বিশ্বব্যাপি মানব ইতিহাসে ব্যাতিক্রমি জীবনাচারের অধিকারি একমাত্র "বঙ্গবন্ধু"।
রুহুল আমিন মজুমদার

       সমসাময়িক বিশ্ব নেতাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জম্ম থেকে মৃত্যুবদি বা একটা মানুষের জম্ম কালের আগে বা পরে সমগ্র ইতিহাস বিশ্লেষন করে হিসেব মেলাতে গেলে দেখা যায়---"তাঁর জীবনাচারের প্রত্যেকটি বিষয় অন্য সকলের চেয়ে ব্যাতিক্রম ও  আলাদা। যেকোন ভাবেই চিন্তা করি না কেন--মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ের  বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ আলাদা, ব্যাতিক্রম, ভিন্নতা, তারতম্য প্রত্যেক ব্যাক্তির ক্ষেত্রে কিছুটা সামঞ্জস্য চোখে পড়ে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে বিষয়গুলীর বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ আলাদাভাবে সকলের  নিকট  স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হবে।

          যেমন---চলাফেরা, কথোপকথন, আচার-ব্যবহার , বক্তৃতার ধরন, বক্তব্যের ভাষা, বক্তব্যের দৃড়তা, মঞ্চে আরোহনের চিত্র, মাইকের সামনে দাঁড়ানোর ধরন, বক্তব্য শুরু ও শেষের ধরন, বক্তব্যের ভাষা, ভাষা ব্যবহারের নিপূনতা, বক্তব্যের বোধগম্যতা, দৃড়তাপূর্ণ  চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ, পোষাকের ভিন্নতা, কেশ বিন্যাসের ধরন, চশমা,  চশমা চোখে দেয়ার ধরন, চশমা ধরার ধরন, তামাক ব্যবহার, তামাক ব্যবহার করার সময় পাইপ ধরার ধরন, পাইপ টানার ধরন,  পোষাক নির্বাচন, পোষাক পরিধানের ভিন্নতা, শারিরীক গঠন, চেহারাগত ভিন্নতা, দৃষ্টি নিবন্ধনের সৌন্দয্য, হাঁটা চলার বৈশিষ্ট, কথা বলার ধরন, কথার দৃড়তা,   পারিবারিক জীবনাচার, রাজনৈতিক জীবনাচার, কর্মীদের প্রতি ব্যবহার, সহপাঠিদের সংঙ্গে আচরন এবং কি নিত্য নৈমত্তিক খাওয়াদাওয়ার ধরন সহ ইত্যকার দৈনন্দিন সর্ব বিষয় ব্যাতিক্রম লক্ষনীয়।

       উপরে উল্লেখীত--অনুল্লোখ্যীত কোন একটি বিষয় বা বিষয়ের কিঞ্চিৎ পরিমাণ সমসায়িক কালের আগে বা পরের কোন ব্যাক্তি বিশেষকে অনূকরন, অনূসরন করার দৃষ্টান্ত তাঁর সামগ্রিক জীবন যাপনে খুঁজে পাওয়া যায় না। বরঞ্চ তাঁর চারিত্রিক এবং বহিরাগত বহুবিদ বিষয়াদি সমূহের মধ্যে অনেকেই আংশিক বা সম্পূর্ণ অনূকরন, অনুসরন, নকল করার দৃষ্টান্ত প্রতিনিয়ত আমরা সকলেই দেখি। বঙ্গবন্ধুর শৈশব, যৌবন, মধ্যবয়সের জীবন যাপন, সংগ্রামী জীবন, নেতৃত্বের ধরন, নেতৃত্ব করায়ত্ব করার কৌশল, নেতৃত্বের স্পষ্টতা, রাজনীতিতে পদার্পনের সময়কাল, রাজনীতির হাতে খড়ি, রাজনীতিতে বড়মাপের নেতাদের সান্নিধ্য লাভ, রাজনীতিতে নিজস্ব দর্শনে কর্মীদের উদ্ভোদ্ধকরন, দর্শন অনূসরনে অন্যদের অনুপ্রানিতকরন ইত্যাদি সর্বৈব বিষয় পার্থক্য--'খোলা চোখে দৃশ্যমান'।

    সৃষ্টির আদিকাল থেকে (নবী করিম (স:) ব্যাতিত)--একজন রাষ্ট্রনায়কও খোঁজে পাওয়া যাবেনা; যিনি নিজস্ব দর্শন সৃষ্টি করেছেন এবং সেই দর্শন বাস্তবায়নের নিমিত্তে সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রয়োজনীতা অনুভব করেছিলেন। সেই  একক জাতি সত্বা বিশিষ্ট রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটিয়ে--সেই রাষ্ট্র নিজেই শাষন করার কিঞ্চিৎ সুযোগ পেয়েছেন। এমন কোন রাষ্ট্রপিতাও নেই যিনি তাঁর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বহু জাতিসত্বার অস্তিত্ব থাকাবস্থায় নীজস্ব একক জাতিসত্বার উম্মেষ ঘটিয়ে সেই জাতির উম্মেষদাতা হ'তে পেরেছেন। লক্ষ করলে দেখা যায় প্রত্যেক রাষ্ট্রপিতার শাষিত রাষ্ট্রে বহুধা বিভক্ত জাতিসত্বার অস্তিত্ব বিরাজমান ছিল। প্রত্যেক রাষ্ট্রপিতাই অবলিলায় ভিন্ন ভিন্ন জাতির অস্তিত্ব স্বীকার করে সেই রাষ্ট্রের "রাষ্ট্রপিতায়" অধিষ্ঠিত হয়েছেন। একমাত্র বঙ্গবন্ধু তাঁর সৃষ্ট রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র  জাতিসত্বার উপস্থীতি থাকা সত্বেও তাঁদের অস্তিত্ব সাংবিধানিকভাবে স্বীকার নাকরে একক "বাঙ্গালী জাতির পিতা" এবং নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সৃষ্টিকারি বা পত্তনকারি হিসেবে "রাষ্ট্রপিতা'' হতে পেরেছিলেন। তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি কোন প্রকার লুকোচুরি করে নয় প্রকাশ্য 'বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ' প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে বিজয়ী হয়েই তিনি অন্যান্ন জায়িসত্বার অস্তিত্ব অস্বিকার করে বাঙ্গালীদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উল্লেখীত দু'টি উল্লেখযোগ্য সূক্ষ স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারির একমাত্র বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় ব্যাতিক্রম স্থানটির অধিকারি "বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান"।
 
    বিশ্ব ইতিহাসে এমন একটি নজির নেই--প্রথাগত একটি গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কর্মীবাহিনীকে তৎক্ষনাৎ বিপ্লবী স্বসস্ত্র বাহিনীতে রুপান্তর করে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হ'তে পেরেছে এবং কি স্বল্পসময়ের যুদ্ধে বিজয় চিনিয়ে আনতে পেরেছে। বিশ্বব্যাপি যতগুলী স্বাধীন রাষ্ট্রের উৎপত্তির ইতিহাস বিদ্যমান রয়েছে সবগুলির স্বাধীনতার ইতিহাস বিনা রক্তপাতে রাজনৈতিক আন্দোলন অথবা রক্তাক্ত বিপ্লবী স্বসস্ত্র কর্মীবাহিনীর দীর্ঘদিনের যুদ্ধে উৎপত্তির ফসল।একমাত্র ব্যাতিক্রম দেশের ক্ষেত্রে "বাংলাদেশ", দলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়কারি একমাত্র গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল "বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ", নেতৃত্বের ক্ষেত্রে "বঙ্গবন্ধু"ই  বিরল দৃষ্টান্তের অধিকারি।

     তাবৎ  বিশ্ব ইতিহাসে  রাষ্ট্রসৃষ্টির এমন কোন একটি উদাহরণ নেই -- যে রাষ্ট্র সৃষ্টি বা স্বাধীনতার জন্যে এত রক্ত স্বল্পসময়ে বিসর্জন দিয়েছে। এখানেও  একমাত্র অবিশ্বাস্য ব্যাতিক্রম বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আকাংক্ষায় পরিচালিত দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে অনিবায্য গৌরবের "মুক্তিযুদ্ধ"। এই যুদ্ধে নিজের স্ব-জাতী "মা-বোন"কে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ্যসিদ্ধির নিমিত্তে "বিজাতীয় সেনা"দের 'যৌন লিস্পা' নিবারনের জন্যে তুলে দিয়েছে--''তথাকথিত স্বাধীনতা বিরুধী মুষ্টিমেয় বাঙ্গালী কুলংঙ্গার "আলবদর, রাজাকার"।

  বিশ্ব ইতিহাস তন্নতন্ন করে খুঁজে পাওয়া যাবেনা--স্বাধীনতা যুদ্ধ ফেরৎ কোন স্বাধীনতা যোদ্ধা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভ করে সেই দেশের স্বাধীনতা বিরুধী রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া বাতিল করেছে এবং  তাঁদেরকে স্বাধীন দেশের সরকার পরিচালনার সুযোগ দিয়েছে। এমন একটি উদাহরণও নেই কোন স্বাধীনতাকামী সেনা কর্মকর্তার পরিবার পূর্ব পরিচিত শত্রুসেনাদের হেফাজতে রাজকীয় পরিবেশে বসবাস করতে পেরেছে।একমাত্র ব্যাতিক্রম মুক্তিযুদ্ধের "জেড ফোর্সে"র অধিনায়ক বীর উত্তম মেজর "জিয়াউর রহমান"। তাছাড়াও উক্ত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস বহাল তবিয়তে শত্রু সেনানিবাসে বসবাস করা সত্বেও তিনি ফায়ারিং স্কোয়ার্ড়ের সম্মুখ্যিন হননি বরঞ্চ বীরদর্পে মুক্তিবাহিনীর একটি সেক্টর কমান্ডের "কমান্ড" দেয়ার অধিকারি হ'তে পেরেছিলেন। তাঁর স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শত্রু সেনানিবাসে দীর্ঘ নয়মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন পূরো সময়কাল বসবাস করা সত্বেও অন্য "মা-বোনে''র মত "বিরঙ্গনা"র জাতিয় অত্যান্ত সম্মানীত উপাধি গ্রহন করেননি। তাবৎ বিশ্বে একটি উদাহরনও নেই-- কোন দেশের স্বাধীনতার মহানায়ক কতৃক যুদ্ধকালিন এবং তৎপরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ ইতিহাস জানা সত্বেও এমন একজন সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে অথবা ফায়ারিং স্কোয়ার্ড়ে নির্মমভাবে হত্যা করে বেঈমানীর শাস্তি নিশ্চিত করেননি।

     বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়কের ক্ষেত্রে এখানেও অবিশ্বাস্য এবং ব্যাতিক্রমি উদাহরন স্থাপিত হয়েছে। উক্ত সেনা কর্মকর্তার চাকুরি নিশ্চিত তো করেছেন-ই, উপরন্ত চাকুরি বনাঢ্য ও সম্মানজনক করার নিমিত্তে নিয়মিত বাহিনীতে নতুন পদ সৃষ্টি করেছেন এবং সেখানেই তাঁকে অধিষ্ঠিত করে পুরস্কৃত করেছেন। তাঁর ধর্ষিতা স্ত্রীকে নীজের আপন "মেয়ের" স্বীকৃতি দিয়ে বিরল এক বদন্যতার ইতিহাস রচনা করেছেন বিশ্ব ইতিহাসে একমাত্র "বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।"

   সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়ানকেও যদি বিশ্লেষন করি দেখা যায়--বিশ্ব ইতিহাসে একটি উদাহরণ পাওয়া যায়না স্ব-জাতির হাতে সেই দেশের স্বাধীনতার মহানায়কের  নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে সম্পূর্ণ পরিবার সহ এক রাতেই হত্যার শিকার হয়েছে। মৃত্যু, হত্যা, আত্মহত্যা,  গুপ্তহত্যা ইত্যাদি বহু হত্যার ইতিহাস রয়েছে। তবে সেই সমস্ত হত্যাকান্ডগুলী ঘটেছে একক ভাবে বা কতক অনুসারী সহ।কোন রাষ্ট্র নায়কের সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংসের ইতিহাস কোথাও,  কোন সময়ে, কস্মিনকালেও নেই--স্বাধীনতার মহানায়কের ন্যায় স্বল্পসংখ্যক মহামানবের ক্ষেত্রে তো নহে-ই। মানব ইতিহাসের অবিশ্বাস্য ব্যাতিক্রমি, কলংক জনক আধ্যায়ের জম্ম শুধুমাত্র বাংলাদেশেই হয়েছে।

     এই করুন, মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক, ইতিহাসের  বিরল হত্যাযজ্ঞে অকাল  মৃত্যুবরন করেছেন--"একমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, মহানায়ক, বাঙ্গালী জাতির জনক, বাঙ্গালী জাতিয়তাবোধের উম্মেষদাতা, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী,বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রনায়ক--'বঙ্গবন্ধু "শেখ মজিবুর রহমান'।"

      "জয়বাংলা---জয়বঙ্গবন্ধু"

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন