করে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা বোধের চেতনাকে ধীরে ধীরে প্রকট করে তোলে।ধীরে হলেও ধর্ম্মীয় বিভাজন লোপ পেয়ে বাংলা ভাষাবাসির একক  জাতীসত্বার উদ্ভব হতে থাকে। অত্র অঞ্চলের সংখ্যাধিক্য হিন্দু-মসুলমানের একই জীবনধারা, একই খাদ্যাভ্যাস, একই আচার-আচরন, একই ভাষা, একই সংস্কৃতি ও কৃষ্টি, একই পোষাক আসাক ব্যবহার করে।তাই প্রকৃতিগত ভাবেই ২৩ বছর আগের ভীন্ন জাতির শাষনকালে যে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যে  ভাবধারা বিরাজমান ছিল-সেই ভাবধারা ফিরে আসতে থাকে ক্রমান্বয়ে ফিরে আসতে থাকে।

    বাঙালী হিন্দু-মসুলমান আদিকাল থেকেই শান্তিতে বসবাসরত ছিল। চার হাজার বছরের ভীনদেশী শাষকদের ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তেমন কোন উদাহরন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে খোঁজে পাওয়া যায়না। পাকিদের সৃষ্ট দর্শন "দ্বিজাতি তত্ব" অত্র অঞ্চলে অশান্তির বীজ রোপন করে দিয়ে গেছে--তাঁদের তাঁবেদার এই দেশীয় দোষরেরা সেই বীজ ধর্মরক্ষার অজুহাতে কখনও ভারত বিরুধীতার অজুহাতে, কখনও ভারতে হিন্দু কতৃক মসুলমান নিয্যাতনের কাল্পনিক অজুহাতে আজও রক্ষনা বেক্ষন করছে--ধর্মীয় উম্মাদনায় পরিপুষ্টতা দিয়ে চলেছে।  

এদেশীয় হিন্দুদের যেমন সাংগঠনিক ভিত্তি আছে তেমনি ভারতে বসবাসরত: ত্রিশ কোটি মসুলমানেরও সাংগঠনিক ভিত্তি আছে।এদেশের হিন্দুদের সংগঠন যেমন আন্তজাতিক মহলে অত্যাচার নিয্যাতনের অভিযোগ উত্থাপন করে তেমনি ভারতের মসুলমানগন অদ্য পয্যন্ত সংখ্যাগুরু হিন্দু কতৃক নিয্যাতন- নিস্পেষনের কোন অভিযোগ আন্তজাতিক মহলে প্রকাশ করেছে তেমন কোন উদাহরন নেই। ভারতের ত্রিশকোটি মসুলমানের অভিযোগ না থাকলেও এদেশে তাঁদের উপলক্ষ করে একশ্রেনীর অশুভ শক্তি, জিন্নাহ  দর্শনের অনুসারি হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এই অত্যাচার নিয্যাতন যতটা না ধর্মরক্ষা তাঁর চেয়ে বেশী পাকিপ্রেম।ধর্মীয় উদ্দেশ্যেই যদি হ'ত তাহলে ভারতের ত্রিশকোটি ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের কথাও তাঁদের চিন্তা চেতনায় ধারন করত।
 
   বাঙ্গালীরা তাঁদের জাতিসত্বা বিকাসের লক্ষে যতবেশী সংঘটিত হতে থাকে ততবেশী অশুভ শক্তি পাকিশাষকেরা দিশেহারা হয়ে উঠে।পাকিস্তানের জুলুম নিয্যাতন, শোষন শাষন যতই তীব্রতর হতে থাকে  বাঙ্গালীর চেতনাবোধ ততই শানীত হতে থাকে। বাঙালী ফিরে যেতে থাকে তাঁর হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের চেতনায় গড়া বন্ধনের দিকে।
এই বাঙ্গালী চেতনাকে শানীত করার পিছনে বহু বাঙ্গালী মনিষী,জাতীয় নেতা, কবি সাহিত্যিক, আউল বাউলের ত্যাগ তিতিক্ষা,সংগ্রাম সাধনার ইতিহাস রয়েছে। অনেকের অবদান থাকলেও সকলকে ছাড়িয়ে যাঁর অবদানে জাতিসত্বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল,বাঙ্গালী তাঁর নীজের শাষন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অত্র ভুখন্ড সার্বভৌম ভুখন্ড হিসেবে জয় করতে পেরেছিল, তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। দীর্ঘ তেইশ বছরের সংগ্রাম সাধনায় তিনি জাতিকে "সাম্প্রদায়িক  ধর্ম্মান্ধ 'দ্বি-জাতি তত্বের' দর্শনের বিপরীতে ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গড়ে উঠা 'অসাম্প্রদায়িক ধর্ম নিরপেক্ষতার দর্শনে' ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন।"কুচক্রি মহল বাঙালী জাতীয়তা বোধের এই ঐক্যবদ্ধতাকে কোন অবস্থায় ধর্মীয় সুরাপান, ভারত বিদ্বেসী তকমা ব্যবহার করেও চিড় ধরাতে না পেরে অবশেষে ২৫শে মার্চ ১৯৭১ইং সালের কালরাতে সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়।

"শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ।বাঙালী জাতীয়তা বোধে উদ্ভোদ্ধ নিরস্ত্র বাঙ্গালী মহুর্তেই সসস্ত্র যোদ্ধায় রুপান্তরীত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশ্চিমা হায়নার বিরুদ্ধে। দীর্ঘ নয়মাস বাঙ্গালী পশ্চিমা শাষন শোষনের কবল হতে 'মুক্তির জন্য যুদ্ধ' অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অশুভ ধর্মান্ধ শক্তি এবং তাঁদের এদেশীয় দোষরদের চরমভাবে পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।"

স্বাধীন বাংলাদেশের শাষনভার গ্রহন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা ঐক্যবদ্ধতার আলোকে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে- বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা,গনতন্ত্র ও শোষন হীন সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষে সমাজতন্ত্রকে মুলভিত্তি গন্য করে সংবিধান রচনা করেন।যাহা সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম লিখিত সংবিধান হিসেবে বিশ্ববাসীর নিকট প্রসংশীত ও পরিচিতি লাভ করে।

 কুচক্রি অশুভ ধর্মান্ধ  মহল ধর্মনিরপেক্ষতাকে 'ধর্মহীনতা' শোষনহীন সমাজ কায়েমের লক্ষে সমাজতন্ত্রকে 'কমিউনিজম' বলে অপপ্রচারের সুযোগ গ্রহন করে।

সুপ্রীয় পাঠক বন্ধুরা, ধর্মান্ধমহলের অপপ্রচারের বিষয় সমুহকে ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু সামঞ্জস্যতা এবং কতটুকু বৈপরিত্ত আছে  এবার দেখে আসি।

আমাদের প্রীয় নবী করিম (স:) দুনিয়াতে প্রথম আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন,সেই রাষ্ট্র তিনি নিজে শাষন করেছেন,শাষনের জন্য প্রথম লিখিত শাষনতন্ত্র রচনা করেছেন। আরবে বসবাসরত সকল ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে নজীর রেখে গেছেন। মুলত: তখনকার অন্ধকার যুগে তিনি যে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং লিখিত সংবিধান রেখে গেছেন তাহা একমাত্র মহান আল্লাহ প্রদত্ত ঐশ্বরিক হুকুম ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। বর্তমানের যান্ত্রিক যুগেও যে শাষন তন্ত্র নির্ভুল অকাট্য রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল হিসেবে সর্বজাতির নিকট প্রসংশীত হচ্ছে। সেই শাষনতন্ত্রের প্রথম পরিচ্ছেদেই তিনি সব ধর্মের লোকদের নিয়ে জাতি গঠনের কথা বলেছেন কিনা আপনারা বিবেচনা করবেন।

 "আমি আপনাদের বিবেচনার জন্য 'উইকিপিডিয়া' থেকে 'ম'দীনা সনদের' মুল ধারা সমুহ নিম্নে হুবহু তুলে দিলাম। আমি কোন প্রকার মন্তব্য থেকে বিরত রইলাম"--


    সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ একটি জাতি গঠন করবে;--

যুদ্ধ বা হানাহানি শুরু হবার মতো তীব্র বিরোধ তৈরি হলে বিষয়টি আল্লাহ এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ন্যস্ত হবে;
কোন সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদীনা বা মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদের কোনরুপ সাহায্য-সহযোগীতা করতে পারবে না;
মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে, কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না;[৬][৭][৮]
মদিনার উপর যে কোন বহিরাক্রমণকে রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে এবং সেই আক্রমণ কে প্রতিরোধ করার জন্য সকল সম্প্রদায়কে এক জোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে;[৯]
অমুসলিমগণ মুসলিমদের ধর্মীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে না;[১০]
রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে;
অসহায় ও দূর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে;
সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদীনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে;
কোন লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে, তজ্জন্য অপরাধীর সম্প্রদায় কে দায়ী করা যাবে না;
মুসলমান, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরষ্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে;
রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ বিচারক;
মুহাম্মদ-এর অনুমতি ব্যতীত মদীনাবাসীগণ কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না;
মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।"

আপনাদের বিবেচ্য---
-----------------------
  "নবী করীম (স:) কতৃক রচিত সংবিধান কি বলে, রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি কি নির্দেশনার নজীর রেখে  গেছেন? তাঁর রচিত সংবিধান ধর্মভিত্তিক নাকি ধর্ম নিরেপেক্ষ? 'বিসমিল্লাহ' কোন ধারায় সংযোজন করেছিলেন?কোন ধারায় "রাষ্ট্র ধর্ম" ইসলাম অনুমোদন দিয়েছিলেন?

ইসলামকে আল্লহ রাব্বুল আলামীন পাঠিয়েছেন সমগ্র মানবব্জাতির কল্যানে সার্বজনীন ধর্ম হিসেবে। আমাদের ধর্মীয় নেতারা ইসলামকে শুধুমাত্র মসুলমানদের একক ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জীবন বাজী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। তারা কি আল্লহ এবং তাঁর রাসুলের নির্দেশীত পথকেও চেলেঞ্জ করতে চান?

   

            *জয়বাংলা    জয়বঙ্গবন্ধু*

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা