জাতীয় দিবস প্রতিপালনে "রাজনৈতিক দলের দেশপ্রেমিক কর্মীবাহিনী'র অগ্রনী ভুমিকা অনস্বিকায্য৷

        স্ব-স্ব ধর্ম, বর্ণ, জাতী, গোষ্টি ভেদে প্রত্যেকের একান্ত নিজস্ব কিছু বিশেষ বিশেষ স্মরণীয় দিবস রয়েছে৷ আমাদের প্রিয় ইসলাম ধর্মের আওতাভুক্ত মুসলিম জাতী যেমন কিছু নির্দিষ্ট দিবসে আনন্দ উল্লাস করি, আবার কিছু দিবস অত্যান্ত বেদনা বিধুরতায় বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে স্মরণ করি৷  তদ্রুপ অন্যান্ন ধর্মালম্বি জাতী, গোষ্টি, সম্প্রদায়ও তদ্রুপ আনন্দ, উল্লাস, বেদনার দিবস সমূহ তাঁদের মত করে পালন করে থাকে৷ উক্ত দিবস সমূহ যথারীতি নিয়ম পালন করে দীর্ঘ যুগ পালনের অভ্যেসগত কারনে একপ্রকার দিবসগুলী ধর্মের অংশে পরিণত হয়েছে৷ উল্লেখিত দিবসগুলী ইসলাম ধর্মালম্বি মুসলমান জাতীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টির  অন্তভুক্ত৷ সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজে কতিপয় ব্যাতিক্রম ব্যাতিত প্রায় সমভাবেই উল্লেখিত দিবসগুলী যথাযথ ধর্মীয় ভাব গাম্ভিয্যে পালিত হয়৷
অন্যদিকে বিভিন্ন ধর্মের অভ্যন্তরে ভাষা, ভুখন্ড, অঞ্চল, জাতী, সম্প্রদায়, গোষ্টি'র আলাদা আলাদা অস্তিত্ব বিদ্যমান রেখে একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটতে পারে৷ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসরতঃ জাতী-গোষ্টির উত্থান, পতন, গৌরব, বিপয্যয়, সুখ, দুঃখ্যানুভূতি প্রকাশের সুনির্দিষ্ট কিছু দিবস রয়েছে৷স্ব-স্ব জাতী, গোষ্টি, সম্প্রদায় উক্ত দিবসগুলী যথারীতি উক্ত দিবসের মর্মানুযায়ী যথাযোগ্য মায্যদা, ভাব গাম্ভিয্য বজায় রেখে পালন করে থাকে৷ উক্ত রীতিটি মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সম্পর্কিত এবং আবহমান কাল হতে বিশ্বের দেশে দেশে, জাতীতে জাতীতে পালিত হয়ে আসছে৷ দিবসগুলী স্ব-স্ব জাতী, গোষ্টি, সম্প্রদায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টির অংশ হয়ে ঐ জাতী'র পথ প্রদর্শকের ভুমিকা পালন করে৷
 বাঙ্গালী জাতী হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টিকে সমুন্নত রেখে আলাদা রাষ্ট্র "বাংলাদেশ" সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছিল৷ভিন্ন জাতী গোষ্টির  'শাসন-শোষনের' বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতী'র সুদীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কতিপয় দিবস জাতীয় জীবনে বিশেষভাবে স্মরণীয়, বরণীয় হয়ে আছে৷ উক্ত দিবসগুলী দেশের অভ্যন্তরে বসবাসরতঃ জাতী, গোষ্টি, সম্প্রদায়ের সুদীর্ঘকাল লালিত স্ব-স্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলেমিশে প্রত্যেক জাতী, গোষ্টির আনন্দ উল্লাস, বেদনা বিধুরতার অংশে রুপান্তরীত হয়েছে৷ দিবসগুলীর তাৎপয্য অনুযায়ী যথারীতি-যথাযোগ্য মায্যদা ও ভাবগাম্ভিয্য বজায় রেখে পালন রাষ্ট্র, সরকার ও জনগনের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভক্তি সহকারে  আবশ্যকীয় পালন প্রচলিত রীতি৷  বিশ্বময় প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই বিষয়টি একইরুপে প্রযোজ্য ও প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতি হিসেবে প্রতিপালিত হচ্ছে৷ উক্ত রীতি অবজ্ঞা, অবহেলা, অপমান, অপদস্ত, বিকৃত করা যে কোন দেশের প্রচলিত ফৌজদারী আইন ও বিধি মোতাবেক দন্ডনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত৷ 
  রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সংগঠন ও সংস্থা উল্লেখিত দিবসে সংগঠিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ প্রজম্ম থেকে প্রজমান্তরে স্মরণ করিয়ে দেয়া একান্ত নৈতিক কর্তব্যহেতু জাতীয় পয্যায়ে আবশ্যকীয় পালনীয় রীতি গড়ে উঠে৷এইরুপে নিয়ন্তর পালনে তারতম্য ভেদে দিবসগুলীর অভ্যন্তরীন সংঘটিত ঘটনা প্রবাহের নির্যাস, তাৎপয্য, ঐতিহাসিক মুল্য অনুধাবনের ক্ষেত্রে প্রজম্মের মহাসুযোগ সৃষ্টি হয়৷ দেশ ও জাতীর এইরুপ ঐতিহাসিক নির্দিষ্ট দিনের তাৎপয্য অনুশীলনে প্রাপ্ত লব্দ জ্ঞান প্রজম্ম থেকে প্রজমান্তরে জাতীত্ববোধ, দেশাত্ববোধের চেতনায় নাগরীকদের বিকশীত করে গড়ে তোলে৷ দেশ ও জাতী গঠনে ক্ষেত্রে দেশপ্রেমের গুরুত্ব ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না৷
  রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সমূহ--রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার সংগঠন সমূহ দেশ ও জনগনের প্রতি তাঁদের নীতিগত দায়বদ্ধতা থেকে দিবসগুলী পালন করতে বাধ্য থাকে৷ এইরুপ প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেশের অভ্যন্তরে বসবাসরতঃ নাগরীকদের দেশপ্রেমে উদ্ভোদ্ধ করার ক্ষেত্রে মূখ্য ভুমিকা পালন করে৷
 ইহা একান্ত সত্য--যে কোন জাতীর উন্নয়ন, অগ্রগতি, শান্তি, শৃংখলা রক্ষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের দেশপ্রেমের গুরুত্ব অপরিসীম, অনস্বিকায্য, আবশ্যিক৷ আর দেশ ও জাতীর ঐতিহাসিক দিবসের তাৎপয্য, শিক্ষা, অনুশশীলন নাগরিকদের স্নায়োবিক অনুভূতিতে দেশাত্ববোধ সৃষ্টি, জাগ্রত করা বা রাখার মোক্ষম হাতিয়ার৷ যে জাতী দেশপ্রেমে যতবেশী সমৃদ্ধ সেই জাতী ততবেশী দ্রুত উন্নতি, অগ্রগতি সাধনে সক্ষমতা অর্জন করে৷ একমাত্র স্বিকৃত উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতী'ই বিশ্ব দরবারে সভ্য ও সম্মানীত জাতী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে৷ 
  অত্যান্ত দুঃখ্যজনক হলেও সত্য--"৭৫ পরতবর্তি প্রায় দুইদশক বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার সমূহ জাতীর শৌয্য, বিয্যের ধারক বাহক বিশেষ বিশেষ দিন ও প্রতিক সমূহ রক্ষনাবেক্ষনের প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা রাজনৈতিক আদর্শিক কারনে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা দেখিয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে অধিকাংশের যথাযথ রীতিনীতি অনুসরন, তাৎপয্য অনুধাবন পুর্বক "জাতীয় দিবস" পালন ও "জাতীয় প্রতিক" সমূহ  সংরক্ষনে আগ্রহে প্রচুর ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়৷
 বর্তমানেও রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের অনেকগুলী রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারী, বেসরকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান--জাতীয় দিবস হয় পালন করা থেকে বিরতঃ থাকে, নয় তো বা দায়সারা ভাবে পালন করতে দেখা যায়৷  জাতীর সাগররসম রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরব, পরিচিতি, অহংকার, শৌয্য বিয্যের প্রতিক--'জাতীয় পতাকা' সংরক্ষন, ব্যবহার, পরিমাপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশীরভাগ জনগোষ্টির রয়েছে অজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত অবহেলা৷ এহেন অবস্থা থেকে অতিসত্বর উত্তরণের প্রয়োজনে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক শক্তি, সামাজিক শক্তি এগিয়ে আসা প্রয়োজন মনে করি৷ দেশপ্রেমের অভাবজনীত কারনে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রজম্মই বিপথে চলে গেছে--খোলা চোখে পরিলক্ষিত হচ্ছে৷  যথাযথ উদ্যোগের বিলম্বে গোটা জাতী অতলতলে তলিয়ে গেলে আশ্চায্য হওয়ার কিছুই থাকবে না৷
  আগামী ১৫ই আগষ্ট জাতী'র জনক বঙ্গবন্ধু' 'শেখ মজিবুর রহমানে'র ৪৩ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে যথাযথ ভাবগাম্ভিয্যে জাতীয় শোক দিবস পালন করবে জাতী৷ একই সঙ্গে  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তাঁর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি'র বিদ্যমান রাজনৈতিক দল সমুহ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার সংগঠন সমুহ শোক দিবস পালনের কর্মসুচি ঘোষনা করেছে। বিগত কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ সরকার দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভিয্যে পালনের উদ্দেশ্যে  সরকারীভাবে  "জাতীয় শোক দিবস ঘোষনা" করেন৷  দিনটিকে  সরকারী ছুটির দিন ঘোষনা করে জাতীয় পয্যায় পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে সুনির্দিষ্ট কতিপয় নীতিমালা প্রনয়ন করে ৷অন্যসব জাতীয় দিবসের ন্যায় জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে  সরকার যথাযথ ভাবে পালনের নিমিত্তে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারী বেসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সমূহে  উক্ত নীতিমালা কঠোরভাবে প্রতিপালনের  নির্দেশনা জারি করে৷
     দু:খ্যজনক হলেও সত্য--সরকারের উক্তরুপ নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত অন্যসব জাতীয় দিবসে'র ন্যায় প্রতিবছরই উপেক্ষিত থেকে যায়৷ যথাযথভাবে জাতীয় দিবস পালনের ক্ষেত্রে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও সরকারী উদ্যোগে আন্তরিকতার যথেষ্ট  অভাব পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়৷ এমনিতে জাতীয় দিবস পালনে দীর্ঘ যুগের অনভ্যস্ততা  জাতিকে  অনাগ্রহী করে তুলেছে৷ অন্যদিকে আগ্রহী করে গড়ে তোলার আবশ্যকীয় শক্তি-- "দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী সংস্থা,  রাজনৈতিক দলের   কর্মীবাহিনীর সমাজে বিচরনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা অনেকক্ষেত্রে শুন্যতা জাতীয় দিবস পালনের ক্ষেত্রকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশপ্রেমহীন প্রজম্ম জাতীকে অন্ধকারে টেনে নিতে সময়ক্ষেপনের প্রয়োজন হবেনা 
    এমতঃবস্থায় দেশ ও জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে-'দেশপ্রেমিক জনগোষ্টি গড়ে তোলার প্রয়োজনে  সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের তদারকি, পয্যবেক্ষন, প্রশিক্ষন একান্ত প্রয়োজন৷ এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের আদর্শিক দেশপ্রেমিক কর্মীবাহিনী  সর্বাজ্ঞে দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন৷ সকল জাতীয় দিবস যথাযথা রীতিনীতি অনুসরন পুর্বক প্রতিপালনে  দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মীরাই সমাজে, রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে৷   

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন