জিয়া পরিবার ধ্বংসে এগার আলৌকিকতা'র প্রভাব৷৷


  জিয়া পরিবার ধ্বংসে খোলা চোখে হাজারো কারন উল্লেখ করা সম্ভব৷  প্রনিদানযোগ্য এগারটি কারনে বৈষয়িক কোন ব্যাক্তি, সংস্থা, দল, শক্তি জড়িত আছে বলে আমি মনে করিনা৷ আলৌকিক প্রভাব ব্যাতিত উক্ত নিশ্চিত ঘটনাগুলী ঘটার অন্যকোন কারন থাকতে পারে আমি বিশ্বাসও করিনা৷ এগার আলৌকিক প্রভাব আলোচনা করার পুর্বে বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত বিষয় অতিসংক্ষেপে আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করি৷
    বৃটিশ বেনিয়া মূখপাত্র লর্ড ক্লাইভের "নীলকুঠি ষড়যন্ত্রে" বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার পতনের মাধ্যমে২০০বছর বাঙ্গালী জাতী ইংরেজদের গোলামী করতে বাধ্য হয়৷ ৭৫ এ আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হ্যানরি কিসিঞ্জারের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদের বাসভবনে নতুনকরে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে পদানত করার চক্রান্তে আর এক 'নীলকুঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র' নাটক অনুষ্ঠিত হয়৷ উক্ত ষড়যন্ত্রে  ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ ইং সালে শতাব্দির মহানায়ক, বাঙ্গালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হন এবং আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটে৷ ক্ষমতার উত্থানপতনে নীলকূঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নাটকের মূল নেপৈথ্য নায়ক,ঠান্ডা মাথার খুনী মেজর জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবন্দুতে উত্থান ঘটে৷
    ক্ষমতার রদবদলে দীর্ঘ ২১বছর পরাজিত শক্তির প্রেতাত্বাগন বাংলাদেশ, বাঙ্গালী জাতীকে শোষন শাসন অব্যাহত রাখে৷ অবশেষে জাতীর জনকের জৈষ্ঠকন্যা 'শেখ হাসিনার' নিয়ন্তর আন্দোলন সংগ্রামে ১৯৯০ ইং সালে জনগন এক সফল গনভ্যুত্থান ঘটিয়ে গনতন্ত্র পূণোদ্ধার করে৷ গনভ্যুত্থানের পথ ধরে গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় 'নীলকুঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র'ভুক্ত প্রেতাত্বা শাসক, ঘাতকচক্র এবং সুবিধাভোগীদের পতন কায্যক্রম শুরু হয়৷মাঝে মাঝে সাময়িক বিগ্নতা সৃষ্টি হলেও অদ্যাবদি পতনের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রয়েছে৷
  আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হ্যানরি কিসিঞ্জারের পরিচালনায় 'নীলকূঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নাটকের মাধ্যমে জিয়া পরিবারের উত্থান পর্ব দিয়ে প্রেতাত্বার শাসনপর্ব শুরু করেছিল৷ একই রাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বার্ণিয়াকটের পরিচালনায় ড. কামাল হোসেনের উত্থানের মাধ্যমে প্রেতাত্বার প্রধান জিয়া পরিবারের পতন ও নিচ্ছিহ্ন হওয়ার কায্যক্রম সমাপ্তি ঘটবে মাত্র--কিন্তু প্রেতাত্বার ছায়া ড. কামাও হয়ে বাংলাদেশের সমাজে বিচরণ করবে৷
 '৯০এর গনভ্যুত্থানে প্রেতাত্বা শাসন শোষনের পতন শুরু হলেও দৃশ্যমান ছিলনা৷ ২০০১ ইং সালে মরণ কামড় বসিয়ে তাঁরা আবারও জনগনের বিজয় সাময়িক সময়ের জন্যে চিনিয়ে নিয়েছিল৷২০০৬সালে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্তে আবারও নীলকুঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে বাংলাদেশ৷ এবার প্রেতাত্বার ক্ষমতার হাতবদল হয়েছিল বটে শাসন শোষন মুক্ত হয়নি বাংলাদেশের জনগন৷২০০৮ইং সালের সাধারন নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগন তাঁদের ক্ষমতা নিজ হাতে নিয়ে আসে--শুরু হয় গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় প্রতাত্বাদের পতন কায্যক্রম৷
   সর্বশেষ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতি লক্ষ করলে উল্লেখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনার সারবর্তা উপলব্দি সম্ভব হবে৷ ইহা একান্তই সত্য যে বিএনপি এবং তাঁর জোটের জনসমর্থন এবং সাংগঠনিক শক্তি সামান্যতম হেরফের হয়নি৷অস্বিকার করার উপায় নেই--বিদ্যমান জনসমর্থনও সাংগঠনিক শক্তিতে দোর্দন্ডপ্রতাপে বিএনপি বাংলাদেশ শাসন করেছে৷ অথছ শক্তি সামর্থ অটুট থাকা সত্বেও গনতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শক্তিহীন৷ বলা যায়--সার্বিক শক্তি সামর্থ অটুট থাকাবস্থায় আলৌকিক ভাবে বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের  পতন এবং শেষাবদি নিচ্ছিন্ন হওয়া অনিবায্য হয়ে উঠেছে৷ নিম্নের ধারাবাহিক দুটি নির্বাচন এবং আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনে সম্ভাব্য পরিণতি তুলে ধরে আমার বক্তব্যের সত্যতা প্রমানে সচেষ্ট হব

    নবম সংসদ নির্বাচনঃ--২০০৬ইং সালের বিএনপি জোট ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নাটক "নীলকূঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র" ব্যার্থতায় অসংখ্য মামলাসহ খালেদার দুই পুত্র দেশত্যাগে বাধ্য হয়৷  ফলাফল ২০০৮ইং সালের ঘোষিত সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে সরকার গঠন করে৷ অপরপক্ষে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি জোট নামমাত্র(৩৮ আসন) বিরোধী  দলের আসন গ্রহন করে৷
  দশম সংসদ নির্বাচনঃ--বিএনপি জোটের একান্ত শুভাকাংক্ষি বার্ণিয়াকট পরিচালিত ২০১৩ সালের 'উত্তরা নীলকুঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নাটকের ব্যার্থতা এবং রৌশন এরশাদের দৃডতায় প্রেতাত্বার জোটকে নির্বাচন বর্জন এবং আগুন সন্ত্রাসে মানুষ হত্যায় বাধ্য করে৷  ফলাফল--মহাজোট' প্রতিযোগীশুন্য মাঠে একক নির্বাচন এবং দ্বিতীয়বার মহাধুমধামে সরকার গঠন করে৷ অপরপক্ষে বিএনপি দল ও জোট প্রকাশ্য দিনের বেলায় রাজপথে চলার সাহষ হারিয়ে রাতের বেলায় অন্ধগলিতে হাঁটতে হাঁটতে নেতৃত্ব শুন্য হয়ে পড়ে৷
   একাদশ সংসদ নির্বাচনঃ--বার্ণিয়াকট পরিচালিত নীলকূঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নাটক নতুন মঞ্চ সিঙ্গাপুর মঞ্চায়নের নতুন নায়ক এরশাদের অভিনয় কৌশলে আপাততঃ সফলতায় উৎফুল্ল প্রেতাত্বা জোট কোটা আন্দোলন ও শিশু কিশোর আন্দোলনে কাঁধে চড়ে ক্ষমতায় বসার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে৷ আন্দোলনের হাঁকডাকের গ্যাড়াকলে আটকে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে ঘুম ভেঙ্গে হাতিয়ে দেখে নাটকের নায়ক জেঃ এরশাদ মঞ্চে নেই৷
    নাটকের পরিচালক বার্ণিয়াকটের বিদায় বেলায় তড়িগড়ি সকল কুশিলব'কে ঢাকায় ডেকে এনে মোহাম্মদপুর সুজন সম্পাদক বদিউজ্জমান সাহেবের বাসভবনে 'নীলকুঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নাটক মঞ্চায়ন করে৷   পরিচালকের পছন্দে ড. কামাল হোসেন নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ে পরিচালক কতৃক নির্ধারীত হন৷ এক্ষেত্রে মোড়ল দেশের পরিচালক-বিএনপি, জোট, সুশীল সমাজ, জনগনের মতামত নেয়ার প্রয়োজনবোধও করেননি৷ এমনিতেই বাংলাদেশের জনগন সুশীল সমাজকে পছন্দ করেনা, ড. কামালদের তো নয়ই৷ বারবার একই বিষয়বস্তুর ব্যর্থ নাটক মঞ্চায়নে জনগন যারপরনাই ত্যাক্ত, বিরক্ত৷ পরিচালক বার্ণিয়াকট নাটক মঞ্চায়নস্থল মোহাম্মদ পুর সুজনের বাসভবন ত্যাগ করে আসার প্রাক্কালে জনতার রোষানলে পড়েন৷ আমি মনে করি এতে মোড়ল রাষ্ট্র আমেরিকার ভাবমূর্তিই ক্ষুন্ন করেছেন রাষ্ট্রদূত ম্যাডাম বার্ণিয়াকট৷   
  বিএনপি এবং প্রেতাত্বা জোটের বিলুপ্তির ৩টি  উপসর্গ জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে (১)ভরের আন্দোলন,(২) ভোটহীন ড. কামালের সম্ভাব্য জোটের নেতৃত্ব গ্রহনের আলোচনা,(৩) 'নীলকুঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র' নাটকের পর্দা উম্মোচন৷  দৃশ্যমান তিন ঘৃনিত উপসর্গ আওয়ামী জোটের জয় প্রায় নিশ্চিত করে তুলেছে৷
   খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, বিএনপি এবং প্রেতাত্বা জোটের জয়ের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির ধারাবাহিক পরাজয়ের ব্যার্থতায়--"শেখহাসিনা, আওয়ামীলীগ, ১৪দলের ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বের কোনপ্রকার সম্পৃত্ততা আছে বলে আমি মনে করিনা৷ বরঞ্চ তাঁদের সামর্থের ইতিবাচক কর্মকান্ডকে ধারাবাহিক নেতিবাচক কর্মকান্ডে রুপান্তরের বিরুদ্ধে নিয়ন্তর আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে নিস্তেজ, নিবৃত্ত, প্রতিহত, প্রতিরোধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন৷  শেখহাসিনার নেতৃত্বে নিয়ন্তর আন্দোলন সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগন এবং আওয়ামীলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী জীবন, সম্পদ, সময় হারিয়েছে৷ কিন্তু অদৃশ্য শক্তির আলৌলিক প্রভাব অধিক কায্যকর থাকায় তাঁদের মনে কোন সময়েই শুভ বুদ্ধির উদয় হয়নি৷
  আলৌকিক প্রভাব বলছি এই কারনে--রাজনৈতিকভাবে এবং সাধারনে জিয়া পরিবার, বিএনপি ও জোটের রাজনীতি ক্ষেত্রে কিছু নেতিবাচক বিষয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে চলেছে৷ বিষয়গুলী--জিয়া পরিবার, বিএনপি এবং  জোট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেও সম্ভব করে তুলতে পারছেনা৷ জয়ের আশায় সচেতনভাবে, সজ্ঞানে, স্বইচ্ছায়--জিয়া পরিবার, বিএনপি এবং জোট কতৃক সংঘটিত হয়ে চলেছে৷  সংঘটিত কর্মকান্ড আলৌকিক ভাবে জিয়া পরিবার, বিএনপি এবং  জোটের পরাজয় এবং নিচ্ছিহ্নের পথ সর্বদাই প্রশস্ত করে চলেছে৷  তথাপি উক্ত কর্মসম্পাদন বন্ধ করেনি বা বন্ধ করার চেষ্টাও করেনি৷
    সংগঠিত ঘটনায় বাংলাদেশের জনগন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ বা সরকারের কোন প্রকার চেষ্টা, তদ্ভির, উৎসাহ, দমনপীড়ন, হামলা মামলা, বাধাবিঘ্ন সর্বশেষ রাজনীতি বা ক্ষমতা প্রয়োগের প্রয়োজন হয়নি৷
যেমন--
প্রথমতঃ--২০০৬ সালে সাংবিধানীক রীতি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ও তত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়া থেকে বিএনপি জোট সরকার সরে এসে একক সিদ্ধান্তে গঠন করে৷ বিরুধী দল আওয়ামীলীগ সরকারের উক্তরুপ কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার নিমিত্তে রাজপথে জোর আন্দোলন গড়ে তোলে৷ সরকার বিরুধী দলের আন্দোলন সংগ্রাম পাত্তা না দিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে৷ ফলাফল--আইনশৃংখলা সহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থীতি অবনতি ঘটে৷  সেনাবাহিনী জোরপুর্বক খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য করে এবং তাঁর নির্বাচিত তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনকে তত্বাবধায়কের পদ ছাড়তে বাধ্য করে৷ সেনা বাহিনী সমর্থিত তত্বাবধায়ক গঠিত হলে তারা তিন মাসের সময়সীমার সরকারকে দুই বছর পয্যন্ত বাড়িয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে৷ শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করে তাঁদেরকে জেল খানায় রাখে৷ আওয়ামীলীগ সেনাবাহিনীর নিয্যাতনের ধকল কাটিয়ে উঠে নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে৷ বিএনপি আলৌকিক কারনে সেনাবাহিনীর নিয্যাতনের ধকল কাটাতে পারেনি৷ ফলাফল--ধ্বংসের শেষপ্রান্তে অবস্থান নিয়েছে৷
   দ্বিতীয়তঃ--খালেদা জিয়ার পরিবারের মামলা সমূহ দীর্ঘসুত্রিতার পেছনে সরকারের কোন হাত ছিলনা৷ বরঞ্চ সরকার তড়িগড়ি মামলাগুলী মিমাংসা করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টায় ব্রতি ছিল৷ খালেদা নিজেই সময়ক্ষেপন করে এবং তারেক জিয়া পলাতক থেকে সহসা ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর রয়েছে৷ ফলাফল--শেষ সময়ে দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে উভয় নির্বাচন অযোগ্য হয়ে পড়েছেন৷
তৃতীয়তঃ--ভবিষ্যত দেশনেতা তারেক জিয়া চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে লন্ডন গমন করেন৷ এগার বছর চিকিৎসা নেয়ার পরও তিনি সুস্থ্য হননি৷  দেশনেতার বিরুদ্ধে আনীত তত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলের মামলা স্বশরীরে মোকাবেলা করার প্রয়োজনবোধ করেননি৷   এক্ষেত্রে নিশ্চয়ই সরকার বা মহাজোটের কোনপ্রকার চেষ্টা, তদ্ভির বা রাজনীতি ছিল না৷ বরঞ্চ সরকার তাঁর উপস্থিতিতে মামলা মিমাংসা করার ইচ্ছায় একাধিকবার তাঁকে দেশে আনার উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে৷
  আমি মনে করি আলৌকিক কারনেই তিনি সুস্থ্য হননি৷ সুস্থ্য হলে নিশ্চয়ই তিনি দেশে ফিরে আসতেন এবং মামলা মোকাবেলা করে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন৷  সুস্থ্য না হওয়া এবং দেশে ফিরিয়ে আনার সরকারের উদ্যোগ বার বার ব্যার্থতায় নিশ্চিত আলৌকিক বিষয় জড়িত আছে৷
   চতুর্থতঃ--দশম সংসদ নির্বাচনকালীন সময় নির্বাচনী সরকারে অংশ নিতে দাবী না থাকা সত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বইচ্ছায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং নির্বাচন বর্জন করেন৷ শুধু বর্জনে সীমাবদ্ধ থাকলে মনে হয় বিধাতা অসন্তুষ্টই হতেন--নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে অহিংস রাজনৈতিক কর্মসুচি কে অবরোধের নামে আগুন সন্ত্রাসে জ্যান্তমানুষ হত্যা, সম্পদ বিনষ্ট, সন্ত্রাস সৃষ্টির ন্যায় সহিংস আন্দোলনে রুপান্তর ঘটায়৷  জনসম্পৃত্ত আন্দোলন স্বইচ্ছায় জনভীতিতে পরিণত করার পেছনে--জনগন, 'সরকার বা মহাজোটের কোন প্রকার ইন্ধন বা রাজনীতি ছিল না৷ এখানেও আলৌকিকতার ছায়া সুস্পষ্ট৷
 পঞ্চমতঃ--জিয়া পরিবার সচেতনভাবে যুদ্ধ অপরাধী বিচারের বিরোধীতা এবং মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু'কে নিয়ে লাগাতার বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান করে৷ তাঁদের মুখে বিতর্কিত বক্তব্য জনগন, সরকার বা মহাজোট তুলে দেয়নি বা বক্তব্য, বিবৃতি প্রদানে উৎসাহীত করেনি৷ বিএনপি দলের দলীয় আদর্শ এবং প্রাথমিক উত্থান প্রক্রিয়ার সুত্রধরে উভয়ক্ষেত্রে বিরুধীতায়--দেশে-বিদেশে জোরালো ভুমিকা রেখে পরাজিত হয়৷ স্বাধীন দেশের আবাহাওয়ায় বসবাস করে, স্বাধীন দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখা বিধাতা মেনে নিতে পারেননি৷
 ষষ্ঠতঃ--দশম সংসদ নির্বাচনে জেঃ এরশাদের জাতীয় পার্টি মহাজোট ত্যাগ ব্যাতিত চারদলীয় জোটে অংশগ্রহন করে রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্নপূরণের নীলকুঠি'র প্রাসাদ ষড়যন্ত্র--জনগন, সরকার, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ বা মহাজোট করেনি বা বাঁধার সৃষ্টিও করেনি৷ বাঁধার সৃষ্টি করেছিল--এরশাদ পত্নি রৌশন এরশাদ নিজে৷ স্বামীর অসুস্থ্যতা বিষয়ে স্ত্রী রৌশন এরশাদের লিখিত দরখাস্ত সরকার যথারীতি কায্যকর করে সাংসদের আবশ্যিক প্রাপ্য সুযোগ--হাসপাতালে ভর্তির ব্যাবস্থা করেছে মাত্র৷ বাঙ্গালী স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হওয়া নিশ্চয়ই আলৌকিক প্রভাব ব্যতিত সম্ভব হওয়ার কথা নয়৷
 সপ্তমতঃ---তারেক জিয়া এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা এবং শাস্তি জনগন, সরকার, মহাজোট প্রদান করেনি৷ উভয়ের মামলা পরিচালনায় শতাধিক ব্যারিষ্টার, উকিল প্রতিদ্বন্ধিতা করে আদালতে নির্দোষ প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে৷ সঙ্গতভাবে মা খালেদা আদালতের দন্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে জেলখানায় এবং ছেলে তারেক আদালতের দেয়া দন্ডাদেশ অবজ্ঞা করে পলাতক রয়েছেন৷ এমতঃ অবস্থায় আইনগত ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বৈধতা হারিয়েছেন৷  এক্ষেত্রেও সরকার কোনপ্রকার প্রজ্ঞাপন জারী বা মহাজোটের আন্দোলন সংগ্রামে আদালত দন্ড প্রদানে এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনায় বাধ্য করেনি৷ আলৌকিকতার প্রভাবে দুই বছরে বিচারকায্য সম্ভব মামলা ৯বছর সময়ক্ষেপনের ফলে সময় স্বল্পতাহেতু নির্বাচনকালীন সময় উচ্চাদালতের জামিন কায্যকর করাও সম্ভব হয়ে উঠবে না৷ সুতারাং বুঝাই যায়--আলৌকিক প্রভাবে মামলার সময়ক্ষেপনে উৎসাহীত ছিলেন৷ ফলাফল নেতৃত্ব শুন্য দল, জোট৷
অষ্টমতঃ---কোটা আন্দোলনের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আন্দোলনকারীরা অনেকাংশে সফল৷ আন্দোলনকারীদের দাবী সরকার আইনী জটিলতা পরিহার করে মেনে নেয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে৷ আন্দোলনকারীদের বিএনপি/ জামায়াতের সম্পৃত্ততা ত্যাগে বাধ্য করেনি বা আন্দোলন নিস্তেজ করার লক্ষে মহাজোট কোন প্রকার রাজনৈতিক কর্মসুচি দেয়নি৷ আলৌকিক প্রভাবে আন্দোলন নিস্তেজ হওয়ায় বিএনপি জামাতের স্বপ্ন ভঙ্গ ঘটেছে৷
  নবমতঃ--শিশু কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের যৌক্তিকতা সরকার মেনে নিয়ে তাঁদের  দাবী যথাযথ ভাবে পূরণ করার পদক্ষেপ গ্রহন করেছে৷ বিএনপি/জামায়াতের সম্পৃত্ততা ত্যাগে আন্দোলনকারী শিশু-কিশোরদের বাধ্য করেনি৷ এবং কি বিএনপি/জামায়াতকে আন্দোলনে অনুপ্রবেশ এবং অরাজকতা সৃষ্টিতে সরকার বাধ্য করেনি বা  উৎসাহীত করেনি৷   সরকার তাঁদের সম্পৃত্ততার কারনে দাবী পূরণে কোনপ্রকার গড়িমসির চেষ্টাও করেনি৷ আন্দোলনে সহিংসতার কারনে ছাত্ররা নিজেরা আন্দোলন ত্যাগ করে বাসায় ফেরৎ গেছে৷ শেখ হাসিনাকে দাবী মানায় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে আনন্দ মিছিলে অংশ নিচ্ছে৷ নিশ্চয়ই এখানেও আলৌকিকতার প্রভাবে আন্দোলন স্থায়ী হয়নি৷
  দশমতঃ---বার্ণিয়াকট পরিচালিত তৃতীয় বার "নীলকুঠি'র প্রাসাদ ষড়যন্ত্র" নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে পশ্চাদপসারনে জেঃ এরশাদকে সরকার বা মহাজোট বাধ্য করেনি৷ এরশাদ নিজ থেকে ভারত সফরে গেছেন এবং ভারত সফর শেষে দেশে এসে চুপসে গেছেন৷
  জনগন, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ, সরকার, মহাজোট-"বার্ণিয়াকট পরিচালিত তৃতীয়বার "নীলকুঠি প্রসাদ ষড়যন্ত্র" নাটক মঞ্চায়ন এবং এরশাদের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে প্রায় অন্ধকারেই ছিল৷ নাটক সর্বাত্বক ফ্লপ হওয়ার পর সকল মহলের উপলব্দিতে এসেছে৷ আলৌকিক প্রভাব ব্যাতিত এরশাদ নিজ থেকে সরে আসতে পারেন না৷
এগারতমঃ---বার্ণিয়াকট পরিচালিত চতুর্থবার নীলকূঠি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নাটকের মঞ্চায়ন, প্রধান চরিত্রে  ড. কামাল হোসেনের চুক্তি সম্পাদন, প্রেক্ষাগৃহ সুজন সম্পাদক বদিউজ্জমান সাহেবের বাসভবন--কোনটাতেই জনগন, সরকার, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সংশ্লিষ্যততা নেই৷-সম্পূর্ণই পরিচালক মহোদয়ের এক্তিয়ারে বিএনপি দলের ইচ্ছায় সম্পাদিত হয়েছে৷
   সর্বশেষ নাটকের বিষয়বস্তু বিশ্লেষনে দেখা যায়--মা খালেদা আমৃত্যু জেলখানায় এবং ছেলে দেশনেতা তারেক পলাতক থাকতে বাধ্য হবে৷ এক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন রাজনীতিতে বা সরকারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার স্বার্থেই জিয়া পরিবারকে নিচ্ছিন্ন করবে৷
   কোনবস্থায় বাংলাদেশের জনগন, সরকার বা রাষ্ট্র কতৃক উৎখাত বা নিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে বলা যাবেনা৷যেহেতু জিয়া পরিবার স্বইচ্ছায় জোটের নেতৃত্ব কামাল হোসেনকে দিছেন৷ এক্ষেত্রে নিশ্চিত করে বলা যায়-অদৃশ্য শক্তির আলৌকিক প্রভাবে তাঁদের বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা, স্মরণ শক্তি, কৌশল, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত শক্ত আবরণে ঢাকা পড়েছে৷ মা-ছেলে হিতাহীত জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছেন৷

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন