নিয়ন্তর গনতন্ত্রের চর্চা'ই দেশবিরোধী অশুভশক্তির পতন নিশ্চিত করবে৷৷



   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বার্ণিয়াকটের আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ শাসন অবসান এবং বৃহত্তর ঐক্যজোট যুক্তফ্রন্ট গঠন, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও দায়িত্বশীল সরকার গঠনের দায় রয়েছে৷তাই বোধহয়--তাঁদের দীর্ঘযুগের একান্ত মিত্রদল বিএনপি'কে জোটগত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার সুযোগ নিতে ৫ পুর্বশর্ত দিয়েছেন৷ দৃশ্যতঃ মনে হচ্ছে--জেঃ এরশাদের ভারত সফর এবং সফর শেষে বৃহত্তর জোটের নেতৃত্ব গ্রহন প্রশ্নে নিঃস্পৃহতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি দলকে মার্কিন সরকারের নিকট অ-প্রয়োজনীয়, মুল্যহীন, অকায্যকর করে তুলেছে'? বিশেষ করে দীর্ঘযুগের সম্পদ জিয়া পরিবার এই মূহুর্তে বিএনপির জন্য বোঝা হিসেবেই দেখছে তাঁরা? ইতিপুর্বে আন্তজাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার ভু-রাজনীতিতে পাকিস্তানকে পরিত্যাগ করে ভারতকে বন্ধু করে নিয়েছে৷ আবার ভারতের স্থীতিশীল রাজনীতি বিশেষ করে সেভেন সিষ্টার খ্যাত সাত রাজ্যের অখন্ডতা অনেকাংশেই বাংলাদেশের মর্জির উপর নির্ভরশীল৷ এই সমস্ত বিবিধ সমীকরণে ইচ্ছা করলেই ভারত যেমন বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকা গ্রহন করতে পারেনা, বাংলাদেশেরও সর্বক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে উঠেনা৷
   ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বাংলাদেশের বিএনপি আদর্শিক ক্ষেত্রে একই সুতায় গাঁথা হলেও বিএনপিকে এই মহুর্তে কেন টেনে তোলার ঝুঁকি গ্রহন করছেনা--সেই ইতিহাস অনেক বড়৷ সেদিকে আমি যেতে চাইনা৷    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিক্ষিত প্রতিবেশী মিত্র দেশ ভারতের মনোভাব লক্ষ করে বিএনপি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে এক্ষনে দ্রুতই পরিবর্তন এসেছে বলা চলে৷নিম্নে বাংলাদেশস্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বার্ণিয়াকটের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দেয়া ৫ জোটগত নির্বাচনী শর্ত প্রদান--তাই প্রমান করে৷
শর্তগুলী হচ্ছে--
 প্রথমতঃ ড. কামাল হোসেন সাহেবকে জোটনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মেনে বৃহত্তর জোট গঠন করতে হবে৷
 দ্বিতীয়তঃ--বিএনপিকে অবশ্যই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সংগ ত্যাগ করতে হবে৷
তৃতীতঃ-খালেদা জিয়ার মুক্তি'র বিষয়টি আদালতের উপর ছেড়ে দিতে হবে৷  চতুর্থতঃ-জোট শরিক দল সমূহকে ১৫০ আসন ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে হবে৷
  পঞ্চমতঃ--তারেক জিয়াকে বিএনপি দলে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে পূর্ণবাসনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে৷
    উল্লেখিত ৫ শর্তে  বিএনপি'র প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ তাঁর মিত্র দেশ সমূহ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান নিবেন৷ বার্ণিয়াকটের পক্ষ থেকে বিষয়টি সাফ সাফ বিএনপিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷
  এই প্রসঙ্গে বার্ণিয়াকট আরও বলেন--যুক্তরাষ্ট্র  বিশ্বাস করে 'বৃহত্তর জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিলে শক্তির ভারসাম্য ফিরে আসবে৷ ফলে একতরফা নির্বাচন বা নির্বাচনে কারচুপির সম্ভাবনা কমে আসবে৷ বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও শক্তির ভারসাম্যের আভাস পেলে তাঁদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারবে৷
  বার্ণিয়াকট কতৃক বিএনপিকে প্রদত্ত উল্লেখিত ৫ শর্তের প্রতি নিবিড়ভাবে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়--বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের জন্যে প্রতিটি শর্তই অত্যান্ত অপমানজনক, দুঃখ্যজনক৷ দীর্ঘযুগের বন্ধুর বিপদে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সাহায্য না করে আরো ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টাই হচ্ছে ৫শর্ত৷ শুধুমাত্র জনসমর্থন পুষ্ট,সাংগঠনিক শক্তি সম্পন্ন বিএনপি দলই নয়--জনসমর্থনহীন, সাংগঠনিক শক্তিহীন বিবেকবান, স্বাধীনতাপ্রিয় যে কোন রাজনৈতিক দলই উক্তরুপ ৫ শর্ত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবে৷
  অবশ্য বিএনপির ক্ষেত্রে খুব বেশী ব্যাতিক্রম হয়নি--সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করলেও পরিত্যাগ করছেন৷ ইতিমধ্যেই তার আভাস স্পষ্ট' হতে শুরু করেছে৷ বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়া সরাসরি বার্ণিয়াকটের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান না করে--"পরিবারের দুই বউ আগামী নির্বাচনে ২০দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিবেন দৃড়তার সঙ্গেই ঘোষনা দিয়েছেন"৷
   আপাতঃদৃষ্টে মনে হচ্ছে--বাঙ্গালী জাতীর চিরায়ত আবেগ কাজে লাগিয়ে জিয়া পরিবার রক্ষা করাকেই প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনী কৌশল প্রনয়ন করবে বিএনপি৷ এক্ষেত্রে--আপনার একটি ভোট 'খালেদা জিয়ার জেলমুক্তি' ঘটাতে পারে৷এমনতর আরো কতিপয় আবেগঘন নির্বাচনী শ্লোগান সামনে রেখে প্রয়াত মেজর জিয়ার দুই পুত্রবধু বাংলাদেশ চষে বেড়াবেন ধারনা করা যায়৷ অবশ্য দলটি ধ্বংসের অনেক কারনের মধ্যে অন্যতম একটি কারন--জনস্বার্থ প্রাধান্য না দিয়ে পারিবারীক স্বার্থ প্রাধান্য দিতে গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে অনেকগুলী ক্ষতের সৃষ্টি করেছে৷ ফলে ১০বছর সময় পার করেও রাজনৈতিক নাজুক অবস্থা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি৷ 
  বিএনপি দলটি মেজর জিয়ার মৃত্যুর পর, তাঁর পত্নি বেগম খালেদা জিয়াকে নেতা নির্বাচনের পর থেকে তিনি পারিবারিক সম্পদ মনে করে দলটি পরিচালনা করে আসছেন৷  যখন যেখানে যেভাবে প্রয়োজন, সেখানে সেইভাবে দলকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করতে দ্বিধা করছেননা৷ একই ধারাবাহিকতা উত্তরসুরি তারেক জিয়া লন্ডন পলাতক থাকাবস্থায়ও কঠোরভাবে রক্ষা করে চলেছেন৷ সুতারাং পারিবারিক দলের নির্বাচনী প্রচারণায় পরিবারের সদস্যরা আন্তরিকভাবে অংশ গ্রহন করবে এবং বিজয় অর্জনের প্রচেষ্টা চালাবে--ইহাই সঙ্গত এবং স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
  তবে কথা থেকে যায়--আগামী নির্বাচনে পরিকল্পিত আবেগ কাজে লাগিয়ে কাংক্ষিত ফল অর্জনে দল ব্যর্থ হলে? রাজনীতির ভাষায় ধরে নেয়া যৌক্তিকতা পাবে জিয়া পরিবারের প্রতি বাংলাদেশের জনগনের মনে কোন আবেগ, অনুভূতি কাজ করেনা৷  বাংলাদেশের জনগন জিয়া পরিবারকে অপরাধি পরিবার মনে করে এবং সেই মতে বিশ্বাসও করে৷ জনগনের প্রত্যাখ্যানের সম্মান দিতে গিয়ে গঠিত সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন পরবর্তি সময় যদি আরো বড় বিপয্যয় নেমে আসে দোষ দিবেন কাকে? যেমনঃ- বাড়ীরক্ষার আন্দোলন, পারিবারীক লুটপাটের মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার প্রচেষ্টায় সংঘঠিত একাধিকবারের আন্দোলনে বিপয্যয় ইত্যাদি উদাহরণ তো হাতের কাছেই আছে৷
   বার্ণিয়াকটের দেয়া ৫শর্তই প্রমান করে তাঁরাও দলকে পারিবারিক স্বার্থরক্ষা ও সম্পত্তি পরিগনিত করার বিষয়টি ভালভাবে মেনে নিতে পারেনি৷ফলতঃ সরকারের কর্মকান্ডে চাপ দেয়ার একাধিক সুযোগ সৃষ্টি হওয়া সত্বেও গত দশবছর বিএনপি থেকে তাঁর মিত্র দেশ সমূহ নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলেছে৷
   এক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে জিতবে কি জিতবেনা, বিএনপি বা দেশের জনগনের লাভ ক্ষতি কি হবে না হবে বিবেচনা করার দরকার হয়না৷ বার্ণিয়াকটের ৫ শর্ত বিএনপি সহ অপরাপর দলের জন্যে বড় রকমের শিক্ষা ধরে নেয়া অন্যায় হবেনা৷ ৫শর্ত সর্বক্ষেত্রে বিএনপি সহ অন্যান্ন অনেক দলকে বিদেশ নির্ভরতা ও ভরের রাজনীতি মুক্ত হয়ে, নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির উপর আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করবে৷
   বাংলাদেশ সহ বিশ্ববাসী'র জন্যে আরো একটি জ্বলন্ত উদাহরণ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকার স্বার্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষিন হয়ে আসলে, তাঁরা যে কোন দেশ, দল, সরকারকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে কখনই সময়ক্ষেপন করেনা৷ সেই দৃষ্টান্তই বার্ণিয়াকট বাংলাদেশে'র রাজনীতিতে বিএনপি'র ক্ষেত্রে স্থাপন করেছে৷ তাঁদের কায়েমী স্বার্থ রক্ষার্থে প্রয়োজনে একাধিক নতুন শক্তি সৃষ্টি করে নেয়াও যে চিরায়ত রীতি, নীতি, অভ্যেস, এরশাদের পর ড. কামালের নাম প্রস্তাব,তাও প্রমানের জন্যে যথেষ্ট৷
 দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার  দেশ পাকিস্তান, পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফের সরকার এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি তাঁদের অতি সাম্প্রতিক বড় তিনটি  প্রমান দক্ষিন এশিয়ার প্রায় তিনশতকোটি মানুষের মনে জ্বল জ্বল করে জ্বলবে অনন্তকাল৷

   এদিকে ড. কামাল হোসেন সাহেব বার্ণিয়াকটের প্রত্যক্ষ সমর্থন পেয়ে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত্ বৃহত্তর জোটে বিএনপি'কে আসতে চাইলে অনুরুপ ৩ নির্বাচনী পুর্বশর্ত জুড়ে দিয়েছেন৷
 প্রথমশর্তঃ--জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনপ্রকার প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সম্পর্ক থাকতে পারবেনা৷ দ্বিতীয়তঃ-জোটগতভাবে খালেদা'র মুক্তি প্রসঙ্গ বিএনপি আনতে পারবেনা--বিএনপি দলীয়ভাবে খালেদা জিয়ার জেলমুক্তি কর্মসূচি পালন করতে পারবে৷ তৃতীয়তঃ--জোটগতভাবে তারেক জিয়াকে দলে, দেশে, জোটে এবং রাজনীতিতে পূর্ণবাসনের চেষ্টা করতে পারবেনা৷  শেষ দুই শর্তে জোটনেতা ড. কামাল হোসেন সাহেবকে কোনবস্থায় জড়াতে পারবেনা৷
   বৃহত্তর জোট নির্বাচনে জয়লাভ করার পর সরকার গঠন ও পরিচালনায়  ড. কামাল হোসেন সাহেবের পক্ষে আরো ৭ শর্ত রয়েছে৷  বিএনপিও অবশ্য নির্বাচন এবং সরকার গঠন প্রশ্নে তাঁদের দাবীনামা ড. কামাল হোসেনের হাতে দিয়েছেন বলে জানা যায়৷  বিএনপির শর্তনামা বা দাবী নামায় কি আছে তা অবশ্য সঠিকভাবে তথ্য পাওয়া যায়নি৷ তবে উভয় পক্ষের শর্ত সমূহ আলোচনা সাপেক্ষে যোগ বিয়োগের মাধ্যমে একমত হওয়া সম্ভব হবে--এমন আভাস'ই মিলেছে৷
 প্রকাশিত ড. কামাল হোসেনের সরকার গঠন ও পরিচালনা বিষয়ক ৭ শর্ত নিঃসন্দেহে জনকল্যানমূখী এবং গনত্তান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সুদৃড করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে৷ নির্বাচনমূখি রাজনৈতিক দল সমূহ হরহামেশাই জনকল্যানমূখী শর্ত, দফা, কর্মসূচি, নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে থাকে৷
   সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিতে বলিয়ান  ড. কামালের নাম প্রস্তাবনায় আসতে না আসতেই তিনিও হঠাৎ করেই সুপার পাওয়ারের অধিকারী হয়ে গেলেন৷ সভাপতি-মহাসচিব নির্ভর দলের নেতা ড. কামাল সরকার গঠনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছেন৷ তিনি হিতাহীত জ্ঞান হারিয়ে বিপুল জনসমর্থিত দল বিএনপিকে জোট এবং সরকারে আসার পুর্বশর্ত দেয়ার দৃষ্টতা দেখাতে তাঁর বিবেকে সামান্যতম বাঁধেনি৷
 ড. কামাল হোসেন সাহেবের বিএনপিকে শর্ত দেয়ার ধরন দেখে আমার গ্রামের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আস্ফালনের কথাই মনে পড়ে গেল৷ গ্রাম্য ফকিন্নির ছেলের রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের পর গ্রামের প্রতিষ্ঠিত, প্রতিতযষা পরিবারকে শাসানোর চিরায়ত রীতি--জাতীয় রাজনীতিতে কামাল সাহেব দেশের আপামর জনগনকে স্মরণ করিয়ে দিলেন৷
    ড. কামাল হোসেন সাহেবের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে ৭শর্ত নড়চড় হতে পারে, কিন্তু জোটগত নির্বাচনের ক্ষেত্রে উল্লেখিত ৩ শর্তের ব্যাপারে কোন ছাড় হবেনা৷ উল্লেখিত তথ্যটি গনফোরাম মহাসচিব সুব্রত চৌধুরী সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে৷   বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠন প্রসঙ্গে আরও ৩টি প্রাসঙ্গিক বিষয় পাঠকদের জানা প্রয়োজন মনে করি৷
(১) ড. কামাল হোসেন সাহেবের সাথে দীর্ঘদিন জোটগত নির্বাচন ও সরকার গঠন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনারতঃ বিএনপি দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম সাহেবের নেতৃত্বে গঠিত লিয়াজোঁ কমিটি কাজ করে যাচ্ছিল৷  ২০দলীয় জোটের বাহিরে অন্যান্ন দল ও জোটের সাথে বিএনপি, দেশ ও জনগনের বৃহত্তর স্বার্থে  বিষয়টি দলীয় ফোরাম ও জোটে অনুমোদিত ছিল অনুমান করা যায়৷ ২০ দলীয় জোট অক্ষুন্ন রেখে অন্যসকল দল ও জোটের সমন্বয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের লক্ষে লিয়াজোঁ কমিটি  জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টি, ড. কামাল হোসেনের নাগরিক ফোরাম এবং বি চৌধুরীর নাগরিক ঐক্য, মান্না সাহেবের সুশীল সমাজের নাগরিক সমাজ এর সাথে যুগোৎপত আলোচনায় চালিয়ে অনেকাংশেই সফলতার মূখ দেখেছিলেন৷
  (২) এরশাদকে জোটের নেতা নির্বাচন করে সকল দল ও জোট একমঞ্চে নির্বাচন ও সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত বলতে গেলে প্রায় পাকাপাকি করা ছিল৷ শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা ছিল-- কখন ঘোষনা করার মহেন্দ্রক্ষনটি আসবে৷ নির্বাচন পরবর্তি সরকার গঠন প্রশ্নে এরশাদ সিঙ্গাপুরে তারেক জিয়ার সাথে চুড়ান্ত বৈঠকটি বাকী ছিল৷ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে এরশাদের সিঙ্গাপুর সফরের ঘোষনাও ছিল৷ খালেদা জিয়ার আইনজীবি কার্লাইলকে দিল্লি বিমান বন্দরতর থেকে ভারত সরকার ফেরৎ পাঠানোর পর সিঙ্গাপুর সফরের আগে এরশাদ ভারত সফরের সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িগড়ি ভারত গমন করেন৷ ভারত সফরে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ও বিরুধীদলের নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় আলোচনায় মিলিত হয়েছেন--এমন খবর ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকা সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ দেশে ফিরে অদৃশ্য কারনে তিনি বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠন, নির্বাচনের জোটের নেতৃত্ব প্রদান এবং নির্বাচন পরবর্তি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন ও সরকার পরিচালনার মোক্ষম সুযোগ পাওয়া সত্বেও চুপসে গেছেন৷ তিনি ভারত থেকে ফিরে এসে আর সাংবাদিক সম্মেলনেও হাজির হননি-তাঁর দলের সফর সঙ্গিরা সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে দেখা গেছে৷
   জেঃ এরশাদের এই চুপসে যাওয়াই মূলতঃ বিএনপি, জোট, নাগরিক ফোরাম, নাগরিক ঐক্য সহ বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত সর্বমহলে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি করেছে৷
  (৩) জটিলতা উত্তরণে তড়িগড়ি বার্ণিয়াকটের নেতৃত্বে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ সুজন সম্পাদক বদিউল আলম সাহেবের মোহাম্মদপুর বাসভবনে এক গোপন সভায় মিলিত হন৷ সেই সভায়ই ড. কামাল হোসেন সাহেবকে জোটনেতা নির্বাচিত করে আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহন প্রশ্নে বিএনপিকে ৫ শর্ত প্রদান করেন৷ সুযোগ সন্ধানী ড. কামাল হোসেন বিএনপি'র এই দুর্বল মূহুর্তকে কাজে লাগিয়ে তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচনী জোট গঠনে বিএনপিকে ৩ শর্ত ও সরকার গঠনে ৭ শর্তারোপ করে বসেন৷
   এমতঃবস্থায় লন্ডন পলাতক তারেক জিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ২০দলীয় জোটের আগামী নির্বাচনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে তাঁর পত্নি ডা. জোবায়েদা ও প্রয়াত কোকো পত্নি শারমীনের নাম ঘোষনা করেন৷ উদ্ভোত পরিস্থীতি আলোচনার জন্যে  দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বেগম জিয়ার সাথে আলোচনার জন্যে কারা কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কারা ফটকে উপস্থিত হলে--ক্ষিপ্ত খালেদা জিয়া ফখরুল সাহেবের সাথে দেখা করেননি৷ এদিকে বি চৌধুরী ড. কামালের নেতৃত্বে জোটগত নির্বাচনে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়৷
   উপসংহারে বলা বলা যায়--বহুল আলোচিত অশুভের বৃহত্তর নির্বাচনী জোট 'যুক্তফ্রন্ট' গঠন সার্বিক পয্যালোচনায় দেখা যায়--এই মহুর্তে আলোর মূখ দেখার সম্ভাবনা নেই৷ বাংলাদেশের অশুভচক্রের কাংক্ষিত সদ্য অনুষ্ঠিত 'মালয়শিয়া নির্বাচনের ধারনায়' সরকার বিরোধী বৃহত্তর জোট যুক্তফ্রন্টের কল্পিত সাম্ভাব্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও জোটনেতা প্রেতাত্বা জেঃ এরশাদ একাই--বিএনপি সহ সকল অশুভ মহলের আশা, আকাংক্ষা, স্বপ্ন, স্বাদ গলাটিপে হত্যা'র একমাত্র দায়ী৷ নির্বাচন অতি সন্নিকটে-সুতারাং অশুভের দলবদ্ধ হওয়ার আগেই পুর্বাকাশে নতুন সুয্যদ্বয় ঘটবে৷ নতুন সুয্যের আলোকরশ্মিতে প্রেতাত্বাদের গাঁয়ে যে জ্বালাপোঁড়া শুরু হবে--সেই ব্যাথা সহ্য করার শক্তি, ধৈয্য, সাহষ কিছুই নেই তাঁদের৷ নিশ্চিত করেই বলতে পারি-- আগামীর বাংলাদেশ হবে প্রেতাত্বামুক্ত, দেশদ্রোহীমুক্ত বঙ্গবন্ধুর কাংক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের সোনার বাংলাদেশ৷    

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন