যুদ্ধাপরাধীমুক্ত, অ-সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ শহীদ জননী জাহানারা ঈমামের আজম্ম লালিত স্বপ্ন।
     রুহুল আমিন মজুমদার

      জাহানারা ঈমাম।একজন বিদূষী নারী। পর্দানশীলতা যুগের সাহষী ছাত্রী।তথাকথিত ধর্মরাষ্ট্র পাকিস্তান জামানার নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা।নারী শিক্ষার অগ্রদূত। শিক্ষক হিসাবে তার কর্মময় জীবনের প্রথম সময়কাল মফস্বল শহর ময়মনসিংহ।  সেখানে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (১৯৫২-১৯৬০),  বুলবুল একাডেমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (১৯৬২ -১৯৬৬) এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক (১৯৬৬‌-১৯৬৮)হিসাবে তার কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। তিনি কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপ্রপ্ত ছিলেন।তাঁর কর্মময় জীবনের অধিকাংশ সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরত্ব গাঁথা নিয়ে লেখালেখিতে কাটিয়েছেন।অবসররের প্রতিটি মহুর্ত কাটিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির হার না মানা লড়াকু সৈনিকের ভূমিকায়।
    একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শফি ইমাম রুমী শহীদ হন। এছাড়া যুদ্ধের সময় তাঁর স্বামী, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, দেশপ্রেমিক শরীফ ইমামও ইন্তেকাল করেন।আশির দশকের শুরুতে, ১৯৮২ সালে তিনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। প্রতি বছর একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো তাঁকে। দুরারোগ্য এবং সবচেয়ে ভয়ংকর রোগ ক্যান্সারও তাঁকে থামাতে পারেনি, ম্ররত্যুর আগ মহুর্ত পয্যন্ত তিনি নিবেদিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের হৃতগৌরব জাতিকে ফেরৎ দেয়ার আন্দোলন সংগ্রামে।
   ৯০ এর স্বৈরাচার বিরুধী আন্দোলনে রুপরেখা অনুযায়ী দেশের সর্বস্তরের জনগনের ধারনায় ছিল দেশ নিশ্চিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে পরিচালিত হবে।তিন জোটের রুপরেখায়ও তদ্রুপ একটি চেতনার গ্রন্থনা পরিলক্ষিত ছিল।'৭৫ এ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে যে এতদুর পিছনে নিয়ে গিয়েছিল তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা জিয়া এবং স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তখনও বুদ্ধিজীবি মহলের বোধদ্বয় হয়নি।মুক্তিযুদ্ধের সর্বশ্রেনীর বিরুধী শক্তি সমাজের সর্বস্তরে তাঁদের বিধ্বংসী মনোভাব নিয়ে তরুন সমাজের মগজ ধোলাইয়ের কাজটি সমাপন করে রেখেছিল কারো বোধগম্যতায় ছিলনা। এবং কি  তাঁদের অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ততদিনে কতটুকু পাকাপোক্ত করতে পেরেছিল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি ১৫ দলীয় জোটের নেতাকর্মী এবং কি থিমট্যাংক বলে পরিচিত বুদ্ধিজীবি সমাজের, কারো তেমন কোন ধারনা গড়ে উঠেনি। '৯১ ইং সালে সাধারন নির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পর, সেই নির্বাচনে সকল মহলের ধারনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জেলা-উপজেলায় কায্যকরি কমিটিহীন বিএনপি যখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট আসনে জিতে যায়, তখনই কেবল সম্বিত ফিরে আসে সব মহলে। আশ্চায্য হলেও সত্য পুরাণ ঢাকায় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এবং বঙ্গবন্ধুর পছন্দের মানুষদের একটি আসনে সন্ত্রাসীদের প্রধান গালকাটা খোকার কাছে জননেত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত হয়।
       খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদল জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন করে প্রথমেই তিন জোটের রুপরেখায় ছোট্র একটি লাথি দিয়ে মেজর জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে  পদদলিত করার মূল চরিত্রে ফিরে যান।তৎপরবর্তীতে শুরু হয় এরশাদ মন্ত্রীসভায় মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা বিরুধী মন্ত্রী-নেতাদের দলে ভিড়ানোর কাজ এবং জামায়াতে ইসলামী সহ রাজাকার পূর্ণবাসনের যথাযথ কর্মসূচির বাস্তবায়ন।
এমনতর মহুর্তে সরকারের অংশ জামায়াতে ইসলামী দলটিও তাদের চূড়ান্ত কায্যক্রম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করে দেশব্যাপি।বাংলাদেশের নাগরিকত্বহীন এবং যুদ্ধাপরাধী  গোলাম আযমকে ১৯৯১ ইং সালের ২৯ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করে।এর আগে জামায়াত দীর্ঘদিন তাঁদের এই পদটি ভারপ্রাপ্ত আমীর দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছিল। জামায়াত দেশব্যাপি প্রসারীত করে তাঁদের ইতিপূর্বে  গড়ে তোলা মগজ ধোলাইয়ের কারখানা,  বিভিন্ন বাহারি নামের কিন্ডার গার্টেন স্কুল। ব্যাংক,  বীমা সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান। দলটির অর্থনৈতিক ভিত আগের যে কোন সময়ের চাইতে বহুগুন এগিয়ে নেয় ৯১-৯৬ ইং এই সময়ের মধ্যে। অ-প্রতিদ্বন্ধি হয়ে উঠে স্বাধীনতা বিরুধী শক্তি  রাজনীতি, সমাজ,  দেশ এবং বিদেশে। বিএনপি এবং জামায়াতের যুগৎপত ষড়যন্ত্রের আবাস মিলে তখনই কেবল সরকারে বিএনপি বাহিরে জামায়াত  সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধ বিরুধী শক্তিকে পুর্ণবাসিত করার হিড়িক পড়ে গেলে।
       মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন সহ সর্বস্তরের জনগনের মধ্যে এর বিরুপ ছায়া পরিলক্ষিত হয়। দেশ ব্যাপি জনবিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। সদা সদালাপি, নিরংকার, শহীদমাতা, বিদূষী শিক্ষয়ত্রী, মহিয়ষী নারী জাহানারা ঈমামও ঘরে বসে থাকতে পারেননি। ক্যান্সার আক্রান্ত অসুস্থ্য শরীর নিয়ে তিনিও বেরিয়ে আসেন রাজপথে। জনগনের ক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশিষ্টজনেরাও তাঁদের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাতে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেন।জাহানারা ইমামের উপর দায়িত্ব বর্তায়  নির্দলীয় উক্ত সঙ্গঠনের নেতৃত্ব দেয়ার। সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয় অসুস্থ্য শহীদ জননী জাহানারা ঈমামকে।
        ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটিফ  পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়। এখানেও সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ ’গণআদালত’ এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠান করে। গণআদালাতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণ আদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।
    ঘাতক দালাল নিমূল সম্বন্বয় কমিটি হঠাৎ করে না জেনেই উক্ত আদালত বসাননি।এর আগে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল, তাদের বিচারের দাবিতে দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল ‘পাবলিক ট্রায়াল’-এর আয়োজন করেছিলেন। যে আদালত তখনকার সময়ে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। সেই একই আদলে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী শিরোমণি গোলাম আযমের জন্য ‘গণ-আদালত’ গঠন করে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিচারের আয়োজন করে জাতীয় সমন্বয় কমিটি। এ কাজে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করতে আগুয়ান হলে দেশে-বিদেশে এই আন্দোলন ব্যাপক সাড়া জাগায়। যদিও দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ তখন ভীষণ বৈরী ছিল। কিন্তু জাহানারা ইমামের ডাইনামিক নেতৃত্ব তরুণ প্রাণ আন্দোলিত করতে সমর্থ হয়, ফলে তরুণেরা দলে দলে ঘাতক-দালালবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়।
    আজ ২০১৭ সালে এসে স্মরণ করছি, কী ভয়ংকর সময় পার করে এসেছি আমরা! সবচেয়ে বড় অন্তরায় ছিল এই আন্দোলনের প্রতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোভাব এবং এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জামাত-শিবির-ফ্রিডম পার্টি-যুবকমান্ডের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতি সরকারের প্রশ্রয় ও মদদ দান। তখনই কেবল সর্বস্তরের মানুষ আঁচ করতে পারে খালেদা জিয়া সরকারের রাজনৈতিক দর্শন স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করা। জনগনের বিশ্বাসের দৃডতা মিলে  খালেদা সরকারের নিকৃষ্টতম পদক্ষেপ মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালী ললনা দর্শকারী ও দর্শনে সহায়তাকারি, হত্যাকারী ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচার চাওয়ার অপরাধে শহীদজননী জাহানারা ইমামসহ গণ-আদালতের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করার পর।
     ততদিনে আন্দোলন হয়ে উঠে তিব্রতর। আন্দোলনের তীব্রতায় ১৯৯২ সালের ২৯ জুন সরকার বাধ্য হয় মামলা প্রত্যাহার সহ আরো কতিপয় বিষয় সংসদে বিরোধী দলের সাংসদদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে। সমঝোতার পর সংগত কারনে সর্বমহল কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে এবং আন্দোলনের তিব্রতায় কিছুটা নমনীয়তা আসে। এই সুযোগে  সরকার  সমঝোতা বাস্তবায়ন না করে চড়াও হয় আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা ইমামের ওপর। খালেদা জিয়ার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী প্রকাশ্য দিবালোকে জাহানারা ইমামকে লাঠিপেটা করে আধমরা করে ফেলে রাখে।অন্যান্য বরেণ্য ব্যাক্তিদের উপরও চলে অন্যায় আচরণের স্টিমরোলার। জাহানারা ইমাম অটল থাকেন তাঁর দাবিতে।
    রাজনৈতিকভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা, তখন সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী, জাহানারা ইমামের পাশে ছিলেন অতন্দ্র প্রহরি হয়ে আওয়ামীলীগ ছাত্র লীগ, যুবলীগের লাখ লাখ কর্মী বাহিনী নিয়ে। শেখ হাসিনা সহ লাখ ছাত্র জনতার সাহষে তিনি তাঁর লক্ষ্যের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পেরেছেন। সঙ্গে অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ সংগঠনও তাঁকে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে। সর্বস্তরের জনগনের সাহষে প্রয়াত নেত্রী কোন রক্ত চক্ষুকে ভয় না পেয়ে  স্বাধীনতা বিরুধীদের প্রতি ভহৃনার আগুনকে কাংখীত লক্ষে পৌঁছাতে ছিলেন দৃডপ্রতিজ্ঞ।
          বঙ্গবন্ধু কন্যাও সম্যক বুঝতে পেরেছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে উপলক্ষ করে ততদিনে নতুন প্রজম্মের একটি বিরাট অংশে মুক্তিযুদ্ধের বিস্মৃত চেতনার পূণ:জাগরন  ঘটেছে।নতুন প্রজম্মের এই অংশটিকে সঠিকভাবে সারভাইব করাই তখন প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি আওয়ামী লীগ দলের প্রধান শেখ হাসিনার একান্ত কর্তব্য এবং দায়িত্ব হয়ে পড়েছিল। তিনি উপলব্দি করতে পেরেছিলেন নিরপেক্ষ এই গন আন্দোলন জাতীয় রাজনীতিতে খানিকটা হলেও জনমনকে আন্দোলিত করতে পারবে। শেখ হাসিনার সেদিনের সিদ্ধান্ত যে শতভাগ সঠিক ছিল, তাঁর জন্যে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ৯৬ ইং সালের সাধারন নির্বাচনেই তাঁর ফলাফল হাতেনাতে পাওয়া  যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের মাধ্যমে প্রমানীত হয় শেখ হাসিনার রাজনীতিতে দুরদর্শীতা কোন অংশেই কম নয় বরঞ্চ সমসাময়িক অনেকের চেয়ে বহুগুন এগিয়ে আছেন।
          এরই মাঝে এগিয়ে আসে আর একটি শুভক্ষন। বিরানব্বই সালের অক্টোবরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১-এর প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎযাপনের দিক্ষন।উক্ত সম্মেলন উদ্বোধন করার আমন্ত্রন পান শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ঢাকার নীলক্ষেতসংলগ্ন এলাকার বাংলাদেশ পরিকল্পনা একাডেমিতে হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি ঐদিন দীর্ঘ সময় কাটান। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ‘উত্তরসূরি’ নামের একটি সংকলন প্রকাশিত হয় উদ্যোগক্তাদের পক্ষ থেকে। তাঁরা সংকলনটিতে  জাহানারা ঈমামের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার  প্রকাশ করে। সংকলনটিতে তিনি  তরুণদের উদ্দ্যেশ্য করে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন।তিনি তরুণদের ভয় না পেয়ে সাহসী হতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন--'সাহসই হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার’। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে তোমরা সকলেই উদ্যোগী হও। কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে চায়  তোমরা মূখ বুজে মেনে নিও না। তোমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে মূলত: কী ঘটেছিল একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের  নয় মাসে।’ তিনি তরুণদের বলেছেন যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে কী ঘটেছিল, তা জেনে নিতে হবে তোমাদেরকে। তিনি আরো বলেছেন, ‘কোটি কোটি মানুষ এখনো বুকে গভীর ক্ষত ও যাতনা নিয়ে বেঁচে আছেন। তাঁদের কাছে যাও, তাঁদের কাছ থেকে জেনে নাও মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস।’
      উপরে উল্লেখীত এই নির্দেশনা যেন যুদ্ধজয়ের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর সৈন্যদলের প্রতি অলঙনীয় আদেশ। তাঁর এই আদেশ তরুন প্রজম্মকে দানব শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস জুগিয়েছে, উদ্দীপিত করেছে। শহীদজননী জাহানারা ইমাম  পদদলীত মুক্তিযুদ্ধের বাংলা দেশকে জাগিয়ে তুলেছিলেন তাঁর লেখনিতে, বক্তব্যে। তিনি তরুণ প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের হৃত চেতনা ফিরিয়ে আনতে সাহস জুগিয়েছিলেন, ঘাতকশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প তৈরিতে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। সম্মেলনে প্রকাশিত  সংকলনটি সম্মেলনে আসা প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের হাতে হাতে দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর নির্দেশনা পৌঁছে গিয়েছিল প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতিটি সদস্যের লাইব্রেরীতে।প্রজম্মও অক্ষরে অক্ষরে ব্রতি ছিলেন তাঁর নির্দেশনা পালনে।
        ২০১৭ সালের আজকের বাংলাদেশ গভীর ভাবে অনুভব করে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আদর্শে অনুপ্রানীত কোন এক নেতার আর্বিভাব। মানবতাবিরুধী, যুদ্ধাপরাধী, '৭৫ এফ ঘাতকচক্র, স্বাধীনতা বিরুধী শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গী গোষ্টির আস্ফালনের এই দিনে খুব বেশী মনে পড়ে জাহানারা ঈমামের ন্যায়  দুরদর্শী নেতৃত্বই কেবল মাত্র পারে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।
        মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সরকারের বাইরে আর একটি শক্তির জাগরন এই মহুর্তে খুবই প্রয়োজন ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানে তাঁর কন্যা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অস্বিকারের কোন উপায় নেই।কিন্তু সরকারের বাইরে আর একটি অ-সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না ঘটলে তাঁর পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলাই কষ্ট সাধ্য হতে পারে।অকস্মাৎ প্লাবনে ফসলহানী ঘটলেও আশ্চায্যের কিছুই থাকবেনা।কারন অতীতের ষড়যন্ত্রকারিরাই নতুন আঙ্গিকে অবস্থান নিয়েছে সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পিছনে চুরিকাঘাত করার প্রস্তুতি নিয়ে।
ruhulaminmujumder27@gmail.com.

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন