খালেদা জিয়া আত্মবিশ্বাস হারিয়ে হতাশার সাগরেনিমজ্জিত--"আন্দোলনও হবে না, দাবিও মানবেনা সরকার।

     খালেদা জিয়া আত্মবিশ্বাস হারিয়ে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত--"আন্দোলনও হবেনা, দাবিও মানবেনা সরকার"।
     (রুহুল আমিন মজুমদার)

            গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত ১৩ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন।প্রত্যেক দফায় "স্বাধীনতার পর থেকে অদ্য পয্যন্ত" কথাটি কমন হিসেবে নিরপেক্ষ কমিশন করার কথা বলেন।শেষাবদি এতেও নিরপেক্ষতায় সন্দিহান হয়ে আলাদা সচিবালয়, জনবল নিয়োগের কথাও উত্থাপন করেন।
    তাঁরপরও এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলেই যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তা মনে করেন না খালেদা জিয়া। তিনি মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশনকে প্রশাসনিক ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া, প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা দরকার। তাই নির্বাচন কমিশন যেন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে, সে জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে জাতির সামনে উপস্থাপন করবে।
       বেগম খালেদা জিয়া সমস্ত বিষয়গুলী আলোচনার জন্য দুই জোটের দুই জন নির্ধারিত ব্যাক্তি সহ তাঁর সাথে পাহারাদার একজন সাক্ষীও রাখার প্রস্তাব করেন।যতক্ষন সমস্যার সমাধান না হয় অনিদির্ষটকাল আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবনাও রেখেছেন।পরবর্তিতে নির্বাচন কালীন সহায়্যক সরকারের রুপরেখাও উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন।
     ভাবখানা এমন বর্তমান সরকারের শাষন মেয়াদ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলেও আপত্তি নেই।সম্পর্ণ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার জন্যে নিদেনপক্ষে আগামী আরো পাঁছ বছর সময় দিলেও পারবেন কিনা ব্যাক্তিগত ভাবে আমি সন্দিহান। বিশেষ করে সচিবালয় নির্মানের জন্য টাকা বরাদ্ধ থেকে আরাম্ভ করে দরপত্র আহব্বান, কাজের সমাপ্তি,আসবাবপত্র ক্রয়,ফাইল পত্র চাপানো ইত্যাদি কর্ম সম্পাদন পাঁছবছরের কম সময়ে পারবে বলে মনে হয়না। উপরন্তু আলাদা জনবল নিয়োগ, জনবলের প্রাকযোগ্যতার মধ্যেও শর্তযুক্ত নিয়োগ রয়েছে।
    প্রিয় পাঠকবর্গ, উপরের উল্লেখিত বক্তব্যটি বিএনপি নেত্রীকে তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে বর্ননা করি নাই। বিগত আটবছরে সবকূল তাঁর সাথে বেঈমানী করার কারনে তিনি বিশ্বাস শব্দটির উপর আস্থা হারিয়ে নীজেকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না।তাঁর প্রমান সব বাস্তবায়ন হলেও নির্বাচন সুষ্ঠ হয় কিনা তিনি সন্দিহান কথাটার প্রতি মনযোগ দিলে তর্কের প্রয়োজন হবেনা।
    তিনি যে সরকারের জন্য ২০১৪/১৫ সালে আন্দোলনের নামে সম্পদহানি, জীবনহানী, নেতাকর্মীদের অবর্ণনীয় দু:খ্যকষ্টের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন সেই সরকারের আন্দোলন থেকে সরে গেছেন কিনা তাও বলেননি।হাজার হাজার নেতাকর্মী দলীয় নির্দেশ মানতে গিয়ে সন্ত্রাস, হত্যা, লুটপাটে অংশ নিয়ে জেলখানা অথবা পলাতক জীবনযাপন করছে তাঁদের সম্পর্কেও কোন বক্তব্য উত্থাপন করেননি।তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম সব নির্দোষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে।আসমান থেকে ইবলিশ শয়তান আগুনবোমা নিক্ষেপ করে জ্যান্তমানুষ দগ্ধ করে দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।নির্দোষ নেতাকর্মীদের "মামলা প্রত্যাহার অথবা আন্দোলন" এমন কোন বক্তব্য তাঁর মুখ থেকে বের হয়নি।হাজার হাজার নেতাকর্মীর ত্যাগের 'তত্বাবধায়ক' সরকারের দাবী থেকে পিছুটান যদি দিতেই হয় অন্তত: নেতাকর্মীদের মামলাগুলী প্রত্যাহারের একটা চেষ্টা প্রধান নেত্রী হিসেবে তাঁর কি করা উচিৎ ছিলনা?
    তিনি জানেন বহুবার বলেছেন অবৈধ সরকার,অনির্বাচিত সরকার, অগনতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসবেন না।গতকালের প্রস্তাবগুলী তিনি কার কাছে দিলেন? তাছাড়া অবৈধ সরকারকে অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতা উপভোগ করার একতরফা অনুমতি তিনি কেন দিবেন?তিনি কি জনগন কতৃক বাংলাদেশের কোন পয্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনীধি? সারা বাংলাদেশ জানে, বিশ্ববাসি জানে বিনাভোটে ১৫০ সাংসদকে ইসি নির্বাচিত ঘোষনা করেছে। এমন একটি একদলীয় বাকশালী সরকারকে অনির্দিষ্ট কাল ক্ষমতা উপভোগের অবাধ লাইসেন্স দেয়ার তিনি কে? যে সরকার গায়ের জোরে দেশ শাষন করছেন তিনি নীজেই তার আগের দিন বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন-সেই সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনে নামানোর কথা না বলে আলোচনার প্রস্তাব কেন?তাও আবার যতদিন লাগুক দফায় দফায় আলোচনা!!  
         ২০০৬ ইং সালের নির্বাচনে বর্তমানের ১৩ দফার একদফাও যদি খালেদা জিয়া পুরণ করতেন হয়ত আজকের এই নৈরাশ্যজনক বক্তব্য দেয়ার প্রয়োজন হ'ত না।উক্ত দফাগুলি মিমাংসা করার একক ক্ষমতার অধিকারি অথবা সর্ববৃহৎ অংশিদারীত্ব তাঁরই থাকতো।তখনকার সময়ের আন্দোলনের প্রধান নেত্রী আজকের প্রধান মন্ত্রীর দাবিও খুব বেশী ছিলনা।তিনি শুধু আপত্তি করেছিলেন তাঁর জোটের সঙ্গে আলোচনা করা উচিৎ ছিল।আলোচনা না করার কারনে সরকারের প্রতি আহব্বান জানিয়েছিলেন সংসদের প্রধান বিরুধী দলীয় নেত্রী হিসেবে নিদেনপক্ষে সংবিধান অনুসরন করে নির্বাচন কমিশনার সহ অপরাপর সদস্যদের নিয়োগ দেয়ার জন্য।তাঁর সেই আহব্বানের প্রতিও আত্ম অহমিকায় ডুবু ডুবু চারদলীয় জোট সরকার এবং তাঁর নেত্রী খালেদা কর্ণপাত করার প্রয়োজন অনুভব করেননি।
     শেষপয্যন্ত সরকারকেও স্বীকার করে নিলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকেও স্বীকার করলেন, ইউপি নির্বাচনকেও জোরালো বিরুধীতা না করে "প্রশ্নবিদ্ধ" বলে আংশিক হলেও স্বীকার করে নিলেন, শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচনই গনতন্ত্রের একমাত্র মাপকাঠি নয় তাও আপনি বিবৃতির মাধ্যমে স্বীকার করে নিলেন। শুধুমাত্র অ-স্বীকার করে যাচ্ছেন--"যাদের কারনে আপনি আজ নীজের উপরেও বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না তাঁদের; সেই অশুভ শক্তি।"যারা আপনাকে প্রলোব্ধ করেছিল '৭৪/৭৫ সালের আদলে অরাজগতা সৃষ্টি করতে পারলে সেনাবাহিনী গুলশানের বাড়ী থেকে নিয়ে আপনাকে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে দিবে।চেয়ারের আশায় আপনিও একাধারে নাশকতা মুলক আন্দোলনের কর্মসূচি আজব্দী প্রত্যাহার না করে অদ্য সাংবাদিক সম্মেলনে ইসি গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করছেন।
    সঠিক ভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন তৃনমূলের কর্মীরা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নামছে না,নেতারাতো নহে-ই।সম্যক বুঝতে পেরেছেন মধ্যবতী নির্বাচন দিলেও আপনার দলের কোন লাভ হবেনা।বরঞ্চ সরকার বাড়তি পাঁছ বছর সময় ক্ষমতায় থাকার বৈধতাই পাবে।আপনাকেও যদি এই মহুর্তে সরকার প্রধান করা হয় আপনার দাবি আগামী পাঁছ বছর দিনরাত পরিশ্রম করেও নীজেই পূরণ করতে পারবেন না।দফায় দফায় বৈঠক করতে গেলেতো সময়ের অংক কোথায় যায়,মহান আল্লাহ-ই-ভাল জানেন। আমার বক্তব্যের অসারতা প্রমান করার জন্য বিএনপি সমর্থিত বন্ধুদের কমেন্ট বক্সে উদাত্ত আহব্বান জানাচ্ছি।ruhulaminmujumder27@gmail.com
                          "জয়বাংলা           জয়বঙ্গবন্ধু"
   

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন