শেখ হাসিনার "একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প" দারিদ্রতা মোচনের দলিল।
শেখ হাসিনার "একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প"--দারিদ্রতা মোচনের দলিল।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
নিরবে, নির্বিত্তে, সংগোপনে দারিদ্রবিমোচনে সর্ববৃহৎ এবং যুগান্তকারি পরিবর্তন এনে দিয়েছে পল্লি অঞ্চলের হতদরিদ্র পরিবারের জন্য গৃহিত জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব মেধা ও মনন থেকে উৎসারীত "একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প।" প্রতিষ্ঠালগ্নে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তবায়নের লক্ষ অর্জন এবং উপকৃত পরিবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিদগ্ধ জনেরা সমুহ সন্দেহ পোষন করলেও সময়ের ব্যবধানে তাঁর কোন লেশমাত্র নেতিবাচক উপসর্গ কারো চোখে ধরা পড়েনি।
দুর্নীতি, অর্থ হরিলুট, ঘুষ ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধাজনিত নেতিবাচক বড় ধরনের কোন উপসর্গের সৃষ্টি হয়নি। সঙ্গত কারনে প্রকল্পটি আশাতীত সাফল্য অর্জনের কারনে নিম্নবিত্ত পরিবারে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনেকগুন বেড়ে জাতীয় পয্যায়ে দারিদ্রবিমোচন সুচকের অগ্রগতিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ঋনবণ্টনে স্বচ্ছতা, কর্মকর্তাদের সততা, ঋনব্যবহারে কর্মকর্তাদের পয্যবেক্ষন সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে।উদ্দেশ্য ও লক্ষের সমন্বয়, সঙ্গে উত্তম ব্যবস্থাপনা যুক্ত হলে যে কোন লক্ষ অর্জন সম্ভব " একটি বাড়ী একটি খামার তার প্রকৃষ্ট প্রমান।
মুক্তিযুদ্ধের পর হ'তে অদ্যবদি রাষ্ট্রীয়ভাবে সবুজ বিপ্লব, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, কৃষিতে স্ব-নির্ভরতা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, পথ শিশুদের ভাগ্যন্নয়ন লক্ষে নেয়া পথকলি সহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। একটি প্রকল্পও শতভাগ সফলতার উদাহরন সৃষ্টি করতে পারেনি। উচ্চ স্তর হতে নিম্নস্তর পয্যন্ত- দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, অর্থ আত্বসাৎ ইত্যাদি নেতিবাচক প্রভাবে প্রকল্পগুলি শেষাবদি কাগজে কলমে আমলাদের টেবিলে এবং মাঠপয্যায় কর্মচারী কর্মকর্তাদের হ্যান্ডনোটে সীমাবদ্ধতায় রুপান্তরীত হয়েছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে গৃহিত প্রত্যেকটি প্রকল্প লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়ে দুর্নীতির সুচককে উধ্বমূখি করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। বার বার দেশ দুর্নীতির শীর্ষপদের অধিকারি হয়ে বিশ্বময় বাঙ্গালী জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীর জনকের নতুন সরকারের নেয়া "সবুজ বিপ্লব" দিয়ে শুরু করে সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের "ছাগল প্রকল্প" পয্যন্ত দারিদ্র বিমোচন, স্বনির্ভরতা, আর্থসামাজিক উন্নতি অগ্রগতি অর্জনের লক্ষে নেয়া পদক্ষেপ সমুহের মধ্যে একটিও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।ফলে সরকারের জনকল্যানের উদ্দেশ্যও সাধিত হয়নি।মাঝখানে সরকারি অর্থ, বিদেশী সাহায্য ও ঋনের টাকায় একশ্রেনীর মানুষ রাতারাতি আঙ্গুল ফুঁলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে ; দারিদ্র যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে।
১৯৯৬ ইং অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় এবং তাঁর নির্দেশনায় "একটি বাড়ী একটি খামার" প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়।শুরুতে উক্ত প্রকল্পের থীম হিসেবে চারটি স্তর নির্ধারন করা হয়। (১) মাঠ ফসল (২) পারিবারিক বাগান (৩) বনজ, ফলজ, ঔষধি বাগান (৪) গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী ইত্যাদি প্রতিপালন।২০০১ ইং সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে "আওয়ামী লীগের প্রকল্প" ধরে নিয়ে "চার দলীয় জোট সরকারের" আমলে একরকম পরিত্যাক্ত হয়ে যায়।ফলে প্রকল্পটির কায্যক্রম প্রায় সাত বছর মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
২০০৮ ইং সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে সংশ্লিষ্ট মহল প্রকল্পটির দ্বিগুন উৎসাহে কায্যক্রম শুরু করে।ভবিষ্যতে কোন সরকার "আওয়ামী দলীয় প্রকল্প" মনে করে যাতে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করতে না পারে তজ্জন্য সরকারি উদ্যোগের আওতায় আনার কায্যক্রমও হাতে নেয়া হয়।এইজন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী প্রকল্পটিকে সমুদয় কায্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার প্রতি মনযোগি হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ ইং সালে একনেক বৈঠকে ১১৯৭ কোটি টাকা উক্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরে প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
২০১৪ সালে উক্ত প্রকল্পকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার লক্ষে "পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক" আইন পাস করা হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহন করা হয়। অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খামার প্রকল্পের তৃতীয় দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। খরচ বেড়েছে মূল প্রকল্প ব্যায়ের প্রায় সাতগুন। মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা।বাংলাদেশ রেশম বোর্ড প্রকল্পটির সাথে সংযুক্তির ফলে উহার পরিধি বেড়েছে সংঙ্গে ব্যয় ও অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত যথার্থ।
উল্লেখ্য, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি ৬৪ জেলার ৪৯০ উপজেলার ৪০ হাজার ৯৫০টি গ্রামে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামের পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে তৈরি করা হয়। ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বর্তমানের ২২'০৮ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যেই এ প্রকল্প নেয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় গরিব মানুষকে বিনিয়োগের জন্য অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আবার তাদের সঞ্চয় রাখার ব্যবস্থাও করা হয়।সঞ্চিত অর্থ থেকে পরিবার সমুহ ঋন নিতে পারবে মাত্র ৮শতাংশ সার্ভিস চার্জ প্রদান করে। অত্যন্ত বাস্তবানুগ ও কার্যকর প্রকল্প হিসেবে এটি এরই মধ্যে সর্বমহলে প্রশংসা অর্জন করেছে।
ব্যাংক আইনের ৩৯ ধারায় বলা হয়, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বিলুপ্ত হবে। বিলুপ্ত প্রকল্পের সব সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, অর্থ, কর্মসূচি এবং দায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের হাতে চলে যাবে। প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীতে এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ব্যাংকটি এ কার্যক্রমের সঙ্গে 'সম্পৃক্ত থাকবে' বলে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, কিছু জটিলতা রেখেই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
"সম্পৃত্ত থাকব" বিষয়টি ভবিষ্যতে বড় কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে কিনা, তা অনুধাবন জরুরি।প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর ফলে নেতিবাচক কিছু বিষয় যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। সমিতিভুক্ত সদস্যদের আমানত এমনিতেই একটি ব্যাংক পরিচালনার জন্যে যথেষ্ঠ বলা যায়।এর সাথে সরকারি বিনিয়োগ যুক্ত হলে ব্যাংকের স্থীতির পরিমান অত্যাধিক বেড়ে অলস স্থীতিতে পরিনত হতে পারে। তখন সুফলের চাইতে কুফলের পাল্লা ভারী হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। বিষয়টি অভিজ্ঞ জনদের পুণ:ভাবনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।
বাংলাদেশের সামনে দারিদ্র্যবিমোচনের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষমাণ। কারণ এখনও বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। এজন্য টেকসই নানা কর্মপন্থা আবশ্যক। এ বিবেচনায় একটি বাড়ি একটি খামার একটি জুতসই উদ্যোগ। কোনো আইনি জটিলতা কিংবা পরিকল্পনার দুর্বলতার কারণে যাতে প্রকল্পটির কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা উল্লেখিত বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করি।
"শেখ হাসিনা" মানব শক্তির সর্বোত্তম ব্যাবহার তথা জীবিকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে “একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প” বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।কোন অজুহাতেই যেন এই প্রকল্প থমকে না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ রাখা সংশ্লিষ্ট মহলের দায়িত্ব।শেখ হাসিনা দর্শন দিয়েছেন দারিদ্র মোচনের; সংরক্ষন করার দায়িত্ব প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের।
স্মরণে থাকা উত্তম-জাতীর জনকের "সবুজ বিপ্লব" মেজর জিয়ার "যুব কমপ্লেক্স" এরশাদের "পথকলি ট্রাস্ট" খালেদা জিয়ার "ছাগল প্রকল্প" শেখ হাসিনার "একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প" নিশ্চিত আগামীদিনের ইতিহাসের অংশ হয়ে দারিদ্র বিমোচনে অবদানের স্বীকৃতির সূচক নির্ণিত হবে। এর মধ্যে অনেক "রাষ্ট্র নায়ক আগামীর ইতিহাসবীদ
দের 'হাসির পাত্রে' পরিণত হবে, কারো অবদান 'কৃতজ্ঞচিত্তে' বিশ্লেষিত হবে। সুতারাং কোন অবস্থায় শেষ পয্যায়ের ভুলের কারনে সফল প্রকল্প যেন অসফলতার কালিমায় লুপ্ত হয়ে অতীতের ধারাবাহিকতায় পয্যবসিত না হয়; সেদিকে মনযোগ দেয়াই হবে সময়ের দাবি পূরণের উত্তম পন্থা।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
(রুহুল আমিন মজুমদার)
নিরবে, নির্বিত্তে, সংগোপনে দারিদ্রবিমোচনে সর্ববৃহৎ এবং যুগান্তকারি পরিবর্তন এনে দিয়েছে পল্লি অঞ্চলের হতদরিদ্র পরিবারের জন্য গৃহিত জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব মেধা ও মনন থেকে উৎসারীত "একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প।" প্রতিষ্ঠালগ্নে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তবায়নের লক্ষ অর্জন এবং উপকৃত পরিবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিদগ্ধ জনেরা সমুহ সন্দেহ পোষন করলেও সময়ের ব্যবধানে তাঁর কোন লেশমাত্র নেতিবাচক উপসর্গ কারো চোখে ধরা পড়েনি।
দুর্নীতি, অর্থ হরিলুট, ঘুষ ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধাজনিত নেতিবাচক বড় ধরনের কোন উপসর্গের সৃষ্টি হয়নি। সঙ্গত কারনে প্রকল্পটি আশাতীত সাফল্য অর্জনের কারনে নিম্নবিত্ত পরিবারে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনেকগুন বেড়ে জাতীয় পয্যায়ে দারিদ্রবিমোচন সুচকের অগ্রগতিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ঋনবণ্টনে স্বচ্ছতা, কর্মকর্তাদের সততা, ঋনব্যবহারে কর্মকর্তাদের পয্যবেক্ষন সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে।উদ্দেশ্য ও লক্ষের সমন্বয়, সঙ্গে উত্তম ব্যবস্থাপনা যুক্ত হলে যে কোন লক্ষ অর্জন সম্ভব " একটি বাড়ী একটি খামার তার প্রকৃষ্ট প্রমান।
মুক্তিযুদ্ধের পর হ'তে অদ্যবদি রাষ্ট্রীয়ভাবে সবুজ বিপ্লব, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, কৃষিতে স্ব-নির্ভরতা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, পথ শিশুদের ভাগ্যন্নয়ন লক্ষে নেয়া পথকলি সহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। একটি প্রকল্পও শতভাগ সফলতার উদাহরন সৃষ্টি করতে পারেনি। উচ্চ স্তর হতে নিম্নস্তর পয্যন্ত- দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, অর্থ আত্বসাৎ ইত্যাদি নেতিবাচক প্রভাবে প্রকল্পগুলি শেষাবদি কাগজে কলমে আমলাদের টেবিলে এবং মাঠপয্যায় কর্মচারী কর্মকর্তাদের হ্যান্ডনোটে সীমাবদ্ধতায় রুপান্তরীত হয়েছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে গৃহিত প্রত্যেকটি প্রকল্প লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়ে দুর্নীতির সুচককে উধ্বমূখি করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। বার বার দেশ দুর্নীতির শীর্ষপদের অধিকারি হয়ে বিশ্বময় বাঙ্গালী জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীর জনকের নতুন সরকারের নেয়া "সবুজ বিপ্লব" দিয়ে শুরু করে সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের "ছাগল প্রকল্প" পয্যন্ত দারিদ্র বিমোচন, স্বনির্ভরতা, আর্থসামাজিক উন্নতি অগ্রগতি অর্জনের লক্ষে নেয়া পদক্ষেপ সমুহের মধ্যে একটিও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।ফলে সরকারের জনকল্যানের উদ্দেশ্যও সাধিত হয়নি।মাঝখানে সরকারি অর্থ, বিদেশী সাহায্য ও ঋনের টাকায় একশ্রেনীর মানুষ রাতারাতি আঙ্গুল ফুঁলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে ; দারিদ্র যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে।
১৯৯৬ ইং অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় এবং তাঁর নির্দেশনায় "একটি বাড়ী একটি খামার" প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়।শুরুতে উক্ত প্রকল্পের থীম হিসেবে চারটি স্তর নির্ধারন করা হয়। (১) মাঠ ফসল (২) পারিবারিক বাগান (৩) বনজ, ফলজ, ঔষধি বাগান (৪) গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী ইত্যাদি প্রতিপালন।২০০১ ইং সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে "আওয়ামী লীগের প্রকল্প" ধরে নিয়ে "চার দলীয় জোট সরকারের" আমলে একরকম পরিত্যাক্ত হয়ে যায়।ফলে প্রকল্পটির কায্যক্রম প্রায় সাত বছর মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
২০০৮ ইং সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে সংশ্লিষ্ট মহল প্রকল্পটির দ্বিগুন উৎসাহে কায্যক্রম শুরু করে।ভবিষ্যতে কোন সরকার "আওয়ামী দলীয় প্রকল্প" মনে করে যাতে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করতে না পারে তজ্জন্য সরকারি উদ্যোগের আওতায় আনার কায্যক্রমও হাতে নেয়া হয়।এইজন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী প্রকল্পটিকে সমুদয় কায্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার প্রতি মনযোগি হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ ইং সালে একনেক বৈঠকে ১১৯৭ কোটি টাকা উক্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরে প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
২০১৪ সালে উক্ত প্রকল্পকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার লক্ষে "পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক" আইন পাস করা হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহন করা হয়। অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খামার প্রকল্পের তৃতীয় দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। খরচ বেড়েছে মূল প্রকল্প ব্যায়ের প্রায় সাতগুন। মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা।বাংলাদেশ রেশম বোর্ড প্রকল্পটির সাথে সংযুক্তির ফলে উহার পরিধি বেড়েছে সংঙ্গে ব্যয় ও অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত যথার্থ।
উল্লেখ্য, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি ৬৪ জেলার ৪৯০ উপজেলার ৪০ হাজার ৯৫০টি গ্রামে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামের পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে তৈরি করা হয়। ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বর্তমানের ২২'০৮ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যেই এ প্রকল্প নেয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় গরিব মানুষকে বিনিয়োগের জন্য অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আবার তাদের সঞ্চয় রাখার ব্যবস্থাও করা হয়।সঞ্চিত অর্থ থেকে পরিবার সমুহ ঋন নিতে পারবে মাত্র ৮শতাংশ সার্ভিস চার্জ প্রদান করে। অত্যন্ত বাস্তবানুগ ও কার্যকর প্রকল্প হিসেবে এটি এরই মধ্যে সর্বমহলে প্রশংসা অর্জন করেছে।
ব্যাংক আইনের ৩৯ ধারায় বলা হয়, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বিলুপ্ত হবে। বিলুপ্ত প্রকল্পের সব সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, অর্থ, কর্মসূচি এবং দায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের হাতে চলে যাবে। প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীতে এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ব্যাংকটি এ কার্যক্রমের সঙ্গে 'সম্পৃক্ত থাকবে' বলে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, কিছু জটিলতা রেখেই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
"সম্পৃত্ত থাকব" বিষয়টি ভবিষ্যতে বড় কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে কিনা, তা অনুধাবন জরুরি।প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর ফলে নেতিবাচক কিছু বিষয় যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। সমিতিভুক্ত সদস্যদের আমানত এমনিতেই একটি ব্যাংক পরিচালনার জন্যে যথেষ্ঠ বলা যায়।এর সাথে সরকারি বিনিয়োগ যুক্ত হলে ব্যাংকের স্থীতির পরিমান অত্যাধিক বেড়ে অলস স্থীতিতে পরিনত হতে পারে। তখন সুফলের চাইতে কুফলের পাল্লা ভারী হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। বিষয়টি অভিজ্ঞ জনদের পুণ:ভাবনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।
বাংলাদেশের সামনে দারিদ্র্যবিমোচনের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষমাণ। কারণ এখনও বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। এজন্য টেকসই নানা কর্মপন্থা আবশ্যক। এ বিবেচনায় একটি বাড়ি একটি খামার একটি জুতসই উদ্যোগ। কোনো আইনি জটিলতা কিংবা পরিকল্পনার দুর্বলতার কারণে যাতে প্রকল্পটির কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা উল্লেখিত বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করি।
"শেখ হাসিনা" মানব শক্তির সর্বোত্তম ব্যাবহার তথা জীবিকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে “একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প” বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।কোন অজুহাতেই যেন এই প্রকল্প থমকে না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ রাখা সংশ্লিষ্ট মহলের দায়িত্ব।শেখ হাসিনা দর্শন দিয়েছেন দারিদ্র মোচনের; সংরক্ষন করার দায়িত্ব প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের।
স্মরণে থাকা উত্তম-জাতীর জনকের "সবুজ বিপ্লব" মেজর জিয়ার "যুব কমপ্লেক্স" এরশাদের "পথকলি ট্রাস্ট" খালেদা জিয়ার "ছাগল প্রকল্প" শেখ হাসিনার "একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প" নিশ্চিত আগামীদিনের ইতিহাসের অংশ হয়ে দারিদ্র বিমোচনে অবদানের স্বীকৃতির সূচক নির্ণিত হবে। এর মধ্যে অনেক "রাষ্ট্র নায়ক আগামীর ইতিহাসবীদ
দের 'হাসির পাত্রে' পরিণত হবে, কারো অবদান 'কৃতজ্ঞচিত্তে' বিশ্লেষিত হবে। সুতারাং কোন অবস্থায় শেষ পয্যায়ের ভুলের কারনে সফল প্রকল্প যেন অসফলতার কালিমায় লুপ্ত হয়ে অতীতের ধারাবাহিকতায় পয্যবসিত না হয়; সেদিকে মনযোগ দেয়াই হবে সময়ের দাবি পূরণের উত্তম পন্থা।
ruhulaminmujumder27@gmail.com


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন