শেখ হাসিনা একটি নাম নয়--"একটি প্রতিষ্ঠান"।
শেখ হাসিনা একটি নাম নয়--- "একটি প্রতিষ্ঠান"
(রুহুল আমিন মজুমদার)
পাঠক ভাইদের নিশ্চয়ই স্মরণে থাকার কথা---শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরবর্তী বছরগুলো। বাংলাদেশ অস্থিতিশীল ধারায় প্রকাশ্য ও গোপন সামরিক শাসকদের দ্বারা শাসিত হচ্ছিল। সারা দেশ ছিল ঘোমট অন্ধকারে আবৃত। তখনকার অস্থির প্রেক্ষাপটের বিপরীত ধারায় ছিল জনগনের সুপ্ত বিপ্লবি শক্তি। জনগনের সুপ্ত বিপ্লবী শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সেই সময়ে শেখ হাসিনার ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বের শক্তি। হায়েনাদের গণতন্ত্রের কথা আমরা কেউ ভুলে যাইনি। ভুলে যাইনি বলেই সৃষ্টি হতে পেরেছে আজকের নতুন প্রেক্ষিতে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের।
শেখ হাসিনার সদা সত্য কথা বলার অবিচল দৃঢ়তা তাঁকে অপশাসকদের নিকট বিপজ্জনক করে তুলেছিল। পিতার বাসভবনে বন্দি করে রাখলেও শেখ হাসিনার উদ্যম, চেতনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিশাল দূর্গের মতো পৈত্রিক বাড়ি ও তার উত্তরাধিকারের মধ্যে আটক থাকলেও তাঁর বসবাস ছিল মুক্তির মধ্যে, যে মুক্তি হলো সাহসিকতার মুক্তি, গনতন্ত্রের মুক্তি। জাতির জনকের স্বাধীন, সার্বভৌম, আত্মনির্ভরশীল, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার সিকি শতাব্দী পর;তাঁর কন্যার হাতে ফিরে এসেছে গনতন্ত্র।গনতন্ত্র ফিরিয়ে এনে ক্ষনকাল অপেক্ষা না করে নতুন সংগ্রামে অবতীন্ন হলেন দেশরত্ম গনতন্ত্রের মানস কন্যা শেখ হাসিনা-' সেই সংগ্রাম হচ্ছে সরকারি বেসরকারি সর্বক্ষেত্রে গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দান।' গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন শুধু তাই নয়; একদা তলাবিহীন ঝুড়িকেও উপছে পড়ার পয্যায় নিয়ে পৌঁছিয়েছেন।'
বাংলাদেশে শুরুতে এক ডলার পরিমাণের বিদেশি মুদ্রা মজুদ ছিল না, সেই বাংলাদেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন (তিন হাজার ১০০ কোটি) ডলার। গত বছর বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩৪.২৪ বিলিয়ন ডলার। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এখন বাংলাদেশ নিজের অর্থেই বানাচ্ছে তার স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এরই মধ্যে সেতুর প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এই সেতুতে অর্থায়ন না করে একদিক থেকে বাংলাদেশের উপকারই করেছে। এই দেশের মানুষ এখন মাথা উঁচু করে বলে--" আমরা বাঙ্গালীরা দেশের জন্য যেমন জীবন দিতে পারি, নিজের অর্থে পদ্মা সেতুও বানাতে পারি। এক বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট পদ্মা সেতুতে ঋন দেননি,পরবর্তী আরেকজন বিশ্বব্যাংকের কর্তাব্যক্তি দেখে গেলেন আমাদের অর্থে নির্মীত পদ্মাসেতু। দারিদ্রতা মোচন কি যাদুরকাঠির চোঁয়ায় শেকড় উপড়ে ফেলার দ্বারপ্রান্তে নিতে পেরেছেন শেখ হাসিনা-তাও বিস্তিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখে গেলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই গ্রামের মেয়েরা এখন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় ; কারো কারো নিকট রয়েছে আবার মোটর সাইকেলও।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ একসময় বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় না এলে খালি গায়ে রাস্তায় বের হতো, হাট বাজারে যেতে হ'ত। বর্তমানে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী দেশ। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের পরিধানে হয়তো তেমন একটা পোশাকই ছিল। বর্তমান সময়ে গায়ে জামা নেই এমন মানুষ খুঁজতে হলে হারিকেন লাগবে,তাও তো যাদুঘরে। হ্যাঁ-ইলেকট্রোনিক্স লাইট জ্বালিয়ে দেখতে হবে। এই শীতে এমন একজনকে পাওয়া যাবেনা ; যার গাঁয়ে অন্তত: একটি শীতবস্ত্র পরিহীত নেই। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়টি হচ্ছে- " সারা গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সারাদিনে পেটপুরে একবেলা ভাত না খাওয়া মানুষ পেতে কষ্ট হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের শুরুতে সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই ছিল হতদরিদ্র। কয়েক দিন আগে বিশ্বব্যাংক সবাইকে ডেকে জানিয়ে দিল, ১৬ কোটি মানুষের দেশে দরিদ্রের সংখ্যা (১.৯০ ডলার দৈনিক আয়) বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ১২.৯ শতাংশ। হতদরিদ্রের সংখ্যা ৭ শতাংশ হবে। ব্যাংকের পণ্ডিতজনরা আরো বলছেন, গত তিন দশকে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন তাক লাগানোর মতো, যদিও বিভিন্ন সময় সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংক আরো জানাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম। দুই বছর আগে তার অবস্থান ছিল ৫৮তম। বিশ্ব অর্থনীতির নানা ঝড়ঝাপটা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হার ছয়ের ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই মুহূর্তে তা ৭ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। সব ঠিক থাকলে বছর শেষে ৭.২৫ পর্যন্ত উঠতে পারে।
এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশি প্রাপ্তবয়স্কদের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮শ কোটি টাকা। মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ১০৬৯ ডলার বা ৮৩ হাজার টাকার বেশি। বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা ও তাদের সম্পদের তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে--"সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট।"
বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ হলো ১৪০৪ মার্কিন ডলার। সবমিলিয়ে বাংলাদেশিদের সম্পদের আকার ২৫৮ বিলিয়ন ডলার। যা বিশ্ব সম্পদের শুন্য দশমিক ১ভাগ। ২০০০ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্কদের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গতবছর ২০১৫ সালে বাংলাদেশিদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৩৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের প্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাকার অংকে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮শ কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে এক বছরের ব্যবধানে। চলতি বছরের মধ্য সময়ের তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে শুন্য দশমিক ৮ ভাগ। এর পরেও বাংলাদেশিদের এ সম্পদ বেড়েছে।
কেমন করে হলো এমন সব অসামান্য কীর্তি? এসব কীর্তির মূল ‘জাদুকর’ দেশরত্ম 'শেখ হাসিনা'। দেশটা যদি ২১ বছর সেনা শাসকদের অধীনে না থাকত, তাহলে এই বন্দরে অনেক আগেই পৌঁছে যেত সাফল্যের এই ভরা জাহাজ। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত দক্ষ কাণ্ডারির অসাধারন নৈপুণ্যে উজানে বৈঠা ঠেলে চলেছেন "বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা''।
বোষ্টন বিশ্ববিদ্যায় যখন শেখ হাসিনাকে ডক্টর অব 'ল' ডিগ্রি প্রদান করছিলেন, তখন তাঁদের চ্যান্সলরের বক্তব্য ছিল----'‘হাসিনা বিন্তে মুজিব একজন মহান পিতার সুযোগ্য কন্যা, একটি যোগ্য জনগোষ্ঠির মহান সেবক। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় গর্বের সঙ্গে আপনাকে ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করছে।’'(দৈনিক ভোরের কাগজ, ঢাকা : ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭।
এই সেই দিন--'২০১৫ সালে ইউনিসেফের মহাসচিব ইরিনা বোকাভা শেখ হাসিনার হাতে ‘পিস ট্রি’ পদক তুলে দিয়েছেন। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিসেফের মহাসচিবের বক্তব্যের সারার্থ।তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন---"এই সাহসী নারী আলোকবর্তিকা হিসেবে সারা পৃথিবীকে পথ দেখাচ্ছেন।’ সত্যিই তাই 'শেখ হাসিনার' জীবন 'কর্মবহুল ও বৈচিত্র্যে ভরপুর'। সদা সর্বদা মৃত্যু ঝুকি নিয়ে বিরামহীন পথচলা সেকেন্ডের জন্যেও থেমে নেই। পথ চলতে গুলির তাড়া, জনসভায় বোমাতাংক, আকাশে বিমানাতাংক, ক্ষমতার মসনদে নিত্য ঝাঁকুনির পরেও থেমে নেই পিতার স্বপ্ন পূরণের অবিরাম প্রচেষ্টা।
"শেখ হাসিনা এখন শুধু একটি নামই নয় ; শেখ হাসিনা একটি প্রতিষ্ঠান"। যে প্রতিষ্ঠানে কল্যান রাষ্ট্রের সমুদয় পাঠ 'একিভূত পাঠ্যসূচিতে অন্তভুক্ত।'
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন