(কপি পোষ্ট)
বাংলাদেশের শরিয়াকরণ : সুদে ও আসলে গুনতে হবে কি দেনা?
হাসান মাহমুদ

‘এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় না’– প্রজ্ঞায় ভরপুর একটি প্রবাদ। আজ আমরা ইসলাম নিয়ে যে পথে পা দিয়েছি, ৪০-৫০ বছর আগে আরেকটা ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিমপ্রধান দেশ সে পথে পা দিয়েছিল। আজ সে দেশ কেমন আছে? কেমন আছে সংখ্যালঘুরা? ভিন্নমতের মুসলিমরা, বিশেষ করে নারীরা? ইতিহাসের বুকে প্রস্তরস্বাক্ষরে অঙ্কিত সেই পদচিহ্নগুলো ধরে ধরে একটু ঘুরে আসা যাক, কারণ এর ওপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

রাজনীতি, ভাস্কর্য, কওমি সনদের স্বীকৃতি, স্কুলের সিলেবাস, সৌদি অর্থায়নে ৫৬০টি মডেল মসজিদ, পুলিশ লাইনে সরকারি খরচে ইসলামি অনুষ্ঠান, সরকারি খরচে ‘আরবি এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত ইত্যাদি নিয়ে দেশে মতামতের প্রবল মেরুকরণ ও চিন্তার সংঘাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে গত কয়েক দশক ধরে অত্যন্ত সন্তর্পণে জাতির অলক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্রোত বয়ে চলেছে। সেই দেশটাতেও এই একই স্রোত শুরু হয়েছিল। সেটা হল সাধারণ জনগণের শরিয়াকরণ।

একাডেমিক জরিপকারী সংগঠন হিসেবে ‘PEW’-এর খ্যাতি আছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে কিছু দেশের মুসলিমদের মধ্যে শরিয়ার প্রতি সমর্থন জরিপ করে PEW যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশও আছে। জরিপের নাম ‘The World’s Muslims: Religion, Politics and Society’ (বিশ্বমুসলিম: ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজ)। সেই জরিপ থেকে প্রধান পাঁচটি প্রশ্নোত্তর দেখাচ্ছি–

• প্রথম তিনটি জরিপ সাধারণ মুসলিমের মধ্যে:

১। শরিয়া আইনকে আল্লাহর নাজিলকৃত আইন বলে মনে করে – সর্বোচ্চ জর্দান ৮১%, সর্বনিম্ন আলবেনিয়া ২৪%। বাংলাদেশ ৬৫% ও পাকিস্তান ৮১%।
২। শরিয়া আইন একটাই, বিভিন্ন নয় বলে মনে করে – সর্বোচ্চ তাজিকিস্তান ৭০%, সর্বনিম্ন তিউনিশিয়া ২০%। বাংলাদেশ ৫৭% ও পাকিস্তান ৬১%।
৩। নিজের দেশে শরিয়া আইন চায় – সর্বোচ্চ আফগানিস্তান ৯৯%, সর্বনিম্ন আজারবাইজান ০৮%। বাংলাদেশ ৮২% ও পাকিস্তান ৮৪%।

• পরের জরিপগুলো শুধু শরিয়া সমর্থক মুসলিমদের মধ্যে:

৪। ব্যাভিচারীকে প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে – সর্বোচ্চ পাকিস্তান ৮৯%, সর্বনিম্ন বসনিয়া ২১%। বাংলাদেশ ৫৫%।
৫। মুরতাদ অর্থাৎ ইসলামত্যাগীদের মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে – সর্বোচ্চ আফগানিস্তান ৭৯%, সর্বনিম্ন কাজাখস্তান ০৪%। বাংলাদেশ ৪৪% ও পাকিস্তান ৭৬%।

সেই ধর্মনিরপেক্ষ দেশটায় কোনো শরিয়া সমর্থক দল তখন ক্ষমতায় ছিল না, কিন্তু জাতির শরিয়াকরণ ঠেকানো যায়নি। আমাদের শরিয়াকরণও হচ্ছে ওই একই রাজনীতিনিরপেক্ষ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ শরিয়াপন্থীরা ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক বহু বছর ধরে দেশ শরিয়ার দিকে এগিয়ে গেছে। ADD POLITICAL ELEMENT IN CONSTITUTION. সেই এগিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিটা কী? কারণটা কী? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, দ্রব্যমূল্য সর্বত্র নৈরাজ্য, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতিবাজদের দাপটসহ সমাজের সর্বক্ষেত্রে অসহ্য অরাজকতা বিরাজ করছে।

এমতাবস্থায় শরিয়াপন্থীদের প্রস্তাবিত ‘ইসলামি’ সমাধান ধীরে ধীরে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এটাই স্বাভাবিক। ‘আল্লাহর আইন সবকিছু ঠিক করে দেবে’– এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে উঠছে জনগণ। বহু সাধারণ মানুষ কোনো মওলানা-মুফতির হুকুম বা ফতোয়া ছাড়াই নিজে থেকে শরিয়া প্রয়োগকারী হয়ে গেছে। লক্ষ্যণীয়, এই সাধারণ মানুষের অনেকেই কিন্তু কোনো ইসলামি দল করে না। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি:

• আগে রোজার মধ্যে হোটেলগুলো চাদর দিয়ে ঢাকা থাকত। অমুসলিমরা তো বটেই কোনো কোনো মুসলিমও বাইরে খেত। এখন রোজার মধ্যে বাইরে কাউকে খেতে দেখলে সাধারণ মানুষের একাংশ হিংস্র হয়ে ওঠে। গাড়িতে ভ্যাপসা গরমের দুপুরে এক যাত্রী পানি খেয়েছে বলে ড্রাইভার বাস থামিয়ে তাকে অপমান করে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে।

• গ্রামে নানা-নানীর কোলে মানুষ, এখন ঢাকায় থাকে এমন একজনের কন্যার আকিকা। তিনি তার প্রিয় নানা-নানীকে গ্রাম থেকে আনার আয়োজন করেছেন। এদিকে উৎসবের সাত দিন আগে নানা মারা গেলেন। তখন গ্রামের সাধারণ মানুষ এসে দাবি করল শরিয়া মোতাবেক নানী চার মাস ঘরে থাকবে, নিজের নাতির বাসা হলেও ঢাকায় যেতে পারবে না।

• এক গ্রামে নববর্ষের উৎসবে এক কিশোর এক কিশোরীর সঙ্গে ‘হ্যান্ডশেক’ করেছে বলে গ্রামবাসী তাকে বেধড়ক পিটিয়েছে কোনো মওলানার ফতোয়া ছাড়াই।

• পঙ্গু হয়ে কয়েক বছর শয্যাগত থাকার পর একজনের মৃত্যু হলে সাধারণ মানুষ দাবি করেছে কাফফারা না দিলে তাঁর জানাজা হবে না। কারণ তিনি এত বছর নামাজ পড়েননি।

• কোনো এক কলেজের শিক্ষক ছাত্রীদের বোরখা পড়তে বাধ্য করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও হাইকোর্টকে এগিয়ে আসতে হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর নির্দেশ দিয়েছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না। (‘জনকণ্ঠ’, ২৬ আগস্ট ২০১২)

• রংপুরে এক এসআই ১৯ জন মেয়েকে থানায় ধরে নিয়ে আসে বোরকা না পরে পার্কে গিয়েছিল বলে। সেখানেও কোর্টকে এগিয়ে এসে সেই পুলিশকে তলব করে এবং এ ধরনের অপকর্ম নিষিদ্ধ করে। (‘জনকণ্ঠ’, ৩ মার্চ ২০১০)

এরকম অজস্র উদাহরণ প্রমাণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে শরিয়া আইন প্রয়োগ করার উগ্র প্রবণতা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। এই একই ধরনের ঘটনা ৪০-৫০ বছর আগে সেই দেশেও ঘটেছিল। এবারে কী পদ্ধতিতে শরিয়াকরণটা হচ্ছে তা দেখা যাক।

• দেশে মাদ্রাসার সংখ্যা কমপক্ষে তিন লাখ। (‘জনকণ্ঠ’, ১৫ মে ২০১৩)।

এগুলোর প্রায় সবাই শরিয়া আইনে বিশ্বাস করে ও ছাত্রদের সেই শিক্ষা দেয়। এগুলো থেকে প্রতি বছর সমাজে আসছে লক্ষ লক্ষ শরিয়া সমর্থক যারা সমাজের প্রতি স্তরে তাদের প্রভাব খাটাতে থাকে। শরিয়াপন্থী মওলানা-মুফতিরা এখন এক নিমেষে বহু হাজার যুদ্ধংদেহী তরুণকে রাস্তায় নামানোর প্রচণ্ড ‘স্ট্রিট পাওয়ারে’র অধিকারী। ৫ এপ্রিল ২০১৩ শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের লক্ষ লোকের সমাবেশ তার প্রমাণ। এ বাহিনী আগামীতে অনেক বাড়বে এবং সর্বত্র এর চাপ অনুভূত হবে। এ চাপ ঠেকানোর পদ্ধতি এখনও বাংলাদেশে অনুপস্থিত। এটা সে দেশেও ঘটেছিল, সেখানেও এ চাপ ঠেকানোর পদ্ধতি অনুপস্থিত ছিল।

• অসংখ্য মওলানা-মুফতি নিয়ে দেশজুড়ে শরিয়া সমর্থক আলেম সমাজ গড়ে উঠেছে। জনগণের ওপর এদের প্রভাব প্রচণ্ড। এদের অনেকেই অত্যন্ত উগ্র ও আপত্তিকর ভাষায় হুংকার দিয়ে বক্তৃতা করেন, কারো কাছে এদের জবাবদিহিতা নেই।

• তাদের অসংখ্য কর্মতৎপর ও ধনী সংগঠন জাতির চোখের সামনে শুধুমাত্র তাদেরই ইসলামি ব্যাখ্যা ধরে রেখেছে। তার বিপক্ষে সুফি ইসলামি বা ইসলামের অরাজনৈতিক ধর্মতত্ত্বের বইগুলো লেখা ও প্রচারের সংগঠন নেই বললেই চলে।

• তাদের আছে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান মসজিদ, জনতাকে প্রভাবিত করার সুযোগ যা তারা পুরোটাই নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও নেবেন।

• তাদের আছে দলীয় পত্রিকা এবং সেগুলোতে ক্রমাগত হচ্ছে শরিয়া প্রচার। পক্ষান্তরে তাদের ইসলামি ব্যাখ্যার ভিত্তিহীনতা, কোরান বিরোধীতা, ইসলাম বিরোধীতা ও নারী বিরোধীতা তুলে ধরার তেমন কোনো পত্রিকা নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ইসলামি দলিল ছাপতে বেশিরভাগ সেক্যুলার পত্রিকা ভয় পায়।

• এটাও শরিয়াপন্থীদের আরেকটা বিরাট সাফল্য। তারা জনগণ, সরকার, মিডিয়া, টিভি-রেডিও-সংবাদপত্র প্রকাশনাসহ সারা জাতিকে ভয় পাওয়াতে সক্ষম হয়েছেন। এটা আরও বাড়বে বৈ কমবে না।

• তাদের আছে দুনিয়াজুড়ে ‘ফেইথ-কাজিন’ সংগঠগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। পক্ষান্তরে আমাদের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ ভোগে অহংরোগ, গর্ব, একগুঁয়েমি ও সাংগঠনিক ব্যর্থতায়। টাকার জোর বা আন্তর্জাতিক সমন্বয়ও তাদের নেই।

• ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জামায়াত ঘোষণা দিয়েছে: দেশজুড়ে মহাশরিয়া কোর্টের জটাজাল বানানো হবে। গ্রাম থাকবে উপজেলার নিয়ন্ত্রণে, উপজেলা থাকবে জেলার নিয়ন্ত্রণে, এভাবে হাজার হাজার শরিয়া কোর্টের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে বায়তুল মোকাররমের খতিবের হাতে। জামায়াত যদি সত্যিই তা করতে পারে তবে জাতি শরিয়া কোর্টের জটাজালে মাছের মতো আটকে যাবে। তারা ‘আইন’, ‘কোর্ট’ এসব শব্দ এড়িয়ে এমন নাম দেবে যে এটাকে আইন দিয়ে ধরা যাবে না।

• ইসলামি টিভি চ্যানেলগুলো তো আছেই, অন্যান্য প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলে ইসলামি প্রোগ্রাম চলে। প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রে ইসলামি অংশ থাকে যার প্রত্যেকটিই শরিয়াপন্থী। জনগণের ওপর এসবের প্রভাব সুস্পষ্ট।

• আওয়ামী লীগ সরকারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে। (‘ইনকিলাব’, ২০ আগস্ট ২০১১) প্রস্তাবটা সম্ভবত সংসদে পাসও হয়ে গেছে। বাংলাদেশে কয়েকটা বেসরকারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেগুলোতে নির্ভেজাল মওদুদিবাদ পড়ানো হয়। সরকারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের হাতেই যাবে।

• দাবি এসেছে ন্যাশনাল ফতোয়া বোর্ড গঠনের।

• বায়তুল মোকাররমের খতিবকে প্রধান বিচারপতির মর্যাদা দিতে হবে– এ দাবি বহু আগে থেকেই ছিল।

এরকম আরও ঘটনা ঘটছে। সমস্যা হল সে দেশের মতো এখানেও আমাদের শরিয়াপন্থী মওলানারা সাংঘাতিক নারীবিরোধী। তাদের ওয়াজ, বক্তৃতা ও নিবন্ধে তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তাদের নারীবিরোধী অবস্থান এতই স্পষ্ট যে, প্রগতিশীল শক্তি বিশেষ করে নারীশক্তির সঙ্গে তার সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও বিপজ্জনক। উদ্ধৃতি দিচ্ছি শরিয়াপন্থী মওলানা ও তাদের দৈনিক থেকে (দৈনিকটির নাম উহ্য রাখা হল):

• ইসলামে নারীদের পুরুষের অধীন করা হয়েছে – ১২ নভেম্বর ২০০৫।
• রাজনীতিতে নারীর ৩৩% আসন শরিয়তবিরোধী – ২৬ মে ২০০৭।
• গায়িকা ও নারী-আবৃত্তিকার নিষিদ্ধ – ০৫ জুলাই ২০০৮।
• নারীদের নোংরা ভাষায় গালাগালি – ২৩ জুলাই ২০০৮, ৩ ডিসেম্বর ২০০৫, ১১ ও ২২ জুলাই ২০০৫, ২৮ আগস্ট ২০০৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০০৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০০৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০০৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭।
• নারী নীতিমালার বিপক্ষে খোলাখুলি অবস্থান – ১৯ মে ২০০৬, ১৪ মার্চ ২০০৮।
• নারীরা শুধুমাত্র নারী-সংক্রান্ত বিষয়ে আইনবিদ হতে পারবেন, তাও অভিভাবকের সম্মতিক্রমে – ৮ মার্চ ২০১০।
• নারীকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হোক, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে খেলাফত আন্দোলন দলের প্রস্তাব – ১৩ জুলাই ২০০৮।
• নারীরা তেঁতুলের মতো, দেখলে পুরুষের জিহ্বায় পানি আসে -(ওয়াজ)।
• নারীদের পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়ানো উচিত নয় (ওয়াজ)।
• কর্মজীবী নারীরা বেশ্যা (ওয়াজ)।
• “আমাদের বড়জনও নারী, মেজোজনও নারী, সেজোজনও নারী, তাই আমরা একটা ‘মাথা খারাপ’ জাতি” (ওয়াজ)।

সেদেশের নাম পাকিস্তান, দুনিয়ার অন্যতম ব্যর্থ রাষ্ট্র। সেখানে অমুসলিমের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় শূন্যে এসে ঠেকেছে, সেখানে অহরহ শিয়া-সুন্নি-আহমদির হানাহানি রক্তপাত, সেখানে ক্রমাগত আত্মঘাতী হামলায় বাস-ট্রেন-বাজারে শত শত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মসজিদের নামাজীরা পর্যন্ত মরে পড়ে থাকে, সেখানে হত্যাকারীর নামে রাস্তা ও পার্ক বানানো হয়, ধর্ষণের চারজন মুসলিম সাক্ষী না হলে ধর্ষকের শাস্তি হয়নি বহু বছর।

এটা ওদের হুদুদ আইন নং ৭, ১৯৭৯, আইন ৮ এর খ, ১৯৮০ দ্বারা সংশোধিত। শরিয়া সমর্থকদের প্রচণ্ড বিরোধীতার জন্য এ আইন বহু বছর বাতিল করা যায়নি, সম্প্রতি বাতিল হয়েছে। সেখানে তিন হাজারের বেশি ধর্ষিতা ১০-১২ বছর জেল খেটেছেন, কারণ তাঁরা ধর্ষণের চারজন সাক্ষী আনতে পারেননি। এটা ওদেশে হয়েছে, হতে পারে এখানেও। ইসলামি নেতৃত্বকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে ও তার সঙ্গে আপস করার কী মারাত্মক ফল হয়েছে, তা থেকে আমাদের রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

ঘটনা যেভাবে ঘটছে তাতে একদিন গণতান্ত্রিক ভোটেই বাংলাদেশ ‘শরিয়া রাষ্ট্র’ হয়ে যেতে পারে যেমন মিসরে ঘটেছে। আমাদের কিছুটা দেরি হয়েছে, কিন্তু পথ এখনও আছে, উপায় এখনও আছে। তা হল, জাতিকে শরিয়া সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলা। জাতিকে জানানো যে হানাফি ও শাফি আইনের কিতাবে প্রত্যেকটিতে যে ছয় হাজারের বেশি আইন আছে তার বেশিরভাগই ভালো, কিন্তু কিছু আইন লঙ্ঘন করে কোরান, রাসুল (সা.) ও মানবাধিকার। সেগুলো যুগোপযোগী করতেই হবে। সব মিলিয়ে শরিয়া আইনের সিংহভাগ মানুষের তৈরি।

• আরও উচিত দুনিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামি সংগঠন নাহদলাতুল উলামার ‘ইসলামি রাষ্ট্রের বিভ্রম’ (‘The Illusion of An Islamic State’) বইটার বাংলা অনুবাদ করে জাতির কাছে পৌঁছে দেওয়া। ২০০৩ সালে এ সংগঠনের সদস্য ছিল মোটামুটি চার কোটি। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট হাজি আবদুর রহমান ওয়াহিদ ছিলেন পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিমপ্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট।

• আরও দরকার ড. বাসাম তিবি, ড. আবদুল্লাহ আন নাঈমের মতো শরিয়াবিরোধী ইসলামি বিশেষজ্ঞদের বইগুলো অনুবাদ করে জাতির কাছে পৌঁছে দেওয়া।

• আরও উচিত জাতিকে জানানো কেন ড. হাশিম কামালির মতো শরিয়া বিশেষজ্ঞেরা (তাঁর অসাধারণ গবেষণার বই ‘প্রিন্সিপলস অব ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স’) ব্যাকুল হয়ে মুসলিম বিশ্বকে শরিয়া আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করেছেন।

• দেশেও কিছু কাজ হয়েছে। বই আছে ‘শারিয়া কী বলে, আমরা কী করি’, ডকুমুভি বানানো হয়েছে ‘নারী’, ‘শরিয়া প্রহেলিকা’ ও ‘হিল্লা’; এখন আমাদের দায়িত্ব এগুলো ছড়িয়ে দেওয়া।

এসবের ভিত্তিতেই বেশকিছু মুসলিমপ্রধান দেশের ইমামরা শরিয়াভিত্তিক ইসলামি ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইতিহাস ব্যাকুল হয়ে বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে আমাদের, কিন্তু আমরা বিপুল অহংকারে সে হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে যাচ্ছি, করেই যাচ্ছি। আমরা বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছি এই বলে যে ঝড়টা আসছে না। কিন্তু–

প্রকৃতির কিছু বিধান রয়েছে বাকি,
অন্ধ সে বিধি কাউকে ছাড় দেবে না,
কেউই পারেনি সেইখানে দিতে ফাঁকি,
সুদে ও আসলে গুনতে হয়েছে দেনা!


লেখক : ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য, মুসলিমস রিফর্ম মুভমেন্ট ও আমেরিকান ইসলামিক লিডারশিপ কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন