বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতিরজনক বিশ্বের স্বাধীন দেশসমূহের মধ্যে তুলনামূলক ১২অন্যন্ন বৈশিষ্ট মন্ডিত৷৷ 
   
বিচায্য বিষয়ঃ--
(১) বিকাশমান মানব সভ্যতার ইতিহাসের প্রারম্ভিক সময়কাল হতে সাম্প্রতিক সময়কালের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক জাতিসত্বার উত্থান, অভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি সম্পন্ন একক জাতির স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের উদ্ভব;
  (২) জাতিগত সম্মিলীত চেতনাবোধ, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস, আনুগত্যতা, ত্যাগ, তিতিক্ষা;
(৩) একক  নেতার নেতৃত্ব, নেতার দার্শনিক মতবাদ, স্বাধীনতা বা মুক্তি'র অভিষ্ট লক্ষে ধারাবাহিক নেতৃত্ব; নেতৃত্বের ত্যাগ, আপোষহীনতা, সাহষ, দুরদর্শিতা, বিচক্ষনতা, একাগ্রতা, দেশপ্রেম, জাতিত্ববোধ, পরিপক্কতা৷

সংযুক্ত বিষয়ঃ--
  (১)উল্লেখিত সময়কালের মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও জাতী কতৃক জোর জবরদস্তি অথবা কৌশলগত শোষন, শাসন৷ (২)শাসক শোষক শ্রেনীর বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নিয্যাতীত জাতী-গোষ্টির আন্দোলন সংগ্রামে সৃষ্ট নতুন নতুন জাতি সত্বার অভ্যুদ্বয় ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের উদ্ভব৷ (৩)  স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের উৎপত্তি পয্যালোচনার আলোকে উক্ত বিষয় সমূহের সহিত নীবিড়ভাবে জড়িত প্রধান কারিগরের নেতৃত্বে সৃষ্ট স্বাধীনতার ইতিহাস পয্যালোচনা৷

  উদ্দেশ্যঃ--
উল্লেখিত বিষয়ের অন্তরালে একক অনবদ্য নেতৃত্ব দাতার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ধারাবাহিক নেতৃত্বে'র গুনগত বৈশিষ্ট সমূহের 'সাদৃশ্য--বৈসাদৃশ্য' পয্যালোচনা৷

বিবেচ্য সময়কালঃ-সপ্তদশ শতক--উনিশশতক৷
  পাঠক বন্ধুদের বোধগম্যতা সহজিকরণে নিম্নে সপ্তদশ শতকের শেষার্ধে স্বাধীনতা ও মুক্তির লক্ষে আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপৃত দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম একাধিক দেশ ও জাতী এবং উনিশ শতকের শেষার্ধে আধুনিক যুগের স্বর্ণময় সময়ের কয়েকটি দেশ ও জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও অর্জনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বিধৃত করা প্রয়োজন৷নিম্নে বর্ণিত তালিকার প্রথমে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় হতে বাঙ্গালী জাতির মুক্তির জন্য মুক্তি সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং বর্ণিত দেশ সমূহের তদ্রুপ আলোচনায় দৃশ্যতঃ নেতৃত্বের ব্যাতিক্রমি বৈশিষ্ট সমূহ পরিদৃষ্ট৷ 
 
   বাংলাদেশের স্বাধীনতাঃ--
   ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হয় এবং ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় ভারত। নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তান দুই হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত দুটি প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত হয়--পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে অবস্থিত এ দুটি অংশের মধ্যে মিল ছিল কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মে। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে বঞ্চিত হতে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস।
  পশ্চিম পাকিস্তান সৃষ্টির গোড়াতেই নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের তিন প্রদেশের এক প্রদেশ পাঞ্জাবের পাঞ্জাবীদের হাতে ছিল৷ পাকিস্তানের উভয় অংশের জনগন একই ধর্মালম্বি সত্বেও পুর্ব পাকিস্তানকে দীর্ঘকাল শোষন শাসনের লক্ষে রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রারম্ভে, পুর্বাঞ্চলের বাঙ্গালী অধ্যুষিত জাতির মাতৃভাষা বাংলা ভাষাকে পরিবর্তন করে উর্দু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা শুরু করে৷ উক্ত লক্ষকে সামনে রেখে শাসকচক্র পাকিস্তান রাষ্ট্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা উর্দু করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়৷ তাঁরা উর্দু হরফে কিম্ভুৎকিমাকার এক বাংলা লিখন পদ্ধতি আবিস্কার করে এবং বই পত্র ছাপিয়ে পুর্ব পাকিস্তানের শিক্ষালয়ে পাঠ্যসুচিতে অন্তভূক্তির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়৷
  পুর্ব পাকিস্তানের অধিবাসিগন মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে ধীরে ধীরে সোচ্চার হয়ে উঠে৷ ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা রক্ষার সাংস্কৃতিক আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে শাসকচক্র আন্দোলন দমনে ছাত্রদের মিছিলে নির্বিচারে গুলী চালিয়ে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে হত্যা করে৷
 উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার জাতি গোষ্টির, হাজার হাজার ভাষায়  মনের ভাব প্রকাশ করে৷ অনাদিকাল হতে বহু জাতি-গোষ্টি, বহু জাতি গোষ্টিকে শাসন-শোষন অব্যাহত রেখেছে৷ শাসক শ্রেনী কতৃক শোষিত শ্রেনীর ভাষা পরিবর্তন করার চেষ্টার একাধিক ইতিহাস আছে, তবে রক্তক্ষয়ী চেষ্টার ইতিহাস নেই৷  একমাত্র মাতৃভাষায় জ্ঞান চর্চা ও কথা বলার অধিকার আদায়ে  বাঙ্গালীরাই রক্ত দিয়েছে৷
   বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম ভাষার মায্যদা প্রাপ্তির পরও তাঁর আবেদন শেষ হয়নি৷  ভাষা আন্দোলনের সুত্র ধরে অত্রাঞ্চলে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে বাঙ্গালী জাতির স্বাতন্ত্রতা বোধ৷  উম্মেষ ঘটতে থাকে ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ভিত্তিক জাতীয়তাবোধের চেতনা৷ বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধের চেতনা গভাবস্থায় জম্ম নেয় এক অদম্য সাহষী জাতীয়তাবাদী  নেতার৷ তাঁর বিচক্ষনতা, দুরদর্শি নেতৃত্বে বাঙ্গালী জাতির জাতিত্ববোধ শানিত হতে থাকে৷ তাঁর নেতৃত্বের ক্যারিশমায় দখলদার শাসক শোষক শ্রেনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামের অগ্নিশিখা ক্রমান্বয়ে উজ্বল থেকে উজ্বলতর হতে থাকে৷তিনি আর কেউ'ই নন, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান৷ তিনি বাঙ্গালীর জাতির মুক্তিসনদ ৬দফা প্রনয়ন করেন এবং ৬দফাকে অনুষঙ্গ করে বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার অভিষ্ট লক্ষাভিমূখে ধাবিত করেন৷

১৯৭০-এর সাধারন নির্বাচনঃ--
পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয়, যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে।
   কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই অংশের জন্যে থাকবে দু'জন প্রধানমন্ত্রী। "এক ইউনিট কাঠামো" নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। মার্চের ৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম অংশের এই দুই নেতা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতিকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না। মুজিব সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন।

৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনঃ--
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণে তিনি ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগেই বাস্তবায়নের জন্য চার দফা দাবি পেশ করেন:
(১)অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
(২) সামরিক বাহিনীকে সেনানিবাসে ফিরে যেতে হবে।
(৩) নিহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধান করতে হবে।
(৪) ২৫ মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
শেখ মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন--"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"। তাঁর এই ভাষণ গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উন্মাতাল করে তোলে।

শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের অধিকার অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার ক্ষমতা কোনো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি ছিলনা। যদিও ৩মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং সামরিক বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বুনতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৫ দিনের হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর আহবানে পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে যায়। সামরিক সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, কিন্তু এতে আন্দোলন প্রশমিত হয়নি। ৫ দিন হরতাল শেষে ৭মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।

মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকঃ--
সারাদেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল,তখন ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবের সঙ্গে সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু একই সঙ্গে সামরিকবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। বেলুচিস্তানের কসাই হিসেবে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়, কিন্তু কোন বাঙালি বিচারপতি তাঁকে শপথ পাঠ করাতে রাজি হননি। পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হতে থাকে। ১০ থেকে ১৩ মার্চের মধ্যে পাকিস্তান এয়ারলাইন্স তাদের সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করে পূর্ব পাকিস্তানে জরুরীভিত্তিতে "সরকারি যাত্রী" পরিবহণ করতে। এই "সরকারি যাত্রী"দের প্রায় সবাই ছিল সাদা পোশাকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সেনা। এমভি সোয়াত নামে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই একটি পাকিস্তানি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। কিন্তু বন্দরের নাবিক ও শ্রমিকেরা মালামাল খালাস করতে অস্বীকার করে। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের একটি দল বাঙালি প্রতিবাদকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে, যার মাধ্যমে শুরু হয় বাঙালি সৈনিকদের বিদ্রোহ। অনেক আশা সত্বেও মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সফল হয় নি। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে বাঙালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত প্রদান করে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করেন।

গণহত্যা ও জনযুদ্ধের সূত্রপাতঃ-
 সামরিক বাহিনীর বড় বড় অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন-নির্বিচারে বাঙালি হত্যা করো, তখন দেখবে বাকিরা আমাদের হাত চেটে খাবে।" সে পরিকল্পনা মতোই ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট আরম্ভ করে৷ যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি'র প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেয়া। এরই অংশ হিসাবে সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্র করে হত্যা করা হয়, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয় এবং সারা বাংলাদেশে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়।
   হত্যাকাণ্ডের খবর যাতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে না পৌঁছায় সে লক্ষ্যে ২৫ মার্চের আগেই বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকা পরিত্যাগে বাধ্য করা হয়। তারপরও সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করেন৷ তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে এই গণহত্যার খবর জানিয়েছিলেন। যদিও এই হত্যাযজ্ঞের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা, বাঙালি হত্যা পুরো দেশজুড়ে চালানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছিল তাদের বিশেষ লক্ষ্য। একমাত্র হিন্দু আবাসিক হল--জগন্নাথ হল  পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এতে ৬০০ থেকে ৭০০ আবাসিক ছাত্র নিহত হয়। যদিও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বিকার করে৷
   হামিদুর রহমান কমিশনের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করেছিলো। জগন্নাথ হল এবং অন্যান্য ছাত্র হলগুলোতে পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞের চিত্র ভিডিও টেপে ধারণ করেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনলজি (বর্তমান বুয়েট) এর প্রফেসর নূরুল উল্যা৷ 
   পুরো বাংলাদেশেই হিন্দু এলাকাগুলো বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মধ্যরাতের আগেই ঢাকা পুরোপুরি জ্বলছিল, বিশেষভাবে পূর্ব দিকের হিন্দুপ্রধান এলাকাগুলো। ২ আগস্ট, ১৯৭১ টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, "হিন্দুরা, যারা মোট শরণার্থীদের তিন-চতুর্থাংশ, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ক্রোধ ও আক্রোশ বহন করছিল"।

স্বাধীনতার ঘোষনাঃ--
টেক্সাসে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নথি সংগ্রাহক মাহবুবুর রহমান জালাল বলেন--"বিভিন্ন সূত্র ও দলিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী  প্রমাণিত হয় যে--২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যা ছিল তাঁর বা অন্য কারো হয়ে ঘোষণা দেয়ার অনেক পূর্বে। ২৫ মার্চে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক ভেঙে গেলে ইয়াহিয়া গোপনে ইসলামাবাদে ফিরে যান। এবং গণহত্যা চালানোর পর পাকিস্তানি সেনারা সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুসহ তার পাঁচ বিশ্বস্ত সহকারীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে যান।

 মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপঃ
এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই,আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক। অন্য আর এক সূত্র দাবী করেন--বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআর (পরবর্তি বিডিআর বর্তমানে বিজেপি) ওয়ালেসের সাহায্যে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন৷ ভয়েস অব আমেরিকা পরদিন ২৬মার্চের সান্ধকালীন বাংলা অনুষ্ঠান ও বিবিসি বাংলা সংবাদে খবরটি প্রকাশ করে৷

বিভিন্ন মাধ্যমে ঘোষণাপত্র প্রচারঃ--
২৫-শে মার্চ থেকে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত সকল সাংবাদিককে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ২ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ করে রাখে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সেখান থেকে ঘোষণা হয় যে “শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাতকোটি জনগণকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন”।
   গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে স্বাধীনতার মূল ঘোষক কে তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে ১৯৮২ সালে সরকারিভাবে একটি ইতিহাস পুস্তক প্রকাশিত হয়, যাতে ৩টি বিষয় উপস্থাপিত হয়।
(ক) শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঘোষণাপত্র লিখেন ২৫ মার্চ মাঝরাত কিংবা ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে।
(খ) শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাপত্রটি ২৬ তারিখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। কিন্তু সীমিতসংখ্যক মানুষ সেই সম্প্রচারটি শুনেছিল।
(গ)  পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হয়ে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করে, ফলে বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে পারে। ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপঃ
On behalf of our great national leader, supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman do hereby proclaim the independence of Bangladesh. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is sole leader of elected representatives of 75 million people of Bangladesh. I therefore appeal on behalf of our great leader Sheikh Mujibur Rahman to the government of all democratic countries of the world specially big world part and neighboring countries to take effective steps to stop immediately. The awful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan. The legally elected representatives of the majority of the people as repressionist, it is cruel joke and contradiction in terms which should be fool none. The guiding principle of a new step will be first neutrality, second peace and third friendship to all and anonymity to none. ─ May Allah help us, Jai Bangla.

অনুবাদঃ
আমাদের মহান নেতা, বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। এটি আরও ঘোষণা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একমাত্র নেতা হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান। আমি সেই কারণে আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিশেষ করে বৃহৎ বিশ্ব ও প্রতিবেশীদের কাছে কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হামলার ফলে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ জনগণের বৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিপীড়নকারী, এটি একটি ক্রূর কৌতুক ও মিথ্যা অপবাদ যা কাউকে বোকা বানানো উচিত নয়। বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রধান পদক্ষেপগুলোর মধ্যে প্রথম হতে হবে নিরপেক্ষতা,দ্বিতীয় শান্তি এং তৃতীয় সকলের সাথে বন্ধুভাবপন্ন ও কারো সম্বন্ধে অজ্ঞানতা নয়। আল্লাহ্ সহায় হোক, জয় বাংলা।

অস্থায়ী সরকার গঠনঃ--
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা (বর্তমানে জেলা) বৈদ্যনাথতলার অন্তর্গত ভবেরপাড়া (বর্তমান মুজিবনগর) গ্রামে। শেখ মুজিবুর রহমান এর অনুপস্থিতিতে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পিত হয় তাজউদ্দিন আহমদের উপর। বাংলাদেশের প্রথম সরকার দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের সামনে শপথ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করে। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে ২৬ মার্চ হতে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

১৯৭১ সালের অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের গঠিত মুক্তিযোদ্ধাঃ--
আগস্টের পরপরই বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের সহায়তাকারীদের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটি থেকে শুরু করে সামরিক স্থাপনা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট ইত্যাদি মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। গেরিলা হামলায় স্বল্প প্রশিক্ষিত গেরিলা যোদ্ধারা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে নাজেহাল করে তোলে। রাজধানী ঢাকাতেও ক্র্যাক প্লাটুন বেশ কয়েকটি দুঃসাহসী অভিযান চালায়। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করে থাকা পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজগুলো মাইন দিয়ে ধ্বংস করে দেয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল শত্রুমুক্ত হতে শুরু করে।

মুক্তিযুদ্ধ: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরঃ-
ঢাকায় গণহত্যা চালানোর পর পাকিস্তানি বাহিনী ১০ এপ্রিলের মধ্যে সারা বাংলাদেশ নিজেদের আয়ত্তে আনার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা এবং ছাত্র ও সাধারণ জনতা তাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। চট্টগ্রামে বাঙালি সেনাবাহিনীর সদস্য ও ইপিআর এর সদস্যরা বিদ্রোহ করে শহরের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ পেতে পাকিস্তানি বাহিনীকে যুদ্ধজাহাজ থেকে গোলাবর্ষণ করতে হয় এবং বিমান আক্রমণ চালাতে হয়।
   কুষ্টিয়া, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর ইত্যাদি জেলাতেও বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পাকিস্তানিরা বিপুলসংখ্যক সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রের বলে মে মাসের শেষ নাগাদ এসব মুক্তাঞ্চল দখল করে নেয়।
মার্চের শেষদিক থেকেই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশেষভাবে তাদের রোষের শিকার হয়। দলে দলে মানুষ ভারত সীমান্তের দিকে পালাতে শুরু করে। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া শরণার্থীদের এই স্রোত নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং এ সময়ে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।

যুদ্ধক্ষেত্রের কাঠামোঃ-
স্বাধীনতা যুদ্ধে গেৱিলাদের প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধগুলো ছিল পরিকল্পনাহীন ও অপ্রস্তুত। ২৬শে মার্চ সারা দেশে প্রতিরোধ শুরু হয় এবং এপ্রিলের শুরুতেই প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু অস্ত্রপ্রাপ্তি ও প্রশিক্ষণ--এই দুইয়ের ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই পরিকল্পিত রূপ পেতে পেতে জুন মাস পার হয়ে যায়। ১১ জুলাই বাংলাদেশের সামরিক কমান্ড তৈরি করা হয়। কর্নেল (অবঃ) মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীকে বাংলাদেশ বাহিনীৱ সৰ্বাধীনায়ক, বাংলাদেশকে সর্বমোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রতিটি সেক্টরের জন্যে একজন করে অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়।
   সাংগঠনিক কাঠামো পাওয়ার পর শুরু হয় পরিকল্পিত পরিকল্পনায় আক্রমন৷ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে সীমান্তবর্তি এলাকা সহ দেশের সর্বত্র পাকবাহিনী নাস্তানাবুদ হতে থাকে৷অপ্রশিক্ষনপ্রাপ্ত নিরস্ত্র বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর ন্যাক্কারজনক পরাজয় এড়াতে পাকিস্তান সামরিক কমান্ড উর্বর মস্তিস্কে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে হামলা করে বসে৷
 ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে এই হামলা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় অনেকাংশে ত্বরান্বিত করে৷  ভারতে হামলার পরপরই ভারত সরকার তড়িৎ গতিতে মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় সেনা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ মিত্রবাহিনী গড়ে তুলে৷ মিত্রবাহিনীর সাড়াষী আক্রমনের মুখে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী পিছু হঠে ঢাকায় জড়ো হতে বাধ্য হয়৷
 অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সৈনিক,মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের নিকট ঢাকার সরওয়ার্দি উদ্যানে আনুষ্ঠানিক ভাবে অস্ত্র সমর্পনের মাধ্যমে আত্মসমর্পন করে বন্দিত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়৷ 
  এর পুর্বে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে জাতিকে মেধা শূন্য করে পঙ্গু জাতিতে পরিণত করার অসৎ উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী ডিসেম্বর মাসের ০১তারিখ থেকে ১৪ তারিখ পয্যন্ত, বেছে বেছে দেশের বরেন্য বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক, ডাকতার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচিত্রকার, রাজনীতিবীদের হত্যা করে৷
  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এই নয়মাসে ত্রিশ লক্ষ নিরস্ত্র বাঙ্গালী শহিদ হয়, প্রায় পৌণে চার লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতহানী ঘটে৷ দেশের প্রত্যন্ত জনপথ ধ্বংস, ব্রিজ, কালভার্ট উড়িয়ে দেয়৷  বেশুমার স্থাবর অস্থাবর সম্পদহানী ঘটে৷ পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী গ্রামগঞ্জের অসংখ্য অগনিত বাড়ী ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়, কলকারখানা ধ্বংস করে, ব্যাংক, বীমা, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করে৷
   অবশেষে ১৯৭২ খ্রিঃ ১০ই জানুয়ারী বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্বপ্ন দ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী কারাগারের বন্দিদশা মুক্ত হয়ে, ধ্বংসপ্রায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন৷

ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতাঃ--
১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনোরকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার সেই পরিস্থিতে--ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে৷  তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেন যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
   স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদনীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহেরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়।
   লক্ষাধিক মুসলমান, শিখ ও হিন্দু শরণার্থী র‌্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিরাপদ দেশে আশ্রয় নেন। পাঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। বাংলা ও বিহারে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক সীমান্তের দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়।
 অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান অধিরাজ্য জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহেরু তাঁর বিখ্যাত 'নিয়তির সঙ্গে অভিসার' অভিভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।অহিংস আন্দোলনের নেতা মহত্মা গান্ধিজী ভারতের রাষ্ট্রপিতার সম্মানে অভিষিক্ত হন৷
  এদিকে কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অধিরাজ্য পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল পদে আধিষ্ঠিত হলে পাকিস্তানের পক্ষে কোন নেতা আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষনা করেননি৷ তারপরও প্রথম গভর্নর জেনারেল কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপিতার সম্মানে অভিহীত করা হয়৷ [The Dream's Of Bangladesh উইকিপিডিয়া]

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতাঃ--
 আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষনাটি একটি ঐতিহাসিক দলিল যা ৪ জুলাই ১৭৭৬ পেনসিলভানিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় অনুষ্ঠিত ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের সভায় গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সাথে যুদ্ধরত তেরটি মার্কিন উপনিবেশ[২] নিজেদের ব্রিটিশ শাসনের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে ঘোষণা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র নামে নতুন রাষ্ট্র গঠন করে। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি কংগ্রেসে ভোটাভুটির জন্য আগেই আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার একটি খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। "স্বাধীনতার ঘোষণা" এই শব্দটি আসল দলিলে উল্লেখ নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
United States Declaration of Independence.jpg
১৮২৩ সালের চূড়ান্ত দলিলের প্রতিলিপির অনুলিপি
তৈরিঃ--জুন-জুলাই ১৭৭৬
অনুমোদনঃ--৪ জুলাই ১৭৭৬

★ ন্যাশনাল আর্কাইভস
★স্বাক্ষরকারীঃ--২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের ৫৬ জন প্রতিনিধি
★উদ্দেশ্যগ্রেট ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা ও ব্যাখ্যা৷
   জন অ্যাডামস দলিলটির মূল খসড়া প্রণয়নের জন্য থমাস জেফারসন কে নির্বাচিত করতে কমিটির কাছে তদবির করেন।যেটা কংগ্রেস সম্পাদন করে চূড়ান্ত সংস্করণ প্রস্তুত করবে। মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধ শুরুর ১ বছরেরও বেশি সময় পরে কেন ২ জুলাই কংগ্রেস গ্রেট ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ভোট দান করে তার একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এই ঘোষণা। পরবর্তী দিন জন অ্যাডামস তার স্ত্রী আবিগালিকে লিখেন,"১৭৭৬ সালের জুলাই এর দ্বিতীয় দিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে স্বরণীয় দিন হবে"। কিন্তু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় জুলাইয়ের ৪ তারিখ, যে তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়।
৪তারিখে অনুমোদনের পর কংগ্রেস বেশ কয়েকটি ফর্মে(আকারে) স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে এটি মুদ্রিত(ডানল্যাপ ব্রডসাইড) আকারে প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণটি ব্যাপকভাবে বিতরণ ও প্রচার করা হয়। মুদ্রণে ব্যবহৃত মূল কপিটি হারিয়ে গেছে, সম্ভবত এটি জেফারসনের হাতের কপি ছিল৷
জন অ্যাডামস ও বেন্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কর্তৃক সাধিত পরিবর্তনসমূহ এবং কংগ্রেস কর্তক সাধিত পরিবর্তনের উপর জেফারসনের টিকা সম্বলিত জেফারসনের মূল খসড়াটি লাইব্রেরী অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত আছে।
ঘোষণাপত্রের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং সাক্ষরকৃত সংস্করণ যেটি দাপ্তরিক সংস্করণ হিসেবে অধিক পরিচিত সেটি ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল আর্কাইভসে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। এই নিবিষ্ট কপিটি ১৯ জুলাইয়ে কংগ্রেস কর্তৃক চাওয়া হয় এবং এটি প্রাথমিকভাবে ২ আগষ্টে সাক্ষরিত হয়৷

★ঘোষণাটির উৎস ও ব্যাখ্যা পন্ডিতদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু:--
 ঘোষণাটি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে অনুযোগসমূহ এবং কতিপয় সহজাত ও আইনগত অধিকার(যেমন- বিপ্লবের অধিকার) বর্ণনার মাধ্যমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার যথার্থতা প্রমাণ করে।
ঘোষণাপত্রটি স্বাধীনতা ঘোষণার মৌলিক উদ্দেশ্য পূরণ করে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এটি রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আব্রাহাম লিংকন ঘোষণাপত্রটিকে তার বিখ্যাত ভাষণ(যেমনটি গেটিসবু্র্গ ভাষণে) ও নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। তারপর থেকে ঘোষণাটি বিশেষ করে এর দ্বিতীয় বাক্যটি মানবাধিকারের উপর একটি সুপরিচিত উক্তিতে পরিনত হয়। এটিকে ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে সুপরিচিত উক্তিসমূহের মধ্যে একটি বলা হয়ে থাকে৷  যা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অনুবর্তী শব্দসমূহ ধারণ করে। বাক্যটি একটি নৈতিক মান নির্দেশ করে বলে ধরে নেয়া হয়, যা অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বাত্নক সংগ্রাম করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আব্রাহাম লিংকন কর্তৃক উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার লাভ করে যিনি ঘোষণাপত্রটিকে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেন এবং যুক্তি দেখান যে, ঘোষণাটিতে বিবৃত নীতিমালার আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ব্যাখ্যা করা উচিত। [তথ্য সুত্রঃ-উইকিপিডিয়া]

ভিয়েত নামের স্বাধীনতাঃ--
১৯৫৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংঘটিত একটি দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সংঘাত। এটি দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ নামেও পরিচিত। যুদ্ধের একপক্ষে ছিল উত্তর ভিয়েতনামি জনগণ ও ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট এবং অন্যপক্ষে ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামি সেনাবাহিনী ও মার্কিন সেনাবাহিনী। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামিরা প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধে লড়াই করে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। এই যুদ্ধশেষে ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম - এই দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। ভিয়েতনামের সাম্যবাদীরা যারা ফ্রান্সের বিরোধিতা করেছিল, তারা উত্তর ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণ পায়। অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ-বিরোধী ভিয়েতনামিরা শাসন শুরু করে। উত্তর ভিয়েতনামের সাম্যবাদীরা একটি একত্রিত সাম্যবাদী ভিয়েতনাম গঠন করতে চাচ্ছিল।
১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামি সরকারের পতন রোধকল্পে সেখানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ সালে এটি সরকারীভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩২ লক্ষ ভিয়েতনামি মারা যান। এর সাথে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লাও ও ক্যাম্বোডীয় জাতির লোক মারা যান। মার্কিনীদের প্রায় ৫৮ হাজার সেনা নিহত হন। এ ছাড়াও আহত ও পঙ্গু হয় তিন লাখ মার্কিন সেনা।
  ১৯৭৩ সালের ২৩ জানুয়ারি প্যারিসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ৮০দিনের মধ্যে মার্কিন যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়া, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে দুই পক্ষ ঐক্যমত্যে পৌঁছায়। ২৩ জানুয়ারি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, কিছু অঞ্চলে তখনও যুদ্ধ চলছিল। ইতিমধ্যে ২৯ মার্চের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা প্রত্যাহার করে। কিন্তু উত্তর ভিয়েতনামে বোমাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। এরই সূত্রে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে।

 অতীতঃ--
 ১৮৮৫ সাল থেকে ফ্রান্স ঐ অঞ্চলে আধিপত্য বাড়াবার চেষ্টা চালিয়ে এসেছিলো এবং সফলও হয়েছিলো৷বলা যায়৷অবশেষে ৫৬ দিনের অবরোধের পর ভিয়েত মিন বাহিনীর হাতে প্রবল পরাক্রমশালী ফরাসি শক্তি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়৷ তারপরই ফ্রান্স ঐ অঞ্চল ত্যাগ করে৷
 কিন্তু যাবার আগে ভিয়েতনমাকে উত্তর ও দক্ষিণ--দু ভাগে বিভক্ত করে যায়৷ সেই সঙ্কটেরই জের ধরে দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে উত্তর ভিয়েতনামের যুদ্ধ চলে৷ ১৯৭৫ সালে সায়গনের পতনের মাধ্যমে কমিউনিস্ট উত্তর ভিয়েতনাম-এর হাতে মার্কিন বাহিনীর পরাজয় হয়৷ বিংশ শতাব্দীতে ভিয়েতনামের ইতিহাসে ডিয়েন বিয়েন ফু-র এই ঘটনা এবং সায়গনের পতন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়৷
 ঘটনাকে গোটা ঔপনিবেশিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে বর্ণনা করেন ইতিহাসবীদেরা৷  ঐ ঘটনার মধ্যে দিয়েই সারা বিশ্বে সব উপনিবেশের মানুষের জয় হয়েছিলো৷ তাছাড়া কমিউনিস্ট ও জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহীদের হাতে ইউরোপের অন্যতম প্রধান সামরিক শক্তির পরাজয়ের ফলে পশ্চিমা বিশ্ব বেশ বড় রকমের একটা ঘা খেয়েছিলো বলা চলে৷ তবে সেই জয়েরও একটা বড় মূল্য দিতে হয়েছিলো৷

ফলাফলঃ--
ফরাসি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালাবার অভিযোগে ভিয়েত মিন বাহিনী ১০,৬৮৩ জনকে আটক করেছিলো, তাদের মধ্যে মাত্র ৩,২৯০ জন জীবিত অবস্থায় তাদের মুক্তি পায়৷
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতিঃ--
*দক্ষিণ ভিয়েতনাম Republic of Vietnam
361,000-2,000,000 civilian dead; military dead: 220,357 (lowest est.) – 316,000 dead (highest est.);- 1,170,000 wounded
*মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র United States
58,220 dead;[A ২] 303,644 wounded
*দক্ষিণ কোরিয়া Republic of Korea
5,099 dead; 10,962 wounded; 4 missing
*অস্ট্রেলিয়া Commonwealth of Australia
521 dead; 3,000 wounded
*নিউজিল্যান্ড New Zealand
37 dead; 187 wounded
*থাইল্যান্ড Kingdom of Thailand
1,351 dead
*লাওস Kingdom of Laos
30,000 killed, wounded unknown
Total dead: 315,384 – 2,220,357 (2,000,000 South civilians)
Total wounded: ~1,490,000+
*উত্তর ভিয়েতনাম Republic of South Vietnam North Vietnam & NLF
50,000[৬]-2,000,000 civilian dead.
1,176,000 military dead or missing; 600,000+ wounded
*চীন People's Republic of China
1,446 dead; 4,200 wounded
 Union of Soviet Socialist Republics Union of Soviet Socialist Republics
16 dead
Total dead: ~3,177,462 (50,000–2,000,000 North civilians
Military dead: ~1,177,462
Total wounded: ~604,200+
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মে ও জুন মাস পর্যন্ত কিসিঞ্জার এবং থো শান্তি চুক্তির উত্তরণে প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুন,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর ভিয়েতনাম যৌথভাবে প্যারিস চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাক্ষর করে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে এটি সরকারীভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে৷
[তথ্য সূত্রঃ--উইকিপীডিয়া, রোয়ার, The Dream's Of Bangladesh]

কানাডার স্বাধীনতাঃ--
   কানাডা প্রথমে ইতালীয় ও ফরাসী উপনিবেশ হলেও ১৬১০ সাল থেকে এখানে ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিক আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে৷ উত্তর আমেরিকার আধিপত্য নিয়ে ব্রিটিশ ও ফরাসীদের মধ্যে রেষারেষি শুরু হয়৷ অবশেষে সপ্ত বর্ষীয় যুদ্ধের শেষে কানাডায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম হয়৷ ১৭৭৫ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই কানাডায় ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব দান বাঁধতে থাকে৷ তবে ১৮৩৭ সালে কানাডা তার নিজস্ব সরকার ও ১৮৬৭ সালে নিজস্ব সংবিধান গড়ে উঠলেও, তার সামগ্রিক শাসন ব্যবস্থায় ইংরেজদের আধিপত্য কায়েম ছিল ১৯৩১ সালে স্বাধীন কানাডা না হওয়া পর্যন্ত৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিপক্ষে কানাডা একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল৷ তবে যুদ্ধ বিধ্বস্ত কানাডা তার সুদৃঢ় আর্থিক উদারনীতি করণের ফলে সমস্ত বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে৷ পরবর্তী কালে কানাডার আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক রাজনীতির ফলে বিভিন্ন সময় অশান্তি দানা বাঁধলেও এই দেশের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধিতে কখনোই প্রভাব ফেলতে পারেনি৷[তথ্যসূত্রঃ-বাংলা পিডিয়া]

তুরস্কের স্বাধীনতাঃ--
তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯ মে ১৯১৯–২৪ জুলাই ১৯২৩ জুলাই সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধ তুর্কি জাতীয়তাবাদী এবং মিত্রশক্তির পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে সংঘটিত হয়। এসময় পশ্চিমে গ্রীকদের সাথে, পূর্বে আর্মেনিয়ার সাথে, দক্ষিণে ফরাসিদের সাথে এবং ব্রিটেন ও ইটালির সাথে কনস্টান্টিনোপলে লড়াই হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করা হয়েছিল। আনাতোলিয়ায় মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক‌ ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি গঠন হওয়ার পর তুর্কি জাতীয় আন্দোলন উৎপত্তি লাভ করে। তুর্কি-আর্মেনীয়, ফরাসি-তুর্কি, গ্রীক-তুর্কি যুদ্ধ (এগুলোকে যথাক্রমে যুদ্ধের পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম রণাঙ্গন বলে অবিহিত করা হয়) শেষ হওয়ার পর সেভ্রেস চুক্তি বাতিল করা হয়ে ১৯২৩ সালের উলাই মাসে লুসানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মিত্রশক্তি আনাতোলিয়া ও পূর্ব থ্রেস ত্যাগ করে এবং গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর এই প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়। তুর্কি জাতীয় আন্দোলন প্রতিষ্ঠা, উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিভাগ ও উসমানীয় সালতানাতের বিলুপ্তির পর উসমানীয় যুগ ও সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে এবং এরপর আতাতুর্কের সংস্কার সাধিত হয়। সাম্রাজ্যের স্থলে নতুন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে তুরস্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।[তথ্যসূত্রঃ-উইকিপিডিয়া]

মিয়ানমারে'র স্বাধীনতাঃ--
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে Karen National Union (KNU) প্রতিষ্ঠত হয়। এই সময় কারেন ব্যাপ্টিষ্ট এবং বৌদ্ধ সংগঠন, কারেন কেন্দ্রীয় সংগঠন (Karen Central Organisation (KCO)), কারেন যুব সংগঠন (Karen Youth Organisation (KYO)) থেকে প্রায় ৭০০ প্রতিনিধি নিয়ে কারেন কংগ্রেসের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল রেঙ্গুনের ভিন্টোন মেমোরিয়াল হলে। এই সভা আহুত হয়েছিল মূলত একটি পৃথক কারেন রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য। এর সাথে অন্যান্য বিষয় ছিল--বার্মা জাতীয় সংসদে কারেনদের আসন সংখ্যা ২৫% বৃদ্ধ করা, নতুন করে ভাষাগত জাতীয়তা ভিত্তিক লোক গণনা এবং বার্মা সেনাবাহিনীতে নিয়মিত ভাবে কারেন গোষ্ঠী লোক অন্তর্ভুক্ত করা। এই সকল দাবি-দাওয়া ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করলে, ব্রিটিশ সরকার তিন মাস কোনোই উত্তর দেয় নি। এরপর KNU -এর প্রেসিডেন্ট  সাও বা য়ু গভর্নর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল থেকে  পদত্যাগ করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে বার্মা আইনসভার নির্বাচনে  Anti-Fascist People's Freedom League (AFPL) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই সময় এই দলের সামরিক নেতা অং সান মায়ানমারের অস্থায়ী সরকারের প্রধান ছিলেন। এই দলের মাধ্যমেই তিনি মায়ানমারের পূর্ণ স্বাধীনতার ডাক দেন।
   ১৯৪৭ সালের ১৯শে জুলাই বার্মার স্বাধীনতা-চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র ছয় মাস আগে আততায়ীর গুলিতে অং সান ও তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীসহ নিহত হন। এরপর এই দলের নেতৃত্বে আসেন য়ু নু (U Nu। এই বৎসরের জুলাই মাসেই তৈরি হয়েছিল Karen National Defence Organisation (KNDO)।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে বার্মার স্বাধীনতা বিষয়ক একটি চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে য়ু নু-এর সাথে ব্রিটিশ প্রধনমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এ্যাটেল স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিটি Nu-Attlee Treaty নামে পরিচিত।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি মাসে বার্মা ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা লাভ করে এবং য়ু নু বার্মার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।[তথ্যসূত্রঃ-উইকিপিডিয়া..thecountries71.blogspot.com]

নেপাল প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতাঃ--
একাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নেপালের দক্ষিণাংশ দক্ষিণ ভারতের চালুক্য সাম্রাজ্যের (Chalukaya) অধীনে আসে। চালুক্যদের রাজত্বকালে নেপালের ধর্মে ব্যাপক পরিবর্তন আসে৷  কারণ সব রাজাই হিন্দু ধর্মের পৃ্ষ্ঠপোষকতা করতেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের বিপরীতে হিন্দু ধর্মের প্রচারে অবদান রাখেন।
দ্বাদশ শতাব্দীতে যেসব রাজা অধিষ্ঠান করেন তাদের নামের শেষে সাধারণ একটি শব্দ ছিল আর তা হল মল্ল যার অর্থ হচ্ছে কুস্তিগীর।গোর্খারাজ পৃথ্বীনারায়ণ শাহ কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের পর কাঠমান্ডু উপত্যকা দখল করে ছোটবড় রাজ্যে বিভক্ত নেপালকে একটি রাষ্ট্রীয় সংহতি দান করেন। নেপালের ইতিহাসে এই সময় থেকে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে হিমালয় কন্যা নেপালের যাত্রা শুরু বলা যায়। এই পৃথ্বীনারায়ণ শাহকে আজকের নেপালের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়৷
বর্তমানে নেপালের রাজনীতি একটি বহুদলীয় প্রজাতন্ত্রের কাঠামোতে সংঘটিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। আইনসভার উপর আইন প্রণয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত।
২০০৮ সালের মে মাস পর্যন্ত নেপাল একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ছিল। ঐ মাসের ২৮ তারিখে নেপালের আইনসভা সংবিধানে সংশোধন আনে এবং নেপালকে একটি প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করে।[তথ্যসুত্রঃ-[ উইকিপিডিয়া,The Dream's Of Bangladesh  thecountries71.blogspot.com]

 (বিঃ দ্রঃ) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বিভিন্ন দেশের আরো অনেক সমশ্রেণীর দলিল প্রণয়নে অনুপ্রেরণা যোগায় এবং এর ধারণাসমূহ পরবর্তী সময়ে ক্যারিবিয়ান, স্প্যানিশ, আমেরিকা, বলকান, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য ইউরোপ সহ অন্যান্য দেশে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত অনুসৃত হয৷ সুতারাং বৃটিশ কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র, ফ্রান্স উপনিবেশিক রাষ্ট্র সমূহের বাহিরে তেমন কোন জাতি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই৷ উপরে বর্ণিত কয়েকটি রাষ্ট্র আলোচনার সুবিধার্থে উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র৷
   উপরে উল্লেখিত স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ফ্রান্সের উপনিবেশিক রাষ্ট্র যেমন আছে, তেমনি বৃটিশ উপনিবেশিক রাষ্ট্র ও আছে৷ আমেরিকা কত্তৃক দখলকৃত রাষ্ট্র যেমন আছে, তেমনি পাকিস্তান কতৃক দখলকৃত এবং শোষন শাসনকৃত রাষ্ট্রও আছে৷ মুসলিম অধ্যুষিত স্বাধীন রাষ্ট্র যেমন রয়েছে, তেমনি অন্যান্ন ধর্মালম্বি অধ্যুষিত রাষ্ট্রও রয়েছে৷ সপ্তদশ শতকে আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপৃত হয়ে স্বাধীন দেশের মায্যদা লাভকারী দেশ যেমন আছে, তেমনি উনিশ শতকের শেষপ্রান্তের আধুনিকতার স্বর্ণযুগে স্বাধীনতা অর্জনকারী রাষ্ট্রও রয়েছে৷ বর্তমান বিশ্বের মোড়ল, ধনী, সভ্য জাতি গোষ্টির স্বাধীনতা লাভকারী দেশ যেমন আছে, তেমনি তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রতম জাতিগোষ্টির স্বাধীনতা অর্জনকারী রাষ্ট্রও আছে৷  তালিকায় পুঁজিবাদী, গনতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থার রাষ্ট্র যেমন আছে, তেমনি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মান ও স্বাধীনতা অর্জনের কৃতিত্ব পুর্ণ রাষ্ট্রও  বিদ্যমান আছে ৷ রাজার শাসন হতে মুক্ত রাষ্ট্র যেমন আছে, তেমনি রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যাবস্থা হতে মুক্ত, স্বাধীন রাষ্ট্রও আছে৷ পক্ষান্তরে দখল সুত্রে আন্দোলন, সংগ্রাম, শোষন শাসনহীন  স্বাধীন রাষ্ট্রের উৎপত্তিও তালিকার সর্বনিম্নে নেপালের নাম রয়েছে৷
 
 পয্যালোচনাঃ---
(১) উপনিবেশিক শাসন শোষন মুক্ত হওয়ার লড়াইয়ে কতিপয় রাষ্ট্র ব্যাপৃত থাকাবস্থায় আলোচনার টেবিলে, চুক্তি অনুযায়ী বা উপনিবেশকৃত রাষ্ট্রের আইনসভায় পাসকৃত প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাধীনতা অর্জন করেছে৷ আন্দোলন সংগ্রামে সময়,জনবল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখ্যিন হলেও সসস্ত্র যুদ্ধ বা বিপ্লব সংগঠিত করার প্রয়োজন হয়নি৷ 
   (২) তালিকায় উল্লেখিত রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে ভিয়েতনাম সম্পুর্ণ ব্যাতিক্রম৷  ভিয়েতনাম রাষ্ট্রটি ফরাসী উপনিবেশ হতে মুক্তির লক্ষে দীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলনের পাশাপাশি আদর্শিক দর্শনে দীক্ষিত সসস্ত্র নিয়মিত বাহিনীর সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মান ও স্বাধীনতা অর্জনের ন্যায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বহুরাষ্ট্রের সম্মিলনে উপনিবেশিক রাষ্ট্র ফ্রান্স ও দেশীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছিল৷ রাষ্ট্রটির জনগন মুক্তি এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে যুদ্ধরতঃবস্থায় চুক্তির মাধ্যমে দুটি দেশের অস্তিত্ব মেনে নিয়ে ফ্রান্সের উপনিবেশমুক্ত হয়৷এক অংশ সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থা কায়েম হয় অন্য অংশে পশ্চিমা গনতন্ত্রের আদলে শাসন ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ভিয়েতনামী জনগনের এইরুপ দ্বিখন্ডিত রাষ্ট্র কাম্য ছিলনা৷ সঙ্গতকারনে উভয় অংশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়৷যুদ্ধে আমেরিকা ও তাঁর মিত্র শক্তি জড়িয়ে পড়ে৷

বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম মুক্তিযুদ্ধের তুলনাঃ--
আপাতঃদৃষ্টে যদিও মনে হয় ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের চেয়ে বহু গুন বেশী৷  সময়ের হিসেবে উল্লেখিত যুক্তি খাটে না৷ ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে স্থায়ী হয়েছিল ২০ বছর ১৮০ দিন৷ সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল নয়মাস৷ ভিয়েতনামের মুক্তিযোদ্ধারা ছিল নিয়মিত বাহিনীর প্রশিক্ষন প্রাপ্ত আদর্শিক সসসস্ত্র যোদ্ধা৷ পক্ষান্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ছিল অপ্রশিক্ষনপ্রাপ্ত নিরস্ত্র গনতান্ত্রিক দলের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারন মানুষ৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দখলদার বাহিনীর ৯৩হাজার নিয়মিত সেনাসদস্ বন্দি করতে পেরেছিল সকল যুদ্ধবন্দিকে জীবিতবস্থায় মুক্তি দিতে পেরেছিল৷পক্ষান্তরে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধে ১০,৬৮৩ জন সেনাসদস্য বন্দি ছিল, তম্মধ্যে মাত্র ৩হাজার ২৯০ জনকে জীবিত মুক্তিদিতে পেরেছিল৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল নিজস্ব জাতীয়তাবোধ, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, দর্শন প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার পূরণকল্পে৷ অপরদিকে ভিয়েতনামের মুক্তগিযুদ্ধ ছিল ভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠার বিপ্লবীদের সংগঠিত যুদ্ধ৷ ভিয়েতনামের কোন মা-বোন সম্ভ্রম হারানোর ইতিহাস উল্লেখ নেই,অপরপক্ষে বাংলাদেশের প্রায় পৌণে ৪লক্ষ মা-বোন তাঁদের ইজ্জত হারিয়েছিল৷
 (৩) বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্বার অস্তিত্ব থাকাবস্থায় নীজস্ব একক বাঙ্গালী জাতিসত্বার উম্মেষ ঘটিয়ে, সেই জাতির  উম্মেষদাতা হ'তে পেরেছেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু৷
  পক্ষান্তরে, প্রত্যেক রাষ্ট্রপিতা বহুধা বিভক্ত জাতিসত্বার অস্তিত্ব বিরাজমান থাকাবস্থায় সকল জাতির অস্তিত্ব স্বীকার করে, সেই রাষ্ট্রের "রাষ্ট্রপিতায়" অধিষ্ঠিত হয়েছেন। একমাত্র বঙ্গবন্ধু তাঁর সৃষ্ট রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জাতিসত্বার উপস্থীতি থাকা সত্বেও তাঁদের অস্তিত্ব সাংবিধানিকভাবে স্বীকার নাকরে একক "বাঙ্গালী জাতির পিতা" এবং নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সৃষ্টিকারি বা পত্তনকারি হিসেবে "রাষ্ট্রপিতা'র বিরল সম্মানের অধিকারী হতে পেরেছেন৷ 
(৪).একমাত্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রথাগত একটি গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কর্মীবাহিনী নেতৃত্বের বিচক্ষনতায় বিপ্লবী সসস্ত্র বাহিনীতে রুপান্তর হতে পেরেছে৷ সর্বস্তরের মানুষ সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রুপান্তরীত করেছে৷ অন্যসব দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাসের ক্ষেত্রে বিনা রক্তপাতে রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল, অথবা রক্তাক্ত বিপ্লবী সসস্ত্র কর্মীবাহিনীর স্বল্প অথবা দীর্ঘদিনের যুদ্ধের ফসল।
(৫) বর্ণিত-অবর্ণিত দেশসমূহের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামী নেতাদের নিজস্ব জাতীয়তাবোধ ও দর্শন উভয় বিদ্যমান ছিল, এমন তথ্য পাওয়া যায়না৷ নিজস্ব দর্শন বাস্তবায়নের নিমিত্তে সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রয়োজনীতা অনুভবে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছিলেন এমন নেতার খোঁজও পাওয়া যায়না৷
   এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যাতিক্রম দেশ, দলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়কারী একমাত্র গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল "বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতিরজনক "বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান৷
(৬) উল্লেখিত,অনুল্লেখিত বিশ্ব মানব ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টির এমন কোন একটি উদাহরণ নেই স্বাধীনতার জন্যে এত রক্ত, এতবেশী মা-বোনের ইজ্জত স্বল্পসময়ে বিসর্জন দিয়েছে। একমাত্র অবিশ্বাস্য ব্যাতিক্রম বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আকাংক্ষায় পরিচালিত দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে অনিবায্য গৌরবের "মুক্তিযুদ্ধ'৷ এই যুদ্ধে ৩০লক্ষ জীবন উৎসর্গ করেছে, পৌনে চার লক্ষ স্ব-জাতী "মা-বোন"কে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ্যসিদ্ধির নিমিত্তে "বিজাতীয় সেনা"দের 'যৌন লিস্পা' নিবারনের জন্যে তুলে দিয়েছে--''তথাকথিত স্বাধীনতা বিরুধী মুষ্টিমেয় বাঙ্গালী কুলংঙ্গার "আলবদর, রাজাকার"।
  (৭)--মানব সভ্যতার ইতিহাসের পাতায় পরস্পর সম্পর্কিত বহু অর্জনের কৃতিত্বের অধিকারী অবিসংবাদীত এককনেতার অর্বিভাবও কোন 'জাতী-গোষ্টি'র ভাগ্যে জোটেনি৷ বঙ্গবন্ধু'ই একমাত্র অবিসাংবাদীত এককনেতা, যিনি একাধারে--'বাঙ্গালী জাতীর স্বতন্ত্র জাতীয়তাবোধের উম্মেষদাতা, সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষনা দাতা৷ আবার তিনিই জাতীকে স্বাধীনতার অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছানোর নিমিত্তে আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী একক মহাননেতা৷
(৮)  বিশ্বখ্যাত ৭ই মার্চের একক সম্মোহনী ভাষনে নিরস্ত্র বাঙ্গালী জাতী মহুর্তে অদম্য সাহষী সসস্ত্র জাতী'তে পরিণত হয়৷ এবং কি, একই মাসের ২৫ তারিখ কালরাতে দখলদার আধুনিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলে৷
(৯) আগেও নয়, পরেও নয়--দখলদার পাকবাহিনীর লেলিয়ে দেয়া আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনী যখন নিরস্ত্র বাঙ্গালী"র উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে, ঠিক পরক্ষনেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা প্রদান করেন৷ বাংলাদেশের জাতীর জনক ব্যাতিত সভ্য দুনীয়ার ইতিহাসের পাতায় অন্যকোন নেতার ক্ষেত্রে লক্ষাভিমূখে এমন নির্ভুল, বিচক্ষন, সাহষী নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার একক কৃতিত্ব অন্যকোন দেশের জাতির জনকের নেই৷
  (১০)  বাঙ্গালীর জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু ব্যাতিত অন্যকোন জাতীর জনক জাতীর সংস্কৃতি, কৃষ্টি'র সাথে সামঞ্জস্য রেখে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত নিজস্ব 'দর্শন'  উদ্ভাবনের কৃতিত্ব নেই৷ 
( ১১) আনুষ্ঠানিক ঘোষনায় কোন দেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি এবং কি কোন ন্দেশের নেতাও তাঁর দেশের মুক্তিযুদ্ধের এককভাবে মুক্তি বা স্বাধীনতার নায়ক নন৷
   একমাত্র বাংলাদেশের নেতা 'বঙ্গবন্ধু' ব্যাতিত অন্যকোন দেশের নেতার অনুপস্থিতিতে তাঁর নামে--"যুদ্ধ পরিচালনা, আন্তজাতিক সম্পর্ক স্থাপন, আন্তজাতিক সংস্থায় প্রতিনীধি প্রেরণ, যুদ্ধকালীন অধ্যাদেশ প্রনয়ন ও কায্যকর, স্বিকৃতি আদায়, সাহায্য গ্রহন, বৈদেশীক চুক্তি সম্পাদন সর্বোপুরী অস্থায়ী বা প্রবাসী সরকার পরিচালনার ইতিহাসও নেই৷ 
(১২) লক্ষ করলে দেখা যায়--প্রতিটি স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা দিবস আছে কিন্তু বিজয় দিবসের অস্তিত্ব নেই৷অর্থাৎ দখলদার বাহিনীর সার্বিক পরাজয় নিশ্চিত করে কোন দেশ স্বাধীন হয়নি৷ আলোচনা, চুক্তি, ঘোষনা, দখলদার রাষ্ট্রের শাসন প্রত্যাহার, সেন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিজয় নিশ্চিত হয়েছে৷
  বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম--আনুষ্ঠানিক ঘোষনায় যেমন যুদ্ধে শুরু হয়েছিল, তেমনি দখলদার বাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাজিত এবং আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পনের পর  বন্দি করেছিল৷ দিনটি ছিল ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিঃ নির্দিষ্ট৷ জাতি উক্ত দিনকে বিজয়ের দিন গন্য করে জাতীয় দিবসের মায্যদায় অভিসিক্ত করেছে৷

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা