আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধু হত্যান্ডের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি ও হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা ছিল সকল যুগের বর্বরতম, নৃসংশতম ঘটনা৷ 

   ১৫ই আগষ্ট বাঙ্গালী,বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক কাল অধ্যায়৷  এই দিনই সদ্য স্বাধীন, সার্বর্ভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধের উম্মেষদাতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী,বাঙ্গালী জাতীর জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবার পরিজনকে রাতের অন্ধকারে ঘাতকবাহিনী হত্যা করে৷হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপট তৈরি, পরিচালনা, বর্বরতা এবং পরবর্তি শাসকবর্গের গৃহিত পদক্ষেপ বিশ্লেষনে দেখা যায়--"এই নৃসংসতম হত্যাকান্ড কোনবস্থায়ই বঙ্গবন্ধু পরিবারকে সমূলে বিনাশ করার পরিকল্পিত পরিকল্পনায় সংঘঠিত হয়নি৷ অথবা এই জগন্য  হত্যাকান্ডটি কতিপয় বিপদগামী সেনাকর্মকর্তার অবিবেচনা প্রসূত ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডের ফসলও নয়৷ অথবা কতিপয় সেনাকর্মকর্তার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার উচ্চাবিলাসী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশও ছিল না"৷
   দীর্ঘবছর পর হলেও ষড়যন্ত্রের আসলরুপ জাতী জানতে পেরেছে--সঠিক তথ্য উপাত্ত প্রকাশ পেয়েছে৷ ঘাতক চক্রের জবানবন্দি, বঙ্গবন্ধু পরিবার হত্যাযজ্ঞের অন্যতম ঘাতক মেজর ডালিমের নিজ হাতে লেখা প্রকাশিত বই পুস্তক, অন্যতম ঘাতক কর্নেল ফারুকের আদালতে দেয়া জবানবন্দি এবং মুক্তবস্থায় বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকার, আমেরিকা সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মেয়াদোত্তিন্ন গোপন নথিপত্র প্রকাশ, বিশ্বখ্যাত তথ্য উপাত্ত প্রকাশক ও সরবরাহকারী আন্তজাতিক সংস্থা উইকিলিকসের গোপন নথি পত্র প্রকাশ, দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের স্ব-চক্ষে দেখা ঘটনার বিশ্লেষনে মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে দেশী ও বিদেশী মহলের ভুমিকা, হত্যাযজ্ঞের কারন, হত্যাযজ্ঞে'র বর্বরতা, নৃসংশতা, জাতীয় ও আন্তজাতিক গোষ্টির স্বার্থ সংক্রান্ত বিষায়াদীর বিস্তারীত বিবরণ পাওয়া যায়৷
   উল্লেখিত ব্যাক্তি ও সংস্থার দালিলীক প্রমান সমূহ আদোপান্ত বিশ্লেষন, গবেষনায় পাওয়া যায়--'৭৫পরবর্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী শাসকবর্গের সভ্যতার ইতিহাসে অকল্পনীয় পদক্ষেপ 'ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী, পরবর্তিতে আইনে পরিণতকরণ, স্বঘোষিত  ঘাতকদের হত্যার দায়মুক্তি এবং দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করার তড়িগড়ি ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্দেশ্য৷ উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টিপাৎ, ব্যাক্তি ও সংস্থার বিবরণ ও দালিলীক প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়-- নেপৈথ্যের মূল কুশিলব, ঠান্ডা মাথার খুনী, পরিকল্পনা গ্রহন,. বাস্তবায়নের প্রধান নায়ক মেজর জিয়ার সংশ্লিষ্টতা৷ 
    প্রকাশীত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষনে দেখা যায়--বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পেছনে ষড়যন্ত্রের ইতিহাস ছিল সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনায় সাজানো গোছানো পরিকল্পিত কর্মসূচি৷ '৭১এর পরাজিত শক্তি পাকিস্তান (আইএস আই)--তাঁদের এদেশীয় অনূচর রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং তদীয় রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও বুদ্ধিজীবি সমাজ, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকা (সিআইএ)--তাঁদের এদেশীয় পেইড এজেন্ট আন্তজাতিক সংস্থা ও সংস্থার এদেশীয় কর্ণধারগন, তথাকথিত বিপ্লবী ধারার পরাশক্তি চীন (এমএসএস)--তাঁদের অনুগামী এদেশীয় (মাও সেতুং) অনুসারী রাজনৈতিক দল ও তদীয় নিষিদ্ধ সর্বহারা দলের বিপ্লবী কমরেড বৃন্দ, আমেরিকার প্রধান মিত্রশক্তি, আন্তজাতীক সন্ত্রাসী ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল(মোসাদ) এবং সর্বোপরী সৌদী আরব সহ অন্যান্ন মুসলিম দেশের সম্মিলীত বাংলাদেশবিরোধী অপশশক্তি'র ষড়যন্ত্রের ফসল ছিল স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নৃসংস হত্যাকান্ড৷
   সম্মিলীত শক্তির শাসন-শোষন, মোড়লিপনার প্রধান অন্তরায় ছিলেন বাঙ্গালী জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু 'শেখ মুজিবুর রহমান'৷ একমাত্র বঙ্গবন্ধু আপোষহীন নেতৃত্বে ভিন্ন জাতী-গোষ্টি পশ্চিম পাকিস্তানী শোষক-শাসক শ্রেনীর বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আপোষহীন লাগাতার আন্দোলন, সংগ্রামে বাঙ্গালী জাতী সর্বতো অংশগ্রহন করেছিল৷একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পরিপক্ক নেতৃত্বে বাঙ্গালী জাতীর অবিরাম সংগ্রামের পরিণতি ৭১এ জাতীর গৌরবের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল৷ জাতীরজনক বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন নেতৃত্বে জাতীর শ্রেষ্ঠ অর্জন '৭১ এর মহান  মুক্তিযুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙ্গালীজাতী পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকচক্রের অত্যাধুনিক  প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত, উন্নত সমরাস্ত্র সজ্জিত ৯৩ হাজার সেনাসদস্য এবং তাঁদের এদেশীয় অনুচর, অনুগামীদের চরমভাবে পরাজিত করে কাংক্ষিত স্বাধীনতার সুয্য ছিনিয়ে এনেছিল৷
    বিজয়ী বাঙ্গালী জাতী নয়মাসের মরনপণ লড়াইয়ে ৭১এর ১৬ই ডিসেম্বর শুধুমাত্র মাতৃভূমি বাংলাদেশকেই শত্রুমুক্ত করেনি--"ভীন্ন জাতী-গোষ্টি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন-শোষন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকার ভূগোলিক আধিপত্ব রক্ষা ও বিস্তারের স্বার্থ, ব্যবসা, বানিজ্য ও মোড়লিপনা, তথাকথিত বিপ্লব রপ্তানীকারক সম্প্রসারনবাদী চীনের (মাওসেতুং) কমিউনিষ্ট বিপ্লবের স্বপ্ন সাধনার কবর রচনা করেছিল৷.একই দিন বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদ্বয় ঘটেছিল--"হাজার বছর পরাধীনতার শৃংখলে শৃংখলীত, অত্যাচারীত,  অবেহেলীত নিয্যাতীত, নিস্পেষীত, বিশ্বদরবারে জাতীসত্বা অস্বিকৃত বাঙ্গালীজাতীর কাংক্ষিত স্বতন্ত্র রাষ্ট্র--স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক নতুন এক গর্বিত জাতীসত্বার অধিকারীর নতুন এক স্বপ্নের রাষ্ট্র বাংলাদেশ৷" 
   সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো, উৎপাদনহীন বিকল কল-কারখানা, প্রকৃতিক দুয্যোগের ভয়াবহতায় খড়া, বন্যায় বিপস্ত চাষাবাদ--বিপযস্ত কৃষিনির্ভর অর্থনীতি৷ পুল, কার্লভার্ট বিপযস্ত রাস্তাঘাট,, প্রয়োজনীয় যানবাহনের অভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ধ্বস৷ উৎপাদনী ব্যবস্থাশুন্য কলখারখানা, জনবলহীন সরকারী প্রশাসন যন্ত্র, যত্রতত্র অস্ত্র ও গোলাবারুদ৷  নিত্যনৈমত্তিক ব্যবহায্য সরঞ্জামহীন, প্রয়োজনীয় যানবাহন, অস্ত্র ও গোলা- বারুদহীন আইনশৃংখলা বাহিনী৷  খাদ্য সামগ্রী শুন্য গুদাম, অর্থশুন্য ব্যাংক ব্যাবস্থাপনা, বন্ধ অর্থনীতির চালিকাশক্তি ব্যাবসা বানিজ্য৷  উপোয্যপুরী খড়া, বন্যায় বিধ্বস্ত অর্থনীতির সদ্য স্বাধীন নতুন বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার ভার গ্রহন করেছিলেন--"জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷"
  এমতঃবস্থায় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি সুক্ষ দৃষ্টিতে নজর দিলে ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপট, কুশিলব, পরিকল্পনার সত্যতা মেলাতে কারোপক্ষে কষ্ট হওয়ার কথা নয়৷ তথ্য পয্যালোচনায় দেখা যায়--মূলতঃ 'মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির বীজ বপন করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগীতায়(সি.আই.এ)পরাজিত শক্তি পশ্চিম পাকিস্তান(আই.এস.আই), মহাচীনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা(এমএসএস) এবং আমেরিকার তল্পিবাহক ইহুদী রাষ্ট ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা (মোসাদ)৷
   প্রথমবস্থায় উল্লেখিত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা কয়েকটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতার সহযোগীতায় ভারতে প্রশিক্ষনরতঃ ছাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে স্পষ্টতঃ দ্বিধাবিভক্তি ঘটিয়ে এক অংশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন গ্রহন করে৷  প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের গঠিত মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত এগার'টি সেক্টরের মধ্যে কমপক্ষে তিনটির 'সেক্টর কমান্ডার' এবং প্রবাসী সরকারের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে তাঁরা সম্পুর্ণ তাঁদের নিয়ন্ত্রনে নিতে পেরেছিল৷
  এমতঃবস্থায় প্রবাসী সরকার তড়িৎ পদক্ষেপে বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মাওলানা ভাসানী সহ কতিপয় নেতাকে ভারতের মাটিতে নজরবন্দি, গৃহবন্দি, অনেককে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, বরখাস্ত করতে বাধ্য হন৷  মেজর জিয়াকে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব থেকে তড়িৎ অব্যাহতি কতিপয় সেনাকর্মকর্রতার দায়িত্ব অব্যহতি দিয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে রাখার চেষ্টায় ব্রতি হতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ মুক্তিযুদ্ধের পুর্বের এবং পরের ষড়যন্ত্রের বাহনগুলী মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসই "ভারতের অভ্যন্তরে এবং দখলকৃত পুর্ববাংলা"র আনাছে কানাছে সক্রিয় কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছিল৷
    দিনে দিনে বাংলাদেশ বিরোধী অশুভশক্তির প্ররোচনা, অর্থ ও অস্ত্র সহযোগীতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সরকারের বিদ্রোহী অংশ--প্রবাসী সরকারের ভিতরে ও বাহিরে  শক্তিশালী অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়"৷কিন্তু তাঁদের গতিবিধি ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা "র" এর নজর এড়াতে পারেনি৷ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ফাইনাল প্রতিবেদন হাতে পাওয়া মাত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রিমতি ইন্ধিরা গান্ধী কালবিলম্ব না করে মন্ত্রী সভার বৈঠক ডেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সার্বিক সামরিক সহযোগীতার প্রস্তাব অনুমোদন করেন৷ প্রস্তাবনুযায়ী বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু, ভারতের বিচক্ষন প্রধানমন্ত্রী, শ্রীমতি "ইন্দিরা গান্ধী'র তড়িৎ উদ্যোগে "ভারত-বাংলাদেশ" যৌথ মিত্র বাহিনী গঠিত হয়৷ মিত্রবাহিনীর সাড়াষী আক্রমনে অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন জাতীর নতুন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে৷
    ভারতের মাটিতে বপন করা বাংলাদেশ বিরোধী অশুভশক্তির বীজ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশেও সমভাবে কায্যকর ও তৎপর হয়ে উঠে৷ সম্মিলীত অশুভশক্তি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে সর্বক্ষেত্রে অস্থিতিশীল করে তোলে৷ দেশবিরোধী সমস্ত ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ এবং বেপরোয়া অংশগ্রহন করে "ছাত্র মুক্তিযুদ্ধাদের বিদ্রোহী অংশ সিরাজুল আলম খাঁন, আসম রব, শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মী৷ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহন করে প্রবাসী সরকারের নজর বহিভুত সেক্টর কমান্ডার আবদুল জলিল, কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যের একটি ক্ষুদ্র অংশ৷পরাজিত শক্তির এদেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী সহ রাজাকার আলবদর বাহিনীর সসস্ত্র সদস্য বৃন্দ৷  মাওলানা ভাসানী নেতৃত্বে কতিপয় রাজনৈতিক দল এবং চীনপন্থি কমিউনিষ্ট ব্লকের কমরেড তোয়হা, আবদুল হক, সিরাজ শিকদার সহ অন্যান্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপ সমূহ৷
     উল্লেখিত সমূদয় ষড়যন্ত্রের অন্তরালে নিরাপদে অবস্থান গ্রহন করে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা বয়োজৈষ্ঠ সেনাকর্মকর্তা মেজর জিয়ার নেপৈথ্য নেতৃত্বে অতি সংগোপনে কতিপয় পাকিস্তান ফেরৎ সেনা কর্মকর্তা৷ সরকারের অভ্যন্তরে সংগোপনে অবস্থান গ্রহন করে--"খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের ক্ষুদ্র একটি অংশ৷ রাজনীতির মাঠে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহন করে--আসম রব এবং সেক্টর কমান্ডার আবদুল জলিলের নেতৃত্বে সদ্য গঠিত রাজনৈতিক দল বৈজ্ঞানীক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী "জাসদ"৷ অস্ত্রহাতে প্রকাশ্য রাজপথে অবস্থান গ্রহন করে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে জাসদের সসস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন দুর্দষ্য "গন বাহিনী"৷ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা উল্লেখিত ব্যাক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে প্রকাশ্য যোগদান করে সারা ভারত, বাংলাদেশের বনজঙ্গলে আত্মগোপনকারী সদ্য মুক্তিযুদ্ধ ফেরৎ চীনপন্থি মুক্তিযোদ্ধা দলের শতশত অস্ত্রধারী কমরেড৷ মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাহাড় পর্বত, বন জঙ্গল, দেশে বিদেশে পলাতক পরাজিত শক্তির এদেশীয় অস্ত্রধারী রাজাকার, আলবদর, আলশামসের শতশত আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত সদস্যগন৷
    বিশাল ব্যাক্তিত্বের অধিকারী, অসীম সাহষী নেতা, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং সরকার উৎখাতের প্রেক্ষাপট তৈরির উদ্দেশ্যে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে উল্লেখিত সাম্রাজ্যবাদের প্রেতাত্বাদের হেন কোন কাজ ছিলনা তাঁরা করেনি৷ চুরি, ডাকাতি, রাহাজানী, চিনতাই, হত্যা, গুম, খুন, লুটপাট ছিল নিত্যদিনের  কর্মকান্ড৷ মিথ্যা গুজব, ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার, অপরাজনীতি, অপকৌশল হয়ে উঠেছিল নিত্য নৈমত্তিক রাজনৈতিক গতিধারা৷ দেশের একমাত্র রপ্তানীযোগ্য পণ্য পাটের গুদামে একের পর এক আগুন, খাদ্য গুদাম লুট, ব্যাংক ডাকাতি, নির্বাচিত এমপি হত্যা, জোরদার মহাজন হত্যা, বাড়ীঘর লুটপাট হয়ে উঠেছিল অরাজকতা সৃষ্টির হাতিয়ার৷
    অন্যদিকে উপোয্যপুরী খড়া, অকাল বন্যার প্রাকৃতিক দুয্যোগের কবলে পড়ে দেশে দেখা দেয় খাদ্যাভাব৷ বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধকালীন আমেরিকা সরকারের বিরুধীতা ও চক্রান্ত ভুলে তাঁদের সঙ্গে খাদ্য আমদানীর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন৷ চুক্তি অনুযায়ী জাহাজভর্তি খাদ্য যথারীতি আমেরিকান বন্দর ছেড়েও আসে৷  আমেরিকান সরকারের উচ্চপয্যায়ের হাতের ঈশারায় খাদ্য সামগ্রি বোঝাই জাহাজ মাঝপথে সাগরে নিক্ষেপ করে দেয়৷
    উক্ত ষড়যন্ত্রমূলক ন্যাক্কারজনক ঘটনা--বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সরকারের সম্বিত ফিরিয়ে দেয়৷ পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমেরিকা মাঝপথে খাদ্য সাগরে নিক্ষেপ করার চরম অমানবিকতা--বিশ্ব মানবতার ইতিহাসের পাতায় কাল ইতিহাসের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে"৷ ৭৪ এর ঐ মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের একলক্ষ লোকেরও বেশী প্রানহানী ঘটেছিল৷ ইহা সম্পূর্ণ অমানবিক হত্যাযজ্ঞ৷ এই হত্যাযজ্ঞের সম্পূর্ণ দায় আমেরিকান সরকারকে যুগযুগান্তর ভয়ে বেড়াতে হবে,--বাংলাদেশ বয়ে বেড়াবে তাঁর শরীরের সর্বাংশে দগদগে ক্ষত৷
   জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু চতুমূখী ষড়যন্ত্রের মধ্যেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ খাদ্যাভাব দুর করে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য জনসাধারনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন৷ উৎপাদনী যন্ত্র সচল হয়ে উঠেছিল, ফসল উৎপাদন আশাব্যাঞ্জক ছিল৷ আমদানী রপ্তানীতে এসেছিল গতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির নিরুপক সকল সূচকে উধ্বমূখি অবস্থানে বিরাজমান ছিল৷
   জাতীর জনক ঘোষিত প্রথম বিপ্লবের সাফল্যের সুফল বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগনের দরজায় কড়া নাড়ছিল৷এমনি অবস্থায় তাঁর স্বপ্নের ক্ষুদামুক্ত,দারিদ্রমুক্ত, বৈশম্যহীন,উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মসূচি দ্বিতীয় বিপ্লব৷ তিনি প্রথমাবস্থায় সামাজিক বৈশম্য দুরিকরনে মধ্যসত্বভোগী প্রথা বাতিল করেন-মালিক-শ্রমিক মালিকানা নির্ধারীত করেন৷ তদ্রুপ সংবাদ পত্রকর্মীদের বিভিন্ন শ্রেনী বিভক্তি যেমনঃ-প্রুফ রিডার, মুদ্রাক্ষরিক,সাংবাদিক ইত্যাদি অবলোপন করে 'সংবাদিক' নামে একবিন্দুতে প্রতিস্থাপন করে তাঁদের কল্যানে ওয়েজবোর্ড গঠন করেন৷  কোর্ট কাচারীতে প্রচলিত উকিল, মোক্তেয়ার, মহুরী শ্রেনী বিন্যাস বিলুপ্ত করে একবিন্দুতে 'উকিল এবং তাঁর জুনিয়র' প্রতিস্থাপন করেন৷ এমনিভাবে সমাজ, রাষ্ট্র, সরকারে ব্যাপক সংস্কার পুর্বক বৃটিশের রেখে যাওয়া মান্ধাতার আমলের আইন, কানুন, রীতি, নীতি, শাসন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহন করেন৷
   সরকার পরিচালনায় জাতীয় সরকারের রুপরেখার ভিত্তিতে, সকল শ্রেনী পেশার অংশগ্রহন নিশ্চিতকল্পে,সামাজিক শ্রেনী বৈশম্যহীন সামাজিক সমতা, সম্পদের সুষম বন্টন, উৎপাদনী যন্ত্র এবং উৎপাদকের ন্যায্য হিস্যা নির্ধারন ও শ্রমিকশ্রেনীর মালিকানা প্রতিষ্ঠা, সমবায় ভিত্তিতে চাষাবাদ, প্রশাসনের বিকেন্দ্রিকরন পুর্বক মহকুমা/জেলা ভিত্তিক সরকার পরিচালনা ইত্যকার  তাঁর পরিপক্ক রাজনৈতিক ধ্যানধারনার শ্রেষ্ঠ দর্শন বাঙ্গালী জাতীর বৃহত্তর কল্যানে নিবেদন করেন৷ উক্ত দর্শনের নাম দেয়া হয় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ সংক্ষেপে "বাকশাল"৷
    বিদেশী মতবাদ নয়, কোন দার্শনিকের দর্শন হাওলাত নয়, কোন রাষ্ট্রের শাসনব্যাবস্থা অনুকরন,অনুসরণও নয়--সম্পূর্ণ বাংলাদেশের আবাহাওয়া উপযোগী বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সঞ্চিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ" দ্বিতীয় বিপ্লবের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক কর্মসূচি তথা "বাকশাল" কর্মসূচি বা দর্শন৷
  বাকশাল শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠাকল্পে নানাবিধ প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ড চলাকালীন সময়ে কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের টনক নড় উঠে৷ তাঁরা ঠিকই বুঝতে পারে--বিশাল ব্যাক্তিত্বের অধিকারী বঙ্গবন্ধু তাঁর চিন্তাচেতনার ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নির্দিদ্বায় সম্ভব করে তুলতে পারবেন৷ একবার যদি বঙ্গবন্ধুর মেধার ফসল "বাকশাল দর্শন" বাংলাদেশের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁদের অস্তিত্ব, মোড়লিপনা, শোসন, শাসন অত্রাঞ্চলে সুদুরপরাহত হয়ে উঠবে৷
   সুতারাং কালজয়ী দর্শন বাকশাল ঘোষনা বাস্তবায়নের পুর্বেই প্রতিহত করার চক্রান্ত বাস্তবায়নার্থে সম্মিলীত বাংলাদেশ বিরোধী অশুভশক্তির মরিয়া চেষ্টার অংশই সর্বযুগের মানব ইতিহাসের বর্বরতম, নৃসংশতম উপায়ে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর  পরিবার পরিজনের হত্যাযজ্ঞ সাধন৷ 
   বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন নৃসংশতম হত্যাযজ্ঞ আর কোথাও কোন দেশে, কখনই ঘটেনি, এবং কি অন্ধকার যুগেও নয়৷ ইসলামী শাসনামলে পিতা পুত্রকে হত্যা করেছে, পুত্র পিতাকে হত্যা করেছে অথবা বন্দি করেছে-কেউ কারোই স্বপরিবার উচ্ছেদ করেনি৷  ইংরেজ বেনিয়া দল বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লাকে হত্যা করেছে বা করিয়েছে কিন্তু পরিবারবর্গকে বন্দি করেছে, পরবর্তিতে রাষ্ট্রিয় মাসোয়ারায় প্রতিপালন করেছে৷
 উনিশ শতকের প্রথম থেকে বিশ্বের দেশে দেশে সামাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘঠিত হয়েছে৷  কোথাও উচ্ছেদকৃত শাসক পরিবারর্গের হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়নি৷ একই শতকের শেষার্ধে ইরানে চাঞ্চল্যকর ইসলামী বিপ্লব সংঘঠিত হয়েছে৷ ইরানের ইসলামী বিপ্লবে অংশগ্রহনকারী লক্ষলক্ষ মানুষ শাহ রাজপরিবারে বাহিনীর হত্যার শিকার হয়েছে৷  আড়াই হাজার বছরের শাহ রাজ বংশের শাসন শোষন উৎখাত করা সত্বেও বিপ্লবী ইসলামী সরকার শাহ রাজবংশের বা শাহ পাহলভি পরিবারের কোন সদস্যকে হত্যা করেনি৷ "শাহ পাহলভি'' পাশ্ববর্তি দেশ মিশরে আশ্রয় থাকাবস্থায় মাত্র ৬০ বছর বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছেন৷ 
  তারও বহু পুর্বে ষোড়শশতকে বিশ্বকাঁপানো ফরাসী বিপ্লব গোটা ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ শতবছরের রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করার লক্ষে পরিচালিত বিপ্লবে ষোড়শ লুই ও তার স্ত্রী মারি অ্যান্তনে'র বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কায্যকর করা হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবের ট্র্যাজেডি তাদের স্বামী-স্বী দুইজনকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছিল। রাজপরিবারের শতশত সদস্যের গাঁয়ে আঁছড়ও লাগেনি৷
   রাজা ও রানীর স্বৈরাচারিতা, বিলাসিতা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় দুর্নীতি পুরো রাজপরিবারকে সাধারণ জনগণের প্রতিপক্ষ করে তোলেছিল। আন্দোলনের তোপের মুখে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের কাছে শেষ পর্যন্ত বন্দী অবস্থায় উপনীত হন রাজা ষোড়শ লুই। ক্ষমতা হারিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে বন্দী রাজা ষোড়শ লুইয়ের বিচার শুরু হয়। ১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি শতসহস্র জনতার সম্মুখে রাজা ষোড়শ লুইসকে গিলোটিনে শিরোচ্ছেদ করা হয়।
   তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় আয়োজিত ভোটে ৩৬১ জন মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে এবং ২৮৮ জন বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। অন্যদিকে তার স্ত্রীকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ফ্রান্সের কুইন মারি অ্যান্তনের বিলাসিতার জন্য অনেকেই তাঁকে অপছন্দ করতেন। এ ছাড়া দুর্নীতির কলকাঠি আড়ালে থেকে তিনিই নাড়তেন বলে জনগণের অভিযোগ ছিল। বিচারের পর ১৬ অক্টোবর রানীর ক্ষেত্রেও একই শাস্তি কার্যকর করা হয়েছিল।
  বিগত শতাব্দিতে ভারতের অবিসংবর্ধিত নেতা মহত্মা গান্ধী, সমসাময়িক কালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, তাঁর পুত্র প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী হত্যা'র শিকার হয়েছেন কিন্তু পরিবারবর্গ অক্ষতই ছিলেন৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূটূকে বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কায্যকর করা হয়েছিল কিন্তু তাঁর পরিবার সম্পুর্ণ অক্ষতই ছিল৷ 
  হাজার বছরের ইতিহাসে বিশ্বে'র দেশে দেশে বহু সামরিক অভ্যুত্থান, বিপ্লব, প্রতিবিপ্লব, গনভ্যুত্থান, সাংস্কৃতিক বিপ্লব, সামাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে--কোথাও পূর্ববর্তি শাসকের সম্পূর্ণ পরিবার-পরিজন, আত্মীয় স্বজন এবং পরিবারের অবুঝ শিশু সমেত এমন ন্যাক্কারজনক, বর্বরোচিত, অমানবিক হত্যাযজ্ঞ বিশ্ব ইতিহাসের কোন এক যুগে সংঘটিত হয়েছে--তেমন উদাহরণ নেই৷
    ১৫ই আগষ্ট '৭৫ এ ঘাতকচক্র শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকেই হত্যা করেনি--হত্যা করেছে বাঙ্গালী জাতীর অহংকার, গৌরব, শৌয্য, বিয্য, মায্যদা, অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার, চেতনা, মূলনীতি এককথায় বাংলাদেশ৷অন্যদিকে বর্বরতম হত্যাকান্ডে বাঙ্গালী হারিয়েছে তাঁর উম্মেষদাতা, বাংলাদেশ হারিয়েছে তাঁর স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙ্গালী জাতী হারিয়েছে তাঁর জনক, বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ হারিয়েছে তাঁদের বিপ্লবের  ধারক, বিশ্ববাসী হারিয়েছে পরিপক্ক গনতান্ত্রিক রাজনীতিবীদের গর্ভের ভ্রুন কালজয়ী দর্শন "বাকশাল'৷ 
 
 
 
 
 
 
 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন