শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘশাষনে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জাতীয় নৈতিকতার উন্নতিও ঘটেছে প্রভূত।
(রুহুল  আমিন  মজুমদার)

     আওয়ামীলীগ সরকার অদ্য ৩০/০০৫/২০১৭ইং জাতীয় সংসদের দুইবারের নবম বা দ্বিতীয়বারের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ চারলক্ষ কোটি টাকারও বেশী চুতুর্থ  উন্নয়ন বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। বিগত আটটি উন্নয়ন বাজেটের জনজীবনে প্রতিফলন সম্পর্কে বিশদ বিবরনী তুলে ধরা আমার অদ্যকার লেখনীর উদ্দেশ্য নয়।  আমার অদ্যকার আলোচ্য বিষয় শেখ হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শাষনের আর মাত্র দেড় বছর বাকী থাকাবস্থায় বাঙ্গালী জাতীর সর্বপেক্ষা গৌরবের অর্জন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত জাতীর বিশেষ কয়েক অর্জনের উজ্জ্বল প্রতিস্থাপন সম্পর্কীত বিষয়ক।
    দেশী বিদেশী উন্নয়ন সহযোগি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির আশাব্যাঞ্জক উক্তি,উন্নয়ন সুচকের ব্যাপক উধ্বগতি, বিশাল বিশাল উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি-''আওয়ামী লীগের প্রচার সেলের বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে জনগনকে নিশ্চয়ই অবগত করছেন এবং আরো করবেন।
    যে বিষয় গুলীর প্রতি অনেকেরই দৃষ্টি নিবন্ধিত ছিলনা, অ-শুভ শক্তির দীর্ঘশাষনে জাতীয় চরিত্রে একান্ত অগোচরে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অ-ঘোষিত ভাবে তাঁদের মননে গেঁথে দিয়ে তাঁদের মননের সসার্বিক পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছিল তেমন কিছু বিষয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করব। অনেকগুলী উল্লেখযোগ্য  বিষয়ের মধ্যে  আমি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তিনটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

(১) আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাষনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকারী দল হিসেবে বাঙ্গালী জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম গৌরবের অর্জন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্মরনীয়,বরনীয় দিনগুলীর মধ্যে ঘোষিত অন্যতম কয়েকটি 'জাতীয় দিবসে'র মায্যদাপ্রাপ্ত দিনের প্রতিপালনে উৎসাহ উদ্দিপনা, স্ব-প্রনোদিত মনোভাবের পরিবর্তন, জনসচেতনতা, ভাব গাম্ভিয্যতা, সর্বোপরি দিবসের যথাযথ পবিত্রতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।

(২) দীর্ঘ ক্ষমতা উপভোগের পরেও দলগত ভাবে আওয়ামী লীগ এবং তাঁর প্রধান নেত্রীর জনপ্রীয়তায় ধ্বসতো নামেইনি বরঞ্চ ক্রমশ: উধ্বগামীতার ধারাবাহিকতা নিয়ন্তর ধরে রাখতে পেরেছে। অনেক ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য ভাবে দলের চেয়ে তাঁর নেত্রীর জনপ্রীয়তার পারদ সর্বোচ্ছ পয্যায় অবস্থান নিশ্চিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে নিতে পেরেছেন।এমন ব্যাতিক্রমি দৃষ্টান্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যকোন নেতানেত্রীর দীর্ঘ শাষনের ক্ষেত্রে পরিদৃষ্ট হয়না। রাষ্ট্রের উন্নতি অগ্রগতির প্রসংশা সূচক সনদের পাশাপাশি সরকার প্রধান শেখ হাছিনার রাষ্ট্রপরিচালনায় একক কৃতিত্বের সনদের বহরের দিকে চোখ পেরালে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
(৩) বাংলাদেশকে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল ও সরকার প্রধানের উত্তরাধিকারী দ্বারা পরিচালিত সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় ফিরিয়ে নিতে বহুবীদ কায্যক্রম পরিচালনার ফলশ্রুতিতে জনমনে ব্যাপক পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছেন। যেমন:--
    (১) আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত হবে এহেন বিশ্বাস দূর হয়ে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরিক্ষিত সুহৃদ বন্ধু রাষ্ট্রের অভিধায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামীলীগের নেত্রী বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলী দেয়া তো সূদুরপরাহত বরঞ্চ স্বার্থ্য আদায়ের ক্ষেত্রে অন্যতম কৌশলী, অনড় ভূমিকায় দেশে বিদেশে সাহষী নেত্রী ও সরকারের প্রশংসাই কুড়িয়েছেন অধিক হারে।
  (২)আওয়ামীলীগ দল ও সরকার নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী দলের অপ-প্রচারের মূখে চপেটাঘাত করে বিগত আট বছরের শাষনে দল ও সরকার  অন্যতম ধর্মীয় সহিঞ্চু দল ও সরকারের মায্যদায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।দেশের অভ্যন্তরে অন্যতম মৌলবাদি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্টি 'হেফাজতে ইসলাম'' কতৃক বিশাল ধর্মীয় মজলিশে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার প্রধানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে সমসাময়িক সময়ে বক্তব্য ও বিশেষ মোনাজাত তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমান বহন করে।
    (৩) '৭৫ পরবর্তী সেনাশাষক, স্বৈর শাষক, অনির্বাচিত শাষক কতৃক লুটপাটের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনায়ন আওয়ামীলীগ সরকারের যুগান্তকরি সাফল্য হিসেবে বিবেচিত।এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সরকার ও তাঁর প্রধান শেখ হাসিনা  দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রসংশার ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছ। ধারাবাহিক দুর্নীতির শীর্ষে থাকা ভিক্ষুক দেশ ও জাতিকে ধারাবাহিক উন্নতি অগ্রগতির ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন তো বটেই নিম্নমধ্য আয়ের দেশে রুপান্তর এবং জাতিকে বিশ্ব দরবারে মায্যদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। শেখ হাসিনা গরীব বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নয়নকামী দেশ সমূহের রোল মডেলে রুপান্তর করেছেন মর্মে বিশ্বব্যাংকের সনদ উক্ত সত্যকে প্রতিষ্ঠিত রুপ দিয়েছে।
   (৪) মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, জয়বাংলা সম্পর্কে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠিতকরণ নেতিবাচক ধ্যান-ধারনা, অ-সম্মান, অশোভন, অপমানজনক মনোভাবের ক্রমান্বয়ে  কবর রচিত হয়ে তদস্থলে  উক্ত শব্দমালা মায্যদা, সম্মান, গৌরব, শৌয্য-বিয্যে, অহমিকা, অহংকার গৌরবের শব্দমালায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।একদা মুক্তিযুদ্ধে মা-বোনদের ইজ্জতদানকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে  হেয়প্রতিপন্ন করার কারনে তাঁদেরকে বিশেষ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের নিমিত্তে খোঁজখবর করেও পাওয়া যেতনা। এক্ষেত্রে সরকারের একাধিক সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ইতিবাচক পদক্ষেপের কারনে বিরঙ্গনার তালিকায় নাম অন্তভূক্তির অহর্নিশ প্রচেষ্টা  জাতিকে গর্বিতের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং বিরঙ্গনা মা- বোনদের জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত করছে।
  (৫) '৭৫ পরবর্তী সময় থেকে লক্ষ করা যায়--সম্মিলীত অ-শুভ শক্তির মূল কাজ গোয়েবলসীয় কায়দায়--মিথ্যা, অপ-প্রচার, ষড়যন্ত্র, প্রপাকান্ড  গুজবাকারে বাজারে ছেড়ে দেয়া। উক্ত ছড়িয়ে দেয়া বিষয়টির সত্যতা থাক বা না থাক তাঁদের কিছুই আসে যায় না। ছড়িয়ে দেয়া বিষয়টি বাজারে একান ওকান হয়ে ঘুর্ণায়মান থাকাই তাঁদের উদ্দেশ্য। "ইতিমধ্যে নিন্দনীয় এই প্রকৃতির  হাজারো ঘটনা জাতিকে শুধু বিভ্রান্তই করেনি, সাধারন জনগনের ইমান, আকীদা, ধর্মীয় বিশ্বাস ও চেতনায় বড়রকমের চিড় ধরাতেও সক্ষম হয়েছিল। ইসলাম ধর্মের পাদভুমি পবিত্র মক্কা ও মদীনার ইমামদ্বয়ের প্রকাশ্য জনসভায় উগ্র ধর্মীয় মতবাদের বিরুধীতা করে দেয়া বক্তব্য বাঙ্গালী জাতিকে নতুন করে ধর্মীয় চেতনায় উদ্ভোদ্ধ করেছে।
    উল্লেখিত আলোচনার যুক্তি যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করার নিমিত্তে কিছুটা পেছনের দিকে চোখ ফেরানো প্রয়োজন মনে করি।
       ২০০৮ইং এর ২৯ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘মহাজোট’ ভূমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা 'শেখ হাসিনা' দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর পরবর্তী একবছরের মাথায় ২০০৯-এর ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক সর্বসম্মত রায়ে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির চূড়ান্ত রায় দিয়েছে।জাতির জনকের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্তিতে দেশ ও জনগনকে পিতা হত্যার দায়মুক্ত করেছে সর্ব উচ্চ আদালত। পিতৃহত্যার দায়ে বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের কটাক্ষপুর্ণ চাহনি থেকে বাঙ্গালী জাতি মুক্ত হয়েছে।

   বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারের হত্যার পর ৩৫ বছর (মাঝে ৫ বছর আওয়ামী লীগ শাসন ছাড়া) তাঁর সৃষ্ট দেশে তাঁকেই অপাঙ্ক্তেয় করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস উদযাপন ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।এই সময়কালে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা আওয়ামী লীগ, প্রতিবেশী মিত্র দেশ ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে এবং সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উসকে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। তারা কথায় কথায় ভারতকে বাংলাদেশের সব সমস্যার জন্য দায়ী করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তাদের স্বার্থ হাসিল করার প্রয়াস পেয়েছে।

         জিয়া-এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার জোট সরকারের আমলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালের বন্ধু প্রতিবেশী ভারতকে হেয় করার জন্য সর্ব বিষয়ে "ভারত বিদ্বেস" ছড়ানোর উদ্দেশ্যে মিডিয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে চলতে স্বস্তিবোধ করে। তাদের শাসনামলে পাকিস্তানের কুখ্যাত 'আইএসআই' রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেছে। ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য আইএসআইকে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে ট্রেনিং, অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে অকারণে কুৎসা রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।

     ভারত ৯ মাস বাংলাদেশের ১কোটি শরণার্থীকে খাইয়ে-পরিয়ে অতুলনীয় সহযোগিতা করেছে। লাখ লাখ মুক্তিবাহিনীর সদস্যকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে হানাদার পাক বাহিনীর মোকাবেলা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের হাজার হাজার সেনাবাহিনী সদস্য রক্ত দিয়েছে।  অপ-প্রচার বাজারে চালু আছে--ভারতীয় সৈন্য ফিরে যাওয়ার সময় আমাদের সব সম্পদ নিয়ে গেছে। সেগুলো ফলাও করে প্রচার করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এ দেশীয় পাকিস্তানি দালালরা কখনো বিবেকের দংশন অনুভব করেনি।

      শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাসীন না হয়ে অন্য কেউ ক্ষমতাসীন থাকলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাফল্য আসতে কত যুগের প্রয়োজন হত তিব্বতের দালাইলামার দিকে তাকালেও অনুমান করা যেতে পারে। অথবা পাকিস্তানের অন্য দুই প্রদেশের দিকে তাকালেও বিবেকবানদের বুঝা কষ্ট হয়না। যুগ যুগ ধরে দালাইলামা যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছেন, আমাদেরও তেমন অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। মহান নেত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী নিজের দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করে, পরাশক্তি আমেরিকা ও চীনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, ভারতকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি দিতে মিত্রবাহিনী গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নেত্রীকে খাটো করতেও পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা পিছ-পা হয়নি। এর চেয়ে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে বাঙ্গালী--'আর কি হতে পারে'?

      যে রেসকোর্স ময়দানের মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীনতার পর--ঢাকা সফরকালে বঙ্গবন্ধুসহ ভাষণ দিয়েছিলেন রেসকোর্সের ময়দান থেকে। পাকিস্তানের তিরানব্বই হাজার সু-সজ্জিত সৈন্য আত্মসমর্পন করেছিল রেসকোর্স ময়দানে।রেসকোর্স ময়দানকে মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ঘোড়া দৌড়ানীর নামে বিশাল অংকের 'জুয়া' নিষিদ্ধ করে গাছের বাগান করে  নাম রেখেছিলেন 'সরওয়ার্দী উদ্যান।' সেই সরওয়ার্দী উদ্যানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছিল স্বৈরচারি সরকার সমুহ।   তাঁদের মিত্রের মাথানিছু করে আত্মসমর্পনের গ্লানিমুক্ত করতে ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ ভেঙে শিশু পার্ক নির্মাণ করেছিলেন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া। অথছ উদার মনোভাব প্রদর্শন করে ভারতের জনগণ কলকাতা শহরে দুটি সড়কের নামকরণ করেছে --"শেরেবাংলা ও বঙ্গবন্ধুর নামে।" বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধী বা ইন্দিরা গান্ধীর নামে কোনো সড়ক বা স্থাপনার নামকরণ করতে পারেনি।

    বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ টাওয়ার ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ করে জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট, বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকাজুড়ে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ার প্রচেষ্টা চলছে।মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক আরো অনেক স্থাপনা সেখানে নির্মাণের পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে।সর্বপেক্ষা ভাল হত যদি 'ইন্দিরামঞ্চ'কে আবার পুন:প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হত।অহিংস দর্শনের জনক 'মহাত্মা গান্ধীজির' নামে কোন স্থাপনা নির্মান করা সম্ভব কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার।বিশ্বের দেশে দেশে মহত্মা গান্ধীজির নামে স্থাপনা রয়েছে--বাংলাদেশ ব্যাতিক্রম হতে পারেনা ঐতিহাসিক কারনেই।ভারতীয় উপমহাদেশ ইংরেজ শাষন শোষন মুক্ত করতে গান্ধীজির ভুমিকা অ-স্বীকারের কোন উপায় নেই, আমরাও তাঁরই অংশ।ইতিহাসের পরতে পরতে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা হয়ে গেছে।

      বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদরদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।যুদ্ধাপরাধীদের পরিবার পরিজনদের দ্বিতীয় শ্রনীর নাগরিক করার উদ্যোগ এখনই নেয়া উচিৎ।সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করার তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন পয্যায় কর্মে নিয়োজিতদের ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করা সময়ের দাবি।তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

 লক্ষ করলে দেখা যায়--অশুভ শক্তিসমূহের বিচার প্রক্রিয়া যতই ত্বরান্বিত হচ্ছে জাতিয় দিবস সমূহের প্রানচাঞ্চল্যতা ততই ভাবগম্বিরতা নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে।এবারের বিজয়দিবসে স্ব-প্রনোদিত প্রানচাঞ্চল্যতা তাঁরই প্রমান বহন করে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চক্রান্তে পরিচালিত 'আগুন সন্ত্রাসের' বিচারকায্য সম্পন্ন করা হলে তাঁদের অস্তিত্ব বাংলার মাটিতে আর খোঁজে পাওয়া যাবেনা।

     অশুভশক্তি নিচ্ছিন্ন হতে চলেছে তাঁর ঈঙ্গিত বহন করে ; কিছুদিন আগে অনুষ্ঠানেয় 'নাসিক' নির্বাচনের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দিলে। বাংলাদেশের জনগন দুইবার কোন প্রার্থীকে নির্বাচিত করার নজির খুব কম। দুইবার সরকার পরিচালনা করার সুযোগ দেয়ার নজির এযাবৎ কালের বাংলাদেশের( পাকিস্তান আমল সহ) ইতিহাসে নেই। নারায়ন গঞ্জের নির্বাচনে উভয় নেতিবাচক দিক বিদ্যমান থাকা সত্বেও সর্বকালের অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর বিশাল বিজয়--"মুক্তিযুদ্ধের মুলচেতনায় ফিরে যাওয়ার জনগনের ইচ্ছার বহিপ্রকাশই-- আমি মনে করি"।

     বাংলাদেশের সংবিধানকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতিকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে পুনর্বিন্যাস করার সময় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ফেব্রুয়ারি (২০১৭) মাসে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন, এই সুযোগে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর (বিশেষ করে ভিসা জটিলতা, তিস্তাসহ অন্যান্ন অভিন্ন নদীর পানি বন্টন) মীমাংসা এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ও সহযোগিতার নবযুগের সূচনা হবে। পঁয়তাল্লিশতম বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত জনগণের সামনে যে সুযোগ উপস্থিত হয়েছে তা কাজে লাগিয়ে একাত্তরের চেতনায় জেগে ওঠার সময় এসেছে।

     যে তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ ইং সালে, সেই তত্ব জনগণের কাছে সঠিকভাবে এককেন্দ্রিকভাবে হচ্ছেনা। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য সমুহকে নিয়ে সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ বক্তব্য উপস্থাপন করা। এখানে কোনো প্রকার অ-স্বচ্ছতার স্থান নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে একেকজন একেক রকম উক্তি করবেন এটা একেবারেই অবাঞ্ছনীয়। জাতীয় চার মূলনীতি সম্পর্কে  ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের যারা বিরোধী তারা তো  বাংলাদেশের শত্রু। তারা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে না। তাঁরা চায় জাতি রাষ্ট্রকে ধর্মরাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে।

 স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এই বিতর্কের অবসান হওয়া খুবই প্রয়োজন।  রাষ্ট্রীয় আদর্শকে উহ্য রেখে তাঁর দর্শনকে ভুলুন্ঠিত করে জাতি হিসেবে আমরা অগ্রসর হতে পারবনা।এবারের বিজয় দিবসে স্ব-প্রনোদিত আনন্দ উল্লাস এবং নাসিক নির্বাচনে বিশাল জয়--"সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের মুলচেতনায় ফিরে যাওয়ার জনইচ্ছাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের মুল্যায়ন করা উচিৎ বলে আমি দৃড়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি।

বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রধান নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার অবস্থান অদ্বিতীয়। জাতির জনকের কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা যতটুকু জাতীয়তাবাদের ধারনা ধারন করতে পেরেছেন তাঁর সিকিভাগও অন্যকোন নেতানেত্রী ধারন করতে পারেননি। বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল দর্শনের সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসের কারণে অশুভ শক্তি এখনও শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাঁরা জানে শেখ হাসিনা নেই--"বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই, বাংলাদেশের দর্শন নেই"। স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁদের ধ্যানে জ্ঞানে শেখ হাসিনা হত্যা ছাড়া আর কিছুই নেই।শেখ হাসিনা ছিল বলেইতো বঙ্গবন্ধু সদর্পে, স্বমহিমায়,আরো উজ্জল আলোকচ্ছটায় ফিরে এসেছে--তাঁদের বিধ্বংসি মনোভাব অমূলক নয়, বরঞ্চ আমাদের বিশ্বাসে ফাঁকা রয়েছে যথেষ্ট।
       masterruhulamin
@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন